• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > দেহেই সংযুক্ত ব্যক্তিগত সহকারী
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: সুমন ‍ইসলাম
মোট লেখা:৮৭
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১০ - নভেম্বর
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
ফিচার
তথ্যসূত্র:
দশদিগন্ত
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
দেহেই সংযুক্ত ব্যক্তিগত সহকারী
হাতে করে বা ব্যাগে কমপিউটার বহন করে বেড়ানোর দিন শেষ হয়ে আসছে। আধুনিক প্রযুক্তি এমন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যে, শিগগিরই আপনি পাচ্ছেন শার্ট-প্যান্টের মতো শরীরে পরে ফেলা যায় এমন কমপিউটার। একে বলা হচ্ছে ওয়্যারেবল বা পরিধানযোগ্য কমপিউটার। অর্থাৎ আপনার দেহের সাথেই সেট করা থাকবে সেটি। যেখানেই যান, আপনি থাকছেন সব সময়ের জন্য কানেক্টেড, এমনকি বাথরুমে থাকলেও।

বিজ্ঞানবিষয়ক কল্পকাহিনীভিত্তিক চলচ্চিত্রে হরহামেশাই এমনটি চোখে পড়ে। বিখ্যাত চিত্র পরিচালক স্টিভেন স্পিলবার্গ ২০০২ সালে মাইনোরিটি রিপোর্ট চলচ্চিত্রে খুব ভালোভাবেই বিষয়টি বুঝিয়ে দিয়েছেন। টম ক্রুজ অভিনীত সেই মুভিতে দেখা যায়, ২০৫৪ সালে এমন সব ডিভাইস বা যন্ত্র এসে যাবে যা ব্যবহার করার মাধ্যমে অপরাধ সংঘটনের আগেই সে অপরাধ তৎপরতা নস্যাৎ করে দেয়া যাবে। অর্থাৎ কেউ অপরাধ করার আগেই তা শনাক্ত হয়ে যাবে এবং সম্ভাব্য অপরাধীদের ধরে ফেলা যাবে। যদি সত্যি এমন যন্ত্র এসে যায়, তাহলে নিশ্চয়ই বিশ্বে অপরাধপ্রবণতা কমে যাবে। চলচ্চিত্রে টম ক্রুজকে একটি দেয়ালের সামনে দাঁড়িয়ে হাতের অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে কিছু তথ্য বিশ্লেষণ করতে দেখা যায়, যা বাস্তবে রূপ পেলে হবে অসাধারণ ঘটনা।



এ ব্যাপারে বেশ কিছুটা এগিয়ে গেছে ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি তথা এমআইটির প্রণব মিস্ট্রি। তার উদ্ভাবিত সিক্সথ সেন্স প্রযুক্তি ইতোমধ্যেই নজর কেড়েছে। তিনি এতে ব্যবহার করেছেন একটি ওয়েব ক্যামেরা, একটি প্রজেক্টর এবং ৪টি সেন্সর। সহজেই এগুলো শরীরের সাথে সেট করা যায়। তিনি বলেছেন, এই পরিধানযোগ্য কমপিউটারের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো অপর্যাপ্ত ব্যাটারি লাইফ এবং প্রসেসর ক্ষমতা। যদিও একথা সত্য, গত ১০ বছরে এ ক্ষেত্রে যথেষ্ট সাফল্য এসেছে।

পরিধানযোগ্য কমপিউটারের ধারণা আজকের নয়। ১৫০০ সালের। তখন পকেট ঘড়ি উদ্ভাবিত হয়েছিল। সেই কালের অর্থে সেটাই ছিল প্রথম পরিধানযোগ্য কমপিউটার। আধুনিক যুগে এই ধরনের কমপিউটারের চিন্তাটা আসে ১৯৬০-এর দশকে। তখন উদ্ভাবিত হয় সিগারেটের প্যাকেট আকৃতির এনালগ কমপিউটার, যা দিয়ে রাশিয়ার একটি ক্যাসিনো গেমের পূর্বাভাস পাওয়া যেত। এ বিষয়ে সবচেয়ে বেশি অগ্রগতি হয় ১৯৯০ দশকের মাঝামাঝি। ইউএস ডিফেন্স অ্যাডভান্সড রিসার্চ প্রজেক্ট এজেন্সি তথা ডিএআরপিএ সে সময় একটি কর্মশালার আয়োজন করে, যার শিরোনাম ছিল ‘ওয়্যারেবল কমপিউটার উইদিন ২০০৫’।

তারপর থেকে বিষয়টি নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে এবং উদ্ভাবিত হয়েছে দেহে ব্যবহারযোগ্য অনেক ধরনের কমপিউটার। ২০০১ সালে আইবিএম উন্নয়ন ঘটায় এবং প্রাথমিক সংস্করণ তৈরি করে রিস্টওয়াচ বা হাতঘড়ি কমপিউটার, যেখানে ব্যবহার করা হয় লিনআক্স অপারেটিং সিস্টেম। সেখানে ছিল ভিজিএ স্ক্রিন। ওই কমপিউটারে টেক্সট, ছবি এবং অ্যানিমেশনের কাজ করা যায়। অফিসের কাজে একে খুবই উপযোগী বলে বিবেচনা করা হয়।

পিসি বা ল্যাপটপ যেমন ব্যবহারের আগে স্টার্ট করার প্রয়োজন হয়, ওয়্যারেবল কমপিউটারের ক্ষেত্রে তা নয়। এটি সব সময় তৈরি অবস্থায় থাকে। ব্যবহারকারী তার ইচ্ছেমতো এ যন্ত্র ব্যবহার করতে পারেন। স্টার্ট বা শাটডাউনের কিছু এতে থাকে না। শুধু কমপিউটিং নয়, এটি দিয়ে যেকোনো ধরনের বুদ্ধিদীপ্ত কর্মকান্ড করা যাবে। তথ্য ইনপুটের জন্য রয়েছে অঙ্গভঙ্গি এবং কথার নির্দেশনাসহ নানা উপায়ে তথ্য সন্নিবেশিত করার ব্যবস্থা।

এই খাতে গবেষণায় এমআইটির মতো অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান এগিয়ে এসেছে। তাদের দুটি অন্যতম প্রকল্প হলো এসনাইফ- সোসাল নেটওয়ার্কিং অন ফার এবং রিয়েলিটি মাইনিং সেল ফোন প্রজেক্ট। ইউনিভার্সিটি অব ওয়ালেস, নিউপোর্ট এবং ন্যাশনাল সেন্টার ফর প্রোডাক্ট ডিজাইন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ তথা পিডিআর যৌথভাবে গড়ে তুলেছে স্মার্ট ক্লথস অ্যান্ড ওয়্যারেবল টেকনোলজি রিসার্চ গ্রুপ তথা এসসিডব্লিউটি। ২০০৪ সালের নভেম্বর থেকে তাদের কার্যক্রম শুরু হয়। তাদের লক্ষ্য হচ্ছে ভবিষ্যতের জন্য স্মার্ট ক্লথ তৈরি করা। ইতোমধ্যেই তারা এ ব্যাপারে সাফল্য পেয়েছে, যা হয়ত শিগগিরই বাণিজ্যিকভিত্তিতে বাজারে পাওয়া যাবে। এসব ক্লথ বা কাপড়ে ব্যবহার করা হয়েছে ওয়্যারেবল প্রযুক্তি।



মাইক্রোসফটও এ সেক্টরে কাজ করতে আগ্রহ দেখিয়েছে। মাইক্রোসফট রিসার্চ রেডমন্ডে ভিজ্যুয়ালাইজেশন অ্যান্ড ইন্টারেকশন ফর বিজনেস অ্যান্ড এন্টারটেনমেন্ট তথা বিআইবিই গ্রুপের সিনিয়র গবেষক ডেসনি টান উদ্ভাবন করেছেন স্কিন পুট প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করতে মাউস ও ফিজিক্যাল কিবোর্ডের প্রয়োজন হবে না। অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমেই চালানো যাবে কমপিউটার। সোজা কথায় সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যবহার করে অথবা হাতের আঙ্গুল দিয়ে দেহের নির্দিষ্ট অংশে টোকা দিয়ে কমপিউটারে তথ্য ইনপুট করা কিংবা কোনো নির্দেশনা দেয়া যাবে। এক্ষেত্রে মানবদেহই কাজ করবে কিবোর্ড হিসেবে।

কমপিউটার পরিচালনার পাশাপাশি স্কিন পুট মোবাইল ফোন পরিচালনায়ও নতুন ধারার সূচনা করবে। বিষয়টি নিয়ে গবেষণাকারীরা বলছেন, স্কিন পুট প্রযুক্তির এখনো পুরোপুরি উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব হয়নি। বাণিজ্যিকভাবে এই প্রযুক্তি হাতে পেতে আরো ৫/৬ বছর লেগে যাবে। তাদের দাবি শুধু ৫টি কি দিয়ে স্কিন পুটের সেন্সর পরীক্ষা করে দেখা গেছে। এটি বর্তমানে ৯৬ শতাংশ সঠিক ফল দিতে সক্ষম। সব কি ব্যবহার করা হলে কি ধরনের ফল পাওয়া যাবে সেটাই এখন দেখার বিষয়। স্কিন পুট প্রমাণ করেছে, মানবদেহ ব্যবহার হতে পারে সেন্সর হিসেবে এবং কমপিউটিংয়ে আনতে পারে অভিনবত্ব। ভবিষ্যতে এমন দিন আসতে পারে যখন আপনি দূর থেকে শুধু হাতের তালুতে টোকা দিয়ে খুলে ফেলতে পারবেন সদর দরজা। কয়েকটি বাটন চেপে চালু করতে পারবেন মিউজিক সিস্টেম ইত্যাদি।

নর্থ ভার্জিনিয়ার প্রতিষ্ঠান লাইটগ্লোভস ইনকর্পোরেট তৈরি করেছে লাইটগ্লোভস প্রযুক্তি। অবশ্য এটি এখনো উন্নয়ন পর্যায়ে রয়েছে। এটি অনেকটা স্কিন পুটের মতোই। লাইটগ্লোভস এমন যন্ত্র যা বাজার থেকে হটিয়ে দিতে পারবে কমপিউটিং, গেমিং, পিডিএ এবং টেলিভিশনের যেকোনো ইনপুট যন্ত্রকে।

আমাদের জীবনে সর্বক্ষণিকভাবে ব্যবহার হতে পারে ওয়্যারেবল কমপিউটার। এর মাধ্যমে মানুষের চিন্তার ধরন, বিষয় এবং যেকোনো সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত তাৎক্ষণিক পাওয়া সম্ভব। ইতোমধ্যে এমন স্মার্ট ক্লথ উদ্ভাবিত হয়েছে যা পরিধান করলে মানুষের আবেগের অবস্থা জানা সম্ভব হবে। নেদারল্যান্ডসের রয়েল ফিলিপস ইলেক্ট্রনিকসে ডিজাইন গ্রুপ ইমোশনাল সেনসিং নিয়ে গবেষণা করছে। তারা তৈরি করেছে বুবেল নামের পোশাক। এগুলো তৈরি করা হয়েছে বিশেষ তন্তু দিয়ে এবং ভেতরের তন্তুতে রয়েছে বায়োমেট্রিক সেন্সর, যা মানুষের আবেগ নির্ণয় করতে পারে। যেকোনো নতুন উদ্ভাবনাই বহুলভাবে ব্যবহার হয় বিনোদন শিল্পে। তাই কমপিউটার গেমসেও লাগছে পরিবর্তনের হাওয়া। গেমসের আসল অনুভূতি পাওয়ার ব্যবস্থাও করেছে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান।

যেহেতু ওয়্যারেবল সব যন্ত্রই ব্যবহারকারীদের বিস্তারিত তথ্য-উপাত্ত সংরক্ষণ করবে। তাই এটি হয়ে উঠবে ব্যক্তিগত সহকারী।

কজ ওয়েব

ফিডব্যাক : sumonislam7@gmail.com
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস