লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
সম্পাদকীয়
এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে হবে
চলতি সংখ্যায় আমাদের প্রচ্ছদ প্রতিবেদনের বিষয় ‘এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের ডিজিটাল বিশ্ব এবং বাংলাদেশ’। এ অঞ্চলের দেশগুলো আমাদের চেনা-জানা। সেই সূত্রে বলতে পারি এসব দেশের গুটিকয়েক বাদে বাকি সব দেশেরই সার্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা কমবেশি আমাদের মতোই। তাই আমাদের ভাবনায় ছিল এ দেশগুলোর মানুষের মাধ্যমে যা সম্ভব, তা আমাদের দিয়েও সম্ভব। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিই এসব দেশের তথা গোটা এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের আইসিটি পরিস্থিতি ও চলমান উদ্যোগ-আয়োজনের একটা সঠিক চিত্র আমাদের পাঠকদের কাছে তুলে ধরার। এর পেছনে আরেকটি অন্তর্নিহিত লক্ষ্য ছিল পাশাপাশি সে চিত্রটি আমাদের দেশের নীতি-নির্ধারকদেরও নজরে আনা, যাতে করে এরা সেসব দেশের আইসিটি উন্নয়নের অভিজ্ঞতার আলোকে আমাদের আইসিটি খাতের ভবিষ্যৎ পদক্ষেপগুলো নিতে পারেন। সে বিবেচনাটুকু মাথায় রেখে এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের আইসিটি পরিস্থিতি তুলে ধরার পাশাপাশি আমরা এবারের প্রচ্ছদ প্রতিবেদনে বাংলাদেশের সার্বিক পরিস্থিতিটিও উপস্থাপন করেছি। এ প্রতিবেদনে আমরা তুলে ধরেছি উন্নয়নের জন্য আইসিটি, মোবাইল ও ওয়্যারলেস টেকনোলজি, রিস্ক কমিউনিকেশন, লোকেলাইজেশন, ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি, প্রাযুক্তিক উন্নয়ন, ব্রন্ডব্যান্ড, কনভারর্জেন্স, ইলেকট্রনিক বর্জ্য, আইসিটি ও অর্থনৈতিক বৈষম্য, আইসিটি ও দারিদ্র্য বিমোচন, ইন্টারনেট গভর্নেন্স, অবকাঠামো, স্থানীয় কনটেন্ট, ই-গভর্নমেন্ট ও নিয়ন্ত্রণ, ওপেনসোর্সিং, সরকারি আইসিটি নীতিমালা, আইন প্রণয়ন, উল্লেখযোগ্য আইসিটি প্রতিষ্ঠান, নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ, অনলাইন সার্ভিস, আইসিটি শিল্প, আইটি ও শিক্ষা, গবেষণা ও উন্নয়ন, বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ ইত্যাদি ক্ষেত্রে এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর উদ্যোগ-আয়োজনের কথা, সফল ও ব্যর্থ কিছু প্রকল্পের কথা। পাশাপাশি এসব ক্ষেত্রে আমাদের দেশের অবস্থানটুকু মূল্যায়িত হয়েছে এ প্রতিবেদনে। এতে করে আমাদের নীতি-নির্ধারকরা যেমনি জানতে পারবেন এ অঞ্চলের দেশগুলোর কিছু সফল প্রকল্প বাস্তবায়নের ব্যাপারে, তেমনি এসব প্রকল্পের মূল্যবান অভিজ্ঞতার আলোকে প্রণয়ন করতে পারবেন আমাদের আইসিটি ক্ষেত্রে নানা পরিকল্পনা। আমরা আশা করবো, আমাদের নীতি-নির্ধারকরা এ ব্যাপারে সচেতন ভূমিকা পালন করবেন।
এখানে অতি প্রাসঙ্গিকভাবেই উল্লেখ করতে চাই, আমরা যখন এ প্রচ্ছদ প্রতিবেদন তৈরির কাজ শুরু করি, ঠিক তখনই আমরা হাতে পাই সম্প্রতি ‘ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট সেন্টার’-এর প্রকাশিত একটি মূল্যবান রিপোর্ট : ‘ডিজিটাল রিভিউ অব এশিয়া প্যাসিফিক ২০০৭-২০০৮’। রিপোর্টটি আমাদের জন্য খুবই সহায়ক ভূমিকা পালন করে। সুদীর্ঘ রিপোর্টটি আমাদের নীতি-নির্ধারকদের মনোযোগের সাথে পড়ার জন্য আহ্বান জানাবো। সেই সাথে এ রিপোর্টে উল্লিখিত অভিজ্ঞতার আলোকে আমাদের তথ্য-মহাসড়কে চলার ভবিষ্যৎ উদ্যোগ নেবেন। তবে এক্ষেত্রে মনে রাখা দরকার, যেকোনো উদ্যোগ-পদক্ষেপই আমরা নিই না কেনো, তা নিতে হবে আমাদের দেশের বাস্তবতার আলোকেই। শুধু উল্লিখিত দেশগুলো কোথায় কিভাবে সফলতা পেলো, কেনো এরা সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হলো, সে বিষয়গুলোই হবে আমাদের বিবেচ্য। ‘ওয়ান-সাইজ-ফিটস-অল’ এ ধরনের ধারণায় যেনো আমরা আবিষ্ট না হই। সেই সাথে লক্ষ রাখা চাই, কোন ক্ষেত্রে আমাদের বর্তমান অবস্থানটা কী, কোন ক্ষেত্রে আমরা কতটুকু পিছিয়ে, আর কোন ক্ষেত্রে কতটুকু এগিয়ে। পিছিয়ে থাকা অবস্থানগুলোকে এগিয়ে নেয়ায় আমাদের করণীয় নির্দেশ ও সুষ্ঠু কর্মসূচি নিয়ে নেমে পড়াই হবে আমাদের একমাত্র কাজ।
এদিকে আমাদের দেশে ই-গভর্নেন্সের ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক হচ্ছে, গত ২৫ অক্টোবর ‘লজ অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক একটি প্রশংসনীয় ওয়েবসাইট চালু করা হয়েছে। এই ওয়েবসাইটটির ঠিকানা হচ্ছে : www.minlaw.gov.bd। এই ওয়েবসাইটে রয়েছে ২০ অক্টোবর ২০০৮ পর্যন্ত বাংলাদেশের সব আইন, বিধান ও অধ্যাদেশ। যেকেউ চাইলেই প্রয়োজনীয় আইন, অধ্যাদেশ কিংবা বিধানটি এ ওয়েবসাইট থেকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে দেখে নিতে কিংবা প্রিন্ট করে নিতে পারবেন। তাছাড়া বাংলাদেশে সব আইন ও বিধিবিধানের একটি সিডিও তৈরি করা হয়েছে। এই সিডিও সাধারণ মানুষের কাছে বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমরা মনে করি ই-গভর্নেন্সের ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য কাজ আমাদের আইন মন্ত্রণালয় সম্পাদন করলো। আমরা এ উদ্যোগের সাথে সংশি¬ষ্ট মন্ত্রণালয় ও অন্যদের মোবারকবাদ জানাই।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ‘আউটসোর্স ওয়ার্ল্ড নিউইয়র্ক ২০০৮’ নামের আউটসোর্সিং মেলা। এতে বেসিস ও রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর ৪১ সদস্যবিশিষ্ট একটি প্রতিনিধিদল যোগ দেয়। এ ধরনের যেকোনো বিদেশী অনুষ্ঠানে এটাই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় আকারের অংশগ্রহণ। ‘‘বাংলাদেশ : এশিয়া’স ইমার্জিং আইটি সার্ভিসেস ডেস্টিনেশন’’ শীর্ষক স্লোগান নিয়ে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল এ মেলায় অংশ নেয়। এ ধরনের অংশগ্রহণ আমাদের আইটি খাতের সম্প্রসারণে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে। আমরা মনে করি এ ধরনের আন্তর্জাতিক মেলা বা সম্মেলনে যথাসম্ভব বেশি ও ব্যাপক হারে আমাদের এভাবে অংশ নেয়া প্রয়োজন।