বিসিএস কমপিউটার সিটি। বাংলাদেশ কমপিউটার সমিতি তথা বিসিএস-এর উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত একটি কমপিউটার মার্কেট। প্রতিষ্ঠা দিবস ১১ সেপ্টেম্বর ১৯৯৯। ১৯৯৮ সালে বিসিএস একটি বড় আঙ্গিকের কমপিউটার মেলার আয়োজন করার উদ্যোগ নেয়। ঢাকা শহর চষে বেড়াতে হয় এ মার্কেটের উপযোগী জায়গা পেতে। শেষ পর্যন্ত আইডিবি ভবনের শপিং কমপ্লেক্সটি খুঁজে পাওয়া যায়। তখন সেখানে মাত্র চারটি দোকান বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। এ শপিং কমপ্লেক্সকে কেন্দ্র করে সমিতি ১৯৯৮ সালে মেলার আয়োজন করে। বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল কমপিউটার মেলা ছিল এটি। ১৯৯৯ সালে কমপিউটার সমিতি সিদ্ধান্ত নেয় আইডিবি ভবন শপিং কমপ্লেক্সটিকে একটি কমপিউটার মার্কেটে রূপ দেবে। চলে আয়োজন। প্রতিষ্ঠিত হয় বিসিএস কমপিউটার সিটি। এটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে বড় কমপিউটার মার্কেট। এখন এ মার্কেট প্রতিদিন মুখরিত থাকে তরুণ-তরুণীর কোলাহলে। এখানে নানা বয়সের কমপিউটারপ্রেমী মানুষের ভিড় জমে। বিপণন, বিনোদন ও শিক্ষা-এ তিনের সমন্বয় ঘটেছে এ বাজারে।
বরাবর বাংলাদেশ কমপিউটার সমিতি ব্যবসায় প্রসারের উদ্যোগের পাশাপাশি জনকল্যাণমূলক অনেক কর্মকান্ড পরিচালনা করে আসছে। এদেশে কমপিউটারের ওপর থেকে শুল্ক ও ভ্যাট প্রত্যাহার কমপিউটার সমিতির আন্দোলনের ফসল। উদ্দেশ্যের দিক থেকে এ মার্কেটের প্রধান কাজ কমপিউটার কেনা-বেচা। দেশের কমপিউটার বাজারের সিংহ ভাগ দখল করে আছে বিসিএস কমপিউটার সিটি। আস্থার নির্ভরতার প্রতীক এ মার্কেট।
বিশ্বে উদ্ভাবিত নতুন কমপিউটার পণ্য সপ্তাহান্তে বিসিএস কমপিউটার সিটিতে পাওয়া যায়। এখানে দামের দিক থেকে কমপিউটার পণ্য এতটাই প্রতিযোগিতামূলক যে আমার দেখা মতে বাংলাদেশ তথা বিসিএস কমপিউটার সিটিতে যেসব কমপিউটার বিক্রি হয়, তা বিশ্বের সবচেয়ে সস্তা। এতে ক্রেতারাই বেশি লাভবান হন। এক সময় কমপিউটার ও এর খুচরা যন্ত্রাংশ বিক্রি হতো বিভিন্ন বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত কমপিউটার প্রতিষ্ঠানগুলোতে। সেখানে ক্রেতার যাচাই বাছাইয়ের সুযোগ ছিল না। এখানে ক্রেতারা দোকান থেকে দোকানে ঘুরে দেখেন। দাম ও মান যাচাই করে পছন্দের পণ্যটি কিনেন।
বিসিএস কমপিউটার সিটি একটি আধুনিক মানসম্পন্ন কমপিউটার মার্কেট। ঢাকা শহরের যে কয়টি বিশ্বমানের ভবন আছে, তার মধ্যে অন্যতম আইডিবি ভবন। এর অগ্নিনির্বাপণ, নিরাপত্তা, ওপেন স্পেস, কার পার্ক, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ইত্যাদি বিশ্বমানের। এটি একটি সম্পূর্ণ কমপিউটার মার্কেট। কমপিউটারের সব পণ্য এখানে পাওয়া যায়। এক কথায় ওয়ান স্টপ মার্কেট। এখানে একই ছাদের নিচে অবস্থান আমদানিকারক, সংযোজনকারী ও খুচরা বিক্রেতার। ফলে পণ্যের সরবরাহ এখানে দ্রুত ঘটে থাকে এবং তা বিশ্ব বাজারের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। বিসিএস কমপিউটার সিটিতে প্রায় প্রতি সপ্তাহে নতুন পণ্যের পরিচিতির জন্য রোড শো’র আয়োজন থাকে। ফলে নতুন নতুন পণ্যের সাথে ক্রেতাদের পরিচিতি ঘটে নিরন্তর। বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের স্থায়ী প্রদর্শনী কেন্দ্র আছে এ মার্কেটে। কমপিউটার ও এর যন্ত্রাংশ ছাড়া অন্য কোনো পণ্য এখানে বিক্রি হয় না। মার্কেটের নিয়ন্ত্রণ দুই স্তরবিশিষ্ট প্রশাসনের হাতে। ভবন ব্যবস্থাপনা ও দোকানগুলোর প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ আইডিবি কর্তৃপক্ষের হাতে। অপর স্তরে রয়েছে বিসিএস সিটি কমিটি, বাজার উন্নয়ন ও ব্যবসায়ীদের অভ্যন্তরীণ সম্পর্ক উন্নয়নের কাজ করে।
১৯৯৮ সালে বাংলাদেশ কমপিউটার সমিতি মেলার মাধ্যমে যে উৎসবের আয়োজন শুরু করেছিল তা যেনো আজও বিরাজমান।
কোনো না কোনো উৎসব এখানে লেগেই থাকে। নতুন পণ্যের বিপণন উৎসব, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর উৎসব, নববর্ষ উৎসব আরো কত কী! মার্কেটের প্রধান উৎসব বার্ষিক কমপিউটার মেলা। এ মেলা শুধু কমপিউটার কেনাবেচার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। বর্ণিল হয়ে ওঠে নানা আয়োজনে। ছোটদের ছবি অাঁকা, ক্যুইজ, গেমিং প্রতিযোগিতাসহ হরেকরকম প্রতিযোগিতায় মুখরিত থাকে মেলা প্রাঙ্গণ। মেলার মধ্যভাগে তৈরি হয় মঞ্চ, দিনভর সেখানে চলে নানা অনুষ্ঠান। ওই সব অনুষ্ঠানে আসেন বিনোদন জগতের প্রিয় মানুষ। আসেন শিক্ষা জগতের প্রজ্ঞাবানেরাও। মেলার ভেতরে মেলার আয়োজন হয়। গ্রামবাংলার সনাতন মেলাকে উপস্থাপনের চেষ্টা চলে তখন। আরেকটি বড় উৎসব বনভোজন। এক থেকে দুই হাজার মালিক, কর্মচারী ও অতিথিদের অংশগ্রহণে প্রতিবছর আয়োজন করা হয় এ বনভোজনের। এ মার্কেটে রক্তদান কর্মসূচী আয়োজিত হয়, বন্যা সিডরে সহায়তা দেয়া হয়, আবার ভ্যাকসিনেশন প্রোগ্রামও হয়।
বিসিএস কমপিউটার সিটির মূল ক্রেতা শিক্ষার্থীরা। এ মার্কেটের বিষয়ে তাদের আগ্রহের শেষ নেই। তারা দল বেঁধে এখানে আসে। নতুন নতুন কমপিউটার পণ্য বিষয়ে কৌতূহল মেটায়। গ্রুপ স্টাডি করে রেস্তরাঁয় বসে। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা এ মার্কেটের অন্যতম প্রধান ক্রেতা। তবে কমপিউটার বিজ্ঞান বিষয়ে যারা অধ্যয়ন করছে তাদের উপস্থিতি বেশি দেখা যায়। আসলে শিক্ষার পরিপূরক একটি পরিবেশ আছে বলেই এখানে শিক্ষার্থীদের এত সমাগম। তারা উপভোগ করে নতুন পণ্যের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান,