• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > অন্য এক দক্ষিণ এশিয়া গড়া সম্ভব তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: ভাস্কর ভট্টচার্য
মোট লেখা:১৯
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১১ - ডিসেম্বর
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
এশিয়া
তথ্যসূত্র:
রির্পোট
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
অন্য এক দক্ষিণ এশিয়া গড়া সম্ভব তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে

১৮-২২ নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জমে উঠেছিল দক্ষিণ এশিয়া সামাজিক ফোরাম। আগ্রাসী ধনতন্ত্র এবং নয়া উদারনৈতিক অর্থনীতি ও বৈষম্যমূলক বিশ্বব্যবস্থার বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী গণমানুষের বিক্ষোভ ধ্বনিত হয় প্রতিবছর ‘ওয়ার্ল্ড সোশ্যাল ফোরাম’ প্লাটফরমে। ২০০১ সালে ওয়ার্ল্ড সোশ্যাল ফোরামের যাত্রা শুরু। বৈষম্যহীন সমাজের কথা বলতে প্রতিবছর বিশ্বের দেশে দেশে সমবেত হচ্ছে গণমানুষ। আর এই আয়োজনে ব্যাপকভাবে ব্যবহার হচ্ছে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি।

এবারের ওয়ার্ল্ড সোশ্যাল ফোরাম অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশে দক্ষিণ এশিয়া সামাজিক ফোরাম নামে, যা আমাদের জন্য একটি বড় প্রাপ্তি। এ আয়োজনের বড় বৈশিষ্ট্য ছিল ব্যাপকভাবে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার। অনুষ্ঠানের আয়োজকেরা গত জুলাই মাস থেকেই সভা-সমন্বয়ের জন্য অনলাইনে সবার সাথে যোগাযোগ করেছেন। আমরা লক্ষ করেছি, বার্ষিক সমন্বয়সভাটি ওয়েবে সরাসরি প্রচারিত হয়। দক্ষিণ এশিয়া সোশ্যাল ফোরামের ওয়েবপেজ (www.wsfsouthasiabd. org) ব্যবহার করে উৎসাহীরা এ বিষয়ে সব তথ্য জানতে পেরেছেন দক্ষিণ এশিয়া তথা বিশ্বজুড়ে। সোশ্যাল ফোরামের রেজিস্ট্রেশনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল আগস্ট থেকে। অনলাইনে রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে প্রথমদিকে অসুবিধা হলেও অল্পদিনের মধ্যেই তা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয় আয়োজক কমিটি। অংশগ্রহণকারীরা বিভিন্ন অপশনে রেজিস্ট্রেশন করতে পেরেছেন, এমনকি ঢাকার বাইরেও অনুষ্ঠান আয়োজনের সুযোগ ছিল রেজিস্ট্রেশন অপশনে। ঢাকা অথবা দেশের বাইরে থেকেও ইভেন্ট এবং স্টল রেজিস্ট্রেশন করতে পেরেছেন অংশগ্রহণকারীরা। অনুষ্ঠানকে ঘিরে অর্থ সংগ্রহের প্রচারণাও ছিল ওয়েবসাইটটিতে। দক্ষিণ এশিয়া সামাজিক ফোরাম চলাকালীন বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে দেখা গেছে ইভেন্টের সরাসরি সম্প্রচার, যদিও সব ইভেন্ট সম্প্রচারের ব্যবস্থা করতে পারেনি আয়োজক কমিটি। উল্লেখ্য, দক্ষিণ এশিয়া সোশ্যাল ফোরামের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করলেই অনেকগুলো ইভেন্টের ভিডিও লিঙ্ক দেখা যাবে এবং সেই সাথে নিউজও পড়া যাবে। ফেসবুক, টুইটার ইত্যাদি সামাজিক নেটওয়ার্কের মাধ্যমেও দক্ষিণ এশিয়া সোশ্যাল ফোরামের ব্যাপ্তি ছড়িয়ে পড়েছে দেশে-বিদেশে। বিভিন্ন দেশে জনমত গঠন এবং সামাজিক আন্দোলনে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে লক্ষণীয়ভাবে, রেডিও-টেলিভিশনের ব্যাপক ব্যবহার এখন পরিণত হয়েছে তথ্যপ্রযুক্তির বিপ্লবে।

তথ্যপ্রযুক্তি মানুষের কল্যাণে কত ব্যাপকভাবে ব্যবহার হতে পারে, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী এর সুবিধা থেকে যেন বাদ না যায়- দক্ষিণ এশিয়া সোশ্যাল ফোরামে তার জন্য ছিল নানা উদ্যোগ। এরই ধারাবাহিকতায় ‘সবার জন্য তথ্যপ্রযুক্তি : বাদ যাবে না কেউ, প্রতিবন্ধীরাও এর অংশ হবে, লাগবে উন্নয়নের ঢেউ’ স্লোগান নিয়ে ইপসা ও অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের যৌথ আয়োজনে ২০ নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে এক সেমিনার হয়। এতে ‘তথ্যপ্রযুক্তি এবং প্রতিবন্ধী মানুষের ব্যবহার উপযোগিতা’ শীর্ষক এক প্রবন্ধ উপস্থাপিত হয়। আলোচনায় উঠে আসে- ডিজিটাল বাংলাদেশ কোনো প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য বাধা তৈরি করবে না, বরং সম্ভাবনার দুয়ার উন্মুক্ত করবে। এছাড়া শহরকেন্দ্রিকতা থেকে বেরিয়ে তৃণমূল মানুষের কাছে তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে যাওয়া যাবে আরো সহজে।

সেমিনারে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ভিজ্যুয়াল ইম্পিয়ার্ড পিপলস সোসাইটির সভাপতি অ্যাডভোকেট মোশারফ হোসেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কমপিউটার সায়েন্স বিভাগের শিক্ষক মাহ্ফুজুর রহমান।

বক্তারা বলেন, দেশের মোট জনগোষ্ঠীর ১০ ভাগ মানুষ কোনো না কোনোভাবে প্রতিবন্ধী, যারা ভিন্নভাবে কাজ করতে সক্ষম। দেশের এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে পেছনে ফেলে উন্নয়ন সম্ভব নয়। বর্তমানে বাংলাদেশে সরকারিভাবে তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নে বেশ কিছু নতুন উদ্যোগ লক্ষণীয়, কিন্তু সেখানে সব ধরনের প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অংশ নেয়ার সুযোগ এবং অভিগম্যতা নিশ্চিত হয়নি। প্রতিবন্ধী মানুষকে বাদ দিয়ে বর্তমান সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন কিছুটা হলেও বাধাগ্রস্ত হবে বলে বক্তারা মনে করেন। সরকার ডিজিটালাইজেশনের জন্য যেসব তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করছে, সেগুলোতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অভিগম্যতা নিশ্চিত করার দাবি জানান তারা। সেমিনারে বক্তারা বিশেষভাবে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের তথ্যপ্রযুক্তিতে অভিগম্যতার বিষয়ে আলোকপাত করেন।

বাংলাদেশ এনজিও’স নেটওয়ার্ক ফর রেডিও অ্যান্ড কমিউনিকেশন তথা বিএনএনআরসির প্রধান নির্বাহী বজলুর রহমান সেমিনারে সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি শিক্ষা, কর্মসংস্থানসহ সব ক্ষেত্রে ভিন্নভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এছাড়া তিনি বলেন, সম্প্রতি সময়ের একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হচ্ছে কমিউনিটি রেডিওর সম্প্রচার, যা হতে পারে তৃণমূল মানুষ বিশেষ করে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য তথ্যভান্ডার।

অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের উপ-ব্যবস্থাপক সায়েমা চৌধুরী দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের তথ্যপ্রযুক্তির বিভিন্ন শাখায় কাজ করার সম্ভাবনা উল্লেখ করে বলেন, ভারতে প্রায় ১ হাজার দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী আছেন, যারা সফটওয়্যার প্রোগ্রামার হিসেবে কাজ করছেন। সুযোগ পেলে আমাদের দেশের প্রতিবন্ধীরাও তথ্যপ্রযুক্তিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারবেন।

আলোচকেরা আরো বলেন, অন্যরকম দক্ষিণ এশিয়ার আগে অন্যরকম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গড়তে হবে। এখনো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কমপিউটার সায়েন্স বিভাগে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের অধ্যয়নের সুযোগ নেই। একটি বাধামুক্ত ও বৈষম্যহীন প্রযুক্তিনির্ভর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলার আহবান জানান আলোচকেরা। সবশেষে বলতে চাই, দক্ষিণ এশিয়া সোশ্যাল ফোরামের মতো বিশ্বের সব সামাজিক আন্দোলন বেগবান হোক, সব বৈষম্য ঘুচে যাক, তথ্যপ্রযুক্তির বিপ্লব মানুষের ইতিহাসে খুলে দিক এক নতুন দিগন্ত।


কজ ওয়েব

ফিডব্যাক : vashkar79.@hotmail.com
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস