• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > তারুণ্যোর অগ্রযাত্রা গন্তব্য নাসা
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: মো : ফেরদৌস হোসেন
মোট লেখা:৬
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১১ - আগস্ট
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
ফিচার
তথ্যসূত্র:
রির্পোট
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
তারুণ্যোর অগ্রযাত্রা গন্তব্য নাসা

মানুষ তার স্বপ্নের সাথে পরিশ্রম, সততা ও সঠিক দিকনির্দেশনা নিয়ে সামনে অগ্রসর হলেই পৌঁছে যাবে তার সঠিক গন্তব্যে। বাঙালি তরুণরা চাইলেই অনেক কিছু পারে বা অনেক ক্ষেত্রেই সাফল্যের স্বাক্ষর রেখে চলেছে। ঠিক তেমনি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন তরুণ ছাত্র স্বপ্ন দেখেছিল নিজের দেশকে তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে যোগাযোগের সুদূর আমেরিকার মাটিতে গৌরবান্বিত করার। হ্যাঁ, আমরা গৌরব বোধ করারই কথা। জানা মতে, বাংলাদেশ থেকে এই প্রথম নাসার কেনেডি স্পেস সেন্টারে কোনো সফল প্রকল্পের উপস্থাপনা করেছে তারা। আর এই সফল প্রকল্পের সঠিক দিকনির্দেশনায় ছিলেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের কমপিউটার সায়েন্স এবং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তরুণ স্বপ্নদ্রষ্টা শিক্ষক ড. খলিলুর রহমান।

২৩-২৮ মে ২০১১ যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার নাসাতে (ন্যাশনাল অ্যারোনটিক অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) ইন্টারন্যাশনাল লুনাবোটিক মাইনিং কম্পিটিশনের আয়োজনে বাংলাদেশের ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থী এবং এক তরুণ শিক্ষক অংশ নেন। নাসা প্রতিবছরই জাতীয়ভাবে এই আয়োজন করে থাকে। এবারই প্রথম আন্তর্জাতিকভাবে আয়োজন করেছে। এবার বাংলাদেশের ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, কলাম্বিয়াসহ পৃথিবীর নামীদামী ৪৬টি বিশ্ববিদ্যালয় অংশ নেয়।



ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় সম্পূর্ণ দেশীয় উপাদানে তৈরি রোবট ‘চন্দ্রবোট’ নিয়ে নাসাতে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। চন্দ্রবোটের অন্যতম নির্মাতা জোনায়েদ বলেন, সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি চন্দ্রবোট হচ্ছে একটি দূর-নিয়ন্ত্রিত টেলিরোবট। চাঁদে যেসব রোবট পাঠানো হয় সেগুলো দিয়ে লুনার ডাস্ট, চাঁদের ধূলিকণা বা ব্ল্যাক পয়েন্ট ওয়ান সংগ্রহ করা হয়। মূলত আন্তর্জাতিক এই প্রতিযোগিতায় আমাদের চন্দ্রবোট প্রতি ১৫ মিনিট এককে কতটুকু লুনার ডাস্ট সংগ্রহ করতে পারছে তা দেখা হবে। পরীক্ষণের সময় শুধু নাসার উঁচু পর্যায়ের আন্তর্জাতিক গবেষকেরাই উপস্থিত থাকবেন। রোবটের সামনে আমাদের থাকা বা রোবট পরিচালনার কোনো সুযোগ নেই।

মূলত পৃথিবীর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে বিজ্ঞান, তথ্যপ্রযুক্তি ও প্রকৌশল বিষয়ে শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানমনস্ক ও প্রযুক্তির ধারণা আদান-প্রদানই হচ্ছে প্রতিযোগিতার মূল লক্ষ্য। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- সবচেয়ে আধুনিক টেকসই ও গ্রহণযোগ্য ডিজাইনের প্রযুক্তিটি নাসা ভবিষ্যতে তাদের গবেষণার কাজে লাগাবে। বাংলাদেশের ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের তড়িৎ ও যন্ত্রকৌশল বিভাগের ৫ শিক্ষার্থী জোনায়েদ হোসেন, মাহমুদুল হাসান অয়ন, আসিফ রহমান, কাজী রাজিন অনিক ও শিবলী ইমতিয়াজ হাসান এবং মহাখালীতে বসবাসরত শরীয়তপুরের মনির হোসেন নামের অল্পশিক্ষিত এক ওয়েল্ডিং মেকানিকের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল এই চন্দ্রবোট। চন্দ্রবোট প্রকল্পের ফ্যাকাল্টি অ্যাডভাইজার ড. খলিলুর রহমান বলেন, রোবট তৈরির জন্য (বিভিন্ন যন্ত্রপাতি আকার) ঢাকা শহরের বহু জায়গায় গেছি। মনির হোসেন রাত-দিন পরিশ্রম করেছেন। তার তুলনা হয় না। মূলত তার সহায়তা ছাড়া চন্দ্রবোট তৈরি হতো কি না সন্দেহ ছিল।

এবার একটু প্রতিযোগিতার পেছনে আসা যাক। ২০১০ সালের সামারে বিভাগের একটি রোবটিকস কোর্সের ৮/১০ জন ছাত্রকে খুবই সাধারণ রোবটিকস প্রকল্প তৈরি করার প্রসত্মাব দেয়া হয়েছিল। সেই প্রকল্পে ছাত্ররা কয়েকটি প্রকল্প উপস্থাপন করেছিলেন। তার মধ্যে ছিল হিউমেনয়েড কার (উপরের অংশ আর্মস এবং নিচের অংশ গাড়ি) ও স্পাইবোট (আলো ও শব্দে দ্রুত প্রস্থান করতে পরে)। কোর্সটির সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন বিভাগের শিক্ষক ড. আজাদ, যিনি রোবটিকস আর্মস নিয়ে কাজ করছিলেন। কোর্সটির কার্যকারিতা দেখে বিভাগীয় শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে শিক্ষার্থীরা জাঁকজমকপূর্ণ একটি রোবটিক ফেয়ারের আয়োজন করে। মূলত সেখান থেকেই রোবটিক কোর্স বিষয়ে শিক্ষার্থীরা অনুপ্রাণিত হতে থাকেন।

প্রতিযোগিতার স্বপ্নের বীজ বপন করেছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের কমপিউটার বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র শিবলী। বিভিন্ন ওয়েবসাইট ঘাঁটাঘাঁটি, সাইটে তত্ত্ব এবং তথ্য বিশ্লেষণ করাই যার অন্যতম নেশা। শিবলীই প্রথম নাসার ওয়েবসাইটে ইন্টারন্যাশনাল লুনাবোটিকস মাইনিং কম্পিটিশনে নাম নিবন্ধন করে।

শিবলী নাম নিবন্ধনের পরই চিন্তায় পড়ে গেলাম, বলেন ড. খলিলুর রহমান। শুধু রোবটিক কোর্স এবং একটি ফেয়ার করেই নাসার মতো একটি প্রতিষ্ঠানের আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় যাওয়ার চিন্তাটা রীতিমতো দুঃসাহসই। যেখানে নিশ্চয়ই পৃথিবীর সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও নিবন্ধিত হয়েছে। ড. খলিলুর রহমান বিভাগের অন্য দুই জ্যেষ্ঠ শিক্ষক ড. বেলাল ও ড. মোসাদ্দেকের সাথে পরামর্শ করে প্রকল্পের জন্য একটি দল গঠন করে দিলেন, যেখানে শিবলী ইমতিয়াজ হাসান দলনেতা। কয়েক দিনের অক্লান্ত পরিশ্রমে দলটি একটি পেন্সিল স্কেচ আঁকতে সক্ষম হলো। দলনেতা শিবলী এটাকে অটোক্যাড দিয়ে এনিমেটেড করে দাঁড় করিয়ে ভিডিও শেয়ারিং সাইট ইউটিউবে ছেড়ে দিল। নাসা এ প্রকল্পটি গ্রহণ করবে কি না তা নিয়ে আমাদের সংশয় ছিল যথেষ্ট। অবশেষে সেপ্টেম্বরে নাসা আমাদের প্রকল্প গ্রহণ করে এবং আমন্ত্রণ জানায়।



ড. খলিলুর রহমান বলেন, এতদিন শুধু রোবটের সফটওয়্যার নিয়ে কাজ করেছে ছাত্ররা। এবার এটাকে বাস্তব রূপ দেয়ার জন্য ছাত্ররা উঠেপড়ে লাগল। প্রথমে কাগজের একটি নমুনা চন্দ্রবোট তৈরি করে বিশ্ববিদ্যালয়ে জমা দিয়ে সম্পূর্ণ প্রকল্পের অর্থের সংস্থান করি, যা আমাদের কাজকে আরো দ্রুতগতিতে এগিয়ে নিয়েছে। কাজের বিষয়ে জানতে চাইলে জোনায়েদ বলেন, পুরোপুরি দেশীয় প্রযুক্তিতে এত বড় একটা যন্ত্র বানিয়ে আমরাই অবাক হয়ে গেছি। তিনি আরো বলেন, যন্ত্রপাতি জোগাড় করতে গিয়ে স্যারসহ প্রত্যেকেই গলদঘর্ম হয়েছি। কিন্তু হাল ছাড়িনি। আমাদের আত্মবিশ্বাস ছিল, অবশ্যই আমরা সফল হব। অবশেষে আমরা পেরেছি। শিক্ষার্থীরা আরো বলেন, অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্পে বিভিন্ন নামী-দামী প্রতিষ্ঠান হাজার হাজার ডলার স্পন্সর করেছে। তাদের রোবট তৈরির উপাদানগুলোও ছিল চোখধাঁধানো। কিন্তু আমাদের রিকশা, সাইকেল, মোটরসাইকেল, গাড়ির পুরনো মোটর পার্টস ইত্যাদি দিয়ে তৈরি চন্দ্রবোট দেখে সবাই বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।

রোবটের প্রতিটি অংশ কমপক্ষে ৭ থেকে ৮ বার করে পরিবর্তন করতে হয়েছে। শুধু চাকার মডেল বানানো হয়েছে ৯ বার। ওয়েল্ডিং মেকানিক মনির হোসেন বলেন, একটা কাজ সম্পূর্ণ করে সেটা যে কতবার আবার লেদ মেশিনে নতুন আকার দিয়েছি, তার কোনো হিসাব নেই। আশপাশের লোকজন পাগল বলে গাল দিয়েছে। সব সময়ই লোকজন এটা দিয়ে কী হবে, কী তৈরি করছি- এসব জিজ্ঞাসা করত বলে দিনে কাজ না করে সারা রাত কাজ করেছি। তিনি আরো বলেন, নিজে লেখাপড়া করতে পারিনি, বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ছাত্র আমার কাছে এসেছে এতেই আমি খুশি হয়েছি। দলের সদস্য রাজিনের মতে, মনির ভাই না থাকলে আমরা মনে হয় সফল হতাম না। কারণ আমরা বহু ওয়েল্ডিং কারখানায় গিয়ে ফিরে এসেছি।

মার্চ মাস। সবাই পরীক্ষা নিয়ে ব্যস্ত। সিদ্ধান্ত হলো ১৮ তারিখ বনানী মাঠে প্রথম রোবটের পরীক্ষণ হবে। পরীক্ষণের প্রথম পর্যায়েই চাকার চেইন এবং গিয়ার ভেঙে গেল। সবাই চিন্তায় মুষড়ে পড়ল। আবার রোবটের স্থান হলো মনিরের গ্যারেজে। মনির একটানা ৭ রাত কাজ করে শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকের পরামর্শে রিকশার চেইনের পরিবর্তে মোটরসাইকেলের চেইন এবং টাইমিং বেল লাগিয়ে চন্দ্রবোটকে সচল করা হলো। লুনার ডাস্ট কালেক্টরে বাসের পাদানি (পা রাখার স্থান) লাগানো হলো। এভাবে প্রত্যেকটি জিনিস বারবার পরিবর্তনের ফলে চন্দ্রবোট আবার নতুন জীবন পেল।

সবকিছু ঠিকঠাক। আমেরিকান অ্যাম্বাসিতে ভিসার জন্য আবেদন করা হলো। সবাইকে ভিসা দেয়া হলো। কিন্তু কোনো কারণ ছাড়াই জোনায়েদকে ভিসা দেয়া হলো না। বারবার যোগাযোগ করেও তাদের কাছ থেকে কোনো সদুত্তর আসেনি। অথচ জোনায়েদ ছাড়া আর কেউ চন্দ্রবোট পরিচালনায় তেমন পারদর্শী ছিল না। কারণ কন্ট্রোল সার্কিটের সব কাজ জোনায়েদই করেছিল। সবাই বিমর্ষ মন নিয়ে ২১ মে ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টারের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করল।



২৩ মে সকাল ১০টায় কেনেডি স্পেস সেন্টারে গিয়ে পৌঁছলাম। প্রায় ২ ঘণ্টার মধ্যে রোবট সংযোজন করা হয়ে গেল। রোবট চালু করা হলো। কিন্তু কালেক্টর উঠাতে গেলেই কমপিউটার রিস্টার্ট নেয়। আরেকটি কমপিউটারে সংযোগ দেয়া হলো। সেটারও একই অবস্থা। রোবট থেকে যখন সোনার (এক ধরনের সেন্সর, যা ফ্রিকোয়েন্সি-ট্রান্সমিট এবং রিসিভ করে) খুলে দেয়া হলো তখন সফটওয়্যার ঠিকভাবে কাজ করছিল। প্রকল্প দলের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান অয়ন বলেন, প্রকল্প চূড়ান্ত পর্যায়ে প্রদর্শনীর জন্য আমাদের চন্দ্রবোটের কয়েকটি বিষয় পর্যবেক্ষণ করা হয়। সেগুলো হলো- ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন টেস্ট (ওয়াই-ফাই নিয়ন্ত্রিত রিমোট সেন্সর), ওয়েট টেস্ট (৮০ কেজির ওপরে হওয়া যাবে না)। প্রথমে চন্দ্রবোটের ওজন ৮০ কেজির ওপরে ছিল। পরে লোগো তুলে ফেলাতে ওজন ৮০ কেজির নিচে নেমে আসে। এছাড়া রোবটের আকারের বিষয়েও কিছু বাধ্যবাধকতা ছিল। তাহলো- উচ্চতা ২ মিটার, চওড়া ০.৭৫ মিটার এবং গভীরতা ১.৫ মিটার। সর্বশেষ আমাদের চন্দ্রবোটকে লুনার অ্যারিনাতে (সিমেন্ট এবং পাথর মিশ্রিত কুচি মাটি) পাঠানো হলো। সব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে চূড়ান্ত প্রদর্শনীতে আমরা স্থান পেলাম, যা আমাদের আত্মবিশ্বাসকে অনেকখানি বাড়িয়ে দিয়েছিল।

ইন্টারন্যাশনাল লুনাবোটিকস মাইনিং কম্পিটিশনের প্রথম পুরস্কার ছিল ১০ হাজার মার্কিন ডলার। টানা ১৫ মিনিট এককে যে রোবট একটানা বেশি ডাস্ট বা ব্ল্যাক পয়েন্ট ওয়ান সংগ্রহ করতে পারবে সেটিই হবে প্রথম। যা হোক, চূড়ান্ত প্রদর্শনীর দিন চন্দ্রবোট লুনার ডাস্ট বা ব্ল্যাক ওয়ান পয়েন্ট সংগ্রহ করতে পারেনি। কিন্তু টানা ১৫ মিনিট চেষ্টা চালিয়ে গেছে। ৪৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাত্র ১৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবট ব্ল্যাক ওয়ান পয়েন্ট সংগ্রহ করতে পেরেছে। এ সম্পর্কে ড. খলিলুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে আমরা যখন পরীক্ষা চালিয়েছি তখন লুনার অ্যারিনার কথা আমাদের মাথায় ছিল না। পরে নাসাতে এসে বিষয়টি আমরা বুঝতে পেরেছি। তিনি আরো বলেন, নাসাতে পৃথিবীর অনেক বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবটগুলোও অলস পড়েছিল, কোনো নড়াচড়া করতে পারেনি। কিন্তু চন্দ্রবোট আমাদের দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি হয়েও চূড়ান্ত পর্বে ক্রমাগত লুনার ডাস্ট সংগ্রহ করার চেষ্টা চালিয়ে গেছে।

বাংলাদেশের চন্দ্রবোট দেখে প্রত্যেক দর্শনার্থী ও অন্য প্রতিযোগীরা বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। তারা অবাক হয়েছেন এজন্য যে, কী করে সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি রোবট নিয়ে এত বড় একটা আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে। দ্বিতীয়ত, যারা বাংলাদেশ বিষয়ে জানে, তাদের বেশিরভাগের ধারণা-এখানে কমপিউটার বা তথ্যপ্রযুক্তির বিষয়গুলো খুবই বিরল, দারিদ্র্যতাই এখানকার নিত্যসঙ্গী। কিন্তু আমাদের দেশের সোনার ছেলেরা অত্যন্ত গর্বের সাথে তাদের সেই ভুল ভাঙিয়ে দিয়েছে। কানাডিয়ান ইলেকট্রিক ভেহিকল কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারম্যান জিম রিচার্ড কেনেডি স্পেস সেন্টারে এসেছিলেন একজন গুরুত্বপূর্ণ আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে। তিনি বাংলাদেশের প্রকল্প দেখে যারপরনাই বিস্মিত হয়ে ভবিষ্যতে রোবটপ্রযুক্তিতে একসাথে কাজ করার আশ্বাস দিয়েছেন। এছাড়া ‘নাসা টেলিভিশন’ বাংলাদেশী তরুণদের চন্দ্রবোট নিয়ে তিনবার প্রতিবেদন প্রচার করে।

প্রকল্পের অ্যাডভাইজার ড. খলিলুর রহমান তার অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে করে বলেন, আমরা অর্ধেক পৃথিবী পার হয়ে গিয়ে আমাদের প্রযুক্তি প্রদর্শন করেছি। এটা অবশ্যই গর্বের বিষয়। নাসা পৃথিবীর সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাথে আমাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছে, যা আমাদের মেধা ও প্রজ্ঞার স্পৃহাকে আরো বাড়িয়ে দেবে।

এছাড়া এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বাংলাদেশের ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় ও নাসার সাথে একটি প্রাতিষ্ঠানিক মেলবন্ধন তৈরি হলো, যা আগামীতে আরো সফল প্রকল্প তৈরিতে সহায়তা করবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কমপিউটার বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মুমিত খান বলেন, চন্দ্রবোট তৈরির মাধ্যমে বাংলাদেশের তরুণরা প্রমাণ করেছে পৃথিবীর তথ্যপ্রযুক্তির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশী তরুণরা পিছিয়ে নেই। যেকোনো বড় অঙ্গনেও তারা সাফল্যের স্বাক্ষর রাখতে পারবে। তিনি আরো বলেন, প্রতিবারই আমরা নাসায় প্রকল্প পাঠাতে আগ্রহী।

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আইনুন নিশাত বলেন, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় নিরন্তর গবেষণার কাজে উৎসাহ দিয়ে থাকে। নাসার চন্দ্রবোট প্রদর্শনীর সাফল্য বৈজ্ঞানিক গবেষণারই একটা অংশ। ভবিষ্যতে এ ধরনের গবেষণায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় আরো অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।

আমরা চাই ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো তারুণ্যের এই অগ্রযাত্রায় শরিক হবে বাংলাদেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজারো তরুণ। আর সে অগ্রযাত্রা রুখে দেবে প্রতিটি ক্যাম্পাসের শিক্ষাবহির্ভূত সব অপতৎপরতা। জয়োল্লাসে মেতে থাকবে সব তরুণ। জয় হোক তারুণ্যের।

কজ ওয়েব

ফিডব্যাক : ferdousbdvaga77@yahoo.com
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস