জাতিসংঘের ৫ম ইন্টারনেট গভর্নেন্স ফোরাম (আইজিএফ) ২০১০ সম্মেলন লিথুয়ানিয়ার রাজধানী ভিলনিয়াসে ১৪ সেপ্টেম্বর শুরু হয়ে ১৭ সেপ্টেম্বর শেষ হয়। বাংলাদেশ থেকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বে ৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল সম্মেলনে যোগ দেয়। অন্য সদস্যরা হচ্ছেন নওগাঁ-৩-এর সংসদ সদস্য ড. আকরাম হোসেন চৌধুরী, বাংলাদেশ ইন্টারনেট গভর্নেন্স ফোরামের মহাসচিব ও মাসিক কমপিউটার জগৎ-এর সহকারী সম্পাদক এম. এ. হক অনু, বাংলাদেশ এনজিও’স নেটওয়ার্ক অ্যান্ড কমিউনিকেশনের প্রধান নির্বাহী এএইচএম বজলুর রহমান, এশিয়া ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের সহকারী অধ্যাপক ড. ফাহিম হুসাইন। এবারের সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য ছিল :
০১. ম্যানেজিং ক্রিটিক্যাল রিসোর্সেস,
০২. সিকিউরিটি, ওপেননেস অ্যান্ড প্রাইভেসি,
০৩. অ্যাক্সেস অ্যান্ড ডাইভারসিটি,
০৪. ইন্টারনেট গভর্নেন্স ফর ডেভেলপমেন্ট,
০৫. টেকিং স্টক অব ইন্টারনেট গভর্নেন্স অ্যান্ড দ্য ওয়ে ফরওয়ার্ড এবং
০৬. ইমার্জিং ইস্যু : ক্লাউড কমপিউটিং।
উক্ত বিষয়গুলোর ওপর সম্মেলনে ১০৮টি প্যারালাল সেশন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলন প্রসঙ্গে হাসানুল হক ইনু বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য সবক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তি প্রয়োগের সক্ষমতা অর্জনে এই আইজিএফ সম্মেলন বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সম্মেলনে ইন্টারনেট ব্যবহারে শিশু, ব্যক্তি, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং রাষ্ট্রের নিরাপত্তার বিষয়টি যেমনি গুরুত্বসহকারে উঠে এসেছে, তেমনি উঠে এসেছে বাংলাভাষার প্রয়োগ এবং প্রতিপাদ্য বিষয়গুলো। এছাড়াও ২০১২ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে আইপিভিফোর থেকে আইপিভিসিক্সে রূপান্তর করতে হবে তা নিয়েও ব্যাপকভাবে আলোচনা হয় এ সম্মেলনে।
ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন তথা আইটিইউ’র সৌজন্যে ১৬ সেপ্টেম্বর ‘ডায়নামিক কোয়ালিশন অন ইন্টারনেট অ্যান্ড ক্লাইমেট চেঞ্জ’ শীর্ষক সেশনে যৌথভাবে পেপার উপস্থাপন করেন এএইচএম বজলুর রহমান এবং ড. ফাহিম হুসাইন। তারা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে জলবায়ুর পরিবর্তনবিষয়ক প্রভাবসমূহ সম্পর্কে সচেতনকরণ, নতুন নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার, উন্নত দেশগুলোর কাছ থেকে প্রযুক্তির সহযোগিতা এবং জলবায়ুবিষয়ক ন্যায্যতা নিশ্চিতকরণ বিষয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
ভারতের বেসরকারি সংস্থা ডিজিটাল এমপাওয়ারমেন্ট ফাউন্ডেশনের সৌজন্যে ১৭ সেপ্টেম্বর ‘লোকাল ল্যাঙ্গুয়েজ কনটেন্ট, অ্যাক্সেস/ডাইভারসিটি, ট্রান্সফরমেশন অ্যান্ড ডিজিটাল ইনক্লুশন’ শীর্ষক সেশনে স্পিকারের দায়িত্ব পালন করেন হাসানুল হক ইনু। উক্ত সেশনে ভারতের যোগাযোগ এবং তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব এন. ওবি শংকর বলেন, ভারতে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃত ২২ ভাষা রয়েছে। এই ভাষাগুলোকে ডিজিটাল সংস্করণ এবং একটি ভাষার সাথে অন্য ভাষায় রূপান্তরের কাজ ভারত সরকার করে যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, আঞ্চলিক ডিজিটাল তথ্যভান্ডারের ক্ষেত্রে অন্যান্য দেশের মতো ভারতেও একই সমস্যা রয়েছে।
এছাড়াও সম্মেলনজুড়ে সবচেয়ে বেশি আলোচিত বিষয় ছিল চাইল্ড পর্নোগ্রাফি, ক্লাউড কমপিউটিং এবং তরুণদের অংশগ্রহণ। চাইল্ড পর্নোগ্রাফি ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিশ্বের সমাজ ব্যবস্থাকে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। সম্মেলনের বিভিন্ন সেশনে এ নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়। সবাই এক বাক্যে স্বীকার করেন, এটি শুধু একক কোনো রাষ্ট্রের সমস্যা নয়, এটি বিশ্বের প্রতিটি দেশের সমাজব্যবস্থার জন্য ক্ষতিকর। তা কিভাবে বন্ধ করা যায়- সে নিয়ে সবাই ভাবছেন। তবে প্রাথমিকভাবে সবাই মনে করছেন, প্রতিটি দেশের ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডাররা অর্থাৎ ব্যবসায়ীরাই পারে কারিগরি দিক থেকে বন্ধ করতে। সেই সাথে সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, সরকার, একাডেমিয়া এবং গণমাধ্যম পারে এর কুফল দিক সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে।
আইজিএফ অংশ নেয়া পাঁচ সকস্যবিশিষ্ট বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল
বর্তমান বিশ্বে তরুণ প্রজন্ম আকৃষ্ট করতে ইন্টারনেটের মাধ্যমে গড়ে উঠেছে সামাজিক নেটওয়ার্কের বিভিন্ন মাধ্যম। যেমন ফেসবুক, টুইটার ইত্যাদি। এর মধ্যে একমাত্র ফেসবুকের গ্রাহকসংখ্যাই হচ্ছে প্রায় ৫০০ মিলিয়ন। এই যে বিশাল গ্রাহকসংখ্যা এর দায়দায়িত্ব কে নেবে? প্রতিদিনই কোনো না কোনোভাবে এসব নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে নানারকমের অপকর্ম ঘটছে। দিন দিন তা বেড়েই চলেছে। এ জন্য তো ফেসবুক বন্ধ করা যাবে না। একে ম্যানেজ করতে হবে। সেটা কে করবে তা নিয়েও বিশদ আলোচনা হয় বিভিন্ন সেশনে।
সম্মেলনের ক্লজিং সেশনে সবাই একবাক্যে স্বীকার করেন, আইজিএফ ধারাবাহিক করতে হবে। জাতিসংঘ ভেবেছিল ৫ বছরের মধ্যে ইন্টারনেটসংক্রান্ত সব সমস্যার সমাধান খুঁজে পাওয়া যাবে আইজিএফ থেকে। কারণ এটি গঠিত হয়েছিল শিক্ষাবিদ, সরকার, সুশীল সমাজ, গণমাধ্যম, তরুণ এবং কারিগরি প্রতিনিধিদের নিয়ে। সম্মেলনটি ছিল খুবই ফলপ্রসূ। কিন্তু বর্তমানে প্রতিনিয়ত ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা তৈরি হচ্ছে, যা কোনো দেশের ভৌগোলিক সীমানা পেরিয়ে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে ব্যাপকভাবে প্রভাব বিস্তার করে চলছে। এসব সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে আইজিএফ তার ধারাবাহিকতা বাজায় রেখে আগামী বছর অর্থাৎ ২০১১ সালে কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়াও জাতিসংঘের প্রতি সবার তাগিদ ছিল তরুণদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর এবং ভবিষ্যতে তরুণদের জন্য ফেলোশিপের আয়োজন করা।
বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল আইজিএফের এক্সিকিউটিভ কো-অর্ডিনেটর মারকুস কুমার, ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সংসদ সদস্য অ্যান্ড্রু মিলার, এরিকসনের পরিচালক টম লিনডাসট্রম, নেট মিশন ডট এশিয়ার কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার এলিন চেং এবং ডট এশিয়ার সিইও এডমন চাংয়ের সাথে সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হয়। সেখানে বাংলাদেশ কিভাবে কারিগরি সহযোগিতা পেতে পারে সেসব বিষয়ে বিশদ আলোচনা করা হয়।
কজ ওয়েব
ফিডব্যাক : anu@comjagat.com