• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > ই-বুক রিডার নিয়ে কিছু কথা
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: রাজিব আহমেদ
মোট লেখা:২
লেখকের নাম: এস. এম. মেহদী হাসান
মোট লেখা:৬
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১১ - এপ্রিল
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
ই-বুক
তথ্যসূত্র:
ই-বুক
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
ই-বুক রিডার নিয়ে কিছু কথা


বই পড়তে আমাদের ভালো লাগুক আর নাই লাগুক, বই আমাদের নিত্যসঙ্গী। বই বলতেই আমাদের কাগজে ছাপা ও বাঁধাই করা কিছু একটা চোখের সামনে ভেসে ওঠে। তবে আধুনিক যুগে আমরা কমপিউটার ও ল্যাপটপের স্ক্রিনে অনেক কিছু পড়ছি এবং স্বাভাবিকভাবেই ডিজিটাল ভার্সনের বই জনপ্রিয় হচ্ছে। ই-বুক রিডার তাই ধীরে ধীরে উন্নত বিশ্বে তার জায়গা নিতে শুরু করেছে।

১৯৭১ সালে ই-বুক তৈরির প্রথম প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। এর নাম ছিল ‘প্রজেক্ট গুটেনবার্গ’। মাইকেল এস হার্টের অধীনে এই প্রজেক্ট শুরু হয়। এর মূল লক্ষ্য ছিল পাবলিক ডোমেইনের বিভিন্ন বইয়ের ডিজিটাল সংস্করণ প্রকাশ করা। এসব বইয়ের ওপরে কোনো কপিরাইট কার্যকর নেই।

২০০৪ সালে প্রথম ই-বুক রিডার বাজারে ছাড়া হয়। এটি ছাড়ে জাপানের সনি। এর নাম ছিল সনি লিব্রি ইবিআর-১০০০ ইপি। এই রিডারটিতে ছিল ফিলিপসের ই-ইঙ্ক পেপার প্রযুক্তিতে তৈরি ৬০০ বাই ৮০০ রেজ্যুলেশনের ৬-ইঞ্চি ডিসপ্লে, মটোরলা ড্রাগনবল প্রসেসর, ১০ মেগাবাইট বিল্ট-ইন স্টোরেজ, যা মেমরি স্টিক স্লটের মাধ্যমে বাড়ান যেত, ইউএসবি ২.০ পোর্ট এবং হেডফোন জ্যাক। লিনআক্স ওএসভিত্তিক এই ই-বুক রিডারটি শুধু জাপানে ছাড়া হয় এবং এটি ব্রডব্যান্ড ই-বুক ফরমেট সাপোর্ট করত। লিব্রির পরে সনি আরও লিনআক্সভিত্তিক ই-বুক রিডার বাজারে ছাড়ে।



মজার ব্যাপার হলো মাইক্রোসফট বা অ্যাপলের মতো বড় কোনো কোম্পানি এ সময়ে ই-বুক রিডার বাজারে ছাড়েনি। তবে মাইক্রোসফট ২০০০ সালে ক্লিয়ার টাইপ প্রযুক্তি সম্বলিত মাইক্রোসফট রিডার নামে একটি অ্যাপ্লিকেশন বাজারে ছাড়ে। এটি মূলত পকেট পিসির জন্য তৈরি করা হয়। এছাড়াও অনেক ছোটখাটো প্রতিষ্ঠান তাদের ই-বুক রিডার বাজারে ছাড়ে যার বেশিরভাগই ছিল লিনআক্সভিত্তিক। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে জিঙ্কে হ্যানলিন ভি২ এবং হ্যানলিন ভি৩ ই-বুক রিডার। এই ডিসপ্লে ব্যবহার করে সাধারণ বইয়ের মতোই পড়া যেত। তবে এদের কোনোটিই ক্রেতাদের কাছে তেমন জনপ্রিয়তা লাভ করতে পারেনি।

অ্যামাজন ই-বুক রিডার

ই-বুক রিডারের কথা বলতে গেলে অ্যামাজনের কিন্ডল ই-বুক রিডারের কথা অবশ্যই বলতে হয়। বর্তমানে অ্যামাজন কিন্ডল ই-বুক রিডার হচ্ছে সবচেয়ে জনপ্রিয় ই-বুক রিডার। এ পর্যন্ত অ্যামাজন কিন্ডলের ৫টি মডেল বের করেছে এবং সব লিনআক্সভিত্তিক।

অ্যামাজন ই-বুক রিডার জনপ্রিয় হবার মূল কারণ এর মাধ্যমে ব্যবহারকারী সহজেই অ্যামাজনের অনলাইন স্টোর থেকে বই কিনতে পারবেন, যা সে সময়ে অন্য কোনো ই-বুক রিডার দিতে পারেনি। অ্যামাজন কিন্ডল ইভিডিও রেডিও প্রযুক্তির মাধ্যমে স্প্রিন্ট নেক্সটেল নেটওয়ার্কের সাথে ইন্টারনেটে যুক্ত হয়। এরপরে অ্যামাজন কিন্ডল ব্যবহারকারী অ্যামাজন অনলাইন স্টোর থেকে মাত্র ১ মিনিটের ভেতরে বই ডাউনলোড করে পড়া শুরু করতে পারবে। অ্যামাজন আমেরিকার সবচেয়ে বড় অনলাইন স্টোর এবং এদের বইয়ের সংগ্রহ বিশাল। ইচ্ছেমতো বই কিনে কিন্ডল ই-বুক রিডারে স্টোর করতে পারবেন এবং যখন খুশি পড়তে পারবেন। অ্যামাজন ই-বুক রিডারের আরেকটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো, এতে বিল্ট-ইন কিবোর্ড আছে, যেটি ব্যবহার করে আপনি বইয়ের পৃষ্ঠায় আপনার মন্তব্য বা প্রয়োজনীয় কোনো তথ্য বা টিকা লিখে রাখতে পারবেন, ঠিক যেমন ছাত্ররা পড়ার বইয়ের পৃষ্ঠায় করে থাকে। এ নোটগুলো মেমরিতে থাকবে এবং বই আবার পড়ার সময় ওই নোটগুলো দেখতে পাবেন।

২০০৭ সালের নভেম্বরে অ্যামাজন তাদের প্রথম প্রজন্মের কিন্ডল ই-বুক রিডার বাজারে ছাড়ে। এর দাম ছিল ৪০০ ডলার এবং মজার ব্যাপার হলো বাজারে ছাড়ার ছয় ঘণ্টার মধ্যেই সব বিক্রি হয়ে যায় এবং আগামী পাঁচ মাস পর্যন্ত সব অর্ডার বুক হয়ে যায়। প্রথম প্রজন্মের কিন্ডল ই-বুক রিডারটি ছিল ৭.৫ ইঞ্চি লম্বা, ৫.৩ ইঞ্চি চওড়া, ০.৭ ইঞ্চি পুরু এবং ওজন ছিল ১০.৪ আউন্স। অ্যামাজনের এই ই-বুক রিডারটিতে ৬০০ বাই ৮০০ রেজ্যুলেশনের ৬ ইঞ্চি ডিসপ্লে ছিল। এই ডিসপ্লেটি ই-ইঙ্ক প্রযুক্তিতে তৈরি এবং ব্যবহারকারী সাধারণ বইয়ের পৃষ্ঠার মতোই পড়তে পারতেন। এতে ছিল ১৮৫ মেগাবাইট বিল্ট-ইন মেমরি যাতে দুইশ’ বই রাখা সম্ভব এবং একমাত্র প্রথম প্রজন্মের কিন্ডলেই মাইক্রো এসডি কার্ড স্লট ব্যবহার করা হয়েছে, যার মাধ্যমে আরও ৪ গিগাবাইট মেমরি যোগ করা যেত। একই সাথে ব্যবহারকারী চাইলে এমপি থ্রি ফাইলও রাখতে পারে এবং ইচ্ছেমতো গানও শুনতে পারে।

এরপরে ২০০৯-এর ফেব্রুয়ারিতে অ্যামাজন কিন্ডল ২ অর্থাৎ দ্বিতীয় প্রজন্মের কিন্ডল বাজারে আসে। ওই বছরের অক্টোবর মাসে কিন্ডল ২-এর আন্তর্জাতিক ভার্সন বাজারে ছাড়া হয় এবং একশ’র বেশি দেশে মুক্তি পায় । ডিজাইনের দিক থেকে প্রথম প্রজন্মের কিন্ডলের চাইতে এটি ছিল আরও সুন্দর এবং হাল্কা। বিক্রি বাড়ানোর জন্য দ্বিতীয় প্রজন্মের কিন্ডলের সাথে অ্যামাজন বিখ্যাত সায়েন্স-ফিকশন লেখক স্টিফেন কিং-এর ইউ আর নামের নভেল ফ্রি-তে দিয়ে দেয়। দ্বিতীয় প্রজন্মের কিন্ডল মডেলে ছিল টেক্সট-টু-স্পিচ ফিচার। এর মাধ্যমে কিন্ডল ব্যবহারকারীকে বই পড়ে শোনাবে। এতে ছিল ৮০০ বাই ৬০০ রেজ্যুলেশনের ৬ ইঞ্চি ই-ইঙ্ক ডিসপ্লে, ২ গিগাবাইট ইন্টারনাল মেমরি যার মধ্যে ১.৪ গিগাবাইট ছিল ব্যবহারকারীদের জন্য, ফ্রি-স্কেল ৫৩২ মেগাহার্টজ এআরএম-১১ ৯০ এন এম প্রসেসর এবং ৩.৭ ভোল্ট লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি। কিন্ডল ২-তে ১৫০০ বই রাখা যেত এবং পিডিএফ ফাইল সাপোর্ট করত। প্রথমে যখন কিন্ডল ২ বাজারে ছাড়া হয় তখন অ্যামাজন এর দাম রাখে ৩৬০ ডলার, কিন্তু পরে দাম কমিয়ে ২৬০ ডলার করে । কিন্ডল ২ এবং কিন্ডল ২ আন্তর্জাতিক ভার্সনের মধ্যে মূল পার্থক্য ছিল কিন্ডল ২, যেটি শুধু আমেরিকাতে ছাড়া হয়, সেটি সিডিএমএ নেটওয়ার্ক সাপোর্ট করত এবং আন্তর্জাতিক ভার্সনটি এটিঅ্যান্ডটি জিএসএম নেটওয়ার্ক সাপোর্ট করত।

২০০৯ সালের জুন মাসে অ্যামাজন প্রথম প্রজন্মের কিন্ডল ডি-এক্স বাজারে ছাড়ে। এর বৈশিষ্ট্য ছিল- সাধারণ কিন্ডল ই-বুক রিডারের তুলনায় এটির ডিসপ্লে অনেক বড়। এটি পিডিএফ ফাইল সাপোর্ট করত এবং এর আরেকটি বড় বৈশিষ্ট্য ছিল এটি লম্বালম্বি এবং আড়াআড়ি দুভাবেই ব্যবহার করা যায়। যেসব কিন্ডল ব্যবহারকারী ম্যাগাজিন এবং খবরের কাগজ বেশি পড়েন অ্যামাজন তাদের জন্য কিন্ডল ডি-এক্স বের করে।



২০১০-এর জানুয়ারিতে অ্যামাজন কিন্ডল ডি-এক্সের আন্তর্জাতিক ভার্সন বের করে ১০০ দেশে মুক্তি দেয় এবং এটিই বর্তমানে বাজারে চালু আছে। উল্লেখ্য, প্রথম যে কিন্ডল ডি-এক্স মুক্তি পায় তা শুধু স্প্রিন্টের সিডিএমএ নেটওয়ার্ক সাপোর্ট করত, কিন্তু কিন্ডল ডি-এক্সের আন্তর্জাতিক ভার্সনটি এটিঅ্যান্ডটির থ্রিজি নেটওয়ার্ক সাপোর্ট করে।

কিন্ডল ডি-এক্স ৭.২ ইঞ্চি লম্বা, ১০.৪ ইঞ্চি চওড়া, ০.৩৮ ইঞ্চি পুরু এবং ওজন হলো ১৮.৯ আউন্স। এটিতে আছে ১২০০ বাই ৮২৪ পিক্সেলের ৯.৭ ইঞ্চি ডিসপ্লে এবং ৪ গিগাবাইট মেমরি যাতে ৩৫০০ বই রাখা যেত । এটি এইচটিএমএল, পিআরসি, পিডিএফ, ডক, আরটিএফ, টিএক্সটি, জেপিজি, বিএমপি, জিআইএফ, পিএনজি এবং এমপিথ্রিসহ বিভিন্ন ফাইল সাপোর্ট করত। একই সাথে ব্যবহারকারী ফেসবুক এবং টুইটারের মাধ্যমে তার বন্ধুদের সাথে বই সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য শেয়ার করতে পারবেন এবং বইয়ের বিভিন্ন প্যাসেজ শেয়ার করতে পারবেন। আরও আছে বিল্ট-ইন পিডিএফ রিডার, জুম করার সুবিধা এবং টেক্সট-ট-স্পিচ ফিচার।

এরপর জুলাই ২০১০-এ অ্যামাজন কিন্ডল ডি-এক্স গ্রাফাইট বাজারে আসে। এর মূল বৈশিষ্ট্য ছিল- এর রঙ হলো গ্রাফাইটের মতো কালো। কিন্ডল ডি-এক্স গ্রাফাইটের দাম ৩৮০ ডলার এবং দ্বিতীয় প্রজন্মের সাদা রঙের কিন্ডল ডি-এক্সের দাম ৩৩০ ডলার।

অ্যামাজন কিন্ডল ৩

২০১০-এর আগস্টে তৃতীয় প্রজন্মের কিন্ডল বাজারে আসে এবং তৃতীয় প্রজন্ম বলে এর নাম হয় কিন্ডল ৩। কিন্ডল ৩ অ্যামাজনের সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া ই-বুক রিডার। এটি দেখতে যেমন ছোট ও সুন্দর, তেমনি দামেও সস্তা। এতে আছে উন্নতমানের ই-ইঙ্ক পার্ল প্রযুক্তির ৬ ইঞ্চি ডিসপ্লে। এটি লম্বায় ৭.৫ ইঞ্চি, চওড়ায় ৪.৮ ইঞ্চি, .৩৩৫ ইঞ্চি পুরু এবং ওজন মাত্র ৮.৫ আউন্স। কিন্ডল ৩-এর প্রধান বৈশিষ্ট্য দিনে-রাতে, ঘরে-বাইরে যেকোনো জায়গায় বই পড়া যাবে। এমনকি রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে সূর্যের আলোতেও কোনো সমস্যা হবে না। এতে উন্নতমানের ফন্ট ব্যবহার করা হয়েছে, যাতে ব্যবহারকারীর পড়তে আরাম হয়। অ্যামাজন কিন্ডল ৩-এর আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো খুবই ভালো ব্যাটারি। একবার পুরোপুরি চার্জ করলে ব্যবহারকারী ১ মাস এটি স্বচ্ছন্দে চালাতে পারবেন, যদি না তিনি ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। কিন্ডল ৩-এ আরও আছে উন্নতমানের পিডিএফ ডকুমেন্ট রিডার এবং ওয়েবকিট ব্রাউজার। কিন্ডল ৩-এ ৩০০০ বই স্টোর করা সম্ভব। কিন্ডল ৩-এর দুই ধরনের মডেল আছে- ওয়াইফাই এবং থ্রিজি। ওয়াইফাই কিন্ডল ৩-এর দাম ১৩৯ ডলার এবং থ্রিজি কিন্ডলের দাম ১৮৯ ডলার।

বার্নস অ্যান্ড নোবেলের নুক ই-বুক রিডার

অ্যামাজন কিন্ডলের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছে ‘বার্নস অ্যান্ড নোবেল’-এর নুক ই-বুক রিডার। বার্নস অ্যান্ড নোবেল আমেরিকার সবচেয়ে বড় বই ব্যবসায়ী। অ্যামাজনের মতো তাদেরও অনলাইন স্টোর আছে। ই-বুকের সংগ্রহও বিশাল। ২০০৯ সালের নভেম্বরে বার্নস অ্যান্ড নোবেল প্রথম প্রজন্মের নুক ই-বুক রিডার বাজারে ছাড়ে। নুক ই-বুক রিডার গুগল অ্যান্ড্রয়িডভিত্তিক ই-বুক রিডার।

নুক-এর দুইটি ভার্সন বাজারে ছাড়া হয়- ওয়াইফাই এবং থ্রিজি। ওয়াইফাই ভার্সনের দাম প্রথমে ছিল ২০০ ডলার, পরে তা আরও কমিয়ে ১৫০ ডলারে নিয়ে আসা হয়। থ্রিজি ভার্সনের দাম ২০০ ডলার। প্রথম প্রজন্মের নুক ই-বুক রিডারের বৈশিষ্ট্য ছিল- এতে দুই ধরনের ডিসপ্লে ছিল- একটি ৬০০ বাই ৮০০ পিক্সেলের ই-ইঙ্ক প্রযুক্তি সম্বলিত ৬ ইঞ্চি ডিসপ্লে, যা বই পড়ার জন্য ব্যবহার করা হয়। অন্যটি ৪৮০ বাই ১৪৪ পিক্সেলের ৩.৫ ইঞ্চি কালার এলসিডি ডিসপ্লে। এই ছোট ডিসপ্লে ব্যবহার করে ব্যবহারকারী তার ই-বুক রিডারে কী কী বই রাখা আছে, তা দেখতে পান। একই সাথে ওয়েব ব্রাউজিংসহ নানা ধরনের কাজ করতে পারবেন। প্রথম প্রজন্মের নুক ই-বুক রিডার ৭.৭ ইঞ্চি লম্বা, ০.৫ ইঞ্চি পুরু, ৪.৯ ইঞ্চি চওড়া এবং ওজন ছিল ১১.২ আউন্স। এতে ২ গিগাবাইট ইন্টারনাল স্টোরেজ আছে, যাতে ১৫০০ বই রাখা যাবে। ব্যবহারকারী চাইলে মাইক্রো এসডি কার্ডের মাধ্যমে আরও মেমরি যোগ করতে পারেন। এতে আরও আছে এমপিথ্রি প্লেয়ার এবং ৩.৫ মিমি হেডফোন জ্যাক। নুক ই-বুক রিডারের আরেকটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো- এটি ই-পাব ফরমেট সাপোর্ট করে। ই-পাব ফরমেটের সুবিধা হচ্ছে এটি একটি ওপেন ফরমেট এবং চাইলে একই বই পিসিতে বা অন্য কোনো ই-বুক রিডারে কপি করে পড়া যায়। এতে অনেক ফ্রি বই আছে। গুগল লাইব্রেরি, প্রজেক্ট গুটেনবার্গসহ অনেক লাইব্রেরি আছে যেখানে অনেক বই ফ্রি পাওয়া যায়। এগুলো ই-পাব ফরমেটে আছে।

২০১০-এর অক্টোবরে নুক কালার ই-বুক রিডার বাজারে ছাড়া হয়। এই ই-বুক রিডারে ১০২৪ বাই ৬০০ পিক্সেলের ৭ ইঞ্চি ডব্লিউএসভিজিএ এলসিডি ডিসপ্লে আছে, যা প্রথম প্রজন্মের নুকের চাইতে অনেক বড়। এটি রঙিন ডিসপ্লে, এই কারণে ব্যবহারকারীরা বই পড়ে অনেক মজা পাবেন। এটি ৮.১ ইঞ্চি লম্বা, ৫ ইঞ্চি চওড়া, ০.৪৮ ইঞ্চি পুরু এবং ওজন ১৫.৮ আউন্স। এতে ৮ গিগাবাইট ইন্টারনাল মেমরি আছে এবং ৬০০০ বই রাখা যায়। ব্যবহারকারী চাইলে মাইক্রো এসডির মাধ্যমে ৩২ গিগাবাইট মেমরি যোগ করতে পারেন। নুক কালারে বই ছাড়াও এমপি৪ অডিও ফাইল রাখা যায়। চাইলে একই সাথে বই পড়া ও গান শোনা যায়। নুক কালার ওয়াইফাই ভার্সন পাওয়া যায়। এর মূল্য হচ্ছে ২৫০ ডলার।

সনি ই-বুক রিডার

ই-বুক রিডারের ক্ষেত্রে আরেকটি উল্লেখযোগ্য নাম সনি। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, ২০০৪ সালে সনিই প্রথম ই-বুক রিডার বাজারে ছাড়ে। সনির অ্যাপল আই টিউনসের মতো নিজস্ব সনি ই-বুক লাইব্রেরি স্টোর আছে, তবে কেবল আমেরিকা এবং কানাডার ক্রেতারাই এই স্টোর ব্যবহার করতে পারেন। সনি বর্তমানে পিআরএস-৩০০, পিআরএস-৬০০ এবং পিআরএস-৯০০ সিরিজে বিভিন্ন মডেলের ই-বুক রিডার বাজারে ছেড়েছে। সনির এই ই-বুক রিডারগুলো অ্যাডোবি পিডিএফ ফাইল, ই-পাব ফরমেট, আরএসএস নিউজফিডস, জেপিজি এবং সনির নিজস্ব ব্রডব্যান্ড ই-বুক, এমপিথ্রি এবং এএসি অডিও ফাইল সাপোর্ট করে। ই-পাব এবং পিডিএফ ফাইল সাপোর্ট করার কারণে সনি ই-বুক রিডার ব্যবহারকারীরা বিভিন্ন দেশের লাইব্রেরি থেকে বই ধার করে পড়তে পারেন।

আরো কিছু ই-বুক রিডার :

অ্যামাজন, নুক এবং সনি ছাড়াও অন্য অনেক কোম্পানিই ই-বুক রিডার বাজারে ছেড়েছে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো স্যামসাং, পকেটবুক, বুকিন, আসুস ইইরিডার, কোবো ই-রিডার, আইরিভার স্টোরি ই-বুক রিডার এবং জিঙ্কে হ্যানলিন ই-বুক রিডার। তবে এগুলো অতটা জনপ্রিয় নয়।

এছাড়াও বিভিন্ন ভাষার ই-বুক রিডার আছে। যেমন পোল্যান্ডের কল্পরটার ই-ক্লিক্টো ই-বুক রিডার, যা পোলিশ ভাষা সাপোর্ট করে। ২০১০ সালে ভারতে হিন্দি ভাষায় প্রথম ই-বুক রিডার ‘পাই’ বের হয়।

বাংলাদেশে ই-বুক রিডার

বাংলাদেশে ই-বুক রিডারের সম্ভাবনা অপরিসীম। বাংলাদেশে এখনও পর্যন্ত ই-বুক বা ই-বুক রিডার নিয়ে তেমন কিছুই হয়নি। কিন্তু বাংলাদেশে ই-বুক এবং ই-বুক রিডারের বিশাল সম্ভাবনা আছে, যা খুবই লাভজনক হতে পারে।

ই-বুক রিডারের দাম তেমন বেশি নয়, তাই অনেকেই এটি ব্যবহার করতে পারবেন। ইন্টারনেটে অনেক বই আছে যাদের ওপর কোনো কপিরাইট নিষেধাজ্ঞা নেই। ই-বুক রিডারের মাধ্যমে খুব সহজেই এসব বই সাধারণ লোকেরা ডাউনলোড করে পড়তে পারেন।

ই-বুক রিডারের আরেকটি বড় সুবিধা হলো এটি চালানোর জন্য সার্বক্ষণিক ইন্টারনেট সংযোগের প্রয়োজন নেই। ইন্টারনেট থেকে একবার বই ডাউনলোড করার পরে যেকোনো সময়ে পড়া যায়।

