বাংলার মীরজাফররা এখনো বেঁচে আছে
সঠিক তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে বিশ্বের অনেক উন্নয়নশীল দেশ আজ উন্নতির শিখরে উপনীত হয়েছে। উন্নয়নশীল দেশ থেকে নিজেদেরকে উন্নত দেশ হিসেবে বিশ্বের মানচিত্রে প্রতিষ্ঠিত করতে পারছে। পারেনি শুধু বাংলাদেশ। আইসিটিকে অবলম্বন করে অনেক দেশ এগিয়ে গেলেও বাংলাদেশের না পারার কারণ হিসেবে সরকারি নীতিনির্ধারক মহল সম্পদের সীমাবদ্ধতাকে দায়ী করে। হয়তো কিছু সীমাবদ্ধতা আছে, তবে সেগুলো সামলে নেয়া কঠিন কিছু নয়। আবার কিছু কিছু স্বার্থান্বেষী ব্যক্তি আছে, যারা দেশের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে নিজেদের পকেট ভারি করার জন্য নির্লজ্জভাবে, বিবেকবোধ হারিয়ে বেপরোয়া হয়ে ওঠে। এমনই এক প্রয়াসের খবর জানতে পারলাম কমপিউটার জগৎ-এর অক্টোবর সংখ্যার সম্পাদকীয় ও আহমেদ হাফিজ খানের ICT Road Map Goes Against National Integrity লেখা পড়ে।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান গভথ্রি-কে এই আইসিটি রোডম্যাপ প্রণয়নের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। বিশ্বব্যাংকের অর্থ সহায়তায় এ সরকার এই আইসিটি রোডম্যাপ প্রণয়নে উদ্যোগে নেয়। প্রস্তাবিত খসড়া রোডম্যাপে এমন সব প্রস্তাব রয়েছে যা আমাদের জাতীয় সংহতি বিনাশে অনুঘটকের ভূমিকা পালন করবে। শোনা যায় এই রোডম্যাপ প্রণয়নে অযৌক্তিকভাবে আড়াই কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। কিন্তু কিভাবে এবং কোন খাতে খরচ হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে সবার মনে। এই রোডম্যাপ নামের দলিলে পার্লামেন্টকে অকার্যকর বা নন-ফাংশনাল বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এটি একটি চরম ধৃষ্টতা ছাড়া আর কিছুই নয়। আমার কথা হচ্ছে, আমরা দুর্বল অর্থনীতির দেশ বলে বিশ্বব্যাংক যা বলবে তা মানতে হবে, এমন তো কোনো কথা নেই।
বর্তমান সরকার দলনিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার। এ সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করে রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন খাতে বিতর্কিত শুদ্ধি অভিযান চালায়। কিন্তু দুঃখের বিষয় যেসব আমলা ও তাঁবেদার দেশের স্বার্থের পরিপন্থী কার্যকলাপে লিপ্ত তাদের বিরুদ্ধে কোনো কঠোর ব্যবস্থা নেয়নি।
আমাদের দাবি সরকারকে এ ব্যাপারে যেমন সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে, তেমনি কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। কেননা দুর্নীতিবাজ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও ব্যবসায়ীদের চেয়ে ভয়ঙ্কর হলো এসব সুবিধাবাদী আমলা ও স্বার্থান্বেষী মহল। এরা নিজেদের স্বার্থ হাসিল করার উদ্দেশ্যে করতে পারে না এমন কোন কাজ নেই। এদেরকে বাংলাদেশের নব্য মীরজাফর বললেও বোধহয় কম বলা হবে।
আমি আরো আশঙ্কা করছি, এই স্বার্থান্বেষী মহল নিজেদের পকেট ভারি করার জন্য হয়তো উন্নত বিশ্বের বর্জ্য পণ্য হিসেবে পরিত্যক্ত সেইসব কমপিউটার এদেশে নিয়ে আসবে, যেগুলো অকার্যকরও মারাত্মক পরিবেশ দূষণে অভিযুক্ত। এমনিতেই আমরা ব্যাপকভাবে পরিবেশ দূষণে দূষিত। তারপর যদি পরিত্যক্ত ও বাতিল কমপিউটারগুলো এদেশে আনা হয় তাহলে কি ভয়াবহ অবস্থা হবে তা উপলব্ধি করে এখনই এর প্রতিকারের ব্যবস্থা নিতে হবে, যাতে এগুলো কোনোভাবেই এদেশে ব্যবহার না হয়। সুতরাং এ ব্যাপারেও সংশ্লিষ্ট মহলকে সতর্ক থাকতে হবে। কেননা এসব সুবিধাবাদীরা দেশের স্বার্থের কথা কখনোই ভাবে না। তারা নিজেদের হীন স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য যেকোনো কাজ করতে পারে। বাংলার এসব নব্য মীরজাফর থেকে এখনই আমাদের সাবধান হতে হবে। কেননা মীরজাফরের সেই ভূত এখনো বেঁচে আছে।
আফজাল হোসেন
রুহিতপুর, কেরানীগঞ্জ
...............................................................................
অবশেষে ওয়াইম্যাক্স লাইসেন্স পেল
দায়িত্বশীল, দেশপ্রেমিক ও যোগ্য নীতিনির্ধারকরা দেশকে নিয়ে যেতে পারেন সমৃদ্ধির শিখরে-এমন লোক আমাদের দেশে খুব কম আছেন। তারপরও, এদেশে এখনো অনেক দেশপ্রেমিক আছেন যাদের যোগ্য নেতৃত্বে দেশ অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারবে। এমনই দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে ওয়াইম্যাক্সের উন্মুক্ত নিলামের মাধ্যমে, যা ইতোপূর্বে বাংলাদেশে কখনোই দেখা যায়নি। বেসরকারি খাতে দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা দেয়ার জন্য ওয়াইম্যাক্স অর্থাৎ ওয়ার্ল্ডওয়াইড ইন্টার অপারেবিলিটি ফর মাইক্রোওয়েভ এক্সেস বা ব্রডব্যান্ড ওয়্যারলেস এক্সেস লাইসেন্স পেয়েছে তিনটি প্রতিষ্ঠান। শুধু তাই নয়, ওয়াইম্যাক্সের প্রতিটি লাইসেন্সের জন্য নিলামে সর্বোচ্চ ডাক ওঠে ২১৫ কোটি টাকা, যা ছিল এক বিশ্বরেকর্ড।
আমার লেখার শুরুতেই উল্লেখ করা হয়েছে যে দায়িত্বশীল দেশপ্রেমিক ও যোগ্য নীতিনির্ধারণী মহলের কারণে এটি সম্ভব হয়েছে। এর কারণও রয়েছে যথেষ্ট। আমি কমপিউটার জগৎ-এর একজন নিয়মিত পাঠক এবং আমার সংগ্রহে রাখা আছে কমপিউটার জগৎ-এর প্রায় সব সংখ্যাই। কমপিউটার জগৎ সবসময় বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টিকারী নতুন নতুন প্রযুক্তিসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোর গুরুত্ব অনুধাবন করে তাৎক্ষণিকভাবে প্রচ্ছদ প্রতিবেদনের মাধ্যমে পাঠকদের সামনে তুলে ধরে। আমি মনে করি এটি কমপিউটার জগৎ-এর একটি রীতিমতো স্বভাবসিদ্ধ কাজ ও দায়িত্বও বটে। এ দায়িত্ববোধ থেকেই কমপিউটার জগৎ সর্বপ্রথম জাতিকে অবহিত করতে ২০০৪ সালের জুন সংখ্যার প্রচ্ছদ প্রতিবেদন উপস্থাপন করেছিল ওয়াইম্যাক্সের ওপর, যার শিরোনাম ছিল ডিজিটাল ডিভাইড কমাতে নতুন ওয়্যারলেস প্রযুক্তি ওয়াইম্যাক্স। সে সময় দেশের শাসনভার ছিল বিএনপির ওপর এবং বাংলাদেশের বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রী ছিলেন ড. আবদুল মঈন খান। ড. আবদুল মঈন খান একজন যোগ্য ও শিক্ষিত ব্যক্তি ছিলেন, কিন্তু কোনোভাবে তাকে দেশপ্রেমিক ও দায়িত্বশীল বলা যায় না। যদি হতেন তাহলে আমাদের আইসিটি খাতে এমন দুরবস্থা হতো না। হতো না ওয়াইম্যাক্সের লাইসেন্স কিংবা ফাইবার অপটিক ক্যাবল সংযোগ পেতে এতো দেরি। বিগত বছরগুলোতে এমন অনেক সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে আমাদের তথাকথিত দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ ও নীতিনির্ধারণী মহলের কাণ্ডজ্ঞানহীন কর্মকাণ্ডের কারণে। যাই হোক, অতীতের ভুলভ্রান্তি থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা এগিয়ে যেতে চাই। তাই আইসিটি সেক্টরের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের কাছে আমাদের প্রত্যাশা-ব্রডব্যান্ড এক্সেস গাইডলাইন অনুযায়ী আগামী তিন বছরের মধ্যে যেনো সারাদেশ ওয়াইম্যাক্স কাভারেজের আওতায় আসে এবং লাইসেন্স পাওয়ার ৬ মাসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলো যেনো তাদের অপারেশন শুরু করে সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখবে। যদি এর ব্যতিক্রম ঘটে তাহলে প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা যেনো তাৎক্ষণিকভাবে নেয়া হয় তার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের দাবি রইল। পরিশেষে কমপিউটার জগৎ-এর সবাইকে ধন্যবাদ।
আজহার উদ্দিন
পাঠানটুলী, নারায়ণগঞ্জ
...............................................................................
চট্টগ্রামভিত্তিক আলাদা খবরের বিভাগ চাই
চট্টগ্রামভিত্তিক খবর চাই। আমাদের দেশে বেশিরভাগ কাজই ঢাকাকেন্দ্রিক হয়ে গেছে। তাই আমার অনুরোধ কমপিউটার জগৎ-এর কর্তৃপক্ষের কাছে, কমপিউটার জগতের খবর পাতায় চট্টগ্রামের জন্য আলাদা শিরোনাম দিয়ে কমপিউটারবিষয়ক খবর যাতে ছাপানো হয়। বিশেষ করে আমরা যখন কোন কমপিউটার কোর্স করতে চাই তখন আমাদের দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকতে হয় কোথায় কোর্স করব। তাই কোথায় কোন কোর্স করা যাবে এ সম্পর্কিত খবর ছাপালে উপকৃত হব। এছাড়া ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং সম্পর্কে নিয়মিত লেখা চাই।
সাইফুদ্দিন আহমেদ
ফিডব্যাক : shaif_uddin@live.com