আগামী যুগ হবে এসএসডির যুগ। ভাবছেন এসএসডি আবার কী? আমরা অনেকেই জানি, কমপিউটারের হার্ডডিস্ক ড্রাইভ থাকে, যা স্টোরেজ ডিভাইস হিসেবে পরিচিত। হয়তো অনেকে এসএসডির কথাও শুনেছেন। এসএসডি পুরো কথায় ‘সলিড স্টেট ড্রাইভ’।
সলিড স্টেট ড্রাইভ পুরোপুরি সেমিকন্ডাক্টর দিয়ে তৈরি। সেমিকন্ডাক্টর হলো এক ধরনের ট্রানজিস্টর। বেশিরভাগ ইলেক্ট্রনিক্স পণ্যেই ট্রানজিস্টরের ব্যবহার অনেক বেশি দেখা যায়। প্রসেসর যেমন হাজার হাজার ট্রানজিস্টরের সমন্বয়ে তৈরি। তেমনি এসএসডিও অনেক ট্রানজিস্টরের সমন্বয়ে তৈরি।
গত এক যুগে একের পর এক কমপিউটারের হার্ডডিস্ক ড্রাইভ পেয়েছি : IDA, ATA, PATA, SATA এবং সর্বশেষ e-SATA যুক্ত হয়েছে এইচডিডি টেকনোলজিতে। এরপরও হার্ডডিস্কের গঠনগত কারণে এমন কতগুলো সমস্যা চিরস্থায়ী হয়েছে, যার জন্য হার্ডডিস্ক ড্রাইভের পরিবর্তন অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছে। তাই সলিড স্টেট ড্রাইভ সম্পর্কে বিস্তারিত জানার আগে জেনে নেয়া দরকার হার্ডডিস্ক ড্রাইভের কী কী সমস্যা রয়েছে। এসএসডি আমাদেরকে এইচডিডি থেকে আরো উন্নত কী সুবিধা দিচ্ছে, সেটি আলোচনার আগে এইচডিডির কিছু সমস্যা উল্লেখ না করলেই নয়।
দিন দিন এইচডিডির আকার বাড়ছেই। এক যুগ আগেও যেখানে ১ টেরা (১০২৪ গি.বা.) এইচডিডি ছিল, সেটি এখন কয়েক টেরা হয়েছে। কিন্তু আকার বাড়ার সাথে সাথে হার্ডডিস্ক ড্রাইভের পার্টিশন ফ্যাটও অনেক জায়গা নষ্ট করছে। যত বেশি গি.বা. হবে তত বেশি পার্টিশন ফ্যাটের জায়গা নষ্ট হবে। তাই ১ টেরা এইচডিডিতে দেখা যায় ৯৮০/৯৭৫ গি.বা. বেশি জায়গা পাওয়া যায় না। পক্ষান্তরে আকার বাড়ার সাথে সাথে হার্ডডিস্কের ক্যাশ মেমরির আকারও বাড়াতে হয়েছে। কিন্তু এতেও খুব একটা ভালো কাজ হচ্ছে না। কারণ, নতুন নতুন অপারেটিং সিস্টেম ও অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যারের চাহিদা যেভাবে বাড়ছে, তাতে এই ক্যাশ মেমরি অপ্রতুল হয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে গ্রাফিক্স, ভিডিও স্ট্রিমিং সার্ভার, বড় বড় এফটিপি সার্ভারের ক্ষেত্রে এ সমস্যা আরো প্রকট। আমরা অনেকেই জানি, হার্ডডিস্ক ড্রাইভ একটি ইলেকট্রো মেকানিক্যাল যন্ত্র। অনেক দীর্ঘ সময় চলার পাশাপাশি ও ডাটা রিড/রাইট করার জন্য হার্ডডিস্ক ড্রাইভের ভেতরে তাপমাত্রা অনেক বেড়ে যায়। ফলে একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় পৌঁছে গেলে আর ডাটা রিড/রাইট করতে পারে না, ডিস্ক হ্যাং হয়ে যায়। আর এই হ্যাং হওয়ার ফলে অনেক মূল্যবান ডাটাও নষ্ট হয়ে যায়। অনেক সময় যে সেক্টরের ডাটা রিড/রাইট হয়, সে সেক্টর নষ্ট হয়ে যায়। ভুলে গেলে চলবে না এইচডিডির ন্যূনতম ঘূর্ণনগতি প্রতি সেকেন্ডে ৫৪০০/৭২০০/১০০০/ ১২০০০ বার হয়।
হার্ডডিস্ক ড্রাইভের আরেকটি বড় সমস্যা এর আয়ু। হার্ডডিস্কের এমটিবিএফ (মিন টাইম বিটুইন ফেইলিউর) পরীক্ষার দেখা গেছে, একটি চলমান হার্ডডিস্কের ভেতরের যে চুম্বকীয় আবেশ তৈরি হয়, তা একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর থেকে দুর্বল হতে থাকে। সাধারণত সার্ভারের এইচডিডিতে এ সমস্যা বেশি দেখা দেয়। ফলে, ডাটা রিড/রাইটে সমস্যা হয়। হয়তো যে ডাটা রাইট করা হলো, তা পরে কমপিউটার চালালে নাও থাকতে পারে।
হার্ডডিস্কের মোটর ও ডিস্ক ঘোরার জন্য এবং চুম্বকীয় আবেশ তৈরির ক্ষেত্রে যে বিদ্যুৎ খরচ হয়, তা সলিড স্টেট ড্রাইভে মেকানিক্যাল ডিস্ক ও মোটর না থাকাতে অনেক বেশি। অন্যদিকে বিভিন্ন কারণে এইচডিডিতে যে ধরনের ডাটা নষ্ট হয়, এসএসডিতে তা অনেক কম। এক পরীক্ষায় দেখা গেছে, এইচডিডির তুলনায় এসএসডি কমপক্ষে ২০ শতাংশ বেশি গতিতে ডাটা রিড অথবা রাইট করতে পারে। কারণ এইচডিডিতে বড় ধরনের ডাটা রাইট করতে গেলে তা প্রথমে ক্যাশ মেমরিতে যায়, তারপর ডিস্কে রাইট হয়। আবার কোনো কিছু রিড করতে হলে সে ডাটা প্রথমে এইচডিডির ক্যাশ মেমরিতে আসে, তারপর তা র্যাোমে যায়। ফলে ডাটা ক্যাশিং করতেও বেশ কিছু সময় নষ্ট হয়। কিন্তু এসএসডিতে তা হয় না। এইচডিডিতে অল্প জাগয়ায় অনেক ডিস্ক থাকে এবং মাল্টিটাস্কের কাজের ক্ষেত্রে দেখা যায় প্রত্যেকটি ডিস্ক থেকে একই সময় ডাটা রিড অথবা রাইট চলে, ফলে ডাটা ডেনসিটি বা ডাটার ঘনত্ব বেড়ে যায়। এ কারণে প্রত্যেক ডিস্ক থেকে ডাটা আদানপ্রদানে সময় লেগে যায় অনেক বেশি। এইচডিডির আরেকটি বড় সমস্যা এর মেকানিক্যাল হেড। কারণ, সামান্য ঝাঁকুনিতে বা বিদ্যুৎ প্রবাহের ওঠানামায় এর মেকানিক্যাল হেড ক্ষতিগ্রস্ত হয় অথবা ডিস্কের ওই জায়গায় ব্যাড সেক্টর তৈরি হয়। এসএসডিতে মেকানিক্যাল হেড না থাকায় এ রকম ক্ষতির আশঙ্কা থাকে না বরং এর বাইরে বেশ কিছু সুবিধা এসএসডিতে আছে। তাই সহজেই বলা যায়, ভবিষ্যতের ডাটা স্টোরেজ হিসেবে ম্যাগনেটিক মিডিয়ায় এইচডিডি’র বদলে এসএসডি ব্যবহার অবধারিত।
এতক্ষণে আমরা জানলাম এসএসডি সুবিধা সম্পর্কে। এবার দেখা যাক, এসএসডি কিভাবে কাজ করে। বর্তমানে ব্যবহার হওয়া ইউএসবি ফ্ল্যাশড্রাইভের প্রযুক্তি ও এসএসডির প্রযুক্তির মধ্যে খুব কমই পার্থক্য আছে। কারণ, ইউএসবি ফ্ল্যাশ ড্রাইভে ব্যবহার হওয়া ট্রানজিস্টর মেমরি চিপ ও এসএসডিতে ব্যবহার হওয়া মেমরি চিপ একই। পার্থক্য হলো ইউএসবিতে জায়গা কম থাকায় মেমরি চিপ কম থাকে, এসএসডিতে জায়গা বেশি থাকাতে মেমরি চিপ বেশি থাকে। এই মেমরি চিপগুলো খুবই স্পর্শকাতর, যা ন্যান্ড-গেটসমৃদ্ধ (ভলেটাইল/ননভলেটাইল মেমরি)। র্যাসমে এর ব্যবহার হওয়া মেমরি ও এসএসডি মেমরির মধ্যে পাথর্ক্য একটাই, তাহলো এ মেমরিতে বিদ্যুৎ প্রবাহ না থাকলেও এর মধ্যে ধারণ করা তথ্য মুছে যায় না। ন্যান্ড ফ্ল্যাশ এসএসডি ব্যবহার করে ন্যান্ড-গেট-টেকনোলজির ট্রানজিস্টর। ন্যান্ড-গেট ট্রানজিস্টর দুই ধরনের হয় ভলেটাইল ও ননভলেটাইল। ভলেটাইল মেমরির মধ্যে পড়ে ডি র্যাজম, ডিডিআর, এসডি র্যা ম এবং নতুন যেগুলো যুক্ত হয়েছে (টি-র্যা ম, জেড র্যাডম, টিটি র্যাাম)। ননভলেটাইল মেমরির মধ্যে পড়ে রম, পিরম, এপিরম, ইইপিরম, ফ্ল্যাশ মেমরি, এফই র্যা ম, এম র্যাযম, পি র্যাযম আরো এবং নতুন যুক্ত হওয়া সিবি র্যাইম, সোনস, আরআর র্যাযম, রেস ট্রাক মেমরি, এন র্যা্ম, মিলিপিডিয়া ইত্যাদি। আগেই বলা হয়েছে, ননভলেটাইল মেমরিতে বিদ্যুৎ প্রবাহ না থাকলেও এর মধ্যে থাকা তথ্য মুছে যায় না। এ কারণেই ননভলেটাইল মেমরি সেকেন্ডারি স্টোরেজ হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। ননভলেটাইল মেমরি ভলেটাইল মেমরি থেকে কিছুটা ধীরে কাজ করে। সেজন্যই আইবিএম, স্টেক এইচপির মতো বড় বড় কোম্পানি এম র্যা ম (ম্যাগনিটো রেজিস্টিভ র্যালম) তৈরি করেছে। যার সবচেয়ে বড় সুবিধা কমপিউটার তৎক্ষণাৎ বন্ধ করা যায়। এখন যেমন শাটডাউনে চাপ দিলেও একটু সময় নেয় কমপিউটার বন্ধ করতে, পক্ষান্তরে এম র্যাাম ব্যবহার করলে তা সাথে সাথে বন্ধ হবে এবং একই রকমভাবে মুহূর্তেই কমপিউটার চালু করবে। কারণ, ডিডিআর ৩ র্যা মে ১৬০০ এমবিপিসম ডাটা প্রতি সেকেন্ডে দেয়া-নেয়া করা যায়। এসএসডিতে ডাটা বিনিময় করার ক্ষমতা ১৬০০/১৮০০ এমবিপিসম ইত্যাদি বিভিন্ন মানের হচ্ছে।
ন্যান্ড টেকনোলজিতে ডাটা স্টোর হয় দুই প্রক্রিয়ায় :
০১. এসএলসি (সিঙ্গেল লেভেল সেল) এবং
০২. এমএলসি মাল্টি লেভেল সেল। এসএলসিতে ডাটা স্টোর হয় দুইটি বৈদ্যুতিক তরঙ্গে।
এসএলসিতে প্রতি মেমরি সেলে ২ লেভেলে ১ বিট ধারণ করে। এসএলসিতে ১০x গতিতে ডাটা রিড অথবা রাইট করতে পারে প্রতি সেলে। এমএলসিতে থাকে চারটি বৈদ্যুতিক তরঙ্গের ধাপ, যা প্রতি মেমরি সেলে 2x গতিতে ডাটা রিড অথবা রাইট করে। ডাটা রিড/রাইটের দিক থেকে এসএলসি থেকে এমএলসি কিছুটা ধীর।
হোস্ট ইন্টারফেস লজিক কমপিউটার অন্যান্য যন্ত্রাংশের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে। প্রসেসর ডাটা বিনিময় ঠিক রাখার জন্য লজিক্যাল ব্লক থেকে ফ্ল্যাশ মেমরির অ্যাড্রেস ঠিক করে। বাফার ম্যানেজার ডাটা ফ্ল্যাশ প্যাকেজে রাখার জন্য এখানে এনে প্রসেসরের ও ফ্ল্যাশ মাল্টিপ্লেক্স/ডি-মাল্টিপ্লেক্স সমন্বয়ে ডাটাকে ফ্ল্যাশ প্যাকেজে রাখা হয়। অনেকগুলো সেল নিয়ে এক একটি বড় মেমরি তৈরি হয় এবং অনেক বড় মেমরির সমন্বয়ে একটি এসএসডি তৈরি হয়।
লক্ষ করলে দেখা যাবে, প্রতিটি মেমরি সেলের পাওয়ার আলাদা ও ডাটা রিড অথবা রাইট আলাদা।
পারফরমেন্স ডাটা টেবিল
-------------------এইচডিডি----এসএসডি
র্যা ন্ডস রিড----------সাধারণ------খুবই দ্রুত
র্যা ন্ডস রাইট----------সাধারণ------খুবই দ্রুত
সিকুয়েন্ডিয়াল রিড------দ্রুত--------খুবই দ্রুত
সিকুয়েন্ডিয়াল রাইট-----দ্রুত---------খুবই দ্রুত
সিক্সন্ড রিড/রাইট------দ্রুত---------সাধারণ
একটি সাধারণ এসএসডি’র টেকনিক্যাল ডাটা টেবিল
মডেল নাম্বার MK4001 এজ
ধারণক্ষমতা 400 জিবি
সেক্টর সাইজ ৪১২, ৫২০, ৫২৮
ন্যান্ডটেকনোলজি ৩২ ন্যানোমিটার এসএলসি
ইন্টারফেস- ৬জিবি/সে. SAS (dual Port) SAS হলো সিরিয়াল অ্যাটাচড এসসিএসআই (SCSI) ইন্টারফেস
রিড-৫১০ মেগাবিট/সে. (Q=৪)
রাইট-২৩০ মেগাবিট/সে. (Q-৪)
৪ কিলোবিট রিড- ৯০,০০০ (Q=১৬)
৪ কিলোবিট রাইট - ১৭,০০০
পাওয়ার - ৬.৫ ওয়াট
ভাইব্রেশন - নেই
অপারেটিং টাইম - ৯.৮ মিলিসেকেন্ড
তাপমাত্রা ০-৫৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে কার্যক্ষম
এসএসডি সমস্যা :
যদি পেজ সাইজ বড় হয় তখন পেজে রিড/রাইট করা সহজ হয়। কিন্তু সমস্যা তখনই হয়, যখন পেজ সাইজে যে পরিমাণ ডাটা রাইট করা যায় তার থেকে কম ডাটা রাখা হয়। তখন ডাটা রিড করতে সময় বেশি লাগে, যা এসএসডি’র পারফরমেন্স কমিয়ে দেয়।
যেহেতু একটি ফ্ল্যাশ প্যাকেজ এক বা একাধিক ডাইস/চিপের সমন্বয়ে তৈরি, তাই এসএসডি’র প্রাথমিক কার্যক্ষমতা নির্ভর করে হোস্ট ইন্টারফেস লজিকের ওপর। এসএসডির দাম নির্ভর করে চিপের ভেতর প্যাকেজগুলো কত কম জায়গায় কিভাবে কানেক্ট করা আছে তার ওপর।
কিন্তু নতুন ধারার এসএসডিতে আরো আধুনিক প্রযুক্তি যুক্ত করায় এ ধরনের সমস্যা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছে। যেমন ফুজিৎসুর MB86C300A সিরিজের চিপে দুই ধরনের অপারেশন যোগ করা হয়েছে। একটি হলো চিপার ব্লক চেইনিং (CBC) যা এক ধরনের নতুন ডাটা এনক্রিপশন প্রসেস এবং এটি প্রতিটি ব্লক খুব সূক্ষ্ণভাবে যাচাই করে যেকোনো ব্লকে কিভাবে ডাটা রাখলে তা জায়গা নষ্ট করবে না ও খুব দ্রুত ডাটা রিট করা যাবে। ফলে নিরাপত্তা, গতি এবং ডাটা এনক্রিপশনে ফ্ল্যাশ মেমরি আরো সমৃদ্ধ হয়েছে।
পরিশেষে একটি এসএসডি টেকনিক্যাল ডাটা তথ্য হলে ধরা হলো পাঠকদের উদ্দেশে।
কজ ওয়েব
ফিডব্যাক : minitohid@yahoo.com