• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > উপযুক্ত হোস্টিং কোম্পানি নির্বাচন
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: এস.এম. গোলাম রাব্বি
মোট লেখা:৭২
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১০ - অক্টোবর
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
হোস্টিং
তথ্যসূত্র:
ইন্টারনেট
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
উপযুক্ত হোস্টিং কোম্পানি নির্বাচন

ওয়েবসাইট হচ্ছে এমন একটি আধুনিক মাধ্যম যার সাহায্যে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নিজের পরিচয়কে বিশ্ববাসীর সামনে খুব সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে পারে। কিন্তু এই ওয়েবসাইট হোস্টিংয়ের জন্য যদি উপযুক্ত কোনো কোম্পানি নির্বাচন না করা যায় তবে বিড়ম্বনার শেষ নেই। আমাদের এই লেখাটি তাদের জন্য উপস্থাপন করা হয়েছে, যারা কখনো কোনো ওয়েবসাইট সেটআপ করেনি এবং যারা জানতে চায় কিভাবে একটি ভালো হোস্টিং কোম্পানি নির্বাচন করতে হয়। সব হোস্টিং কোম্পানি এক নয়। অনেক কোম্পানি আছে যারা কাস্টমারের প্রয়োজনকে সঠিকভাবে পূরণ করতে পারে না। হোস্টিং কোম্পানি নির্বাচনের ক্ষেত্রে নিশ্চিত হতে হবে, যে কোম্পানি নির্বাচন করছেন তা আপনার ওয়েবসাইটকে লক্ষ্য পূরণে সাহায্য করবে।

হোস্টিং কোম্পানিগুলো ওয়েব সার্ভার অফার করে যা ওয়েবসাইট স্ক্রিপ্ট, ডাটাবেজ এবং অন্যান্য ওয়েব অবজেক্ট রাখার জন্য স্পেস সরবরাহ করে। ওয়েব সার্ভার হলো একটি সাধারণ জায়গা যা একটি ওয়েবসাইট হোস্ট করতে এবং ওয়েবসাইটটি সচল রাখার জন্য প্রয়োজনীয় প্রোগ্রাম এবং টুল রাখতে ব্যবহার হয়। ওয়েব সার্ভার ওয়েবের সাথে সংযুক্ত হয় এবং ব্যবহারকারীদের সার্ভারে রক্ষিত ওয়েবসাইটের রিসোর্সগুলো অ্যাকসেস করতে সাহায্য করে। এ লেখার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে এমন কিছু পরামর্শ দেয়া যা আপনাকে বাজে অভিজ্ঞতা অর্জন থেকে বাঁচাতে পারে।

ডোমেইন নেম রেজিস্টার করা :

একটি ভালো হোস্টিং কোম্পানি নির্বাচনের প্রথম ধাপ হচ্ছে- ওয়েবসাইট সম্পর্কে এবং ওয়েবসাইটের বিষয়বস্ত্তর সাথে সম্পর্কযুক্ত একটি ভালো ডেমেইন নাম নির্বাচন সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকা। একটি হোস্টিং অ্যাকাউন্ট সেটআপের আগে একটি ডোমেইন নাম রেজিস্টার করার প্রয়োজন হবে। এখানে একটি বিষয় উল্লেখ করা খুব জরুরি, কোনো হোস্টিং কোম্পানিকে আপনার নির্বাচিত ডোমেইন নাম রেজিস্টার করতে দেবেন না। কারণ, ডোমেইন নামের ওপর আপনার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকার প্রয়োজন রয়েছে। বেশিরভাগ হোস্টিং কোম্পানিই তাদের রেজিস্টার অ্যাকাউন্টে আপনার ডোমেইন নাম রেজিস্টার করতে চাইবে। ফলে ভবিষ্যতে কোনো কারণে হোস্টিং কোম্পানি পরিবর্তন করতে চাইলে এ কাজটি খুব কঠিন হবে। ডোমেইন নামের ওপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকলে, ওয়েবসাইটের হোস্টিং কোম্পানি আপনার ইচ্ছেনুযায়ী যেকোনো সময় খুব সহজে পরিবর্তন করতে পারবেন। অনেক হোস্টিং কোম্পানিই ওয়েবসাইটের মালিকের রেজিস্টার অ্যাকাউন্টে ডোমেইন নাম স্থানান্তর করতে রাজি হয় না। যদিও এ ঘটনাটি খুব বিরল। সবচেয়ে সহজ এবং কম খরচে ডোমেইন নাম রেজিস্টার করা যায় GoDaddy.com এবং NameCheap.com-এ।

রিকোয়্যারমেন্টগুলোর তালিকা তৈরি :

স্ট্র্যাটিক এইচটিএমএল দিয়ে তৈরি একটি ওয়েবসাইট যেকোনো সার্ভারে চলতে পারে। যদি এমন কোনো সাইট তৈরি করে থাকেন, যাতে পিএইচপি, জেএসপি, এএসপি কিংবা অন্য কোনো সার্ভার-সাইড ল্যাঙ্গুয়েজের ব্যবহার আছে তাহলে অবশ্যই প্রয়োজনানুযায়ী সার্ভার টাইপ ম্যাচ করতে হবে। আজকাল অনেক ওয়েবসাইটেই পিএইচপি এবং মাইএসকিউএল ডাটাবেজের ব্যবহার থাকে। এসব ক্ষেত্রে লিনআক্স বা ইউনিক্স হোস্টিং সার্ভারের ব্যবহার করা উচিত। প্রায় সব ইউনিক্স/লিনআক্স হোস্টিংয়ে মাইএসকিউএল ডাটাবেজ অন্তর্ভুক্ত থাকে। কিন্তু অবশ্যই সবসময় সেটা পরীক্ষা করে নিতে হবে। মুক্ত সফটওয়্যারে ব্যবহার হওয়া সবচেয়ে জনপ্রিয় ডাটাবেজ হচ্ছে মাইএসকিউএল।

ওয়েবসাইটটি এএসপি বা এএসপি ডটনেটের তৈরি না হলে মাইক্রোসফটের ওয়েব সার্ভারগুলোর ব্যবহার এড়িয়ে যাওয়া উচিত। কারণ, মাইক্রোসফটের সার্ভারগুলো সবসময় কড়াকড়ি, প্রোপ্রাইটরি কন্ট্রোল প্যানেল ব্যবহার করে এবং আপনার সাইটকে সার্চ ইঞ্জিনসংক্রান্ত সমস্যায় ফেলতে পারে। সুতরাং মাইক্রোসফট সার্ভার ব্যবহারের প্রয়োজন না হলে এ সার্ভার ব্যবহার করবেন না।

ওয়েব স্পেস এবং ব্যান্ডউইডথ :

ওয়েব স্পেস হলো ডিস্ক স্পেসের পরিমাণ যা আপনার ওয়েবপেজ, ইমেজ, ডাটাবেজ, অন্যান্য ওয়েব অবজেক্ট এবং সার্ভার লগ ফাইলের জন্য প্রয়োজন। বর্তমানে ডিস্ক স্পেস তুলনামূলকভাবে সস্তা এবং একটি গ্রহণযোগ্য দামে ৫০ গি.বা. বা তারও বেশি জায়গা সরবরাহ করে এরকম হোস্টিং কোম্পানির সংখ্যা একেবারে কম নয়।

কন্ট্রোল প্যানেল নির্বাচন :

কন্ট্রোল প্যানেল হচ্ছে বিশেষ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এরিয়া, যাতে একটি ওয়েবসাইট, ডাটাবেজ, ই-মেইল এবং ওয়েবসাইট হোস্টিংসংক্রান্ত অন্যান্য এরিয়া কনফিগার করার জন্য লগ-ইন করা হয়। সিপ্যানেল এবং প্লেস্ক হচ্ছে দুটি জনপ্রিয় কন্ট্রোল প্যানেল। ‘cPanel Hosting’ দিয়ে সার্চ করলে প্রচুর লিনআক্স হোস্টিং অপশন দেখতে পাবেন যা সিপ্যানেল ব্যবহার করে। কিছু কিছু হোস্টিং কোম্পানি প্রোপ্রাইটরি কন্ট্রোল প্যানেল ব্যবহার করে। প্রোপ্রাইটরি কন্ট্রোল প্যানেল ব্যবহার না করাই ভালো।

আপটাইম গ্যারান্টি এসএলএ :

এসএলএ হচ্ছে সার্ভিস লেভেল অ্যাগ্রিমেন্ট, যা সাধারণত ওয়েবসাইটের জন্য একটি আপটাইমের নিশ্চয়তা দেয়। অনেক হোস্টিং কোম্পানিই ১০০% আপটাইমের নিশ্চয়তা দেয়। তবে বাস্তবে এর পরিমাণ কিছুটা কম হয়ে থাকে। উৎকৃষ্ট টেকনিক্যাল সাপোর্টের একটি ভালো, নির্ভরযোগ্য হোস্টিং কোম্পানি ৯৯.৯৯৯% আপটাইপ অর্জন করতে পারে। একটি বিষয়ে নিশ্চিত থাকুন, কোনো হোস্টিং কোম্পানি যদি আপনাকে আপটাইমের নিশ্চয়তা দেয়, তবে সাথে সাথে সেই কোম্পানি আপনার ওই নিশ্চয়তা পূরণে ব্যর্থ হলে ক্রেডিট ফেরত দেয়ার নিশ্চয়তাও দেবে।

টেকনিক্যাল সাপোর্ট :

হোস্টিং কোম্পানি নির্বাচনে এটি একটি প্রাথমিক চিন্তাভাবনার বিষয় হওয়া উচিত। কারণ, একটি ওয়েবসাইট দিনের ২৪ ঘণ্টাই চলে এবং সপ্তাহের ৭ দিনই চলে। সুতরাং সব সময়ই টেকনিক্যাল সাপোর্টের ব্যবস্থা থাকা উচিত। অনেক ছোট এবং সস্তা হোস্টিং কোম্পানি হয়েছে যা আপনার ডাকে সাড়া দিতে অনেক দেরি করবে। সুতরাং হোস্টিং কোম্পানি নির্বাচনের ক্ষেত্রে এ বিষয়টি খেয়াল করুন, কোম্পানিটি যেন ২৪ ঘণ্টার যেকোনো সময় আপনার ডাকে সাড়া দিয়ে খুব দ্রুত সমস্যার সমাধান দিতে পারে।

কতটা ওয়েবসাইট হোস্ট করতে চান :

একই সাথে একাধিক ওয়েবসাইট হোস্ট করার প্রয়োজন হতে পারে। এক্ষেত্রে এমন একটি হোস্টিং কোম্পানির সন্ধান করুন যেটি একটি নির্দিষ্ট ফি-তে একাধিক সাইট হোস্ট করার প্যাকেজ সরবরাহ করে থাকবে। এরকম অনেক কোম্পানিই আজকাল কিছু প্যাকেজ ছাড়ে, যেগুলোতে প্রতি মাসে অল্প কিছু টাকার বিনিময়ে ৫ থেকে ১০টি ওয়েবসাইট হোস্ট করার অফার থাকে।

প্রচুর পরিমাণে (১০টি বা ততোধিক) ওয়েবসাইট হোস্ট করার পরিকল্পনা থাকলে অথবা ওয়েবসাইটে প্রচুর পরিমাণ ট্র্যাফিক আশা করে থাকেন, তবে সেক্ষেত্রে ডেডিকেটেড হোস্টিং বাছাই করতে পারেন। অর্থাৎ এমন একটি সার্ভার যার পুরোটাই সাইটগুলোর জন্য উৎসর্গ করা থাকবে। অথবা ভিপিএস হোস্টিং (ভার্চুয়াল প্রাইভেট সার্ভার হোস্টিং) ব্যবহার করতে পারেন। ভিপিএস হোস্টিংয়ে সার্ভারের একটি নির্দিষ্ট অংশ সাইটগুলোর জন্য উৎসর্গ করা থাকবে এবং সে সার্ভারের রিসোর্সের একটি ন্যূনতম অংশ আপনার সাইটগুলোর জন্য বরাদ্দ থাকবে।

যদি ডেডিকেটেড বা ভিপিএস হোস্টিং ব্যবহার না করে থাকেন, তবে আপনাকে শেয়ার্ড সার্ভার ব্যবহার করতে হবে। শেয়ার্ড সার্ভারের অর্থ একটি সার্ভারে অনেক ওয়েবসাইট হোস্ট করা।

ফ্রি হোস্টিং :

ফ্রি হোস্টিংয়ের ধারণাটা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভালো নয়। কোনো ওয়েবসাইট দিয়ে টাকা উপার্জনের উদ্দেশ্য থাকলে সেক্ষেত্রে ফ্রি হোস্টিং ব্যবহার না করাই ভালো। কারণ, ফ্রি হোস্টিংয়ে ওয়েবসাইটে কোনো বিজ্ঞাপন দেয়া যায় না। দ্বিতীয়ত, ফ্রি হোস্টিংয়ে একটি ওয়েব সার্ভারে প্রচুরসংখ্যক ওয়েব হোস্ট করা থাকে। সুতরাং খুব গুরুত্বপূর্ণ বা ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে ওয়েব হোস্ট করলে সেক্ষেত্রে ফ্রি হোস্টিং বর্জন করা ভালো।

শেষ কথা :

এতক্ষণ আমরা ওয়েব হোস্টিং কোম্পানি বাছাইয়ের জন্য প্রয়োজনীয় কিছু বিষয় সম্পর্কে জানলাম। উল্লিখিত কয়েকটি বিষয় ছাড়া আরো অনেক কিছু আছে যা পত্রিকার জায়গার স্বল্পতার কারণে দেয়া গেল না। কোনো ওয়েবসাইট হোস্টিংয়ের আগে একজন দক্ষ নেটওয়ার্ক প্রকৌশলীর পরামর্শ নিতে পারেন।


কজ ওয়েব

ফিডব্যাক :

ফিডব্যাক : rabbi1982@yahoo.com
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস