বর্তমান সময়ে জুমলা হচ্ছে ওয়েব ডেভেলপারদের কাছে একটি আলোচিত বিষয়। এটি দিয়ে একদিকে যেমন খুব সহজেই ওয়েবসাইট তৈরি করা যায়, অন্যদিকে জুমলা হতে পারে ফ্রিল্যান্সারদের আয়ের প্রধান উৎস। প্রায় সব ফ্রিল্যান্সিং সাইটেই জুমলার কাজ পাওয়া যায়। তবে শুধু জুমলা ডেভেলপারদের জন্য সম্পূর্ণ একটি ফ্রিল্যান্সিং পোর্টাল হচ্ছে জুমল্যান্সার্স। ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে ধারাবাহিক লেখার এই পর্বে জুমল্যান্সার্স সাইটের বিভিন্ন ফিচার নিয়ে আলোচনা করা হলো।
জুমলা
জুমলা (Joomla) হচ্ছে একটি Content Management System যা সংক্ষেপে CMS নামে পরিচিত। এর সাহায্যে অনায়াসে যেকোনো ধরনের ওয়েবসাইট, কোনো ধরনের প্রোগ্রামিং বা টেকনিক্যাল জ্ঞান ছাড়াই তৈরি করা সম্ভব। সহজ ইন্টারফেস এবং নিজের ইচ্ছেমতো এটি পরিবর্তন করে নেবার ক্ষমতা জুমলাকে একটি শক্তিশালী ওয়েবসাইট তৈরির সফটওয়্যারে পরিণত করেছে। সর্বোপরি জুমলা একটি উন্মুক্ত সোর্স সফটওয়্যার, যা জুমলার ওয়েবসাইট থেকে বিনামূল্যে সংগ্রহ করা যায়। জুমলার সাইটের ঠিকানা হচ্ছে www.joomla.org। জুমলা পিএইচপি এবং মাইএসকিউএল দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। তাই জুমলা ইনস্টল করতে প্রথমে কমপিউটারে এপাচি ওয়েব সার্ভার ইনস্টল করে নিতে হবে।
জুমলা দিয়ে প্রতিনিয়ত অসংখ্য ওয়েবসাইট তৈরি হচ্ছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে : কর্পোরেট ওয়েবসাইট বা পোর্টাল, কর্পোরেট ইন্ট্রানেট এবং এক্ট্রানেট; অনলাইন ম্যাগাজিন, সংবাদপত্র এবং বিভিন্ন ধরনের প্রকাশনা; ই-কমার্স সাইট এবং অনলাইন রিজার্ভেশন, সরকারি বিভিন্ন সাইট, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ের জন্য ওয়েবসাইট, অলাভজনক এবং বিভিন্ন সংস্থার ওয়েবসাইট, কমিউনিটিনির্ভর পোর্টাল, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট এবং ব্যক্তিগত বা পারিবারিক হোমপেজ।
জুমল্যান্সার্স সাইট
জুমলা দিয়ে ওয়েবসাইট তৈরি করে যারা অনলাইনে আয় করতে আগ্রহী, তাদের জন্য চমৎকার একটি ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং সাইট হচ্ছে এই জুমল্যান্সার্স। সাইটটির ঠিকানা হচ্ছে www.joomlancers.com। প্রতিদিন সাইটটিতে প্রায় ১২৫ থেকে ১৫০টি প্রজেক্ট পাওয়া যায়। সাইটে এ পর্যন্ত প্রায় ১০ হাজার বায়ার বা ক্লায়েন্ট এবং প্রায় ৭ হাজার জুমলা ফ্রিল্যান্সার ডেভেলপার রেজিস্ট্রেশন করেছে। এই সাইটে কমিশন হিসেবে প্রতিটি প্রজেক্টের শতকরা ২০ ভাগ অর্থ কোডারকে পরিশোধ করতে হয়। সাইটের গোল্ড মেম্বারদের কোনো ফি পরিশোধ করতে হয় না। একজন সাধারণ ব্যবহারকারী মাসে ১৫টি বিড করতে পারবে, অন্যদিকে একজন গোল্ড মেম্বার মাসে ১৫০টি বিড করতে পারে। গোল্ড মেম্বার হতে হলে প্রতি মাসে ৩০ ডলার করে পরিশোধ করতে হয়। তবে ৯৫ ডলার দিয়ে এক বছরের জন্য গোল্ড মেম্বার হওয়া যায়। সাইটটিতে রেজিস্ট্রেশন করার জন্য কোনো ফি দিতে হয় না, উপরন্তু রেজিস্ট্রেশন করার পর প্রত্যেক ফ্রিল্যান্সারকে ২ ডলার বোনাস দেয়া হয়।
জুমল্যান্সার্স যেভাবে কাজ করে
জুমল্যান্সার্স সাইটটি অন্যান্য সাধারণ ফ্রিল্যান্সিং সাইটের মতোই কাজ করে :
০১. প্রথমে বায়ার বা ক্লায়েন্ট একটি নতুন প্রজেক্ট পোস্ট করে।
০২. ফ্রিল্যান্সাররা ওই প্রজেক্টে বিড বা আবেদন করে।
০৩. তাদের মধ্য থেকে বায়ার একজন ফ্রিল্যান্সারকে নির্বাচিত করে।
০৪. এরপর বায়ার সাইটের Escrow অ্যাকাউন্টে প্রজেক্টের সম্পূর্ণ টাকা জমা রাখে, যা কাজ সম্পন্ন হবার পর ফ্রিল্যান্সারকে টাকা পাবার নিশ্চয়তা দেয়।
০৫. ফ্রিল্যান্সার তার কাজ শুরু করে এবং সম্পন্ন হবার পর বায়ারের কাছে পাঠিয়ে দেয়।
০৬. প্রজেক্ট সঠিকভাবে সম্পন্ন হলে বায়ার কাজটি গ্রহণ করে এবং পরিশেষে Escrow থেকে টাকা ফ্রিল্যান্সারের অ্যাকাউন্টে চলে আসে।
নানা ধরনের প্রজেক্ট
সাইটটিতে Joomla ছাড়াও Drupal, osCommerce, Wordpress-এর অল্পসংখ্যক কাজ পাওয়া যায়। সাইটের প্রথম পৃষ্ঠায় সর্বশেষ প্রজেক্টগুলো প্রদর্শন করা হয়। একটি প্রজেক্টে বায়ার তার চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের বৈশিষ্ট্য যোগ করতে পারে।
বৈশিষ্ট্যগুলো হচ্ছে
Featured Project: এ ধরনের প্রজেক্টে একজন ফ্রিল্যান্সার তার ব্যক্তিগত তথ্য যেমন ই-মেইল ঠিকানা, ইনস্ট্যান্ট ম্যাসেঞ্জার আইডি, ফোন নম্বর ইত্যাদি বায়ারকে দিতে পারে। ফলে বায়ার প্রয়োজনে ফ্রিল্যান্সারদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারবে।
Gold Member Project: শুধু গোল্ড মেম্বাররা এই ধরনের প্রজেক্টে বিড করতে পারে।
Sponsored Project : এই ধরনের প্রজেক্টে বায়ার নিজের ব্যক্তিগত যোগাযোগের তথ্যাদি পাবে।
Hide Bidding Project : এই ধরনের প্রজেক্টে একজন ফ্রিল্যান্সারের বিডের মূল্য অন্যরা দেখতে পায় না।
Nonpublic Project : এই ধরনের প্রজেক্টগুলোকে সার্চ ইঞ্জিনের স্পাইডার থেকে লুকিয়ে রাখা হয় এবং শুধু লগইন করার পর প্রথম পৃষ্ঠায় দেখা যায়।
Private Project : এ ধরনের প্রজেক্টে শুধু আমন্ত্রিত ফ্রিল্যান্সাররাই বিড করতে পারে।
Location Project : বায়ারের ঠিক করে দেয়া দেশের ফ্রিল্যান্সাররাই এই ধরনের প্রজেক্টে বিড করতে পারে।
Urgent Project : এই ধরনের প্রজেক্টে বিড করার সময়সীমা হচ্ছে ৩ দিন।
একটি প্রজেক্টে বিড করার পদ্ধতি
এই সাইটে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে বিড করতে হয়। অর্থাৎ একজন ফ্রিল্যান্সারের বিডে উল্লেখিত মূল্য, সময় এবং মন্তব্য যেকেউ দেখতে পায়। তবে বায়ার ইচ্ছে করলে তথ্যগুলো গোপন রাখতে পারে। বিড উন্মুক্ত থাকলেও পিএম বা প্রাইভেট ম্যাসেজ অপশনের মাধ্যমে বায়ারের সাথে একান্তভাবে যোগাযোগ করা যায়। বিড করার জন্য প্রথমে সাইটে রেজিস্ট্রেশন এবং লগইন করে নিতে হবে। একটি প্রজেক্ট পৃষ্ঠার নিচের অংশে বিড করার ফরম পাওয়া যায়, যাতে আপনার বিডের মূল্য, প্রজেক্ট সম্পন্ন হওয়ার সম্ভাব্য সময়, নিজের সম্পর্কে বর্ণনা, বায়ারের সাথে একান্তভাবে যোগাযোগ করার জন্য PM ইত্যাদি তথ্য দিতে হয়।
অর্থ উত্তোলনের উপায়সমূহ
জুমল্যান্সার্স সাইট থেকে তিনটি পদ্ধতিতে অর্থ উত্তোলন করা যায়। প্রথম পদ্ধতি হচ্ছে Paypal, যা আমাদের দেশে সাপোর্ট করে না। দ্বিতীয় পদ্ধতি হচ্ছে MoneyBookers- এটি দিয়ে অর্থ উত্তোলন করতে জুমল্যান্সার্স সাইটকে ১ ডলার চার্জ দিতে হয়। পরে www.MoneyBookers.com সাইট থেকে আরেকটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি দিয়ে আপনার মাস্টার্ড কার্ড বা ব্যাংকে টাকা স্থানান্তর করতে পারবেন। তৃতীয় পদ্ধতি হচ্ছে Wire Transfer, যা দিয়ে সরাসরি আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা নিয়ে আসতে পারবেন। এর জন্য খরচ পড়বে ৩৫ ডলার।
পরিশেষে
জুমলা দিয়ে কোনো ধরনের প্রোগ্রামিং ছাড়াই ওয়েবসাইট তৈরি করা সম্ভব হলেও নতুন কোনো মডিউল বা ফিচার তৈরি করতে অবশ্যই আপনাকে প্রোগ্রামিং জানতে হবে। জুমল্যান্সার্স সাইটে জুমলা সেটআপ করা থেকে শুরু করে, টেম্পলেট ডিজাইন করা, মডিউল/প্লাগইনস তৈরি করা, কোড পরিবর্তন করা, অন্য একটি ওয়েবসাইটকে ক্লোন করা, জুমলার কনফিগারেশন পরিবর্তন করা ইত্যাদি কাজ পাওয়া যায়। অর্থাৎ জুমলার প্রোগ্রামার, ডিজাইনার, ওয়েবমাস্টার-সবার জন্যই জুমল্যান্সার্স হতে পারে আদর্শ অনলাইন ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস।
কজ ওয়েব
ফিডব্যাক : zakaria.cse@gmail.com