ড্যাফোডিল আন্ত : বিশ্ববিদ্যালয় প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা - ২০১০ অনুষ্ঠিত
কমপিউটার জগৎ প্রতিনিধি -
হেমন্তের স্নিগ্ধ সকালে দেশের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে তরুণ মেধাবী প্রোগ্রামাররা এক এক করে জড়ো হতে শুরু করে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অডিটরিয়ামে। সকাল ৮টায় রিপোর্টিং শেষ করে প্রতিযোগীরা তাদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করে শেষবারের মতো নিজ নিজ প্রস্ত্ততি সম্পন্ন করে নেয়। অডিটরিয়ামে প্রবেশ করতেই দেখা গেল সারি সারি ডেস্কটপ কমপিউটারের পসরা সাজানো রয়েছে অডিটরিয়ামজুড়ে।
সকাল ৯টায় মহড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিযোগিতার পরিচালক ও সিএসই বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ড. সৈয়দ আকতার হোসেন মঞ্চে ঘোষণা দেন- মহড়ার বিষয়টি আসলে প্রতিটি পিসি ঠিকমতো কাজ করছে কি না, তা শেষবারের মতো যাচাই করে দেখা। যদিও ড্যাফোডিল আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের সর্বোচ্চ সতর্কতা ও প্রস্ত্ততি আগে থেকেই নিয়ে রেখেছিল, তার পরও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ, নেটওয়ার্ক কানেকশন, কনটেস্ট রুমের সাথে বিচারক রুমের নেটওয়ার্ক, প্রশিক্ষকদের রুমের নেটওয়ার্ক সব ঠিক আছে কি না, তা পরীক্ষা নিরীক্ষার ক্ষেত্রে সতর্ক ছিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সেদিন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ বিদ্যুৎ বিভ্রাটের দেশে একটানা পাঁচ ঘণ্টার নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে পেরেছিল।
ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্পকে সফল বাস্তবায়নের জন্য প্রযুক্তির পাশাপাশি প্রয়োজন দক্ষ মানবসম্পদ। ডিজিটাল বাংলাদেশের ডিজিটাল সেবার উদ্ভাবনে ও উন্নয়নে দক্ষ মানবসম্পদের কোনো বিকল্প নেই। এই ডিজিটাল সেবার সম্ভাবনাকে সুদৃঢ় করার জন্য প্রয়োজন দক্ষ প্রোগ্রামার। আর এই লক্ষ্যে দেশের তরুণ সম্ভাবনাময় প্রোগ্রামারদের প্রতিযোগিতা করার সুযোগ দিতে ড্যাফোডিল আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজন করে ‘ড্যাফোডিল আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় কমপিউটার প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা-২০১০’। গত ১৬ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব অডিটরিয়ামে এ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এই প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় প্রধান বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন প্রফেসর ড. এম কায়কোবাদ এবং বিচারকমন্ডলীর পরিচালক শাহরিয়ার মঞ্জুর প্রতিযোগিতার প্রশ্নপত্র প্রণয়নের দায়িত্বে ছিলেন। আয়োজক কমিটিতে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর আবু লাইসসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কমপিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের বিভাগীয় প্রধানেরা সদস্য হিসেবে সহযোগিতা করেছেন।
সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. আমিনুল ইসলাম, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. লুৎফর রহমান, প্রতিযোগিতার প্রধান বিচারক প্রফেসর ড. এম কায়কোবাদের উপস্থিতিতে মূল প্রতিযোগিতা শুরু হয়। একটানা পাঁচ ঘণ্টার এই প্রতিযোগিতা শেষ হয় বিকেল ৩টায় এবং বিচারকমন্ডলীর কাজশেষে ফলাফল ঘোষণা ও সম্মাননা অনুষ্ঠান শুরু হয় বিকেল ৪টায়। সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ড্যাফোডিল গ্রুপের চেয়ারম্যান মো: সবুর খান এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলালায়নের প্রধান কমার্শিয়াল অফিসার অব: লে. কর্নেল মো: শফিউল হক চৌধুরী, নর্থ সাউথ বিশবিদ্যালয়ের স্কুল অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির ডিন প্রফেসর আবুল এল হক, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলা ২০১০-এর কনভেনর প্রফেসর ড. গোলাম মাওলা চৌধুরী এবং প্রধান বিচারক প্রফেসর ড. এম কায়কোবাদ।
অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. মো: ফখরে হোসেন, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর ড. এস এম মাহাবুবুল হক, পরিচালক (হিসাব ও অর্থ) মো: মমিনুল হক মজুমদার, প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার পরিচালক প্রফেসর ড. সৈয়দ আখতার হোসেন, সিনিয়র সহকারী পরিচালক (আইটি) নাদির বিন আলী এবং বিভাগীয় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
প্রধান বিচারক প্রফেসর ড. এম কায়কোবাদ বলেন, সত্যিকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে হলে এ ধরনের প্রতিযোগিতা নিয়মিতভাবে আয়োজন করা অত্যাবশ্যক। এ বিষয়ে তিনি প্রতিবেশী দেশ ভারতের উদাহরণ দিয়ে বলেন, ভারত সরকার প্রতিবছর আইটি খাত থেকে রাজস্ব আয় করে ৭ হাজার ২শ’ কোটি মার্কিন ডলার, অথচ বাংলাদেশ প্রতিবছর আইটি খাত থেকে রাজস্ব আয় করে মাত্র ৩ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলার। অথচ ২০০৯ এবং ২০১০ সালে এশিয়ান রিজিওনাল প্রোগ্রামিং কনটেস্টে বাংলাদেশ ভারতকে অনেক পেছনে ফেলে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছিল। তিনি আরো জানান, আমাদের দেশের বেশ কিছু প্রোগ্রামার ইতোমধ্যে বিশ্বখ্যাত গুগল ও মাইক্রোসফট কোম্পানিতে চাকরি পাওয়ার গৌরব অর্জন করেছে।
এই প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় সার্বিক সহযোগিতা দেয় দেশের সফল ওয়াইম্যাক্স সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বাংলালায়ন ওয়াইম্যাক্স এবং অনলাইন ওয়েব সম্প্রচার প্রতিষ্ঠান কমজগৎ ডট কম।
ড্যাফোডিল আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় ২০১২ সালের এসিএম ঢাকা রিজিওনাল প্রতিযোগিতা আয়োজনের সম্মতি ইতোমধ্যে পেয়েছে। এ প্রতিযোগিতার আয়োজন বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ২০১২ সালের এসিএম ঢাকা রিজিওনাল প্রতিযোগিতা আয়োজনের মহড়া হিসেবে কাজ করবে।
প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ইস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়, মওলানা ভাসানী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, আন্তর্জাতিক ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম, ইসলামিক আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ ৩০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮১টি দল অংশ নেয়।
এ প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘শিম্পাঞ্জী’ দল, রানারআপ হওয়ার গৌরব অর্জন করে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘এনিহিলেটর’ দল এবং তৃতীয় স্থান অর্জন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘রিসোনেনস’ দল।
প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘শিম্পাঞ্জী’ দলের সদস্যরা হলেন : মাহবুবুল হাসান, শাহরিয়ার রউফ ও মো: সামিউল সাইফ। রানারআপ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘এনিহিলেটর’ দলের সদস্যরা হলেন : তাসনীম ইমরান সানি, অনিন্দ্য দাশ ও মুনতাসির মাসুক। তৃতীয় স্থান অধিকারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘রিসোনেনস’ দলের সদস্যরা হলেন : মো: শিপলু হাওলাদার, হাসনাইন হেইকেল ও আনা ফারিহা।
কজ ওয়েব