• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > বদলে যাচ্ছে অফিস ডেস্কটপের চেহারাবদলে যাচ্ছে অফিস ডেস্কটপের চেহারা
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: মো: আমিনুল ইসলাম সজীব
মোট লেখা:১৯
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১২ - মার্চ
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
অফিস অটোমেশন
তথ্যসূত্র:
প্রচ্ছদ প্রতিবেদন
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
বদলে যাচ্ছে অফিস ডেস্কটপের চেহারাবদলে যাচ্ছে অফিস ডেস্কটপের চেহারা
কোনো প্রতিষ্ঠান অফিস নিয়ে কাজ শুরু করার সময় প্রথমেই কর্মীদের জন্য কমপিউটার স্থাপন করে। সাধারণত একজন কর্মীর জন্য একটি করে ডেস্কটপ কমপিউটার স্থাপন করেই কাজ শুরু করা হয়। কোনো প্রতিষ্ঠানে কতগুলো কমপিউটার থাকবে, তা নির্ভর করে প্রতিষ্ঠানের আকারের ওপর। কিন্তু কমপিউটার স্থাপন করা যতটা না কঠিন কাজ, তারচেয়ে কঠিন এগুলো মেইনটেন্যান্স বা রক্ষণাবেক্ষণ করা।



কয়েক বছর পরপর হার্ডওয়্যার পুরনো হয়ে যাওয়ায় কিছু কিছু কমপিউটার আপগ্রেডও করতে হয়। যেমন আজ থেকে পাঁচ-দশ বছর আগের কমপিউটারগুলো এখন আপডেট করে ডুয়াল কোর বা তারও পরের প্রসেসর লাগানো হচেছ, সিআরটি মনিটর বদলে এলসিডি মনিটর স্থাপন করা হচেছ ইত্যাদি। এখানেও প্রতিষ্ঠানের বেশ খরচ হচেছ। আর এসব খরচ ও ঝামেলা কমানোর জন্যই বিশেষজ্ঞরা ভাবতে শুরু করেন ট্রাডিশনাল তথা গতানুগতিক অফিস ডেস্কটপের বিকল্প কোনো সমাধানের কথা।

গতানুগতিক অফিস ডেস্কটপ কী?

প্রথমেই দেখা যাক ট্রাডিশনাল বা গতানুগতিক অফিস ডেস্কটপ বলতে কী বোঝানো হচেছ। গতানুগতিক অফিস ডেস্কটপ এমন একটি কর্মস্থল বা ওয়ার্কস্টেশনকে বোঝায়, যেখানে প্রতিটি কর্মীর জন্য (যাদের কাজ কমপিউটারনির্ভর) একটি সম্পূর্ণ ডেস্কটপ কমপিউটার স্থাপন করা হয়। এখানে ব্যবহারকারীদের জন্য আলাদা আলাদা সিপিইউ ও কমপিউটার টেবিল থাকে। বাংলাদেশে এখনও প্রায় সব অফিসেই এ ধরনের সেটআপ দেখা যায়। তবে বহির্বিশ্ব এ ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে বিভিন্ন নতুন পদ্ধতির অফিস ডেস্কটপের ধারণা কাজে লাগাচেছ। যেমন : কিছু কিছু অফিসে কোনো কমপিউটারই সেটআপ করা থাকে না। কর্মীদের যার যার নিজস্ব ল্যাপটপ কমপিউটার আনতে হয়, যা দিয়ে অফিসের যাবতীয় কাজ সম্পাদন করা হয়। উন্নত বিশ্বে এমনই অনেক ধরনের অফিস ডেস্কটপের নতুন চেহারা আবিষ্কৃত হয়ে চলেছে। এসব নানা ধরনের পদ্ধতি থেকে আপনার প্রতিষ্ঠানের জন্য সবচেয়ে উপযোগী ও কার্যকর পদ্ধতিটি বেছে নেয়া খরচ সাশ্রয় ও সময় বাঁচিয়ে বেশি উৎপাদনশীল হওয়ার অন্যতম উপায়।

নিচে প্রাথমিকভাবে ধারণা দেয়ার জন্য বিভিন্ন নতুন পদ্ধতির অফিস ডেস্কটপ নিয়ে আলোচনা করা হলো।

হোস্টেড ডেস্কটপ বা ভিডিআই
বর্তমান যুগে হোস্টেড ডেস্কটপ প্রযুক্তির জনপ্রিয়তা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। বিশ্বের বহু প্রতিষ্ঠান তাদের অফিসে খরচ ও রক্ষণাবেক্ষণের ঝামেলা কমাতে এই প্রযুক্তির দিকে ঝুঁকছে। একে সাধারণত ভিডিআই বা ভার্চুয়াল ডেস্কটপ ইনফ্রাস্ট্রাকচার বলে অভিহিত করা হয়। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে সব ডেস্কটপ অপারেটিং সিস্টেমকে একটি সেনট্রাল ডাটাসেনটারে রাখা হয়। ফলে প্রতিটি কমপিউটারের রক্ষণাবেক্ষণ ও যাবতীয় সেটিং বা সফটওয়্যার আপডেট ও ট্রাবলশুটিং শুধু একটি ইনটারফেস থেকেই করা সম্ভব। প্রযুক্তিভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গার্টনার ধারণা করছে, ২০১৩ সাল নাগাদ বিশ্বে প্রায় ৫ কোটি কোম্পানি তাদের অফিসে ভিডিআই প্রযুক্তি ব্যবহার শুরু করবে। ২০০৯ সালে তা ছিল মাত্র ৫ লাখ। এক কথায়, অফিস-আদালতে কাজকর্মের ভবিষ্যতই হচেছ ভিডিআই। তবে এটি প্রাথমিকভাবে বেশ ব্যয়বহুল এক প্রযুক্তি। বাস্তবিক অর্থে বলা যায়, এটি একটি প্রযুক্তি নয় বরং অনেকগুলো প্রযুক্তির সমন্বিত একটি রূপ। সব ধরনের বা সব আকারের প্রতিষ্ঠানে এই পদ্ধতির ডেস্কটপ কাজে নাও আসতে পারে। এক্ষেত্রে অনেক বিষয় বিশে¬ষণ করে ভিডিআই পদ্ধতি বাস্তবায়ন করা হবে কি না তা বিবেচনা করতে হবে। ভিডিআই বাস্তবায়ন করা উচিত কি না কিংবা কী কী বিষয়ে এই প্রযুক্তির দিকে অগ্রসর হওয়া উচিত, তা আগে বিবেচনা করা উচিত। সে ব্যাপারে পরে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

হাইব্রিড ডেস্কটপ ও পিসি-শেয়ারিং ডিভাইস

এই পদ্ধতিতে শুধু একটি কমপিউটারকে একাধিক ব্যবহারকারীর কাছে পৌঁছে দেয়া হয়। ফলে সব সফটওয়্যার শুধু একবার ইনস্টল করেই ব্যবহারকারীদের ব্যবহার করতে দেয়া যায়। এই পদ্ধতিতে সিপিইউ থাকে মাত্র একটি, যার সাথে ল্যান ক্যাবল ও পিসি শেয়ারিং ডিভাইসের মাধ্যমে প্রতিটি ব্যবহারকারীর জন্য একটি করে মনিটর, কিবোর্ড ও মাউস দেয়া হয়। ব্যবহারকারীরা তাদের কমপিউটারে বসে আইডি ও পাসওয়ার্ড টাইপ করে সহজেই সার্ভারে প্রবেশ করতে পারেন। সবার আলাদা আলাদা প্রোফাইল থাকার ফলে একজনের ডেস্কটপ আরেকজনের সাথে মিলে যাবে না, যদিও অপারেটিং সিস্টেম ও যাবতীয় সব সফটওয়্যার ইনস্টল করা হয়েছে একবারই এবং চলছেও একটি কমপিউটার থেকেই।

