• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > নতুন এক অভিযাত্রার নাম ‘জেলা ই-সেবাকেন্দ্র’
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: মো: মোস্তাফিজুর রহমান
মোট লেখা:২
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১০ - নভেম্বর
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
ই-সেবা
তথ্যসূত্র:
প্রচ্ছদ প্রতিবেদন
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
নতুন এক অভিযাত্রার নাম ‘জেলা ই-সেবাকেন্দ্র’

২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১০। যশোর প্রশাসকের কার্যালয়ে জেলার সুধীসমাজের উপস্থিতিতে একটি কর্মশালা চলছিল। মূল উদ্দেশ্য জেলা ই-সেবাকেন্দ্র পরিকল্পনার জন্য সেবাদাতা এবং সেবাগ্রহীতাদের চাহিদা জেনে নেয়া এবং তাদের পরামর্শ নেয়া। সেবাগ্রহীতা দলের অন্যতম একজন অংশগ্রহণকারী ছিলেন ড. মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি শিক্ষাবিদ ও সমাজসেবক। কর্মশালার শেষ দিকে তার একটি মন্তব্য ছিল এমন : ‘মনে হচ্ছে আমি স্বপ্ন দেখছি, এ স্বপ্ন যখন বাস্তবে দেখতে পাবো, তখন মন্তব্য করবো’। জেলা ই-সেবাকেন্দ্র চালু হবার পর তিনি সেবা যোগানোর বর্তমান পদ্ধতি দেখে মন্তব্য করলেন : ‘কোনো ধরনের দুর্ভোগ ছাড়া জনগণ ঘরে বসে সরকারের সেবা পাচ্ছে, ডিজিটাল বাংলাদেশে এর চেয়ে বড় অর্জন আর কী হতে পারে’?



পাশের জেলা খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার সিরাজুল ইসলাম এবং যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার তপন কুমার কুন্ডু রেকর্ডরুমের নকল পাবার জন্য আবেদন করেছিলেন অনলাইনে। কোর্ট ফি পাঠিয়েছিলেন ডাকে। তাদের চাওয়া পর্চাগুলো ডাকে তাদের বাড়িতে পৌঁছলে তারা অবাক হন। সেবাটি তাদের হাতে পৌঁছল কি না, জানার জন্য তাদের কাছে মোবাইলে ফোন করা হলে তাদের অভিব্যক্তি ছিল এমন : ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ খুব সহজে রেকর্ড পাবার ব্যবস্থা করে দিয়েছে’।

জেলা ই-সেবাকেন্দ্র

জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের যাবতীয় সেবা জনগণের দোরগোড়ায় সহজতর উপায়ে সেবা যোগানোর উদ্দেশ্যে যশোর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নিচতলার একটি কক্ষকে ই-সেবাকেন্দ্রে রূপ দেয়া হয়েছে। জনগণ এখন যেকোনো সেবা পাওয়ার জন্য জেলা ই-সেবাকেন্দ্রে যাচ্ছে। সেখান থেকেই পরবর্তী সময়ে তার সেবাটি পাচ্ছে। এ ছাড়া ডাকে বা ফ্যাক্সে পাওয়া নাগরিকদের আবেদন বা দাপ্তরিক চিঠিপত্রগুলো জেলা ই-সেবাকেন্দ্রে নেয়া হচ্ছে এবং সাথে সাথে এগুলো স্ক্যান করা হচ্ছে। সাধারণ তথ্যগুলো কমপিউটারে এন্ট্রি করা হচ্ছে। জেলা ই-সেবাকেন্দ্রের সাথে জনগণের যোগাযোগের জন্য একটি ফিক্সড টেলিফোন (০৪২১- ৬৫০৪৪) ও একটি মোবাইল ফোন (০১৭৫৩১৭১৭৯৭) রয়েছে। জেলা ই-সেবাকেন্দ্রে জেলা প্রশাসকের দফতরের চার কর্মচারী চারটি কাউন্টারের মাধ্যমে সর্বক্ষণিক আবেদন বা দাপ্তরিক চিঠিপত্র জমা নিচ্ছেন।

আবেদন ও চিঠিপত্র যেভাবে জমা নেয়া হয়

সরাসরি :
সরাসরি পাওয়া আবেদন ও দাপ্তরিক চিঠিপত্র যেকোনো কাউন্টারের মাধ্যমে জমা নেয়ার সাথে সাথে স্ক্যান করা হয়। আবেদনকারীর নাম, ঠিকানা, মোবাইল নম্বর, ই-মেইল (যদি থাকে), জাতীয় পরিচয়পত্র নং (যদি থাকে), আবেদনের বিষয় ইত্যাদি সাধারণ তথ্যগুলো এন্ট্রি করা হয়। এরপর তা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে অনলাইনে পাঠানো হয়। এন্ট্রি করা তথ্যগুলো সংরক্ষণের সাথে সাথে আবেদনকারীকে দেয়ার জন্য একটি প্রাপ্তিরসিদ প্রিন্ট করা হয়। এ প্রাপ্তিরসিদে একটি গ্রহণ-নম্বর বা গ্রহণ-আইডি দেয়া হয়। এই নম্বর উল্লেখ করে জনগণ তার বিষয়টির অগ্রগতি জানতে পারে। জেলা সদরের বাইরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় থেকেও জনগণ যেকোনো সেবার জন্য আবেদন দাখিল করতে পারে। তাকে কষ্ট করে আর জেলা শহরে আসতে হয় না।

ডাকযোগে :
ডাকে পাওয়া আবেদনগুলো একই পদ্ধতিতে এন্ট্রি করা হয়। এক্ষেত্রে আবেদনকারী তার মোবাইল নম্বর বা ই-মেইল ঠিকানা উল্লেখ করলে তার আবেদনটি কমপিউটারে এন্ট্রি হওয়ার সাথে সাথে তার মোবাইলে গ্রহণ-আইডি নম্বরটি এসএমএস করে জানিয়ে দেয়া হয়। একইভাবে ই-মেইলেও তাকে গ্রহণ-আইডি নম্বরটি জানিয়ে দেয়া হয়।

ইন্টারনেটে :
জেলা তথ্য বাতায়ন (www.dcjessore.gov.bd)-এ জেলা ই-সেবাকেন্দ্র বিভাগে নাগরিক আবেদন দাখিল, দাপ্তরিক চিঠিপত্র পাঠানো, রেকর্ডরুমের নকল পাওয়ার আবেদন দাখিল এবং সর্বশেষ অবস্থা জানার জন্য আলাদা ৪টি লিঙ্ক দেয়া রয়েছে। যেকোনো লিঙ্কে ক্লিক করা হলে লিঙ্কের সাথে একটি ফরম প্রদর্শিত হয়। তা পূরণ করে আবেদনটি দাখিল করতে হয়। দাখিল করার সাথে সাথে আবেদন জমার তথ্য এবং তার গ্রহণ-আইডি প্রদর্শিত হয়। আবেদনকারীকে তাৎক্ষণিকভাবে তার মোবাইলে এসএমএস করে তার গ্রহণ-আইডি জানিয়ে দেয়া হয়। পরবর্তী সময়ে জেলা সেবাকেন্দ্রে আবেদনগ্রহীতারা ওয়েবে পাওয়া আবেদনগুলো একটি একটি করে জমা করে এবং সরাসরি পাওয়া আবেদনের মতো সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে অনলাইনে পাঠানো হয়। ইন্টারনেটে আবেদন দাখিল করার সুযোগ থাকায় যেখানে ইন্টারনেট সংযোগ রয়েছে, সেখান থেকেই সে তার আবেদনটি দাখিল করতে পারে। সেটা ইউনিয়ন তথ্য ও সেবাকেন্দ্র থেকে পারে বা তার নিজ বাড়ি থেকে পারে, এমনকি কোনো কমপিউটারের দোকান থেকেও পারে। ফলে দেশ বা বিদেশ থেকেও যেকোনো সেবার জন্য আবেদন দাখিল করার এবং দাখিল করা আবেদনের ওপর কী কার্যক্রম নেয়া হয়েছে, সেটা জানার সুযোগ রয়েছে।

আবেদনপত্র জমা নেয়ার পরবর্তী কার্যক্রম

কাউন্টার থেকে গৃহীত আবেদনগুলো জমা নেয়ার পর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বরাবর তা অনলাইনে পাঠানো হয়। কর্মকর্তারা তাদের পাসওয়ার্ড দিয়ে সিস্টেমে লগইন করার সাথে সাথে একটি ড্যাশ বোর্ড দেখতে পান। এ ড্যাশ বোর্ড থেকে তিনি তার নিজের এবং তার অধস্তন কর্মকর্তাদের চলতি দিনের এবং পূর্ববর্তী দিনের কর্মতৎপরতা দেখতে পান। তার কাছে পাঠানো কেসসমূহ একটি টেবিল আকারে থাকে। প্রতিটি কেস আলাদাভাবে খোলার পর তিনি ওই বিষয়ে যাবতীয় তথ্য দেখতে পারেন। যেমন- মূল পত্রটি দেখা যায়, মূল পত্রের সংযুক্ত পত্র থাকলে সেগুলো দেখা যায়, এ বিষয়ে কোনো পত্র জারি করা হয়ে থাকলে সেগুলো দেখা যায়, কেসটির পুরো ইতিহাস দেখা যায়, তার কাছে কোন কর্মকর্তা পাঠিয়েছেন এবং তিনি কী সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, সেটা দেখা যায়। সামগ্রিক বিষয়টি পর্যালোচনা করে কর্মকর্তা একটি সিদ্ধান্ত দিয়ে পরবর্তী সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বরাবর পাঠান। কোনো সিদ্ধান্ত দেয়া ছাড়া তিনি তার বিষয়টি অন্য কোনো কর্মকর্তাকে দিতে পারেন না। এ প্রক্রিয়ায় অনলাইনে ফাইল নোট টাইপ করে পেশ করা যায়। একটি বিষয় নিষ্পত্তি হবার পর ওই বিষয়টির সাথে সংশ্লিষ্ট সব নোটশিট ও সিদ্ধান্তগুলো প্রিন্ট করে মূল নথিতে হার্ডকপি হিসেবে সংরক্ষণ করা হয়।

সমগ্র অফিসের কর্মপ্রবাহ পরিবর্তিত হয়ে আইসিটি ব্যবহারের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। এমনকি প্রচলিত লাল ফিতার ফাইলের পরিবর্তে এখন কর্মকর্তা-কর্মচারী সবাই কমপিউটারের মাধ্যমে ফাইলের নোট দিচ্ছেন।

জনগণ কিভাবে তার কাজের অগ্রগতি জানতে পারেন

জনগণ ০৪২১-৬৫০৪৪ বা ০১৭৫৩১৭১৭৯৭ নম্বরে ফোন করে তার আইডি নম্বর উল্লেখ করলে তার দাখিল করা বিষয়ের অগ্রগতি জানিয়ে দেয়া হয়। আইডি নম্বরটি ১৬৩৪৫ নম্বরে এসএমএস করলে ফিরতি এসএমএসের মাধ্যমে বর্তমান অবস্থা জানতে পারেন। তবে কারিগরি কারণে বর্তমানে শুধু টেলিটক মোবাইলে এ সুযোগ দেয়া হচ্ছে- শিগগিরই সব মোবাইল ফোনের মাধ্যমেই জনগণ তার আবেদনের বর্তমান পরিস্থিতি জানতে পারবেন। এ ছাড়া যশোর জেলার তথ্য বাতায়নের (www.dcjessore.gov.bd) ই-সেবাকেন্দ্র বিভাগে ‘সর্বশেষ অবস্থা জানুন’-এ ক্লিক করে পাওয়া ফরমের নির্দিষ্ট ঘরে আইডি নম্বর দিয়ে খুঁজুন বাটনে ক্লিক করলে বিষয়টির সর্বশেষ পরিস্থিতি জানা যায়।

রেকর্ডরুমের নকল সেভাবে দেয়া হচ্ছে

জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের রেকর্ডরুম থেকে যেকোনো খতিয়ান বা অন্য কোনো নকল পেতে হলে জনগণকে নানা ধরনের দুর্ভোগের শিকার হতে হয়। কিন্তু বর্তমান পদ্ধতি চালু হবার ফলে জনগণ সহজে কম সময়ে এবং কোনো ধরনের দুর্ভোগ ছাড়াই নকল পাচ্ছে। যেকোনো নকলের আবেদন পাবার সাথে সাথে তা কমপিউটারে এন্ট্রি দেয়া হচ্ছে এবং আবেদনকারীকে একটি প্রাপ্তিরসিদ দেয়া হচ্ছে। এতে তার নকল দেয়ার তারিখ উল্লেখ করা থাকছে। নির্দিষ্ট তারিখে নকল সরবরাহ সম্ভব না হলে বা নির্দিষ্ট তারিখের আগেই তার নকলটি তৈরি হয়ে গেলে তাকে এসএমএস করে জানিয়ে দেয়া হচ্ছে।



জেলা তথ্য বাতায়নের মাধ্যমেও নকলের জন্য আবেদন করার সুযোগ রয়েছে। সে ক্ষেত্রে আগের মতো যশোর জেলার তথ্য বাতায়নের মাধ্যমে আবেদন দাখিল করার সাথে সাথে আবেদনকারী একটি আইডি নম্বর পান এবং তার মোবাইলে একটি এসএমএস পান। অনলাইনে আবেদন দাখিল করার ৩০ দিনের মধ্যে তাকে তার আইডি নম্বরটি উল্লেখ করে প্রয়োজনীয় কোর্ট ফি ডাকে বা সরাসরি কাউন্টারে পৌঁছে দিতে হয়। কোর্ট ফি জমা হবার পর আবেদনকারীকে আবার এসএমএসের মাধ্যমে তার নকল ডেলিভারির তারিখ জানিয়ে দেয়া হয়। জনগণ এখন ডাকযোগেও ঘরে বসে নকল পাচ্ছে, যা আগে কোনোভাবেই সম্ভব ছিল না। আবেদনের সাথে ঠিকানা লেখা ডাকটিকেট সম্বলিত একটি খাম পাঠালে নকলটি ওই খামে ডাকে পাঠানো হচ্ছে।

পরিবীক্ষণ পদ্ধতি

সিভিল সার্ভিসের কর্মকর্তাদের জন্য এটা অনেক বড় একটি রূপান্তর। এ রূপান্তর শুধু দফতরের জন্য নয়, এটি প্রতি কর্মকর্তা-কর্মচারীর জন্যও। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা একটি চেইনের মতো কাজ করে। এ চেইনের কোনো একটি অংশ বিচ্ছিন্ন থাকলে সামগ্রিক কার্যক্রমটি ব্যাহত হয়। জেলা প্রশাসনের সব সদস্যকে একসূত্রে গেথে এ কার্যক্রমকে চালিয়ে নেবার জন্য প্রয়োজন ব্যাপক পরিবীক্ষণ এবং সঠিক নেতৃত্ব। জেলা প্রশাসনের এ সিস্টেমটির একটি ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন রয়েছে, ফলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং সংস্থাপন মন্ত্রণালয় খুব সহজেই ঢাকায় বসে ইন্টারনেটের মাধ্যমে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের প্রতিদিনের কাজের অগ্রগতি দেখছে। এ ধরনের একটি পরিবীক্ষণ পদ্ধতি এ সিস্টেমটিকে সঠিকভাবে চলতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে।

জেলা প্রশাসক তার ল্যাপটপের সামনে বসেই সব কর্মকর্তার কর্মতৎপরতা দেখতে পারছেন। কার কাছে কতটি বিষয় পেন্ডিং রয়েছে তিনি দেখছেন। ফলে কর্মকর্তাদের মধ্যে কোনো কাজ ফেলে না রাখার একটি তাগিদ সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া উর্ধতন কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি জনগণের কাছেও কর্মকর্তাদের এক ধরনের জবাবদিহিতা সৃষ্টি হয়েছে। শুধু জেলা প্রশাসক নন, যেকোনো কর্মকর্তা লগইন করার পরেই তার অধস্তন কর্মকর্তাদের কর্মতৎপরতা দেখতে পারেন।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

যশোর থেকে বেশ কিছু পরামর্শ এবং অভিজ্ঞতা পাওয়া যাচ্ছে, যেগুলো কাজে লাগিয়ে সিস্টেমটিকে আরও ব্যবহারবান্ধব করার পরিকল্পনা রয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে আরো ১০টি জেলায় এ বছরের মধ্যেই জেলা ই-সেবাকেন্দ্র চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে। ১০টি জেলায় একযোগে চালু করা হলে সেখান থেকে অর্জিত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে তা আরো ব্যবহারবান্ধব করে তৈরি করা সম্ভব। প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-১ এবং প্রোগ্রামের জাতীয় প্রকল্প পরিচালক মো: নজরুল ইসলাম খান গত ১৭ সেপ্টেম্বর যশোরে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময়সভায় ২০১১ সালের মধ্যে সব জেলায় ই-সেবাকেন্দ্র চালু করার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। কাজেই আশা করা যায়, ২০১১ সালে আমাদের দেশে মাঠ প্রশাসনের মাধ্যমে জনগণকে সেবা যোগানোর ক্ষেত্রে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।

সাক্ষাৎকার

‘জেলা ই-সেবাকেন্দ্র ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ায় একটি মাইলফলক’



এম আবদুল আজিজ, এনডিসি
মন্ত্রিপরিষদ সচিব, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ


‘মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের তত্ত্বাবধানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রোগ্রাম থেকে সরকারের রূপকল্প ২০২১ অনুযায়ী ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার একটি অন্যতম পদক্ষেপ হিসেবে যশোর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জেলা ই-সেবাকেন্দ্রের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এতে করে সহজতর উপায়ে কোনো ভোগান্তি ছাড়া কম সময়ে জনগণকে সেবা যোগানো সম্ভব হচ্ছে। পাশাপাশি দফতরের কর্মপ্রবাহ পরিবর্তিত হয়ে আইসিটি ব্যবহারের মাধ্যমে কাগজ-সাশ্রয়ীভাবে পরিচালিত হচ্ছে বলে দফতরের কর্মতৎপরতাও অনেক বেড়ে গেছে। জনগণের কাছে দফতরের এক ধরনের জবাবদিহিতাও সৃষ্টি হয়েছে। এ ব্যবস্থায় সবচাইতে উল্লেখযোগ্য দিক হলো, জনগণ যেকোনো আবেদন দাখিল করার সাথে সাথে তাকে একটি প্রাপ্তিস্বীকারপত্র দেয়া হচ্ছে। ফলে সরকারি দফতরের প্রতি জনগণের আস্থা বাড়ছে এবং সরকারি দফতরের প্রতি জনগণের নেতিবাচক মনোভাব কমছে।

যশোর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে চালু করা জেলা ই-সেবাকেন্দ্রের মাধ্যমে বেশ কয়েকজন নাগরিক অনলাইনে নকল পাওয়ার আবেদন করেছেন এবং ডাকযোগে তাদের নকল পাঠানো হয়েছে। এভাবে জনগণের কাছে সেবা পৌঁছে দেবার বিষয়টি প্রচলিত অফিসের কর্মপদ্ধতিতে একটি নতুন সংযোজন। এভাবে জনগণকে সেবা যোগানোর প্রক্রিয়া চলমান থাকলে, জনগণের মাঝে বিষয়টি সঠিকভাবে প্রচার পেলে এক সময়ে জনগণের সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে সাবলীলতা বাড়বে বলে আশা করা যায়। শুধু নকল পাওয়ার আবেদন নয়, জনগণ সব ধরনের সেবার জন্য অনলাইনে আবেদন করছে, যা উৎসাহব্যঞ্জক।

এ ব্যবস্থার একটি ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন রয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও সংস্থাপন মন্ত্রণালয় খুব সহজেই ওয়েব অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে সব কর্মকর্তার কর্মতৎপরতা দেখতে পারে বলে কর্মকর্তাদের কর্মদক্ষতারও একটি মূল্যায়ন করা সম্ভব হবে। সব জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ই-সেবাকেন্দ্র চালু হলে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে মাঠ প্রশাসনে অবদান রাখতে সক্ষম হবে বলে আমি আশাবাদী।’

............................................................................................................

‘এ কেন্দ্র সেবা যোগানের কাজ বেগবান করবে’



ইকবাল মাহমুদ
সচিব, সংস্হাপন মন্ত্রণালয়

‘জনপ্রশাসনে একটি বড় ধরনের সংযোজন এই জেলা ই-সেবাকেন্দ্র। মাঠ পর্যায়ের সরকারি দফতরগুলো সরকারের সেবাসমূহ কোনো ধরনের ভোগান্তি ছাড়া জনগণের কাছে পৌঁছে দেবে সেটাই সবার প্রত্যাশা। সব ক্ষেত্রে না হলেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে জনগণকে এ সেবা পেতে অসুবিধায় পড়তে হয়। জনগণের ভোগান্তি কমানোর লক্ষ্যেই জেলা ই-সেবাকেন্দ্র চালু করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই প্রোগ্রাম এ কার্যক্রমটি বাস্তবায়ন করছে। সংস্থাপন মন্ত্রণালয় সামগ্রিক কার্যক্রমে সর্বাত্মক সহযোগিতা দিয়ে আসছে।

ই-সেবাকেন্দ্রের অনেক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। জনগণ যেকোনো সেবা পাওয়ার জন্য এ কেন্দ্রে সরাসরি এসে, ডাকে এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে আবেদন করতে পারছেন। দাখিল করা আবেদনের ওপর সেবাদাতা কর্মকর্তা কী ব্যবস্থা নিয়েছেন তা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে, ইন্টারনেটের মাধ্যমে বা এসএমএস বা ক্ষুদ্রবার্তার মাধ্যমে জনগণ তা জানতে পারছেন। এতে করে সেবাদাতা কর্মকর্তাদের এক ধরনের দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহিতা সৃষ্টি হচ্ছে।

আমার জানামতে ই-সেবার মাধ্যমে জনগণকে সেবা যোগানো দিন দিন সহজতর এবং দ্রুততর হয়ে উঠছে। মাঠ পর্যায়ে যেসব সরকারি কর্মকর্তা সেবার কাছে নিয়োজিত রয়েছেন, তারাও দিন দিন অভ্যস্থ ও সেবা দিতে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। দেশের সব জেলায় ই-সেবাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জনসেবা যোগানো আরো বেগবান হবে এবং দেশে-বিদেশে এটি সমাদৃত হবে বলে আমি বিশবাস করি।’

............................................................................................................

‘ই-সেবাকেন্দ্র জনগণের কাছে সেবা পৌঁছাবে’



মো: নজরুল ইসলাম খান
প্রধানমন্ত্রির একান্ত সচিব-১ ও জাতীয় প্রকল্প পরিচালক অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন প্রোগ্রাম

‘বর্তমান সরকারের দূরদৃষ্টিসম্পন্ন এক উন্নয়ন রূপকল্প হচ্ছে ‘রূপকল্প ২০২১’। এর একটি অন্যতম উপাদান হলো ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’। ২০১০ সালের মধ্যে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করা হচ্ছে এর মূল লক্ষ্য। আর এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রয়োজন তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রান্তিক জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দেয়া। একটু ভিন্নভাবে বলা যায় : ‘জনগণ সেবার কাছে যাবে না, বরং সেবাই আসবে জনগণের কাছে’। এ বিষয়টি মাথায় রেখেই চালু করা হয়েছে জেলা ই-সেবাকেন্দ্র।

পরীক্ষামূলকভাবে যশোর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এটি চালু করা হয়েছে। এখান থেকে অর্জিত অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান কাজে লাগিয়ে আগামী ডিসেম্বরে চালু করা হবে পঞ্চগড়, সিরাজগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেট, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, নরসিংদী, সাতক্ষীরা, মাগুরা ও ঝালকাঠি জেলায়। ২০১১ সালের মধ্যে সব জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জেলা ই-সেবাকেন্দ্র চালু করা সম্ভব হবে বলে আশা করা যায়।

জেলা ই-সেবাকেন্দ্রের মাধ্যমে জনগণ ঘরে বসে বিভিন্ন সেবা পেতে পারেন। জেলা প্রশাসনের যেকোনো সেবা পাওয়ার জন্য জনগণকে এখন আর কষ্ট করে জেলা সদরে যাবার প্রয়োজন হচ্ছে না। ইউনিয়ন তথ্য ও সেবাকেন্দ্র থেকে বা যেকোনো কমপিউটার সেন্টার থেকে বা ইন্টারনেট সংযোগ আছে এরকম যেকোনো কমপিউটার থেকে জনগণ আবেদন দাখিল করতে পারছেন। দেশের সাধারণ মানুষকে আইসিটির মাধ্যমে সেবা পৌঁছে দেবার উদ্দেশ্যে একযোগে দেশের সব ইউনিয়ন পরিষদে (৪৫০১টি) ইউনিয়ন তথ্য ও সেবাকেন্দ্রের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সব জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ই-সেবাকেন্দ্র স্থাপন করা হলে দেশের বিপুলসংখ্যক মানুষ এ ধরনের সেবার আওতায় আসবে।

পরে উপজেলা পর্যায়ে দেয়া সেবাসমূহ সহজতর উপায়ে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেবার উদ্দেশ্যে এ ধরনের একটি সিস্টেম চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে। ফলে ইউনিয়ন থেকে উপজেলা, উপজেলা থেকে জেলা এবং পর্যায়ক্রমে জেলা থেকে অধিদফতর বা মন্ত্রণালয় পর্যন্ত একটি আইসিটি অবকাঠামো তৈরি হয়ে যাবে। আর এ ধরনের একটি পরিপূর্ণ অবকাঠামো দাঁড়িয়ে গেলে জনগণ তার দোরগোড়ায় সব ধরনের সেবা পাবেন। এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’

............................................................................................................

‘জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছানোর জন্য এটি অনন্য এক মডেল’



মো: মাহফুজুর রহমান
কার্যনির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ কমপিউটার কাউন্সিল

‘বর্তমান সরকারের ‘রূপকল্প ২০২১ : ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বাস্তবায়নের একটি উল্লেখযোগ্য নিদর্শন জেলা ই-সেবাকেন্দ্র। জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দেয়ার এটি একটি অনন্য মডেল। এতে জনগণ একদিকে যেমন সহজে পাচ্ছেন, অপরদিকে এর মাধ্যমে সরকারি দফতরের জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতাও ক্রমান্বয়ে বাড়ছে এবং দিন দিন সরকারি দফতরের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা বাড়ছে।

বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় বাংলাদেশ কমপিউটার কাউন্সিল তথা বিসিসি ইতোমধ্যে সব জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ১০টি ইউপিএসসহ ১০টি পিসি, ৪টি ল্যাপটপ, ১টি সার্ভার, ১টি প্রিন্টার, ৪টি মডেম এবং প্রয়োজনীয় ফার্নিচারসহ ডিসি অফিসে সম্পূর্ণ ল্যান সংযোগ দেয়ার কার্যক্রম নিয়েছে। চলতি মাসের মধ্যে এ কাজটি শেষ হবে। পাশাপাশি প্রতি জেলার দুইজন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে এ কাজগুলো হাতে কলমে শেখানোর জন্য বিসিসি ইতোমধ্যে প্রশিক্ষণ কর্মসূচীও প্রণয়ন করেছে।

যশোর জেলায় স্থাপিত ই-সেবাকেন্দ্রের ব্যবস্থাটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বিসিসি ইতোমধ্যে ১ জন ইন্টার্ন নিয়োগ করেছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে যে ১০ জেলায় ই-সেবাকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, সেগুলো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য এবং বাংলাদেশ কমপিউটার কাউন্সিলের মাধ্যমে প্রতি জেলায় ১ জন করে ইন্টার্ন নিয়োগ করা হবে এবং যথাযথভাবে তাদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণও দেয়া হবে। অন্য সব জেলায় জেলা ই-সেবাকেন্দ্র স্থাপনের ক্ষেত্রে এটি একটি বড় সহায়ক ভূমিকা রাখবে।’

............................................................................................................

‘এ কেন্দ্র মাঠ পর্যায়ের সরকারি কাজে গতি আনবে’



খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম
অতিরিক্ত সচিব, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ

‘জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দেয়ার একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ জেলা ই-সেবাকেন্দ্র। জনগণ নিজ বাড়িতে বসে রেকর্ডরুম থেকে নকল পাবার জন্য আবেদন করছেন এবং বাড়ি বসে নকলটি ডাকযোগে পাচ্ছেন- জনগণকে সেবা দেয়ার ক্ষেত্রে এটি একটি নতুন মাত্রা। পাশাপাশি সাধারণ জনগণকে তার আবেদনের বিষয়ে গৃহীত পদক্ষেপ জানার অধিকার দেয়া হয়েছে, ফলে জনগণের তথ্য অধিকার নিশ্চিত হচ্ছে, দফতরের স্বচ্ছতা বাড়ছে এবং সবচাইতে উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে সরকারি অফিসের ওপর জনগণের আস্থা বাড়ছে। দেশের সব জেলায় ই-সেবাকেন্দ্র স্থাপন হলে দেশের একটি বিশাল অঙ্কের জনগণ তাদের দোরগোড়ায় সেবা পাবেন। সরকারের রূপকল্প ২০২১-এর একটি অন্যতম লক্ষ্য ‘সেবা যাবে জনগণের কাছে’- এ কথাটি সার্থকভাবে প্রতিফলিত হবে।

এ কর্মকান্ডটি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে। সংস্থাপন মন্ত্রণালয়, বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সংস্থা বাংলাদেশ কমপিউটার কাউন্সিল ও টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেড সার্বিকভাবে সহযোগিতা করছে। যশোর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জেলা ই-সেবাকেন্দ্র বাস্তবায়ন করেছে ইউএনডিপির অর্থায়নে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রোগ্রাম। দেশের সাধারণ জনগণ খুব সহজে যেন আইসিটি ব্যবহার করে সেবা পেতে পারেন সে জন্য দেশের সব ইউনিয়ন পরিষদে ইউনিয়ন তথ্য ও সেবাকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে সব জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ফাইবার অপটিক সংযোগ দেয়া হয়েছে। এর ফলে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়গুলো দ্রুতগতিসম্পন্ন ইন্টারনেট কানেকশনের সুবিধা পায় এবং জেলার সাথে সরকারের নীতিনির্ধারকরা অর্থাৎ মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রীও ভিডিও কনফারেন্স করতে পারবেন বলে মাঠ পর্যায়ে গতিশীলতা আসবে আশা করা যায়।’

............................................................................................................

‘ই-সেবাকেন্দ্র কর্মকর্তাদের সেবার মান বাড়াবে’



কে.এ.এম মোর্শেদ
অ্যাসিস্ট্যান্ট কান্ট্রি ডিরেক্টের
ইউএনডিপি বাংলাদেশ

‘বর্তমান সরকারের উন্নয়ন রূপকল্প ২০২১-এর অন্যতম উপাদান হচ্ছে জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দেয়া। ইউএনডিপির অর্থায়নে অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন প্রোগ্রামের মাধ্যমে জেলা ই-সেবাকেন্দ্র চালু হয়েছে এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে। পরীক্ষামূলকভাবে যশোর জেলায় এটি চালু হলেও এখান থেকে অর্জিত জ্ঞান কাজে লাগিয়ে পর্যায়ক্রমে সব জেলায় ই-সেবাকেন্দ্র চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে।

এর মাধ্যমে জনগণ ঘরে বসে সেবা পাচ্ছেন শুধু তাই নয়, সরকারি দফতর এবং কর্মকর্তাদেরও সেবার মান বাড়বে, যা একটি ভালো দিক। দীর্ঘদিনের প্রচলিত পদ্ধতির রূপান্তর ঘটিয়ে এ পদ্ধতি পুরোপুরি কাজে লাগাতে কর্মকর্তাদের একটু সময় লাগবে, তবে ‘রূপকল্প ২০২১’ বাস্তবায়নের জন্য এ ধরনের রূপান্তরের কোনো বিকল্প নেই। সেবা যোগানোর কেন্দ্র হিসেবে ইউনিয়ন তথ্য ও সেবাকেন্দ্রসমূহ একটি বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে। এছাড়া ব্যক্তি উদ্যোগে পরিচালিত বিভিন্ন কমপিউটারের দোকান থেকেও জনগণ সেবা পেতে পারেন। সেবাকে সত্যিকার অর্থে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে হলে আমাদের দেশে পর্যাপ্ত সার্ভিস ডেলিভারি পয়েন্ট চালু করা প্রয়োজন।

প্রয়োজন এ কার্যক্রম চালু রাখা এবং কার্যক্রমকে আরো সেবামুখী করে তোলা। এই প্রক্রিয়া চালু রাখার প্রধান দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর। ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য এখন থেকেই এ কর্মসূচী প্রসারে একটি পরিপূর্ণ পরিকল্পনা দরকার। এ জাতীয় কার্যক্রমের পূর্ব-অভিজ্ঞতা এখানে কাজে লাগানো যেতে পারে। পাশাপাশি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অব্যাহত প্রশিক্ষণ ও মটিভেশন কার্যক্রমও চালু রাখাসহ যথাযথ প্রণোদনার ব্যবস্থা করলে প্রক্রিয়াটি আরো জোরদার হবে। ’

............................................................................................................

‘ই-সেবাকেন্দ্র ব্যবস্থাটি হবে ব্যবহারবান্ধব’



আনীর চৌধুরী
পলিসি অ্যাডভাইজার
এটুআই প্রোগ্রাম

‘খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার অধিবাসী ইসহাক সরদার আমাকে জানালেন, জমির পর্চার নকল পেয়ে তিনি অভিভূত। ডিসি অফিসে লাইনে ধর্না দিতে হয়নি, কোনো বড় কর্তাকে দিয়েও ফোন করাতে হয়নি। কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিস থেকে যশোর জেলা তথ্য বাতায়নে ইসহাক সরদার পর্চার আবেদনটি করেছিলেন। মুহূর্তের মধ্যে আবেদন নম্বরসহ প্রাপ্তি স্বীকারপত্র পেলেন। তিনি ডাকে কোর্ট ফি পাঠিয়ে দেবার পর তার মোবাইলে মেসেজের মাধ্যমে তাকে জানিয়ে দেয়া হলো তার নকল সরবরাহের তারিখ এবং কয়েক দিন পর নকলটি ডাকে তার বাড়িতে এসে পৌঁছল। একজন সাধারণ নাগরিকের জন্য ডিজিটাল বাংলাদেশের কাছে এ এক বড় পাওয়া।

শেষ কথা

কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে জনগণ জেলা প্রশাসককেই বুঝে। পাশাপাশি সরকারের সাথে জনগণের যোগসূত্র জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের মাধ্যমেই ঘটে। প্রায় দুই শ’ বছরের ঐতিহ্য নিয়ে জেলা প্রশাসন কাজ করে আসছে ব্রিটিশ সরকারের তৈরি করা বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে কিছুটা পরিবর্তিত পদ্ধতি অনুযায়ী। ফলে আজ পর্যন্ত যেকোনো ধরনের সেবা পাওয়ার জন্য জনগণকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আসতে হতো অর্থাৎ জনগণকে আসতে হতো সেবার কাছে। কিন্তু এসব ধারণাকে সম্পূর্ণ বদলে দিয়ে সেবা যাবে জনগণের কাছে। এ ধরনের নতুন উপলদ্ধি নিয়ে চালু হলো জেলা ই-সেবাকেন্দ্র। সব জেলায় ই-সেবাকেন্দ্র চালু হলে এবং দেশের জনগণ এভাবে সরকারি দফতর থেকে সেবা পেতে থাকলে, ডিজিটাল বাংলাদেশের কাছে একজন সাধারণ নাগরিকের এর চেয়ে বড় চাওয়া আর কী হতে পারে?

কজ ওয়েব

ফিডব্যাক : mdmustafiz@a2i.pmo.gov.bd
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস