আমরা যারা উইন্ডোজ ব্যবহার করি, তারা কখনো ড্রাইভার সমস্যায় পড়িনি একথা বলা যাবে না। উইন্ডোজের ড্রাইভার সমস্যা একটি বড় সমস্যা। কারণ সঠিক ড্রাইভারটি খুঁজে পাওয়া না গেলে সংশ্লিষ্ট ডিভাইস ঠিকমতো কাজ করবে অথবা একেবারেই কাজ করবে না। সাধারণত কমপিউটারের যেকোনো ডিভাইস কেনা হলে তার সাথে সিডি বা ডিভিডিতে করে ড্রাইভার দিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু কোনো কারণে তা হারিয়ে গেলে অথবা অপারেটিং সিস্টেম পরিবর্তন করার ফলে যদি আগের ড্রাইভার কাজ না করে তাহলেই সমস্যার শুরু।
ড্রাইভার সমস্যা নানা কারণে হতে পারে। অনেক সময় হার্ডওয়্যারের কারণেও হয়। কোনো ডিভাইসের নির্দিষ্ট অংশ ঠিকমতো কাজ না করলেও ড্রাইভার নিয়ে সমস্যা হয়। সফটওয়্যারের কারণে বা ড্রাইভারের যেসব সমস্যা সৃষ্টি হয়, তা বেশিরভাগ সময় ড্রাইভার রোল ব্যাক করে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যায়। ডিভাইস ড্রাইভার আসলে কিছু ইনস্ট্রাকশন সেটের বাইরে আর কিছুই নয়। কোনো ডিভাইস কিভাবে চলবে তা নির্ধারিত হয় এসব ড্রাইভারের মাধ্যমে। ড্রাইভার আপডেট করতে গেলে প্রায়ই সমস্যা হয়, কারণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভুল ড্রাইভার সিলেক্ট করার কারণে ডিভাইস কাজ করে না।
এ ধরনের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে হলে প্রত্যেকটি ডিভাইসের ড্রাইভার আলাদাভাবে সংরক্ষণ করা জরুরি। অপারেটিং সিস্টেমের সাথে সাথে হালনাগাদ করা ড্রাইভার ইন্টারনেট থেকে নিয়মিত ডাউনলোড করে রাখলে প্রয়োজনের সময় বিপদে পড়তে হবে না। কিন্তু এমন যদি হয় যে ডিভাইসের মডেল নম্বর পাওয়া যাচ্ছে না বা ঠিক কোন ড্রাইভারটি সঠিক তা বের করা যাচ্ছে না তাহলে ডিভাইসটি অকার্যকর অবস্থায় থাকবে। খুব বেশি সমস্যা হয় যখন ৩২ বিট অপারেটিং সিস্টেম থেকে ৬৪ বিটের অপারেটিং সিস্টেমে পরিবর্তন করা হয়।
উইন্ডোজ এক্সপি, ভিসতা বা উইন্ডোজ সেভেনে এই সমস্যার বেশ ভালো সমাধান আছে। এসব অপারেটিং সিস্টেমে অটোমেটিক আপডেট নামে একটি অপশন আছে, যেগুলো এনাবল করা থাকলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রত্যেকটি ডিভাইসের ড্রাইভার আপডেট হয়ে যায়। লিনআক্সের ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার। তবে উইন্ডোজের ক্ষেত্রে একটু ঝামেলা আছে। শুধু লাইসেন্সড অপারেটিং সিস্টেমেই এই সুবিধা পাওয়া যায়।
যেসব ব্যবহারকারী লাইসেন্স করা অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করছেন না তাদের জন্য এই সুবিধা কাজে লাগানো যাবে না। বিকল্প কিছু থার্ড পার্টি সফটওয়্যার আছে, যেগুলো নিজে থেকেই আপডেটেড ড্রাইভার সিস্টেমের জন্য নির্বাচন করবে এবং যা ওয়েব থেকে ডাউনলোড ও ইনস্টল করবে। এ ধরনের সফটওয়্যার বেশ কার্যকর। এমনকি সিস্টেমের বায়োস আপডেটের জন্যও এসব থার্ড পার্টি সফটওয়্যার কাজ করে থাকে।
যদি এমন হয়, যে কারো ডিভাইস ড্রাইভার আছে এবং তা কাজ করছে বলে আপডেটেড ড্রাইভার প্রয়োজন নেই ব্যাপারটি কিন্তু তা নয়। আপডেটেড সফটওয়্যার ব্যবহারের ফলে ডিভাইসের পারফরম্যান্সের প্রভাব পড়ে। সাধারণত একেবারে হালনাগাদ করা ডিভাইস ড্রাইভার প্রতিটি ডিভাইসে সর্বোচ্চ পারফরম্যান্স দেয়।
এমন দুটি সফটওয়্যার হচ্ছে ড্রাইভার ম্যাজিশিয়ান এবং ড্রাইভার ডিটেকটিভ। তবে এসব সফটওয়্যার কোনোটাই কিন্তু ফ্রি নয়। তবে অনেক পুরনো কোনো ডিভাইসের ড্রাইভার বের করার জন্য এসব সফটওয়্যার বেশ ভালো কাজে দেয়। এই লেখায় আলোচনা করা হয়েছে কিভাবে ড্রাইভার ম্যাজিশিয়ান কাজ করে।
ড্রাইভার ম্যাজিশিয়ান
ড্রাইভার ম্যাজিশিয়ান প্রতিটি ডিভাইসের সঠিক ড্রাইভার খুঁজে বের করতে ও তা ইনস্টল করতে বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখে। www.drivermagician.com এই ওয়েবসাইট থেকে ড্রাইভার ম্যাজিশিয়ান সফটওয়্যার ডাউনলোড করা যাবে। প্রথমেই এই সফটওয়্যারের ফিচারগুলো নিয়ে আলোচনা করা যাক।
ফিচার
০১. সর্বমোট চারটি মোডে এই সফটওয়্যার ডিভাইস ড্রাইভারের ব্যাকআপ নিতে পারে।
০২. খুব সহজেই ড্রাইভার রোল ব্যাক করা বা পুরনো ড্রাইভারে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
০৩. নিজে থেকেই ড্রাইভার আপডেট করতে পারে যাতে করে সিস্টেমের পারফরম্যান্স ও স্থায়িত্ব নিশ্চিত হয়।
০৪. খুব সহজেই ডিভাইসের ড্রাইভার আনইনস্টল করা যায়।
০৫. ডিভাইস ড্রাইভারের লাইভ আপডেটের ব্যবস্থা আছে।
০৬. পুরোপুরি অজানা ডিভাইসকে খুব সহজেই খুঁজে বের করতে পারে।
০৭. সিস্টেমের ডেস্কটপ ও মাই ডকুমেন্টস ফোল্ডার খুব সহজেই ব্যাকআপ নিতে পারে।
০৮. খুব সহজেই ব্যাকআপ নেয়া ফাইল ও ফোল্ডার রিস্টোর করতে পারে। ব্যাকআপ নেয়ার জন্য ফোল্ডার সিলেক্ট করে দিতে হয়। তাহলেই নিজে থেকেই ড্রাইভার ম্যাজিশিয়ান ব্যাকআপ নিয়ে নেবে।
০৯. নতুন করে অপারেটিং সিস্টেম ইনস্টল করার জন্য ড্রাইভারগুলোর ক্লোন করে রাখা যায়, যাতে পরবর্তী সেটআপের সময় ড্রাইভার ম্যাজিশিয়ান ইনস্টল না করেই কাজ করা যায় এবং এই ক্লোন এক্সিকিউটেবল ফাইল হিসেবে সেভ করে রেখে দেয়া যায়। শুধুই এক্সিকিউটেবল ফাইল নয়, ইনস্টলেশন শিল্ড উইজার্ড হিসেবেও ড্রাইভার সংরক্ষণ করা যায়।
এই সফটওয়্যারের ওয়েবসাইট থেকে ড্রাইভার ম্যাজিশিয়ান ডাউনলোড করার পর তা ইনস্টল করতে হবে। ইনস্টল করার পর তা চালু করলে নতুন ড্রাইভার খোঁজা, ড্রাইভার আপডেট, ড্রাইভার রিস্টোর, লাইভ আপডেট প্রভৃতি অপশনগুলো পাওয়া যাবে। অজানা ডিভাইসের ড্রাইভার খুঁজে বের করার জন্য লাইভ আপডেট করে নিতে হবে। তারপর টুল মেনু থেকে ডিটেক্ট আননোন ডিভাইস সিলেক্ট করে নিলে ড্রাইভারের ডাটাবেজ থেকে ড্রাইভার ম্যাজিশিয়ান নিজে নিজেই তার ড্রাইভার খুঁজে বের করবে। তবে মনে রাখতে হবে ড্রাইভার ম্যাজিশিয়ান খোলার জন্য অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ রাইট প্রয়োজন পড়বে। যদি সিস্টেমের ইউজার অ্যাডমিন নিজেই হন, তাহলে এই সফটওয়্যার খোলার জন্য কোনো পাসওয়ার্ড লাগবে না।
তবে এই সফটওয়্যার যাতে ঠিকমতো কাজ করতে পারে সেজন্য সবার আগে সিস্টেমের ইন্টারনেট সংযোগ থাকা বাধ্যতামূলক। সেই সাথে অন্তত একটি ইন্টারনেট ব্রাউজার থাকতেই হবে। তা না হলে ড্রাইভার ম্যাজিশিয়ান কাজ করবে না। কারণ কোনো ড্রাইভার ইন্টারনেট থেকে খুঁজে পেলে তা ম্যানুয়ালি ব্যবহারকারীকেই ডাউনলোড করতে হবে। শুধু লিঙ্কটা দেখিয়ে দেবে ড্রাইভার ম্যাজিশিয়ান।
কজ ওয়েব
ফিডব্যাক : mortuzacsepm@yahoo.com