হাইব্রিড ডেস্কটপ এবং পিসি-শেয়ারিং ডিভাইসের মাধ্যমে মূল কমপিউটার থেকে প্রতিটি ডিভাইস বা প্রতিটি কমপিউটারকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এই ধরনের হার্ডওয়্যার ভার্চুয়ালাইজেশন করতে সাধারণত এনকমপিউটিং ডিভাইস ব্যবহার হয়। এই পদ্ধতিতে ফ্রনট-এন্ড সিপিইউ ছাড়াও ব্যবহারকারীদের কাজ করার সুবিধা দেয়া যায়। ফলে কমপিউটার সংখ্যা কমিয়ে আনা সম্ভব হয়।

তবে এ ধরনের পদ্ধতি সব ধরনের প্রতিষ্ঠানের জন্য উপযোগী নয়। সাধারণত ছোটখাটো ও সাধারণ কাজের ক্ষেত্রেই এই জাতীয় হার্ডওয়্যার ভার্চুয়ালাইজেশনের কাজ করা যায়। যেমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা ছোটখাটো প্রতিষ্ঠান যেখানে ফ্রনট-এন্ড ব্যবহারকারীরা সাধারণ ওয়ার্ড প্রসেসিং, স্প্রেডশিট তৈরি, ইনটারনেটে সাধারণ কাজকর্ম করেন সেখানে এই পদ্ধতি উপযুক্ত। কেননা এর মাধ্যমে খুব হাই-এন্ডের কাজ, যেমন- গ্রাফিক্স ডিজাইন বা সফটওয়্যার ডেভেলপমেনেটর কাজে এনকমপিউটিং খুব একটা কার্যকর হবে না।
তাই বলা যায়, পিসি-শেয়ারিং বা এনকমপিউটিং গতানুগতিক ডেস্কটপের কার্যকর বিকল্প হলেও প্রতিষ্ঠান ও কার্যভেদে এর উপযোগিতা কম হতে পারে। এ জন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে এনকমপিউটিং চালু করার আগে বেশ কিছু বিষয় বিবেচনা করা উচিত। যেমন- কী ধরনের কাজ করা হচেছ, একটি সিপিইউর মাধ্যমে কতজন ব্যবহারকারীকে কাজ করার সুবিধা দেয়া হচেছ, কর্মীদের কাজ কী হবে, কী ধরনের সফটওয়্যার ব্যবহার করা হবে ইত্যাদি। যখন পিসি-শেয়ারিং আপনার প্রতিষ্ঠানের উপযোগী হবে না, তখন অন্য ডেস্কটপ পদ্ধতির কথা বিবেচনা করতে পারেন। তার মধ্যে অন্যতম হচেছ বিওয়াইও (BYO)।

বিওয়াইও

বিওয়াইও হচেছ Bring Your Own-এর সংক্ষিপ্ত রূপ। এই পদ্ধতিটিও দিনে দিনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বেশ জনপ্রিয়তা পাচেছ। বাংলাদেশেও অনেক অফিসেই এই পদ্ধতিতে কাজ চলছে। এর আইডিয়া হচেছ, কর্মীদের জন্য নির্দিষ্ট জায়গা বা ডেস্ক বরাদ্দ থাকবে, কিন্তু সেখানে কোনো কমপিউটার থাকবে না। কর্মীদের যার যার নোটবুক বা নেটবুক নিয়ে অফিসে আসতে হবে। এতে করে কোম্পানির খরচ যেমন কমানো সম্ভব হয়, তেমনিভাবে কমে যায় মেইনটেন্যান্স সংক্রান্ত বহু ঝামেলা।

কিন্তু এখানে প্রশ্ন আসে, যার যার কমপিউটার ব্যবহার করলে প্রতিষ্ঠানের ফাইলগুলোর বিনিময় কিভাবে করা হয়? এ জন্য এখানে আবার ভার্চুয়ালাইজেশন বা সার্ভার তৈরির প্রয়োজন পড়ে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, একটি সংবাদপত্রের অফিসের কথা। সংবাদপত্রে প্রকাশিতব্য একটি লেখা বা সংবাদ প্রথম একজন তার কমপিউটার থেকে ড্রাফট করে সার্ভারের নির্দিষ্ট ফোল্ডারে রাখবেন। এরপর সেই লেখা যিনি বিভাগীয় সম্পাদক তিনি তার কমপিউটারে বসেই সেই ফোল্ডার থেকে খুলবেন এবং প্রয়োজনমতো সম্পাদনার কাজ করবেন। তার কাজ শেষে তিনি আবার সেই ফাইলকে সার্ভারের নির্দিষ্ট ফোল্ডারে রাখবেন যেখান থেকে প্রুফ রিডাররা যাবতীয় বানান চেক করার কাজ করবেন। সবশেষে এটি পেজ মেকারের কাছেও পৌঁছবে একইভাবে ভার্চুয়াল ফোল্ডারের মাধ্যমে। এখানে কয়েকটি ব্যাপার লক্ষণীয়। যেমন- সব কমপিউটার থেকেই সার্ভারে অ্যাকসেস করার সুবিধা থাকবে। এটি তারহীন ওয়াই-ফাই প্রযুক্তির মাধ্যমে হতে পারে অথবা ল্যান ক্যাবলের মাধ্যমেও হতে পারে। তবে ওয়াই-ফাই হচেছ সবচেয়ে সুবিধাজনক পদ্ধতি। নইলে সেই তারের ঝামেলা থেকেই যায়। তারপর আসে সার্ভারের নিরাপত্তা। সার্ভারে অফিসের দর্শনার্থী বা অতিথিরা তাদের কমপিউটার থেকে প্রবেশ করতে না পারেন এ জন্য নির্দিষ্ট পাসওয়ার্ড থাকা উচিত, যা শুধু প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের জানা থাকবে। এরপর সার্ভারে যেন কোনোরূপ ভাইরাস আক্রমণ না করে সে জন্য সেই কমপিউটারে সার্ভার স্থাপন করে নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে। এক্ষেত্রে একজন দক্ষ সার্ভার অ্যাডমিনিস্ট্রেটরেরও প্রয়োজন পড়বে।

আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে, এই পদ্ধতিতে সবচেয়ে বেশি খরচ কমানো সম্ভব হবে। কিন্তু সবক্ষেত্রে তা নয়। প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের সবারই যে নোটবুক বা নেটবুক থাকবে এমনটা নাও হতে পারে। সেক্ষেত্রে কর্মীদের জন্য ল্যাপটপ সরবরাহ করতে হবে। মূলত ল্যাপটপ সরবরাহ, সার্ভার স্থাপন, সার্ভার রাউটার স্থাপন বা ল্যান ক্যাবল সংযোগ ও সার্ভারের নিরাপত্তার জন্য সিকিউরিটি সফটওয়্যার কেনার মধ্যেই বড় আকারের খরচগুলো সীমাবদ্ধ।

আধুনিক প্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে সাথে এই পদ্ধতিরও উন্নতি হচেছ। যেমন- ভার্চুয়ালাইজেশনের মাধ্যমে সার্ভারের ফাইলগুলো শুধু ল্যাপটপেই নয়, বরং বিভিন্ন স্মার্টফোন ও ট্যাবলেট ডিভাইসেও অ্যাকসেস দেয়া সম্ভব হচেছ। এছাড়া ভিডিআই জাতীয় ভার্চুয়ালাইজেশন প্রযুক্তি শুধু ফাইলেই নয়, বরং পুরো ডেস্কটপকেই স্ট্রিম করে দিতে পারে রিমোট ডিভাইসে। ফলে অ্যাপলের আইপ্যাড ব্যবহার করে অফিসের উইন্ডোজ এক্সপির ইনটারফেস পাওয়া সম্ভব। উদাহরণস্বরূপ, ভিএমওয়্যারের আইওএস এবং অ্যান্ড্রয়েড ক্লায়েনট রয়েছে। এর মাধ্যমে আপনি সম্পূর্ণ ডেস্কটপকেই ওয়াই-ফাই প্রযুক্তির মাধ্যমে রিমোট ডিভাইসে পৌঁছে দিতে পারেন।

ট্যাবলেট ডিভাইস ও বড় আকারের স্মার্টফোনের ব্যবহার দ্রুত বাড়তে থাকায় ধারণা করা হচেছ একসময় অফিসের প্রোডাক্টিভিটি কাজে নিয়োজিত কর্মীরা যারা সাধারণত টাইপিং, ডাটা এনিট্র ইত্যাদি সাধারণ কাজ করে থাকেন, তাদেরও আর ল্যাপটপ আনতে হবে না। একসময় শুধু তাদের ট্যাবলেট ডিভাইস অথবা স্মার্টফোন ও ওয়্যারলেস কিবোর্ড ব্যবহার করেই ভিডিআই প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় কাজ করা সম্ভব হবে।

ওয়েব ডেস্কটপ

ওয়েব ডেস্কটপের কনসেপ্টও মোটামুটি পুরনোই বলা যায়, তবে তা ততটা জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি। এই পদ্ধতিতে ব্যবহারকারীর কমপিউটারে ব্রাউজারের মধ্যেই সম্পূর্ণ একটি অপারেটিং সিস্টেম লোড করা হয়। এর সুবিধা হচেছ যেকোনো স্থান থেকে ইনটারনেট সংযোগের মাধ্যমে যেকোনো ডিভাইস ব্যবহার করে ডেস্কটপ ইনটারফেসে লগইন করা যায়। এছাড়াও যাবতীয় সব ফাইল, এমনকি অপারেটিং সিস্টেমও ক্লাউডে হোস্ট করা থাকে বলে ম্যানেজমেনট যেমন সহজ হয়, তেমনি ডাটা হারানোর ঝুঁকিও প্রায় থাকে না বললেই চলে। তবে প্রাতিষ্ঠানিক কাজকর্মের জন্য এই পদ্ধতি ততটা উপযুক্ত নয়। কারণ ক্লাউডে হোস্ট করা থাকে বলে এর নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তারচেয়ে বড় সমস্যা হচেছ, এ ধরনের ওয়েব ডেস্কটপ ইনটারফেসে কাজ করতে বেশ দ্রুতগতির ইনটারনেট সংযোগের প্রয়োজন হয়। এছাড়া অনেক সময় ইনটারনেট স্পিড দ্রুত হলেও ল্যাটেন্সি সমস্যার কারণে কাজ করতে অসুবিধা হয়।

গতানুগতিক ডেস্কটপ বদলে গিয়ে এখন প্রতিষ্ঠানগুলোর ওয়ার্কস্টেশনে দেখা যাচেছ উন্নত ও সাশ্রয়ী প্রযুক্তির ডেস্কটপ ব্যবস্থা। কোনো একসময় ওয়ার্কস্টেশনের ডেস্কটপগুলো আপগ্রেড করা অথবা পুরনো ডেস্কটপগুলোর বদলে নতুন ডেস্কটপ কমপিউটার কেনাই ছিল অফিস ডেস্কটপকে সর্বাধুনিক রাখার উপায়। কিন্তু প্রযুক্তির ব্যাপক বিস্তারের ফলে এখন রয়েছে অফিস ডেস্কটপের বিভিন্ন রূপ। প্রতিষ্ঠানের চাহিদা বিবেচনা করেই অফিস ডেস্কটপের নতুন রূপ নির্ধারণ করা উচিত। ক্ষেত্রবিশেষে দেখা যায়, একই প্রতিষ্ঠান চাহিদার বিভিন্নতার কারণে একাধিক পদ্ধতি ব্যবহার করছে। আপনার প্রতিষ্ঠানের জন্য কোনটি উপযোগী হবে সেই বিষয়ে আরও স্পষ্ট ধারণা দিতে নিচে বিভিন্ন অফিস ডেস্কটপ সিস্টেমের তুলনামূলক আলোচনা করা হলো।

হোস্টেড ডেস্কটপ বা ভিডিআই বনাম গতানুগতিক ডেস্কটপ

ভার্চুয়াল ডেস্কটপ ইনফ্রাস্ট্রাকচার বা ভিডিআইয়ের রয়েছে নিজস্ব সুবিধা। কিন্তু গতানুগতিক ডেস্কটপ থেকে ভিডিআইতে আপগ্রেড করার আগে কতগুলো বিষয় বিবেচনা করা উচিত। কেননা সুবিধাজনক হলেও ভিডিআইয়ের রয়েছে নিজস্ব খরচ- যেগুলো নতুন হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার লাইসেন্স ইত্যাদি বিষয়ের সাথে সংযুক্ত।

আগেই বলা হয়েছে, ভিডিআই বর্তমান বিশ্বে অন্যতম জনপ্রিয় অফিস ডেস্কটপ পদ্ধতি। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে পুরো ডেস্কটপকেই একটি ডাটা সেনটারে রেখে ভার্চুয়ালি যেকোনো ডিভাইস থেকে কাজ করার সুবিধা দেয় বলে এর জনপ্রিয়তা প্রতিনিয়তই বেড়ে চলেছে। কিন্তু তাই বলে কি নতুন ডেস্কটপ কমপিউটার কেনা বন্ধ করে ভিডিআই প্রযুক্তি বাস্তবায়ন করার উদ্যোগ নেবেন?

শুনতে এমনটিই মনে হলেও বাস্তব আরেকটু ভিন্ন। প্রথমেই জেনে রাখা ভালো, সব ডেস্কটপই ভিডিআইয়ের জন্য উপযুক্ত নয়। প্রাথমিকভাবে অবশ্যই এটি নির্ভর করে আপনার প্রতিষ্ঠানের আকার ও প্রতিষ্ঠানে কী ধরনের কাজ করা হবে এবং এর বিদ্যমান আইটি ইনফ্রাস্ট্রাকচার কেমন তার ওপর। কেননা, ভিডিআই বাস্তবায়ন করতে হলে পুরো আইটি ইনফ্রাস্ট্রাকচারে ব্যাপক পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করতে হয়। বিদ্যমান আইটি ইনফ্রাস্ট্রাকচার যদি অনেক বড় বা ব্যাপক হয় তাহলে স্বাভাবিকভাবেই ভিডিআই বাস্তবায়ন করতে খরচও সেই হারে বেড়ে যাবে। সেই ক্ষেত্রে ভিডিআইয়ের দিকে যাওয়াও বেশ ব্যয়বহুল হয়ে পড়বে।

আবার আপনার প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা যদি গ্রাফিক্স, ভিডিও এডিটিং, থ্রিডি মডেলিং ইত্যাদি ভারি কাজ করে থাকেন, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই তাদের প্রত্যেকের জন্য একটি করে হাই-এন্ড ফিজিক্যাল ডেস্কটপ রাখায়ই সর্বোৎকৃষ্ট ও সবচেয়ে কার্যকর উপায়। তাহলে ভিডিআই কাদের জন্য উপযুক্ত ডেস্কটপ?

যদি বিপুলসংখ্যক কমপিউটার থাকে যেসব কমপিউটারে সাধারণত স্ট্যান্ডার্ড প্রোডাক্টিভিটি ওয়ার্ক যেমন- ওয়ার্ড প্রসেসিং, ডাটা এনিট্র, প্রেজেনেটশন তৈরি, স্প্রেডশিটে গাণিতিক হিসাব-নিকাশ ইত্যাদি কাজ করা হয়, তাহলে সেই ওয়ার্কস্টেশনে ভিডিআই হবে অন্যতম সাশ্রয়ী বিকল্প উপায়। এতগুলো ডেস্কটপকে একটি একটি করে ম্যানেজ করার চেয়ে ভিডিআই বাস্তবায়ন করলে কাজ সহজ হয়ে যাবে। এছাড়া ভবিষ্যতে স্মার্টফোন বা ট্যাবলেট ডিভাইস অফিসের কাজে ব্যবহার করার ইচেছ থাকে, সেক্ষেত্রেও ভিডিআই উপকারী হবে। কেননা এর মাধ্যমে ভার্চুয়ালি ডেস্কটপ কমপিউটারকে যেকোনো ডিভাইসে পুশ করা যাবে। তবে এতটুকু বলা যেতে পারে, এখনই ভিডিআই পদ্ধতি আপনার কমপিউটারের ১০০ ভাগ কমপিউটারকে রিপে¬স করতে পারবে না। শুধু হালকা কাজের জন্য যেসব কমপিউটার ব্যবহার হচেছ, সেগুলোকে রিপে¬স করার জন্য ভিডিআই ব্যবহার হতে পারে।

হোস্টেড ডেস্কটপ এনভায়রনমেনেটর সুবিধা

ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে হোস্টেড ডেস্কটপ এনভায়রনমেনট বা ভিডিআই কী ধরনের সুবিধা দিতে পারে তা বুঝতে হলে আগে দেখতে হবে গতানুগতিক অফিস ডেস্কটপের সমস্যাগুলো কী কী। গতানুগতিক ডেস্কটপের প্রধান সমস্যা হচেছ এর রক্ষণাবেক্ষণ বা মেইনটেন্যান্সের ঝামেলা, ডাটা সিকিউরিটি, কোনো সফটওয়্যারের আপডেট বা প্যাচ রিলিজ হলে তা এক এক করে সব কমপিউটারে ইনস্টল করা, ক্যাবলের ঝামেলা, প্রতিটি কমপিউটারের জন্য আলাদা আলাদা সফটওয়্যারের লাইসেন্স কেনা, সম্পূর্ণ পাওয়ার কনজাম্পশন ইত্যাদি। মূলত দেখা যায়, একটি কমপিউটার কিনতে যত টাকা খরচ হচেছ, এর রক্ষণাবেক্ষণ, সফটওয়্যার, আপগ্রেড ও এ সংক্রান্ত কাজগুলোতে তারচেয়েও বেশি খরচ হচেছ। একটি কমপিউটার যদি ৩০ হাজার টাকায় কেনা হয়, তাহলে এই কমপিউটারটি যতদিন ব্যবহার করা হবে ততদিনে এর পেছনে মোট খরচ ৩০ হাজারকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে।



হোস্টেড ডেস্কটপ ইনফ্রাস্ট্রাকচারের মাধ্যমে এসব সমস্যা এড়ানো সম্ভব। এই পদ্ধতিতে সবার জন্য আলাদা আলাদা ডেস্কটপ রয়েছে ঠিকই, কিন্তু সেসব একটি সেনট্রাল ডাটাসেনটারে রাখা হয়। ফলে ব্যবহারকারীরা যেকোনো ডিভাইস থেকে তাদের ডেস্কটপে অ্যাক্সেস পেতে পারেন অফিসে বসে। আর আইটি ডিপার্টমেনেট যিনি নিয়োজিত থাকবেন, তিনিও হেঁটে হেঁটে সব ডেস্কটপে গিয়ে সমস্যা সমাধান বা ট্রাবলশুটিং করার পরিবর্তে একটি ম্যানেজমেনট ইনটারফেস থেকে সবগুলো কমপিউটারের যাবতীয় সেটিংস, সফটওয়্যার আপডেট, প্যাচ ইনস্টল, নেটওয়ার্ক সেটিং ইত্যাদি ঠিক করে দিতে পারবেন। এসব কাজ একটি জায়গায় থেকেই তুলনামূলক কমসংখ্যক কর্ম দিয়ে করা সম্ভব। ফলে একদিকে যেমন প্রতিষ্ঠানের জনশক্তি অন্য কাজে লাগানো যাচেছ, তেমনি সার্বিক খরচও অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব হচেছ। ভিডিআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে শুধু কমপিউটার থেকেই নয়, স্মার্টফোন বা ট্যাবলেট ডিভাইস ব্যবহার করেও একজন ব্যবহারকারী তার ডেস্কটপ ক্লায়েনেট সংযুক্ত হতে পারবেন।

ভিডিআই বাস্তবায়ন করার আগে কি বিবেচনা করা উচিত

ভিডিআইয়ের উপকারিতা প্রচুর। অন্তত বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এর দ্রুত ইমপি¬মেনেটশন দেখেই তা বলা সম্ভব। কিন্তু গতানুগতিক ডেস্কটপ থেকে ভিডিআইয়ে রূপান্তর হওয়ার বিষয়টি একেবারেই সহজ নয়।

ভিডিআই বাস্তবায়ন করার আগে প্রথমেই বাছাই করা উচিত কোন কোন কমপিউটার ভিডিআইয়ে ভার্চুয়ালাইজড করা হবে বা করার যোগ্য। এরপর দেখতে হবে আপনার বর্তমান আইটি ইনফ্রাস্ট্রাকচার বা বর্তমান সেটআপ ভিডিআইয়ের জন্য উপযুক্ত কি না। উপযুক্ত হলে আপনার প্রতিষ্ঠান কী ধরনের কাজে নিয়োজিত তার ওপর ভিত্তি করে সঠিক ভিডিআই সলিউশনটি বেছে নিতে হবে। সবশেষে এই সম্পূর্ণ কাজে আপনার কত খরচ হতে পারে তার একটি আনুমানিক হিসাব বের করতে হবে।

বর্তমান আইটি ইনফ্রাস্ট্রাকচার কি ভিডিআইয়ের উপযুক্ত

ভিডিআই বাস্তবায়ন করতে হলে সবচেয়ে বড় কাজ হবে পুরো প্রতিষ্ঠানের অথবা ওয়ার্কস্টেশনের আইটি ইনফ্রাস্ট্রাকচার পরিবর্তন করা। আপনার বর্তমান সেটআপটি ভিডিআইয়ের উপযুক্ত কি না তা বুঝতে হলে জানতে হবে ভিডিআইয়ের জন্য কী ধরনের সেটআপ প্রয়োজন।

প্রথমেই প্রতিষ্ঠানের অনেকগুলো কমপিউটার ভার্চুয়ালাইজেশন করার জন্য শক্তিশালী সার্ভারের প্রয়োজন হবে। সার্ভারে অবশ্যই প্রতিটি ভার্চুয়াল কমপিউটারের কনফিগারেশন ততটুকু হওয়া উচিত, যতটুকু গতানুগতিক ডেস্কটপ সিস্টেমে একটি স্ট্যান্ডার্ড কমপিউটারের কনফিগারেশন হয়ে থাকে। আরও সহজভাবে বলতে গেলে, প্রতিটি ভার্চুয়াল ডেস্কটপের জন্যই প্রয়োজন হবে সিপিইউ কোর, র্যা ম ইত্যাদি। ফলে ভিডিআই ইনফ্রাস্ট্রাকচারে শক্তিশালী সার্ভারের সাথে থাকবে প্রচুরসংখ্যক র্যা ম ও প্রসেসর। শুধু তাই নয়, প্রতিটি কমপিউটারের হার্ডডিস্কে যতটুকু জায়গা প্রয়োজন ততটুকু জায়গা সার্ভারেও রাখতে হবে। তাই বড় আকারের স্টোরেজ ডিভাইসেরও প্রয়োজন হবে। আর সবশেষে যদি ল্যাপটপ ও স্মার্টফোন বা ট্যাবলেট ডিভাইসে অ্যাকসেস দেয়ার ইচেছ থাকে, তাহলে পুরো সার্ভারকে ওয়াই-ফাই রাউটারের মাধ্যমে নির্দিষ্ট অফিস স্পেসে ছড়িয়ে দিতে হবে এবং সংশি¬ষ্ট সেটিংগুলো কনফিগার করে দিতে হবে।

কেমন খরচ হতে পারে

ভিডিআই প্রযুক্তি বাস্তবায়নের খরচ নির্ভর করে আপনার প্রতিষ্ঠানের বর্তমান আইটি ইনফ্রাস্ট্রাকচারের ওপর। কতগুলো কমপিউটার ভিডিআইয়ের আওতাভুক্ত করা হবে, কী ধরনের কাজ করা হবে ইত্যাদি বিষয়ের ওপরও ভিডিআই ইমপি¬মেনেটশনের খরচ নির্ভরশীল হলেও সবচেয়ে বেশি নির্ভর করে আপনার প্রতিষ্ঠানের বর্তমান ওয়ার্কস্পেস সিস্টেমের ওপর। বিভিন্ন ফ্যাক্টরের ওপর ভিত্তি করে মোট খরচের হিসাব বের করতে হবে। নিচে এ সংশি¬ষ্ট বিবেচ্য বিষয়গুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

সার্ভার :
প্রথমেই দেখতে হবে আপনার প্রতিষ্ঠানে ইতোমধ্যেই যে সার্ভারগুলো রয়েছে সেগুলো ভিডিআইয়ের জন্য উপযুক্ত কি না। অর্থাৎ ভিডিআইয়ের আওতায় বহুসংখ্যক ভার্চুয়াল ডেস্কটপ রাখার মতো শক্তিশালী সার্ভার ইতোমধ্যেই রয়েছে নাকি সম্পূর্ণ নতুন সার্ভার আনতে হবে। যদি নতুন সার্ভার কিনতে হয়, তাহলে যতগুলো ভার্চুয়াল ডেস্কটপ প্রয়োজন হবে সেই অনুপাতে সার্ভারের কনফিগারেশন কী রকম হবে এবং সেই কনফিগারেশনের সার্ভারের দাম কত পড়বে ইত্যাদি জেনে নিতে হবে।

নেটওয়ার্কিং ইনফ্রাস্ট্রাকচার :
আপনি ভিডিআইয়ের ডেস্কটপগুলোতে ওয়াই-ফাই বা ওয়েব ব্রাউজারের মাধ্যমে অ্যাক্সেস করার ব্যবস্থা করতে চাইলে প্রয়োজন পড়বে ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্ক ব্যান্ডউইডথ আপগ্রেড এবং প্রয়োজনীয় নেটওয়ার্ক অপটিমাইজেশন। একইভাবে ল্যানেও ল্যাটেন্সি কমানোর জন্য অপটিমাইজেশনের কাজ করতে হবে। বলাবাহুল্য, ল্যান ক্যাবলের মাধ্যমে সংযুক্ত ভার্চুয়াল ডেস্কটপে কাজ করার সময়ও নেটওয়ার্কে ল্যাটেন্সি থাকার কারণে সার্ভার থেকে রেসপন্স আসতে দেরি হতে পারে। তাই এসব বিষয়ে অভিজ্ঞ লোকদের দিয়ে নেটওয়ার্কিং ইনফ্রাস্ট্রাকচারকে ভিডিআইয়ের উপযোগী করে নিতে হবে।

ক্লায়েনট :
ভিডিআই পদ্ধতিতে মূল ডেস্কটপগুলোকে সার্ভারের মাধ্যমে ভার্চুয়ালাইজ করে দেয়া হলেও সেগুলোতে অ্যাক্সেস করার জন্য নিঃসনেদহে ফ্রনট-এন্ডে কিছু ক্লায়েনট প্রয়োজন হবে। এখানে যেমন স্মার্টফোন বা ট্যাবলেট ডিভাইস ব্যবহার করা যাবে, তেমনি বর্তমান কমপিউটারগুলোকেও (লো কনফিগারেশন) কাজে লাগানো যাবে। তবে এক্ষেত্রে সবচেয়ে জনপ্রিয় হচেছ থিন ক্লায়েনট ব্যবহার করা, যার মাধ্যমে শুধু মনিটর, মাউস, কিবোর্ড ও থিন ক্লায়েনট ডিভাইস সংযুক্ত করেই ভিডিআইয়ে অ্যাক্সেস করা যায়। এছাড়া আরও সহজ করে নিতে অনেক প্রতিষ্ঠানে কর্মীদের লো-কনফিগারেশনের ল্যাপটপ দিয়ে দেয়া হয়, যা দিয়ে সার্ভারে অ্যাক্সেস করে নিজের ভার্চুয়াল ডেস্কটপে কাজ করা হয়।

তবে থিন ক্লায়েনটই হোক বা ব্যবহারকারীদের নিজস্ব ডিভাইসই হোক (বিওয়াইও), সেই খরচের খাতটাও মাথায় রাখতে হবে।

নিরাপত্তা :
সব ডেস্কটপ ভার্চুয়ালাইজড হয়ে গেছে বলে নিরাপত্তার কথা ভুলে গেলে চলবে না। প্রতিটি ভার্চুয়াল ডিভাইসের জন্য নিরাপত্তা বিষয়ক সফটওয়্যার কিনতে হবে এবং নিয়মিত আপডেট করতে হবে। একই সাথে সম্পূর্ণ সার্ভারের নিরাপত্তার জন্যও বাড়তি নিরাপত্তা সফটওয়্যারের প্রয়োজন হবে যেগুলো খরচের খাতে অন্তর্ভুক্ত।

স্টোরেজ :
সব ভার্চুয়াল ডেস্কটপকে ভার্চুয়াল হার্ডডিস্ক দেয়ার জন্য আপনার প্রয়োজন হবে এসএএন (স্টোরেজ এরিয়া নেটওয়ার্ক), যার মধ্যে সব ভার্চুয়াল মেশিন বা ডেস্কটপকে রাখতে হবে। শুধু তাই নয়, নিয়মিত এই স্টোরেজের ব্যাকআপও রাখতে হবে যাতে কোনো ত্রুটি দেখা দিলে বা সার্ভার ক্র্যাশ করলে সব ডাটা বিলুপ্ত না হয়ে যায়। এসব কাজেও খরচ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

এই পর্যায়ে নিশ্চয়ই আনদাজ করতে পারছেন, ভিডিআই বাস্তবায়ন করার ব্যাপক সুবিধার পাশাপাশি এর খরচের দিকটাও বিবেচ্য বিষয়। প্রতিষ্ঠানের আকার-আকৃতি, মোট অন্তর্ভুক্ত খরচ ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা করে ভিডিআই বাস্তবায়ন করা উচিত। বিশ্বব্যাপী বড় বড় প্রতিষ্ঠান যারা ভিডিআই বাস্তবায়ন করছে, তাদের বেশিরভাগই ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করছে। অর্থাৎ একবারেই পুরো প্রতিষ্ঠানকে ভিডিআইয়ের আওতায় না এনে একটি একটি করে বিভাগ ভিডিআইয়ের আওতায় আনছে এবং ডেস্কটপ কমপিউটারগুলো ভার্চুয়ালাইজড করে ফেলছে। এভাবেই সফলভাবে ভিডিআই ব্যবহারকারীরা গতানুগতিক ডেস্কটপ থেকে ভবিষ্যতের অফিস ডেস্কটপের রূপে পৌঁছে গেছেন।

ভিডিআই বনাম গতানুগতিক ডেস্কটপ: ইন্ডাস্ট্রি এক্সপার্টদের অভিমত

ভিডিআই প্রযুক্তির ফলে কি গতানুগতিক ডেস্কটপের দিন শেষ হয়ে আসছে? সাশ্রয়ী হওয়ার জন্য ন্যূনতম কী আকারের ভিডিআই বাস্তবায়ন করা উচিত? ভিডিআইয়ের নানা সুবিধার কথা শুনে অফিস ব্যবস্থাপনাকর্মীরা স্বভাবতই এই প্রশ্নের মুখোমুখি হবেন। এ সম্পর্কে মাইক্রোসফটের উইন্ডোজ ক্লায়েনট বিভাগের পরিচালক অমরিশ গোয়াল মন্তব্য করেছেন, ‘অনেক প্রতিষ্ঠানই ভার্চুয়াল ডেস্কটপ ইনফ্রাস্ট্রাকচারের মাধ্যমে তাদের অফিসে গতানুগতিক ডেস্কটপকে বদলে ফেলছে এবং এতে উপকৃতও হচেছ। এর অন্যতম কারণ হচেছ ভিডিআই স্থাপনের পর থিন ক্লায়েনট থেকে ভার্চুয়াল ডেস্কটপে কাজ করার সুবিধা দেয়া গেলে অনেক ক্ষেত্রে খরচ কমানো সম্ভব। তবে এই কথাও মাথায় রাখা জরুরি, ভিডিআই সম্পূর্ণ হার্ডওয়্যার খরচ অনেকাংশে কমিয়ে আনলেও উচচতর সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের খরচ মিলে দেখা যাবে গতানুগতিক ডেস্কটপ এনভায়রনমেনেটর চেয়ে ভিডিআইয়ের প্রাথমিক খরচ আরও বেশি পড়বে।’

তিনি আরো বলেন, ‘ভিডিআই জনপ্রিয় হয়ে উঠলেও এখন পর্যন্ত বড় আকারের অ্যাডাপশন কোথাও চোখে পড়েনি। এর অন্যতম কারণ হচেছ ভিডিআই স্থাপনে প্রাথমিকভাবে ব্যাক-এন্ড ডাটা সেনটার বা সার্ভারে প্রচুর খরচ রয়েছে। এছাড়া সহজেই যেন ভার্চুয়াল ডেস্কটপে কানেকশন পাওয়া যায় এবং দ্রুত কাজ করা সম্ভব হয়, এ জন্যও পুরো ইনফ্রাস্ট্রাকচারে ব্যাপক কাজ করতে হয়।’

তবে ভিএমওয়্যারের শ্রীনিবাসান এ সম্পর্কে মত দিয়েছেন, আমরা পিসির যুগকে অতিবাহিত করে চলেছি। তিনি বলেন, ‘আজ থেকে তিন বছর পর ৮০ শতাংশেরও বেশি ইনটারনেটের সাথে সংযুক্ত ডিভাইস হবে ডেস্কটপ ছাড়া অন্যান্য ডিভাইস। এতদিনের মতো একটি বা এক ধরনের অপারেটিং সিস্টেম বা ডিভাইস দিয়েই যাবতীয় কাজ সম্পন্ন হবে না বরং বিভিন্ন ধরনের ডিভাইস মিলেই কাজ করা হবে।’

তবে গতানুগতিক ডেস্কটপ পিসির চেয়ে ভিডিআইয়ে খরচ বেশি পড়ছে, সেক্ষেত্রে ভিডিআই বাস্তবায়ন করার জন্য ন্যূনতম আকার কী রকম হওয়া উচিত এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে ভিডিআই বাস্তবায়ন করতে খরচ একটু বেশি হলেও এর রয়েছে পরিপূর্ণ রিটার্ন অব ইনভেস্টমেনট। যেমন- ভার্চুয়াল ডেস্কটপ সেটআপ ও ম্যানেজ করতে গতানুগতিক ডেস্কটপের তুলনায় অনেক কম সময়ের প্রয়োজন হয়।’

ফলে দেখা যাচেছ, প্রথমেই প্রতিষ্ঠানের অনেক সময় বাঁচিয়ে দিচেছ ভিডিআই। এছাড়া ক্লায়েনট সাইড ডিভাইস নিয়ে তিনি বলেছেন, ‘যেহেতু যাবতীয় সব কাজই ভার্চুয়াল ডেস্কটপে করা হচেছ, সেহেতু ক্লায়েনট সাইডে যেসব থিন ক্লায়েনট বা সাধারণ মানের কমপিউটার বা অন্যান্য ডিভাইস রয়েছে, সেগুলো কারো জন্য সীমাবদ্ধ হয়ে যাচেছ না। একই ডিভাইস দিয়ে বিভিন্ন সময়ে একাধিক ব্যক্তি কাজ করতে পারছেন। কেননা ভার্চুয়ালাইজেশনের ফলে একই ডিভাইস দিয়ে সবাই তাদের নিজস্ব ভার্চুয়াল ডেস্কটপ ইনটারফেসে প্রবেশ করতে পারবেন।’

এই সুবিধা থাকার ফলে কোনো প্রতিষ্ঠানে দুই শিফটে কাজ করা হলে একই কমপিউটার দিয়ে দুই শিফটের কর্মীদেরই কাজ করতে দেয়া যায়, যা গতানুগতিক ডেস্কটপ এনভায়রনমেনেট সম্ভব হলেও বেশ ঝামেলাদায়ক। তাই ভিডিআইয়ের দিকে যাওয়ার আগে অবশ্যই ভেবে নেয়া উচিত ভিডিআই সত্যিই উপকারী ও সাশ্রয়ী উপায় হবে কি না, যা প্রতিষ্ঠানের আকার-আকৃতি ও কাজের ধরনের ওপরই নির্ভরশীল।

ভিডিআই সলিউশন

ভার্চুয়াল ডেস্কটপ ইনটারফেস না হয়ে ভিডিআইয়ের পূর্ণরূপ হয়েছে ভার্চুয়াল ডেস্কটপ ইনফ্রাস্ট্রাকচার। এ থেকেই বোঝা যায় ভিডিআই কোনো নির্দিষ্ট একটি প্রোডাক্টের নাম নয়। বরং এটি অনেক প্রোডাক্টের একটি সমন্বিত রূপ। উপরে ভিডিআই বাস্তবায়ন করার আগে কী কী বিষয় বিবেচনা করা উচিত তা একাধিকবার উলে¬খ করা হয়েছে। এরপর যদি মনে করেন আপনার প্রতিষ্ঠানের জন্য ভিডিআই সঠিক সলিউশন, তাহলে আপনার জন্য রয়েছে মাইক্রোসফটসহ ভিএমওয়্যার ও সাইট্রিক্স ভিডিআই সলিউশন। এদের প্রত্যেকেরই রয়েছে নিজস্ব কিছু সুবিধা ও স্পেসিফিকেশন। তবে কোম্পানি বেছে নেয়ার আগে কিছু সাধারণ প্রশ্ন রয়েছে যেগুলোর উত্তর প্রথমেই বের করে নেয়া উচিত। এগুলো হচেছ :

০১.
ভিডিআই বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে সার্ভার, স্টোরেজ ও নেটওয়ার্কিং ইনফ্রাস্ট্রাকচারে কী ধরনের বিনিয়োগ করতে চাচেছন? বাস্তবায়ন করার খরচ অবশ্য নির্ভর করে আপনি কী ধরনের ভিডিআই সলিউশন নিতে চাচেছন সেটার ওপর।

০২.
ব্যবহারকারীদের কী ধরনের অ্যাপি¬কেশনের প্রয়োজন পড়বে? যে অ্যাপি¬কেশনে ব্যবহারকারীরা কাজ করবেন তা কি ভিডিআইয়ের মাধ্যমে ক্লায়েনট ডিভাইসে পৌঁছানো সম্ভব? এক্ষেত্রে ব্যবহারকারীর পারফরম্যান্সে ভিডিআইয়ের কী রূপ প্রভাব পড়তে পারে?

০৩.
অ্যাপি¬কেশনগুলো শুধু ভিডিআইয়ের মাধ্যমে স্ট্রিম করে দিলেই যথেষ্ট হবে নাকি সম্পূর্ণ অপারেটিং সিস্টেমই ভার্চুয়ালাইজড করে তা ক্লায়েনট ডিভাইস থেকে অ্যাক্সেসিবল করে দিতে হবে?

০৪.
পুরো অবকাঠামোর নিরাপত্তা কেমন হবে? ভার্চুয়াল ডেস্কটপগুলো ল্যান এবং ওয়্যানের মাধ্যমে অ্যাক্সেস করা হবে বলে এর নিরাপত্তার জন্য কী পরিমাণ বিনিয়োগ করতে হতে পারে?

০৫.
ভিডিআই বাস্তবায়ন ও ব্যবস্থাপনার জন্য কী ধরনের অভিজ্ঞতা জরুরি? ভিডিআই বাস্তবায়ন করার পর কর্মীদের কাজের ধরন কিভাবে পরিবর্তিত হবে?

ভিডিআই একটি বড় আকারের পদক্ষেপ বলে উপরের প্রশ্নগুলো ছাড়াও আরও অনেক বিষয় এ ক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্ত। এগুলো শুধু আনুষঙ্গিক কিছু বিষয়, যা ভিডিআই বাস্তবায়ন করার আগে নিশ্চিত হয়ে নেয়া উচিত।

ভিডিআই সফটওয়্যার সলিউশন

আগেই বলা হয়েছে, ভিডিআই মূলত কতগুলো হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার বা নেটওয়ার্কিং ইনফ্রাস্ট্রাকচারের সমন্বিত একটি রূপ। ভিডিআই সলিউশন অনেক কোম্পানিই দিয়ে থাকে। তার মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় দু’টি হচেছ সাইট্রিক্স জেনডেস্কটপ এবং ভিএমওয়্যার ভিউ।

সাইট্রিক্স জেনডেস্কটপ

সাইট্রিক্সের তৈরি ভিডিআই সলিউশনের নাম হচেছ জেনডেস্কটপ (XenDesktop), যার রয়েছে বিভিন্ন ধরনের সংস্করণ। এদের একটি বিনামূল্যের সংস্করণও রয়েছে, যা দিয়ে একসাথে সর্বোচচ দশটি ভার্চুয়াল ডেস্কটপ চালানো যায়। এছাড়াও অন্য সংস্করণগুলোর মধ্যে রয়েছে স্ট্যান্ডার্ড, অ্যাডভান্সড, এনটারপ্রাইজ এবং প্লাটিনাম এডিশন।

সাইট্রিক্স দিয়ে ভার্চুয়াল ডেস্কটপ ইনফ্রাস্ট্রাকচার তৈরি করতে ন্যূনতম যেসব সামগ্রীর প্রয়োজন হয় তার মধ্যে রয়েছে, ডেস্কটপ ডেলিভারি কনেট্রালার, যা দিয়ে ভার্চুয়াল ডেস্কটপের ব্যবহারকারীদের অ্যাকাউনট, নেটওয়ার্ক ও এ সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় ম্যানেজ করা হয়। এছাড়া প্রয়োজন হয় জেনসার্ভার এবং ভার্চুয়াল ডেস্কটপ এজেনট। বাড়তি সুবিধা পাওয়ার জন্য চাইলে সাইট্রিক্স জেনঅ্যাপ, ডেস্কটপ ডিরেক্টর, অ্যাক্সেস গেটওয়ে, এজসাইট, ওয়্যান স্কেলার এবং গো-টু-অ্যাসিস্ট ইনস্টল করা যেতে পারে। এদের একেকটির রয়েছে পুরো ভার্চুয়াল ডেস্কটপ ইনফ্রাস্ট্রাকচারে একেক ধরনের সুবিধা দেয়ার ক্ষমতা। যারা আরও ব্যাপক কাজে ভিডিআই ব্যবহার করতে চান, যেমন থ্রিডি সাপোর্টের প্রয়োজন পড়লে সাইট্রিক্সের নতুন এইচডিএক্স সুবিধা নেয়া যেতে পারে।

যেহেতু সাইট্রিক্স দিয়ে অনেকগুলো কম্পোনেনটকে একত্রিত করে ভিডিআই তৈরি করা হয়, তাই এ বিষয়ে আরো বিস্তারিত জেনে এবং খরচ হিসাব করে ভিডিআই বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত।

ভিএমওয়্যার ভিউ

ভিএমওয়্যার ভিউয়েরও রয়েছে দুই ধরনের সংস্করণ। এর একটি হচেছ এনটারপ্রাইজ এবং অপরটি প্রিমিয়ার। গ্রাফিক্স সাপোর্টের জন্য ভিএমওয়্যার একটি টেকনোলজি ব্যবহার করে, যার নাম পিসি-ওভার-আইপি বা পিসিওআইপি। ভিএমওয়্যার ভিউ প্রিমিয়ার সংস্করণটি ৬০ দিনের পরীক্ষামূলক ডাউনলোড করে ব্যবহার করা যায়, যা একসাথে সর্বোচচ ১০০টি ভার্চুয়াল ডেস্কটপ সেশন চালানোর সুবিধা দেবে।

ভিএমওয়্যার ভিউয়ের ধারণাও অনেকটা জেনডেস্কটপের মতোই। এতে প্রধানত হার্ডওয়্যার সার্ভার, স্টোরেজ ডিভাইস, ভিডিআই সফটওয়্যার এবং সার্ভার অপারেটিং সিস্টেমের প্রয়োজন হয়। এছাড়া সাধারণ প্রয়োজনীয় ডিভাইস যেমন- ল্যান সুইচ, কনেট্রালার, ক্লায়েনট ডেস্কটপ বা থিন ক্লায়েনট এবং তারহীন অ্যাক্সেসের জন্য ওয়াই-ফাই রাউটারের প্রয়োজন পড়বে।

ভিএমওয়্যার ভিউয়ের অন্যতম সুবিধা হচেছ ট্যাবলেট ডিভাইস বা স্মার্টফোন থেকেও হোস্টেড ডেস্কটপে প্রবেশ করা যায়। ফলে আইওএসচালিত আইপ্যাডে আপনি সম্পূর্ণ উইন্ডোজ ডেস্কটপ চালাতে পারবেন। বলাবাহুল্য, এই ডেস্কটপটি ভার্চুয়াল ডেস্কটপ, তাই এর সাথে ক্লায়েনট আইপ্যাড বা ট্যাবলেট ডিভাইসের কোনো সম্পর্ক থাকবে না। ডিভাইসগুলো ব্যবহার হবে শুধু ভার্চুয়াল ডেস্কটপে অ্যাক্সেস করে প্রয়োজনীয় কাজ করার জন্য। শুধু আইপ্যাডই নয়, অ্যান্ড্রয়েডচালিত ডিভাইস দিয়েও ভার্চুয়াল ডেস্কটপ অ্যাক্সেস করা যায়।

শেষ কথা

প্রযুক্তির ক্রমবিবর্তনের ফলে প্রতিনিয়তই উদ্ভাবন হচেছ কাজ সহজ ও দ্রুততর করার নতুন নতুন উপায়। সেই স্রোতের সাথেই তাল মিলিয়ে বিশ্বের উন্নত দেশের কোম্পানিগুলো তাদের অফিসপাড়ায় ডেস্কটপের চেহারা বদলে ফেলছে। শুধু সময়ের সাথে তাল মেলাতেই নয়, বরং সময় বাঁচাতে, খরচ কমাতে ও উৎপাদনশীলতা বাড়াতেও ব্যাপক অবদান রাখছে সময়োপযোগী নতুন চেহারার অফিস ডেস্কটপ। বিশেষ করে কাস্টোমাইজেশনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের চাহিদার সাথে সামঞ্জস্য রেখে বিভিন্ন ধরনের ডেস্কটপ সুবিধা বাস্তবায়ন করা যাচেছ বলেই গতানুগতিক অফিস ডেস্কটপের চেহারা ধীরে ধীরে হারাতে বসছে। তাই এখন সবারই উচিত গতানুগতিক ডেস্কটপের পথ ছেড়ে নিজের প্রতিষ্ঠানের জন্য সবচেয়ে উপযোগী সলিউশন কোনটি তা খুঁজে বের করা। এটি যে ভিডিআইয়েই হতে হবে এমন কোনো কথা নেই। হয়তো ভিডিআই না করে শুধু অফিস ডেস্কটপগুলো পাল্টে কর্মীদের হাতে ল্যাপটপ বা নেটবুক কমপিউটার ধরিয়ে দিলেই চলবে। এভাবে এককালীন একটু বেশি খরচ হলেও কমে আসবে প্রতিবছরে ডেস্কটপের পেছনে ব্যয় হওয়া অতিরিক্ত খরচ।

থিন ক্লায়েনট কমপিউটিং

থিন ক্লায়েনট কমপিউটিংয়ের শুরু মূলত আশির দশকে। থিন ক্লায়েনট বলতে সাধারণত ব্যবহারকারীর লো-এন্ডের কমপিউটারকে বোঝানো হয়, যা মূলত ব্যাক-এন্ডে থাকা সার্ভারের ওপর ভিত্তি করে কাজ করে। এই পদ্ধতির বিপরীত বা সোজা পথ হচেছ ফ্যাট ক্লায়েনট, যেখানে একটি কমপিউটার দিয়েই যাবতীয় কমপিউটিংয়ের কাজ সম্পন্ন করা হয়। থিন ক্লায়েনট কমপিউটিংয়ে ক্লায়েনট পিসিগুলো কী কাজ করবে, তা প্রতিষ্ঠানভেদে বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। ক্লায়েনট পিসিগুলোর সাথে একটি ডিভাইস জুড়ে দেয়া থাকে। যেমন- মাইক্রোসফটের তৈরি আরডিপি বা রিমোট ডিসপে¬ প্রোটোকল এমনই এক প্রোটোকল যার মাধ্যমে সার্ভারে কাজ করার জন্য অন্য একটি কমপিউটারে গ্রাফিক্যাল ইউজার ইনটারফেস দেয়া হয়। ফলে একটি কমপিউটার মাল্টি-ইউজার অপারেটিং সিস্টেমের কাজ করে যেখানে ফ্রনট-এন্ডে ব্যবহারকারীরা থিন ক্লায়েনেটর মাধ্যমে কাজ করে থাকে।

কিন্তু বর্তমানে থিন ক্লায়েনট কমপিউটিংয়ে কিছুটা পরিবর্তন আনা হচেছ। পুরো অপারেটিং সিস্টেমকে থিন ক্লায়েনেট স্ট্রিম করার পরিবর্তে প্রতিষ্ঠানের কাজে যেসব অ্যাপি¬কেশন বা সফটওয়্যার প্রয়োজন হয়, সেগুলোকে থিন ক্লায়েনট বা ব্যবহারকারীর ফ্রনট-এন্ড কমপিউটারে স্ট্রিম করা হচেছ। মাইক্রোসফটের আরডিপি বা আইসিএ ও এ ধরনের হালকা প্রোটোকল ব্যবহার করে এ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচেছ। অনেক প্রতিষ্ঠানই থিন ক্লায়েনট কমপিউটিং আর্কিটেকচারকে তাদের প্রতিষ্ঠানের জন্য কার্যকর পদ্ধতি হিসেবে বিবেচনা করে।

হোস্টেড ডেস্কটপ এনভায়রনমেনেটর সুবিধা

ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে হোস্টেড ডেস্কটপ এনভায়রনমেনট বা ভিডিআই কী ধরনের সুবিধা দিতে পারে তা বুঝতে হলে আগে দেখতে হবে গতানুগতিক অফিস ডেস্কটপের সমস্যাগুলো কী কী। গতানুগতিক ডেস্কটপের প্রধান সমস্যা হচেছ এর রক্ষণাবেক্ষণ বা মেইনটেন্যান্সের ঝামেলা, ডাটা সিকিউরিটি, কোনো সফটওয়্যারের আপডেট বা প্যাচ রিলিজ হলে তা এক এক করে সব কমপিউটারে ইনস্টল করা, ক্যাবলের ঝামেলা, প্রতিটি কমপিউটারের জন্য আলাদা আলাদা সফটওয়্যারের লাইসেন্স কেনা, সম্পূর্ণ পাওয়ার কনজাম্পশন ইত্যাদি। মূলত দেখা যায়, একটি কমপিউটার কিনতে যত টাকা খরচ হচেছ, এর রক্ষণাবেক্ষণ, সফটওয়্যার, আপগ্রেড ও এ সংক্রান্ত কাজগুলোতে তারচেয়েও বেশি খরচ হচেছ। একটি কমপিউটার যদি ৩০ হাজার টাকায় কেনা হয়, তাহলে এই কমপিউটারটি যতদিন ব্যবহার করা হবে ততদিনে এর পেছনে মোট খরচ ৩০ হাজারকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে।

হোস্টেড ডেস্কটপ ইনফ্রাস্ট্রাকচারের মাধ্যমে এসব সমস্যা এড়ানো সম্ভব। এই পদ্ধতিতে সবার জন্য আলাদা আলাদা ডেস্কটপ রয়েছে ঠিকই, কিন্তু সেসব একটি সেনট্রাল ডাটাসেনটারে রাখা হয়। ফলে ব্যবহারকারীরা যেকোনো ডিভাইস থেকে তাদের ডেস্কটপে অ্যাক্সেস পেতে পারেন অফিসে বসে। আর আইটি ডিপার্টমেনেট যিনি নিয়োজিত থাকবেন, তিনিও হেঁটে হেঁটে সব ডেস্কটপে গিয়ে সমস্যা সমাধান বা ট্রাবলশুটিং করার পরিবর্তে একটি ম্যানেজমেনট ইনটারফেস থেকে সবগুলো কমপিউটারের যাবতীয় সেটিংস, সফটওয়্যার আপডেট, প্যাচ ইনস্টল, নেটওয়ার্ক সেটিং ইত্যাদি ঠিক করে দিতে পারবেন। এসব কাজ একটি জায়গায় থেকেই তুলনামূলক কমসংখ্যক কর্ম দিয়ে করা সম্ভব। ফলে একদিকে যেমন প্রতিষ্ঠানের জনশক্তি অন্য কাজে লাগানো যাচেছ, তেমনি সার্বিক খরচও অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব হচেছ। ভিডিআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে শুধু কমপিউটার থেকেই নয়, স্মার্টফোন বা ট্যাবলেট ডিভাইস ব্যবহার করেও একজন ব্যবহারকারী তার ডেস্কটপ ক্লায়েনেট সংযুক্ত হতে পারবেন।


কজ ওয়েব

ফিডব্যাক : sajib@aisjournal.com
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস