• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > স্বাধীনতার ৫০ বছরে কয়েকটি দেশের প্রযুক্তি খাতে উন্নতি
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: তারেক মাসুদুর বরকতুল্লাহ্‌
মোট লেখা:১২
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১০ - নভেম্বর
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
থ্রিডি স্টুডিও ম্যাক্স
তথ্যসূত্র:
প্রযুক্তি ধারা
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
স্বাধীনতার ৫০ বছরে কয়েকটি দেশের প্রযুক্তি খাতে উন্নতি

বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাদের স্বাধীনতার ৫০ বছর উদযাপন করেছে। এর মধ্যে কয়েকটি দেশ ইতোমধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে সাফল্যের স্বাক্ষর রাখতে সক্ষম হয়েছে। পাশাপাশি কিছু দেশ তেমন একটা সফল হয়নি। বাংলাদেশ স্বাধীনতার ৫০ বছর উদযাপন করবে ২০২১ সালে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছরে অগ্রগতির লক্ষ্যমাত্রা হিসেবে সরকার ‘রূপকল্প ২০২১ : ডিজিটাল বাংলাদেশ’ ঘোষণা করেছে। এসব দেশের সফলতা ও ব্যর্থতা বিশ্লেষণ করে বাংলাদেশের করণীয় নির্ধারণ করা যেতে পারে।

এশিয়া ও আফ্রিকার যেসব দেশ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে স্বাধীনতার ৫০ বছর উদযাপন করেছে সেসব দেশের ৫০ বছর পূর্তির সালগুলো হলো : ভারত (১৯৯৭), পাকিস্তান (১৯৯৭), ইসরাইল (১৯৯৮), দক্ষিণ কোরিয়া (১৯৯৮), সোমালিয়া (২০০৭), মালয়েশিয়া (২০০৭), নাইজিরিয়া (২০১০), কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র (২০১০), সাইপ্রাস (২০১০) এবং ক্যামেরুন (২০১০)।

এসব দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারা অনুযায়ী ইসরাইল ও দক্ষিণ কোরিয়া উন্নত দেশ, কঙ্গো স্বল্পোন্নত দেশ এবং মালয়েশিয়া মাঝারি আয়ের দেশ। সোমালিয়া চিহ্নিত একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে। বাকিগুলো উন্নয়নশীল দেশ।

জাতিসংঘের ২০০৯ সালের মানবউন্নয়ন সূচক অনুযায়ী প্রথম ৩৮টি দেশকে ধরা হয় মানবসম্পদে অতিউন্নত দেশ। সে অনুযায়ী দক্ষিণ কোরিয়া, ইসরাইল ও সাইপ্রাস অতিউন্নত দেশ এবং এ দেশগুলোর মানবসম্পদ উন্নয়ন সূচক যথাক্রমে ২৮, ২৭ এবং ৩২।

এরপর ৩৯-৮৩ সূচকধারী দেশগুলো হচ্ছে মানবসম্পদে উন্নত দেশ। অতএব ৬৮ সূচকধারী মালয়েশিয়া হচ্ছে উন্নত দেশ।

আবার ৮৪-১৫৮ সূচকধারী দেশগুলো মানবসম্পদে মাঝারি উন্নত দেশ। এ শ্রেণীতে পড়ে : চীন (৯২), শ্রীলঙ্কা (১০২), ভারত (১৩৪), পাকিস্তান (১৪১), নেপাল (১৪৪), বাংলাদেশ (১৪৬) এবং ক্যামেরুন (১৫৩)।

১৫৯ থেকে ১৮২ সূচকধারী দেশগুলো চিহ্নিত মানবসম্পদে কম উন্নত দেশ। এই কম উন্নত দেশগুলোর মাঝে আছে কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র (১৭৬) ও আফগানিস্তান (১৮১)।

একটি দেশের শিক্ষাব্যবস্থার প্রতিফলন ওই দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর র্যা ঙ্কিংয়ের ওপর নির্ভর করে। এক জরিপে বিশ্বের ৫০০ সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় প্রথম ১০০টির মধ্যে দক্ষিণ কেরিয়া, চীন, ইসরাইলের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থান পেয়েছে এবং পরবর্তী ২০০ থেকে ৫০০টির তালিকায় ভারত, পাকিস্তান, চীনের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান। একই সমীক্ষায় সেরা ১০০টি এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় ভারত, পাকিস্তানের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থান পেলেও বাংলাদেশ থেকে তথ্যপ্রযুক্তি ও প্রকৌশল শ্রেণীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান ৭২তম।

ইসরাইল ও দক্ষিণ কোরিয়ার দ্রুত উন্নয়নে সফলতা পাওয়ার মূলে রয়েছে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণালব্ধ ফলাফলকে বাজারজাত করার জন্য নতুন নতুন শিল্পকারখানা স্থাপন।

ইসরাইলে জনসংখ্যার তুলনায় বিজ্ঞান, প্রকৌশল, গণিত, চিকিৎসাবিদ্যার গবেষক ও লেখকের সংখ্যা অনেক। অপর এক গবেষণায় দেখা গেছে, ইসরাইলে উদ্ভাবিত প্যাটেন্ট ও কপিরাইটের সংখ্যা ইউরোপের তুলনায় বেশি। ইসরাইলে আজ ২৬টি ইনকিউবেটর রয়েছে, যেখনে ২০০টির বেশি গবেষণা ও গবেষণায় লব্ধ জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে পণ্য উৎপাদনে ব্যবহার হচ্ছে। এসব কার্যক্রমের পরিপ্রেক্ষিতে ইসরাইলের উচ্চপ্রযুক্তি পণ্যের রফতানি আয় ২ হাজার কোটি মার্কিন ডলার।

ইসরাইল কৃষিপ্রধান দেশ না হয়েও মরুভূমিতে Drip Irrigation পদ্ধতি আবিষ্কারের মাধ্যমে কৃষিক্ষেত্রে ব্যাপক সফলতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। এই প্রযুক্তি নেদারল্যান্ডসসহ ইউরোপে রফতানির মাধ্যমে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশও স্ট্রবেরি চাষ, গুটি ইউরিয়া ইত্যাদি ক্ষেত্রে সফলতা পেয়েছে, যা রফতানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব। কিন্তু বাংলাদেশের অভিজ্ঞতার অভাবে এর সুফল গবেষক ও দেশ পাচ্ছে না।

শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা ভারতজুড়ে সবার জন্য সহজলভ্য না হওয়ায় ভারতের উন্নয়ন গোটা দেশে সুষম নয়। ভারতের কয়েকটি রাজ্য ও শহরের উন্নয়নের প্রেক্ষাপটে ওইসব স্থানে জীবনযাত্রার মান উন্নত বিশ্বের সমতুল্য। ভারত ২০২০ সালের মধ্যে বৃহত্তর অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে অবির্ভূত হওয়ার আশা করছে, কিন্তু এখনও সামগ্রিকভাবে উন্নয়ন না হওয়ায় ভারতের অগ্রযাত্রা কিছুটা মন্থর। অপরদিকে চীনে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত এবং বাধ্যতামূলক হওয়ায় শিক্ষিত হার চীনজুড়ে সমমানের ও উন্নয়নে সহায়ক।

বাংলাদেশে শিক্ষা বহুমুখী : জাতীয় পাঠ্যক্রম, কওমী ও আলিয়া মাদ্রসা, যুক্তরাজ্যের ও/এ লেভেলভিত্তিক শিক্ষা। এই শিক্ষাব্যবস্থা থমাস ব্যাবিংটন ম্যাকলে’র ব্রিটিশ আমলের শিক্ষা নীতির ক্রমধারা। তার ভাষায় এর উদ্দেশ্য হলো- ‘to creat a new class who may be the interpreters between us and the millions whom we govern- a class of persons Indian in colour and blood, but English in tastes, in opinions, in morals and in interests.’ ‘রূপকল্প ২০২১ : ডিজিটাল বাংলাদেশ’-এর সফল বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন জাতীয় পর্যায়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারী এরূপ একাধিক শিক্ষাধারা বন্ধ করে একটি জাতীয় চেতনাভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা।

মালয়েশিয়া গত ১০ বছরে ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। এর মূলে ছিলেন সে দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ড. মাহাথির মোহাম্মদ। তিনি গোটা দেশে অত্যাধুনিক অবকাঠামো তৈরি এবং মালয়েশিয়ানদের শিক্ষিত করে দেশে বিদেশী ও দেশী বিনিয়োগকারীর জন্য আকর্ষণীয় করেন। এই উন্নত অবকাঠামো ভিত্তি করে সারাদেশে গড়ে উঠেছে হাইটেক শিল্পকারখানা। এই অবকাঠামোর মধ্যে রয়েছে রাস্তা, বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা ইত্যাদি। বাংলাদেশেও এমন অবকাঠামো গড়ে তুলে ভারত ও চীনের ট্রানশিপমেন্ট ব্যবস্থা দেয়ার মাধ্যমে বিনিয়োগকারী আকৃষ্ট করা সম্ভব হবে।

মালয়েশিয়া একটি মুসলিম রাষ্ট্র হলেও বিদেশী বিনিয়োগকারী আকৃষ্ট করার জন্য গড়ে উঠেছে জেনটিং এলাকায় ক্যাসিনো। মালয়েশিয়ার অর্থনীতিতে ক্যাসিনো হতে ভালো আয়ের প্রেক্ষিতে সিঙ্গাপুরেও ক্যাসিনো স্থাপিত হয়েছে। এই ক্যাসিনো হতে গত অর্থবছরে সিঙ্গাপুরের লাভ হয়েছে ৩৯৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

বাংলাদেশকে আগামী ২০২১ সালের মধ্যে রূপকল্প ২০২১ : ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপ নিতে হলে উচ্চশিক্ষার মান উন্নয়নে যথেষ্ট জোর দিতে হবে এবং দেশী ও বিদেশী বিনিয়োগ বাড়ানোর লক্ষ্যে বাংলাদেশ অবকাঠামোগত মান উন্নয়নে বিনিয়োগের পাশাপাশি দেশে উদ্ভাবিত পণ্য ও আবিষ্কারের যথাযথ পেটেন্ট ও কপিরাইট প্রয়োজন। সরকার দেশে হাইটেক পার্ক তৈরির যে উদ্যোগ নিয়েছে তার জন্যও প্রয়োজন পেটেন্ট ও কপিরাইট আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন।

উপরোল্লিখিত কয়েকটি বিষয়ের পর্যালোচনার প্রেক্ষিতে সুস্পষ্ট যে ‘রূপকল্প ২০২১ : ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বাস্তবায়নের জন্য সমন্বিত কার্যক্রম প্রয়োজন। এ বিষয়টি বিজ্ঞান এবং তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর ভাষায়- ‘বাঙালিরা যখন এক হয় তখন বিজয় সুনিশ্চিত হয়’। আমাদের আশা- সবাই এক হয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নে কার্যকর অবদান রাখবে।

কজ ওয়েব

ফিডব্যাক : tbarkatullah@yahoo.com
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস
অনুরূপ লেখা