কমপিউটার জগৎ-এর নিয়মিত বিভাগ ব্যবহারকারীর পাতায় সাধারণত ব্যবহারকারীদের উদ্দেশে দৈনন্দিন কমপিউটিং জীবনধারায় বিভিন্ন প্রয়োজনীয় বিষয়ের আলোকে লেখা উপস্থাপন করা হয়, যার বেশিরভাগই উইন্ডোজ বা বিভিন্ন ধরনের অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রাম বা পিসির বিভিন্ন ধরনের সাধারণ সমস্যার সমাধানের আলোকে। কিন্তু এবারের ব্যবহারকারীর পাতায় উপস্থাপন করা হয়েছে পিসি যেভাবে বিভিন্ন ধরনের এবং বিভিন্ন পদ্ধতিতে ভাইরাসে সংক্রমিত হয় এবং যেভাবে ভাইরাস থেকে প্রতিকার বা রক্ষা পাওয়া যায় তার উপায় ও কৌশল নিয়ে। কেননা এমন কোনো ব্যবহারকারীই খুঁজে পাওয়া যাবে না, যিনি ভাইরাস যন্ত্রণায় জর্জরিত হননি কখনই। অবশ্য কমপিউটার জগৎ-এর আরেকটি নিয়মিত বিভাগ রয়েছে, যা ‘সিকিউরিটি’ হিসেবে পরিচিত, যেখানে সাধারণত আলোচনা করা হয় ভাইরাস প্রতিরোধে বিভিন্ন ধরনের টুলের বৈশিষ্ট্য বা ফিচার নিয়ে। লেখাটি মূলত ব্যবহারকারীর পাতায় উপস্থাপন করা হয়েছে এ কারণে যে, ভাইরাস সমস্যা এখন সর্বজনীন এবং তা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য রয়েছে কিছু সাধারণ কৌশল, যা সব ব্যবহারকারীকেই মেনে চলতে হয় তাদের সিস্টেমের সুরক্ষার জন্য। ‘প্রতিরোধই প্রতিকারের সেরা উপায়’-এ প্রবাদবাক্যটি এখন ভাইরাস থেকে রক্ষা পাওয়ার ক্ষেত্রেও সর্বজনীন।
প্রায় দুই বিলিয়ন লোক ইন্টারনেট ব্যবহার করে অর্থাৎ প্রায় দুই বিলিয়ন লোক ম্যালওয়্যারের সম্ভাব্য শিকার। ব্যবহারকারীদের মূল্যবান ডাটা যেমন-পাসওয়ার্ড, পিন নাম্বার এবং ক্রেডিট কার্ড নাম্বার ক্ষতিকর হ্যাকারদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ডাটা চুরির সবচেয়ে সহজ পথ হচ্ছে সংক্রমিত ওয়েবসাইট ও ফাইল, প্রাথমিকভাবে পিডিএফ ডকুমেন্ট। এছাড়া সবচেয়ে কম গুরুত্ব দেয়া উৎসও রয়েছে ভয়ের আরেকটি কারণ, যেমন-ডাটা ক্যারিয়ার তথা পেনড্রাইভ এবং অন্যান্য ইউএসবি স্টোরেজ ডিভাইস। এ লেখায় ব্যবহারকারীদের উদ্দেশে দেখানো হয়েছে কীভাবে সংক্রমিত ওয়েবসাইট, ক্ষতিকর পিডিএফ ফাইল এবং আক্রান্ত ইউএসবি ডিভাইস আপনার কমপিউটারকে সংক্রমিত করে এবং এ থেকে সুরক্ষার সেরা উপায় কী হতে পারে?
সিকিউরিটি ভেন্ডর ক্যাসপারস্কি গত জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত রেজিস্টার করে যে, এ সময়ের মধ্যে কমপিউটার সংক্রমণের প্রচেষ্টা শতকরা ২৬ দশমিক ৮ ভাগ বেড়েছে, যার বেশিরভাগই ম্যানিপুলেটেড ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সংঘটিত হয়। সন্দেহজনক পর্নো বা পাইরেট ও ক্র্যাক সাইট ভিজিট করা থেকে বিরত থাকার মাধ্যমেই ক্ষতিকর ট্র্যাপ এড়িয়ে যেতে পারবেন তা কিন্তু নয়। অ্যান্টিভাইরাস ভেন্ডর অ্যাভাস্টের মতে, শতকরা ৯৯ ভাগ ক্ষতিকর ওয়েবসাইটই বৈধ ওয়েব পোর্টাল যারা আপোস করে আছে। ম্যালওয়্যার নিজেই এক্সটারনাল সাইট থেকে লোড হয়, যা ম্যালওয়্যার হোস্ট হিসেবে বিবেচিত। ক্যাসপারস্কির মতে, এ মুহূর্তে এ ধরনের আনুমানিক ১২০ মিলিয়ন হোস্ট ওয়েবসাইট সক্রিয় রয়েছে। এমন অবস্থায় সফটওয়্যারের লুপহোল কাজে লাগিয়ে স্বার্থ হাসিল করার ক্ষেত্রে অ্যাডোবি রিডার অন্য সবার চেয়ে এগিয়ে। সিক্যুনিয়ার সিকিউরিটি অ্যানালিস্ট ২০০৯-১০ সালের মধ্যে সর্বমোট ৬৯টি লুপহোল রেজিস্টার করে। অ্যাডোবি এখন তার ব্যবহারকারীদের উদ্দেশে চূড়ান্তভাবে আরও বেশি নিরাপত্তা বিধান করতে চাচ্ছে অ্যাক্রোবেট ভার্সন ১০ থেকে পরবর্তী ভার্সনগুলোতে। রিডার প্রোটেকটেড পরিবেশে সব কোড রান করবে যাতে সিস্টেমে অ্যাক্সেসের সুযোগ কমে যায়।
পক্ষান্তরে ইউএসবি ডিভাইসগুলো ম্যালওয়্যার ট্রান্সমিশনের পথ হিসেবে কম পরিচিত। এর ফলে হ্যাকাররা স্বতন্ত্র বা কোম্পানিসমূহকে টার্গেট করতে পারে বিশেষভাবে ডিজাইন করা ট্রোজান দিয়ে। এক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময় উইন্ডোজের অটোরান ফাংশনের সুবিধা গ্রহণ করে ম্যালওয়্যার, যেগুলো এখন নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে।
ভাইরাস এখন অনেক বেশি কৌশলী যা টার্গেট করতে পারে সুনির্দিষ্ট স্বতন্ত্র ফাইল ও ফোল্ডারকে। আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন এটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ যে ভাইরাসের জন্য আগে থেকে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
অনলাইন, পিডিএফ এবং ইউএসবি ডিভাইসের মাধ্যমে ভাইরাস যেভাবে বিস্তৃত হয় এবং তার প্রতিরোধের উপায় চিত্রের মাধ্যমে দেখানো হলো :
শেষ কথা
ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে চাইলে প্রথমেই জানতে হবে ভাইরাস কীভাবে বিস্তৃত হয়। কেননা ভাইরাস সংক্রমণের উৎস যদি জানা না থাকে তাহলে তার প্রতিকার করা সম্ভব হবে না কোনো মতেই। ভাইরাস প্রতিরোধে বিভিন্ন টুল রয়েছে ঠিকই, তবে সেগুলো সবসময় শতভাগ ভাইরাস প্রতিরোধে সফল হয় না বিভিন্ন কারণে। মনে রাখা উচিত কোনো সিস্টেমে একের অধিক অ্যান্টিভাইরাস টুল থাকা উচিত নয়। অ্যান্টিভাইরাস টুল যেন সবসময় আপডেটেড থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। তাছাড়া অ্যান্টিভাইরাস টুলই যে আপনাকে সুরক্ষিত রাখতে পারবে তেমন নিশ্চয়তাও নেই। সুতরাং মনে রাখা উচিত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করাই হচ্ছে সুরক্ষিত থাকার একমাত্র উপায়। আর তাই ভাইরাস সংক্রমণের উৎস সম্পর্কে জেনে নিয়ে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।
কজ ওয়েব
ফিডব্যাক : swapan52002@yahoo.com