কমপিউটারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কম্পোনেন্ট বা চালিকাশক্তি হলো প্রসেসর। মূলত প্রসেসরের কার্যকর ক্ষমতার ওপরই কমপিউটারের পারফরমেন্স নির্ভর করে। প্রসেসর নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম প্রধান হলো ইন্টেল ও এএমডি। এ প্রতিষ্ঠান দু’টি প্রসেসরের বাজারে নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে প্রতিনিয়ত তৈরি করে যাচ্ছে নিত্যনতুন বৈশিষ্ট্য ও ক্ষমতার প্রসেসর। তাদের এ প্রতিযোগিতা শুধু ডেস্কটপ ও নোটবুক কমপিউটারের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বরং সার্ভার মার্কেটেও বিদ্যমান। ইন্টেল ও এএমডি উভয় প্রতিষ্ঠানই সার্ভার মার্কেটে নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে ২০১০ সালের জন্য রোডম্যাপ তৈরি করেছে।
ইন্টেল ও এএমডি’র এ রোডম্যাপটি কোনো কোনো ক্ষেত্রে বেশ মজার ও বিস্ময়কর মনে হতে পারে। কেননা, সার্ভার চিপের মাধ্যমে বাজারে আগমন ঘটবে বিপুলসংখ্যক নতুন টেকনোলজির প্রযুক্তিপণ্য। ২০১০ সালের পূর্বাভাসে দেখা যাচ্ছে, আইসিটি খাতের কিছু কিছু ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটবে।
বিশ্বব্যাপী অর্থনীতি মন্দার কারণে ২০০৯ সালের সার্ভার বাজারটি ছিল বেশ হতাশাজনক। কেননা, এসময় বড় আইটি এন্টারপ্রাইজগুলো এ খাতে তেমন অর্থ খরচ করতে উৎসাহী ছিল না বিশ্ব অর্থনীতির মন্দার কারণে। তাছাড়া ভার্চুয়ালাইজেশন ফিচার ব্যাপকভাবে আত্তীকরণের ফলে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের ফিজিক্যাল সার্ভারের প্রয়োজনীয়তা কমে যায় যথেষ্ট মাত্রায়। তবে সম্প্রতি কিছু কিছু গুরুত্বপূর্ণ টেকনোলজির পরিবর্তন পরিলক্ষিত হচ্ছে বিশেষ করে ইন্টেলের উদ্ভাবিত মেমরি কন্ট্রোলার ও ক্যুইকপাথ ইন্টারকানেক্ট (QuickPath Interconnect) ফিচারের মাঝে যা মাল্টিপল প্রসেসরের মাঝে মেমরি ব্যান্ডউইডথ বাড়িয়ে দেয়। তাছাড়া উভয় ভেন্ডরের কাছে সিক্সকোর প্রসেসরের সূচনা হওয়া।
সার্ভার বাজার কয়েকটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা যায়, যার ব্যাপ্তি অনেকটা সিঙ্গেল প্রসেসরবিশিষ্ট ডেস্কটপ পিসির মতো থেকে শুরু করে আজকের ডুয়াল প্রসেসরযোগ্য মেশিন, মাল্টিপ্রসেসর মেশিন, যা হ্যান্ডেল করতে পারে চারটি বা বিশেষ চিপসেটসহ অধিকতর প্রসেসর পর্যন্ত। উপরন্তু ডুয়াল প্রসেসরযোগ্য সার্ভার চিপ সচরাচর ব্যবহার হয় হাইএন্ড ওয়ার্ক স্টেশনে।
ইন্টেলের সার্ভার প্রসেসর পরিবারের জন্য রয়েছে আরো অনেক সমৃদ্ধ ড্রাইভার লাইন। এতে রয়েছে X86 আর্কিটেকচারভিত্তিক তিন লাইনের জিয়ন প্রসেসর, যা ডেস্কটপ ও মোবাইল চিপের জন্য স্ট্যান্ডার্ড। এতে রয়েছে আইটেনিয়াম পরিবার, যা ডিজাইন করা হয়েছে অধিকতর জটিল সার্ভারের জন্য। ইন্টেলের এই পরিকল্পনাকে অভিহিত করা হয়েছে ‘Mission-critical’ হিসেবে। কেননা, প্রাথমিকভাবে এ সার্ভারগুলোকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হচ্ছে। অন্যান্য সার্ভার আর্কিটেকচারের সাথে যেমন আইবিএমের পাওয়ার সিরিজ এবং সান ও ফুজিৎসুর স্পারস প্রসেসরের সাথে।
ইন্টেলের বেশিরভাগ সার্ভারই জিয়ন পরিবারের, যা শুরু হয়েছে জিয়ন ৩০০০ সিরিজ দিয়ে। এর লক্ষ্য ছিল সিঙ্গেল প্রসেসর সিস্টেম। এটি বর্তমানে উপস্থাপিত হচ্ছে ‘Fox hollow’ প্লাটফর্মে। এর মূল ফিচার হলো ৪ কোরবিশিষ্ট ৪৫ ন্যানোমিটার চিপসম্বলিত ‘Lynnfield’ প্রসেসর।
ইন্টেলের পরিকল্পনা রয়েছে ২০১০ সালে এই প্লাটফরমে ৩২ ন্যানোমিটারের ‘Clarkdale’ প্রসেসর যুক্ত করার। ডেস্কটপ সাইটে রয়েছে ইন্টেলের হাইপারথ্রেডিং ফিচারসম্বলিত ডুয়াল কোর চিপ। সুতরাং এটি চার থ্রেড পর্যন্ত সাপোর্ট করবে। শুধু তাই নয়, ইন্টেল ২০১০ সালের প্রথমদিকে জিয়ন ৩০০০ সিরিজের নতুন স্বল্প বিদ্যুৎশক্তির ভার্সন ছাড়ার ঘোষণাও দিয়েছে।
বড় ধরনের উন্নয়ন হবে জিয়ন ৫৫০০ সিরিজে। এতে এক প্লাটফরমে ব্যবহার করা হয়েছে ডুয়াল সকেট সার্ভার, যা ‘Tylers burg’ নামে পরিচিত। এই চিপগুলো চার কোর ও আট থ্রেডবিশিষ্ট ৪৫ ন্যানোমিটারের প্রসেসর, যা ‘Nehalem-EP’ নামে পরিচিত। এটি QPI ইন্টারকানেক্ট সাপোর্ট করে।
২০১০ সালে ইন্টেলের সার্ভার প্লাটফরম একই অবস্থানে থাকবে, তবে এতে যুক্ত হবে নতুন ৩২ ন্যানোমিটার ভার্সনের কোয়াড-কোর চিপ যার কোড নেম ‘Westmere-EP’। ইন্টেলের মতে, এতে নতুন ফিচার হিসেবে ‘Intel Trusted Execution Technology’ থাকবে এবং ডিজাইন করা হয়েছে সিস্টেমকে অধিকতর নিরাপদ করার জন্য যাতে ডাটা সুরক্ষিত থাকবে।
বড় ধরনের সার্ভারের জন্য ইন্টেলের জিয়ন ৭০০০ সিরিজকে উপস্থাপন করা হয়েছে। এই প্লাটফরমকে বলা হয় ‘Cane land’। এতে থাকছে ‘Dunnington’ নামে পরিচিত ৪৫ ন্যানোমিটারবিশিষ্ট ৬ কোর চিপ এবং একটি পুরনো ৪৫ ন্যানোমিটার কোয়াড কোর ডিজাইন। এই চিপকে ব্যবহার করা যাবে ডুয়াল সকেট সার্ভারে। তবে প্রাথমিকভাবে এটি ডিজাইন করা হয়েছিল চার বা আট সকেটবিশিষ্ট সিস্টেমের জন্য। এটিকে ‘Nehalem-EX’ নামে চিপের মাধ্যমে যুক্ত করার জন্য বসানো হবে। এটি আট কোর ও ১৬ থ্রেডবিশিষ্ট। এতে থাকবে ক্যুইকপাথ আর্কিটেকচার ব্যবহার হওয়া উচ্চ ব্যান্ডউইডথের চারটি লিঙ্ক। ইন্টেলের মতে, এটি নয়গুণ মেমরি ব্যান্ডউইডথবিশিষ্ট।
নতুন প্লাটফরমের এই অংশকে বলা হয় ‘Boxboro’, যা মূলত ৩২ ন্যানোমিটার ভার্সনের চিপে ব্যবহার হবে এবং এটি ‘Westmere-EX’ হিসেবে পরিচিত।
আইটেনিয়াম সাইটে ইন্টেল ২০১০ সালের প্রথম দিকে নতুন প্রসেসর অবমুক্ত করবে, যাকে আইটেনিয়াম ৯১০০ বা ‘Tukwila’ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। এক্ষেত্রে একটি বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে কেননা, এতে যুক্ত হচ্ছে DDR3 এবং QPI সাপোর্ট। এ রোডম্যাপে আরো দুটি চিপ (slated) বসানো হয়েছে আগামীতে ব্যবহারের জন্য। একে অভিহিত করা হয়েছে ‘Paulson’ এবং ‘Kittson’ নামে।
প্রায় সবক্ষেত্রেই এএমডি’র রয়েছে একই ধরনের মৌল প্রসেসর প্রযুক্তি। এএমডি’র অপটেরন ১০০০ সিরিজের লক্ষ্য সিঙ্গেল প্রসেসর সার্ভার, অপটেরন ২০০০ সিরিজের লক্ষ্য এক এবং দুই প্রসেসর সার্ভার আর অপটেরন ৮০০০ সিরিজের লক্ষ্য চার এবং আট পাথ সার্ভার। এগুলোর সবই মূলত কোয়াড কোর ভার্সন দিয়ে পরিবেষ্টিত যা ‘Shanghai’ নামে পরিচিত এবং ছয় কোর ভার্সন ‘Istanbul’ নামে পরিচিত। উভয়ই ৪৫ ন্যানোমিটারবিশিষ্ট প্রসেসর যা সাপোর্ট করে হাইপার ট্রান্সপোর্ট। এর হাই এন্ড ভার্সন সাপোর্ট করে হাইপার ট্রান্সপোর্ট ৩, যার সর্বোচ্চ থ্রোপুট ৫৭.৬ গি.বা./সে.।
২০১০ সালের জন্য এএমডি পরিকল্পনা করেছে দু’টি নতুন সিরিজকে কেন্দ্রীভূত করে। এর মধ্যে ৪০০০ সিরিজের লক্ষ্য হলো সিঙ্গেল ও ডুয়াল সকেট সার্ভার যার প্লাটফরমকে বলা হয় ‘San Marino’। এতে থাকবে নতুন সিরিজের প্রসেসর তবে তা বিদ্যমান কোর টেকনোলজি ভিত্তিক প্রসেসর, যা ‘Lisbon’ নামে পরিচিত। এটি চার এবং ছয় উভয় কোর ভার্সন উপযোগী এবং যা ব্যবহার করবে মেমরির দুই চ্যানেল। এ প্লাটফরমটি বিদ্যুৎসাশ্রয়ী। এই প্লাটফরমের কোনো কোনো ভার্সনের প্রতিটি কোর ব্যবহার করে ৬ ওয়াটের চেয়ে কম বিদ্যুৎশক্তি। ৬০০০ সিরিজের লক্ষ্য হলো মেমরি চার চ্যানেল সমর্থিত দুই ও চার সকেট সিস্টেম। এই প্লাটফরম ‘Maranello’ হিসেবে পরিচিত।
শেষ কথা :
বরাবরের মতো আগামী বছরেও অর্থাৎ ২০১০ সালে ইন্টেল ও এএমডি’র মধ্যে নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের লড়াই চলবে তীব্রভাবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এ লড়াইয়ে কোন সার্ভার বাজারে আধিপত্য বিস্তার করবে তা ভবিষ্যৎই বলে দেবে। তবে বাজারে যে সার্ভারই আধিপত্য বিস্তার করুক না কেন, এতে সাধারণ ব্যবহারকারীরা যে নতুন কিছু পণ্য পাবে এবং উপকৃত হবে তা নিঃসন্দেহে বলা যায়।
কজ ওয়েব
ফিডব্যাক : mohmood_sw@yahoo.com