প্রযুক্তি তার আপন গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। শুধু আমরাই পারছি না প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে। ফলে যা হবার তাই হচ্ছে। জাতি হিসেবে আমরা পিছিয়ে পড়ছি। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নকল্প গড়ি। কিন্তু বাস্তবে সেই ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ আয়োজন নেই। আমাদের কর্তাব্যক্তিরা ই-গভর্নেন্সের কথা বলেন জোরেশোরেই। কিন্তু ই-গভর্নেন্সের ক্ষেত্রে আমাদের দৈন্য সীমাহীন। তথ্য পরিসংখ্যানই এ বক্তব্য সমর্থন করে। সরকারি এক রিপোর্ট মতে, সরকারি অফিসগুলোর ৮৮ শতাংশ অফিসেই এমন কোনো কর্মকর্তা নেই, যিনি তথ্যপ্রযুক্তি বিষয় নিয়ে কাজ করেন। সরকারি অফিসের ৭০ শতাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারি কমপিউটার ব্যবহার করেন না। পরিস্থিতির আরো খারাপ বিভিন্ন অধিদফতর, কর্পোরেশন ও কমিশনের অফিসগুলোয়। সেখানে ৯৫ শতাংশ অফিসে তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক কোনো পেশাজীবী নেই। সরকারি অফিসে প্রতি ১০০ জনে ২৮ জনের রয়েছে পার্সোনাল কমপিউটার। এসব তথ্য-পরিসংখ্যান এটাই নির্দেশ করে, বাংলাদেশে ই-গভর্নেন্স উদ্যোগ এখনো জায়মান পর্যায়ে। জানি না, দেশে ই-গভর্নেন্স পরিস্থিতি এ পর্যায়ে রেখে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন আদৌ সম্ভব কি না? অথচ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ডিজিটায়নের অবিচ্ছেদ্য অংশ হচ্ছে ই-গভর্নেন্স। ই-গভর্নেন্স পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটাতে না পারলে বর্তমান সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন অপূর্ণই থেকে যাবে। ই-গভর্নেন্সের এই দুর্বল পরিস্থিতি দেখে প্রশ্ন জাগে, আমাদের সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা ই-গভর্নেন্স বাস্তবায়নে আদৌ আন্তরিক কি না? অভিযোগ আছে, অপেশাজীবী ব্যক্তিদেরকে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে আইসিটি প্রকল্প বাস্তবায়নে। বুয়েট ও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় যেসব তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ তৈরি করছে, নীতিনির্ধাকেরা তাদের দিকে ফিরে তাকায় খুবই কম। ফলে তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে দেশের উচ্চশিক্ষিতরা আজ পাড়ি দিচ্ছেন বিদেশে। এ অবস্থা চলতে থাকলে তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে জাতি হিসেবে আমাদের অগ্রগমন বাস্তবে ঘটবে না। বিষয়টি বিবেচনায় আনার জন্য দৃষ্টি আকর্ষণ করবো আমাদের নীতিনির্ধারকদের।
প্রযুক্তি তার আপন গতিতে পথ চলে ইতোমধ্যেই পদার্পণ করেছে ন্যানোপ্রযুক্তির যুগে। ন্যানোপ্রযুক্তি মানুষের সামনে আজ হাজির করছে সুযোগ-সম্ভাবনার নতুন নতুন দিগন্ত। তেমনি অপার সম্ভাবনার এক দিগন্তের নাম ন্যানোমেডিসিন। ন্যানোমেডিসিন ন্যানোপ্রযুক্তির সবচেয়ে আলোচিত এক ক্ষেত্র। বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের রোগ-নিরাময়ের নতুন নতুন অভাবনীয় সব উপায় নিয়ে হাজির হচ্ছে এই ন্যানোমেডিসিন। এক সময় যে রোগের চিকিৎসা করা ছিল চিকিৎসকদের ক্ষমতার বাইরে, আজ তা সম্ভব হচ্ছে এই ন্যানোমেডিসিনের সুবাদে। ন্যানোমেডিসিনের সুবাদে আজ শুরুতেই ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করে ক্যান্সার থামিয়ে দেয়া হচ্ছে। শরীরের মন্দকোষ সরিয়ে ফেলা সম্ভব হচ্ছে। রোগনির্ণয় আরো সঠিকভাবে করা যাচ্ছে। রোগ যথার্থভাবে চিহ্নিত করে তা আরো সহজে চিকিৎসা করা যাচ্ছে। এর মাধ্যমে অণু-পরমাণু আকারের জীবনদায়ী ওষুধ পাম্প করে দেহে স্থাপন করা যাচ্ছে। সন্ধিবাত চিকিৎসায় ন্যানোমেডিসিন খুবই উপকারী বলে প্রমাণিত হয়েছে। রোগনির্ণয় পদ্ধতি সস্তা ও সহজ হয়েছে। ডাক্তারদের হয়ে আজ কাজ করছে ন্যানোরোবট। অঙ্গ সংস্থাপনও সহজতর হয়েছে। ন্যানোচিকিৎসার প্রকৃত উন্নতি সাধন হয়েছে। মোট কথা ন্যানোমেডিসিন আমাদের সামনে হাজির করছে অভাবনীয় সব চিকিৎসা সুযোগ। তাই ন্যানোটেকনোলজিকে আজ বলা হচ্ছে ‘ম্যানুফেকচারিং টেকনোলজি অব দ্য টুয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরি’। আর ন্যানোমেডিসিনকে বলা হচ্ছে ‘আজ ও আগামীর চিকিৎসাসেবা’।
স্বাভাবিক ও বোধগম্য কারণেই গোটা বিশ্বে ন্যানোমেডিসিনের বাজার দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে। বিশ্বের নানা দেশে এখন উৎপাদিত হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের ন্যানোমেডিসিন। ২০০৪ সালে বিশ্বে ন্যানোমেডিসিন বিক্রি হয়েছে ৬৮০ কোটি ডলারের। তখন বিশ্বের ২০০ কোম্পানি তাদের ৩৮টি ন্যানোমেডিসিন পণ্য বিক্রি করে। সম্প্রতি এক জরিপমতে, ২০১৫ সালের দিকে ন্যানোমেডিসিনের বিশ্ববাজারের পরিমাণ দাঁড়াবে ১৬ হাজার কোটি ডলার। প্রতিবেশী ভারত এক্ষেত্রে অগ্রগতি অর্জন করে চলেছে। ২০০৫-০৬ সালের দিকে ভারত স্তন ক্যান্সারের ন্যানোওষুধ বিক্রি করে ৩২ কোটি ডলারের। ২০০৯ সালে এর পরিমাণ ৭৫ কোটি ডলারে উঠে এসেছে। খুব শিগগিরই তা ১০০ কোটি ডলারের পৌঁছবে। ভারত ন্যানোপ্রযুক্তির পেছনে খরচ করছে প্রচুর অর্থ।