লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
তথ্যপ্রযুক্তির মহাসড়কে ধীরে চলার অবকাশ নেই
তথ্যপ্রযুক্তির আবির্ভাবটাই যেনো মানুষের গতি আর ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য। প্রযুক্তি যেমন আমাদের চলার গতিকে আরো সাবলীল করে তোলে, তেমনি তথ্যপ্রযুক্তির এর একটি অন্য ধরনের নিজস্ব গতিও রয়েছে। আর এই গতি অন্য যেকোনো খাতের তুলনায় অনেক অনেক বেশি। তথ্যপ্রযুক্তির এই গতি এনে দিয়েছে এগিয়ে চলার অনন্য সাধারণ শক্তি। তাই তথ্যপ্রযুক্তির ফসল সর্বাধিক মাত্রায় ঘরে তুলতে আমাদেরকে সমান্তরাল গতি নিয়ে চলতে হবে তথ্যপ্রযুক্তির সাথে। তাই বলা হয়, তথ্যপ্রযুক্তির মহাসড়কে ধীরে চলার কোনো অবকাশ নেই। আমাদের নিজেদের প্রযুক্তির গতির সাথে তাল মিলিয়ে চলে নিজেদের উত্তরণ ঘটাতে হবে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায়।
আমরা জানি, প্রযুক্তি দ্রুত পরিবর্তনশীল। এই পরিবর্তনের সাথে নিজেদের খাপ খাওয়াতে হবে। অতিসাম্প্রতিক একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি স্পষ্ট হবে। বর্তমানে আমরা যে ইন্টারনেট ব্যবহার করছি তা চলছে আইপিভি৪ তথা ‘ইন্টারনেট প্রটোকল ভার্সন ৪’ দিয়ে। খুব শিগগিরই আইপিভি৪ প্রতিস্থাপিত হতে যাচ্ছে আইপিভি৬ তথা ‘ইন্টারনেট প্রটোকল ভার্সন ৬’ দিয়ে। এটি হচ্ছে প্রযুক্তির একটি অগ্রগতি। এই অগ্রগতির সাথে তাল মেলাতে না পারলে নিশ্চিতভাবেই আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে বড় মাপের সমস্যা।
আইপিভি৪ হচ্ছে প্রথম পাবলিক ইন্টারনেট প্রটোকল। ১৯৮১ সাল থেকে এ প্রটোকল ব্যবহার হয়ে আসছে। মূলত ইন্টারনেটের সূচনা থেকেই এই প্রটোকলটি ব্যবহার হয়ে আসছে। কিন্তু এখন সময় এ প্রটোকল বদলের। আইপিভি৬ প্রথম প্রকাশ পায় ১৯৯৮ সালের ডিসেম্বরে। এই প্রটোকল সিকিউরিটি ইস্যুতে বেশি কার্যকর। তাছাড়া আইপিভি৪ প্রটোকল ৪০০ কোটি অ্যাড্রেস জেনারেট করতে পারে। আর আইপিভি৬ দিয়ে ৩.৪১০৩৮ অ্যাড্রেস জেনারেট করা সম্ভব। আইপিভি৪ভিত্তিক ইন্টারনেট যেখানে শেষের পথে, সেখানে আমাদেরকে আইপিভি৬ প্রটোকল উত্তরণ না ঘটালে আমরা আর কোনো ইন্টারনেট অ্যাড্রেস জেনারেট করতে পারব না। আইপিভি৬ চালু করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যায় পড়বে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলো। এ নিয়ে আমরা দুই ধরনের সমস্যায় পড়তে পারি। একটি হার্ডওয়্যারগত সমস্যা। অপরটি সফটওয়্যারগত সমস্যা। হার্ডওয়্যার সমস্যা এড়াতে হলে বড় ধরনের বিনিয়োগ প্রয়োজন হবে। কারণ, বেশিরভাগ নেটওয়ার্ক সেটআপের রাউটার, হাব, সুইচ ইত্যাদি যন্ত্রাংশ আইপিভি৬ সাপোর্ট করবে না। ফলে এগুলো নতুন নতুন যন্ত্রাংশ দিয়ে প্রতিস্থাপিত করতে হবে, যা সহজ কাজ নয়।
সফটওয়্যারের ক্ষেত্রে বলা যায়, বড় ধরনের বিপর্যয় আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। কারণ, আমরা যেসব অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করি, সেগুলো আইপিভি৬ সাপোর্ট করে না। উইন্ডোজের পরবর্তী ভার্সনগুলো আইপিভি৬ সাপোর্ট করে, তবে এগুলো পাইরেসি করা সম্ভব নয়, টাকা দিয়ে কিনতে হবে। আর যেসব ফ্রি অপারেটিং সিস্টেম যেমন লিনআক্স আইপিভি৬ সাপোর্ট করে, সেগুলো আমাদের দেশে ব্যবহারকারীরা ব্যবহার করতে চায় না। অতএব আইপিভি৬-এ উত্তরণের জন্য আমাদের এখন থেকে ভাবতে হবে। এখানে ঢিমেতালে চলার অবকাশ নেই। বিষয়টি আমাদের নীতিনির্ধারকদের সচেতন বিবেচনায় রাখতে হবে।
গত ১৩ অক্টোবর ২০১০-এ যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত হলো ‘ইউএস-বাংলাদেশ টেকনোলজি সামিট’। আয়োজনে ছিল বেসিস, বাংলাদেশ রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো এবং ইউএস-বাংলাদেশ টেকনোলজি পার্টনার্স। এছাড়া গ্রেটার নিউইয়র্ক চেম্বার অব কমার্স, ইউএস প্যান অ্যামেরিকান চেম্বার অব কমার্স, ইউএস বাংলাদেশ টেকনোলজি অ্যাসোসিয়েশন এবং নেটওয়ার্ক অব ইয়াং বাংলাদেশী আমেরিকান প্রফেশনালসসহ বেশ কয়েকটি সংগঠন এ সম্মেলন আয়োজনে সহযোগিতা দেয়। এজন্য আয়োজক ও সহযোগিতাকারীদের ধন্যবাদ। কারণ, এ সম্মেলনের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে অনাবাসী বাংলাদেশী উদ্যোক্তা ও যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোক্তা বাংলাদেশের প্রযুক্তি খাতের বিনিয়োগ সুবিধা সম্পর্কে জানার সুযোগ পাবে। এতে করে এরা বাংলাদেশের আইসিটি খাতে বিনিয়োগের ব্যাপারে আগ্রহী হবে। পাশাপাশি এ সামিট বিদেশীদের কাছে বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা বাড়াবে।
কজ ওয়েব