• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: মো: জাকারিয়া চৌধুরী
মোট লেখা:৩৫
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১১ - মার্চ
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
ফ্রিল্যান্স
তথ্যসূত্র:
ঘরে বসে ‍আয়
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন

যারা আউটসোর্সিংয়ের সাথে জড়িত তারা নিশ্চয়ই সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন বা SEO শব্দটার সাথে পরিচিত। বিভিন্ন আউটসোর্সিং মার্কেটপ্লেসে প্রতিদিনই এধরনের কাজ পাওয়া যায়। বাংলাদেশী অনেক ফ্রিল্যান্সার রয়েছেন যারা অত্যন্ত সফলতার সাথে এ কাজগুলো করছেন। তবে অনেকের কাছে বিষয়টি মাঝেমধ্যে বোধগম্য হয় না, ফলে আগ্রহ থাকার পরও কিভাবে শুরু করতে হবে তা বুঝে উঠতে পারেন না। সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন একটি বিশাল ক্ষেত্র। এর সাথে অনেক ধরনের বিষয় জড়িত। এস.ই.ও কাজের খুঁটিনাটি নিয়ে আমাদের ধারাবাহিক লেখার আজকে রয়েছে বিষয়টির ওপর একটি সামগ্রিক পর্যালোচনা এবং এ ধরনের কাজের সাথে জড়িত একজন সফল ফ্রিল্যান্সারের সাক্ষাৎকার।



সার্চ ইঞ্জিন :

প্রথমেই দেখা যাক, সার্চ ইঞ্জিন বলতে কি বুঝায়। সার্চ ইঞ্জিন হচ্ছে এক ধরনের কমপিউটার প্রোগ্রাম যা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন তথ্যকে তার নিজের ডাটাবেজে সংরক্ষণ করে রাখে এবং পরে ব্যবহারকারীর চাহিদা অনুসারে ওয়েবসাইটে প্রদর্শন করে। সার্চ ইঞ্জিনগুলো এক ধরনের রোবট প্রোগ্রামের সাহায্যে নিরলসভাবে বিভিন্ন ওয়েবসাইটের তথ্য সংরক্ষণ করতে থাকে যা ইনডেক্সিং (Indexing) নামে পরিচিত। উইকিপিডিয়া থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় গুগল (৯১%), তার পরবর্তী অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে ইয়াহু (৪%) এবং মাইক্রোসফটের বিং (৩%)।

সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন :

সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (SEO) হচ্ছে এমন এক ধরনের পদ্ধতি যার মাধ্যমে একটি ওয়েবসাইটকে সার্চ ইঞ্জিনের কাছে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলা, যাতে একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের সার্চ রেজাল্টে ওয়েবসাইটি অন্য সাইটকে পেছনে ফেলে সবার আগে প্রদর্শিত হতে পারে। এই ধরনের সার্চ রেজাল্টকে Organic বা Natural সার্চ রেজাল্ট বলা হয়। সার্চ রেজাল্টের প্রথম পৃষ্ঠায় দশটি ওয়েবসাইটের মধ্যে নিজের ওয়েবসাইটকে নিয়ে আসাই সবার লক্ষ্য থাকে। এর কারণ হিসেবে দেখা যায় ব্যবহারকারীরা সাধারণত শীর্ষ দশের মধ্যে তার কাঙ্ক্ষিত ওয়েবসাইটকে না পেলে দ্বিতীয় পাতায় না গিয়ে অন্য কোনো শব্দ ব্যবহার করে আগের সার্চ করেন। শীর্ষ দশে থাকার মানে হচ্ছে ওয়েবসাইটে বেশি সংখ্যক ভিজিটর পাওয়া আর বেশি সংখ্যক ভিজিটর মানে হচ্ছে বেশি আয় করা। এজন্য সবাই মরিয়া হয়ে নিজের ওয়েবসাইটকে সার্চ ইঞ্জিনের জন্য উপযুক্ত করে তুলেন।



সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনের সাথে অনেক বিষয় জড়িত। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। এক্ষেত্রে প্রথমেই সাইটের জন্য এক বা একাধিক নির্দিষ্ট কিওয়ার্ড (Keyword) বা শব্দগুচ্ছ বাছাই করতে হয়। কিওয়ার্ড বাছাই করার আগে সময় নিয়ে গবেষণা করা প্রয়োজন। এমন একটি কিওয়ার্ড বাছাই করতে হয় যাতে এর প্রতিদ্বন্দ্বী কম থাকে। ধরা যাক, অনলাইনে গেম খেলার একটি সাইটের জন্য যদি ‘Play Online Game’ কিওয়ার্ড বাছাই করা হয়, তাহলে এই শব্দ দিয়ে গুগলে সার্চ করলে ১.৬ কোটি সাইটের ফলাফল হাজির হবে। তাদের মধ্যে হাজারো জনপ্রিয় সাইট পাওয়া যাবে যেগুলোকে অতিক্রম করে প্রথম পাতায় আসাটা প্রায় অসম্ভব হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে কিওয়ার্ডের সাথে আরো কয়েকটি শব্দ যদি যোগ করা যায়, তাহলে দেখা যাবে প্রতিদ্বন্দ্বী ওয়েবসাইটের সংখ্যা কমে আসবে। কিওয়ার্ড নিয়ে গবেষণার জন্য সবচেয়ে ভালো হচ্ছে গুগল অ্যাডওয়ার্ডের কিওয়ার্ড টুলটি- https://adwords.google.co.uk/select/KeywordToolExternal ।

অন পেজ অপটিমাইজেশন :

সাইটের জন্য সঠিক কিওয়ার্ড বাছাইয়ের পর এর বিভিন্ন অংশে এই কিওয়ার্ডটির প্রতিফলন থাকতে হয়। প্রথমত, ওয়েবসাইটের ডোমেইন নামে যদি বাছাই করা কিওয়ার্ডটি থাকে, তাহলে সবচেয়ে ভালো। দ্বিতীয়ত, HTML-এর title ট্যাগে কিওয়ার্ড থাকা উচিত। সাইটের title ট্যাগটি ঠিকভাবে সাজানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এই অংশটি একজন ব্যবহারকারী এবং সার্চ ইঞ্জিনকে সেই পৃষ্ঠায় কি তথ্য রয়েছে তা নির্দেশ করে। তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ওয়েবসাইটের description meta ট্যাগ। এর মাধ্যমে ওই পৃষ্ঠার সারমর্ম লেখা হয়, যা সার্চ ইঞ্জিনকে সঠিকভাবে সেই পৃষ্ঠা ইনডেক্সিংয়ে সহায়তা করে। এ ধরনের পদ্ধতিকে On Page Optimization বলা হয়, যা নিয়ে ভবিষ্যতে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

পেজর্যা ঙ্ক :

PageRank বা সংক্ষেপে PR হচ্ছে গুগলে ব্যবহার হওয়া এক ধরনের লিঙ্ক অ্যানালাইসিস অ্যালগরিদম, যা দিয়ে একটি ওয়েবসাইট কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা নির্ধারণ করা হয় এবং সার্চের ফলাফলে এটিকে প্রাধান্য দেয়া হয়। গুগলের কাছে যে ওয়েবসাইট যতটা গুরুত্বপূর্ণ তার পেজর্যাএঙ্ক তত বেশি হয়ে থাকে এবং সার্চের ফলাফলে সেটি তত সামনের দিকে থাকার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। সর্বোচ্চ পেজর্যােঙ্ক হচ্ছে ১০ এবং সর্বনিম্ন পেজর্যাসঙ্ক হচ্ছে ০। গুগল টুলবারের সাহায্যে একটি সাইটের পেজর্যা ঙ্ক জানা যায়। টুলবারটি এই সাইট থেকে ডাউনলোড করা যাবে- http://toolbar.google.com।

ব্যাকলিঙ্ক :

ব্যাকলিঙ্ক (BackLink) লিঙ্ক হচ্ছে একটি সাইটের পেজর্যা ঙ্ক বাড়ানোর মূল হাতিয়ার। একটি ওয়েবসাইটের কোনো পৃষ্ঠায় যদি অন্য একটি সাইটের লিঙ্ক থাকে, তাহলে দ্বিতীয় সাইটের জন্য এই লিঙ্ককে বলা হয় ব্যাকলিঙ্ক বা ইনকামিং লিঙ্ক। আর প্রথম সাইটের জন্য এই লিঙ্কটি হচ্ছে আউটগোয়িং লিঙ্ক, অর্থাৎ এই লিংকে ক্লিক করে ব্যবহারকারী দ্বিতীয় সাইটে চলে যাবে। এভাবে একটি ওয়েবসাইটের যত বেশি ব্যাকলিঙ্ক থাকবে সেই ওয়েবসাইটে ব্যবহারকারী আসার প্রবণতা বেড়ে যাবে। পাশাপাশি সার্চ ইঞ্জিনের রোবট প্রোগ্রাম সেই সাইটকে খুব সহজেই খুজে পাবে। ব্যাকলিঙ্ক বাড়ানোর অনেক পদ্ধতি রয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি পদ্ধতি হচ্ছে-

* লিঙ্ক বিনিময় :
এটি হচ্ছে ভালো পেজর্যানঙ্কের বিভিন্ন ওয়েবসাইটের সাথে নিজের ওয়েবসইটের লিঙ্ক বিনিময়, অর্থাৎ অন্য ওয়েবসাইটের লিঙ্ক নিজের সাইটে যোগ করা এবং সেই সাইটে নিজের ওয়েবসাইটের লিঙ্ক যোগ করানো। এজন্য সাধারণত বিভিন্ন ওয়েবসাইটের অ্যাডমিনিস্ট্রেটরের সাথে যোগাযোগ করে তাদেরকে লিঙ্ক বিনিময়ের প্রস্তাব জানানো হয়। আবার লিঙ্ক দেয়া-নেয়ার জন্য বিভিন্ন ওয়েবসাইট রয়েছে যেখানে লিঙ্ক বিনিময়ে আগ্রহী ওয়েবসাইটের ঠিকানা পাওয়া যায়।

* ফোরামে পোস্ট করা :
এই পদ্ধতিতে প্রথমে একটি ভালো পেজর্যামঙ্কের ফোরামের Signature এ নিজের ওয়েবসাইটের লিঙ্ক যোগ করতে হয়। তারপর সেই ফোরামে নতুন কোন পোস্ট করলে বা অন্যের পোস্টে মন্তব্য দিলে লিঙ্কটি সেই পৃষ্ঠায় প্রদর্শিত হয়।

* আর্টিকেল জমা দেয়া:
ইন্টারনেটে বিভিন্ন ওয়েবসাইট রয়েছে যেখানে নিজের সাইটের কোন লেখা সেই সাইটগুলোতে জমা দেয়া যায় এবং সেই লেখার মধ্যে প্রয়োজন অনুসারে নিজের সাইটের লিঙ্ক দিয়ে ব্যাকলিঙ্ক বাড়ানো যায়।

* ডাইরেক্টরিতে জমা দেয়া:
বিভিন্ন ওয়েব ডাইরেক্টরি রয়েছে যেখানে বিনামূল্যে নিজের সাইটের তথ্য এবং লিঙ্ক জমা দেয়া যায়।

* অন্যের ব্লগে মন্তব্য দেয়া:
অন্যের ব্লগে মন্তব্য দিয়ে এবং সাথে নিজের সাইটের লিঙ্ক যুক্ত করেও ব্যাকলিঙ্ক বাড়ানো যায়।



আয়ের উপায় :

SEO-এর মাধ্যমে আয়ের বিভিন্ন উপায় রয়েছে। আপনি যদি নিজের সাইটের জন্য SEO করে থাকেন এবং এর মাধ্যমে সাইটে অধিক সংখ্যক ভিজিটর নিয়ে আসতে পারেন, তাহলে নিঃসন্দেহে সাইটটি থেকে যেকোনো ধরনের সার্ভিস বা পণ্য বিক্রি করতে পারবেন। অনেকে আবার বিজ্ঞাপন থেকে আয় করেন। ইন্টারনেটে বিজ্ঞাপন থেকে আয়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় পদ্ধতি হচ্ছে Google Adsense। সাইটের মধ্যে গুগল অ্যাডসেন্সের কোড যোগ করলে এটি ওয়েবসাইটের তথ্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ বিজ্ঞাপন দেখায়। সেই বিজ্ঞাপনে কোনো ভিজিটর ক্লিক করলে সাইটির মালিক একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ আয় করেন। পরে চেকের মাধ্যমে সেই অর্থ তার কাছে পাঠানো হয়। বিজ্ঞাপনের পাশাপাশি আউটসোর্সিং মার্কেটপ্লেসগুলোতেও SEOভিত্তিক নানা কাজ পাওয়া যায়। কাজগুলোর মধ্যে রয়েছে কিওয়ার্ড রিসার্চ, ব্যাকলিঙ্ক জোগাড় করা, অন পেজ অপটিমাইজেশন, কনটেন্ট লেখা, এসইও কনসালট্যান্ট ইত্যাদি।

SEO শেখার ওয়েবসাইট :

SEO শেখার জন্য ইন্টারনেটে ইংরেজিতে অসংখ্য ওয়েবসাইট রয়েছে। বাংলায়ও অনেকে বিভিন্ন ব্লগ এবং ফোরামে SEO নিয়ে লিখে থাকেন। এর মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি সাইট হচ্ছে জিন্নাত উল হাসান নামে একজন সফল ওয়েবমাস্টারের ব্লগ। সাইটের ঠিকানা হচ্ছে http://bn.jinnatulhasan.com। সাইটটিতে সার্চ ইঞ্জিন, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন, ইন্টারনেট থেকে আয়ের কৌশল নিয়ে বিভিন্ন লেখা রয়েছে। এই সাইটে জিন্নাত উল হাসানের সাথে আরো কয়েকজন অতিথি লেখক নিয়মিতভাবে এসইও এবং আনুসাঙ্গিক বিষয় নিয়ে লিখে চলেছেন।

জিন্নাত উল হাসানের জন্ম নীলফামারী জেলায়। বাবা সরকারি চাকরিজীবী, মা গৃহিণী, ছোট ভাইবোন দুজনই ডাক্তার। রংপুর ক্যাডেট কলেজ থেকে এসএসসি এবং এইচএসসি এবং ঢাকায় ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি থেকে ব্যাচেলর ডিগ্রি পাস করেছেন। এরপর ২০০৫ সালে লন্ডন মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি থেকে মাস্টার্স শেষ করে বর্তমানে লন্ডনেই একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে এসইও কনসালট্যান্ট হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। কাজের ফাঁকে ফাঁকে ফ্রিল্যান্সিং, ব্লগিং এবং ফটোগ্রাফির সাথে যুক্ত রয়েছেন।

যোগাযোগ করেছিলাম জিন্নাত উল হাসানের সাথে। তিনি জানিয়েছেন তার সাফল্য এবং এসইও কাজ নিয়ে নিজের ভাবনার কথা।

সাক্ষাৎকার

জাকারিয়া : আপনি সাধারণত কোন ধরনের কাজ করে থাকেন?


জিন্নাত উল হাসান

হাসান :
আমি মূলত এসইও, ব্লগিং, ওয়ার্ডপ্রেস এবং সোশ্যাল মিডিয়া ইত্যাদি বিষয় নিয়ে কাজ করি। এছাড়া আমি অন্যদের ব্লগিং বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি।

জাকারিয়া : আপনার ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার সম্পর্কে বলুন?

হাসান : ঢাকায় ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনার সময় থেকেই একটি সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত ছিলাম। পড়াশোনা শেষে সেখানে যোগদান করি। লন্ডনে আসার পর এখানে প্রথমে ওয়েব ডেভেলপার এবং পরে এসইও কনসালট্যান্ট হিসেবে কাজ করছি। আমার কিছু ক্লায়েন্ট আছে যারা অনেক দিন থেকেই আমার সাথে যুক্ত। মূলত তাদের মাধ্যমেই নতুন নতুন ক্লায়েন্ট পাই। যেসব কাজ আমার নিজের পক্ষে করা সম্ভব সেগুলো নিজেই করি আর বাকিগুলো বাংলাদেশে আমার ব্লগের পাঠক যারা ফ্রিল্যান্সিংয়ের সাথে জড়িত তাদের কিংবা আমার বন্ধু প্রতিষ্ঠানে পাঠিয়ে দেই।

জাকারিয়া : এসইওর মাধ্যমে একটি সাইটকে জনপ্রিয় করা এবং এটি থেকে আয় করা অনেক সময়ের ব্যাপার, সেক্ষেত্রে আপনার অভিজ্ঞতা কি?

হাসান :
কোনো একটি সাইটকে এসইওর মাধ্যমে দুইভাবে জনপ্রিয় করা সম্ভব। একটিকে বলা হয় Organic SEO এবং অন্যদিকে বলা হয় Paid SEO। অর্গানিক এসইও করতে খরচ কম কিন্তু অধিক সময় লাগে। অন্যদিকে পেইড এসইওতে মুহূর্তের মধ্যে সাইটকে সবার আগে নেয়া সম্ভব। কিন্তু সেক্ষেত্রে প্রতিটি ক্লিকের জন্য সার্চ ইঞ্জিনকে টাকা দিতে হয়। এ কারণে পেইড এসইওতে বড় বাজেট প্রয়োজন।

ওয়েবসাইট কিংবা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের ধরন দেখে এসইওর ধরন ঠিক করা হয়। ব্লগ কিংবা এ ধরনের সাইটগুলোর জন্য অর্গানিক এসইও ব্যবহার করা হয়, কারণ এতে ব্যবসায়িক লাভের পরিমাণ কম। অন্যদিকে ই-কমার্স সাইটের ব্যবসায় প্রচুর প্রতিযোগিতা এবং ব্যবসায়ে লাভের পরিমাণও বেশি। তাই এক্ষেত্রে অর্গানিক এসইও করে লাভ নেই, কারণ এজন্য ওই ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানকে ২/৩ মাস অপেক্ষা করতে হবে। অন্যদিকে পেইড এসইও করে মুহূর্তেই প্রথমে গিয়ে কাস্টমার পাওয়া সম্ভব। ফলে ব্যবসার লাভ থেকে পেইড এসইওর জন্য বাজেটও বের হয়ে আসে।

আমি যখনই কোনো ক্লায়েন্টের সাইটকে জনপ্রিয় করার জন্য প্রজেক্ট হাতে নেই, তখনই তাদেরকে দুই ধরনের এসইও সম্পর্কে ধারণা দেই। পরে আমাদের দু’পক্ষের মতামত নিয়ে এসইওর ধরন ঠিক করি। অর্গানিক এসইওর ক্ষেত্রে কমপক্ষে দুই মাস সময় নিয়ে কাজ শুরু করি।

জাকারিয়া : এসইও কাজ করার জন্য কি কি জানতে হয় এবং এক্ষেত্রে কোন ধরনের যোগ্যতা থাকা প্রয়োজন?

হাসান :
এসইও করার জন্য প্রথমে কিছুটা হলেও ওয়েবসাইট ডিজাইন সম্পর্কে জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। কোন সাইটটি ভিজিটরদের জন্য সুবিধাজনক আর কোনটি সার্চ ইঞ্জিনের জন্য ভালো সেটা বোঝার ক্ষমতা থাকতে হবে। এরপর সার্চ ইঞ্জিনগুলো সম্বন্ধে ধারণা থাকতে হবে। একেকটি সার্চ ইঞ্জিন একেকভাবে কাজ করে। তাই সার্চ ইঞ্জিনভেদে এসইওর ধরনও ভিন্ন হয়ে থাকে। সার্চ ইঞ্জিনগুলো খুব দ্রুত তাদের অ্যালগরিদম পরিবর্তন করছে। এসইওর পদ্ধতিগুলোও আয়ত্তে আনতে হবে। Keyword reserach, Keyword Tools, প্রতিদ্বন্দ্বীদের SEO campaign ইত্যাদি নানান বিষয়ে গবেষণা করতে হয়।

এসইও করার জন্য কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার প্রয়োজন নেই। নিজের চেষ্টায় যেকেউ এই বিষয়টি শিখতে পারে, যেমন আমি শিখেছি এবং জীবিকা হিসেবে গ্রহণ করেছি। এজন্য আমি অন্য এসইও কনসাট্যান্টদের ব্লগ পড়েছি, এসইও ফোরামগুলোয় অংশগ্রহণ করেছি, এসইও ইভেন্টে যোগ দিয়েছি, বেশ কিছু বইও পড়েছি। দুঃখজনক হলেও সত্য, বাংলা ভাষায় এই বিষয়ে তেমন কোনো বই আমার চোখে পড়েনি। এসইও শিখতে ইন্টারনেটে থাকা তথ্যই যথেষ্ট। শুধু কষ্ট করে খুঁজে নিতে হয় আর অনুশীলন করতে হয়।

জাকারিয়া : আপনার ব্লগ সম্পর্কে বলুন।

হাসান :
বিভিন্ন বিষয়ে আমার বেশ কিছু ব্লগ আছে। ব্লগগুলোতে আমি ভিন্ন ভিন্ন বিজ্ঞাপনদাতার বিজ্ঞাপন বসাই। এসব বিজ্ঞাপন থেকেই প্রতিমাসে আমি ৩৫,০০০ থেকে ৪০,০০০ টাকা আয় করি।

তবে বাংলা ভাষায় আমার মাত্র একটি ব্লগ আছে, যেখানে আমি এসইও, ব্লগিং, ইন্টারনেটে আয়ের কৌশল নিয়ে আলোচনা করি। বাংলা ভাষায় একমাত্র আমার ব্লগটিই বোধহয় ধারাবাহিকভাবে এই বিষয়গুলোতে আলোচনা করে থাকে। ইন্টারনেটে আয়ের বিষয়টি নিয়ে আমাদের সবার মাঝে অনেক ভুল ধারণা আছে; যেমন অ্যাডে ক্লিক করে হাজার হাজার টাকা কামানো যায় কিংবা সার্ভে করে কোটিপতি হওয়া যায়। এই ধরনের কোনো উপায়ে টাকা আয় করা সম্ভব নয়, এতে অহেতুক মূল্যবান সময় নষ্ট হয়। বরং আউটসোর্সিং কিংবা ব্লগিং করে কিভাবে সম্মানজনকভাবে টাকা কামানো যায় সেই বিষয়ে আমি আমার ব্লগে আলোচনা করি। আমি কোনো ট্রিক বা শর্টকাট পথ শেখাই না, আমি শুধু বৈধভাবে আয়ের পথগুলো দেখিয়ে দেই। পাঠকেরা নিজেদের পথ খুঁজে নেন।

অত্যন্ত আনন্দের সাথে জানাচ্ছি, আমার দেখানো পথে নিজের মেধা এবং অধ্যবসায়ের মাধ্যমে আমার ব্লগের পাঠকেরা প্রতিমাসে ভালো অঙ্কের টাকা উপার্জন করছেন।

জাকারিয়া : কাজ করতে গিয়ে আপনার মজার কোনো অভিজ্ঞতা কি হয়েছে?

হাসান :
সাধারণত ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলো জানে না কিভাবে সার্চ ইঞ্জিনগুলোকে ব্যবহার করে কাস্টমার পেতে হয়। আবার এসইও সম্পর্কে প্রচুর ভুল ধারণা আছে। তারা মনে করেন, এসইও কনসালট্যান্টরা বোধ হয় এমনি এমনি মাসের শেষে পয়সা চায়। তাই প্রতিটি প্রজেক্ট শুরু করার আগে প্রথমেই কাস্টমারকে এই বিষয়গুলো শেখাতে হয়। অনেকটা বাচ্চাদেরকে A, B, C, D শেখানোর মতো- গুগল কি, গুগল কিভাবে কাজ করে ইত্যাদি।

জাকারিয়া : আউটসোর্সিং কাজ করতে গিয়ে কোন ধরনের অসুবিধার সম্মুখীন কি কখনও হয়েছেন?

হাসান :
আমার চোখে বাংলাদেশে আউটসোর্সিং দুইটি কারণে এগিয়ে যেতে পারছে না। প্রথমটি হলো ইন্টারনেটের গতি এবং অন্যটি হলো ইন্টারনেটে আর্থিক লেনদেনের সীমাবদ্ধতা। কোরিয়াতে যেখানে ইন্টারনেটের গড় গতি ১০০ মেগাবাইট, সেখানে বাংলাদেশে ইন্টারগতি এখানো কিলোবাইটে ওঠানামা করে। এসইওর কাজটি বলতে গেলে পুরোপুরি ইন্টারনেটে বসে করতে হয়। সেক্ষেত্রে ইন্টারনেটের উচ্চগতি খুবই অত্যাবশ্যকীয়। এরপরেও এদেশে প্রোগ্রামার, ফ্রিল্যান্সাররা আজ আউটসোর্সিংয়ের জগতে নিজেদের নাম উজ্জ্বল করেছে।

এরপর আসে পেপাল কিংবা আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ডের অনুপস্থিতি। খেটেখুটে কাজ করার পর ক্লায়েন্টদের থেকে পেমেন্ট পেতে প্রচুর ঝামেলা পোহাতে হয়। এমনকি ওয়েবসাইট বানানোর জন্য ডোমেইন, হোস্টিং কিনতে অন্যের ওপর নির্ভর করতে হয়। সরকারের উচিত সময় নষ্ট না করে এখনই এই বিষয় দুইটিতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নীতিমালা বাস্তবায়ন করা ।

জাকারিয়া : আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাগুলো কি? টিম বা কোম্পানি গঠনের মাধ্যমে কাজ করার কি কোনো পরিকল্পনা আছে?

হাসান :
প্রথমত পেশাকে অর্গানিক এসইও থেকে পেইড এসইওতে পরিবর্তন করতে চাই। এছাড়াও লন্ডনে আমি আমার এক সহকর্মীর সাথে ছোট একটি প্রতিষ্ঠান শুরু করেছি যেখানে আমরা ব্লগিংয়ের বিভিন্ন বিষয়ে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি। অন্যদিকে বাংলাদেশে থাকা আমার বন্ধুর সাথে আউটসোর্সিংয়ের ব্যবসায়কে আরোও বড় আকারে শুরু করতে চাই। এছাড়াও আমার বাংলা ব্লগটিকে বাংলা ভাষায় এসইও এবং ব্লগিং শেখার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করতে চাই। ইতোমধ্যেই ব্লগটির প্রসারে অনেক পদক্ষেপ নিয়েছি। সম্ভব হলে ছুটিতে বাংলাদেশে এসে এসইও এবং ব্লগিং বিষয়ে কিছু কর্মশালা আয়োজন করতে চাই।

জাকারিয়া : নতুনদের জন্য আপনার পরামর্শ।

হাসান :
সবার প্রথমে নিজে শেখার এবং অন্যকে শেখানোর মানসিকতা থাকতে হবে। আমার ব্লগের মূলমন্ত্র হলো নিজে শিখুন, অন্যকে শেখান। এভাবে আপনার জ্ঞানও চর্চায় থাকবে, অন্যদিকে যাকে শেখাচ্ছেন তাদের বিভিন্ন প্রশ্ন থেকে আপনি নিজেও নতুন নতুন বিষয় শিখতে পারবেন। ইন্টারনেটে প্রচুর এসইও ব্লগ, ফোরাম আছে- সেগুলোতে যোগ দিন। আলোচনায় অংশ নিন। প্রয়োজনে বোকার মতো হলেও প্রশ্ন করুন। ইংরেজি ভাষার ওপর দক্ষতা অর্জন করতে হবে। অনেক সময় ভাষার অদক্ষতার কারণে ক্লায়েন্টদের সঠিক প্রয়োজন বুঝতে প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়।

যাদের ইন্টারনেটের গতি কম, তারা ইন্টারনেট থেকে তথ্য সংগ্রহ করে কমপিউটারে সংরক্ষণ করে কিংবা প্রিন্ট করে বই আকারে পড়ুন। যতটুকু পড়ছেন, ততটুকু দিয়েই চর্চা শুরু করুন। তবে শেখার চর্চা বন্ধ করবেন না। সবশেষে ধৈর্য হারাবেন না। লেগে থাকুন, একদিন নিশ্চিত সফলতা আপনার হাতে ধরা দেবেই।

কজ ওয়েব

ফিডব্যাক : zakaria.cse@gmail.com
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
পাঠকের মন্তব্য
১৬ এপ্রিল ২০১১, ১০:০৪ AM
১৬ এপ্রিল ২০১১, ১০:০৪ AM
১৯ এপ্রিল ২০১১, ৬:০৪ AM
১৯ এপ্রিল ২০১১, ৮:০৪ PM
আমি ঘরে বসে আয় করতে চাই, আমার নিজের ল্যাপটপ,ইন্টারনেট আছে। আমাকে কেউ কি সাহায্য করতে পারে? সাহায্য করলে কৃতজ্ঞ থাকব। আমার মোবাইল: ০১৭১২৬২০৬৩৬
২০ এপ্রিল ২০১১, ১:০৪ AM
নেটে আয় করতে নিজের ওয়েবসাইট কি জরুরি....তাই যদি হয় তাহলে কিভাবে তা খুলবো.........জানালে খুশি হব।
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস