লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
নতুন আইসিটি মন্ত্রণালয় গঠনের সিদ্ধান্ত
পূর্ববর্তী সরকারের আইসিটি টাস্কফোর্সের এখন নতুন নাম ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্স’। দেশের সামগ্রিক আইসিটিবিষয়ক উদ্যোগ নেয়ার ক্ষেত্রে এই টাস্কফোর্স প্রধান নিয়ামক। তথ্যপ্রযুক্তির সর্বোচ্চ প্রয়োগের মাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর সেবাকে সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার মাধ্যমে জনজীবনযাপন সহজতর করে তুলে দেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে রূপ দেয়ার অপর নাম ডিজিটাল বাংলাদেশ। এই ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রতিশ্রুতি নিয়ে বর্তমান সরকার এখন ক্ষমতায় আসীন। বলাবাহুল্য, এই ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অন্যতম লক্ষ্যই হবে ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্সের কাজ। অতএব স্পষ্টতই এই টাস্কফোর্সের সামনে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হচ্ছে আইসিটির ক্ষেত্রে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নেয়া। সুখের কথা, বর্তমান সরকার সে ব্যাপারে আন্তরিক বলেই মনে হচ্ছে। নতুন এ সরকার এরই মধ্যে প্রণয়ন করেছে আইসিটি নীতিমালা ২০০৯। প্রণীত হয়েছে ‘রূপকল্প ২০২১’, যার লক্ষ্য সেই তথ্যপ্রযুক্তিসমৃদ্ধ এক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে গিয়ে মিশে। এখন সময় ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার জন্য আমাদের সীমিত শক্তি নিয়ে যা যা করণীয়, তা নির্ধারণ করে কাজে নেমে পড়া। বাংলাদেশ ডিজিটাল টাস্কফোর্সের ওপর এখন সে গুরুদায়িত্বটিই পড়েছে।
উল্লেখ্য, এক সময়ের আইসিটি টাস্কফোর্স ও আজকের দিনের ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্স বরাবর কাজ করেছে দেশের প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গত ৩ আগস্ট বাংলাদেশ ডিজিটাল টাস্কফোর্সের এক বৈঠক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে অর্থমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী, বিজ্ঞান ও আইসিটি প্রতিমন্ত্রী, পরিকল্পনা সচিব, টেলিযোগাযোগ সচিবসহ আইসিটি খাতের নীতিনির্ধারক ও বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। এ সভায় প্রধানমন্ত্রীর নিজের প্রস্তাবনায় রেলওয়ে মন্ত্রণালয় ও আইসিটি মন্ত্রণালয় নামে দুটি আলাদা নতুন মন্ত্রণালয় গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
বলার অপেক্ষা রাখে না, নানা সমস্যায় জর্জরিত বাংলাদেশ রেলওয়েকে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় পরিবহন খাত করে তোলার ক্ষেত্রে আলাদা রেলওয়ে মন্ত্রণালয় এক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করবে। সেই সাথে ক্রমেই ব্যাপক থেকে ব্যাপকতর হয়ে ওঠা আইসিটি খাতের জন্য আলাদা মন্ত্রণালয় হওয়া আজকের সময়ের দাবি। প্রধানমন্ত্রীর এ সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই।
কমপিউটার জগৎ শুধু একটি সাময়িকীবিশেষ নয়, এটি একটি আন্দোলনের নাম। আমরা এ পত্রিকাটি প্রকাশনার পাশাপাশি নানাধর্মী তৎপরতার মাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে একটি যথাযথ গতিশীল খাতে রূপ দেয়ার আন্দোলনে বরাবর আন্তরিক। আমাদের দৃঢ়বিশ্বাস, নতুন আইসিটি মন্ত্রণালয় চালু হলে আইসিটি খাতে প্রত্যাশিত সে গতিশীলতা আসবে। সেই সূত্রে দেশ এগিয়ে যাবে সমৃদ্ধির পথে। অতএব সরকারের এ সিদ্ধান্তে আমরা অভাবনীয় সন্তুষ্টি অনুভব করছি। পাশাপাশি আমরা সতর্কবাণী উচ্চারণ করতে চাই, বাস্তবতার ওপর ভর করে নতুন গঠিতব্য এ মন্ত্রণালয় যদি আন্তরিক পদক্ষেপ না নিয়ে শুধু আলাদা মন্ত্রণালয় গড়ার পোশাকি হাবভাব প্রদর্শন করে চলে, তবে নতুন এ মন্ত্রণালয় জাতির জন্য কোনো সুফল বয়ে আনবে না। বরং তখন জাতির ঘাড়ে চাপবে একটি মন্ত্রণালয়ের বাড়তি খরচের বোঝা। তাই আগে থেকেই আমাদের পরামর্শ হচ্ছে, মন্ত্রণালয়ের আকার যেনো কখনোই অতি বড় না হয়। মন্ত্রণালয়ের জনবল হবে এমন, যাতে জনবলের অভাবে কাজকর্ম স্বাভাবিক গতি না হারায়, অপরদিকে অতিরিক্ত জনবল যেনো মন্ত্রণালয়কে ভারাক্রান্ত করে না তোলে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ হচ্ছে, এ মন্ত্রণালয় যেনো আমলা ও জনবলে ঠাসা না হয়ে বরং তুলনামূলকভাবে পেশাজীবীর সম্মিলন যেনো ঘটে বেশি। তাছাড়া এ মন্ত্রণালয়ের ব্যাপারে সরকারের সক্রিয় বিবেচনায় রাখা চাই, আইসিটি খাতে তহবিলের অভাবে অতীতের অনেক প্রকল্প কিংবা কর্মসূচি আমরা বাস্তবায়ন করতে পারিনি। অতএব নতুন মন্ত্রণালয়ের প্রচেষ্টা থাকবে কী করে এ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কর্মসূচি ও প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ এবং প্রকল্পসংখ্যা বাড়িয়ে তোলা যায়। তবেই নতুন আইসিটি মন্ত্রণালয় গঠন সার্থকতা পাবে।
কজ ওয়েব