যখনই নতুন সিস্টেমের প্রসঙ্গ আসে তখন শুরু হয় তার স্পেসিফিকেশন নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ। তা ডেস্কটপ হোক বা ল্যাপটপই হোক। এই স্পেসিফিকেশন থেকে যন্ত্রাংশ নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রথম দিকেই থাকে সিস্টেমের স্পেস এবং হার্ডড্রাইভের ক্যাপাসিটি কেমন। যত বড় ক্যাপাসিটির হার্ডড্রাইভ তত বড় সিস্টেমের ধারণক্ষমতা। সিস্টেমের এই ধারণক্ষমতা বেশি হলে কমপিউটিংয়ের সুবিধা হয়। বেশি পরিমাণে ফাইলপত্র রাখা যায়। গ্রাফিক্স এবং মিডিয়া নিয়ে যারা কাজ করেন, তাদের জন্য বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন হার্ডড্রাইভ অত্যাবশ্যকীয়। তাই সিস্টেম নির্বাচনে হার্ডড্রাইভ সবসময়ই বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে।
এতদিনকার হার্ডড্রাইভের ধারণা থেকে মানুষ এখন বের হয়ে আসতে শুরু করেছে। তার কারণ হার্ডড্রাইভ মানেই যে এখন ম্যাগনেটিক প্লটারে ডাটা রাখা তা নয়। এখন এসএসডি হার্ডড্রাইভ নামে এক নতুন ধরনের হার্ডড্রাইভ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।
হার্ডড্রাইভের প্রথম তথ্য পাওয়া যায় ১৯৫০ সালে। তখনকার হার্ডড্রাইভ অনেক বড় আকৃতির হতো। বিশাল বিশাল প্লটারে ডাটা রাখা হতো বৈদ্যুতিক সংকেতের উপস্থিতি এবং অনুপস্থিতি বিবেচনায় রেখে। এখনকার হার্ডড্রাইভের আকৃতি অনেক ছোট হয়ে এসেছে। কিছুদিন আগেও ডেস্কটপে ৫ ইঞ্চি ফর্মফ্যাক্টরের এবং ল্যাপটপে ৩.৫ ইঞ্চি ফর্মফ্যাক্টরের হার্ডড্রাইভ ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু এখন অনেক ডেস্কটপেও মূল হার্ডড্রাইভ হিসেবে ৩.৫ ইঞ্চি ফর্মফ্যাক্টরের হার্ডড্রাইভ ব্যবহার করা হচ্ছে। হয়তো ধীরে ধীরে ৫ ইঞ্চি ফর্মফ্যাক্টরের হার্ডড্রাইভের ব্যবহার সীমিত হয়ে যাবে। এই ৫ ইঞ্চি ফর্মফ্যাক্টরের হার্ডড্রাইভ ও ৩.৫ ইঞ্চি ফর্মফ্যাক্টরের হার্ডড্রাইভের মূল পার্থক্য হলো দ্বিতীয় হার্ডড্রাইভে বিদ্যুৎ খরচ কম হয়। বিদ্যুৎ খচর কম হওয়ায় মোবিলিটির সুবিধা পাওয়া যায়। এখান থেকেই এসএসডি হার্ডড্রাইভের উৎপত্তি। এসএসডি হার্ডড্রাইভের মূল সুবিধা হচ্ছে এর মেকানিজম। এখানে কোনো প্লটার বা ম্যাগনেট ফিল্ড নেই। নেই কোনো রিড/রাইট হেড। এখানে তথ্য জমা থাকবে সেমিকন্ডাক্টরভিত্তিক ক্যাপাসিটরের মাধ্যমে। ঠিক যে প্রযুক্তিতে পেনড্রাইভ কাজ করে। তবে পেনড্রাইভ থেকে এটি কিছুটা আলাদা। পেনড্রাইভ কাজ করে ইউএসবি ড্রাইভের মাধ্যমে। কিন্তু এসএসডি হার্ডড্রাইভকে সরাসরি যেকোনো সিস্টেমে হার্ডডিস্ক হিসেবে ব্যবহার করা যায়। কারণ সাধারণ যেকোনো হার্ডডিস্ক এবং এসএসডি হার্ডড্রাইভের কানেকশন এবং পিন কনফিগারেশন একই। আর এই এসএসডি হার্ডড্রাইভের কম্প্যাটিবিলিটি মাইক্রোসফটের নতুন অপারেটিং সিস্টেম উইন্ডোজ ৭-এ রাখা হয়েছে বলে এর চাহিদা বেড়ে চলেছে।
এসএসডি হার্ডড্রাইভের পুরো নাম হচ্ছে সলিড স্টেট ড্রাইভ। আগেই বলা হয়েছে এতে কোনো ম্যাগনেটিক ফিল্ড নেই। এর মেমরি হিসেবে পেনড্রাইভের মতো ফ্ল্যাশ মেমরি ব্যবহার করা হয় না। এতে ব্যবহার করা হয় র্যা।মের ডির্যানম বা এসর্যা ম। এজন্য অনেক সময় একে র্যাযম ড্রাইভও বলা হয়ে থাকে। তবে র্যারম ড্রাইভকে কেউ র্যাামডিস্ক হিসেবে ভুল বুঝবেন না। র্যা মডিস্ক এক ধরনের ডিভিডি ডিস্ক ছাড়া আর কিছুই নয়। কিন্তু র্যা্ম ড্রাইভ পুরোদস্তুর হার্ডডিস্ক।
সলিড স্টেটের মূল ধারণা পাওয়া যায় ইলেকট্রনিক টিউবের পরিবর্তে সেমিকন্ডাক্টর ব্যবহারের চিন্তা থেকে। সেখান থেকেই সূচনা এসএসডি হার্ডড্রাইভের। এই এসএসডি হার্ডড্রাইভে কোনো চলমান অংশ থাকে না যাতে সাউন্ড হয়। তাই এই হার্ডডিস্ক নিঃশব্দে কাজ করে। এর পাশাপাশি এতে কোনো মেকানিক্যাল ডিলে নেই, তাই এর ল্যাটেন্সি টাইম এবং অ্যাকসেস টাইম অনেক কম। নিঃশব্দে এবং দ্রুত কাজ করা যায় এই হার্ডডিস্কে। শুধু তাই নয়, এতে কোনো কুলিংয়ের দরকার হয় না বলে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং ওজনেও হালকা।
এসএসডি হার্ডড্রাইভের ধারণা একেবারেই নতুন তা কিন্তু নয়। অনেক আগে থেকেই এসএসডি হার্ডড্রাইভের ওপর সিস্টেম নির্মাতাদের ভরসা ছিল। আশির দশকে র্যা মডিস্ক সিস্টেম দ্রুত বুট করার জন্য খুব জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। সে সময় সাধারণ ম্যাগনেটিক হার্ডডিস্কের দাম অনেক বেশি ছিল। এর বিকল্প হিসেবে অনেকে তখন ফ্লপির কথাও ভেবেছিল। কিন্তু সে সময় ফ্লপিড্রাইভ ছিল ভয়াবহ রকমের ধীরগতির। তাই এসএসডি হার্ডড্রাইভ ছিল সিস্টেম দ্রুত বুট করার জন্য সবার পছন্দের। তখন ম্যাকিন্টোশ কমপিউটারেই এ ধরনের হার্ডড্রাইভ ব্যবহার করা হতো। সাধারণ মেকানিক্যাল হার্ডডিস্কের দাম এর পর কমতে থাকায় এসএসডি হার্ডড্রাইভ ধীরে ধীরে হারিয়ে যায়।
এর পরে ১৯৯৫ সালের দিকে স্যানডিস্কের পূর্ববর্তী প্রতিষ্ঠান এম-সিস্টেমস এসএসডি হার্ডড্রাইভ ব্যবহারের কথা চিন্তা করে। তবে তখন ডির্যা ম বা এসর্যারমের কথা তারা ভাবেনি। তারা এসএসডি হার্ডড্রাইভে ফ্ল্যাশ মেমরি ব্যবহারের কথাই ভেবেছিল। তখন তাদের এই প্রজেক্ট সফলতার মুখ দেখেনি। এখান থেকেই থেমে ছিল এসএসডি হার্ডড্রাইভের উৎকর্ষ। এর পরে এর পুনর্জাগরণ শুরু হয় এ বছরেরই শুরুর দিকে। এইচপি তাদের সার্ভার এবং স্টোরেজ স্টেশনে এসএসডি হার্ডড্রাইভ ব্যবহার শুরু করে। এইচপি এই ব্যবহার শুরুর পক্ষে যুক্তি দেখায় এসএসডি হার্ডড্রাইভের উঁচু ব্যান্ডউইডথের। তখন তারা এর ব্যান্ডউইডথ ব্যবহার করে ৮০০ এমবিপিএস। তবে মাত্র পাঁচ মাসে এর ব্যান্ডউইডথ বেড়ে দাঁড়ায় ৩ জিবিপিএস। খুব শিগগিরই এর ব্যান্ডউইডথ বেড়ে দাঁড়াবে ১ টিবিপিএস (টেরাবাইট পার সেকেন্ড)। তাই এসএসডি হার্ডড্রাইভের চাহিদা এখন আকাশচুম্বী।
একনজরে
এসএসডি ড্রাইভের সুবিধাগুলো হচ্ছে দ্রুত স্টার্টআপ, কোনো স্পিনিং টাইম নেই, রিড/রাইট হেডের মুভমেন্ট নেই, অ্যাকসেস টাইম নেই বললেই চলে, অনেক উঁচু ব্যান্ডউইডথ, ল্যাটেন্সি টাইম নেই বললেই চলে, ডিফ্র্যাগমেন্টেশনের কোনো প্রয়োজন নেই, কোনো নয়েজ নেই, মেকানিক্যাল রিলায়াবিলিটি অনেক বেশি, মেকানিক্যাল ফেইল্যুর নেই বললেই চলে, কম বিদ্যুতে চলে, ওজনে হাল্কা, মোবাইল ডিভাইসের উপযোগী, কুলিং লাগে না, উঁচু তাপমাত্রায় এমনকি ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় চলে ইত্যাদি।
কজ ওয়েব
ফিডব্যাক : javedcse1982@yahoo.com