• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > কমপিউটার জগৎ-এর বাংলাদেশ লাইভ ওয়েবকাস্ট
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: অনিমেষ চন্দ্র বাইন
মোট লেখা:১৬
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১০ - জানুয়ারী
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
কমপিউটার জগৎ
তথ্যসূত্র:
প্রচ্ছদ প্রতিবেদন ৩
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
কমপিউটার জগৎ-এর বাংলাদেশ লাইভ ওয়েবকাস্ট


কমপিউটার জগৎ ১৯৯১ সালের মে মাসে প্রথম প্রকাশিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই পত্রিকাটি বাংলাদেশের আইসিটি খাতে উন্নয়নে নিরলস ভূমিকা রেখে চলেছে। কমপিউটার জগৎ-এর এ ভূমিকা শুধু সমাজে মানুষের মাঝে প্রযুক্তি বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানো প্রচেষ্টার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং বিভিন্ন সময়ে এই ম্যাগাজিনটি আইসিটি খাতের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইতিবাচক অবদান রাখার চেষ্টা করেছে। এই ধারাবাহিকতার পথ ধরে ২০০৯ সালে এর ওয়েবসাইটটি একটি পূর্ণাঙ্গ বাংলা ওয়েবপোর্টাল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। উল্লেখ্য, বাংলা ভাষায় হাতেগোনা পূর্ণাঙ্গ যে কয়টি ওয়েবপোর্টাল রয়েছে তার মধ্যে এর নাম সবার আগে উল্লেখ করতে হয়।

কয়েক বছর আগেও বাংলা ভাষায় ওয়েবসাইট তৈরি করা খুবই জটিল কাজ ছিল। অপারেটিং সিস্টেমের সীমাবদ্ধতা, ফন্টের সমস্যা, ইউনিকোড নিয়ে জটিলতা ইত্যাদি কারণে ২০০৩ সালের আগে খুব বেশি বাংলা ওয়েবসাইট তৈরি হয়নি। আমরা যদি বর্তমানে ইন্টারনেটে বাংলা ভাষায় তৈরি ওয়েবসাইটগুলোর দিকে তাকাই, তাহলে দেখব পূর্ণাঙ্গ পোর্টাল বলতে যা বোঝায়, তার ঘাটতি প্রবল। বাংলা ভাষায় প্রকাশিত যেসব ওয়েবসাইট জনপ্রিয় তার প্রায় সবই হয় দৈনিক পত্রিকার ওয়েব সংস্করণ অথবা কমিউনিটি ব্লগ। তাহলে প্রশ্ন আসতে পারে কমপিউটার জগৎ ডট কম-এর আলাদা বৈশিষ্ট্য বা তাৎপর্য কোথায়? এ প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে আমাদের আগে ওয়েবপোর্টাল সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। ওয়েবপোর্টাল বলতে এমন একটি ওয়েবসাইটকে বুঝায়, যেখানে বিভিন্ন ধরনের তথ্য ও সেবা থাকে এবং ব্যবহারকারীরা এসব কাজে লাগাতে পারেন। কমপিউটার জগৎ-এর ওয়েবসাইটে তাই এই পত্রিকার গত প্রায় ১৯ বছরে প্রকাশিত সব তথ্য থাকার পাশাপাশি আরো বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে এই পোর্টালে সব সুবিধাই বাংলা ভাষায় ।

নজরকাড়া ব্যাপার হলো, কমপিউটার জগৎ-এর পূর্ণাঙ্গ আর্কাইভ। এর মাধ্যমে সাধারণ পাঠক, গবেষক, সাংবাদিকসহ যেকোনো উৎসাহী ব্যক্তি খুব সহজেই গত প্রায় ১৯ বছরের সব কনটেন্ট বা বিষয়বস্ত্ত বিনামূল্যে ব্যবহার করতে পারবেন। এর ফলে কাউকে কষ্ট করে কমপিউটার জগৎ-এর অফিসে বা লাইব্রেরিতে যেতে হবে না পুরনো সংখ্যায় কী ছিল তা জানার জন্য। তবে এই ওয়েবসাইটে শুধু যে সব কনটেন্টই পাওয়া যাবে তা নয় বরং সেই কনটেন্টগুলো খুব সুন্দরভাবে সাজানো রয়েছে এবং তা খোঁজার জন্য খুব ভালো সার্চ ইঞ্জিনের ব্যবহার করা হয়েছে।

আর্কাইভের এই ধারণা কমপিউটার জগৎ যে শুধু নিজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখতে চায় তা নয়, এই ওয়েবসাইটে যেকোনো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান বা যেকোনো ব্যক্তি তার সমুদয় তথ্য বিনামূল্যে আর্কাইভ করে রাখতে পারবেন। উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশের বেশিরভাগ স্কুলেই এখন পর্যন্ত কোনো ওয়েবসাইট গড়ে ওঠেনি। অথচ প্রতিবছর এরা স্মরণিকাসহ বিভিন্ন তথ্য প্রকাশ করে থাকে। এসব তথ্য তারা খুব সহজেই একেবারে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে কমপিউটার জগৎ-এর ওয়েবসাইটে সংরক্ষণ করতে পারবে। এটি শুধু স্কুল নয়, বরং যেকোনো প্রতিষ্ঠান যাদের কোনো ওয়েবসাইট নেই কিন্তু ইন্টারনেটে তথ্য রাখা প্রয়োজন তাদের কাজে আসবে। এ যুগে বস্তুত সব প্রতিষ্ঠানেরই তথ্য সংরক্ষণ করা দরকার এবং কমপিউটার জগৎ ওয়েবসাইটে তা বিনামূল্যে করা যেতে পারে।

বাংলা ভাষায় ব্লগিং এখন বেশ জনপ্রিয়। বর্তমানে ইন্টারনেটে বেশ কয়েকটি বাংলা কমিউনিটি ব্লগ রয়েছে এবং সেগুলো সাফল্যের সাথে এগিয়ে চলেছে। কমপিউটার জগৎ-এর ওয়েবপোর্টালে ব্লগিংয়ের একটি সুবিধা রয়েছে। অন্যান্য কমিউনিটি ব্লগ থেকে কমপিউটার জগৎ-এর ব্লগটি একটু আলাদা। যেহেতু এটি একটি আইসিটিসংক্রান্ত ম্যাগাজিন, তাই এই ব্লগে মূলত প্রযুক্তিসংক্রান্ত লেখালেখিকে বেশি উৎসাহিত করা হয়। ইতোমধ্যেই এর সদস্যসংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়ে গেছে এবং প্রতিদিনই নিত্যনতুন পোস্ট আসছে। প্রায় দেখা যাচ্ছে, কারো কোনো সমস্যা হয়েছে তখন তারা এই ব্লগে এসে তাদের সমস্যার কথা জানাচ্ছেন এবং ব্লগের অন্যান্য সদস্য সমস্যার সমাধান দেবার চেষ্টা করেন।

প্রতিদিন আইসিটি দুনিয়ায় ঘটে যাচ্ছে বিভিন্ন ঘটনা। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের আইসিটি খাতেও অনেক কিছুই ঘটে যাচ্ছে। কমপিউটার ম্যাগাজিনগুলো মূলত এক মাস পর পর প্রকাশিত হয় এবং সেখানে এক মাসের গুরুত্বপূর্ণ সংবাদগুলোর একটি সঙ্কলন থাকে। কমপিউটার জগৎ ডট কম-এ প্রতিদিন বাংলাদেশ ও বিশ্বের আইসিটি সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু খবর প্রকাশ করা হয় এবং এর মাধ্যমে যারা এই দিকটাতে আগ্রহী তারা প্রতিদিনকার উল্লেখযোগ্য ঘটনা সম্পর্কে সংবাদ পেয়ে থাকেন। সংবাদ বা নিউজের এই ফিচারটি খুব সহজেই হোমপেজে পাওয়া যায় এবং হোমপেজে ঢুকলে খুব সহজেই একজন ব্যবহারকারীর সামনে ভেসে ওঠে আইসিটিসংক্রান্ত সাম্প্রতিকতম গুরুত্বপূর্ণ খবরসমূহ।

যারা আইসিটিসংক্রান্ত চাকরি, ফ্রিল্যান্সিং ও অন্যান্য সুযোগসুবিধা সম্পর্কিত সংবাদ পেতে চান তাদেরকেও নিরাশ করছে না কমপিউটার জগৎ-এর ওয়েবসাইট। এখানে এ ধরনের বিভিন্ন সুযোগসুবিধার তথ্য দেয়া হয় এবং বিশেষ করে ফ্রিল্যান্স কাজের জন্য আগ্রহীদের এই ওয়েবসাইটটি আগামী দিনে একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাবার স্থান হবে বলে আশা করা যায়। এছাড়া নিয়মিত চাকরির সুযোগের কথাও জানা যায় এবং প্রতিদিনই প্রচুর ভিজিটর আসেন এসব সম্পর্কে তথ্য জানতে। শুধু বাংলাদেশে কাজের খবরই নয়, এই ওয়েবসাইটটি ইন্টারনেটে বিভিন্ন কাজের তথ্যও দিচ্ছে।

কমপিউটার জগৎ ডট কম মূলত পরিণত হচ্ছে আইসিটিতে উৎসাহী ব্যক্তিদের একটি নেটওয়ার্কে। এখানে যারা বিভিন্ন টেকনিক্যাল সমস্যার সম্মুখীন হন, তারা এসে তাদের সমস্যার কথা জানাচ্ছেন। যারা এসব সমস্যা সম্পর্কে অভিজ্ঞ, তারা তাদের সমাধান করার চেষ্টা করছেন। এভাবে ধীরে ধীরে এই ওয়েবসাইটটি পরিণত হচ্ছে আইসিটিতে উৎসাহী তরুণ-তরুণীদের মিলনমেলায়। Alexa Ranking সাক্ষ্য দিচ্ছে ধীরে ধীরে কমপিউটার জগৎ-এর ওয়েবপোর্টালের ভিজিটরের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে যেসব ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিজিট করা হয়, তার মধ্যে কমপিউটার জগৎ একটি। এটা বেশ আনন্দের ব্যাপার, যেখানে বাংলাদেশের বেশিরভাগ ওয়েবসাইটে বিনোদন অথবা হাল্কা লঘু বিনোদন বা খেলাধুলা ধাঁচের কনটেন্ট থাকে সেখানে কমপিউটার জগৎ-এ শুধুই টেকনিক্যাল এবং আইসিটি সংক্রান্ত তথ্য থাকে। তাই এখানে মূলত প্রযুক্তি নিয়ে আগ্রহী ভিজিটররাই আসেন এবং এর মধ্যেও Alexa Ranking-এ ওয়েবসাইটটির ক্রমাগত উন্নতি হচ্ছে। এটি অত্যন্ত আশার লক্ষণ। ডিজিটাল বাংলাদেশের ব্যাপারে যে আমাদের তরুণরা আগ্রহী হচ্ছেন এবং তারা গানবাজনা, সিনেমা বা খেলাধুলার পাশাপাশি আইসিটি সেক্টরকে যে গুরুত্বের সাথে নিচ্ছেন, কমপিউটার জগৎ-এর ওয়েবপোর্টালে ক্রমবর্ধমান ভিজিটর সংখ্যা সে কথাই স্পষ্ট করে জানিয়ে দিচ্ছে।

কমপিউটার জগৎ-এর প্রতিষ্ঠাতা ও বাংলাদেশের আইসিটি আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ মরহুম আবদুল কাদেরের অন্যতম স্বপ্ন ছিল তথ্যপ্রযুক্তিকে সবার কাছে নিয়ে যাওয়া। এই ওয়েবসাইটটি সেই স্বপ্নেরই বাস্তবায়নের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ মাইলফলক। এই মুহূর্তে বাংলাদেশে এটি ছাড়া পুরোপুরি তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক পূর্ণাঙ্গ পোর্টাল বোধহয় আর নেই। অথচ বাংলাদেশের আইসিটি সেক্টর নিয়ে কাজ করছে এমন প্রতিষ্ঠান ও প্রকাশনার অভাব নেই। আমরা আশা করব, কমপিউটার জগৎ-এর এই উদাহরণ ধীরে ধীরে অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ও আইসিটি ম্যাগাজিনগুলোর মাঝে ছড়িয়ে পড়বে এবং ডিজিটাল বাংলাদেশের দিকে তরুণরা হাঁটার আরো বেশি সুযোগ পাবে।




ওয়েবপোর্টালটির বিভিন্ন সুবিধা

কমপিউটার জগৎ ওয়েবপোর্টালটি সক্রিয় কনটেন্ট সিস্টেম ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যারের মাধ্যমে ডেভেলপ করা হয়েছে। মাসিক কমপিউটার জগৎ-এ প্রকাশিত বাংলাদেশ তথা বিশ্বের তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক বিভিন্ন বিষয়ের ওপর বিগত ১৯ বছরের আর্কাইভ রয়েছে এখানে। বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা ও বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তির বিভিন্ন দিকের সাথে বর্তমান অবস্থার তুলনা বা ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনার ক্ষেত্রে কমপিউটার জগৎ পোর্টাল সহায়তা করবে ।

হোমপেজ :

কমপিউটার জগৎ ওয়েবপোর্টালটির হোমপেজ সাজানো হয়েছে অনেক গবেষণার মাধ্যমে। একজন সাধারণ ভিজিটরও যেনো সহজে উপলব্ধি করতে পারেন এর মধ্যে কী কী তথ্য আছে :

ক. মাসিক কমপিউটার জগৎ-এর চলতি সংখ্যার সব বিষয়।
খ. তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক বিভিন্ন সুযোগসুবিধা।
গ. সম্প্রতি অনুষ্ঠিত তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক গুরুত্বপূর্ণ সেমিনার ও আগামী ইভেন্টের তথ্য।
ঘ. তথ্যপ্রযুক্তির ওপর সাম্প্রতিক বিভিন্ন ঘটনার খবর ও অনুষ্ঠানের তাৎক্ষণিক সংবাদ।
ঙ. সম্প্রতি প্রকাশিত ব্লগের পোস্টসমূহ।
চ. সম্প্রতি বাংলাদেশের বাজারের নতুন পণ্য।
ছ. কমপিউটার গেমবিষয়ক বিভিন্ন তথ্য।

অন্যান্য সুবিধা

সার্চ :

কমপিউটার জগৎ-এর ওয়েবপোর্টালে সার্চ অত্যন্ত উন্নতমানের, যার সাহায্যে ক্যাটাগরিভিত্তিতে আপনার প্রয়োজনীয় তথ্য খুঁজে বের করতে পারবেন। বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষাতেই এটা করা সম্ভব। বাংলায় সার্চ করার জন্য আপনাকে সহায়তা করবে চার ধরনের কীবোর্ড। এর সহায়তায় বাংলা টাইপ করতে পারবেন। তাছাড়া একটি ফনেটিক কীবোর্ড লেআউট দেয়া আছে। এর সহযোগিতা নিয়েও আপনি টাইপ করতে পারবেন।

আর্কাইভ :

আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, কমপিউটার জগৎ-এর ওয়েব খুবই তথ্যসমৃদ্ধ। আর্কাইভে কয়েক ধরনের ফরমেটে তথ্য সাজানো হয়েছে : টেক্সট, পিডিএফ ও ইমেজ। এখানে বিগত বছরের ইংরেজি ও বাংলা আর্কাইভ ছাড়াও রয়েছে নিয়মিত প্রকাশিত সংখ্যা এবং অতি সাম্প্রতিক খবর।

অর্গানাইজেশন :

এর অর্গানাইজেশন অংশ শুধু একটি ডিরেক্টরি হিসেবেই কাজ করবে না, বরং এটি বিভিন্ন তথ্য, প্রেস রিলিজ, অনুষ্ঠানের খবর, অনুষ্ঠানের আগাম তথ্য ইত্যাদি সহজেই সংরক্ষণ ও প্রকাশ করতে পারবে।

সুযোগ :

এখানে রয়েছে দেশী-বিদেশী তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক চাকরি, ফ্রিল্যান্স, বৃত্তি, উচ্চশিক্ষা প্রভৃতির খবর।

ব্লগ :

উন্মূক্ত ব্লগ অংশে রয়েছে তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক বিভিন্ন মতামত যেখানে একজন ইউজার অ্যাকাউন্ট খুলে লেখা প্রকাশ করতে পারবেন। শুধু তাই নয়, অন্যের লেখার ওপর মন্তব্যের পাশাপাশি অন্যদের মন্তব্যের উত্তরও দেয়া যাবে।

কমজগৎ ভিডিও গ্যালারি : http://video.comjagat.com এই ঠিকানায় রয়েছে বিশাল ভিডিও আর্কাইভ। যখন কোনো ইভেন্ট লাইভ সম্প্রচার করা হবে, তখন যেকোনো ভিজিটর এখানে মতামত দেয়ার সুযোগও পাবেন। তাছাড়া বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে এখানে সার্চের ব্যবস্থাও থাকছে।

তথ্যপ্রযুক্তিপ্রেমীদের জন্য বছরের সেরা ও প্রশংসনীয় অধ্যায় হলো কমপিউটার জগৎ-এর লাইভ ওয়েবকাস্টিং। এ সেবা বিসিএস আইসিটি ওয়ার্ল্ড ২০০৯-এ বিশেষ সম্মাননায় ভূষিত হয়। এ মেলার হাজার হাজার দর্শকের দৃষ্টি আকর্ষণও করেছিল। এছাড়া মেলা প্রাঙ্গণের বাইরে যারা ছিলেন তাদের এই মেলা উপভোগ করার তেমন সুযোগ না থাকলেও লাইভ ওয়েবকাস্টিংয়ের মাধ্যমে তারা অংশ নিতে পেরেছেন। ইন্টারনেটের কল্যাণে এ মেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সেমিনারগুলোতে সরাসরি অংশনেয়ার সুযোগের মাধ্যমে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১ হাজারের বেশি দর্শক লাইভে অংশ নিয়েছেন বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। একই সাথে সেমিনার সম্পর্কে তাদের মন্তব্যও দিয়েছেন।


কমপিউটার জগৎ ডট ওয়েবসাইটে কমপিউটার জগৎ পত্রিকার ফ্লাশ ভার্সন

এ পর্যন্ত যে ক’টি অনুষ্ঠান লাইভ ওয়েবকাস্ট করেছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো :

* কমপিউটার জগৎ আয়োজিত ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ায় কমপিউটার কাউন্সিলের ভূমিকা শীর্ষক সেমিনার।
* বাংলাদেশ কমপিউটার সমিতির সাংবাদিক সম্মেলন।
* এশিয়া পার্টনারশিপ ইন্টারন্যাশনাল আয়োজিত ডেমোক্র্যাসি উইদাউট ভায়োলেন্স।
* বিসিসি আয়োজিত ডিজিটাল স্বাক্ষর ও ই-পেমেন্ট শীর্ষক সেমিনার।
* সর্বশেষ বিসিএস আইসিটি ওয়ার্ল্ড ২০০৯ ইত্যাদি।

এছাড়াও ডিজিটাল বাংলাদেশ সামিট ২০০৯, যা উদ্বোধন করেন রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান এবং এ অনুষ্ঠানেরও ওয়েবকাস্ট করা হয় কমপিউটার জগৎ ডট কম ওয়েবসাইটের মাধ্যমে।

ওয়েবকাস্ট কী

ওয়েবকাস্টের সরাসরি অর্থ করলে দাঁড়ায় ইন্টারনেটের মাধ্যমে সম্প্রচার। অডিও, ভিডিও বা উভয় ধরনের কনটেন্ট সম্প্রচার করা যেতে পারে। স্ট্রিমিং প্রযুক্তির মাধ্যমে এ কাজটি করা হয়। ফলে একজন ব্যবহারকারীকে বড় ধরনের ফাইল ডাউনলোড করতে হয় না। ওয়েবকাস্টের ধারণা বাংলাদেশে আমাদের কাছে নতুন মনে হলেও নিউইয়র্কে ১৯৮৯ সালে এ ধারণাটির কথা উল্লেখ করেন জিটিই ল্যাবরেটোরিজ-এর ব্রায়ান রাইলা (Brian Raila)। বর্তমানে বিবিসি, সিএনএন-এর মতো বিশ্বের প্রায় সব প্রধান টিভি ও রেডিও স্টেশন তাদের অনুষ্ঠানমালা ইন্টারনেটে সরাসরি সম্প্রচার লাইভ ওয়েবকাস্ট করে থাকে। উন্নত বিশ্বে আজকাল বিয়ে, জন্মদিন, মিউজিক কনসার্ট, খেলা, কোম্পানিগুলোর গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান এ ধরনের সবকিছুই ইন্টারনেটে সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে।

বাংলাদেশে ওয়েবকাস্টের ব্যবহার

বাংলাদেশের কিছু টিভি চ্যানেল ও এফএম রেডিও স্টেশন ইন্টারনেটে সরাসরি দেখা বা শোনা গেলেও বিভিন্ন অনুষ্ঠানের ইন্টারনেটে নিয়মিত সরাসরি সম্প্রচারের উদ্যোগ আসে কমপিউটার জগৎ থেকে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও একথা সত্য, ওয়েবকাস্ট বা লাইভ ওয়েবকাস্টের ব্যবহার বাংলাদেশে খুবই সীমিত এবং এর গুরুত্ব ও সুবিধার ব্যাপারে আমাদের অনেকেই সচেতন নন। এর অবশ্য একটা বড় কারণ রয়েছে। বাংলাদেশে এখনো ইন্টারনেটের ব্যবহার বেশ সীমিত ও ইন্টারনেট থেকে তেমন একটা আয় করা যায় না। এ যেনো অনেকটা দুষ্টচক্রের মতো। ইন্টারনেটের ব্যবহার সীমিত বলে আয়ের সুযোগ নেই বললেই চলে। আবার আয়ের সুযোগ সীমিত বলে ইন্টারনেটকে ঘিরে উদ্যোগ তেমন নেই। সর্বোপরি ইন্টারনেট ব্যবহার করে বাংলাদেশে তেমন কিছু করা যায় না বলে সাধারণ মানুষ এ সম্পর্কে খুব একটা আগ্রহী নয়। কমপিউটার জগৎ মনে করে এ দুষ্টচক্র যত শিগগির সম্ভব ভাঙতে হবে। এজন্য কমপিউটার জগৎ এগিয়ে আসে লাইভ ওয়েবকাস্টকে বাংলাদেশে সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে।

কমপিউটার জগৎ ও লাইভ ওয়েবকাস্ট

কমপিউটার জগৎ ডট কম ব্যবসায়িক মুনাফার প্রতি গুরুত্ব না দিয়ে গুরুত্ব দিয়েছে ওয়েবকাস্টের সুবিধাগুলো সম্পর্কে সবাইকে অবহিত করতে। এ প্রসঙ্গে ডিজিটাল বাংলাদেশ সামিট ২০০৯-এর প্রাক-সম্মেলন অধিবেশনগুলোর কথা উল্লেখ করতে হয়। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা সরাসরি দেখে অনলাইনে মন্তব্য পাঠিয়েছেন। আশা করা যায়, আগামী দিনগুলোতে আরো বেশি মানুষ তাদের মতামত দেবেন ও আমাদের নীতিনির্ধারকবৃন্দ এসব মতামতকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করবেন। কিংবা বলা যায় জাগরণের ৭১টি গণসঙ্গীতের অ্যালবামের প্রকাশনা উৎসব, যা ১২ ডিসেম্বর ২০০৯ সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানের শিখা চিরন্তন প্রাঙ্গণে থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হয় কমপিউটার জগৎ ডট কম ওয়েবসাইটের মাধ্যমে। সেদিন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অনেক বাঙালিরা এ অনুষ্ঠানটি উপভোগ করেন ও এজন্য কমপিউটার জগৎকে ধন্যবাদ জানান। এভাবে কমপিউটার জগৎ-এর ওয়েবকাস্ট যেনো হয়ে ওঠে বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বাঙালির ভার্চুয়াল মিলনমেলার অন্যতম প্রধান কেন্দ্রস্থল।

কমপিউটার জগৎ ডট কম-এর লাইভ ওয়েবকাস্টের একটি বড় সুবিধা হচ্ছে, সরাসরি দেখার পর আর্কাইভও থাকছে ওয়েবসাইটের ভিডিও সেকশনে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা তাই যেকোনো সময়ে দেখতে পারবেন। এর ফলে সরাসরি দেখতে না পারলেও কোনো সমস্যা নেই। যারা ইউটিউব দেখে ভাবেন, এমন কিছু বাংলা ভাষায় আসছে না কেনো, তাদের জন্যই এসেছে কমপিউটার জগৎ ওয়েবসাইটের ভিডিও সেকশন। ইউজার ইন্টারফেস বাংলা ভাষায়। এমনকি বাংলায় কমেন্ট বা মতামত দেয়া যায়। সেখানে যেকেউ ভিডিও আপলোড করতে পারবেন। ভিডিও সেকশন : www.video.comjagat.com।

লাইভ ওয়েবকাস্ট কেনো করছে কমপিউটার জগৎ?

এ প্রসঙ্গে কমপিউটার জগৎ-এর কারিগরি সম্পাদক আবদুল ওয়াহেদ তমাল বলেন, ‘জন্মলগ্ন থেকেই কমপিউটার জগৎ সবসময় চেষ্টা করেছে বাংলাদেশের আইসিটি সেক্টরে নতুন প্রযুক্তি সম্পর্কে মানুষকে জানাতে। এদেশে যখন ইন্টারনেট আসেনি, তখনো মানুষকে ইন্টারনেট জানানোর কাজটি করেছে কমপিউটার জগৎ। বাংলাদেশে এখনো ইন্টারনেটের ব্যান্ডউইডথের দাম খুবই বেশি। অপরদিকে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আয়ের সুযোগ তেমন গড়ে ওঠেনি। যার ফলে লাইভ ওয়েবকাস্টিং নিয়ে তেমন আগ্রহ নেই। অথচ সাধারণ জনগণের কাছে তৃণমূল পর্যায়ে আইসিটির সুফল পৌঁছে দেবার জন্য এর কোনো বিকল্প নেই। একথা সত্য, এ প্রযুক্তি এখনো বেশ ব্যয়বহুল এবং কারিগরি দিক থেকেও কিছুটা জটিল ও কষ্টসাধ্য। কমপিউটার জগৎ টিম সাধ্যমতো চেষ্টা করে চলেছে নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে। আশা করা যাচ্ছে, ১ বছরের মধ্যেই অনেকে আমাদের এ ভিশন বুঝতে পারবেন ও এ দিকটায় এগিয়ে আসবেন। হয়তো প্রথমদিকে খুব একটা লাভের মুখ তারা দেখবেন না। কিন্তু যখন তারা দেখবেন যে অনেক লোক উপকৃত হচ্ছেন, তখন তারা যে তৃপ্তি অনুভব করবেন, তার মূল্য টাকা দিয়ে পরিমাপ করা যাবে না।’

লাইভ ওয়েবকাস্টের সুবিধা

লাইভ ওয়েবকাস্টের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এর মাধ্যমে দেশের সব প্রান্তের মানুষের কাছে পৌঁছানো যায়। টিভি চ্যানেলের মাধ্যমেও তা করা যায়। কিন্তু টিভি চ্যানেলগুলোর সময় ও অনুষ্ঠানসূচীর সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তাছাড়া একটি টিভি চ্যানেলে একই সাথে দু’টি অনুষ্ঠান প্রচার করা সম্ভব নয়। সর্বোপরি সরাসরি সম্প্রচার যেকোনো চ্যানেলের জন্য খুব ব্যয়বহুল। ঢাকার বাইরের অনুষ্ঠানের সম্প্রচারের জন্য এ খরচ আরো বেড়ে যায়। তাছাড়া প্রায় সব চ্যানেলই শুধু বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান প্রচার করতে চায়। কেননা, এতে করে বেশি লোক দেখে ও বেশি অর্থ আয় করা যায়।

একটা ছোট উদাহরণ দেয়া যাক। দু’মাস আগে সাউথ এশিয়া পার্টনারশিপ ইন্টারন্যাশনাল (এসএএফ) আয়োজিত ডেমোক্র্যাসি উইদাউট ভায়োলেন্স শীর্ষক সেমিনার আয়োজন করা হয় ব্র্যাক ইনে। এসএএফ-এর সাথে জড়িত বিভিন্ন দেশের নেতৃবৃন্দ এখানে অংশ নেন। তিনদিনব্যাপী এ অনুষ্ঠান কমপিউটার জগৎ ওয়েবপোর্টালে সরাসরি ওয়েবকাস্ট করা হয়। এ ধরনের অনুষ্ঠান আমাদের দেশের জন্য যত গুরুত্বপূর্ণই হোক না কেনো, কোনো টিভি চ্যানেলের পক্ষেই এটা তিনদিন ধরে দিনব্যাপী সরাসরি সম্প্রচার করা সম্ভব নয়। আবার অন্যদিকে সেমিনারের আয়োজকরা হয়ত অনুষ্ঠানটির ভিডিও রেকর্ড করতে পারতেন। কিন্তু সে ভিডিও শুধু কয়েকজনের কাছেই সীমাবদ্ধ থাকত। কমপিউটার জগৎ ওয়েবপোর্টালে এ অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করার ফলে একদিকে যেমন আগ্রহীরা তা সরাসরি উপভোগ করতে পেরেছেন, আবার অন্যদিকে যারা এ সম্পর্কে জানতে চান তারা কমপিউটার জগৎ-এ ভিডিও সেকশনে গিয়ে তা দেখতে পারেন যেকোনো দিন যেকোনো সময়।


কমপিউটার জগৎ ডট কম ওয়েবসাইটের ভিডিও গ্যালারি

আসলে লাইভ ওয়েবকাস্ট টিভি চ্যানেলগুলোর ঠিক বিকল্প বা প্রতিদ্বন্দ্বী কোনোটাই নয়। বরং লাইভ ওয়েবকাস্ট হতে পারে টিভি চ্যানেলগুলোর জন্য পরিপূরক। ‘ডেমোক্র্যাসি উইদাউট ভায়োলেন্স’-এর মতো সেমিনারগুলোর ভিডিও ফুটেজ সহজেই কমপিউটার জগৎ-এর ওয়েবসাইট থেকে সূত্র উল্লেখ করে বিনামূল্যে বা নামমাত্র মূল্যে তা তাদের সংবাদে প্রচার করতে পারে। এর মাধ্যমে তাদের অর্থ ও সময় সাশ্রয় হবে। তাছাড়া আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, এমন অনেক অনুষ্ঠান আছে যার দিনব্যাপী সরাসরি সম্প্রচার করা সম্ভব নয় চ্যানেলগুলোর পক্ষে।

বাংলাদেশে কারা এ থেকে উপকৃত হতে পারেন

বাংলাদেশে ওয়েবকাস্ট যেসব অনুষ্ঠানে কাজে লাগানো যেতে পারে, এর ক’টি উদাহরণ দেয়া যাক :

* বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সেমিনার, কনফারেন্স, নবীনবরণ, আলোচনা অনুষ্ঠান প্রভৃতি।
* এনজিওদের বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক অনুষ্ঠান, উন্নয়ন কর্মসূচি।
* সরকারি ও বেসরকারি সভা, সেমিনার, ওয়ার্কশপ ইত্যাদি।
* রাজনৈতিক দলের সভা।
* কোনো কোম্পানির সভা, নতুন শাখা, নতুন পণ্যের উদ্বোধন।
* যেকোনো ধরনের মেলা, এক্সপো বা ট্রেড শো।
* রফতানিমুখী কোম্পানিগুলোর অনুষ্ঠান, যা বিদেশী ক্রেতারা দেখতে পারবেন এ দেশে না এসেই।
* যেকোনো সংবাদ সম্মেলন।
* স্কুল-কলেজের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও প্রাক্তন ছাত্রদের পুনর্মিলনী।
* গ্রামের মেলা, ষাঁড়ের লড়াই, নৌকা বাইচ ইত্যাদি।
* বিয়ে, গায়ে হলুদ, জন্মদিন ইত্যাদি পারিবারিক ও সামাজিক উৎসব-অনুষ্ঠান।

এ ছাড়া সরাসরি ওয়েবকাস্ট শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে বড় ধরনের বিপ্লব বয়ে আনতে পারে। যেমন প্রতিবছর এইচএসসি পরীক্ষার পর হাজার হাজার ছাত্রকে ঢাকায় এসে বিভিন্ন মেসে থেকে অনেক টাকা খরচ করতে হয় বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিংয়ের জন্য। অথচ লাইভ ওয়েবকাস্টের মাধ্যমে অন্তত জেলা শহরগুলোর শিক্ষার্থীরা নিজেদের শহরে বসেই ঢাকার কোচিং সেন্টারগুলোর ক্লাসে সরাসরি যোগদানসহ তাদের প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে পারবে। ফলে তাদের অনেক টাকা খরচ ও ভোগান্তি কমবে।

বাংলাদেশে এর প্রতিবন্ধকতা

বেশ কয়েকটি প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। ইন্টারনেটের ব্যান্ডউইডথের মূল্য এখনো বেশ চড়া। ওয়েবকাস্টের জন্য কমপক্ষে ২ মেগাবিট/সেকেন্ড (২৫৬ কিলোবাইট) গতিসম্পন্ন তারহীন ইন্টারনেট সংযোগের দরকার। উল্লেখ্য, বাংলাদেশে যেসব ইন্টারনেট সংযোগ পাওয়া যায়, তার বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আপলোডের গতি ডাউনলোডের এক-চতুর্থাংশ বা তারও কম পাওয়া যায়। লাইভ ওয়েবকাস্টে আপলোডের গতি একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক। দ্বিতীয় প্রতিবন্ধকতা হলো ঢাকার বাইরে এখনো বেশিগতির ইন্টারনেট সংযোগ পাওয়া যায় না, কিংবা অনেক বেশি খরচ পড়ে যায়। যেখানে বিদ্যুৎ সরবরাহ নেই বা ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটে, সেখান থেকে এটা করা প্রায় অসম্ভব, যদি না বিকল্প ব্যবস্থা অর্থাৎ জেনারেটর থাকে।

বাংলাদেশে ঘরে ঘরে বেশিগতির ইন্টারনেট এখনো পৌঁছায়নি। তাই সরাসরি ওয়েবসাইট অনুষ্ঠান দেখা অনেকের পক্ষেই সম্ভব নয়। তবে ওয়াইম্যাক্সপ্রযুক্তি এক্ষেত্রে আশার আলো দেখিয়েছে। যেহেতু এখনো ওয়েবকাস্ট তেমন জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি, তাই এ থেকে অর্থ আয় করাটা কিছুটা কষ্টসাধ্য।

ওয়েবকাস্ট নিয়ে কমপিউটার জগৎ-এর পরিকল্পনা

২০১০ হবে ওয়েবকাস্টের ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ বছর। কমপিউটার জগৎ ম্যাগাজিন ও ওয়েবসাইট যৌথভাবে এ প্রযুক্তি সম্পর্কে সবার মাঝে সচেতনতা তৈরি ও এর প্রত্যক্ষ ব্যবহার তুলে ধরবে। কমপিউটার জগৎ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে ডিজিটাল বাংলাদেশের ব্যাপারে তৃণমূল পর্যায়ের মানুষকে সম্পৃক্ত করার অন্যতম প্রধান হাতিয়ার হলো ওয়েবকাস্ট। যখন সাধারণ মানুষ তাদের দৈনন্দিন জীবনের ঘটনা, উৎসব, বেদনা, লেখাপড়া, চিকিৎসা ও আনন্দ-বেদনার প্রতিফলন দেখবে ইন্টারনেটে, তখন তারা স্বাভাবিকভাবেই কমপিউটার ও ইন্টারনেটের ব্যাপারে আগ্রহী হবে এবং এ প্রযুক্তিকে তারা আপন মনে করবে। আর এ কাজটিই কমপিউটার জগৎ করতে চায়।

কমপিউটার জগৎ চায় সিডনির রাহাত হোসেন সিলেটের ছোট বোনের বিয়েতে আসতে না পারলেও এ আনন্দ উৎসবে সরাসরি যোগ দিক ওয়েবকাস্টের মাধ্যমে। রংপুরের কৃষক আক্কাস আলী ও তার সাথীরা কাওরানবাজারের চিত্র দেখুক ও জানুক তাদের ফলানো সবজি ঢাকায় এসে কত চড়া দামে বিক্রি হয়। একুশে ফেব্রুয়ারির প্রভাতফেরির ফুল দেয়ার দৃশ্য ইন্টারনেটে সারা বিশ্বের বাঙালি দেখুক প্রাণভরে। পয়লা বৈশাখের রমনার বটমূলের ছায়ানটের অনুষ্ঠানের গান সরাসরি শুনুক। আর এভাবেই ২০১০ সালের মধ্যেই বাংলাদেশের প্রতিটি অনুষ্ঠান পাক সর্বজনীন রূপ, পৌঁছে যাক সবার কাছে।

২০১০ হোক নীরব বিপ্লবের বছর

আশার কথা হলো বিসিএস, বেসিস এবং বিসিসি- সবার কাছ থেকেই প্রচুর উৎসাহ পাওয়া গেছে ওয়েবকাস্টের ব্যাপারে। বিসিএস আইসিটি ওয়ার্ল্ড ২০০৯-এর সময় বিসিএস সভাপতি, কার্যনির্বাহী পরিষদ ও সচিবালয় থেকে যে ধরনের সর্বাত্মক সহযোগিতা পাওয়া গেছে, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। সামনে আসছে সফটএক্সপো এবং বেসিস নেতৃবৃন্দও কমপিউটার জগৎ-এর এ উদ্যোগকে প্রশংসার দৃষ্টিতে দেখছেন। কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানাতে হয়। ২০০৯ সালের নভেম্বর মাসে ওয়েবকাস্টের উদ্যোগ নেয় কমপিউটার জগৎ। মাত্র ২ মাসে ১০টিরও বেশি অনুষ্ঠানে প্রায় ২৫ দিন ধরে ওয়েবকাস্ট করা হয়।

বিয়ের অনুষ্ঠানের ওয়েবকাস্ট

বাংলাদেশে বিয়ের মতো আর কোনো কিছুতেই এত ধুমধাম করা হয় না। বলাবাহুল্য, পাত্রপাত্রীর চেয়েও আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবরা আরো বেশি আনন্দ করে থাকেন। প্রতিটি বিয়ের অনুষ্ঠানই ৩-৪ দিন ধরে চলে। যারা উপস্থিত থাকতে পারেন না, তাদের অনেকের মনেই কষ্ট থাকে। তাদের না আসার বেদনার ভাগীদার হন অনুষ্ঠানে যারা আসেন তারাও। আর এ কষ্ট লাঘব করে আনন্দ দ্বিগুণ করার প্রয়াসই হচ্ছে বিয়ের অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার। উন্নত বিশ্বেও ওয়েবকাস্ট এক্ষেত্রে একটি নতুন ধারণা।

বাংলাদেশে কমপিউটার জগৎ এক নতুন ইতিহাসের সূচনা করে ২০০৯ সালের ১৩ ডিসেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিত একটি বিয়ের লাইভ ওয়েবকাস্ট করে। সে বিয়েতে যারা উপস্থিত হতে পারেননি তাদের অনেকেই অনলাইনে তা দেখতে পান। একজন বৃদ্ধ মহিলাকে যখন তার আমেরিকা প্রবাসী ছেলে জানান, তিনি তার মাকে দেখতে পাচ্ছেন তখন তিনি আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন। ছেলের জন্য হাত নাড়তে থাকেন। কমপিউটার জগৎ-এর যে কর্মী এ বিয়েটি ইন্টারনেটে দেখাচ্ছিলেন, তিনি তখন বর-কনেকে বাদ দিয়ে সেই বৃদ্ধ মহিলাকে মিনিট দুয়েকের জন্য অবিরাম দেখাতে থাকেন ওয়েবসাইটে। এতে করে তিনি ও তার আমেরিকা প্রবাসী ছেলে অত্যন্ত আনন্দিত হন। সত্যিই এ আনন্দ কোনো কিছু দিয়ে পরিমাপ করা যায় না। কমপিউটার জগৎ পরিবার বাংলাদেশের প্রথম ওয়েবকাস্ট সম্প্রচার করতে পেরে নিজেদের গর্বিত মনে করছে।

ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ও উন্নতমানের ক্যামেরা সুলভ ও সহজলভ্য হয়ে ওঠার ফলে এখন উন্নত বিশ্বে লাইভ ওয়েবকাস্ট ও ওয়েবকাস্ট দুই-ই চমকে যাওয়ার মতো আর কোনো কিছু নয়। বাংলাদেশে এটি সবেমাত্র শুরু হয়েছে। কমপিউটার জগৎই নিয়মিত এর আয়োজন করছে। আশা করা যায়, ২০১০ সালে এ প্রযুক্তির অভাবনীয় বিকাশ ঘটবে বাংলাদেশে। এজন্য সরকারের সহযোগিতার চেয়ে সদিচ্ছা বেশি প্রয়োজন।

ঢাকার বাইরে প্রত্যন্ত এলাকায় দ্রুতগতির ইন্টারনেট সুবিধার আয়োজন একমাত্র সরকারই করতে পারে। আর তা করা গেলে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে বড় ধরনের পরিবর্তন করা যাবে ছোট বিনিয়োগের মাধ্যমে।

চিকিৎসা সেবায় ওয়েবকাস্ট

ওয়েবকাস্ট চিকিৎসা খাতে বড় ধরনের সুফল বয়ে আনতে পারে। বাস্তবতা হলো এই যে ঢাকার বাইরে চিকিৎসকেরা খুব একটা যেতে চান না।

একজন রোগীকে ডাক্তার দেখাতে আসতে হয়, টেস্ট করাতে আসতে হয়, আবার সেই টেস্টের রেজাল্ট দেখাতে আসতে হয়। খরচ, দুর্ভোগ, কষ্ট কোনটারই কমতি নেই। অথচ লাইভ ওয়েবকাস্টের মাধমে এ খরচ, দুর্ভোগ, ভোগান্তি সবই অনেক কমানো যায়। বিশেষত ছোটখাটো অসুখের জন্য লাইভ ওয়েবকাস্টের মাধমে রোগী তার নিজ শহর থেকেই ঢাকার ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলতে পারেন। টেস্ট এর রেজালট পাবার পর ইন্টারনেটে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলতে পারেন। একমাত্র জরুরি ব্যাপার হলে তখন ঢাকায় আসতে হতে পারে।

স্বাস্থ্য খাতে আমরা টেলিমেডিসিনের কথা অনেক দিন ধরে শুনে আসছি। এখাতে বেশ কয়েকটি কোম্পানি ও এনজিও কাজ করে চলেছে। লাইভ ওয়েবকাস্ট তাদের জন্য আরো সুফল বয়ে আনতে পারে। এই মুহুর্তে তাদের কাজের কথা খুব বেশি মানুষ জানতে পারছে না। তাছাড়া গ্রামের অভাবী রোগীরা এখনো তেমন টেলিমেডিসিন সেবার আওতায় আসেনি। ইন্টারনেটের মাধ্যমে এ খাতে সত্যিই অনেক কিছু করার আছে। যেমন যেসব রোগ ততটা ভয়াবহ নয়, কিন্তু অনেকের হয় সেগুলোর ব্যাপারে রোগীরা যখন কথা বলবে লাইভ কাস্টের মাধ্যমে তখন সেগুলোর একটা রেকর্ড আর্কাইভ করা হয়, তবে পরবর্তী সময়ে রোগীরা সে আর্কাইভ দেখে অনেক সাধারণ অসুখের সমাধান নিজেরাই করতে পারবে। এতে করে ডাক্তারদের ওপর চাপ কমবে।

এ ধরনের কথা শুনে মনে হতে পারে, গ্রামের লোকেরা তো কমপিউটার জীবনেই দেখেনি, ইন্টারনেট কিভাবে ব্যবহার করবে। দেশে এখন অনেক তথ্যকেন্দ্র গড়ে উঠেছে। গ্রামের লোকেরা সেখানে সহজেই যেতে পারে। তাছাড়া প্রতিবছর প্রচুর শিক্ষিত বেকার বের হচ্ছে। এদের একটু প্রশিক্ষণ দিলেই এরা কমপক্ষে কমপিউটার ও ইন্টারনেট চালাতে পারবে। এজন্য প্রোগ্রামিং জানার দরকার নেই। সবচেয়ে বড় কথা হলো গ্রামের লোকেরা পারে না বলেই তাদের কাছে প্রযুক্তিকে নিয়ে যেতে হবে। আমরা যদি বাংলাদেশকে উন্নত করতে চাই, তবে এর কোনো বিকল্প নেই। প্রথমে গ্রাম দিয়ে না শুরু করে বিভাগীয় বা মফস্বল শহর দিয়ে শুরু করা যায়।

কজ ওয়েব

ফিডব্যাক : jagat@comjagat.com
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস
অনুরূপ লেখা