সময়ের রথে চড়ে ২০১০ সাল আমাদের সামনে হাজির। সেই সাথে নতুন এ বছরটিতে এসেছে নতুন প্রযুক্তিপ্রবণতা। আসি আসি করছে নতুন নতুন নানা প্রযুক্তি। এসব প্রযুক্তি হয়তো স্মরণীয় করে রাখবে ২০১০ সালকে। নতুন এ বছরের প্রযুক্তির গতি-প্রকৃতি নিয়েই তৈরি হয়েছে আমাদের এ প্রচ্ছদ প্রতিবেদন। লিখেছেন গোলাপ মুনীর
Gartner Inc (NYSE:IT) হচ্ছে শীর্ষস্থানীয় আইটি গবেষণা ও পরামর্শক কোম্পানি। গার্টনার এর গ্রাহকদের জন্য চাহিদামতো প্রযুক্তিসংশ্লিষ্ট নানা বিষয়ে গভীর তথ্য বিশ্লেষণমূলক প্রতিবেদন তৈরি করে থাকে। এসব প্রতিবেদন থেকে সংশ্লিষ্ট গ্রাহকরা তাদের প্রতিদিনের কাজে যথার্থ সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। বিভিন্ন কর্পোরেশন ও সরকারি সংস্থা, উচ্চপ্রযুক্তি ও টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠান ও পেশাজীবী সেবা সংগঠনে এর গ্রাহক রয়েছে। ১০ হাজার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তাদের গ্রাহকসংখ্যা ৬০ হাজার। এদের মধ্যে রয়েছেন প্রধান তথ্য কর্মকর্তা থেকে উর্ধতন নেতৃস্থানীয় তথ্যপ্রযুক্তি ব্যক্তিত্ব।
‘গার্টনার রিসার্চ’, ‘গার্টনার কনসাল্টিং অ্যান্ড গার্টনার ইভেন্ট’-এর রিসোর্সের মাধ্যমে গার্টনার কাজ করে এর প্রতিটি গ্রাহকের সাথে। গ্রাহকের চাহিদার প্রতিটি ক্ষেত্রের আইটি ব্যবসায়ের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ তুলে ধরে গার্টনার। ১৯৭৯ সালে গার্টনার প্রতিষ্ঠিত হয়। এর সদর দফতর যুক্তরাষ্ট্রের কানেকটিকাটের স্টামফোর্ডে। এর রয়েছে ৪ হাজার সহযোগী। এর মধ্যে আছে ১২০০ রিসার্চ অ্যানালিস্ট। পরামর্শক রয়েছে ৮০টি দেশে।
২০১০ সালের আট মোবাইলপ্রযুক্তি
গার্টনার আট ধরনের মোবাইল টেকনোলজি চিহ্নিত করেছে, যেগুলো ২০১০ সালজুড়ে উল্লেখযোগ্যভাবে উঠে আসবে। এগুলো স্বল্পমেয়াদী মোবাইল নীতিকৌশলের ওপর প্রভাব ফেলবে। গার্টনারের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও স্বনামখ্যাত বিশ্লেষক নিক জোনস বলেন, ‘সব মোবাইলপ্রযুক্তির নীতিকৌশলে প্রাযুক্তিক উদ্ভাবনকেই ধরে নেয়া হয়েছে। অতএব গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে, সেই সব প্রযুক্তি চিহ্নিত করা, যেগুলো আমাদের জীবনে দ্রুত এসে হাজির হবে। ২০১০ সালে দেখার মতো আমরা ৮টি প্রযুক্তি চিহ্নিত করেছি, সেগুলো আমাদের জীবনে ব্যাপকভিত্তিক প্রভাব সৃষ্টি করবে। অর্থাৎ স্বল্পমেয়াদের নীতিকৌশল নিয়ে যেসব সমস্যা মোকাবেলা করতে হবে, সেসব নীতিকৌশলে এগুলো বড় ধরনের প্রভাব সৃষ্টি করবে।’
গার্টনারের চিহ্নিত আটটি প্রযুক্তির মধ্যে আছে :
০১. ব্লুটুথ ৩.০ :
ব্লটুথ ৩.০ স্পেসিফিকেশন প্রকাশ করা হয় ২০০৯ সালে। অতএব ব্লুটুথ প্রযুক্তিসমৃদ্ধ ডিজাইন বাজারে আসতে শুরু করবে ২০১০ সালে। ব্লুটুথ ৩.০-এ যেসব ফিচার থাকছে, তার মধ্যে আছে আল্ট্রা-লো-পাওয়ার মোড। এর ফলে এসব ডিভাইসে থাকবে পেরিফেরাল ও সেন্সর। নতুন এসব যন্ত্র দিয়ে হেলথ মনিটরিংয়ের কাজও চালানো যাবে। ব্লুটুথ প্রযুক্তির সূচনা একটি প্রটোকল হিসেবে, যা কাজ করে একটি একক ওয়্যারলেস বাহকপ্রযুক্তি। ব্লুটুথ ৩.০ প্রযুক্তির লক্ষ্য তিনটি বাহককে সহায়তা দেয়া : ক্লাসিক ব্লুটুথ, ওয়াই-ফাই ও আল্ট্রাওয়াইডব্যান্ড (ইউডব্লিউবি)। ভবিষ্যতে সম্ভব হবে আরো বেশিসংখ্যক বাহক বা বিয়ারারকে সহায়তা দেয়া। স্বল্পমেয়াদে ইউডব্লিউবি’র চেয়ে ওয়াই-ফাই হবে বেশি গুরুত্বপূর্ণ সাপ্লিমেন্টারি বিয়ারার বা পরিপূরক বাহক। এর কারণ, ওয়াই-ফাইয়ের রয়েছে ব্রড অ্যাবেইলিবিলিটি। ওয়াই-ফাই সুযোগ দেবে হাই-এন্ড টেলিফোন ব্যবহারের, যা দ্রুত বিপুল পরিমাণ ডাটা ট্রান্সফার করতে পারবে।
০২. মোবাইল ইউজার ইন্টারফেস :
মোবাইল ইউজার ইন্টারফেস তথা ইউআইগুলোর রয়েছে ডিভাইস ইউজেবিলিটি ও সাপোর্টেবিলিটির ব্যাপক প্রভাব। ২০১০ সালে মোবাইল ইউজার ইন্টারফেসের ক্ষেত্রে উৎপাদকদের মধ্যে চলবে জোরদার প্রযুক্তি। বিভিন্ন ইউআই ব্যবহার করে বিভিন্ন উৎপাদক মোবাইল হ্যান্ডসেট ও প্লাটফর্মগুলোর মধ্যে স্বাতন্ত্র্য আনবে। নতুন ও অধিকতর বিচিত্র ইউআই বিজনেস-টু-এমপ্লয়ি (B2E) এবং বিজনেস-টু-কনজ্যুমার (B2C) অ্যাপ্লিকেশনের উন্নয়ন ও সহায়তাকে আরো জটিলতর করবে। ইন্টারফেস অগ্রাধিকারের মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট ডিভাইস মডেলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আরো বেশি গ্রাহক চাহিদা প্রত্যাশা করবে। কোম্পানিগুলোও অ্যাপ্লিকেশন বিহেভিয়ার ও পারফরমেন্সের ক্ষেত্রে নতুনত্ব আনার জন্য প্রত্যাশা করবে কনজ্যুমার ইন্টারফেস। উন্নততর ইন্টারফেস মোবাইল ওয়েবকে আরো প্রবেশযোগ্য করে তুলবে ছোট ছোট ডিভাইসের জন্য। এবং এটি হবে গ্রাহক ও চাকুরেদের জন্য উন্নততর চ্যানেল।
০৩. লোকেশন সেন্সিং :
লোকেশন ওয়্যারলেস মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনকে আরো প্রয়োজনীয় ও শক্তিশালী করে তুলেছে। আগামী দিনে লোকেশন হবে কনটেকচুয়াল অ্যাপ্লিকেশনের ক্ষেত্রে মুখ্য উপাদান। লোকেশন সেন্সিং সিস্টেমগুলোকেও করে তুলবে আরো জোরালো, যেমন মোবাইল প্রেজেন্স ও মোবাইল সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং আরো জোরদার হবে। ওয়াই-ফাই ব্যবহার করে অন-ক্যাম্পাস লোকেশন সেন্সিং আরো পরিপক্ব হয়ে উঠছে। এর ফলে যন্ত্রপাতি বা মানুষের লোকেশন জেনে নেয়ার ক্ষেত্রে সৃষ্টি হচ্ছে এক্ষেত্রে নতুন নতুন অ্যাপ্লিকেশন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সরবরাহ করছে বিভিন্ন ধরনের বিজনেস বা কনজ্যুমার অ্যাপ্লিকেশন। এগুলো লোকেশন সেন্সিংয়ের সম্ভাবনাময় ব্যবহার নিশ্চিত করছে। তবে এই লোকেশন সেন্সিং সৃষ্টি করতে পারে গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ।
০৪. ৮০২.১১এন :
৮০২.১১এন বাড়িয়ে দিয়েছে ওয়াই-ফাই ডাটারেট ১০০ এমপিবিএস থেকে ৩০০ এমপিবিএস পর্যন্ত। ৮০২.১১এন ব্যবহার করে মাল্টিপল-ইনপুট, মাল্টিপল-আউটপুট টেকনোলজি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে উন্নততর কভারেজের সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে। ৮০২.১১এন সম্ভবত হবে দীর্ঘস্থায়ী স্ট্যান্ডার্ড, যা বেশ কয়েক বছর ধরে ওয়াই-ফাই পারফরমেন্স সংজ্ঞায়িত বা নির্ধারিত করবে। বাড়িতে ও অফিসে মিডিয়া স্ট্রিমের জন্য হাই-স্পিড ওয়াই-ফাই প্রত্যাশিত একটি বিষয়। প্রাতিষ্ঠানিক পরিপ্রেক্ষিতে ৮০২.১১এন হচ্ছে ডিজরাপ্টিভ বা সংহতিনাশক। এর কনফিগার করা জটিল এবং এটি একটি ‘rip and replace’ টেকনোলজি, যার জন্য প্রয়োজন হয় নতুন নতুন এক্সেস পয়েন্ট, নতুন ক্লায়েন্ট ওয়্যারলেস ইন্টারফেস, নতুন ব্যাকবোন নেটওয়ার্ক ও ইথারনেট স্ট্যান্ডার্ড নতুন পাওয়ার। এসব সত্ত্বেও ৮০২.১১এন হচ্ছে প্রথম ওয়াই-ফাই টেকনোলজি, যা সাধারণ অফিস পিসির ওয়্যারড কানেকশনে ১০০ এমপিবিএস ইথারনেটের সমতুল্য পারফরমেন্স দেয়। অতএব এটি ওয়্যারলেস-অফিস গড়ে তুলতে সক্ষম। এবং যেসব কোম্পানি নতুন অফিস সাজাতে যাচ্ছে কিংবা ২০১০ সালে বদলাতে যাচ্ছে পুরনো ৮০২.১১এ/বি/জি সিস্টেম, তাদের জন্য প্রয়োজন ৮০২.১১এন প্রযুক্তি-ব্যবস্থা।
০৫. ডিসপ্লে টেকনোলজি :
মোবাইল ডিভাইস ও অ্যাপ্লিকেশনে অনেক কিছুকেই সীমিত করে দেয় ডিসপ্লে। ২০০৯ সালে অনেক নতুন টেকনোলজি বাজারে এসেছে। ২০১০ সালেও আসবে। এগুলোর মধ্যে আছে অ্যাক্টিভ পিক্সেল ডিসপ্লে, প্যাসিভ ডিসপ্লে ও পিকো প্রজেক্টরগুলো (Pico Projectors)। পিকো প্রজেক্টর সৃষ্টি করেছে মোবাইল ব্যবহারের নতুন ক্ষেত্র (যেমন, ফেস-টু-ফেস সেলস মিটিংয়ে ইনফরমেশন ডিসপ্লের ক্ষেত্রে ডেস্কটপে ইনস্ট্যান্ট প্রেজেন্টেশন প্রজেক্ট করা)। যেকোনো ব্যবহারকারীর জন্য ব্যাটারি লাইফের উন্নয়ন সুখকর একটি বিষয়। Good off axis viewing সুযোগ করে দিয়েছে ছবি ও তথ্য আরো সহজে শেয়ার করার। ই-বুক রিডারের মতো অন্যান্য ডিভাইসেও প্যাসিভ ডিসপ্লে সুযোগ করে দিয়েছে নতুন উপায়ে ডকুমেন্ট ডিস্ট্রিবিউট ও কনজিউম করার। স্বাতন্ত্র্য সৃষ্টির ও ইউজার বাছাইয়ের মাপকাঠির ক্ষেত্রে ডিসপ্লে টেকনোলজি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
০৬. মোবাইল ওয়েব এবং উইজিট :
বিভিন্ন ধরনের ডিভাইসে সহজ মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন কম খরচে সরবরাহের ক্ষেত্রে মোবাইল ওয়েবপ্রযুক্তি একটি বিকাশমান প্রযুক্তি হয়ে উঠছে। তবে এর কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। ২০১০ সালের মধ্যে এই সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ওঠা যাবে না। হ্যান্ডসেট সার্ভিসে যেমন ক্যামেরা অথবা জিপিএসের ক্ষেত্রে ব্রাউজার অ্যাক্সেসের জন্য কোনো সর্বজনীন স্ট্যান্ডার্ড মিলবে না। তা সত্ত্বেও থিক-ক্লায়েন্ট অ্যাপ্লিকেশনের চেয়ে মোবাইল ওয়েব বেশি টুটাল কস্ট ওনারশিপ বা টিসিও সুবিধা দেবে। উইজিটগুলো (Widget : small mobile applets) সাপোর্ট করে নানা ধরনের মোবাইল ব্রাউজার। এবং এগুলো হ্যান্ডসেট ও ছোট পর্দায় সিম্পল ফিডে স্ট্রিম করার উপায় করে দেয়। মোবাইল ওয়েব বেশিরভাগ B2C মোবাইল স্ট্র্যাটেজির অংশ হয়ে উঠবে। থিন-ক্লায়েন্ট অ্যাপ্লিকেশনও আবির্ভূত হচ্ছে ওয়াই-ফাই বা সেলুলার কানেকশন ব্যবহার করে অন-ক্যাম্পাস এন্টারপ্রাইজ অ্যাপ্লিকেশনের একটি বাস্তব সমাধান হিসেবে।
০৭. সেলুলার ব্রডব্যান্ড :
ওয়্যারলেস ব্রডব্যান্ডের বিস্ফোরণ ঘটে ২০০৮ সালে। হাই-স্পিড ডাউনলিঙ্ক প্যাকেট অ্যাক্সেস ও হাই-স্পিড আপলিঙ্ক প্যাকেট অ্যাক্সেস টেকনোলজির প্রাপ্যতা এবং সেই সাথে সেলুলার অপারেটর দেয়া আকর্ষণীয় দাম-সুবিধা এ বিস্ফোরণে সহায়তা যোগায়। হাই-স্পিড প্যাকেট অ্যাক্সেস পারফরমেন্সে আপলিঙ্ক কিংবা ডাউনলিঙ্ক ডিরেকশন এক মেগাবিট বা দুই মেগাবিট, এমনকি তার চেয়েও বেশি ব্যান্ডউইডথের সুযোগ পাওয়া যায়। অনেক অঞ্চলে হাই-স্পিড প্যাকেট অ্যাক্সেস ওয়াই-ফাই ‘হট স্পটের’ বদলে পর্যাপ্ত কানেকটিভিটি দিচ্ছে। এবং পরিপক্ব চিপসেটের প্রাপ্যতা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে বিল্ট-ইন সেলুলার মডিউলসহ ল্যাপটপ কেনায় সক্ষম করে তুলছে। এর ফলে এরা পাচ্ছে add-on cards কিংবা dongles-এ সুপিরিয়র পারফমেন্স।
০৮. এনএফসি :
এনএফসি’র পূর্ণ রূপ হচ্ছে ‘নিয়ার ফিল্ড কমিউনিকেশন’। এক অথবা দুই সেন্টিমিটারের চেয়ে বেশি দূরত্বে সহজ ও নিরাপদ যোগাযোগ গড়ে তোলার জন্য হ্যান্ডসেটগুলোকে সুযোগ করে দেয় এনএফসি। মোবাইল পেমেন্টের মতো অ্যাপ্লিকেশনগুলোতে একটি শীর্ষস্থানীয় স্ট্যান্ডার্ড হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে এনএফসি। বেশকিছু দেশে এর প্রবেশ সফল বলে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সুপ্রমাণিত হয়েছে। এর আরো বৃহত্তর প্রয়োগও রয়েছে। যেমন, ‘touch to exchange information’। একটি ছবি একটি হ্যান্ডসেট থেকে ডিজিটাল ফটো ফ্রেমে স্থানান্তর কিংবা একটি হ্যান্ডসেটের মাধ্যমে একটি ভার্চুয়াল ডিসকাউন্ট ভাউচার পিকআপ করা ইত্যাদি হচ্ছে এর উদাহরণ। গার্টনার আশা করে না, এনএফসি পেমেন্টে কিংবা অন্যান্য কর্মকান্ড খুব বেশি সাধারণ হয়ে উঠবে। এমনকি ২০১০ সালে এর পরিপক্ব বাজারে, যেমন পশ্চিম ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে এনএফসি’র বাজার বিকাশ লাভ করবে। কারণ, ২০১০ সালে এর বেশ কিছু অ্যাপ্লিকেশন বাজারে আসবে।
২০১০ সালের সম্ভাবনাময় ৮টি প্রযুক্তি চিহ্নিত করার পর গার্টনার ২০১০ সালে প্রযুক্তি খাতের বিভিন্ন ক্ষেত্রের বাজার বিশ্লেষণ করেছে। যেমন গার্টনার বলেছে, বিশ্বব্যাপী সেমিকন্ডাক্টর ক্যাপিটাল ইকুইপমেন্ট মার্কেটের প্রবৃদ্ধি বাড়ছে এবং ২০১০ সালে তা ৪৫ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি ঘটবে। গার্টনার আরো বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের সোলার পিপিএ শিল্পের প্রবৃদ্ধি ২০১০ সালে সৃষ্টি করবে নতুন নতুন প্রযুক্তি-সুযোগ।
২০১০ সালের বিজনেস টেকনোলজির সেরা দশ প্রবণতা
টেকনোলজির চলা কখনো থামে না। কিন্তু চিফ ইনফরমেশন অফিসার ও আইটি ম্যানেজারদের জন্য ২০১০ সালে কোন কোন প্রযুক্তি বিবেচনায় আনা দরকার? ২০০৯ সালে বিভিন্ন প্রযুক্তি বিশ্লেষক, ভেন্ডর, ইউজার, আইটি প্রফেশনাল, সিস্টেম ইন্টিগ্রেটর ও অভিজ্ঞজনেরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে যে অভিমত রেখেছেন, তাতে দেখা গেছে, ২০১০ সালের বিজনেস টেকনোলজির ক্ষেত্রে সেরা দশ প্রবণতা হবে নিম্নরূপ :
০১. ক্লাউড কমপিউটিং :
ক্লাউড কমপিউটার এখন আসে কমপক্ষে তিনটি ফ্লেভারে : On demand application (Software-as-on service), clouds as source of computing infrastructure (Amazon Web Services and its ilk), এবং as a paradigm of delivering services within an organism (internal clouds)। এর অর্থ হচ্ছে, প্রায় প্রতিজন চিফ ইনফরমেশন অফিসারকে বিবেচনায় আনতে হবে একই ধরনের ক্লাউড কমপিউটিং। উল্লিখিত তিনটি ফ্লেভারের ক্লাউড কমপিউটিং হচ্ছে disruptive forces। গার্টনার নামের বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান ক্লাউড কমপিউটিংকে ২০১০ সালের জন্য ‘most strategic technology’ হিসেবে বর্ণনা করেছে। কারণ, এটি আইটি সলিউশনের ব্যয়কে কমায় না, বরং তা নতুন করে সাজিয়ে অন্যগুলোতে ব্যবহার কমিয়ে দেয়।
০২. মাইক্রোসফটের চারটি বড় আপগ্রেড :
২০১০ সালে আমরা পাবো Office 2010 এবং SharePoint 2010-এর উদ্ভব। আরো পাবো Exchange 2010। আইটি ম্যানেজাররা মাইক্রোসফটের সাথে দীর্ঘমেয়াদী লাইসেন্স চুক্তির মাধ্যমে পাবো তিনটি বড় ধরনের আপগ্রেড। ‘অফিস ২০১০’ হবে আরেকটি ইনক্রিমেন্টাল আপগ্রেড। কিন্তু নতুন SharePoint এবং Exchange 2010-এর শুধু ৬৪ বিট সংস্করণই বাজারে আসবে। তাছাড়া উইন্ডোজ-৭-এর কথাও তথ্য কর্মকর্তারা ভুলে থাকতে পারবেন না।
০৩. ভার্চুয়ালাইজেশন :
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভার্চুয়ালাইজেশন সংবাদ শিরোনামের বিষয় হয়ে না এলেও এর বিকাশ ছিল অব্যাহত। গার্টনার বলেছে, ২০১০ সালে ভার্চুয়ালাইজেশন হবে ‘স্ট্যান্ডার্ড ডিজাস্টার রিকোভারি’ এবং তা হবে পাওয়ার মতো টেকনিক। কারণ, ভার্চুয়াল মেশিন এক লোকেশন থেকে অন্য লোকেশনে যাওয়ার অনুশীলন পরিপক্ব হয়ে উঠেছে। ডেস্কটপ ভার্চুয়ালাইজেশনের ধারণাও জোরালো করে তুলছে এমন চিন্তাভাবনাকে, ‘থিন ক্লায়েন্টস’ সস্তাতর পিসির একটি বিকল্প কি না।
০৪. বায়োমেট্রিক অথেন্টিক্যাশন :
২০০৯ সালে দেখা গেছে, ‘ন্যাশনাল অস্ট্রেলিয়া ব্যাংক’-এর ফোন ব্যাংকিং গ্রাহকদের জন্য অথেন্টিক্যাশনের অগ্রাধিকার পদ্ধতি হিসেবে ভয়েসপ্রিন্ট পদ্ধতি অবলম্বন করছে। জেনারেল কাস্টমার সার্ভিস ইনকোয়ারির ক্ষেত্রেও এই ব্যাংক এই পদ্ধতি অগ্রাধিকারভিত্তিতে ব্যবহার করছে। কারণ, এ পদ্ধতি নিরাপত্তা ও গ্রাহক সার্ভিসের মান আরো উন্নততর করেছে। অনেক কলসেন্টার এই অভিজ্ঞতা লাভ করেছে এবং এই প্রযুক্তি ২০১০ সালে আরো বিস্তৃত পরিসরে ব্যবহারের অপেক্ষায়।
০৫. আগামী প্রজন্মের ফায়ারওয়াল :
বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান চায় নানা ধরনের সিকিউরিটি যন্ত্রপাতি একই সাথে ব্যবহার করতে। স্তরভিত্তিক সুরক্ষার জন্য বিভিন্ন ফায়ারওয়াল, ইনট্রুশন প্রটেকশন ডিভাইস ও ইউনিফায়েড থ্রেট ম্যানেজমেন্ট ডিভাইস খুবই সহায়ক। তা সত্ত্বেও ফায়ারওয়াল বেড়ে উঠেছে এবং এখন তা অন্যান্য সিকিউরিটি যন্ত্রপাতির কাজও সারতে সক্ষম। যারা তাদের নিরাপত্তা অবকাঠামোকে আরো সুসংহত করতে চান, তারা ফায়ারওয়ালের বিকাশকে স্বাগতম জানাবেন।
০৬. এমপ্ললয়ি-ওউনড আইটি :
সাধারণত, আইটি ডিপার্টমেন্ট সিদ্ধান্ত নেয়, কী ধরনের সফটওয়্যার ও কমপিউটার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ব্যবহার করবেন এবং এরা রক্ষণাবেক্ষণের সব দায়দায়িত্ব নেন। তরুণ কর্মীরা তা সত্ত্বেও তাদের নিজেদের পছন্দের কমপিউটারটিতে পছন্দমতো অ্যাপ্লিকেশনও চান। পার্সোনালাইজড কমপিউটিং স্টাইলই এদের বেশি পছন্দ। Employee-owned IT তা-ই। তরুণ কর্মীরা এর মাধ্যমে তাদের কমপিউটারকে এমনভাবে কাজে লাগান, যাতে করে এতে মাল্টিপল অপারেটিং সিস্টেমের মাধ্যমে নিরাপত্তা কার্যকর হয়। আইটি ডিপার্টমেন্টের রক্ষণাবেক্ষণ খরচ কমে। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মনে করেন, তারা আরো উৎপাদনশীলতার সাথে তাদের কমপিউটার মেশিনটি ব্যবহার করতে পারছেন।
০৭. লয়েলটি স্কিম :
অ্যানালিস্ট ফার্ম তথা বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান ‘ফ্রস্ট অ্যান্ড সুলিভান’-এর ইন্ডাস্ট্রি ডিরেক্টর অ্যান্ড্রু মিলরয়ের বিশ্বাস, লয়েলটি স্কিম মূলধারায় যাবে ২০১০ সালে। রিটেইল ও অ্যাভিয়েশনে লয়েলটি স্কিমসমূহের মূলধারায় গ্রহণযোগ্যতার কথা উল্লেখ করে মিলরয় উল্লেখ করেন, টেলিযোগ ও অন্যান্য শিল্পে এগুলোর অনুপস্থিতির মধ্যেও আশা করা হচ্ছে নতুনতর পরিপক্ব লয়েলটি সফটওয়্যার ২০১০ সালে অনেক সিআইও-র চাহিদা হয়ে দাঁড়াবে।
০৮. সলিড স্টেট ডিস্ক :
স্টোরেজ ফ্যাশনেবল শিল্প নাও হতে পারে। কিন্তু এটি রয়ে গেছে একটি বিশাল শিল্প হিসেবেই। এবং ঠিক এই সময়ে এই শিল্প চলে যাচ্ছে সলিড স্টেট ডিস্কের দিকে। সলিড স্টেট এমন একটি টেকনোলজি, যেখানে ম্যাগনেটিক স্পিনিং ডিস্কের পরিবর্তে ব্যবহার হয় স্টোরেজ এসাইন টু ফ্ল্যাশ মেমরি। এর অর্থ এ প্রযুক্তি নতুন সার্ভার ছাড়াই অ্যাপ্লিকেশনে গতি আনতে পারে। এবং বিদ্যুতের খরচ কমে। ২০১০ সালে রিলিজ হবে LTO-5, এটি একটি নতুন স্ট্যান্ডার্ড টেপ ফরমেট প্যাকিং। ৩.৬ টেরাবাইট ডাটা প্রতি টেপে।
০৯. স্মার্ট গ্রিড :
স্মার্ট গ্রিডগুলো হচ্ছে একটি বিকাশমান প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তি ভাবনায় আছে ইলেকট্রিসিটি মনিটর করার জন্য ডিভাইসে সেন্সর ইনভেডেড করা, এতে করে এরা সিদ্ধান্ত নিতে পারে অধিকতর সস্তায় বিদ্যুতের সময় অপারেট করার ব্যাপারে। এটি অপরদিকে বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোকে সুযোগ করে দেয় অপচয় বোধ করে আরো সুনির্দিষ্টভাবে চাহিদা আগে থেকেই নির্ধারণের। গ্রিড টেকনোলজি বিকাশের প্রত্যাশীদের জন্য এ ধারণা অনুকূলে ও পছন্দের। এবং এরা এটিকে দেখে ন্যাশনাল ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্কের ট্র্যাফিক সোর্স হিসেবে।
১০. হাইব্রিড সার্ভার :
২০০৯ সালে সবচেয়ে বড় ধরনের আইটি ট্রানজ্যাকশন ঘটনা ছিল ওরাকলের সান কোম্পানি কিনে নেয়া। ওরাকল পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আসছিল all-in-ones নিয়ে, যার মধ্যে একীভূত করা হয়েছিল একটি সার্ভার, স্টোরেজ ও অন্যান্য আরো কিছু, যা প্রয়োজন হয় একটি একক বাক্সে বিজনেস অ্যাপ্লিকেশনগুলো চালনার জন্য। ওরাকল প্রবলভাবে চায় ‘সান’-এর কর্মকান্ড ও একই ক্ষেত্রে আরো সম্প্রসারিত হোক। এইচপি নিজেও কাজ করে যাচ্ছে ঠিক একই পথে, এর স্টোরেজ বিন্যাসগুলোকে এই সার্ভারগুলোর মতো করে তোলার জন্য এবং এর উৎপাদনমূল্যও কমিয়ে আনার জন্য। যদি এই প্রবণতা অব্যাহত থাকে, ডাটা সেন্টার হার্ডওয়্যার তখন একই দেখাবে।
২০১০ সালের হটেস্ট পিসি টেকনোলজি
২০০৯ সালকে সংশ্লিষ্টরা বলছেন টেকনোলজির ক্ষেত্রে এটা ছিল একটি ‘গ্লোরিয়াস ইয়ার’। এই বছরটিতে পিসি আরো দ্রুততর হয়েছে। উন্নততর হয়েছে। এমনকি হয়েছে সস্তাতর। আমরা এই ‘গ্লোরিয়াস ২০০৯’-এর রথে চড়ে পা দিয়েছি ২০১০ সালে, অতএব পেছনের দিকে না তাকিয়ে বরং পাঠকদের নিয়ে যেতে চাই ২০১০ সালের পার্সোনাল কমপিউটার বিষয়ে সম্ভাব্য হাইলাইটের দিকে।
প্রসেসর
২০১০ সালের প্রথম দিকেই আমরা পাচ্ছি ইন্টেলের নতুন নেহালেম আর্কিটেকচারের 32nm revision, যা পরিচিত Westmere নামে। নতুন ৩২ এনএম প্রসেসর পরিবারের প্রথম কিস্তি হবে Clarkdale।
পারফরমেন্সের ব্যাপারে আগ্রহীদের জন্য অবশ্যই ‘সিক্স-কোর গালফটাউন প্রসেসর’ হবে 32nm ওয়েস্টমেয়ার চিপ চয়েজ। এটা প্রায় নিশ্চিত গ্রীষ্মের আগে বাজারে আসবে গালফটাউন। এটি বাজারে যাবে Core i9 ব্র্যান্ডের আওতায়। প্রাথমিক ইঞ্জিনিয়ারিং নমুনা পরীক্ষা থেকে বুঝা যায়, এটি একটি ‘কিলার’। এর প্রতিটা বিট ইন্টেলের বিদ্যমান কোয়াড-কোরের মতোই ওভারলকেবল। যেনো এটিই পর্যাপ্ত নয়। ২০১০ সালের একদম শেষদিকে আসছে ইন্টেলের আরেকটি ব্র্যান্ড নিউ আর্কিটেকচার ‘সোল্ড ব্রিজ’। এর সম্পর্কে খুব একটা বেশি এখনো জানা যায়নি। তবে আমরা বলতে পারি, এটি হবে 32nm প্রযুক্তিভিত্তিক। এটি হবে ইন্টেলের বিদ্যমান ১২৮বিট এসএসই ইনস্ট্রাকশন সেটের একটি ২৫৬বিট এভিএক্স সংস্করণ। এটি তখন হবে একটি ফ্লয়েটিং পয়েন্ট বিস্টের একটি বিট।
কিন্তু এএমডি’র হবেটা কী? আর্কিটেকচারাল পদবাচ্যে এএমডি’র ২০১০ সালটা হবে একটি কাজের বছর। অতি প্রয়োজনীয় Buldozer core আসবে ২০১১ সালের আগে। অবশ্য এএমডি’র সিপিইউ-জিপিইউ ফিউশন চিপ, যা অন্যভাবে এপিইউ (অ্যাক্সিলারেটেড প্রসেসিং ইউনিট) নামে পরিচিত, ২০১১ সালের আগে পাওয়া যাবে না কোনোমতেই। অপরদিকে এএমডি আগ্রহী থাকবে একটি নতুন ধরনের চিপ পরিবার নিয়ে, যা Thuban নামে পরিচিত। অপরিহার্যভাবে এটি বিদ্যমান Phenom IT CPU-এর একটি মাইনর ডিভিশনে। তবে সবচেয়ে বড় খবর হবে একটি ‘সিক্স-কোর ভ্যারিয়েন্ট’। এএমডি’র বর্তমান পারফরমেন্সে কিছুটা ঘাটতি আছে ধরে নিয়ে মূল্য নির্ধারণের ব্যাপারে মনোযোগী হতে হবে। খুব সম্ভবত আগামী গ্রীষ্মে আসছে ২০০ পাউন্ড দামের একটি সিক্স-কোর চিপ। ২০১০ সালের একদম শেষদিকে এএমডি’র ৩২ এনএম প্রসেসর লাইনে আসা শুরু করতে পারে। ফল দাঁড়াবে : হাইয়ার ক্লক, লয়ার প্রাইস এবং বেটার পাওয়ার কনজাম্পশন।
গ্রাফিক্স
২০১০ সালটাকে ধরা হচ্ছে ইন্টেলের বহু কোর বিশিষ্ট Larrabee chip দিয়ে গ্রাফিক্স পার্টিকে ক্র্যাশ করার বছর। কমপক্ষে কয়েক বছরের জন্য Larrabee মোহাচ্ছন্ন থাকার পর ২০১০ সালটা হবে ফর্মে ফিরে আসার বছর। এরপর এএমডি ও এনভিডিয়ার মাধ্যমে মাঝামাঝি ধরনের প্রতিযোগিতার মাধ্যমে চলবে এই ফিরে আসা।
সব জিপিইউ’র মাদারসহ NVIDIA হবে প্রথম আউট অব ব্লকস। এর বর্তমান কোডনেম ‘Fermi’। এটি 3bn ট্র্যানজিস্টরের সুবাদে একক জিপিইউ, যা ছাড়িয়ে যাবে এএমডি’র শক্তিধর Radon HD 5870-কেও। এটি এএমডি’র ডুয়েল-চিপ ৫৯৭০-র ক্লিন পেয়ার শো করতে পারবে কি না, সেটাও আরেক প্রশ্ন। তার পরও Fermi প্রিক্সেল পুশিংয়ের চেয়ে বেশি কিছু। এটি উল্লেখযোগ্যভাবে অধিকতর ডেডিকেটেড জেনারেল প্রসেসিং রিসোর্সের উন্নতি বিধান করে, যেকোনো পূর্ববর্তী গ্রাফিক্স আর্কিটেকচারের তুলনায়। অনেক ক্ষেত্রে এটি হবে বিদ্যমান এনভিডিয়া চিপের চেয়ে ১০ গুণ প্রসেসিং ক্ষমতাসম্পন্ন। অবাক করার মতো বিষয় বটে।
২০১০ সালটি আবারো হবে এএমডি’র গ্রাফিক্স সুসংহত করার বছর। মোটের ওপর Radeon HD 5800 সিরিজ হচ্ছে আপনার সর্বোত্তম ক্রয়। ২০০৯ সালটা যখন ঠিক শেষ হচ্ছে, তখন আশা করা হচ্ছে শক্তিধর Cypress চিপের বর্ধিত ক্লকস্পিডসহ একটি টুইকড ভার্সন দেখার জন্য।
আর হ্যাঁ, আমরা যেনো না ভুলি Computer Shader in DirectXII, DXII গ্রাফিক্স বিশ্বে ক্রমবর্ধমান হারে পাওয়া যাবে। ২০১০ সালে জিপিইউ-এ জেনারেল পারপাস প্রসেসিংয়ে শেষ পর্যন্ত দেবে ব্যাপক প্যারালাল প্রসেসিং পাওয়ার।
মোবাইল
২০১০ সালে আসছে ‘সেকেন্ড জেনারেশন ইন্টেল অ্যাটম’ আল্ট্রা মোবাইল প্রসেসর। এর কোডনেম Pineview। আসলে Atom Mark II প্রসেসরের চেয়েও বেশি কিছু। এটি একটি চিপে সিস্টেম হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে আধাপথ এগিয়ে গেছে। Pineview-এর আগমনের ফলে মেমরি কন্ট্রোলার ও গ্রাফিক্সের মতো ফিচার চলে যাবে অ্যাটম প্রসেসরে। এর ফলে পাওয়া যাবে আরো সমন্বিত ও কার্যকর প্লাটফরম। সহজেই অনুমেয়, এক্ষেত্রে সুবিধাটা হবে ক্ষুদ্রতম ফরম ও উন্নততর ব্যাটারি লাইফ। তবে ভাববেন না, Pineview ইন্টেলকে স্মার্টফোনে ঢুকতে দেবে এবং অতএব full-x86 পকেট পিসিতে প্রলুব্ধ করবে। পাইনভিউ হচ্ছে ইন্টেলের বিদ্যমান ৪৫এনএম প্রসেসরভিত্তিক, নতুন 3nm gubbiens ভিত্তিক নয়। তারপরও পাইনভিউ হবে কমপক্ষে আগের চেয়ে সস্তা, দীর্ঘস্থায়ী নোটবুক ও ক্ষুদ্রতর MIDs। এসব মোটেও খারাপ কিছু নয়। ইন্টেল ২০১০ সালে আনবে এর নতুন ৩২ এনএম Westmere আর্কিটেকচার ফুল পাওয়ার নোটবুকে। Arrandale নামের নতুন ডুয়েল কোর চিপ আসছে আগত প্রায় Calpella মোবাইল প্ল্যাটফরমের মাঝেই।
আবারো দাম কমবে, পারফরমেন্স ও ব্যাটারি লাইফ ২০১০ সালে বাড়বে। সামান্য বাধা আসতে পারে ইন্টিগ্রেটেড গ্রাফিক্স কোরের জন্য। ব্যাপার হচ্ছে, এটি আটকানো হয়েছে সিপিইউ প্যাকেজে, যা সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, যদি না সে সমস্যা কাটানো হয়। এক্ষেত্রে ইন্টেলের উজ্জ্বল অতীত রেকর্ড থেকে তেমনটি সম্ভাবনা খুবই বেশি।
এসব কিছুর পরও এএমডি’র দুয়ার খোলা আছে মোবাইল মার্কেটে আকর্ষণ সৃষ্টির জন্য। ২০১০ সালের রোডম্যাপে অবশ্য বৈপ্লবিক কিছু করার মতো নেই। সত্যিকারের আকর্ষণীয় কিটের মধ্যে আছে অ্যাটম বাশিং, Bobcat কোর, তাও ২০১১ সালের আগে বাজারে আসবে না। তা সত্ত্বেও উল্লেখযোগ্য হবে এএমডি’র বিদ্যমান ৪৫এনএম সিপিইউ আর্কিটেকচার ও ডিরেক্টএক্স ১১ গ্রাফিক্সভিত্তিক নতুন মোবাইল কোয়াড-কোর প্রসেসর। এএমডি ২০১০ সালে এর পাতলা ও হালকা নোটবুকে ৪৫এনএম টেকনোলজি ব্যবহার করবে। এএমডি’র দাবি, পারফরমেন্সের উত্তরণ ঘটবে, ব্যাটারি লাইফ ৭ ঘণ্টা নিয়ে পৌঁছানো হবে। বিষয়টিতে ইন্টেলেরও মনোযোগ দেয়া দরকার।
স্টোরেজ
পিসি পারফরমেন্স পাজেলের ক্ষেত্রে সর্বশেষ বিষয়টি হচ্ছে স্টোরেজ। অপরিহার্যভাবে ২০১০ সালে সলিড স্টেট ড্রাইভ ব্যবসায়ে থাকবে। আরো বেশি গতি, অধিকতর ক্যাপাসিটি ও দাম কমা ইত্যাদির দেখা মিলবে ২০১০ সালে। বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত এসএসডি’র শিরোপার প্রতিযোগী হবে মাইক্রোনের Real SSD C300 (মাইক্রন হচ্ছে জনপ্রিয় মেমরি ব্র্যান্ড ‘ক্রুসিয়েল’-এর প্যারেন্ট কোম্পানি)। দাবি করা হচ্ছে, যথাক্রমে রিড অ্যান্ড রাইট রেট ৩৫৫ এমবি/এস এবং ২১৫ এমবি/এস। সি৩০০ পরম প্রতিযোগী হওয়ার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিশীল।
ক্যাপাসিটির ক্ষেত্রে ভবিষ্যদ্বাণী করা কঠিন। বেশ কয়েকটি কোম্পানি কাজ করছে ক্যাপাসিটির পর্যায় উত্তরণের জন্য। তাদের MLC flash Cell-এর মেমরি ডেনসিটি বাড়ানোর জন্যও কাজ করছে এবং একটি উল্লেখযোগ্য উত্তরণ হচ্ছে পাউন্ড/জিবি অনুপাত রাতারাতি অর্ধেক কিংবা চার ভাগের এক ভাগে পৌঁছতে পারে।
১২৮ জিবি থেকে ২৫৬ জিবি রেঞ্জের ড্রাইভার আরো বেশি করে পাওয়ার উপযোগী হবে। বুট ও অ্যাপ্লিকেশনের জন্য সলিড স্টেট আরো প্রবেশযোগ্য হবে। মাস স্টোরেজ, তা সত্ত্বেও প্রচলিত ম্যাগনেটিক ড্রাইভেই থেকে যাবে।
২০১০ সালে সেমিকন্ডাক্টরের বাজার বাড়বে
২০০৯ সালে বিশ্বব্যাপী সেমিকন্ডাক্টর ইকুইপমেন্ট ব্যয় কম হয়েছে ৪২.৬ শতাংশ। কিন্তু এর বাজার এখন বেশ ভালো প্রবৃদ্ধির দিকে। এ তথ্য জানিয়েছে গার্টনার নামের তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশে¬ষক প্রতিষ্ঠান। গার্টনার আশা করছে, ২০১০ সালে বিশ্বব্যাপী সেমিকন্ডাক্টর ইকুইপমেন্ট ব্যয় বেড়ে যাবে ৪৫.৩ শতাংশ হারে।
গার্টনার রিসার্চ-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিন ফ্রিম্যান বলেন, ফাউন্ড্রি ও অন্যান্য কিছু কিছু ক্ষেত্রে কয়েকটি কোম্পানি সেমিকন্ডাক্টর ইকুইপমেন্ট সেগমেন্টে ২০০৯ সালের দ্বিতীয়ার্ধে প্রবৃদ্ধি বাড়াতে পেরেছে। প্রযুক্তির উন্নতিসাধনের মাধ্যমে ২০১০ সালের প্রথমার্ধেও এই প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। ২০০৯ সালে সেমিকন্ডাক্টর ইকুইপমেন্টের সব সেগমেন্টের বাজারেই ছিল অধোগতি। তবে গার্টনারের বিশে¬ষণমতে, এক্ষেত্রে প্রতিটা সেগমেন্টেই ২০১০ সালে বাজার প্রবৃদ্ধির হার হবে ২ অঙ্কের। ছকে তা দেখানো হলো-
বিশ্বব্যাপী সেমিকন্ডাক্টর ক্যাপিটাল ইকুইপমেন্ট ব্যয়
পূর্বাভাস : ২০০৯-২০১৪ (মিলিয়ন ডলারে)
২০০৯ ২০১০ ২০১১ ২০১২ ২০১৩ ২০১৪
সেমিকন্ডাক্টর মূলধনী ব্যয় ২৫,২৭২.৪ ৩৬,৭২৮.৪ ৪৭,৮২৬.৩ ৫৬,৯৫৯.০ ৪৮,৭৩৪.৬ ৫৩,৬৩৬.৯
প্রবৃদ্ধির শতকরা হার -৪২.৬ ৪৫.৩ ৩০.২ ১৯.১ -১৪.৪ ১০.১
ক্যাপিটাল ইকুইপমেন্ট ১৬,২৯৭.২ ২৫,৪৭১.৮ ৩২,৬৬০.৪ ৩৮,৫৮৪.৪ ৩১,৪৬৯.৫ ৩৫,৬০৪৭
প্রবৃদ্ধির শতকরা হার -৪৬.৮ ৫৬.৩ ২৮.২ -১৮.১ -১৮.৪ ১৩.১
ওয়াফার ক্যাব ইকুইপমেন্ট ১২,৫৭২.২ ১৯,৬৮৫.৯ ২৫,৪৫১.০ ৩০,৪৬৬.৭ ২৫,২৯৭.৩ ২৮,৪৭৫.১
প্রবৃদ্ধির শতকরা হার -৪৮.১ ৫৬.৬ ২৯.৩ ১৯.৭ -১৭.০ ১২.৬
মোড়ক ও সংযোগ ইকুইপমেন্ট ২,৩৭৮.১ ৩,৬৩৪.৭ ৪,৬২৬.১ ৫,২৭০.৯ ৩,৯৯৬.৭ ৪,৬৮৬.৪
প্রবৃদ্ধির শতকরা হার -৪০.৫ ৫২.৮ ২৭.৩ ১৩.৯ -২৪.২ ১৭.৩
অটোমেটেড টেস্ট ইকুইপমেন্ট ১,৩৪৬.৯ ২,১৫১.২ ২,৫৮৩.৩ ২,৮৪৬.৮ ২,১৭৫.৫ ২,৪৪৩.১
প্রবৃদ্ধির শতকরা হার -৪৪.৯ ৫৯.৭ ২০.১ ১০.২ -২৩.৬ ১২.৩
অন্যান্য স্পেন্ডিং ৮,৯৭৫.৩ ১১,২৫৬.৬ ১৫,১৬৫.৯ ১৮,৩৭৪.৬ ১৭,২৬৫.১ ১৮,০৩২.৩
প্রবৃদ্ধির শতকরা হার -৩২.৯ ২৫.৪ ৩৪.৭ ২১.২ -৬.০ ৪.৪
সূত্র : গার্টনার, ডিসেম্বর ২০০৯
মোবাইল ডিভাইস বিক্রি ২০১০ সালে বাড়বে ৯ শতাংশ
২০০৯ সালে প্রত্যাশার চেয়ে বেশি হারে মোবাইল ডিভাইস বিক্রি হয়েছে পশ্চিম ইউরোপে। ফলে ২০০৮ সালের তুলনায় ২০০৯ সালের তৃতীয়-চতুর্থকে বা প্রান্তিকে মোবাইল ডিভাইস বিক্রির প্রবৃদ্ধি ঘটেছে ০.৬৭ শতাংশ হারে। তবে গার্টনার সেপ্টেম্বরে পূর্বাভাস দিয়েছে ২০০৯ সাল শেষে এ প্রবৃদ্ধি দাঁড়াবে ৩.৭ শতাংশ। গার্টনার এখন বলছে ২০০৯ সালের তুলনায় ২০১০ সাল বিশ্বব্যাপী মোবাইল ডিভাইস বিক্রি বাড়বে ৯ শতাংশ। গার্টনার আরো আশা করছে, বিকাশমান অর্থনীতির দেশগুলোতে সেকেন্ড-হ্যান্ড মোবাইল ডিভাইস বিক্রি ও শুধু সিম বিক্রি ২০১০ সালে স্থিতিশীল বিশ্ববাজার সৃষ্টি করলেও ২০১১ সালে এ বাজার আবার অধোমুখী হবে। কারণ, তখন এসব দেশের ক্রেতাদের ওপর সামষ্টিক অর্থনৈতিক চাপ বাড়বে।
২০০৯ সালে মোট মোবাইল ডিভাইস বিক্রির মধ্যে স্মার্টফোনের অবদানের হার ১৪ শতাংশ। ২০০৮ সালের তুলনায় স্মার্টফোনের এই অবদান ২৩.৬ শতাংশ বেড়েছে ২০০৯ সালে। ২০১৩ সালে তা বাড়বে ৩৮ শতাংশ হারে, তা সত্ত্বেও, এই ইতিবাচক দিকটি নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে মোবাইল অপারেটরদের হাই ফ্লাট-রেইড প¬্যানের সিদ্ধান্তের কারণে, যার ফলে মোবাইল ডিভাইস মালিকদের মোট খরচ বেড়ে যেতে পারে, যা ভোক্তাদের ভোগান্তির কারণ হবে।
বিশ্বব্যাপী মোবাইল ডিভাইস বিক্রি : ২০০৯-২০১০ (হাজার ইউনিট হিসেবে)
অঞ্চল ২০০৮ ২০০৯ ২০১০
এশিয়া প্যাসিফিক ৪৫৩,১০০১.১ ৪৭৯,৮৬২.৬ ৫৪৬,৭৭০.৮
পূর্ব ইউরোপ ৯৬,০৬৮.০ ৮১,১৪৫.১ ৮৪,৯৯৫.০
জাপান ৪০,৫৮৮.১ ৩৪,৮৭১.৭ ৩৪,৮৯৭.৯
লাতিন আমেরিকা ১৪২,৩২৩.১ ১১৯,৭৩৭.৫ ১২৬,৭৭২.৭
মধ্যপ্রাচ্য ও আমেরিকা ১৩৩,৪৭১.৯ ১২৮,৮৭৯.৬ ১৪০,৩০৫.১
উত্তর আমেরিকা ১৮২,২৪৫.৮ ১৮২,৫৭১.৬ ১৯০,১৩০.৮
পশ্চিম ইউরোপ ১৭৪,৪৫৫.৩ ১৮৬,৯৫০.৫ ১৯৮,৪৯৮.৯
বিশ্বব্যাপী ১,২২২,২৫২.৩০ ১,২১৪,০১৮.৬০ ১,৩২২,৩৭১.২০
সূত্র : গার্টনার, ডিসেম্বর ২০০৯
কজ ওয়েব
ফিডব্যাক : jagat@comjagat.com