কমপিউটার জগৎ। একটি নাম। একটি আন্দোলন। একটি দলিল। একটি ইতিহাস। এ ইতিহাসের সূচনা ১৯৯১ সালের মে মাসে। ওই মাসের প্রথম দিনটিতে কমপিউটার জগৎ-এর প্রথম সংখ্যাটি আমাদের সম্মানিত পাঠকদের হাতে পৌঁছে। এর আত্মপ্রকাশের মধ্য দিয়ে আমরা সৃষ্টি করি নতুন এক ইতিহাস। তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ের ওপর বাংলাদেশের প্রথম বাংলা সাময়কী প্রকাশের যুগের সূচনা করে কমপিউটার জগৎ। আজ ২০১১ সালের এপ্রিল। মাসিক কমপিউটার জগৎ-এর বিশ বছরের গৌরবময় অধ্যায় পূর্তির সময়। চলতি সংখ্যাটি এর বিশ বছর পূর্তিসংখ্যা। দুই দশক পূর্তিসংখ্যা। এ সংখ্যটি যথাসময়ে সম্মানিত পাঠকসাধারণের হাতে তুলে দিতে পেরে কমপিউটার জগৎ পরিবারের প্রতিটি সদস্য গৌরববোধ করছি। কারণ, বাংলাদেশের মতো ছোট্ট ও সীমিত আয়ের দেশে এই বিশ বছর কোনো ছেদ ছাড়া প্রতিটি সংখ্যা প্রতিমাসে নিয়মিত পাঠকদের হাতে তুলে দিতে পারাটা যে কত বড় কঠিন কাজ, সেই সাথে আমাদের কাছে কত বড় আনন্দের কাজ, তা আমরা ছাড়া আর কে জানতে পারেন। এখানে আমরা বলতে বোঝানো হয়েছে তাদের, যারা এই বাংলাদেশে শত বাধা-বিপত্তি আর প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে তথ্যপ্রযুক্তির মতো কাঠখোট্টা বিষয়ে বাংলা সাময়িকী প্রকাশের কাজে নিজেদের নিয়োজিত রেখেছেন। এই বিশ বছর পূর্তির এই সময়ে আমরা আরেকটি সাফল্যের কথা সবাইকে জানাতে পারি। এই বিশ বছর কমপিউটার জগৎ বরাবর ছিল এদেশের সর্বাধিক প্রচারিত তথ্যপ্রযুক্তি সাময়িকী। সব কিছু মিলিয়ে এই সময়টায় আমরা গৌরববোধ করতেই পারি। আমাদের এই গৌরববোধ আর আনন্দ আজ আরও শতগুণে বেড়ে যেত যদি আমরা পাশে পেতাম আমাদের প্রতিষ্ঠাতা প্রাণপুরুষ অধ্যাপক মরহুম আবদুল কাদেরকে। তাকে আমরা অনেকটা হঠাৎ করেই হারিয়েছি ২০০৩ সালের ৩ জুলাইয়ে। তার হাতে গড়া কমপিউটার জগৎ-এর আজকের এই শুভদিনে আমরা তাকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি। সেই সাথে মহান আল্লাহর কাছে তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।
আজ কমপিউটার জগৎ এর ইতিহাসের একটি পর্ব অতিক্রম করল মাত্র। এ পর্ব এর বিশ বছর নিয়মিত প্রকাশের পর্ব। এ পর্ব বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের দুই দশকের গৌরবময় আন্দোলনের পর্ব। এই দুই দশকের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের আন্দোলনে কমপিউটার জগৎ কতটুকু ভূমিকা পালন করতে পেরেছে, সে বিচারের ভার তথ্যপ্রযুক্তির সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও পাঠকসাধারণের হাতে। তবে একথা অস্বীকার করার উপায় নেই, কমপিউটার জগৎ এর এই দুই দশক সময়ে এ দেশের তথ্যপ্রযুক্তি আন্দোলনে সচেতন ভূমিকা পালনে ছিল বরাবর সচেষ্ট। আর এক্ষেত্রে অধ্যাপক আবদুল কাদের পালন করে গেছেন দিকনির্দেশকের ভূমিকা। যার ফলে কমপিউটার জগৎ-এর স্বপ্নদ্রষ্টা ও প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক আবদুল কাদের আজ বিতর্কাতীতভাবে এ দেশের তথ্যপ্রযুক্তি আন্দোলনের অগ্রপথিক অভিধায় অভিহিত। সেই সাথে মাসিক কমপিউটার জগৎকে মানুষ জানে এ দেশের তথ্যপ্রযুক্তি আন্দোলনের হাতিয়ার হিসেবে। মরহুম আবদুল কাদেরের স্বপ্ন ছিল তথ্যপ্রযুক্তিসমৃদ্ধ এক বাংলাদেশ। সে স্বপ্ন পূরণে তিনি হাতিয়ার করেছিলেন কমপিউটার জগৎকে। প্রসঙ্গত বলা প্রয়োজন, মরহুম আবদুল কাদের তার এ স্বপ্ন পূরণের মিশনে যোগ্য সহযোগী হিসেবে পেয়েছিলেন তারই সহধর্মিণী নাজমা কাদেরকে। কমপিউটার জগৎ-এর প্রকাশক নাজমা কাদের সেই অভাবটুকু পূরণ করেছেন, যেটুকু পূরণ করা সম্ভব ছিল না অধ্যাপক থেকে প্রেষণে সরকারি কর্মকর্তা হওয়া আবদুল কাদেরের পক্ষে। যারা অধ্যাপক আবদুল কাদেরকে জানেন, তারা স্বীকার করেন- তিনি তার সরকারি অফিসের কাজের ক্ষতি করে কখনও কমপিউটার জগৎ-এর কোনো কাজ করতেন না। তিনি ছিলেন অনন্য কর্তব্যনিষ্ঠ অসাধারণ এক ব্যক্তিত্ব। একটি মাত্র উদাহরণই এ দাবিকে প্রমাণ করার জন্য যথেষ্ট। যেদিন তিনি মারা যান, সে দিনটিতেও তিনি অসুস্থ শরীর নিয়ে পুরোদিন অফিস করেছেন। যা-ই হোক, ২০০৩ সাল থেকে মরহুম আবদুল কাদেরের অবর্তমানে কার্যত নাজমা কাদের কমপিউটার জগৎ-এর হাল ধরেছেন। এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন কমপিউটার জগৎ-এর সুদূরপ্রসারী মিশনকে। সেই সাথে মরহুম আবদুল কাদেরের মিশনকেও। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, অধ্যাপক আবদুল কাদের আমাদের ছেড়ে চলে যান অনেকটা হঠাৎ করেই। বলা যায়, তার চলে যাওয়া বিনা নোটিসেই। আমরা যারা কমপিউটার জগৎ পরিবারের সদস্য, তাদের কখনই জানতে দেননি, তিনি দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিসে ভুগছিলেন। ফলে তার এই হঠাৎ করে চলে যাওয়ায় আমরা ছিলাম অনেকটা বিচলিত। তবে, সেই সাথে আমাদের দৃঢ়তা ছিল- মরহুম আবদুল কাদের যে উচ্চতায় কমপিউটার জগৎকে রেখে গেছেন, যে মর্যাদায় আসীন করে গেছেন, তা ধরে রাখতেই হবে। যে তথ্যপ্রযুক্তি আন্দোলনের পথরেখা রচনা করে গেছেন, তা থেকে বিচ্যুত হওয়ার কোনো অবকাশ আমাদের নেই। মরহুম আবদুল কাদেরোত্তর আট বছর ও কমপিউটার জগৎ-এর বিশ বছর পূর্তির এই ক্ষণে আমরা নিশ্চয় দাবি করব, সে দৃঢ়তা আমরা বজায় রাখতে পেরেছি। কমপিউটার জগৎ-এর এই বিশ বছর পূর্তির দিনে আমাদের সম্মানিত পাঠকবর্গকে এই মর্মে আশ্বস্ত করতে পারি কমপিউটার জগৎ আগামী দিনেও এর মান উত্তরণে সচেষ্ট থাকবে। অব্যাহত রাখবে এর তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়ন আন্দোলনকে। সেই সাথে এ প্রত্যাশাও রইল- এ আন্দোলনে আমাদের পাশে পাব তাদের, যারা এর আগে বরাবর ছিলেন আমাদের এ আন্দোলনের সাথী। সময়ের পথ বেয়ে আগামী দিনে আরো অনেককেই পাব আমাদের পাশে।
আমাদের বিশ বছরের যা কিছু অর্জন, যা কিছু সাফল্য, তা কখনই আমাদের পক্ষে সম্ভব হতো না, যদি না আমাদের যাবতীয় প্রয়াসের পাশাপাশি চলত উপদেষ্টাবর্গের যথাযথ উপদেশ, লেখকবর্গের সময়োপযোগী লেখা দিয়ে সহায়তা, পাঠকসাধারণের সুপরামর্শ ও গঠনমূলক সমালোচনা, বিজ্ঞাপনদাতাদের সময়োচিত ও আন্তরিক সহযোগিতা, অ্যাজেন্টদের সুষ্ঠু বিতরণ সেবা, শুভানুধ্যায়ীদের শুভাশিস আর পৃষ্ঠপোষকদের মূল্যবান পৃষ্ঠপোষকতা। তাই আজকের এই বিশ বছর পূর্তির দিনে আমাদের উপদেষ্টা, লেখক, পাঠক, বিজ্ঞাপনদাতা, অ্যাজেন্ট, শুভানুধ্যায়ী ও পৃষ্ঠপোষকবর্গের প্রতি রইল আমাদের কৃতজ্ঞতার ঢালি। সেই সাথে আশা করছি, আগামী দিনে আমাদের প্রতি তাদের আন্তরিক সহযোগিতা উত্তরোত্তর আরও বাড়বে। তাদের গঠনমূলক সমালোচনা হবে আমাদের মূল্যবান পাথেয়।
সূচনাসংখ্যা দিয়েই আন্দোলনের সূচনা
ব্যক্তি, সমাজ, দেশ, জাতি কিংবা কোনো সংগঠন সবার ক্ষেত্রে একটি চরম সত্য হচ্ছে- কোনো মিশনকে যথাযথভাবে সামনে এগিয়ে নিতে চাইলে কিংবা আরাধ্য কর্মে সাফল্য পেতে হলে চাই সঠিক দর্শন। সঠিক লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। কমপিউটার জগৎ শুরু থেকেই এ ব্যাপারে ছিল যথার্থ অর্থেই সচেতন। তাই আমাদের আন্দোলনটা কী, কোন পথে আমরা হাঁটব, কী হবে আমাদের পথচিত্র, আমরা কী চাই- একদম সূচনাতেই তা ঠিক করে নিয়েছিলাম। আমাদের সম্যক উপলব্ধিতে ছিল- অধ্যাপক আবদুল কাদের যে তথ্যপ্রযুক্তিসমৃদ্ধ বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন, তা শুধু তখনই সম্ভব যখন কমপিউটার পৌঁছবে সাধারণ মানুষের হাতে, জনগণের হাতে। তাই আমাদের প্রথম ও প্রধানতম দাবি হয়ে ওঠে- ‘জনগণের হাতে কমপিউটার চাই’। এ দাবি নিয়েই কার্যত কমপিউটার জগৎ সূচনা করে এ দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের আন্দোলন। আমরা কমপিউটার জগৎ-এর প্রথম সংখ্যার প্রচ্ছদ প্রতিবেদন রচনা করি ‘জনগণের হাতে কমপিউটার চাই’ শিরোনাম দিয়ে।
প্রশ্ন হচ্ছে, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ায় তথ্যপ্রযুক্তি আন্দোলনকে আমরা কেনো এতটা গুরুত্বের সাথে নিয়েছি? প্রখ্যাত চিন্তাবিদ-বিজ্ঞানী বার্টলম্যান বলেছিলেন- ‘বিজ্ঞান যখন পথ হারায়, দর্শন তখন পথ দেখায়। আর দর্শন যখন পথ হারায়, বিজ্ঞান তখন পথ দেখায়’। তাই আমাদের এখন সবদিক থেকে পথ হারানো দেশ-জাতি-সমাজকে পথ দেখানোর দায়িত্ব এসে পড়েছে বিজ্ঞানের ওপর। আর তথ্যপ্রযুক্তি তথা আইটি যখন বিজ্ঞানের সবচেয়ে অগ্রসর-সফল-প্রায়োগিক-বাণিজ্যিক শাখা, তখন বিজ্ঞানের হয়ে এ দায়িত্বটা এসে পড়ে তথ্যপ্রযুক্তির ওপর। সে সূত্রেই তথ্যপ্রযুক্তি আন্দোলনকে আমরা এতটা গুরুত্বের সাথে নিয়েছি। আর সেই সাথে আমাদের উপলব্ধিতে ছিল, এ আন্দোলন হতে হবে সার্বিক। দেশের সার্বিক জনগোষ্ঠীকে এ আন্দোলনে সংশ্লিষ্ট করতে না পারলে এক্ষেত্রে কোনো ধরনের সাফল্য আশা করা যায় না। সে জন্যই আমাদের প্রথম ও শেষ কথা- ‘জনগণের হাতে কমপিউটার চাই’।
কমপিউটার জগৎ-এর সূচনাসংখ্যার ‘জনগণের হাতে কমপিউটার চাই’ শীর্ষক প্রচ্ছদ প্রতিবেদনে আমরা যথার্থ উপলব্ধি নিয়েই লিখেছিলাম- ‘এ দেশে প্রচলিত রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষা, সুযোগ ও অধিকারের মতোই কমপিউটারের বিস্তার সীমিত হয়ে পড়েছে মুষ্টিমেয় ভাগ্যবান ও শৌখিন মানুষের মধ্যে। মেধা, বুদ্ধি ও ক্ষিপ্রতায় অনন্য এ দেশের সাধারণ মানুষকে আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান-প্রযুক্তিতে শাণিত করে তোলা হলে তারাই সম্পদ, জীবন ও বিবেক-বিনাশী বর্তমান জীবনধারা বদলে দিতে পারে। ইরি ধানের বিস্তার, পোশাক শিল্প ও হালকা প্রকৌশল শিল্পে কৃষক, সাধারণ মেয়ে আর কর্মজীবী বালকেরা সৃষ্টি করেছে বিস্ময়। একই বিস্ময় কমপিউটারের ক্ষেত্রেও সৃষ্টি হতে পারে- যদি স্কুল বয়স থেকে কমপিউটারের আশ্চর্য জগতে এ দেশের শিশু ও শিক্ষার্থীদের অবাধ প্রবেশ ও চর্চার একটি ক্ষেত্র সৃষ্টি করা যায়।’
কমপিউটার জগৎ-এর সূচনা সংখ্যাটির সম্পাদকীয়তে কমপিউটার প্রযুক্তি সম্পর্কে আমাদের উপলব্ধির কথা জানিয়ে তখন লিখেছিলাম, ‘বিগত ২-৩ দশকের বিবর্তনে কমপিউটার আজ এমন এক পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে, যার বিস্ময়কর অবদান মানুষের জীবন ও সভ্যতার সব ক্ষেত্রকেই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রভাবিত করছে। কমপিউটার এখন ব্যবস্থাপনায়, সরকারি প্রশাসনে, শিল্পে, শিক্ষায়, গবেষণায়, চিকিৎসায়, যুদ্ধে, যোগাযোগ ব্যবস্থায় এমনকি বিনোদনে ব্যবহার হয়ে আসছে। এ বিপ্লবে যোগ দেয়ার অন্যতম শর্ত হচ্ছে- কমপিউটার শিক্ষার ও কমপিউটারায়নের ব্যাপক প্রসার। কমপিউটার জগৎ প্রকাশনা এ বিপ্লবে বাংলাদেশকে সম্পৃক্ত করার প্রত্যয়ে আমাদের বলিষ্ঠ প্রয়াস। উন্নত দেশগুলোর অবস্থা দেখে উন্নত প্রযুক্তি গ্রহণের ফলে ‘কমপিউটার বেকার তৈরি করবে’- এ খোঁড়া তর্ক আজকাল আর কেউ করে না। একটি উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাতে বিনিয়োগ করা মূলধন সবচেয়ে কম সময়ে ফেরত পাওয়া যায়। তা দিয়ে নতুন করে আবার কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা যায়। তার চেয়ে বড় কথা, এর মাধ্যমে উন্নত মেধা ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন মানবসম্পদ তৈরি হয়। সম্পদের কোনোরূপ স্থানান্তর ছাড়াই এর সার্ভিস বারবার উঁচু দামে বিক্রি করা যায়। কাজেই আমাদের দেশের দুর্বল অর্থনৈতিক অবস্থায় এটি বেশি গুরুত্ব পাওয়ার দাবি রাখে। আমরা মনে করি, কমপিউটারায়নে অর্থনৈতিক সমস্যা বিশেষ কোনো বিবেচ্য নয়। সামাজিক ও রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিই এখানে মুখ্য।’
করমুক্ত কমপিউটার চাই
‘জনগণের হাতে কমপিউটার চাই’- এ দাবি মেটাতে হলে সস্তায় কমপিউটার মানুষের কাছে পৌঁছানো ছাড়া এর কোনো বিকল্প নেই। কমপিউটার ও কমপিউটার পণ্যের ওপর বর্ধিত হারে ট্যাক্স কার্যকর করে সস্তায় কমপিউটার পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি যে কখনই সম্ভব নয়, সে অনুধাবন শুরুতেই আমাদের ছিল। সে উপলব্ধি নিয়েই আমরা কমপিউটার জগৎ-এর দ্বিতীয় সংখ্যাটিতেই ‘ব্যর্থতা বা বর্ধিত ট্যাক্স নয়, জনগণের হাতে কমপিউটার চাই’ শিরোনাম নিয়ে এক্ষেত্রে দাবিমুখী প্রচ্ছদ প্রতিবেদন তৈরি করি। তখনই আমরা লক্ষ করি, কর না বাড়ানোর ব্যাপারে আমাদের আকুল আবেদন উপেক্ষিত হয়েছে। বিসিসির নির্বাহী পরিচালক এবং কমপিউটার সোসাইটি ও কমপিউটার পরিবেশক সমিতিও কমপিউটারকে করমুক্ত রাখার কথা বললেও রাজস্ব বোর্ড অযৌক্তিকভাবে এক্ষেত্রে কর বাড়িয়ে দিয়েছে। আমরা বিষয়টিকে ‘জনগণের হাতে কমপিউটার চাই’ দাবির বিরুদ্ধে একটি ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখি। আমরা এ ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সোচ্চার আওয়াজ তুলি আমাদের তৃতীয় সংখ্যার প্রচ্ছদ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এ সংখ্যাটির প্রচ্ছদ প্রতিবেদনের শিরোনাম করি- ‘কমপিউটারবিরোধী ষড়যন্ত্র বন্ধ করুন, জনগণের হাতে কমপিউটার চাই’।
এভাবেই আমাদেরকে বিগত দুই দশক বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের আন্দোলনকে একটিমাত্র লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের দিকে তাড়িত করতে হয়েছে। সে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল একটাই- ‘জনগণের হাতে কমপিউটার চাই’। আর এ আন্দোলনের অংশ হিসেবে আমাদেরকে আরেকটি মুখ্য দাবিকে সামনে নিয়ে আসতে হয়। সে দাবিটি হচ্ছে- ‘করমুক্ত কমপিউটার চাই’। আর এ আন্দোলনটির প্রথম পর্বটি আমরা শুরু করি জুন, ১৯৯১-এ প্রকাশিত আমাদের দ্বিতীয় সংখ্যায় ‘বর্ধিত ট্যাক্স নয়’ দাবি তুলে। জুলাইয়ে এসে দেখলাম, বাজেটে কমপিউটারের ওপর কর বাড়ানো হয়েছে। আগের বছরের বাজেটে কমপিউটারের ওপর আমদানি কর ছিল ১০ শতাংশ। ছিল না কোনো বিক্রয় কর। আমদানি করের সাথে যোগ হতো ৮ শতাংশ উন্নয়ন সারচার্জ, আড়াই শতাংশ অগ্রিম আয়কর। সব মিলিয়ে কর দিতে হতো ২৩ শতাংশ। নতুন বাজেটে তা বাড়িয়ে তোলা হলো ৪৩ শতাংশে। আমরা একে ষড়যন্ত্র আখ্যায়িত করে লেখা প্রকাশ জোরালোভাবে অব্যাহত রাখি। সরকার পিছু হটে। কমপিউটারের ওপর আমদানি শুল্ক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়। অন্যান্য কর মিলিয়ে দেয় করের পরিমাণ দাঁড়ায় ১০ শতাংশ। এই কর কমানোর উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। তবে এখানেই থেমে থাকা নয়। আমাদের নামতে হয় ‘করমুক্ত কমপিউটার চাই’ দাবির আন্দোলনে। চালিয়ে যেতে হয়েছে এ আন্দোলন। ১৯৯১ সালের জুন সংখ্যায় এসে আমাদেরকে সম্পাদকীয়তে লিখতে হলো- ‘ক্ষয়িষ্ণু ও বাতিল প্রযুক্তি প্রচলনে উৎসাহিত করলেও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির অন্যতম বাহন ভবিষ্যৎজয়ী কমপিউটারের ওপর অযৌক্তিকভাবে কর বাড়িয়েছে রাজস্ব বোর্ড। জনগণ এর তীব্র বিরোধিতা করছে। জনগণ তথ্যপ্রযুক্তির সুফল থেকে জাতিকে বঞ্চিত করার পদক্ষেপ চায় না। জনগণ কমপিউটারের ওপর বর্ধিত কর চায় না। আমরাও কমপিউটারায়ন প্রসার বন্ধ করার এ ব্যবস্থার অবসান চাই। আশা করি সরকার এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে সচেতন জনগণের আহবানে সাড়া দেবে।’
কিন্তু সরকারের গড়িমসির প্রেক্ষাপটে পরের মাস আগস্টে এসেই সম্পাদকীয়তে আরও কঠোর ভাষায় আমাদেরকে লিখতে হলো- ‘দেশের জনগণের হাত থেকে কমপিউটারকে সরিয়ে রাখার গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। আমরা কমপিউটার রাজ্যের বিজ্ঞানী, উদ্যমী ও শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব, ব্যবসায়ী, বুদ্ধিজীবী, চাকরিজীবী ও ছাত্রসহ সব স্তরের নাগরিকদের কাছ থেকে যে সুচিন্তিত ধারণা ও পরামর্শ পেয়েছি, তা বিশ্লেষণ করে আমরা এই ভেবে শঙ্কিত যে, চরম অজ্ঞতা অথবা দেশের বিরুদ্ধে সুগভীর ষড়যন্ত্র কালজয়ী এ প্রযুক্তির সুফল থেকে দেশ ও জনগণকে বঞ্চিত করছে। কমপিউটারের ওপর ট্যাক্স বাড়িয়ে এর প্রচলন কমিয়ে তা করা হচ্ছে।’
সেপ্টেম্বরে এসে আমরা দেখলাম কমপিউটার আমদানির ওপর কর কমানো হয়েছে। আমরা তখন রাজস্ব বোর্ডকে মোবারকবাদ জানিয়ে সম্পাদকীয় লিখি। ১৯৯৪ সালে এসে আমাদেরকে রচনা করতে হয়েছে ‘কমপিউটারের ওপর ট্যাক্সের খড়গ’ শীর্ষক প্রচ্ছদ প্রতিবেদন, কড়া সমালোচনা করতে হয়েছে কমপিউটারের ওপর সরকারের করারোপের। এভাবে আমাদেরকে বরাবর জারি রাখতে হয়েছে কমপিউটার ও কমপিউটার পণ্যের ওপর করারোপের বিরুদ্ধে আন্দোলন। কারণ, থেকে থেকে সব সরকারের আমলেই নানা কৌশলে নানাভাবে করারোপের প্রবণতা জারি ছিল। আমাদেরকে এর বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকতে হয়েছে।
বাংলাদেশে কমপিউটারায়ন
‘বাংলাদেশে কমপিউটারায়ন দ্রুত প্রয়োজন’- এ অমোঘ সত্যটি বিগত বিশ বছরে আমাদেরকে কতবার যে উচ্চারণ করতে হয়েছে, তার ইয়ত্তা নেই। তারপরও সংশ্লিষ্টদের টনক নাড়াতে আমরা পারিনি। দেশে কমপিউটারায়নের কাজটি চলেছে ধীরগতি নিয়েই। ফলে তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকাটাই আমাদের নিশ্চিত হয়েছে, এগিয়ে যাওয়া নয়। বাংলাদেশে কমপিউটারায়ন যে দরকার তেমন একটা উপলব্ধি অনেক দেরিতে মনে হয় আমাদের মধ্যে এসেছে। ফলে অন্যরা যখন এ কাজটি শুরু করেছে অনেক আগে, তখন আমরা তা যেনো সবেমাত্র শুরু করেছি। তাও আমাদের কমপিউটারায়নের কাজ খুব একটা গতি নিয়ে চলছে, তেমনটি বোধহয় এখনও দাবি করা যাবে না। তবে কমপিউটার জগৎ এর প্রকাশনা শুরুর বছরটিতেই সংশ্লিষ্টদের কাছে সে তাগিদটি জোরালোভাবেই দিয়েছিল। আমরা সে তাগিদটি দেয়ার জন্য কমপিউটার জগৎ-এর প্রথম বর্ষ চতুর্থ-পঞ্চম-ষষ্ঠ সংখ্যায় তিন পর্বের একটি ধারাবাহিক লেখায় গুরুত্বের সাথে তা তুলে ধরি। নিছক তাগিদ দিয়েই দায় সারিনি, সাথে সাথে সুনির্দিষ্ট করণীয় উল্লেখ করে সুপারিশও রাখি। সে লেখায় বাংলাদেশে কমপিউটারায়নে আমাদের সুপারিশ ছিল-
০১. অফিসের শোভা বাড়ানোর জন্য কমপিউটার এনে লাভ নেই। কেরানি থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ পদ পর্যন্ত সবাই যেনো সমানতালে কমপিউটারের সুফল ভোগ করতে পারে সে ব্যবস্থা কঠোরভাবে করা উচিত। প্রথমে বিভাগওয়ারী, এর পর জেলা পর্যায়ে ও সবশেষে উপজেলা পর্যায়ে কমপিউটারের সুফল পৌঁছানো দরকার।
০২. সপ্তম শ্রেণী থেকেই পড়ালেখার কাজে কমপিউটার পদ্ধতি চালু করা হোক।
০৩. কমপিউটারে উচ্চ প্রশিক্ষণ নেয়ার পর সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে ব্যাপকভাবে মেধার মূল্যায়ন করতে হবে, যাতে আমরা বিদেশের মরীচিকার পেছনে না ছুটি।
০৪. বিদেশে মা-বাবা আজ ছেলে-মে য়ের ’কাছ থেকে কমপিউটার শিখছে। আমাদের দেশেও গণশিক্ষার মতো ঘরে ঘরে কমপিউটার শেখার ব্যাপারে উৎসাহ দেয়া উচিত।
০৫. দিনরাত ২৪ ঘণ্টা কমপিউটার চালু রাখার ব্যবস্থা করা উচিত। ভাগে ভাগে এতে কাজ করা যেতে পারে। এতে দ্রুত কমপিউটারায়ন হবে।
০৬. আজকাল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ব্যক্তিগতভাবে কোনো বিভাগের ওপর কমপিউটারের দায়িত্ব না চাপিয়ে ছাত্র-শিক্ষকের ওপর দায়িত্ব ভাগ করে দিতে পারি। এতে চাপ কম পড়বে।
০৭. কমপিউটার যন্ত্রাংশ বিদেশ থেকে আমদানি করে দেশে সংযোজন শিল্প গড়ে তোলার জন্য দেশে দক্ষ লোকবল আবশ্যক। এ ছাড়া যেসব যন্ত্র দেশে তৈরি করা যায় সেসব যেনো বিদেশ থেকে আনা না হয়।
০৮. কমপিউটারের দ্রুত প্রসারের জন্য বিভিন্ন মেলা, সেমিনার ও সিম্পোজিয়ামের আয়োজন করতে হবে। গণমাধামে কমপিউটার সম্পর্কিত আরও বিস্তৃত কর্মসূচি নিতে হবে।
০৯. সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে দেশে আরও কমপিউটার আনতে হবে।
এভাবে আমরা বরাবর বাংলাদেশে কমপিউটারায়নের প্রয়োজনীয়তার কথা বিভিন্নভাবে সংশ্লিষ্টদের সামনে তুলে ধরেছি। পাশাপাশি কমপিউটারায়নের পথে যখন যে বাধা এসেছে, তার বিরুদ্ধে সোচ্চার থেকেছি। আমাদের এসব তাগিদ-পরামর্শ-সুপারিশ সংশ্লিষ্টদের কাছে কখনও মূল্যায়িত হয়েছে, কখনও হয়েছে অবমূল্যায়িত। ফলে বাংলাদেশে কমপিউটারায়নের কাজ কখনও সাবলীল গতিতে চলেনি। কাঙ্ক্ষিত কমপিউটারায়নও ঘটেনি। কাজটি এখনও দেশে শুরু ‘হয়েছে-হচ্ছে-হবে’ পর্যায়ে আছে বলা যায়। বর্তমান সরকারের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ কর্মসূচির ফলে অবশ্য কমপিউটারায়নের কাজে কিছুটা হলেও গতি এসেছে। তবু সে গতি কাঙ্ক্ষিত মাত্রার নয়, তাও স্বীকার করতে হবে। এ গতি বাড়ানো আজ অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।
আমরা লড়েছি রেকর্ড গড়েছি
কমপিউটার জগৎ এই বিশ বছরে এদেশের তথ্যপ্রযুক্তি আন্দোলন চালাতে গিয়ে বেশ কিছু রেকর্ড সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে। নিঃসন্দেহে এসব রেকর্ড গড়ার জন্য আমরা অবশ্যই বিশ বছর পূর্তির এই সময়টায় গর্ববোধ করতে পারি। তাই আজ সত্যি সত্যিই গর্বের সাথে পাঠকসাধারণ ও তথ্যপ্রযুক্তিসংশ্লিষ্টদের জানাতে চাই-
০১. কমপিউটার জগৎ এদেশের প্রথম বাংলা তথ্যপ্রযুক্তি সাময়িকী।
০২. কমপিউটার জগৎ এই বিশ বছর ধরে এদেশের সর্বাধিক প্রচারিত তথ্যপ্রযুক্তি সাময়িকী হিসেবে বিতর্কাতীতভাবে সব মহলে স্বীকৃত। এ অনন্য গৌরব ধরে রাখার জন্য অতীতের মতো আগামী দিনেও আমাদের সচেতন প্রয়াস অব্যাহত থাকবে।
০৩. কমপিউটার জগৎ এদেশে সর্বপ্রথম দাবি তোলে- ‘জনগণের হাতে কমপিউটার চাই’। কমপিউটার জগৎ এর সূচনা সংখ্যায় এ শিরোনামে প্রচ্ছদ প্রতিবেদন তৈরি করে এ দাবির সূচনা করে।
০৪. আমরাই এদেশে ১৯৯১ সালের ডিসেম্বরে সবার আগে দেশবাসীর কাছে ডাটা এন্ট্রির সম্ভাবনার কথা তুলে ধরি। এ ছাড়া আয়োজন করি এ সম্পর্কিত সংবাদ সম্মেলন।
০৫. এদেশে আমরাই সর্বপ্রথম ১৯৯২ সালের জানুয়ারি সংখ্যার প্রচ্ছদ প্রতিবেদনের মাধ্যমে কমপিউটারে বাংলাভাষা ব্যবহারের সুবিধা সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করি।
০৬. কমপিউটার জগৎ ১৯৯২ সালের সেপ্টেম্বরে আয়োজন করে দেশের প্রথম প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা।
০৭. কমপিউটার জগৎ ১৯৯২ সালের সেপ্টেম্বরে দেশে প্রথম কমপিউটারের দাম কমানোর দাবি তোলে।
০৮. কমপিউটার জগৎ ১৯৯২ সালের ২৮ ডিসেম্বর আয়োজন করে দেশের প্রথম কমপিউটার ও মাল্টিমিডিয়া প্রদর্শনী।
০৯. এ পত্রিকা ১৯৯৩ সালের জানুয়ারিতে প্রথমবারের মতো প্রযুক্তি ক্ষেত্রে উৎসাহ যোগানোর লক্ষ্যে ‘বছরের সেরা ব্যক্তিত্ব’ ও ‘বছরের সেরা পণ্য’ পুরস্কার প্রবর্তন করে।
১০. এ পত্রিকা ১৯৯৩ সালের ৫ জানুয়ারি এদেশে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে কমপিউটার মেধাবীদের স্বীকৃতি জানিয়ে প্রবাসী বিজ্ঞানীদের ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জাতির কাছে উপস্থাপন করে।
১১. ১৯৯৩ সালের এপ্রিলে এ পত্রিকা এদেশে সর্বপ্রথম টেলিপ্রযুক্তি বিষয়ে বিস্তারিত দিকনির্দেশনা তুলে ধরে।
১২. কমপিউটার জগৎ-এর পক্ষ থেকে ১৯৯৩ সালের ১৪ জানুয়ারি এদেশে প্রথমবারের মতো কমপিউটারের ক্ষেত্রে প্রতিভাবান শিশুদেরকে একটি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে দেশ-জাতির কাছে তুলে ধরা হয়।
১৩. আমরাই এদেশে প্রথমবারের মতো ১৯৯৬ সালের ২৫ জানুয়ারি আয়োজন করি ‘ইন্টারনেট সপ্তাহ’।
১৪. কমপিউটার জগৎ ১৯৯৬ সালের প্রথম দিকে সর্বপ্রথম চালু করে কমপিউটার বিবিএস তথা বুলেটিন বোর্ড সার্ভিস।
১৫. এ পত্রিকা ১৯৯২ সালের ৩০ জানুয়ারি প্রথম এদেশে গ্রামের ছাত্রছাত্রীদের জন্য চালু করে কমপিউটার পরিচিতি কর্মসূচি।
১৬. ‘২০০০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের নিজস্ব স্যাটেলাইট চাই’ শীর্ষক প্রচ্ছদ প্রতিবেদন প্রকাশ করে ১৯৯৮ সালের ফেব্রুয়ারি সংখ্যায় এ দাবি সর্বপ্রথম তুলি।
১৭. ‘ডিজিটাল ডিভাইড’ শীর্ষক প্রচ্ছদ প্রতিবেদন ২০০১ সালের ফেব্রুয়ারি সংখ্যায় প্রকাশ করে আমরাই এদেশে সবার আগে দেশবাসীকে ডিজিটাল ডিভাইড দূর করে ডিজিটাল ব্রিজ গড়ে তোলার ব্যাপারে সচেতন করি।
কমপিউটারে বাংলাভাষা আন্দোলনের আরেক ক্ষেত্র
আমাদের আন্দোলনের অন্যতম প্রধান ক্ষেত্র ছিল কমপিউটারে বাংলাভাষার প্রয়োগ যথাসম্ভব ত্বরান্বিত করা। বলা যায়, এ দাবিটি নিয়ে এই বিশ বছর আমাদেরকে অব্যাহত লড়াই চালিয়ে যেতে হয়েছে নাছোড়বান্দার মতো। কমপিউটার জগৎ-এর নিয়মিত পাঠকমাত্রই জানেন, আমরা এ বিষয়টিকে কতটুকু গুরুত্বের সাথে নিয়েছি। ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি এলেই আমরা কমপিউটারে বাংলাভাষার প্রয়োগ ত্বরান্বিত করার জোরালো দাবি নিয়ে হাজির হয়েছি। এই বিশ বছরে আমরা পেয়েছি বিশটি ফেব্রুয়ারি মাস। এর মধ্যে কম করে হলেও আমরা ১০টি ফেব্রুয়ারি সংখ্যার প্রচ্ছদ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছি কমপিউটারে বাংলাভাষা প্রয়োগের বিষয় নিয়ে। এর বাইরে অন্যান্য মাসে ৫টি প্রচ্ছদ প্রতিবেদন তৈরি করেছি এই বাংলা কমপিউটিং বিষয়ে। তা ছাড়া এ নিয়ে সম্পাদকীয়সহ প্রচুর লেখালেখি ও প্রতিবেদন আমরা প্রকাশ করেছি। আমাদের প্রচ্ছদ প্রতিবেদনগুলোর শিরোনাম থেকে কমপিউটারে বাংলাভাষা প্রয়োগে আমাদের আন্দোলনের ধারাটি উপলব্ধি করা যাবে।
তাই এসব শিরোনাম এখানে উল্লিখিত হলো-
ফেব্রুয়ারি ১৯৯২ :
কমপিউটারে বাংলা, সর্বস্তরে আদর্শ মান চাই; জানুয়ারি ১৯৯৩ : বাংলা একাডেমীর হাতে বিপন্ন বাংলা;
আগস্ট ১৯৯৩ :
বিবিসির পোস্টমোর্টেম, বাংলাদেশের বাংলা ভারতের নিয়ন্ত্রণে;
ফেব্রুয়ারি ১৯৯৫ :
অনিশ্চয়তার পথে বাংলাদেশের বাংলা;
ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬ :
বাংলাদেশে বাংলা সফটওয়্যার, সফটওয়্যার বাণিজ্য;
মে ১৯৯৬ :
কমপিউটার ও বাংলাভাষা;
মার্চ ২০০১ :
বাংলাভাষার বিশাল টাকার তথ্যপ্রযুক্তি বাজার;
ফেব্রুয়ারি ২০০৩ :
বাংলা কমপিউটিংয়ের দুরবস্থা এবং বায়োসের উদ্যোগ;
ফেব্রুয়ারি ২০০৪ :
বাংলায় আইসিটি;
ফেব্রুয়ারি ২০০৫ :
তথ্যপ্রযুক্তির মহাসড়কে বাংলা কমপিউটিং;
ফেব্রুয়ারি ২০০৬ :
কমপিউটারে বাংলাভাষা প্রয়োগ, প্রয়োজন আরও জোরালো গবেষণা;
ফেব্রুয়ারি ২০০৭ :
ডিজিটাল যন্ত্রে কেমন আছে বাংলাভাষা;
ফেব্রুয়ারি ২০০৮ :
বাংলা কমপিউটিং ও আমরা;
ফেব্রুয়ারি ২০০৯ :
বাংলা কমপিউটিংয়ে গবেষণা। এ ছাড়াও এ সংখ্যায় বাংলাভাষা ও প্রযুক্তি বিষয়ে রয়েছে আরও দুটি লেখা : ‘কমপিউটারে বাংলা ধ্বনির প্রয়োগ ও ডিজিটাল বাংলাদেশ’ এবং ‘ডিজিটাল বাংলাদেশে বাংলাভাষার সঙ্কট’;
ফেব্রুয়ারি ২০১০ :
আইসিটি এবং আমাদের বাংলাভাষা এবং
ফেব্রুয়ারি ২০১১ :
বাংলা কমপিউটিং এবং কয়েকটি বাংলা সফটওয়্যার।
অপরিহার্য যখন সাবমেরিন ক্যাবল
তথ্যপ্রযুক্তির বিস্ময়কর অবদান ইন্টারনেট মানুষের কাছে খুলে দিয়েছে এক সীমাহীন তথ্যভান্ডার। যোগাযোগের ক্ষেত্রেও ইন্টারনেট এনেছে অভাবনীয় সুযোগ। এ সুযোগ পুরোপুরি কাজে লাগাতে চাই দ্রুতগতির ইন্টারনেট। ইন্টারনেট আজ অভিহিত হচ্ছে তথ্যে প্রবেশের ‘সুপার হাইওয়ে’ নামে। এই সুপার হাইওয়েতে আমাদের প্রবেশ নিশ্চিত করতে হলে অপরিহার্য ছিল সাবমেরিন ক্যাবল সংযোগ। এই সুপার হাইওয়েতে আমাদের প্রবেশ নিশ্চিত হলো মাত্র নিকট অতীতে। কিন্তু আমরা এ সুযোগের হাতছানি পেয়েছিলাম প্রায় দুই দশক আগে। ১৯৯২ সালের নভেম্বরে মাসিক কমপিউটার জগৎ ‘বিশ্বজোড়া ফাইবার অপটিক ক্যাবল বাংলাদেশের কাছ দিয়ে যাচ্ছে’ শীর্ষক একটি খবর প্রকাশ করে। এতে বলা হয়েছিল, ‘ফাইবার অপটিক লিঙ্ক অ্যারাউন্ড দ্য গেস্নাব’ নামে বিশ্বজুড়ে যে ফাইবার অপটিক ক্যাবল বসানো হচ্ছে, তার সংক্ষিপ্ত নাম FLAG (ফ্ল্যাগ)। জাপান থেকে যুক্তরাজ্যের লন্ডন পর্যন্ত স্বচ্ছ তারের এই টেলিযোগাযোগ লাইন ১৫ হাজার মাইল দীর্ঘ। কক্সজারের সামান্য দূর দিয়ে যাবে বিশ্বের ১৪টি দেশের মধ্যে সংযোগ সৃষ্টিকারী এ ক্যাবল। ১৯৯৬ সালের মধ্যে এ ক্যাবল চালু হলে প্রতি সেকেন্ডে পাঁচ গিগাবাইট তথ্য দেয়া-নেয়া করা যাবে। এ প্রকল্পে খরচ হবে ১০০ কোটি ডলার।’
এ খবর প্রকাশিত হওয়ার পরও আমরা আমলা ও রাজনীতিবিদদের মধ্যে সাবমেরিন ক্যাবল সংযোগের ব্যাপারে সীমাহীন গড়িমসি লক্ষ করি। ফলে পরবর্তী সময়ে কমপিউটার জগৎ বাংলাদেশের কাছ দিয়ে যাওয়া বিশ্বজোড়া ফাইবার অপটিক ক্যাবল নিয়ে মাঝেমধ্যেই প্রচ্ছদ প্রতিবেদন ও কয়েকটি তথ্যসমৃদ্ধ লেখা প্রকাশ করে এই আরাধ্য কাজটি যথাশিগগির সম্পাদনের জোরালো তাগিদ অব্যাহত রাখে। সর্বোপরি কমপিউটার জগৎ ১৯৯৩ সালের ৩ অক্টোবর হোটেল পূর্বাণীতে ‘জনগণের হাতে কমপিউটার চাই’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন এবং দেশবরেণ্য তথ্যপ্রযুক্তিবিদদের এক সম্মেলন আয়োজন করে। এ সম্মেলনে ফাইবার অপটিক ক্যাবল সংযোগের অন্যতম দাবিটি তোলা হয়। সম্মেলনে মূল বক্তা ছিলেন অধ্যাপক আবদুল কাদের। তিনি সম্মেলনে বলেন- ‘বাংলাদেশের অদূরে সাগরতল দিয়ে বিশ্বের সর্বাধুনিক অপটিক ক্যাবল যাচ্ছে এশিয়া থেকে ইউরোপ-আমেরিকায়। ফ্ল্যাগ নামের এই প্রকল্পের সাথে বাংলাদেশকে যুক্ত করার জন্য দাতা দেশগুলো, বিশেষ করে মুসলিম দেশগুলোর সহায়তা চাওয়া দরকার এবং জাতীয় পরিকল্পনায় এ অবকাঠামো অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি।’ কিন্তু সরকারের নীতিনির্ধারকদের গাফিলতির জন্য এবং দূরদৃষ্টির অভাবে আমরা সে সুযোগ হারাই। এর পর আসে সি-মি-উই-৩ নামের সাবমেরিন ক্যাবলে সংযোগ পাওয়ার সুযোগ। এ বিষয়েও কমপিউটার জগৎ-এ ব্যাপক লেখালেখি করেও সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিদের ঘুম ভাঙাতে পারিনি আমরা। যা-ই হোক, প্রথমে প্রায় বিনা খরচে সাবমেরিন ক্যাবলে সংযোগ পাওয়ার যে সুযোগ আমরা পেয়েছিলাম, তা পরবর্তী দেড় দশক সময় পার করে অনেক মূল্য দিয়ে পেতে হয়েছে। এর পরও সাবমেরিন ক্যাবল সংযোগের সুফল জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে সীমাহীন টালবাহানার অন্ত নেই। এজন্য এখনও আমাদেরকে লেখালেখি চালিয়ে যেতে হচ্ছে।
ছিলাম ই-গভর্নেন্স চালুর আন্দোলনেও
এদেশের মানুষ ব্যক্তি ও সামষ্টিক জীবনে তথ্যপ্রযুক্তির প্রতিটি সুফল উপভোগ করুক, সেটা ছিল কমপিউটার জগৎ-এর চরম ও পরম চাওয়া। সেজন্য বহু আগেই আমরা চেয়েছিলাম এদেশে ই-গভর্নেন্স চালু হোক। এর মাধ্যমে দেশের মানুষ তথ্যপ্রযুক্তির সুবাদে সরকারের সাথে যাবতীয় কাজকর্ম করবে সহজে, অনায়াসে ও কম খরচে। সরকারি কাজকর্মে আসবে স্বচ্ছতা। দেশে দুর্নীতি কমবে। বিষয়টির গুরুত্বের কথা ভেবে ২০০০ সালের ডিসেম্বর সংখ্যায় ও ২০০৫ সালের অক্টোবর সংখ্যায় আমাদের প্রচ্ছদ প্রতিবেদনের বিষয় ছিল ই-গভর্নেন্স। এ সংখ্যা দুটির প্রচ্ছদ শিরোনাম ছিল যথাক্রমে ‘ই-গভর্নেন্স’ এবং ‘ই-গভর্নেন্স, সুশাসন অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির হাতিয়ার’।
আমরা এসব প্রচ্ছদ প্রতিবেদনসহ মাঝেমধ্যে অন্যান্য লেখালেখির মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের বোঝাতে চেষ্টা করেছি, ই-গভর্নেন্স আমাদের সময়ের প্রয়োজন। কেনো প্রয়োজন সেসব বিষয়ও আমরা আমাদের লেখালেখির মাধ্যমে বিস্তারিত তুলে ধরায় ছিলাম বরাবর সচেষ্ট। তার পরও সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের ‘করছি-করব’ প্রবণতার অবসান ঘটেছে বলে মনে হয়নি।
তুলে ধরেছি তথ্যপ্রযুক্তির সম্ভাবনার কথাও
শুধু আকর্ষণীয় কিছু স্লোগান, কয়েক দফা দাবি-দাওয়া, কিছু সুপারিশ নিয়ে দাঁড়ালেই এ দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের অগ্রগমন নিশ্চিত হবে না, তথ্যপ্রযুক্তিসমৃদ্ধ বাংলাদেশ পাওয়া যাবে না- সে উপলব্ধিও শুরু থেকে আমাদের মধ্যে ছিল। তাই আমরা ধরেই নিয়েছিলাম দেশের মানুষের সামনে তথ্যপ্রযুক্তি সম্ভাবনার কথাও তুলে ধরতে হবে। আমরা আমাদের নিজস্ব পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে যখন যে সম্ভাবনার হাতছানির কথা জানতে পেরেছি, তাই আমাদের লেখালেখি ও অন্যান্য তৎপরতার মাধ্যমে দেশবাসীর সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমরা এ কাজটি করেছি লেখালেখি, বিশেষত গুরুত্বপূর্ণ প্রচ্ছদ প্রতিবেদন প্রকাশের মাধ্যমে। কখনও এ জন্য আমাদেরকে উদ্যোগী হয়ে আয়োজন করতে হয়েছে সংবাদ সম্মেলন, সেমিনার কিংবা সিম্পোজিয়াম। কখনও আমাদেরকে যেতে হয়েছে নীতিনির্ধারকদের কাছে। এরা কখনও আমাদের কথা কানে তুলেছেন, কখনও আমাদের পরামর্শের প্রতি প্রদর্শন করেছেন চরম অবজ্ঞা। আমরা একে অস্বাভাবিক মনে করিনি। আমাদেরকে সুযোগ ও সম্ভাবনার কথা অব্যাহতভাবে জানিয়েই যেতে হয়েছে।
এই তো এই বর্ষপূর্তি সংখ্যার আগের সংখ্যাটিতে আমরা প্রচ্ছদ প্রতিবেদন রচনা করে দেশবাসীকে জানিয়েছি এই সময়ে বাংলাদেশের সামনে অপেক্ষা করছে ভিওআইপি ও আইপি টেলিফোনি আউটসোর্সিংয়ের অসীম সুযোগ ও সম্ভাবনা। ‘ভিওআইপি ও টেলিকম শিল্পে বাংলাদেশের সামনে অপার আউটসোর্সিং সুযোগ’ শীর্ষক এ প্রচ্ছদ প্রতিবেদনে আমরা তা-ই তুলে ধরেছি বিস্তারিতভাবে। সেখানে আমরা বাজার বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছি, বিদ্যমান সক্ষমতা নিয়ে বাংলাদেশ যথার্থ উদ্যোগী হলে প্রতিবছর এ খাতের আউটসোর্সিং থেকে শত শত কোটি ডলার আয় করতে পারে।
কমপিউটার জগৎ-এর প্রকাশনার প্রথম বছরেই ‘ডাটা এন্ট্রি : অফুরান কর্মসংস্থানের সুযোগ’ শীর্ষক প্রচ্ছদ প্রতিবেদন প্রকাশ করে আমরা দেশবাসীকে ডাটা এন্ট্রির সমূহ সুযোগ ও সম্ভাবনার কথা জানাই। সেই সাথে এ সুযোগ কাজে লাগানোর তাগিদটি দিই। সেখানে আমরা সুস্পষ্টভাবে বলি, কমপিউটার প্রযুক্তি ব্যবহার আমাদের দেশে বিদেশী মুদ্রা অর্জনের নতুন এক সম্ভাবনার দুয়ার উন্মোচন করতে পারে। শিল্পোন্নত দেশগুলো তাদের বিপুল পরিমাণ ডাটা এন্ট্রির কাজ করিয়ে নিচ্ছে তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে। ভারত, শ্রীলঙ্কা, ফিলিপাইনসহ অনেক দেশ সে সুযোগ কাজে লাগানোর প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। আমরাও চাইলেই সে সুযোগ নিতে পারি।
এ সংখ্যাটিতেই আমরা আরও একটি সম্ভাবনার কথা তুলে ধরি। ‘কমপিউটার এবং জনশক্তি : বিশ্বে লাখ লাখ প্রোগ্রামারের চাহিদা’ শীর্ষক দ্বিতীয় প্রচ্ছদ প্রতিবেদনে আমরা জনাই- নিজস্ব জনশক্তির মাধ্যমে উন্নত দেশগুলো লাখ লাখ প্রোগ্রামারের চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হচ্ছে। এরা এজন্য তৃতীয় বিশ্বের জনশক্তিকে কাজে লাগাতে চায়। শুধু জাপানেই লাখ লাখ কমপিউটার জানা লোক দরকার। চীন, ভারত, শ্রীলঙ্কা, ফিলিপাইন, মালয়েশিয়াসহ তৃতীয় বিশ্বের অনেক দেশ এ সুযোগ নিতে জনশক্তি উন্নয়ন ও রফতানির চেষ্টা চালাচ্ছে এবং সফলও হচ্ছে। বাংলাদেশ এজন্য সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। তবে অচিরেই নেয়া দরকার সে তাগিদ ছিল এ প্রতিবেদনে।
এভাবে বিগত বিশটি বছরে আমাদের পর্যবেক্ষণে যখনই কোনো সুযোগ ও সম্ভাবনার দিকটি ধরা পড়েছে, তখনই কোনো না কোনোভাবে আমরা এ সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে যেখানে যে তাগিদটি দেয়া প্রয়োজন, তা যথাসময়ে যথার্থভাবে দিয়েছি। এখানে কয়টি প্রচ্ছদ প্রতিবেদনের শিরোনামের কথা উল্লেখ করছি যেগুলো আমাদের সে দাবির যথার্থতা প্রমাণের জন্য যথেষ্ট।
এ ধরনের প্রচ্ছদ প্রতিবেদনের মাঝে আছে-
০১. সার্ভিস সেক্টর : অর্থনৈতিক মুক্তির চাবিকাঠি, নভেম্বর ১৯৯১ সংখ্যা;
০২. নববইয়ের দশকের অগ্রগতি ও প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা কমপিউটারে নিহিত, ফেব্রুয়ারি ১৯৯২ সংখ্যা;
০৩. ডাটা এন্ট্রি ও সফটওয়্যারের মধ্যবর্তী কাজ দিয়ে রফতানি আয় বাড়ানো সম্ভব, এপ্রিল ১৯৯২ সংখ্যা;
০৪. বিশৃঙ্খল ব্যাংক খাতের জিয়নকাঠি কমপিউটারায়ন, অক্টোবর ১৯৯৩ সংখ্যা;
০৫. অর্থ উপার্জনে কমপিউটারের হাতছানি, সেপ্টেম্বর ১৯৯৪ সংখ্যা;
০৬. কমপিউটারনির্ভর জীবন বদলে দেবে বিশ্ব, এপ্রিল ১৯৯৫ সংখ্যা;
০৭. নতুন বিপ্লবের দ্বারপ্রান্তে কমপিউটারবিশ্ব, ডিসেম্বর ১৯৯৫ সংখ্যা;
০৮. বাংলাদেশের কৃষি উন্নয়নে কমপিউটার, জুন ১৯৯৬ সংখ্যা;
০৯. সম্ভাবনা থাকলেও উদ্যোগ নেই বাংলাদেশে, সেপ্টেম্বর ১৯৯৭ সংখ্যা;
১০. অর্থনীতির উচ্চ প্রবৃদ্ধিতে কমপিউটার, ফেব্রুয়ারি ১৯৯৮ সংখ্যা;
১১. দারিদ্র্য বিমোচন ও মানবসম্পদ উন্নয়নে কমপিউটার, জুন ১৯৯৮ সংখ্যা;
১২. ইউরোমানি : বিপুল সম্ভাবনার হাতছানি, অক্টোবর ১৯৯৮ সংখ্যা;
১৩. বিশাল টাকার বাংলাভাষার তথ্যপ্রযুক্তি বাজার, মার্চ ২০০১ সংখ্যা;
১৪. সম্ভাবনাময় নতুন প্রযুক্তি আইপি টেলিফোনি, জুন ২০০১ সংখ্যা;
১৪. সফটওয়্যার শিল্পের বিস্ময়কর উত্থান, মে ২০০২ সংখ্যা;
১৫. বাংলাদেশেও আইটি এনাবলড সার্ভিসের ব্যবসায়ের ঢেউ, জুন ২০০২ সংখ্যা;
১৬. আউটসোর্সিংয়ের জোয়ার ও বাংলাদেশ, মার্চ ২০০৩ সংখ্যা;
১৭. বছরে হারাচ্ছি ৫৪০০ কোটি টাকার আইসিটি বাজার, মে ২০০৩ সংখ্যা;
১৮. হে তরুণ আছে কাজ, তৈরি করো নিজেকে, ডিসেম্বর ২০০৩ সংখ্যা;
১৮.১ দারিদ্র্য বিমোচনে আইসিটি, মে ২০০৪ সংখ্যা;
১৯. আর্থসামাজিক উন্নয়নে তথ্যপ্রযুক্তি, এপ্রিল ২০০৫ সংখ্যা;
২০. আইসিটি শিক্ষা যখন সম্ভাবনাময়, জুলাই ২০০৫ সংখ্যা;
২১. বাংলাদেশ আগামী দিনের আউটসোর্সিং ডেস্টিনেশন, জুন ২০০৬ সংখ্যা;
২২. ধরতে হবে লাখো কোটি টাকার মেডিক্যাল ট্রান্সক্রিপশন বাজার, আগস্ট ২০০৬ সংখ্যা;
২৩. তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক সম্ভাবনাময় দেশী প্রকল্প, এপ্রিল ২০০৭ সংখ্যা;
২৪. সম্ভাবনাময় শিল্প মোবাইল কনটেন্ট, মার্চ ২০০৮ সংখ্যা;
২৫. কলসেন্টার বিলিয়ন ডলার আয়ের টার্গেট, এপ্রিল ২০০৮ সংখ্যা;
২৬. ঘরে বসে বিপুল আয়ের উপায় ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং, জুন ২০০৮ সংখ্যা;
২৭. বিপুল আয়ের সম্ভাবনাময় সেমিকন্ডাক্টর প্রযুক্তিশিল্প, সেপ্টেম্বর ২০০৮ সংখ্যা;
২৮. তরুণদেরকেই ধরতে হবে সাড়ে ৩১ হাজার কোটি টাকার তথ্যপ্রযুক্তি বাজার, জুলাই ২০০৯ সংখ্যা;
২৯. দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় তথ্যপ্রযুক্তি, ডিসেম্বর ২০০৮ সংখ্যা;
৩০. ন্যানো মেডিসিন আজ ও আগামীর স্বাস্থ্যসেবা, আগস্ট ২০০৯ সংখ্যা;
৩১. ভবিষ্যতের আইসিটি হবে ক্লাউড কমপিউটিংনির্ভর, অক্টোবর ২০১০ সংখ্যা।
বিগত বিশটি বছর কমপিউটার জগৎ দেশবাসীর সামনে এভাবে তথ্যপ্রযুক্তির নানা সম্ভাবনার দিক তুলে ধরে এ খাতে স্বাভাবিক গতি আনতে যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে গেছে।
স্বপ্নদ্রষ্টা ও প্রতিষ্ঠাতা পুরুষ
অধ্যাপক আবদুল কাদের। কমপিউটার জগৎ-এর স্বপ্নদ্রষ্টা ও প্রতিষ্ঠাতা পুরুষ। প্রেরণাদাতা ও প্রাণপুরুষ। তার জন্ম ১৯৪৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর। ইন্তেকাল ২০০৩ সালের ৩ জুলাই। সে হিসেবে তার যাপিত জীবন ৫৩ বছর ৬ মাস ৩ দিনের। তার এ যাপিত জীবনের অধ্যায়কে তিনি কত যে সুন্দর ও অনুসরণীয় করে রাখার চেষ্টায় ছিলেন সচেষ্ট, কেবল তার মৃত্যুর পরই তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
বাবা মরহুম আবদুস সালাম ছিলেন ঢাকার লালবাগের নবাবগঞ্জের ৬ নম্বর হোসেন উদ্দিন প্রথম লেনের স্থায়ী অধিবাসী। মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তান ছিলেন তিনি। তিন ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার কনিষ্ঠ। পরিবারের সর্বকনিষ্ঠ হলেও তিনি তার যথার্থ দায়িত্বশীলতা দিয়েই কার্যত হয়ে উঠেছিলেন পরিবারের অনন্য অভিভাবক। পরিবারের প্রতিটি সদস্যের সাথে তার ছিল চমৎকার সুসম্পর্ক। অধ্যাপক আবদুল কাদের ১৯৭৬ সালের ২০ মে নাজমা কাদেরের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।
অধ্যাপক আবদুল কাদের শিক্ষাজীবন শুরু করেন ঢাকার নবাবগঞ্জের নবাববাগিচা প্রাইমারি স্কুলে। ১৯৬৪ সালে ঢাকা ওয়েস্ট অ্যান্ড হাই স্কুল থেকে পাস করেন এসএসসি। ঢাকা কলেজ থেকে ১৯৬৬ সালে পাস করেন এইচএসসি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি ও মৃত্তিকা বিজ্ঞানে এমএসসি ডিগ্রি নেন যথাক্রমে ১৯৬৮ ও ১৯৭০ সালে। জীবনের বিভিন্ন সময়ে তিনি বেশ কিছু প্রশিক্ষণ কোর্স সাফল্যের সাথে সম্পন্ন করেন। এর মধ্যে আছে- ঢাকার বিএমডিসি থেকে পার্সোনাল ম্যানেজমেন্ট কোর্স, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিশ্বব্যাংকের কমপিউটার ম্যানেজমেন্ট কোর্স এবং ঢাকার সাভারের বিপিএটিসি থেকে উন্নয়ন প্রশাসন কোর্স। এ ছাড়া নিয়েছেন কমপিউটারবিষয়ক বিশটি অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামের ওপর প্রশিক্ষণ। শিখেছিলেন বেশ কয়েকটি প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজও।
অধ্যাপক আবদুল কাদের কর্মজীবনে প্রবেশ করেন ১৯৭২ সালের ১ অক্টোবরে ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের প্রভাষক হিসেবে। তখন কলেজটি ছিল বেসরকারি। ১৯৮৪ সালের ৩১ নভেম্বর কলেজটি সরকারি কলেজে রূপান্তরিত হয়। ১৯৯২ সালের ৮ জুলাই পর্যন্ত তিনি এ কলেজে প্রভাষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পদোন্নতি পেয়ে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে এ কলেজে ছিলেন ১৯৯৫ সালের ২ আগস্ট পর্যন্ত। এরপর সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে তাকে পদোন্নতি দিয়ে পাঠানো হয় পটুয়াখালী সরকারি কলেজে। সেখানে কর্মরত ছিলেন ১৯৯৫ সালের ৩ আগস্ট থেকে ১৩ আগস্ট পর্যন্ত। সেখান থেকে তাকে নবায়ন ও উন্নয়ন প্রকল্পের উপ-পরিচালক এবং মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরের কমপিউটার সেলের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা করা হয়। সেখানে দায়িত্ব পালন করেন ১৯৯৫ সালের ২০ নভেম্বর থেকে ১৯৯৭ সালের ২ জুলাই পর্যন্ত। এরপর তিনি দায়িত্ব পান মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরের নির্বাচিত সরকারি কলেজে কমপিউটার কোর্স চালুকরণ ও শিক্ষক প্রশিক্ষণ প্রকল্পের পরিচালক হিসেবে। ২০০০ সালের ২২ জুলাই পর্যন্ত তিনি এ দায়িত্বে ছিলেন। ২০০০ সালের ১৮ এপ্রিল থেকে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি অসুস্থতার জন্য ছুটি কাটান। ছুটি শেষে পরদিন মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ দায়িত্ব হিসেবে তিনি মৃত্যুর আগে পর্যন্ত এ অধিদফতরের উপ-পরিচালক (প্রশিক্ষণ) ছিলেন।
স্বাভাবিক দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি তিনি জীবনে বেশ কিছু অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ পেয়েছিলেন। এগুলোর মধ্যে আছে- কলেজে অধ্যাপনার পাশাপাশি সরকারি নির্দেশে দীর্ঘদিন বাংলাদেশ কমপিউটার কাউন্সিলে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরের কমপিউটারবিষয়ক বেশ কয়টি কমিটিতে সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন এবং কমপিউটারের বিভিন্ন বিষয়ের ওপর ৬টি সেমিনার ও অন্যান্য অনুষ্ঠান আয়োজন।
তিনি তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক নানাধর্মী লেখালেখির সাথে জড়িত ছিলেন। তার প্রকাশিত প্রবন্ধ ও প্রতিবেদনের সংখ্যা ৩৫টিরও বেশি। ১৯৬৪ সালের দিকে ‘টরেটক্কা’ নামে একটি বাংলা বিজ্ঞান পত্রিকা বের করেন সেই ছাত্রজীবনেই। অবশ্য পত্রিকাটি অচিরেই এর অস্তিত্ব হারায়। তিনি ছিলেন এর সম্পাদক ও প্রকাশক। এটি ছিল ছোটদের বিজ্ঞান পত্রিকা।
তিনি বেশ কিছু দেশ সফর করেছেন। এসব দেশের মধ্যে আছে- যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, সিঙ্গাপুর, হংকং, মালয়েশিয়া এবং আরও কয়েকটি দেশ।
কমপিউটার জগৎ-এর মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশে যে তথ্যপ্রযুক্তি আন্দোলনের সূচনা করে গেছেন, সেই সূত্রে তিনি আজ বাংলাদেশে বিতর্কাতীতভাবে অভিহিত হচ্ছেন এ দেশের তথ্যপ্রযুক্তি আন্দোলনের অগ্রপথিক অভিধায়।
ভাঙতে হয়েছে প্রচলিত সাংবাদিকতার অর্গল
কমপিউটার জগৎ-এর পাঠকমাত্রই জানেন, কমপিউটার জগৎ নিছক একটি আইটি ম্যাগাজিনই শুধু নয়। এটি একটি মিশন। একটি আন্দোলন। এ মিশন, এ আন্দোলন তথ্যপ্রযুক্তিকে হাতিয়ার করে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার একটি অনাবিল ক্ষেত্র তৈরি করা। একদম শুরু থেকেই আমাদের উপলব্ধিতে ছিল প্রচলিত সাংবাদিকতার অর্গল ভেঙে এর ছক থেকে নিজেদের বের করে আনতে না পারলে এ আন্দোলনে সফলতা পাওয়া যাবে না। সে উপলব্ধিতেই আমরা প্রতিমাসে একটি করে ম্যাগাজিন পাঠকদের উপহার দিই সাংবাদিকতার ধারার বাইরে এসে। আমাদের প্রতিটি সংবাদ ও লেখাই তাগিদি ও দাবিমুখী এবং সেই সাথে দিকনির্দেশনামূলক। এগুলোতে যেমনি ছিল বিষয় বিশ্লেষণ, তেমনি ছিল এগিয়ে যাওয়ার পথরেখা। এখানেই শেষ নয়, এর পাশাপাশি আমাদের প্রকাশনাবহির্ভূত নানা আয়োজনে যেতে হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি আন্দোলনের অংশ হিসেবে একদম শুরুতে হাতে নিতে হয়েছে গ্রামের স্কুলের ছাত্রদের কমপিউটার পরিচয় করে দেয়ার কর্মসূচি। বুড়িগঙ্গার ওপারে ডিঙি নৌকায় করে কমপিউটার যন্ত্র নিয়ে গিয়ে স্কুলের শিশু-কিশোরদের দেখাতে হয়েছে। কমপিউটার সম্পর্কে এদের আগ্রহী করে তুলতে হয়েছে। সূচনা করতে হয়েছে কমপিউটার মেলা আয়োজনের। আয়োজন করতে হয়েছে সংবাদ সম্মেলন এবং সেমিনার-সিম্পোজিয়াম। সংবাদ সম্মেলন করে জাতির কাছে তুলে ধরতে হয়েছে আমাদের মেধাবী বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদদের পরিচয়। একইভাবে উপস্থাপন করতে হয়েছে কমপিউটার ব্যবহারে তুখোড় মেধাবী প্রতিভাবান কজন শিশুকে। আয়োজন করতে হয়েছে ক্যুইজ, রচনা ও প্রোগ্রামিংসহ নানাধর্মী প্রতিযোগিতার। অ্যাডভোকেসি করার জন্য কখনও দৌড়াতে হয়েছে আমলা ও রাজনীতিবিদদের কাছে। আমরা যখন কমপিউটার জগৎ পত্রিকাটি শুরু করি, তখন বাংলায় তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে লেখার লেখকের খুবই অভাব ছিল। সে জন্য প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে দেশে এ ধরনের লেখকও আমাদেরকে তৈরি করতে হয়েছে। মোটকথা, দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে এগিয়ে নেয়ার জন্য এই বিশটি বছর আমাদেরকে মাঠে থাকতে হয়েছে সার্বিক প্রয়াস নিয়ে। ইংরেজিতে যাকে বলে ‘অল আউট এফোর্ট’- তাই দিতে হয়েছে। আমাদের এই লড়ে চলার এখানেই সমাপ্তি ঘটেছে, তেমনটি বলা চলবে না। বরং আগামী দিনেও তা অব্যাহত থাকবে, তা আমরা ধরেই নিয়েছি। হয়তো সে লড়ে যাওয়া চলবে ভিন্ন ক্ষেত্রে ভিন্ন মাত্রায়। সে লড়াইয়ে আমরা আগের মতোই থাকব দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
থেকেছি বরাবর ইতিবাচক
তথ্য প্রগতির জন্য। এ সত্যটি উপলব্ধিতে রাখলে নেতিবাচক সাংবাদিকতার কোনো অবকাশ নেই। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে, আমাদের দেশে নেতিবাচক সাংবাদিকতা চলে বেশ জোরেশোরেই। ফলে বস্ত্তনিষ্ঠ সাংবাদিকতার অভাবটাও এদেশে প্রকট। এ ধরনের সাংবাদিকতা দিয়ে আর যাই হোক দেশ-জাতির অগ্রগতি আনা যায় না। তাই আমরা বরাবর নেতিবাচক সঙ্কীর্ণ উদ্দেশ্যতাড়িত সাংবাদিকতা পরিহার করে চলেছি সযত্নে। আমাদের প্রকাশিত সংবাদ ও অন্যান্য লেখালেখির বিষয়বস্ত্তর দিকে একটু নজর দিলে আমাদের এ দাবির সত্যতা মিলবে। প্রতিটি বিষয় ও ঘটনার পেছনে ভালো-মন্দ ও ইতি-নেতির দিক থাকে। নিছক সমালোচনার খাতিরে সমালোচনাকে প্রাধান্য দিয়ে শুধু মন্দ আর নেতির দিক তুলে ধরার মধ্যে কোনো কল্যাণ নেই। শুধু নিন্দাবাদ যেমন কাম্য নয়, তেমনি শুধু জিন্দাবাদ দিয়েও বস্ত্তনিষ্ঠ সাংবাদিকতা হয় না। সমালোচনা থাকবে, তবে সে সমালোচনা হবে গঠনমূলক। আমাদেরকে এই বিশ বছরে অনেক সময় সরকারসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কঠোর সমালোচনায় নামতে হয়েছে। তা করতে গিয়ে আমাদের সচেতন থাকতে হয়েছে, তা যেনো সৌজন্যবোধের মাত্রা না ছাড়ায় এবং সেই সাথে বস্ত্তনিষ্ঠতার গন্ডি না পেরোয়। এ সচেতনতাসূত্রেই কমপিউটার জগৎ এই দুই দশকের সাংবাদিকতার অধ্যায়টি পার হয়ে এসেছে অত্যন্ত সুনামের সাথে। প্রসঙ্গত, এই সময়টায় স্মরণে আসছেন মরহুম আবদুল কাদের। তার মুখে বহুবার শুনেছি, আমাদের প্রতিটা খবর ও লেখালেখি দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে এগিয়ে নেয়ার বিজারক হিসেবে কাজ করবে। তা যদি সম্ভব নাও হয়, তবু কোনো খবর বা লেখার কারণে এ খাতের কোনো ক্ষতি যেনো না হয়। তার অবর্তমানে আমরা যখন কমপিউটার জগৎসংশ্লিষ্ট কোনো সিদ্ধান্ত নিই তখন তার এসব কথা আমাদের তাড়িত করে। তার রেখে যাওয়া দিকনির্দেশনা আর আদর্শই যেনো তখন হয়ে ওঠে আমাদের পাথেয়। এ উপলব্ধি যতদিন আমাদের মধ্যে কাজ করবে ততদিন কমপিউটার জগৎ তার স্বকীয়তা আর যথার্থ পাঠকপ্রিয়তা নিয়ে পাঠকদের মাঝে বেঁচে থাকবে, এটুকু নিশ্চয়তা এখনই দেয়া যায়।
কমজগৎডটকম বৃহত্তম বাংলা আইটি পোর্টাল
২০০৯ সালের ২৫ এপ্রিল। এ দিনটি মাসিক কমপিউটার জগৎ-এর ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য দিন। এমনকি বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের ইতিহাসেও এদিনে সৃষ্টি হলো একটি মাইলফলক। ওই দিন কমপিউটার জগৎ আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করে এর নিজস্ব ওয়েবপোর্টাল www.comjagat.com-এর বেটা ভার্সন। এটি বাংলা ও ইংরেজিতে করা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় আইটি ওয়েবপোর্টাল। এতে কমপিউটার জগৎ ম্যাগাজিনের ২০ বছরে প্রকাশিত সব লেখা আর্কাইভ করা আছে। ওয়েবপোর্টালটি কার্যত কাজ করছে প্রযুক্তিপ্রেমীদের একটি পস্নাটফরম হিসেবে। কমপিউটার জগৎ-এ প্রকাশিত পুরনো ও নতুন সব লেখাই বিনা খরচে এ পোর্টালে পড়া ও ডাউনলোড করা যাবে। কেউ চাইলে নিজের লেখা পোস্ট করতে পারবেন। ক্যুইজ প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারবেন। তথ্যপ্রযুক্তির খবর, নতুন পণ্যের অনুষ্ঠানের খবর, চাকরির খবর ও অন্যান্য তথ্য জানতে পারবেন। নিজস্ব প্রতিষ্ঠানের প্রোফাইল তৈরি এবং অনুষ্ঠিত ও অনুষ্ঠিতব্য অনুষ্ঠানের খবর প্রকাশ করতে পারবেন। আইসিটিবিষয়ক বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ও পণ্যের খবর তুলে ধরতে পারবেন। বস্নগের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের আগ্রহের বিভিন্ন বিষয়ে দলীয় আলোচনায় অংশ নেয়ার সুযোগ পাবেন।
এই পোর্টালটি সৃষ্টি করার পেছনে আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, কমপিউটার জগৎ-কে কার্যত আরো বৃহত্তর পরিসরে প্রযুক্তিপ্রেমী মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া। একটি ম্যাগাজিন সাধারণত সীমিত সংখ্যক গ্রাহক-পাঠকদের কাছে পৌঁছে। এখন এ পোর্টালের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী অনলাইনে যেকেউ কমপিউটার জগৎ পড়তে পারছেন, বিষয়বস্ত্ত ডাউনলোড করতে পারছেন। এ সুযোগ অবশ্যই তথ্যপ্রযুক্তি খাতে এগিয়ে চলায় সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
দুই দশক পূর্তির প্রত্যয়
কমপিউটার জগৎ-এর এই দুই দশক পূর্তি নিশ্চিত অর্থেই আমাদের জন্য গৌরবের। তাই এই দুই দশক পূর্তির্র এদিনে আমাদের সুদৃঢ় প্রত্যয় এ গৌরব লালনের। সেই সাথে গৌরবের নতুন নতুন অধ্যায় রচনার। সাফল্য-তালিকা ও অর্জন-তালিকা সুদীর্ঘ করার। সাফল্যের মাত্রা বাড়িয়ে তোলার। আমাদের বহু আকাঙ্ক্ষিত তথ্যপ্রযুক্তি আন্দোলনকে যৌক্তিক পর্যায়ে নিয়ে পৌঁছানোর মাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তিসমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়া নিশ্চিত করার। ইতিবাচক সাংবাদিকতার পথ থেকে ছিটকে না পড়ার। নতুন প্রত্যয় নিয়ে কমপিউটার জগৎ প্রকাশনা অব্যাহত রাখার। সময়ের দাবি সময়ে উচ্চারণের সাহস দেখানোর। সর্বোপরি আমাদের প্রতিষ্ঠাতা প্রাণপুরুষ অধ্যাপক মরহুম আবদুল কাদেরের রেখে যাওয়া স্বপ্নকল্পের বাস-বায়নে অনড় থাকার। এসব প্রত্যয়ে প্রত্যয়ী থাকায় মহান আল্লাহ আমাদের সবার সহায় হোন।
কজ ওয়েব