ইংরেজিতে Vampire শব্দটির সুনির্দিষ্ট অর্থ আছে। ভ্যাম্পায়ার অর্থ রূপকথায় বর্ণিত রক্তচোষা ভূত। আবার যে ব্যক্তি মোসাহেবি করে কিংবা ভয় দেখিয়ে ক্রমাগত অন্যের কাছ থেকে অর্থ আদায় করে, তাকে বলা হয় ভ্যাম্পায়ার। তাছাড়া যে নারী প্রেমের অভিনয় করে পুরুষের কাছ থেকে অর্থ বা সুবিধা আদায় করে তারও পরিচয় ভ্যাম্পায়ার নামে। রক্তচোষা বাদুড় বুঝাতেও ভ্যাম্পায়ার শব্দটির ব্যবহার হয়। কিন্তু Vampire Number পুরোপুরিই এসব থেকে ভিন্ন কিছু। এটি সংখ্যা ছাড়া কিছুই নয়, তবে সংখ্যাটি বিশেষ ধরনের।
আমরা জানি,
১২৬০ = ২১ x ৬০, ১৩৯৫ = ১৫ x ৯৩, ১৪৩৫ = ৩৫ x ৪১, ১৫৩০ = ৩০ x ৫১, ১৮২৭ = ২১ x ৮৭, ২১৮৭ = ২৭ x ৮১, ৬৮৮০ = ৮০ x ৮৬
উপরে প্রদিটি সমান চিহ্নের বাম পাশের সংখ্যাগুলো অর্থাৎ ১২৬০, ১৩৯৫, ১৪৩৫, ১৫৩০, ১৮২৭, ২১৮৭ ও ৬৮৮০ এক-একটি ভ্যাম্পায়ার সংখ্যা। কারণ, এসব সংখ্যাকে সংশ্লিষ্ট সংখ্যার অঙ্কগুলোকে সমান দুই ভাগে ভাগ করে পাওয়া অঙ্ক দিয়ে তৈরি দুটি সংখ্যার গুণফল আকারে প্রকাশ করা যায়। লক্ষণীয়, নতুন গঠিত সংখ্যা দুটিতে সংশ্লিষ্ট সংখ্যার সব অঙ্ক একবার করে থাকলেও সংখ্যাগুলোর স্থানের পরিবর্তন ওলটপালট হতে পারে, কিন্তু কোনো অঙ্ককে বাদ দেয়া হয়নি, কিংবা কোনো অঙ্ককে দুইবার ব্যবহার করে নতুন সংখ্যা দুটির কোনোটি গঠন করা হয়নি। আরো লক্ষণীয়, যে সংশ্লিষ্ট ভ্যাম্পায়ার সংখ্যাটি নেয়া হয়, তার অঙ্কগুলোকে সমান দুই ভাগে ভাগ করে পাওয়া দুই ভাগের অঙ্কগুলো দিয়ে তৈরি সংখ্যা দুটির গুণফল এর সমান হতে হয়। অতএব ভ্যাম্পায়ার সংখ্যার অঙ্কসংখ্যা সব সময় জোড় হতে হবে। উপরে দেয়া সব সংখ্যা অর্থাৎ সমান চিহ্নের বামের সংখ্যাগুলোর প্রতিটিই চার অঙ্কের। তাহলে আমরা এভাবে ছয় অঙ্কের, আট অঙ্কের, দশ অঙ্কের কিংবা তার চেয়ে বেশি যেকোনো জোড়সংখ্যক অঙ্কের ভ্যাম্পায়ার সংখ্যা তৈরি করতে পারি। যেমন, ১২৫৪৬০ একটি ৬ অঙ্কের ভ্যাম্পায়ার সংখ্যা। কারণ ১২৫৪৬০ = ২০৪ x ৬১৫ = ২৪৬ x ৫১০। আবার ১১৯৩০১৭০ হচ্ছে ৮ অঙ্কের একটি ভ্যাম্পায়ার সংখ্যা। কারণ, ১১৯৩০১৭০ = ১৩০১ x ৯১৭০ = ১৩১০ x ৯১০৭। এভাবে আমরা আরো বেশিসংখ্যক জোড় অঙ্কের ভ্যাম্পায়ার সংখ্যা খুঁজে পেতে পারি। তবে একথা যেনো কখনো ভুলে না যাই, কখনই কোনো বেজোড় সংখ্যক অঙ্কের সংখ্যাকে আমরা ভ্যাম্পায়ার সংখ্যা বলব না।
উপরে আমরা দেখিয়েছি ১২৬০ = ২১x ৬০। এখানে ১২৬০ একটি ভ্যাম্পায়ার সংখ্যা, আর ২১ ও ৬০ হচ্ছে এর এক একটি ফ্যাং (ভধহম)। অর্থাৎ এখানে ভ্যাম্পায়ার সংখ্যা ১২৬০-এর একজোড়া ফ্যাং রয়েছে। লেখার শুরুর দিকে উল্লিখিত ৪ অঙ্কের প্রতিটি ভ্যাম্পায়ার সংখ্যারই রয়েছে একজোড়া করে ফ্যাং।
একটি ভ্যাম্পায়ার সংখ্যার একাধিক জোড়া ফ্যাং থাকতে পারে। এখানে দুই জোড়া ফ্যাংওয়ালা কয়টি ভ্যাম্পায়ার সংখ্যা উল্লেখ করছি।
১২৫৪৬০ = ২০৪ x ৬১৫ = ২৪৬ x ৫১০, ১১৯৩০১৭০ = ১৩০১ x ৯১৭০ = ১৩১০ x ৯১০৭, ১২০৫৪০৬০ = ২০০৪ x ৬০১৫ = ২৪০৬ x ৫০১০। এবার দেখব ৩ জোড়া ফ্যাংওয়ালা একটি ভ্যাম্পায়ার সংখ্যা।
১৩০৭৮২৬০ = ১৬২০ x ৮০৭৩ = ১৮৬৩ x ৭০২০ = ২০৭০ x ৬৩১৪
নিচের দুটি ভ্যাম্পায়ার সংখ্যার রয়েছে ৪ জোড়া করে ফ্যাং।
১৬৭৫৮২৪৩২৯০৮৮০ = ১৯৮২৭৩৬ x ৮৪৫২০৮০ = ২১২৩৮৫৬ x ৭৮৯০৪৮২ = ২৭৫১৮৪০ x ৬০৮৯৮৩২ = ২৮১৭৩৬০ x ৫৯৪৮২০৪
১৮৭৬২৪৫৬৫৩৩০৪০ = ২৫৫৮০৬১ x ৭৩৩৪৬৪০ = ৩২৬১০৬০ x ৫৭৫৩৪৮৪ = ৩৫৮৭১৬৬ x ৫২৩০৪৪০ = ৩৬৩৭২৬০ x ৫১৫৮৪০৪
আবার ৫ জোড়া ফ্যাংবিশিষ্ট প্রথম ভ্যাম্পায়ার সংখ্যা হচ্ছে ২৪৯৫৯০১৭৩৪৮৬৫০। কারণ,
২৪৯৫৯০১৭৩৪৮৬৫০ = ২৯৪৭০৫০ x ৮৪৬৯১৫৩ = ২৯৪৯৭০৫ x ৮৪৬১৫৩০ = ৪১২৫৮৭০ x ৬০৪৯৩৯৫ = ৪১২৯৫৮৭ x ৬০৪৩৯৫০ = ৪২৩০৭৬৫ x ৫৮৯৯৪১০
এবার আমরা ভ্যাম্পায়ার সংখ্যার একটা সংজ্ঞা দাঁড় করাতে চাই৷ ধরি V একটি ভ্যাম্পায়ার সংখ্যা৷ তবে এই সংখ্যা V-এর অঙ্কসংখ্যা সবসময় জোড় সংখ্যা হবে৷ তাহলে ভ্যাম্পায়ার সংখ্যা V = x x y হচ্ছে একটি জোড় অঙ্কবিশিষ্ট সংখ্যা, যার অঙ্কসংখ্যা n হলে, তা n/2 সংখ্যক অঙ্ক নিয়ে গঠিত সংখ্যা দুটির গুণফলের সমান হবে, তবে শর্ত থাকে যে সংখ্যা দুটি গঠিত হতে হবে V-এর অঙ্কগুলোকেই একবার করে নিয়ে৷ এখানে x ও y এক-একটি ফ্যাং, আর x ও y মিলে গড়ে তোলে একজোড়া ফ্যাং৷ মনে রাখা দরকার কোনো ফ্যাংয়ের শুরুতে শূন্য অঙ্কটি বসানো যাবে না৷
উপরে উল্লিখিত ভ্যাম্পায়ার সংখ্যাগুলো এবং এর ফ্যাংগুলো লক্ষ করলে বুঝা যাবে, শুধু পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে একটা ভ্যাম্পায়ার সংখ্যা গঠন করা কিংবা খুঁজে পাওয়া খুব একটা সহজ কাজ নয়৷ এর জন্য একটা সূত্র থাকা দরকার৷ আমরা যদি ভ্যাম্পায়ার সংখ্যাকে V ধরি এবং x ও y হয় এর দুটি ফ্যাং, তবে কিছু বিশেষ ধরনের ভ্যাম্পায়ার সংখ্যা গঠন করতে পারব নিচের ফর্মুলা থেকে৷
x = 25.10k + 1, y = 100 (10k+1+52)/25
তাহলে ভ্যাম্পায়ার সংখ্যা হবে
V = xy = (25.10k+1) {100(10K+1 + 52)/25}
= 25. 10k. 100 (10K+1 + 52)/25 + 100 (10K+1 + 52)/25
= 10k. 102(10k+1 + 52) + 4(10k+1 + 52)
= 10k+2(10k+1 + 52) + 4(10k+1 + 52)
= (10k+1 + 52) (10k+2 + 4)
= (10k.10+52) (10k.102 + 4)
= 2 (10k.5 + 26) (10k.100 + 4)
= 2 (10K.5 + 26). 4(10k.25 + 1)
= 8 (10k. 5 + 26) (10k.25 + 1)
= 8 (26 + 5.10k) (1+ 25.10k)
এখানে V-এর মান কেমন হতে পারে তা দেখানো হলো৷ তবে উপরে x ও y-এর মান বের করার জন্য দেয়া সূত্রটি ব্যবহার করে k-এর মান 1, 2, 3, ... ইত্যাদি ধরে x ও y-এর মান বিভিন্ন মানে পাবে৷ তখন x ও y-এর মান গুণ করলেই আমরা এক একটি ভ্যাম্পায়ার সংখ্যা পেতে পারি৷ যেমন-যখন k = 1, তখন x = 25.10k + 1 = 25.101 + 1 = 250 + 1 = 251, আর y = 100 (10k+1 + 52)/25 = 100 (101+1 + 52)/25 = 4 (100 + 52) = 400 + 208 = 608 x ও y ফ্যাংবিশিষ্ট ভ্যাম্পায়ার সংখ্যা হচ্ছে V = x x y = 251x 608 = 152608
এভাবে K-এর মান পরিবর্তন করে আরো অনেক ভ্যাম্পায়ার সংখ্যা আমরা গঠন করতে পারব উপরে উল্লিখিত সূত্র ব্যবহার করে।
গণিতদাদু
...............................................................................।
বলুন তো কার ছবি : ৩২
এই গণিতবিদের বাবা ছিলেন একজন ব্যাংকার। সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান তিনি। সুশিক্ষিত। পড়াশোনা বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ে। পিএইচডি সম্পন্ন করেন ১৮২৫ সালে। গণিত পড়িয়েছেন কনিসবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে। ফোর থেটা ফাংশনের ওপর ভিত্তি করে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ইলিপটিক ফাংশন। ১৯৩৪ সালে তিনি প্রমাণ করেন, একটি চলকের সিঙ্গল-ভ্যালুড ফাংশন দ্বিগুণ পিরিয়ডিক এবং ফাংশনের পিরিয়ড কাল্পনিক। তিনি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা করেন পার্শিয়েল ডিফারেনশিয়েল ইকুয়েশন নিয়ে। তিনি নির্ণায়ক নিয়েও কাজ করেন। বলুন তো কে এই গণিতবিদ। তিনি ফোর থেটা ফাংশনের ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠা করেন ইলিপটিক ফাংশন থিওরি তার ১৮২৯ সালের ফাণ্ডামেটা নোভা থিওরিয়া ফাংশনের ইলিপার্টিকারাম এবং পরবর্তীতে এর পাবপূরক তত্ত্ব ইলিপটিক ফাংশন থিওরিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। তিনি মার্ক যান ১৮২৯ সালে। মৃত্যুর আগে পর্যন্ত তিনি কনিসবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়িয়েছেন। তিনি সেখানে একটি চেয়ার নিয়োগ পেয়েছিলেন। বলুন তো ছবির এই গণিতবিদ কে?
.........................................................................।
গত সংখ্যার ছবিটি ছিল জর্জ গ্যাব্রিয়েল স্টোকস-এর। সঠিক উত্তরদাতার নাম শাওন, পাড়াডগার, ডেমরা, ঢাকা।
আপনার ঠিকানায় এ সংখ্যা থেকে শুরু করে আগামী ৬ মাস বিনামূল্যে কমপিউটার জগৎ পৌঁছে যাবে।