কমপিউটার জগৎ ট্রাবলশূটার টিম
কমপিউটার ব্যবহারকারীদের নিত্যনতুন সমস্যায় পড়তে হয়। কিন্তু আমাদের এই নতুন বিভাগ ‘পিসির ঝুটঝামেলা’তে পিসির হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার, নেটওয়ার্ক, ভাইরাসজনিত সমস্যা, ভিডিও গেম সম্পর্কিত সমস্যা, পিসি কেনার ব্যাপারে পরামর্শ ইত্যাদিসহ যাবতীয় সব ধরনের কমপিউটারের সমস্যার সমাধান দেয়া হবে। আপনাদের সমস্যাগুলো আমাদের এই বিভাগের মেইল অ্যাড্রেসে (jhutjhamela@comjagat.com) বা কমপিউটার জগৎ, কক্ষ নম্বর-১১, বিসিএস কমপিউটার সিটি, রোকেয়া সরণি, আগারগাঁও, ঢাকা-১২০৭ ঠিকানায় চিঠি লিখে জানান প্রতিমাসের ২০ তারিখের মধ্যে। উলে¬খ্য, মেইলের মাধ্যমে পাঠানো সমস্যার সমাধান যত দ্রুত সম্ভব মেইলের মাধ্যমেই জানিয়ে দেয়া হবে এবং সেখান থেকে বাছাই করা কিছু সমস্যা ও তার সমাধান প্রেরকের নাম- ঠিকানাসহ ম্যাগাজিনের এই বিভাগে ছাপানো হবে। সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যারের সমস্যা পাঠানোর সময় পিসির কনফিগারেশন, অপারেটিং সিস্টেম, পিসিতে ব্যবহার হওয়া অ্যান্টিভাইরাস প্রোগ্রাম, পিসি কতদিন আগে কেনা এবং পিসির ওয়ারেন্টি এখনো আছে কি না- এসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করার অনুরোধ জানানো হচ্ছে।
সমস্যা : ল্যাপটপে কি প্রোগ্রামিংয়ের সব ধরনের কাজ করা যায়? এতে কি ল্যাপটপের ওপর চাপ পড়বে?
-গোলাম সারোয়ার
সমাধান :
প্রোগ্রামিংয়ের জন্য আপনি কি ধরনের সফটওয়্যার ব্যবহার করবেন তার ওপর নির্ভর করবে ল্যাপটপের ওপর চাপ পড়বে কি পড়বে না। ল্যাপটপের কনফিগারেশনের ওপরও তা অনেকাংশে নির্ভরশীল। আপনি যে প্রোগ্রামিং টুল ব্যবহার করবেন তার জন্য কি ধরনের সিস্টেম প্রয়োজন পড়ে, তার সাথে আপনার ল্যাপটপের কনফিগারেশন মিলে গেলে তেমন একটা চাপ পড়বে না। হাই-লেভেল প্রোগ্রামিং টুল ব্যবহার করলে ল্যাপটপের সাথে ল্যাপটপ কুলার ব্যবহার করতে পারেন। মোটামুটি কনফিগারেশনের ল্যাপটপ হলেই আপনাকে এ ব্যাপারে তেমন একটা চিন্তা করতে হবে না। ডেস্কটপ পিসির চেয়ে ল্যাপটপ অনেক যত্নের সাথে ব্যবহার করতে হয়। তাই ল্যাপটপে বেশি চাপ পড়ে এমন কোনো প্রোগ্রাম চালানো উচিত নয়। আপনি কোন প্রোগ্রামিং সফটওয়্যার ব্যবহার করতে চাইছেন এবং যে ল্যাপটপে তা চালাতে চাচ্ছেন তার কনফিগারেশন জানালে আপনার প্রশ্নের জবাব আরো স্পষ্টভাবে দেয়া সম্ভব হতো। তাই মেইলে আরো বিস্তারিত লেখার জন্য অনুরোধ রইলো।
সমস্যা : আমি বাসায় ব্যবহারের জন্য একটি পিসি কিনতে চাচ্ছি। কিন্তু ল্যাপটপ কিনবো না ডেস্কটপ কিনবো সেটি ঠিক করতে পারছি না। ডেস্কটপ পিসি কিনলে কি ধরনের কনফিগারেশনের পিসি কিনবো অথবা ল্যাপটপ কিনলে কি ধরনের কনফিগারেশনের কিনবো? কোন অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করবো? বিশেষ করে আমি ইন্টারনেটের কাজের জন্য পিসি কিনতে চাচ্ছি।
-লিটন, চট্টগ্রাম
সমাধান :
আপনি কি কাজের জন্য পিসি ব্যবহার করবেন তা উল্লেখ করেননি। শুধু উল্লেখ করেছেন বাসার জন্য কমপিউটার কিনবেন। এখন বিষয় হচ্ছে, বাসায় তা শুধু আপনি ব্যবহার করবেন নাকি আরো কেউ করবে? আপনি কি সাধারণ ওয়ার্ড প্রসেসিং ধরনের কাজ করার জন্য নাকি প্রেজেন্টেশন বা রিপোর্ট বানানোর জন্য পিসি ব্যবহার করবেন, নাকি গেম খেলার জন্য পিসি কিনবেন? যদি গেমার হন, তবে কোন মাপের গেমার? সাধারণ, মাঝারি নাকি হার্ডকোর? পিসি আপনার বাইরে নিয়ে কাজ করার প্রয়োজন পড়বে কি? এলাকায় বিদ্যুতের সমস্যা কেমন? আরো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পিসি কেনার বাজেট উল্লেখ করেননি। কমপিউটার কেনার আগে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি বিষয় হলো- কি কাজের জন্য এবং বাজেট কত হবে তা নির্ধারণ করা। আপনি দুটি কাজের একটিও ঠিকমতো নির্ধারণ করতে পারেননি। তাই আপনি সমস্যায় পড়েছেন। সে যাই হোক, ঘরে ব্যবহার করার জন্য পিসি কিনবেন যাতে আপনি ইন্টারনেটের কাজ করতে চান, শুধু এ কথার আলোকে এখানে হোম পিসির কনফিগারেশন তুলে ধরা হচ্ছে-
হোম পিসির কনফিগারেশন
প্রসেসর : পেন্টিয়াম ডুয়াল কোর বা কোর টু ডুয়ো/অ্যাথলন ২ এক্স২ বা অ্যাথলন ২ এক্স৪।
মাদারবোর্ড : Intel G41, Intel G43, Intel P43 চিপসেটযুক্ত (Socket LGA 775)/এএমডি ৭০০ বা ৮০০ সিরিজ চিপসেটযুক্ত (Socket AM3)।
র্যা ম : ১ বা ২ গিগাবাইট ডিডিআর৩ (১৩৩ মেগাহার্টজ বাস স্পিডযুক্ত)।
হার্ডডিস্ক : ৩২০ বা ৫০০ গিগাবাইট।
মনিটর : ১৭ বা ১৯ ইঞ্চি ওয়াইড স্ক্রিন/সেমি ওয়াইড এলইডি এলসিডি।
অপটিক্যাল ড্রাইভ : ডিভিডি রাইটার।
স্পিকার : ভালোমানের ২.১ বা ৪.১ সাবউফার।
ক্যাসিং : ভালোমানের এটিএক্স।
কীবোর্ড : মাল্টিমিডিয়া। মাউস : অপটিক্যাল।
অপারেটিং সিস্টেম : উইন্ডোজ এক্সপি, ভিসতা বা সেভেন।
মূল্য : ৩০-৩২ হাজার টাকা।
আপনার এলাকায় লোডশেডিং ঘন ঘন হয়ে থাকলে ল্যাপটপ ব্যবহার করতে পারেন এবং সেই সাথে ওয়াইম্যাক্স বা ওয়্যারলেস ইন্টারনেট কানেকশনের সাহায্য নিতে পারেন নির্দিষ্ট কোম্পানির মডেম কিনে। ল্যাপটপের ক্ষেত্রে ডেস্কটপ কনফিগারেশনের মতো কিনতে গেলে খরচ কিছুটা বেশি পড়বে। যদি মনে হয় নেট ব্রাউজিং ও ইন্টারনেটভিত্তিক অন্যান্য তেমন কোনো কাজ আপনি করবেন না, তবে ২০-২৫ হাজার টাকার মধ্যে কিনতে পারেন নেটবুক। তবে মনে রাখতে হবে, নেটবুকগুলোতে কোনো অপটিক্যাল ড্রাইভ থাকে না এবং কিছু কিছু নেটবুকে বিল্ট-ইন মডেম থাকে।
সমস্যা : আমার ল্যাপটপের অপারেটিং সিস্টেম হচ্ছে ভিসতা জেনুইন। যখন আমি ল্যাপটপে এক বা একাধিক প্রোগ্রাম একসাথে চালু করি তখন প্রোগ্রাম হ্যাং করে এবং দেখায় Not Responding। কিভাবে আমি এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারি?
-হানিফ, চট্টগ্রাম
সমাধান :
ল্যাপটপের এ ধরনের সমস্যার ব্যাপারে কিছু বলার আগে তার কনফিগারেশন জানাটা বেশ জরুরি। ভিসতা জেনুইন লেখা থাকলেই যে জেনুইন হবে তা ঠিক নয়। কারণ ইন্টারনেটে এখন অনেক ছোট প্রোগ্রাম বা টুল পাওয়া যায়, যা দিয়ে উইন্ডোজকে জেনুইন হিসেবে উপস্থাপন করা সম্ভব। জেনুইন ভিসতার ডিভিডি কিনে তা যদি ইনস্টল করে থাকেন তবে সে কথা ভিন্ন। প্রোগ্রাম রান করার সময় অনেক কারণে এ ধরনের মেসেজ দেখাতে পারে। তাই আপনার ল্যাপটপ সম্পর্কে সবকিছু না জেনে উত্তর দেয়াটা ঠিক হবে না। তবে কিছু উপায় বলে দেয়া যায় যাতে এ সমস্যা কিছুটা লাঘব হয়। আপনার পিসিতে অপ্রয়োজনীয় সফটওয়্যার বেশি থাকলে তা আনইনস্টল করে দিন। কোনো থিম বা ডেস্কটপ ইউটিলিটি সফটওয়্যার থাকলে তাও বাদ দিয়ে দিন। ল্যাপটপের কনফিগারেশন অনুযায়ী সফটওয়্যার ব্যবহার করুন এবং উইন্ডোজ আপডেট অপশন অন করে রাখুন, এতে ভিসতায় থাকা ছোটখাটো সমস্যাগুলো দূর হয়ে যাবে। ভাইরাসের আক্রমণের জন্যও এমনটা হতে পারে। তাই ভালোমানের অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহার করে দেখতে পারেন।
সমস্যা :
আমি কিভাবে ফ্ল্যাশ গেম তৈরি করতে পারবো? ফ্ল্যাশ গেম তৈরি করার জন্য আমাকে কি করতে হবে? আমি কোথায় ফ্ল্যাশ গেম তৈরি করা শিখবো?
-অর্ণব
সমাধান :
পুরনো ম্যাক্রোমিডিয়া বা নতুন অ্যাডোবি ফ্ল্যাশ গেম বানানোর জন্য প্রথমে ফ্ল্যাশের প্রাথমিক প্রশিক্ষণ নিতে হবে এবং ফ্ল্যাশের টুলগুলোর সাথে ভালোভাবে পরিচিত হতে হবে। এরপর ইন্টারনেট বা ম্যাগাজিন থেকে প্রাপ্ত ফ্ল্যাশ গেম মেকিং টিউটরিয়াল দেখে গেম বানাতে পারবেন। ফ্ল্যাশ গেম বানানোর কাজ বেশ মজার, তবে ধৈর্যের সাথে তা করতে হবে, তা না হলে সফলতা পেতে কষ্ট হবে। বাজারে ফ্ল্যাশ শেখার জন্য বেশ কিছু মাল্টিমিডিয়া ডিস্ক ও বই পাওয়া যায়, তা কিনে বাসায় বসে নিজে নিজে শিখে নিতে পারেন। তা করতে না পারলে কোনো কমপিউটার ট্রেনিং সেন্টারের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন যেখানে ফ্ল্যাশ অ্যানিমেশন শেখানো হয়।
সমস্যা : আমার কমপিউটারের ফ্যানে কিছুদিন ধরে সমস্যা হচ্ছে। কমপিউটার স্টার্ট করার সাথে সাথে ফ্যানে এমন আওয়াজ হচ্ছে যেনো কিছু আটকে আছে। পিসি অন করার সময় ৩-৪ বার ইউপিএস অফ করতে হয়। আমি কেসিং খুলে চালালেও একই সমস্যা হচ্ছে। অথচ কোনো কিছু আটকে থাকতে দেখিনি।
-স্বপ্নাশিস ভট্টাচার্য, ঢাকা
সমাধান :
কমপিউটারে সাধারণত দুটি ফ্যান থাকে। একটি প্রসেসরের কুলিং ফ্যান এবং আরেকটি কেসিংয়ের সাথে যুক্ত থাকা কুলিং ফ্যান। অনেক সময় ফ্যানে সমস্যা থাকলে তা ঘোরা শুরু করার আগে একটু আওয়াজ করতে পারে, তবে চালু হবার পর আর কোনো শব্দ করে না। আপনার পিসির ফ্যান চলার সময় শব্দ করে কিনা তা উল্লেখ করেননি। ফ্যানের হুইলে সামান্য একটু লুব্রিকেটেড অয়েল দিয়ে দেখতে পারেন। যদি আওয়াজ প্রসেসরের ওপরে থাকা কুলিং ফ্যানে হয়ে থাকে, তবে তার নিচের হিটসিঙ্কটি খুলে তার ভেতরে থাকা ময়লা পরিষ্কার করতে হবে। প্রতিমাসে অন্তত দু’বার কেসিংয়ের ভেতরের অংশ পরিষ্কার করা এবং ২ মাসে একবার প্রসেসরের হিটসিঙ্কটি পরিষ্কার করা উচিত। ইউপিএস বারবার অন-অফ করাটা ঠিক নয়, এতে পিসির ক্ষতি হতে পারে।
কজ ওয়েব
ফিডব্যাক : jhutjhamela@comjagat.com