• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > প্রগতির সাক্ষী : কমপিউটার জগৎ
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: আবীর হাসান
মোট লেখা:১৫০
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১১ - এপ্রিল
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
ফিচার
তথ্যসূত্র:
প্রচ্ছদ প্রতিবেদন ২
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
প্রগতির সাক্ষী : কমপিউটার জগৎ



২০ বছর। মহাকালের নিরিখে হয়ত তেমন কোনো বড় কালপর্ব নয়, কিন্তু মানবসভ্যতার ইতিহাসে গত ২০ বছর এক মহাযজ্ঞের কাল। কারণ, এই সময়ে মানুষ প্রবেশ করেছে অন্য এক ডাইমেনশনে। কেবল প্রবেশ করা নয়, ওই ডাইমেনশনে তার কর্মকান্ড ক্রমশ বিস্তৃত করে চলেছে। এ ব্যাপারটিই আসলে ২০ বছর আগে ছিল অভূতপূর্ব, সে সময় অনেক মানুষই অবাক হয়ে ভাবত কী করে টেলিভিশন স্ক্রিনের মতো মুখওয়ালা একটি যন্ত্র দ্রুত এতকিছু করে ফেলে! অলৌকিক, ভৌতিক বা অপ্রাকৃত বলেও একে মনে করত অনেকে। অনেক অবিশ্বাস ছিল, ছিল অনেক ভীতিও। সবচেয়ে বেশি ছিল সম্ভবত কাজ হারানোর ভয়। হ্যাঁ, ষাটের দশকের পর থেকে কমপিউটারপ্রযুক্তি যখন পার্সোনাল কমপিউটারের দিকে এগুচ্ছিল, তখন থেকেই বিশ্বে কমপিউটারের বিষয়ে যে প্রচার বা প্রচারণা চালানো হতো তার অনেকটা জুড়েই ছিল কাজবিষয়ক একটি প্রপঞ্চ। এর দুটো দিক ছিল: একটি হলো মানুষের অনেক জটিল কাজ সহজে করে দেবে কমপিউটার। অপরটি হলো শ্রমঘন কাজগুলোকে প্রতিস্থাপিত করবে কমপিউটার। আমাদের মতো দেশে ওই দ্বিতীয় ব্যাপারটি নিয়েই ভীতি সৃষ্টি হয়েছিল প্রথম থেকে এবং একটি ভুল ধারণা নিয়েই বসেছিলেন অনেকে। এই অনেকের মধ্যে ডাকসাইটে রাজনীতিবিদ-বুদ্ধিজীবীরা যেমন ছিলেন, তেমনি ছিলেন অনেক আমলা-ব্যবসায়ী-অর্থনীতিবিদও।

বলছি ২০ বছর আগের অর্থাৎ সেই ১৯৯১-৯২ সালের দিকের কথা। কমপিউটারের প্রযুক্তি যখন ক্রমশ গবেষণাগার, সামরিক গোপন কর্মকান্ড আর অতি-উচ্চশিক্ষিত গণিতবিদদের কর্মক্ষেত্র থেকে সাধারণ মানুষের কর্মক্ষেত্রে, গণমাধ্যমে আর ডাকের বিকল্প জগতে প্রবেশে করছিল-সেই সময় আমাদের দেশে ছিল এক বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতি। কমপিউটার সম্পর্কে ইতির চেয়ে নেতির প্রকোপই ছিল বেশি। বিভিন্ন পেশাজীবী গোষ্ঠী আর ট্রেড ইউনিয়নগুলো অবস্থান নিয়েছিল কমপিউটার প্রচলনের একেবারেই বিপরীতে, অথচ সেই সময়ে গণমাধ্যমগুলো অনেকটা নীরবেই গ্রহণ করেছিল এই প্রযুক্তি। কারণ অবশ্য একটি ছিল, সেটি হলো নিরুপায় হওয়া। হ্যাঁ, পশ্চিমা বিশ্বের যে সংবাদ সংস্থাগুলোর ওপর এদেশের গণমাধ্যমগুলো নির্ভরশীল ছিল সেগুলো ততদিনে পুরোপুরিই হয়ে উঠেছিল নতুন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিনির্ভর। এ ছাড়া কম্পোজ-মেকআপ ইত্যাদির ম্যানুয়াল প্রযুক্তির চেয়ে অনেক সহজ, কিন্তু শ্রমঘন কর্মকান্ড শুরু করে গণমাধ্যমই দেখিয়ে দিয়েছিল কমপিউটার নির্ভরতা কর্মহীনতা বাড়ায় না বরং বিষয়গুলোকে আরও গতিশীল ও সুন্দর করে। কিন্তু তারপরও বিভ্রান্তির ধোঁয়াশা যেন কাটছিলই না! কমপিউটার প্রশিক্ষণ, শিক্ষাক্ষেত্রে কমপিউটার প্রচলন, নতুন প্রযুক্তি নিয়ে আসা, হার্ডওয়্যার-সফটওয়্যার শিল্প বাড়িয়ে তোলা ইত্যাকার বিষয়গুলোর প্রতি যেন দায়িত্বশীল কারোর দৃষ্টিই আকর্ষণ করা যাচ্ছিল না।

সেই সময়ে আবির্ভাব ঘটে কমপিউটার জগৎ নামে এই মাসিক পত্রিকাটির। এটিও ঠিক যে, কোনো পত্রিকা আকস্মিক বা গায়েবিভাবে আবির্ভূত হয় না। একটি পত্রিকা প্রকাশনার পেছনে অনেক জোগাড়-যন্ত্রের প্রয়োজন হয়। আর এ তো কোনো সাহিত্য-বিনোদন বা সাধারণ বিষয়ভিত্তিক পত্রিকা নয়-এটি তখন এমন একটি উদ্যোগ ছিল, যেটি বাস্তবায়ন বা সার্থক করতে প্রয়োজন ছিল আরও অনেক কিছুর, বিশেষ করে লেখকের এবং লেখার বিষয়বস্ত্তর। বলে রাখা ভালো, কমপিউটার জগৎ যখন আত্মপ্রকাশ করে তখন ইন্টারনেটের সুবিধাও ছিল না, বিদেশী পত্রপত্রিকাতেও নতুন প্রযুক্তির সংবাদ আসত খুবই সীমিত আকারে বা সংক্ষিপ্ত আকারে। তবে আকাঙ্ক্ষার সাথে যদি সদিচ্ছার সমন্বয় ঘটে, তাহলে যে কী অসম্ভবকে সম্ভব করা যায় তার প্রমাণ এই কমপিউটার জগৎ। সেই সাথে স্মরণ করতে হয় এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রকাশক অধ্যাপক মরহুম আবদুল কাদেরকে। অধ্যাপক কাদেরের যে সদিচ্ছাটা ছিল তা ছিল দুর্মর। পত্রিকার মাধ্যমে আহবান জানানো বা বিজ্ঞাপনের ভাষা ব্যবহার করে তিনি লেখা সংগ্রহ বা লেখক জোগাড়ের কাজটি করেননি, করেছিলেন সশরীরে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে। তদুপরি কমপিউটার জগৎ প্রথম থেকেই যে কাজটি করতে চেয়েছিল তা হলো জনমন থেকে কমপিউটার সম্পর্কিত অহেতুক ভীতি দূর করা, দেশের শীর্ষ পর্যায় পর্যন্ত নতুন প্রযুক্তির উপযোগিতার বিষয়টি অবহিত করা। সে কারণেই দেখা গেছে কমপিউটার জগৎ যেমন নতুন নতুন প্রযুক্তির খবর প্রকাশ করেছে, তেমনি আবার জাতীয় বিভিন্ন ইস্যুর সাথে সেই প্রযুক্তির আধুনিকতার প্রয়োগ কীভাবে ঘটতে পারে, সে বিষয়গুলোও তুলে ধরেছে। সেই সাথে বাণিজ্যিক ইস্যুগুলোও ক্রমশ গুরুত্ব পেতে শুরু করেছে। এ বিষয়ে আমরা এখানে স্মরণ করতে পারি কমপিউটার বিপণনবিষয়ক সমস্যাগুলো তুলে ধরা, শুল্কমুক্ত কমপিউটার আমদানি ও এ সম্পর্কিত অন্য বিষয়গুলোকে।

কমপিউটার জগৎ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে এ কারণে যে, প্রথম থেকেই পত্রিকাটি যেমন নতুন প্রজন্মের জন্য প্রযুক্তির পরিচয় তুলে ধরেছিল, তেমনি উচ্চতর পলিসি লেভেলের কাজে লাগে, বাণিজ্যিক কমিউনিটির স্বার্থরক্ষা হয়, এমন বিষয়গুলোও সন্নিবেশিত করেছে। এ ছাড়া যখনই কোনো সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে তখনই আমাদের করণীয় সম্পর্কে বিশদ প্রতিবেদন তুলে ধরেছে। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায় ডাটা এন্ট্রি, সফটওয়্যার শিল্প, সাবমেরিন ক্যাবল সংযোগ নেয়া, বাংলা কমপিউটিং, ওপেনসোর্স ব্যবহার ও বিভিন্ন সময়ে আউটসোর্সিংয়ের সুযোগগুলোকে কাজে লাগানোর উপায় নির্দেশ ইত্যাদি।

আরেকটি বড় কাজ কমপিউটার জগৎ খুব একনিষ্ঠভাবে করেছে। সেটি হচ্ছে কমপিউটার লিটারেসি বাড়ানো এবং কমপিউটারভিত্তিক শিক্ষণ প্রচলনে লাগসই কৌশল বাৎলানো। বিভিন্ন সময়ে এ বিষয়ে শিক্ষাবিদ, প্রযুক্তিবিদ এবং অন্য সংশ্লিষ্টদের মতামত প্রকাশে কখনও কখনও বিতর্কেরও মাধ্যম হয়ে উঠেছে কমপিউটার জগৎ। আসলে গত ২০ বছরে বিশ্বে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তির যত উৎকর্ষ সাধিত হয়েছে এবং দেশে এ সম্পর্কে যতরকম প্রতিবন্ধকতা এসেছে, সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে-সবকিছু নিয়েই বলতে গেলে একমাত্র মাধ্যম হিসেবে কাজ করেছে কমপিউটার জগৎ। নববইয়ের দশকের প্রথম দিক থেকে কমপিউটার জগৎ এতটাই জনপ্রিয় হয়ে উঠতে শুরু করে যে, তা নতুন প্রজন্মের আধুনিকতার প্রতীক হয়ে উঠেছিল। সত্যিকার অর্থে কমপিউটার জগৎই মানুষের মধ্যকার কমপিউটার সম্পর্কিত অহেতুক ভীতি যেমন দূর করতে পেরেছিল, তেমনি রাষ্ট্রীয় দায়িত্বশীলদের মধ্যকার বিভ্রান্তি নিরসনেও সক্ষম হয়েছিল। কমপিউটারবিষয়ক সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে গতিশীল করে তোলার ক্ষেত্রে, বিশেষত সেগুলোকে দায়িত্বসচেতন করে তোলার জন্য কমপিউটার জগৎ নিরলস চেষ্টা চালিয়েছে। এ ছাড়া আইসিটি পার্ক গড়ে তোলার যে আন্দোলনটি এখনও চলছে সেটির সাথে বলতে গেলে সেই আন্দোলনের মুখপত্র হিসেবেও কাজ করেছে কমপিউটার জগৎ।

একটি মাসিক পত্রিকার অনেক সীমাবদ্ধতা থাকে, কিন্তু সদিচ্ছা থাকলে যে সেগুলোকে জয় করা যায় তা করে দেখিয়েছে কমপিউটার জগৎ। এটি সম্ভব হয়েছে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তিসংশ্লিষ্ট সবাইকে একটি আস্থার জায়গা করে দিতে পারায়। সাধারণত এ ধরনের পত্রিকাগুলো তুলে ধরে প্রযুক্তির উন্নয়ন এবং বিভিন্ন ব্যক্তিত্বের সাফল্যের কাহিনী, বড়জোর কিছু উপলব্ধির কথা। কিন্তু কমপিউটার জগৎ সে ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক উপযোগিতার বিচারে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। প্রযুক্তির প্রগতির তথ্য যেমন তুলে ধরেছে, তেমনি সেগুলোকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ কী করতে পারে সেই সম্ভাবনার কথাও বেশ বলিষ্ঠ কণ্ঠেই জানিয়েছে ও জানাচ্ছে। কমপিউটার জগৎ পত্রিকাটি তার প্রকাশনাবিষয়ক কর্মকান্ডকে ছাড়িয়ে মাঝে মাঝে সামাজিক দায়বদ্ধতা নিয়ে আয়োজন করেছে বিভিন্ন প্রতিযোগিতার। বিশেষত শিক্ষার্থীদের জন্য ওই প্রতিযোগিতাগুলো শিক্ষার্থীদের মধ্যে উৎসাহ যেমন সৃষ্টি করেছে, তেমনি আদর্শও স্থাপন করেছে। এ বিষয়টিকে সে কারণেই আমি কমপিউটার জগৎ-এর সাফল্য না বলে বলব-নির্মোহ দায়িত্ব পালন করে দৃষ্টান্ত স্থাপন।

আজকাল এই দেশে ডিজিটাল বলে যা কিছু হচ্ছে তার একটি বিষয়ও কমপিউটার জগৎ বাদ দেয়নি। যত সম্ভাবনার কথা এখন রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী বা প্রযুক্তিবিদরা বলছেন, এ পত্রিকাটি সে কথা আগেই বিভিন্ন সময়ে তুলে ধরেছে। কাজেই এদেশে ডিজিটাল সাফল্য যেটুকুই অর্জিত হয়েছে, তার পেছনে কমপিউটার জগৎ-এর অবদান কিছু না কিছু আছে-হয়ত এ কথা কেউ স্বীকার করতে দো-মনা হতে পারেন, কিন্তু বাস্তবতা এটাই যে বাংলাদেশে কমপিউটারবিষয়ক কর্মকান্ডের কেন্দ্রশক্তিটি হচ্ছে কমপিউটার জগৎ।

আরেকটি বিষয়ের উল্লেখ না করলেই নয়, সেটা হচ্ছে এই ২০ বছরে অনেক প্রতিবন্ধকতা ও প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হতে হয়েছে কমপিউটার জগৎকে। আমার যেটা মনে হয়, নববইয়ের দশকের শেষদিক থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত তুমুল প্রতিযোগিতার সময়টাতেই কমপিউটার জগৎ-এর পারফরমেন্স ছিল সবচেয়ে চোখে পড়ার মতো। তবে অনেক প্রতিবন্ধকতা ও প্রতিযোগিতার মধ্যেও কমপিউটার জগৎ টিকে থেকেছে তার আপন বৈশিষ্ট্যটি ধরে রাখার জন্য। এ কারণেই আমরা দেখতে পাচ্ছি অনেক প্রতিযোগী বিভিন্ন সময় তৈরি হলেও কমপিউটার জগৎ টিকে গেছে, কিন্তু অন্যরা টিকতে পারেনি। যদিও তার নানা কারণ আছে, বিশেষভাবে বলতে হয় স্ট্যামিনা না থাকা এবং করণীয় সম্পর্কে সচেতন না থাকার কথা। কমপিউটার জগৎ আসলে এদেশের মানুষকে জাগিয়েছে বিশ্ব সম্প্রদায় কীভাবে ভার্চুয়াল জগতের ভিন্ন মাত্রায় ঢুকে সেখান থেকে সাফল্য অর্জন করছে তার মন্ত্রগুপ্তিটা এদেশের মানুষকে অনেকটা তাৎক্ষণিকভাবেই জানিয়ে দিচ্ছে কমপিউটার জগৎ। এজন্যই লেখার প্রথম দিকে বলেছিলাম একটি ভিন্নমাত্রার কথা। অনেক সময় অনেকে মনে করেন ভার্চুয়ালিটির মধ্যে বাস্তবতা-বাণিজ্য বা জীবন সম্পর্কিত কিছু নেই! আসলে কিন্তু তা নয়, এখানেই রয়েছে এই একবিংশ শতাব্দী বা নতুন যুগের নতুন জীবনযাত্রার সম্ভাবনা, সংগ্রামশীলতাও।

এই সম্ভাবনাটি কেমন? কল্পনার বাইরে উপলব্ধি করতে চাইলে আপনাকে এদেশে নির্ভর করতে হবে কমপিউটার জগৎ নামের এই পত্রিকাটির ওপরেই। কারণ এ সময়ে অন্য কোথাও, অন্য কোনো পত্রিকা বা গণমাধ্যমে আপনি খুঁজে পাবেন না এর সমকক্ষ কিছু।

কমপিউটার জগৎ-এর ২০ বছর পেছনে ফেলে আসাকে আমি বলব সক্ষমতা অর্জনের সময়। এই সময়ে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি যেমন একটি স্থিতিশীলতা পেয়ে নতুন আরও কিছু সম্ভাবনা তৈরি করেছে, একটি ভিন্নমাত্রার স্বপ্ন দেখাচ্ছে বিশ্বের মানুষকে, তেমনি কমপিউটার জগৎকেও তৈরি হতে হবে সেই নতুন মাত্রার অভিযাত্রায় শামিল হওয়ার জন্য।

কজ ওয়েব

ফিডব্যাক : abir59@gmail.com
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস
অনুরূপ লেখা