লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম:
মইন উদ্দীন মাহমুদ
মোট লেখা:২৭
লেখা সম্পর্কিত
তথ্যসূত্র:
প্রচ্ছদ প্রতিবেদন
২২ হাজার কোটি ডলারের মোবাইল অ্যাপস বাজার, আমাদের অবস্থান কোথায়?
একুশ শতকের শুরুতে পার্সোনাল কমপিউটারের ব্যাপক উত্থান এবং ইন্টারনেট ও ই-কমার্সের ব্যাপক বিস্তার মিলিতভাবে আমাদের প্রাত্যহিক জীবন-যাত্রার কার্যকালপে বিরাট পরিবর্তন ঘটায়। নিউজ ওয়েবসাইট কমিয়ে দেয় সেকেলের সংবাদপত্র, স্ট্রিমিং অ্যাপ্লিকেশনের কারণে প্রচলিত ক্যাবল টিভির গ্রাহকসংখ্যা বেশ কমে যাচ্ছে দিন দিন এবং সামাজিক নেটওয়ার্ক চূর্ণ-বিচূর্ণ করে ফেলে পুরনো দিনের মুখোমুখি হয় আলাপচারিতার ধারা। এ পরিবর্তনের ধারা প্রযুক্তি ইন্ডাস্ট্রিতে সৃষ্টি করেছে ওয়েব ডেভেলপারের বিপুল চাহিদা এবং অনুপ্রাণিত করে হাজার ব্যবসায়কে তাদের পণ্য ও টেকনোলজিকে ক্লাউডে স্থানান্তরে। ২০০৯ সালে সফটওয়্যার-অ্যাজ-অ্যা-সার্ভিসেস (SaaS) অ্যাপ্লিকেশনকে বিবেচনা করা হতো ‘...next big step in the logical evolution of software’। এখন পর্যন্ত সফটওয়্যার-অ্যাজ-অ্যা-সার্ভিসেস অ্যাপ্লিকেশনে নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান অব্যাহতভাবে বিকশিত হয়ে আসছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অনলাইন খবর, ব্লগ আর্টিকেল এবং আলোচনাগুলোতে উল্লেখ করা হচ্ছে- ভোক্তাদের মধ্যে মোবাইলের ব্যবহার বাড়ছে। সিএনএনের তথ্য মতে, ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত মোবাইল ওয়েবের ব্যবহার দ্বিগুণ বেড়েছে। ডেস্কটপ এবং ল্যাপটপে আসা ট্রাফিকের চেয়ে অনেক বেশি ট্রাফিক দেখা যায় স্মার্টফোন ও ট্যাবলেটে। যেহেতু ব্যবহারকারীরা মোবাইল ডিভাইসে ইন্টিগ্রেট করেন তাদের প্রতিদিনের ব্যক্তিগত এবং পেশাগত কাজগুলোকে, তাই কোম্পানিগুলো অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপের নতুন উপায় পেয়েছে, যাতে জোরদার করতে পারে দৈনন্দিন কাজগুলো।
মোবাইল ডিভাইসে অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপ করলে পণ্যগুলোকে ক্লাউড থেকে সরাসরি হাতের মুঠোর নিয়ে আসবে। এর ফলে পণ্যগুলোকে বাজারজাত করার জন্য সামগ্রিকভাবে সবার সামনে তুলে ধরা যাবে, যেখানে অ্যাপস মার্কেটপ্লেস বিজ্ঞাপন দেবে নতুন অ্যাপের জন্য। এই অ্যাপগুলো অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে রেটেড হতে পারে এবং প্রতিবছর লাখো কোটি ডলার অর্জন করা সম্ভব হবে। এই অ্যাপ্লিকেশনগুলো শুধু লাভজনকই নয় বরং ওয়েব অ্যাপ্লিকেশনেও এগুলো আরও ভালো পারফর্ম করতে পারবে। স্মার্টফোনের কমপিউটিং ক্ষমতা অসাধারণ। স্মার্টফোনের শক্তিশালী কমপিউটিং ক্ষমতার সাথে তুলনা করলে নির্দ্বিধায় বলা যায় ওয়েব ব্রাউজার বেশ ধীরগতির।
মোবাইল মার্কেট থেকে চূর্ণ-বিচূর্ণ হওয়ায় ওয়েব এখন মারাত্মকভাবে প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে আছে। জনগণের ওপর ওয়েবের রয়েছে সরাসরি প্রভাব, যারা ওয়েবে লাখ লাখ অ্যাপ্লিকেশন এবং ওয়েবসাইট তৈরি ও মেইনটেন করে। ওয়েব ডেভেলপারেরা এক যুগের বেশি সময় ব্যয় করেছে রিচ ইন্টারনেট অ্যাপ্লিকেশনস (RIA) তৈরি ও উন্নয়নের কৌশল উদ্ভাবনে, যাতে তারা বিশ্বস্ততার সাথে সরবরাহ করতে পারেন পেশাদার, ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের জন্য যথোপযুক্ত সমাধান। মোবাইল ডেভেলপারেরা এখন আরও অনেক বেশি প্রার্থিত বস্ত্ততে পরিণত হয়েছেন ওয়েব ডেভেলপারদের চেয়ে। অর্থাৎ মোবাইল অ্যাপস ডেভেলপারদের বেতন ওয়েব ডেভেলপারদের চেয়ে অনেক বেশি বেড়ে গেছে। লক্ষণীয়, মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপারদের বেতন যেখানে বাড়ছে, সেখানে ওয়েব ডেভেলপারদের বেতন ক্রমেই কমে আসছে। যেহেতু ওয়েবভিত্তিক অ্যাপ্লিকেশনের চাহিদা ক্রমেই কমে আসছে। তাই সক্রিয় ডেভেলপারদের দরকার ক্রস-ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে দক্ষ হয়ে ওঠা, যাতে ইন্ডাস্ট্রিতে তাদের চাহিদা অব্যাহত থাকে। ওয়েব ডেভেলপারদের উচিত ভেন্ডরদের চাহিদা অনুযায়ী টেকনোলজিতে প্রশিক্ষত হওয়া, যাতে চাকরির বাজারে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নিজেদেরকে ধরে রাখতে পারেন।
মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের চাহিদা আকাশচুম্বী হয়ে উঠছে। অন্যান্য ডিভাইসের ডেভেলপারেরা তাদের সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তিতে নিজেদের সম্পৃক্ত করতে চাইবেন, যাতে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ পরিবেশে টিকে থাকা যায়। যেসব কোম্পানি আগে ওয়েব ডেভেলপারদের নিয়োগ দিত, সেসব কোম্পানি এখন নিয়োগ দিচ্ছে মোবাইল ডেভেলপারদের এবং তাদের বিদ্যমান ওয়েব ডেভেলপার টিমকে প্রশিক্ষক্ষত করে তুলছে, যাতে মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্টে সম্পৃক্ত থাকতে পারে। সম্প্রতি বিখ্যাত আইসিটি পত্রিকা ইনফো ওয়ার্ল্ডে এক লেখায় উল্লেখ করা হয়, এন্টারপ্রাইজ মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্টের চাহিদা এত বেড়ে গেছে যে ডেভেলপারদের দৃষ্টি এখন অব্যাহতভাবে বেশি থেকে বেশি করে ট্যাবলেট এবং পরবর্তী অ্যাপ্লিকেশন প্লাটফরমের দিকে নিবন্ধিত হচ্ছে। ৮১ শতাংশ প্রতিক্রিয়াশীলই জানায়, তাদের উচিত পরবর্তী ছয় মাসের জন্য ট্যাবলেটে অ্যাপ বানানো। ৮৪ শতাংশ জানায়, স্মার্টফোনের জন্য কোড লেখা উচিত। তথ্যপ্রযুক্তি গবেষকেরা জানান, আগামীতে মোবাইল অ্যাপস ডেভেলপমেন্ট পেশা প্রযুক্তি বাজারকে নিয়ন্ত্রণ করবে এবং টেকনোলজি কোম্পানিগুলো খুঁজে বের করবে মেধাবী ডেভেলপারদের রিসাইকল করার জন্য।
মোবাইল অ্যাপ নিয়ে জরিপ
বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় যোগাযোগমাধ্যম হলো মোবাইল ফোন। এ বছরের জানুয়ারি মাসের তথ্যানুযায়ী বিশ্বে ৭ দশমিক ২ বিলিয়ন মোবাইল সিম ব্যবহারকারী রয়েছেন। এ বছরের এপ্রিল মাসের তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশের মোবাইল নিবন্ধনকারীর সংখ্যা ১০১.২০৫ মিলিয়ন এবং মোবাইল পেনিট্রেশন ৬৬.৩৬ শতাংশ, যা প্রতিবছর ১০ শতাংশ করে বাড়ছে।
মোবাইল ফোনের যাত্রার শুরুতে মোবাইল ফোন ছিল শুধু কথোপকথনের মধ্যে সীমাবদ্ধ। পরবর্তী পর্যায়ে মোবাইল ফোনসেটে একের পর এক ফিচার তথা সুবিধা যুক্ত হতে থাকে, যেমন : ক্যালকুলেটর, রেডিও, ক্যামেরা বা গান শোনা, মেসেজ ইত্যাদি। এরই ধারাবাহিকতায় আসে আধুনিক স্মার্টফোন, যা সবকিছুকে ছাড়িয়ে গেছে।
মোবাইল ফোনের জগতে স্মার্টফোনের সূচনা তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিশ্বে এক বৈপস্নবিক পরিবর্তন ঘটায়। স্মার্টফোন হলো এমন এক ফোন, যেখানে আপনি বেসিক এবং ফিচার ফোনের প্রায় সব সুযোগ-সুবিধার পাশাপাশি বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন ও ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবেন। শুধু তাই নয়, দ্রুত ও উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন স্মার্টফোন দিয়ে পার্সোনাল কমপিউটারের মতো প্রায় সব ধরনের কাজই করা যায়। স্মার্টফোনের এ ধরনের সুযোগ-সুবিধা থাকায় এটি ডেস্কটপ, ল্যাপটপ ও নোটবুকের জায়গা দখল করে নিয়েছে। আর তাই ২০১২ সালে সারাবিশ্বে ৬৯ কোটি ৪৮ লাখ স্মার্টফোন শিপমেন্ট হয়, যা ২০১৬ সালে ১৩৪ কোটি ২৫ লাখ গিয়ে দাঁড়াবে। অন্যদিকে বেসিক বা সাধারণ ফোনগুলোর ব্যবহার কমবে ১৭.০ শতাংশ। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, অল্প কিছুদিনের মধ্যেই মোবাইল ডিভাইস প্রস্ত্ততকারক কোম্পানিগুলো বেসিক বা সাধারণ ফিচার সংবলিত ফোন বানানো বন্ধ করে দেবে। শুধু তাই নয়, তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্বে বিশেষ করে মোবাইল ফোন বিশ্বে বাজার নিয়ন্ত্রণ করবে স্মার্টফোন এবং এ সময় বেসিক বা সাধারণ ফিচার ফোনের দামেই স্মার্টফোন কিনতে পাওয়া যাবে।
পিসির সব ধরনের কার্যকলাপ অপারেটিং সিস্টেমের ওপর নির্ভরশীল। পিসির বিভিন্ন ধরনের অপারেটিং সিস্টেমের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হলো উইন্ডোজ ওএস এবং লিনআক্স। একইভাবে মোবাইল ফোনের কাজও অপারেটিং সিস্টেমের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল। জনপ্রিয় মোবাইল অপারেটিং সিস্টেমগুলো হলো অ্যাপলের জন্য আইওএস, ব্ল্যাকবেরির জন্য রিম, অ্যান্ড্রয়িড অপারেটিং সিস্টেম, সিম্বিয়ান এবং উইন্ডোজ ইত্যাদি। এক সময় স্মার্টফোন ছিল খুবই ব্যয়বহুল। তবে বিভিন্ন প্লাটফরম তথা অপারেটিং সিস্টেমের অন্তর্গত বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার ভিত্তিতে বিভিন্ন মডেল ও ব্র্যান্ডের প্রচুর স্মার্টফোন তৈরি হতে থাকায়, তা এখন সর্বসাধারণের হাতের নাগালে চলে এসেছে, দাম কমে গেছে। স্মার্টফোনের ব্যাপক ব্যবহার বা জনপ্রিয়তার পেছনে প্রধান কারণ হিসেবে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন।
বিশ্বে মোবাইল অ্যাপ বাজার
মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্টের ব্যাপক চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বিশ্বের বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে চলছে এ নিয়ে ব্যাপক গবেষণা। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক নতুন এক বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান মার্কেটস্ট্যান্ডমার্কেটসের রিপোর্টে ওয়ার্ল্ড মোবাইর অ্যাপ্লিকেশন্স মার্কেটে (২০১০-১৫) উল্লেখ করা হয়, ২০১৫ সালের মধ্যে সারা বিশ্বের মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন মার্কেট ২৫/৩০ কোটি বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে। ২০১০ সালে যা ছিল প্রায় ৬৮০ কোটি ডলার। এখানে মোট রেভিনিউর প্রায় ২০.৫ শতাংশই অ্যাপলের অ্যাপ স্টোরের দখলে থাকবে। এ রিপোর্টে আরও উল্লেখ করা হয়, গ্লোবাল মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন মার্কেট ২০১০ থেকে ২০১৫ সালে ২৯.৫ শতাংশে উন্নীত হতে পারে।
গ্লোবাল মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডিভাইস কয়েকটি সাব-মার্কেট সেগমেন্টে ভাগ করা হয়। যেমন : অন-ডেক ও অফ-ডেক মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন মার্কেট। প্রথমটি বেশ বড় সেগেমেন্টের। হিসাব মতে, আনুমানিক এ সেগমেন্টে গ্লোবাল মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের আয় তিন-চতুর্থাংশে। পক্ষান্তরে অফ-ডেক মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন সেগমেন্টের উন্নয়ন আগামী দিনে আরও দ্রুতগতিতে বাড়বে। বিশেষজ্ঞেরা আশা করছেন, অফ-ডেক সেগমেন্টে মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডাউনলোডের সংখ্যা ছাড়িয়ে যাবে অন-ডেক ডাউনলোডের সংখ্যাকে।
গ্লোবাল মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন মার্কেটের প্রতিটি সাব-সেগমেন্টকে চারটি ভৌগোলিক অঞ্চলে ভাগ করে হিসাব করা হয়। যেমন : উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ, এশিয়া এবং রো (ROW) তথা বিশ্বের বাকি অংশ। ২০০৯ সালের তথ্যানুযায়ী উত্তর আমেরিকার রেভিনিউ শেয়ার ছিল ৪১.৬ শতাংশ, সেখানে ডাউনলোডের দিক থেকে সবচেয়ে বড় মার্কেট এশিয়ার নিয়ন্ত্রণে ছিল (৩৬.০ শতাংশ)। ইউরোপীয় মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন মার্কেটের আকার দাঁড়ায় ২০০৯ সালে ১২০ কোটি মার্কিন ডলার। বাজার গবেষকেরা আশা করছেন, ২০১৫ সালে এ অঞ্চলের মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন মার্কেটে যার সাইজ হবে ৮৪০ কোটি ডলার, যা হবে সবচেয়ে বড় বাজার এবং যার বাড়ার হার ২০১০-১৫ সময়ের মধ্যে ৩৩.৬ শতাংশ।
বিশ্বখ্যাত তথ্যপ্রযুক্তি বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান গার্টনারের ২০১২ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী- সারা বিশ্বে ১২০ কোটি মানুষ মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করেন এবং প্রতিবছর ২৯.৮ শতাংশ হারে বাড়ছে। গার্টনারের এই রিপোর্টে আরও উল্লেখ করা হয়, ২০১৭ সালের মধ্যে মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৪৪০ কোটি ছাড়িয়ে যাবে। লক্ষণীয়, এই ব্যবহারকারীর বেশিরভাগই এশিয়া অঞ্চলের। এ সময় মোট মোবাইল ব্যবহারকারীর ১৭ শতাংশই মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে। সারা বিশ্বে যখন মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের ব্যবহারকারী বাড়ছে, সেখানে বাংলাদেশের এর প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। এর প্রধান কারণ, মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধা। বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা আড়াই কোটি বেশি (তথ্যসূত্র : বিটিআরসি)।
নতুন বাজার সৃষ্টি
মোবাইল ইন্টারনেট অ্যাপ্লিকেশনকে কেন্দ্র করে একটি নতুন ধরনের আন্তর্জাতিক বাজার সৃষ্টি হয়েছে। মোবাইল অপারেটর, অ্যাপ্লিকেশন মার্কেটপ্লেস, পেমেন্ট গেটওয়ে এবং মোবাইল ডিভাইস হচ্ছে এ বাজার কাঠামো। অর্থাৎ মোবাইলকে ঘিরেই সৃষ্টি হয়েছে নতুন আয়ের সুযোগ। নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের সাথে সাথে স্বাভাবিক নিয়মেই সৃষ্টি হয় নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ। ইদানীং শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গেম, সংবাদ, সোশ্যাল মিডিয়া বা বিনোদনের জন্য যেসব প্রকল্প নেয়া হচ্ছে, সেগুলো মোবাইলকে ঘিরেই। নতুন ধরনের ব্যাংকিং বা আর্থিক সেবার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। সুতরাং স্বাভাবিক নিয়মের এসব প্রকল্পকে ঘিরেই দক্ষ জনশক্তি তৈরি হয়েছে।
নোকিয়া স্টোর, গুগল প্লে, উইন্ডোজ মার্কেটপ্লেস, ব্ল্যাকবেরি ওয়ার্ল্ড, স্যামসাং স্টোর, আইফোনের অ্যাপ স্টোর ইত্যাদি হচ্ছে বিশ্বের জনপ্রিয় বিভিন্ন মোবাইল অপারেটিং সিস্টেমের নিজস্ব অথচ উন্মুক্ত মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের বাজার। এ বাজারগুলোর মাধ্যমে মোবাইল সফটওয়্যার পরিবেশন করা হয়, যা ব্যবহার করেন স্মার্টফোন ব্যবহারকারীরা। যেকোনো সফটওয়্যার কোম্পানি বা ব্যক্তিগতভাবে স্মার্টফোন তথা মোবাইল ডিভাইসের উপযোগী সফটওয়্যার ডেভেলপ করার পর বিক্রি করতে পারেন বা বিনামূল্যে প্রদর্শন করতে পারেন ভবিষ্যতে আয়ের উৎস হিসেবে। উপরোল্লিখিত মোবাইল অ্যাপস স্টোরগুলো ছাড়াও আন্তর্জাতিক মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন স্টোর রয়েছে, যেখানে যেকেউ মোবাইল অ্যাপস বাজারজাত করতে পারেন। তবে সাধারণত মোবাইল অপারেটিং সিস্টেমের প্রস্ত্ততকারকদের কাছে নিজস্ব মোবাইল ডিভাইসই বেশি পছন্দের ও জনপ্রিয়।
মোবাইল বিজ্ঞাপন
বিশ্বের বিভিন্ন মোবাইল সফটওয়্যার কোম্পানি বা ব্যক্তিগতভাবে বানানো বিভিন্ন মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোডের সংখ্যা প্রায় ৮ হাজার ১৪০ কোটি গিয়ে দাঁড়াবে এ বছরের শেষে, যা গত বছর ছিল ৪ হাজার ৫৬০ কোটি, ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে গার্টনারের তথ্যানুযায়ী, যা ২০১৬ সালে গিয়ে দাঁড়াবে ৩০ হাজার ৯৬০ কোটি।
মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের সরাসরি ডাউনলোড থেকে সফটওয়্যার প্রস্ত্ততকারক প্রতিষ্ঠান এবং মোবাইল বাজারগুলো মোট আয় করেছে ৮ শত ১০ কোটি ডলার। ২০১৬ সালে মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের সরাসরি ডাউনলোড থেকে আয় হবে ২ হাজার ১৭০ কোটি ডলার। মূল্য নির্ধারণ করা অ্যাপ্লিকেশন থেকে ব্যবহারকারীরা যেসব অ্যাপ বিনামূল্যে পান তা বেশি ডাউনলোড হয়। যার পরিমাণ ৯০ শতাংশ। এই ৯০ শতাংশ ফ্রি অ্যাপ থেকে সফটওয়্যার প্রস্ত্ততকারক কোম্পানি বা ব্যক্তি কীভাবে আয় করছে- এমন প্রশ্ন খুব স্বাভাবিকভাবে আসে। এমন প্রশ্নের সাদামাটা উত্তর হলো মোবাইল বিজ্ঞাপন থেকে।
বর্তমানে মোবাইল বিজ্ঞাপনের বাজারও শত কোটি ডলারের ওপর। যেমন : গুগল, অ্যাডমব, ইনারঅ্যাক্টিভ, আইঅ্যাড, মজিলা, লিডবোল্ড, অ্যানপকেট ইত্যাদি জনপ্রিয় মোবাইল অ্যাডভার্টাইজিং নেটওয়ার্ক। বিনামূল্যের মোবাইল অ্যাপগুলোতে এসব নেটওয়ার্কের বিজ্ঞাপন যুক্ত করে নির্মাতারা আয় করে থাকেন। এটা অনেকটা টিভিতে খবর দেখার সময় নিচে স্ক্রলে দেখার মতো করেই ব্যবহারকারীরা বিজ্ঞাপন উপভোগ করেন। শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই মোবাইল বিজ্ঞাপনের বাজার ৪৫০ কোটি ডলার।
বাংলাদেশের অবস্থান
মোবাইল অ্যাপসের ক্ষেত্রটি বাংলাদেশে এখনও শিল্পে রূপ পেয়েছে বলা যাবে না, যদিও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মোবাইল অ্যাপস শিল্প হিসেবে স্বীকৃত। বাংলাদেশ সফটওয়্যার অ্যাসোসিয়েশনের ওয়েবসাইটের সূত্রে জানা যায়, তথ্যপ্রযুক্তির বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মোট ৮১টি বা আরও কিছু বেশি নিবন্ধিত কোম্পানির মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্টের দক্ষতা রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ১০-১২টি কোম্পানি মোবাইল অ্যাপস তৈরি করে, যাদের তৈরি করা অ্যাপ্লিকেশনগুলো পরিবেশিত হয় আন্তর্জাতিক বাজারগুলোতে। এছাড়া বিভিন্ন মার্কেটপ্লেসগুলোতে ৩০-৫০ জন ব্যক্তিগতভাবে তাদের তৈরি অ্যাপ্লিকেশনগুলো নিয়মিতভাবে প্রদর্শন করেন। আন্তর্জাতিকভাবে সবগুলো মার্কেটে প্রায় ৮.৫ লাখের বেশি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন রয়েছে, যার প্রস্ত্ততকারক কয়েক হাজার, সেখানে বাংলাদেশের উপস্থিতি হাতেগোনা মাত্র কয়েকজন। অথচ বাংলাদেশে স্মার্টফোনের ব্যবহার বাড়ছে। এর সাথে বাড়ছে মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের ব্যবহার। মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের আন্তর্জাতিক বাজারগুলোও বাংলাদেশে এখন খুব দ্রুতগতিতে যেমন বাড়ছে, তেমনই জনপ্রিয়ও হয়ে উঠছে।
বাংলাদেশের মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্টের পেছনে আছে এ দেশীয় ব্যবহারযোগ্য বা নিজস্ব বাংলাভাষায় যেসব অ্যাপ্লিকেশন তৈরি হয়েছে, সেজন্যই বাংলাদেশে মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের ব্যবহার অনেকগুণ বেড়েছে। মোবাইল ডিভাইস প্রস্ত্ততকারক কোম্পানি নোকিয়ার নিজস্ব অ্যাপ্লিকেশনের মার্কেট থেকে প্রতি সপ্তাহে ১৩ লাখ ডাউনলোড হয়। অর্থাৎ বছরে প্রায় ৬২ কোটি ২৪ লাখ ডাউনলোড শুধু একটি মার্কেট থেকে আমাদের দেশে হয়েছে (২০১২ সালের তথ্যানুযায়ী)। এর ১০০ ভাগ ডাউনলোড হয়েছে বিনামূল্যে এবং আমাদের দেশের কোনো অ্যাপস প্রস্ত্ততকারী প্রতিষ্ঠান সরাসরি কোনো ডাউনলোড থেকে কোনো আয় করেনি। এর ফলে নতুন প্রজন্ম মোবাইল অ্যাপস তৈরিতে সহজেই আগ্রহী হয়ে উঠছে না। এর বাইরে গুগল অ্যান্ড্রয়িড ফোনের প্রাধান্য আমাদের দেশে বাড়ছে এবং বিশাল একটি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের বাজার তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা বাংলাদেশে সৃষ্টি হয়েছে। এ সম্ভাবনাময় বাজারে নিজেদেরকে সম্পৃক্ত করার জন্য এখন থেকে প্রস্ত্তত হতে হবে।
সাধারণত মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহারকারীরা ডাউনলোডের সময় মূল্য পরিশোধ করেন মোবাইলের ব্যালেন্স থেকে অথবা আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ড থেকে অথবা আন্তর্জাতিক পেমেন্ট অপশন, যেমন পেপাল দিয়ে। দুঃখজনকভাবে এগুলোর কোনোটিই আমাদের দেশে চালু নেই। মোবাইল থেকে পেমেন্ট করতে আগ্রহী ব্যবহারকারী এ দেশে রয়েছেন, যা অ্যাপ্লিকেশন ডাউনলোডের সংখ্যা অথবা স্থানীয়ভাবে ওয়ালপেপার রিংটোন বা ভিডিও ক্লিপ ডাউনলোড করার প্রবণতা থেকে বুঝা যায়।
আমাদের দেশের যেকোনো নির্মাতা গুগল অ্যান্ড্রয়িডের জন্য অ্যাপ্লিকেশন বানানোর পর বিনামূল্যে এর পরিবেশনের জন্য গুগল প্লে স্টোরকে বেছে নিতে হয়। যদিও গুগল সম্প্রতি বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে, কিন্তু আইন-কানুন ও পুরনো নিয়মনীতির জন্য অনেক সুযোগ-সুবিধা বাংলাদেশের নির্মাতাদের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে পারেনি। গুগল সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে, বাংলাদেশ থেকে কোনো মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন বিক্রির জন্য পরিবেশন করা যাবে না। তবে বিনামূল্যে পরিবেশন করা যাবে, অর্থাৎ বাংলাদেশের মোবাইল অ্যাপস নির্মাণকারীর একমাত্র ভরসা তৃতীয় কোনো পক্ষের অ্যাপ্লিকেশন প্রস্ত্ততের সময় এককালীন মূল্য পরিশোধের ওপর বা বিনিয়োগের ওপর। যদি কোনো প্রতিষ্ঠান চায়, তার নিজস্ব একটি মোবাইল অ্যাপস বানাবে, সেই প্রতিষ্ঠান তখন দক্ষ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠা থেকে এককালীন মূল্যে অ্যাপস বানাতে পারে।
তবে যারা অ্যাপস ডেভেলপ করে, তারা শুধু অন্য প্রতিষ্ঠানের ভরসায় অ্যাপস তৈরি করলে অস্তিত্বের হুমকির মুখে পড়তে হবে। অবশ্য এতে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের লাভ হতে পারে, তবে কোনোভাবেই নতুন প্রজন্মকে এ ক্ষেত্রে আগ্রহান্বিত করা যাবে না। সারাবিশ্বে ৪০০ মিলিয়ন ক্রেডিট কার্ড অ্যাকাউন্ট আছে, যেগুলো মোবাইল অ্যাপস কেনার জন্য ব্যবহার হয় এবং বিভিন্ন জনপ্রিয় বাজারগুলো বিশ্বের ৭০টির বেশি দেশের মোবাইল অপারেটরের বিলিংয়ের সাথে যুক্ত। অর্থাৎ বাংলাদেশ থেকে একটি ১০০ টাকা মূল্যমানের মোবাইল অ্যাপস বিক্রির জন্য নির্ধারণ করলে তা কেনার জন্য এই ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারী বা ৭০টির বেশি অপারেটরের গ্রাহকেরা কেনার সুযোগ পাবেন। আমাদের দেশের মোবাইল অ্যাপস প্রস্ত্ততকারকদের সহজ সুযোগ হচ্ছে দেশের বাজার উপযোগী অ্যাপস তৈরি করা। যেহেতু আন্তর্জাতিক বাজারগুলো আমাদের দেশের অপারেটরগুলোর সাথে সম্পৃক্ত নয়, তাই এরা বিনামূল্যে দেশে অ্যাপস পরিবেশন করছে এবং আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
আমাদের করণীয়
দেশে অনলাইন কেনাকাটায় উৎসাহিত করা হচ্ছে ঠিকই, তবে শুধু বেসিসের সদস্য প্রতিষ্ঠান ছাড়া কেউ আন্তর্জাতিকভাবে ক্রেডিট কার্ড অনলাইন ব্যবহার করতে পারে না। শুধু জাতীয় পর্যায়ের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার নিশ্চিত করলে মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন শিল্পের প্রসারের বাধা থেকেই যায়। দেশীয় নির্মাতারা যখন আয় থেকে বঞ্চিত, সেখানে বিদেশী প্রতিষ্ঠানের প্রাধান্য বাড়বে।
উন্নত বিশ্বে যেখানে সরকারি বা বেসরকারি প্রায় সব ধরনের সেবা মোবাইল ফোনে নিশ্চিত করা হচ্ছে, সেখানে আমাদের দেশে এখনও মোবাইল টাকা লেনদেন, কথা বলা, এসএমএস করা, খবর পড়া বা পরীক্ষার ফল বা ভর্তি-সংশ্লিষ্ট কর্মকা--র মধ্যে সীমাবদ্ধ। অথচ আমাদের দেশে মোট মোবাইল ব্যবহারকারীর শতকরা ৩০ ভাগই স্মার্টফোন ব্যবহারকারী। আমাদের দেশে মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের পূর্ণ বাজার সুবিধাসহ কার্যক্রম শুরু করার জন্য গুগল বা নোকিয়ার মতো প্রতিষ্ঠানগুলো উৎসাহিত করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন ইনবাউন্ড রেমিট্যান্সের মতো আউটবাউন্ড রেমিট্যান্সের সুযোগ করে দেয়া। আউটবাউন্ড রেমিট্যান্সের সুযোগ করে দেয়ায় এরা হয়তো ৩০ শতাংশ কমিশন নিয়ে যাবে, কিন্তু ৭০ শতাংশ আয়ের সুযোগ সৃষ্টি হবে। অনেক বড় বাজার তৈরি হবে এতে। নতুন প্রজন্ম এ বাজারকে ঘিরে মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনে নিজেদের ক্যারিয়ার গড়ে তোলার জন্য উৎসাহিত হবে। আমরা যদি আমাদের বাজার ব্যবস্থায় তাদের সুযোগ করে দেই, তাহলে আমাদেরও কিন্তু সুযোগ তৈরি হবে অন্য দেশের বাজারে প্রবেশের। সেই দেশ থেকেও আমরা মোট আয়ের ৭০ শতাংশ দেশে নিয়ে আসতে পারব। সুতরাং বিটিআরসিকে মোবাইল অপারেটরগুলোকে উৎসাহ এবং প্রয়োজনীয় সহযোগিতা ও অনুমতি দিতে হবে, যাতে মোবাইল অপারেটরগুলো এই আন্তর্জাতিক মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের বাজারের সাথে অপারেটর বিলিংয়ের মাধ্যমে যুক্ত হতে পারে। আন্তর্জাতিক এক বড় বাজারকে পাশ কাটিয়ে মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের শিল্প বিকাশ সম্ভব হবে না।
আন্তর্জাতিক বাজারগুলো আমাদের দেশে আগ্রহী না হওয়ার আরেকটি বড় কারণ উচ্চহারে রেমিট্যান্স ট্যাক্স। সব মিলিয়ে প্রায় শতকরা ২৮ ভাগ আউটবাউন্ড রেমিট্যান্স ট্যাক্স, যা মোটেও উৎসাহ জোগায় না বিদেশি বিনিয়োগকারীদের। কিন্তু এই আউটবাউন্ড রেমিট্যান্সের প্রশ্ন আসবে আউটবাউন্ড রেমিট্যান্সের অনুমতি দেয়ার পর। উন্মুক্ত বাজারগুলোতে মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন পরিবেশন ছাড়াও তথ্যপ্রযুক্তিতে যারা আউটসোর্সিং কর্মকা--র সাথে যুক্ত, তাদের জন্য আরও নতুন সুযোগ তৈরি হচ্ছে। আমাদের দেশের ফ্রিল্যান্সারেরা সারা বিশ্ব জয় করেছেন। গত দুই বছরের আইটি জব সাইট ডাইসে (Dicc.com) শুধু অ্যান্ড্রয়িড অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপারদের জন্য চাকরির পোস্টিং বেড়েছে ৩০২ শতাংশ। যুক্তরাজ্যে আন্তর্জাতিকভাবে যত ধরনের মোবাইলভিত্তিক চাকরির খবর প্রকাশিত হয়েছে, এর ৫৭ শতাংশ মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের। আউটসোর্সিংয়ের জন্য জনপ্রিয় ইল্যান্স ডটকম সূত্রের তথ্যানুযায়ী জানা যায়, তথ্যপ্রযুক্তি-ভিত্তিক কাজের চাহিদা ৩৯ শতাংশ। এর মধ্যে শুধু অ্যান্ড্রয়িড মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের কাজের চাহিদা গত বছরে তুলনায় এ বছর বেড়েছে ৭১ শতাংশ। সারাবিশ্বের তথ্যপ্রযুক্তি-ভিত্তিক কর্মসংস্থানে বিশেষ করে মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের ক্ষেত্রে আমাদের নতুন প্রজন্মকে আগ্রহী করে তুলতে হবে। মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন তৈরির শুরুতেই প্রয়োজন হয় একটি আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ড। এই সুবিধা নিশ্চিত করা খুবই দরকার। যারা সাধারণ প্রোগ্রামিং পারে, তারাই মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন তৈরির সাথে যুক্ত হতে পারবে। জানতে হবে শুধু নতুন কিছু সিনট্যাক্স। যারা জাভা এবং সি, সি++ জানে, তারা অ্যান্ড্রয়িড অ্যাপ্লিকেশন, অবজেকটিভ সি, প্রোগ্রামিং জানলে আইওএস বা আইফোনের জন্য অ্যাপ্লিকেশন বানাতে পারবে। দেশের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের বাজার এবং কারিগরি দিকগুলো তুলে ধরা, আলাদা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, জেলা পর্যায়ে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ আয়োজন করে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় তথ্যপ্রযুক্তির এই ক্ষেত্রের জন্য দক্ষ জনগোষ্ঠী গড়ে তোলার জন্য পরিকল্পনা নিতে হবে এখনই।
শেষ কথা
বিশ্বব্যাপী মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্টের চাহিদা ব্যাপকভবে বেড়ে যাওয়ায় এবং দক্ষ জনবলের অভাব পরিলক্ষিত হওয়ায় বাংলাদেশ সরকারের নীতি-নির্ধারণী মহল একটু দেরিতে হলেও যথার্থ উপলব্ধি করতে পেরেছে এবং বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছে এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় জনবল তৈরির জন্য। সরকার এবং জনগণের মিলিত প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ অচিরেই ‘The land of mobile apps and games’ হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠতে পারে।
জাতীয় পর্যায়ে মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট ও দক্ষতা বাড়ানোর কর্মসূচির আওতায় নাগরিকদের সেবা দেয়া ও গ্রহণ পর্যায়কে সহজতর করার লক্ষে ২০টি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ। দেশের সব শ্রেণীর নাগরিকদের জন্য প্রয়োজনীয় এ অ্যাপ্লিকেশনগুলো মোবাইল সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান গ্রামীণফোনের যেকোনো গ্রাহক বিনামূল্যে গ্রামীণফোনের অ্যাপ স্টোর থেকে ডাউনলোড করে ব্যবহার করতে পারবেন। গত ২১ এপ্রিল গ্রামীণফোন লিমিটেড এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্প্রতি এক স্মারক চুক্তি স্বাক্ষর করে।
বাংলাদেশের অ্যান্ড্রয়িড অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপারদের জন্য আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে যুক্ত হতে এতদিন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় বাধা হিসেবে ছিল বাংলাদেশ থেকে অনলাইনে লেনদেনের সুযোগ না থাকা। এ অসুবিধাটি অনুধাবন করে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রচেষ্টায় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগে বাংলাদেশে অনুমোদন পেল ভার্চুয়াল কার্ড ব্যবস্থা। তবে বর্তমানে এ সুবিধা শুধু তথ্যপ্রযুক্তি খাতেই সীমাবদ্ধ থাকবে। ২০ জুন বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে জারি করা এক বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা যায়- ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স অন্তর্ভুক্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ব্যক্তিগত পর্যায়ে মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন এবং গেম নির্মাণকারীদের আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে অর্থ লেনদেনের জন্য ভার্চুয়াল কার্ড ইস্যু করার সুবিধা দেবে। জাতীয় পর্যায়ে মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন উন্নয়নে সচেতনতা ও দক্ষতা বাড়ানোর কর্মসূচির আওতায় অংশগ্রহণকারী ডেভেলপার, বেসিস বা এর সহযোগী প্রতিষ্ঠান আয়োজিত নানা ধরনের বুট ক্যাম্প/হ্যাকথন/পরীক্ষণ কর্মশালায় সনদপ্রাপ্ত ডেভেলপার এবং ফ্রিল্যান্সারেরা অনুমোদিত বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে এ কার্ড সংগ্রহ করতে পারবেন। মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন এবং গেম নির্মাণের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান এবং মার্কেটপ্লেসগুলোয় অর্থ বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে এ ভার্চুয়াল কার্ড ব্যবহার হবে। এ কার্ড দিয়ে গুগল, আইটিউনস, ফায়ারফক্স, উইন্ডোজ, ব্ল্যাকবেরিসহ এ ধরনের অন্যান্য মোবাইল মার্কেটপ্লেসের নিবন্ধন/লাইসেন্স ফি দেয়া হবে। পাশাপাশি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন এবং গেম ডেভেলপমেন্টের জন্য নির্দিষ্ট গেম ইঞ্জিন এবং সংশ্লিষ্ট ব্যবহারের লাইসেন্স ফি দেয়া যাবে। প্রয়োজনীয় ডোমেইন/হোস্টিং করার বা পুনর্ব্যবহারকরণ, ক্লাউড সেবার জন্য অর্থ দেয়ার জন্য এ কার্ড ব্যবহার করা যাবে।
‘এ দেশের মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপারদের মার্কেট শেয়ার নিয়ে আমি হতাশ’
শামীম আহসান
প্রেসিডেন্ট, বেসিস
‘মোবাইল অ্যাপস ডেভেলপমেন্ট আগ্রহীদেরকে বেসিস কীভাবে সহায়তা দিচ্ছে- এমন প্রশ্নে বলতে হয়, এ ক্ষেত্রে জনবল তৈরির লক্ষে বিআইটিএম তথা বেঙ্গল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি অ্যান্ড ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে মোবাইল অ্যাপস ডেভেলপমেন্টে প্রশিক্ষণ দেয়ার কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে।
বেসিসের মাধ্যমে বিভিন্ন অ্যাপস স্টোরে রেজিস্ট্রি করলে ৩০০ ডলার পর্যন্ত রেমিট্যান্স করতে পারবে। বাংলাদেশের তৈরি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনগুলো বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রমোট করার জন্য বেসিস দেশে ও বিদেশে রোড শো ও মেলা করছে। আন্তর্জাতিক বাজারে এ দেশের মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপারদের মার্কেট শেয়ার প্রসঙ্গে আমি খুবই হতাশ। কেননা হাতেগোনা কয়েকজন মাত্র বাংলাদেশে মোবাইল অ্যাপস ডেভেলপমেন্টের সাথে জড়িত। বাংলাদেশ সরকার মোবাইল অ্যাপস ডেভেলপমেন্টে বেশ উদ্যোগী হয়েছে, যা এক ইতিবাচক দিক। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সরকার মোবাইল অ্যাপস ডেভেলপমেন্টের জন্য দেশব্যাপী বিভিন্ন কর্মশালার আয়োজন করে যা এখনও অব্যাহত আছে।। এ ধারা অব্যাহত থাকলে এ ক্ষেত্রে অবশ্যই সফলতা আসবে।
মোবাইল অ্যাপস ডেভেলপমেন্টের অন্যতম প্রধান প্রতিবন্ধকতার প্রসংগে তিনি বলেন, মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের ক্ষেত্রে বহির্মুখী রেমিট্যান্সের সুযোগ বা অনুমতি নেই এবং মোবাইল অপারেটর এবং সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারীদের বহির্মুখী রেমিট্যান্সের ওপর ট্যাক্সের হার অনেক।’
‘মোবাইল অ্যাপ তৈরির জন্য চাই একটি ভালো আইডিয়া’
এসএম আশরাফ আবীর
সিইও, এমএমসি
‘মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন তৈরির জন্য প্রথমেই দরকার একটি ভালো আইডিয়া। কী বিষয় নিয়ে অ্যাপ্লিকেশন বানানো হবে, সেই বিষয়বস্ত্ত নির্বাচন করাটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এরপর প্রয়োজন হবে কোন ডিভাইসে ও অপারেটিং সিস্টেমের জন্য প্রস্ত্তত করা হবে তা নির্বাচন করা। এক বা একাধিক বা সব ডিভাইসের জন্য একটি অ্যাপ্লিকেশন প্রস্ত্তত করা যেতে পারে। অ্যাপ্লিকেশন প্রস্ত্ততের জন্য প্রয়োজন অপারেটিং সিস্টেমের নির্দিষ্ট প্রোগ্রামিং দক্ষতা। প্রোগ্রামিংয়ের পাশাপাশি মোবাইল উপযুক্ত কনটেন্ট বা আধেয় এবং গ্রাফিক্স গুরুত্বপূর্ণ। অ্যাপ্লিকেশন প্রস্ত্ততের সময় বিভিন্ন মোবাইল এসডিকে ব্যবহার, কোয়ালিটি চেক করা, প্যাকেজিং, বিজ্ঞাপন ইত্যাদি কারিগরি বিষয়ে প্রয়োজনীয় দক্ষতা থাকতে হবে। এসব কিছু তৈরি হওয়ার পর এই অ্যাপ্লিকেশন সরবরাহ করার জন্য অপারেটিং সিস্টেম বা ডিভাইসগুলোর নিজস্ব মার্কেটগুলো নির্বাচন করতে হবে। স্বয়ংক্রিয়ভাবে এই মার্কেটগুলো থেকে তৈরি করা মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনগুলো সারা বিশ্বের স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের কাছে প্রদর্শিত হয়। যেকেউ তখন ডাউনলোড করতে পারবেন যেকোনো জায়গা থেকে এবং প্রস্ত্ততকারক চাইলে তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।
মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন শিল্পে বিকাশের জন্য প্রয়োজন : ০১. মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের ক্ষেত্রে বহির্মুখী রেমিট্যান্সের সুযোগ বা অনুমতি। ০২. মোবাইল অপারেটর এবং সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারীদের বহির্মুখী রেমিট্যান্সের ওপর ট্যাক্সের হার কমানো। ০৩. মোবাইল অপারেটর প্রতিষ্ঠানগুলোকে আন্তর্জাতিক বাজারগুলোর সাথে অপারেটর বিলিংয়ের সুযোগ দেয়া। ০৪. স্থানীয় ক্রিডিট কার্ডগুলোকে (ভিসা/মাস্টার) অনলাইনে আন্তর্জাতিকভাবে ব্যবহারের অনুমতি দেয়া। ০৫. জাতীয় পর্যায়ে মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের বাজার এবং কারিগরি দিক নিয়ে প্রচার ও কর্মদক্ষতা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন সভা, প্রশিক্ষণের আয়োজন করা। ০৬. যারা ইতোমধ্যেই মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন নির্মাণের সাথে যুক্ত, তাদের দক্ষতা এবং কর্মপরিধি বাড়ানোর জন্য আর্থিক সহায়তা-প্রণোদনা, হাইটেক পার্কে দীর্ঘমেয়াদে স্বল্পমূল্যে জায়গা দিয়ে উৎসাহ দেয়া। ০৭. বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অনুষ্ঠিত মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন প্রদর্শনীতে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে আর্থিকভাবে সহায়তা করে প্রদর্শনী করা, যা বিদেশী প্রতিষ্ঠানগুলোকে মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন প্রস্ত্তত করার জন্য আমাদের দেশকে বেছে নিতে আগ্রহী করে তুলবে। ০৮. মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন নিয়ে কাজ করছে এমন প্রতিষ্ঠানকে সাথে নিয়ে স্বল্প বা দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনায় এই শিল্পের দক্ষ প্রজন্ম গড়ে তোলার প্রকল্প গ্রহণ করা। ০৯. দেশের সব সরকারি সেবা স্মার্টফোন অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে পাওয়া নিশ্চিত করার জন্য উদ্যোগ নেয়া। ১০. বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের কারিগরি দিক নিয়ে নিয়মিতভাবে আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা এবং জাতীয়ভাবে সরকারি ও বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ল্যাব প্রস্ত্তত করা। ১১. মোবাইল ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিসে দিকনির্দেশনামূলক আইনের বাস্তবায়ন।’
‘মোবাইল অ্যাপ নিয়ে তৈরি হয়নি প্রয়োজনীয় সচেতনতা’
পাপিয়া চৌধুরী
সফটওয়্যার প্রকৌশলী, মবিলিটি
গ্রামীণ সলিউশনস
‘মোবাইল অ্যাপস ডেভেলপমেন্ট বাংলাদেশে এখন নতুন, তাই তৈরি হয়নি সচেতনতা। একটা ছোট্ট অ্যাপস দিয়ে আমার মোবাইল ফোন থেকে আমি সেরে ফেলতে পারি রাজ্যের কাজ, ব্যবসায়, বিপণন, তথ্য, বিনোদন সবকিছুই।
মোবাইল অ্যাপস ডেভেলপমেন্টের ক্ষেত্রে প্রধান প্রতিবন্ধকতা হলো বাংলাদেশের জনগণ এখনও তাদের হাতের মোবাইল ফোনটির ক্ষমতা সম্পর্কে অবগত নন। ক্যামেরা আর ফেসবুকের বাইরেও অসংখ্য ফিচার আছে, যেগুলো আমাদের দেশের স্মার্টফোন ব্যবহারকারীরা জানেন না। এ ছাড়া মোবাইল অ্যাপস ডেভেলপমেন্ট যে একটি পেশা বা ব্যবসায় হতে পারে, সে ব্যাপারেও কোনো ধারণা নেই আমাদের। আমার মনে হয়, এ অজ্ঞতাই হলো মোবাইল অ্যাপস ডেভেলপমেন্টের ক্ষেত্রে প্রধান প্রতিবন্ধকতা। সুতরাং এ ব্যাপারে সচেতনতা আগে তৈরি করতে হবে।
মোবাইল অ্যাপস নিয়ে কাজের সংখ্যা এখনও অনেক কম। তবে শুরুটা অনেক দ্রুততার সাথে হচ্ছে। আশা করা যায়, এর মাত্রা বহুলাংশে বাড়বে।
সরকার যদি মোবাইল অ্যাপস ডেভেলপারদের জন্য প্রয়োজনীয় ডাটাবেজ উন্মুক্ত করতে পারে, তাহলে মোবিলিটিতে বড় ধরনের বিস্ফোরণ সম্ভব।
বাংলাদেশে সাধারণ মানুষের এখনও মোবাইল অ্যাপস কিনে ব্যবহার করার প্রবণতা কম। অ্যাপস কেনাবেচার জন্য উপযুক্ত পেমেন্ট গেটওয়ে আমাদের নেই। তবে অ্যাপসের মধ্যে বিজ্ঞাপনের সুযোগ দেয়ার মাধ্যমে মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপারেরা আয় করতে পারেন, করেনও। এ ছাড়া অনেক প্রতিষ্ঠানে নির্বাহী কাজে নানা ধরনের কাস্টম অ্যাপস দরকার হয়। যেমন : ব্যাংক, ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, অনলাইন শপ-সেল ইত্যাদি। এসব প্রতিষ্ঠানের জন্য অ্যাপস তৈরি করে ডেভেলপারেরা আয় করতে পারেন।
মোবাইল অ্যাপস রফতানি করছি- কথাটা বলার মতো জায়গায় এখনও আমরা নেই, তবে শিগগিইর যাব। বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সারেরা ইতোমধ্যে তাদের প্রোফাইলকে বেশ উঁচু জায়গায় নিয়ে গেছেন। তাদের কাজের মধ্যে মোবাইল অ্যাপস ডেভেলপমেন্ট অন্যতম। সময়মতো উন্নতমানের কার্যকরী অ্যাপস ও সার্ভিস আমরা অনেক সস্তায় রফতানি করছি বাইরের মার্কেটে। কাজে নিষ্ঠা, সততা ও প্রফেশনালিজম থাকলে ক্লায়েন্ট আমাদেরকেই কাজ দেবে।
নতুন নতুন প্রযুক্তির অভাব নেই। ডেভেলপারদের নতুন প্রযুক্তির সাথে পরিচিত হতে হবে প্রতি মুহূর্তে। প্রযুক্তি বিবর্তিত হচ্ছে, বিবর্তিত হচ্ছে চাহিদাও। সেই হিসেবে বদলে নিতে হবে আমাদের কাজের ধারা। তাহলেই সম্ভব।
আমার বিশ্বাস, সরকার ও জনগণের মিলিত প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ অচিরেই বিশ্বে ‘ঞযব খধহফ ড়ভ গড়নরষব অঢ়ঢ়ং ধহফ এধসবং’ হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠবে।’
ফিডব্যাক : mahmood@comjagat.com