ডিজিটাল বই বাংলাদেশে এখনো জনপ্রিয় নয়, কিন্তু ই-বুক রিডার এলে আস্তে আস্তে ডিজিটাল বই জনপ্রিয়তা লাভ করবে। আমাদের দেশে অনেক প্রথিতযশা লেখকের গল্প এবং উপন্যাস ই-বুক আকারে খুবই কম দামে বিক্রি করা যাবে এবং খুবই অল্প সময়ে অনেক লোকের কাছে পৌঁছানো যাবে।

এছাড়াও বর্তমানে একটি বই ছাপানো খুবই ব্যয়সাধ্য ব্যাপার। কিন্তু ই-বুক তৈরিতে তেমন কোনো খরচ নেই। ই-বুক রিডার তাই বাংলাদেশের উদীয়মান লেখকদের জন্য একটি বিশাল আশীর্বাদ হতে পারে।

বাংলাদেশে বইয়ের একটি বড় বাজার আছে। প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকাতে বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়। প্রচুর বই বিক্রি হয়। একুশের বইমেলা ছাড়াও সারাবছর দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছোট-বড় অনেক বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এসব বইমেলায় খুব সহজে ই-বুক রিডার এবং ই-বুক বিক্রি করা সম্ভব।

স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ই-বুক রিডারের জন্য একটি বড় বাজার। এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীদের অনেক বই বহন করতে হয়। ই-বুক রিডারের মাধ্যমে এরা একই সাথে অনেক বই অনেক সহজে বহন করতে পারবে।

বাংলাদেশে যত দ্রুত সম্ভব ই-বুক রিডার বাজারজাত করা দরকার। এ ব্যাপারে কমপিউটার ব্যবসায়ীদেরকেই এগিয়ে আসতে হবে।

তথ্যসূত্র
http://en.wikipedia.org/wiki/Amazon_Kindle
http://reviews.cnet.com/e-book-readers/amazon-kindle-dx-u/4505-3508_7-33643953.html# reviewPage1
http://reviews.cnet.com/e-book-readers/amazon-kindle/4505-3508_7-32751890.html#reviewPage1
http://reviews.cnet.com/e-book-readers/amazon-kindle-wireless-reading/4505-3508_7-33517190.html#reviewPage1
http://www.pcworld.com/article/139777/amazon_unveils_wireless_kindle_ebook_reader.html
http://www.amazon.com/Kindle-DX-Wireless-Reader-3G-Global/dp/B002GYWHSQ
http://www.amazon.com/Wireless-Reading-Display-Globally-Generation/dp/B0015TG12Q/ ref=amb_link_353470302_6?pf_rd_m=ATVPDKIKX0DER&pf_rd_s=center-14&pf;_rd_r= 03GN93CPCFVFHE7H84ZB&pf_rd_t=201&pf_rd_p=1281804562&pf_rd_i=B002GYWHSQ
http://en.wikipedia.org/wiki/Barnes_&_Noble_Nook
http://ebook-reader-review.toptenreviews.com/ barnes-noble-unveils-the-nook-ebook-reader-smirks-at-kindle.html
http://en.wikipedia.org/wiki/Comparison_of_e-book_readers
http://en.wikipedia.org/wiki/E-book
http://www.amazon.com/Kindle-Wireless-Reader-3G-Wifi-Graphite/dp/B002FQJT3Q
http://www.engadget.com/2007/11/21/kindle-sells-out-in-two-days/
http://www.barnesandnoble.com/nook/index.asp?PID=34323&cds2Pid=35700#logo
http://www.barnesandnoble.com/nookcolor/features/techspecs/index.asp
http://en.wikipedia.org/wiki/Nook_Color
http://en.wikipedia.org/wiki/Project_Gutenberg
http://en.wikipedia.org/wiki/Sony_Librie
http://en.wikipedia.org/wiki/Sony_Reader
http://tech2.in.com/news/ebook-readers-mp3-audio-players/indias-first-ebook-reader-pi-launched/106842/0
http://www.web-books.com/Publishing/epub.htm
http://www.epubbooks.com/blog/what-is-epub


কজ ওয়েব
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
পাঠকের মন্তব্য
অসাধারন একটা airticle খুবই সুন্দর।
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস