হাইব্রিড সবজি, ফল কিংবা গাড়ির কথা আমরা অনেকেই শুনেছি। কিন্তু হাইব্রিড হার্ডডিস্ক ড্রাইভের কথা কজনাইবা শুনেছেন? এবার বাজারে আসছে হাইব্রিড হার্ডডিস্ক ড্রাইভ, যা এইচএইচডি (HHD) নামে পরিচিত।
নতুন ধরনের সলিড স্টেট ড্রাইভ বা এসএসডি (SSD) বাজারে পুরোপুরি না আসতেই এইচএইচডির এই আগমন। এক্ষেত্রে একটু এসএসডির ইতিহাস জানা দরকার। মূলত ১৯৭০ সালের পর থেকেই খুব ছোট আকারের এসএসডি তৈরি শুরু হয়। খুব উচ্চমূল্যের জন্য তখন এর ব্যবহার খুবই সীমিত ছিল। প্রায় ১৪-১৫ বছর পর ১৯৯৪-৯৫ সালের দিকে কিছুটা বেশি ডাটা ধারণে সক্ষম এসএসডি তৈরি করা সম্ভব হয়। এরপর আরো ১৪-১৫ বছরে নানা পরিবর্তন-পরিবর্ধনের পর তৈরি হলো আধুনিক এসএসডি। এ আধুনিক এসএসডিগুলোর ডাটা ধারণক্ষমতা আগের মেগাবাইট ধারণক্ষমতা থেকে বেড়ে গিগাবাইটে পৌঁছাল। আধুনিক VLSI-এর সুবাদে যদিও বড় আকারের এসএসডি তৈরি সম্ভব হচ্ছে। কিন্তু এর দাম খুব কমানো যাচ্ছে না। কারণ এসএসডি তৈরিতে যে ফ্ল্যাশ মেমরি ব্যবহার হয় তার উচ্চমূল্য। গত এক বছরে এসএসডির বাজার বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এসএসডি ব্যবহারে এইচডিডির থেকে বাড়তি অনেক সুবিধা পাওয়া যায়। তথাপি এসএসডির উচ্চমূল্যের কারণে এর প্রত্যাশিত বাজার পাওয়া যাচ্ছে না।
দামে সাশ্রয়ী করা ও ব্যবহারকারীদের এসএসডির সব সুবিধা দিতে তৈরি করা হলো হাইব্রিড হার্ডডিস্ক ড্রাইভ। হাইব্রিড হার্ডডিস্ক ড্রাইভের প্রধান অংশ দুটি। একটি পুরনো মেকানিক্যাল হার্ডড্রাইভ ও অন্যটি সলিড স্টেট ড্রাইভ। এ দুটি অংশ একত্রে যুক্ত করেই তৈরি করা হয়েছে হাইব্রিড হার্ডডিস্ক ড্রাইভ।
যদিও মেকানিক্যাল হার্ডড্রাইভের নানা সমস্যার কথা অনেকেরই জানা। অনেকেই ভাবছেন পুরনো সমস্যাগুলো হাইব্রিড হার্ডড্রাইভে থাকলে লাভ কিছুই হবে না। কিন্তু হাইব্রিড হার্ডড্রাইভে এইচডিডিকে এমনভাবে ব্যবহার করা হয়েছে, যাকে অপশনাল সাবজেক্টের সাথে তুলনা করা যায়। অর্থাৎ এ এইচডিডি থেকে শুধু বাড়তি সুবিধা যোগ করা হয়েছে মূল হাইব্রিড হার্ডডিস্ক ড্রাইভে।
একটি হাইব্রিড হার্ডডিস্ক ড্রাইভে সলিড স্টেট ড্রাইভ অংশ কাজ করে প্রাইমারি হার্ডডিস্ক হিসেবে। আর এইচডিডি কাজ করে সেকেন্ডারি হার্ডডিস্ক হিসেবে। মূল প্রাইমারি ডিস্ক হিসেবে এসএসডি থাকায় হার্ডড্রাইভের বেশিরভাগ কাজ পরিচালনা করে এসএসডি। আর এ কারণেই এসএসডির সব সুবিধা এইচএইচডিতে পাওয়া যায়।
মেকানিক্যাল হার্ডড্রাইভের তুলনায় হাইব্রিড ড্রাইভে যে সুবিধাগুলো বেশি পাওয়া যায়-
০১. অধিক গতিসম্পন্ন ডাটা আদান-প্রদান সুবিধা। ৫৪০০ আরপিএসের একটি মেকানিক্যাল ড্রাইভের ডাটা রিড/রাইট ৮০ মে.বা./সে.। অন্যদিকে ১২০ গিগাবাইটের একটি এসএসডির ডাটা রিড করে ১০০০ মে.বা./সে. এবং ডাটা রাইট করে ৮০০ মে.বা/সে.। আর ৫০০ গিগাবাইটের একটি এইচএইচডি ড্রাইভের ডাটা রিড প্রায় ৭০০ মে.বা./সে. এবং ডাটা রাইট ৮০০ মে.বা./সে.। ফলে দেখা যাচ্ছে এসএসডি ও এইচএইচডির ডাটা রিড/রাইট করার ক্ষমতা প্রায় একই। অনেক দ্রুতগতিতে ডাটা রিড/রাইট করতে পারে বলে যেকোনো বড় ধরনের অ্যাপ্লিকেশনকে দ্রুত মেমরিতে লোড করতে পারে। চিত্র-১-এর একটি পরীক্ষা থেকে দেখা যাচ্ছে এইচএইচডির মেশিন বুটিং টাইম ২০ সেকেন্ড, সেখানে এইচএইচডির ৪০ সেকেন্ড। আর মাল্টিটাস্কিং করার ক্ষেত্রে এইচএইচডি যেখানে ১০ সেকেন্ড সময় নেয়, এইচডিডি সেখানে সময় নেয় প্রায় ৫০ সেকেন্ড। আর বড় বড় গেমের ক্ষেত্রে এইচএইচডি নেয় প্রায় ৪০ সেকেন্ড সময়, এইচডিডি সময় নেয় প্রায় ৭০ সেকেন্ড।
হাইব্রিড হার্ডড্রাইভে অপারেটিং সিস্টেম জমা থাকে এর এসএসডি অংশে। অপারেটিং সিস্টেম যে ভার্চুয়াল মেমরি তৈরি করে তা তৈরি হয় এই এসএসডি অংশে। কোনো অ্যাপ্লিকেশন যদি এর এইচডিডি অংশে থাকে, তবে সম্পূর্ণ অ্যাপ্লিকেশন এসএসডির ভার্চুয়াল মেমরিতে জমা করা হয়। তারপর সেই অ্যাপ্লিকেশন নিয়ে কাজ করে কমপিউটার। ফলে ডাটা রিড/রাইট করার পর এইচডিডি আবার সুপ্ত অবস্থায় চলে যায়। অর্থাৎ এ অবস্থায় এইচডিডির ডিস্কগুলো ঘুরে না। এতে দেখা যায়, বেশিরভাগ কাজেই এইচডিডির ডিস্কগুলোকে সর্বক্ষণ চলতে হয় না। আবার এইচডিডি অংশে ডাটা জমা করার প্রক্রিয়াও একটু ভিন্ন। কমপিউটারের এ অংশে যে ডাটা জমা রাখা হবে সে ডাটাগুলো প্রথমে জমা হতে থাকে এসএসডির একটি অংশে। এভাবে জমা করতে থাকা ডাটা এসএসডির মেমরি পূর্ণ করে ফেললে তখন একত্রে সব ডাটা এইচডিডিতে ট্রান্সফার করে। এ প্রক্রিয়ায় কাজ করার ফলে প্রচুর বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়। অন্যদিকে এসএসডি চলার জন্য খুবই নিম্ন বিদ্যুৎ (১.৭-২ ভোল্ট) দরকার হয়। এর ফলে ডেস্কটপ ছাড়াও ল্যাপটপ/নোটবুকের ব্যাটারির ব্যাকআপ সাশ্রয় হয়। এতে করে চার ঘণ্টা ব্যাকআপ দেয় এমন ল্যাপটপ আরো অতিরিক্ত ত্রিশ মিনিটের বেশি ব্যবহার করা যাবে। অনবরত মেকানিক্যাল হার্ডডিস্ক না চলার কারণে এইচএইচডির তাপ তৈরি কম হয়। এতে করে হাইব্রিড হার্ডড্রাইভের আয়ু আরো বাড়বে।
এইচডিডির দাম নির্ভর করে মূলত এতে কত আয়তনের সলিড স্টেট ড্রাইভ যুক্ত আছে তার ওপর। দামে সাশ্রয়ী করার জন্য সাধারণত এসএসডির আয়তন কম থাকে। ১২০ গিগাবাইট আয়তনের একটি এসএসডির দাম প্রায় ১৪০০০ টাকা। সেখানে ১ টেরার বেশি আয়তনের এইচএইচডির দাম ৩৫০০০ টাকা। এ ধরনের এইচএইচডিতেও ১০০ গিগাবাইটের এসএসডি যুক্ত থাকে।
হাইব্রিড হার্ডড্রাইভ কেনার ক্ষেত্রে প্রধানত খেয়াল রাখতে হবে, এতে যুক্ত এসএসডির মেমরির বিষয়টি। যদিও বেশিরভাগ কোম্পানি এসএসডি তৈরিতে SLC ন্যান্ড ফ্ল্যাশ ব্যবহার করছে। তথাপি কিছু কোম্পানি SLC-র পরিবর্তে MLC ব্যবহার করছে। (SLC, MLC সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছিল জানুয়ারি ২০১১ সংখ্যায়)। SLC, MLC থেকে দ্রুতগতিতে কাজ করে ও বিদ্যুৎসাশ্রয়ী। তাই MLC থেকে SLC প্রক্রিয়ায় কাজ করে এমন এসএসডি ভালো। চিত্র-২-এ দেখা যাচ্ছে ৬টি চিপ রয়েছে। এ চিপগুলো স্যামসাং কোম্পানির তৈরি করা। স্যামসাং লেখার নিচে যে নাম্বার SK9HCGZ8U5M লিখে গুগলে সার্চ করলে এ চিপের অভ্যন্তরীণগত কার্যপ্রণালী পেয়ে যাবেন, যা থেকে অনায়াসে জানা যাবে এটি SLC/MLCযুক্ত চিপ। এই সহজ উপায়ে ইন্টারনেটের মাধ্যমে অন্য কোনো কোম্পানির চিপের ব্যাপারেও জানতে পারবেন।
এরপর দেখা দরকার এসএসডিতে ব্যবহার হওয়া চিপগুলোর IOPS (ইনপুট আউটপুট অপারেশন পার সেকেন্ড) কত। IOPS-কে তুলনা করা হয় এইচডিডির ঘূর্ণন সংখ্যার সাথে। এইচডিডির ঘূর্ণন সংখ্যা বা আরপিএম যত বেশি হয়, তত এটি দ্রুতগতিতে ডাটা আদান-প্রদান করতে পারে। এসএসডির IOPS যত বেশি হয় এটি তত বেশি দ্রুত ডাটা আদান-প্রদান করতে পারে। যে এইচএইচডিগুলো বাজারে আসছে তাদের বেশিরভাগের IOPS ১৫০০০।
বলা দরকার, যদিও এখনকার এসএসডি বা এইচএইচডিতে ব্যবহার হওয়া এসএসডির মেমরিগুলো কিছুটা সিল্ডেড। অর্থাৎ চালু অবস্থায় আপনি হাত দিয়ে এর মেমরিগুলো ধরলে আপনার শরীরের স্ট্যাটিক্যাল ইলেকট্রিসিটি এর ক্ষতি করতে পারবে না। তবে বারবার হাত দিয়ে স্পর্শ করলে মেমরিগুলো দুর্বল হতে থাকবে। তাই চালু অবস্থায় এর মেমরি হাত দিয়ে স্পর্শ না করাই ভালো।
কজ ওয়েব
ফিডব্যাক : minitohid@yahoo.com