ই-মেইল যোগাযোগের সবচেয়ে ভালো উপায় হিসেবে স্বীকৃত। যদিও সোশ্যাল মিডিয়া বিপ্লবের এই যুগে বেশিরভাগ যোগাযোগের কাজই ফেসবুক বা টুইটারের মাধ্যমেই সম্পন্ন হয়, তবুও ই-মেইলের জনপ্রিয়তা, কার্যকারিতা বা কার্যক্ষমতা আজও একে জনপ্রিয়তার শীর্ষে রেখেছে। যেকোনো দাফতরিক কাজে, পেশাদার কিংবা ব্যবসায়িক কাজে, গুরুত্বপূর্ণ ও গোপনীয় ইত্যাদি তথ্যাদি পাঠানোর জন্য আজও ই-মেইলের ব্যবহার প্রচলিত। বিশেষজ্ঞরা ধারণা করেন, যোগাযোগ মাধ্যমের যতই নিত্যনতুন উপায় সৃষ্টি হোক না কেন, সহসাই ই-মেইলের প্রচলন শেষ হয়ে যাচ্ছে না। ব্যক্তিপর্যায়ে ই-মেইলের ব্যবহার কমলেও পেশাদার বা অফিসিয়াল কাজে ই-মেইল ব্যবহার হবে আরও বহুদিন।
ই-মেইল সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম দুটি বৃহত্তম কোম্পানি হচ্ছে গুগল এবং ইয়াহু। এই দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব ই-মেইলে সেবা রয়েছে যেখানে যেকেউ বিনামূল্যে রেজিস্ট্রেশন করে ই-মেইলের যাবতীয় সুবিধা পেতে পারেন। ই-মেইল সংক্রান্ত কাজের জন্য অনেকেই ইয়াহুর চেয়ে জি-মেইল বেশি পছন্দ করে থাকেন। কেননা, জি-মেইল শুধু একবার মাত্র লোড হয়। এরপর থেকে ব্রাউজার বন্ধ করার আগে পর্যন্ত যেকোনো কাজ অন্য যেকোনো ই-মেইল সেবাদাতার চেয়ে দ্রুত করে থাকে। এছাড়া জি-মেইলের সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে একই অ্যাকাউন্ট দিয়ে গুগলের আরও বিভিন্ন সেবার সুবিধা উপভোগ করা। যেমন-কারো জি-মেইল অ্যাকাউন্ট থাকলে তিনি অনায়াসে গুগল রিডার, ইউটিউব, গুগল ডকস ইত্যাদি গুগল সেবা উপভোগ করতে পারবেন।
জি-মেইলের উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে এর কাস্টমাইজেশন সুবিধা। একে ইচ্ছেমতো বিভিন্ন থিমে সাজানো যায়। ফলে ব্যবহারকারী পছন্দমতো একটি থিম বাছাই করে নিতে পারেন তার ই-মেইলের আউটলুকের জন্য।
তবে সম্প্রতি সার্চ জায়ান্ট গুগল জানিয়েছে, তারা তাদের অন্যতম জনপ্রিয় সেবা জি-মেইলে বেশ কিছু পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে। এই পরিবর্তনগুলো সাধারণত প্রতিযোগী কোম্পানিগুলোর সাথে টিকে থাকার লক্ষ্যে এবং ব্যবহারকারীদেরকে আরও সহজ, দ্রুততর এবং দৃষ্টিনন্দন ব্যবহারের অভিজ্ঞতা দিতেই আসতে যাচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে জি- মেইলের সম্পূর্ণ আউটলুক বা থিম পরিবর্তন এবং গুগলের নিজস্ব সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং প্লাটফর্ম গুগল প্লাসের সাথে ইন্টিগ্রেশন।
নতুন থিম
জি-মেইল ইতোমধ্যে ব্যবহারকারীদের জানিয়ে দিয়েছে, জি-মেইলের নতুন চেহারা আসছে। জি-মেইল ব্যবহারকারীরা ইনবক্সে ঢুকলেই নিচের ডানদিকে ছোট নোটিফিকেশন বক্সে এই তথ্য জানতে পারছেন। নতুন চেহারাকে গুগলের সম্পূর্ণ থিমের সাথে মিলিয়ে তৈরি করা হয়েছে। যারা গুগলের অন্যান্য সেবার সাথে পরিচিত, তারা হয়তো লক্ষ করে থাকবেন, গুগল হোমপেজ থেকে শুরু করে গুগল রিডার, ইউটিউব, ব্লগার ইত্যাদি গুগলের অধীনে থাকা সব সাইটকে প্রায় একই ধরনের ডিজাইনের আওতায় এনেছে গুগল। মূলত গুগলের সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট গুগল প্লাস উন্মুক্ত হওয়ার পর থেকেই সাইটটির ডিজাইনের সাথে সঙ্গতি রেখে পুরো গুগলকে রিডিজাইন করা শুরু করেছে ক্যালিফোর্নিয়ার এই প্রতিষ্ঠান।
খুবই সাধারণ, তবে দৃষ্টিনন্দন ডিজাইন তৈরির ধারাবাহিকতায় এবার জি-মেইলেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। নতুন ডিজাইনে গুগলের হেডার বা লোগো এবং উপরের কালো বারটি সবসময়ই প্রদর্শিত থাকবে। ব্রাউজারে কোনো স্ক্রল করার অপশন নেই। পেজের মধ্যেই বিভিন্ন মেসেজ, লেবেল ও চ্যাট বক্সে আলাদা আলাদা স্ক্রলবার দেয়া হয়েছে ওঠানামা করার জন্য। এছাড়া কোনো মেসেজ সিলেক্ট না করা অবস্থায় ওপর থেকে ডিলিট, আর্কাইভ ইত্যাদি বাটনকেও অদৃশ্য করে দেয়া হয়েছে। এক বা একাধিক মেসেজ সিলেক্ট করলে ওপরে অ্যাকশন বাটনগুলো দৃশ্যমান হবে। তবে এই বাটনগুলো থেকে লেখা মুছে শুধু আইকন বা ছবি দেয়া হয়েছে, যার ফলে প্রথম প্রথম ব্যবহার করার সময় একটু অসুবিধা হতে পারে। কিন্তু আইকনগুলো অর্থপূর্ণ হওয়ায় অভ্যস্ত হয়ে যেতে খুব একটা সময় লাগবে না।
গুগল প্লাস ইন্টিগ্রেশন
গুগল প্লাসকে নিয়ে গুগলের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন কার্যক্রমের যেন কোনো শেষ নেই। ফেসবুককে দমন করে না হোক, নিজেদের শক্তিশালী সোশ্যাল মিডিয়া তৈরি করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে গুগল। তবে প্রাথমিকভাবে অনেক ব্যবহারকারী এতে রেজিস্ট্রেশন করলেও দেখা যাচ্ছে অনেকেই কয়েক দিন ব্যবহার করে গুগল প্লাসে আর ঢুকছেন না। ফলে গুগল প্লাসের সাথে ইউজার ইন্টারঅ্যাকশন কমে গেছে অনেকটাই।
কিন্তু ব্যবহারকারীরা গুগল প্লাসে লগইন করুন বা না করুন, জি-মেইল ঠিকই ব্যবহার করছেন। সবসময় গুগল প্লাসের সাথে সংযুক্ত রাখতে গুগল প্রত্যেকটি গুগল পেজে, এমনকি সার্চ পৃষ্ঠার ওপরেও কালো বার যোগ করে দিয়েছে, যেখানে গুগল প্লাসের নোটিফিকেশন দেখা যায় এবং সরাসরি গুগল প্লাসে স্ট্যাটাস আপডেট, ছবি আপলোড ইত্যাদি করা যায়।
সেখানেই থেমে থাকেনি গুগল, এবার জি-মেইলের মধ্যেও গুগল প্লাসকে ইন্টিগ্রেটেড করে দেয়া হয়েছে। এর ফলে অন্যান্য গুগল প্লাস ব্যবহারকারীর কাছ থেকে যখনই কোনো ই-মেইল আসবে, তখন তা খুললে ডান পাশের নতুন এক সাইডবারে ওই ব্যক্তিকে গুগল প্লাসে যোগ করার জন্য অ্যাড টু সার্কেল বাটন যুক্ত থাকবে। শুধু তাই নয়, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির প্রোফাইল থেকে প্রাইভেসি সেটিংয়ের ওপর ভিত্তি করে তার সর্বশেষ স্ট্যাটাসও প্রাপকের ই-মেইলের সাথে যুক্ত থাকবে। এর ফলে শুধু প্রয়োজনীয় ই-মেইলটি পাঠিয়ে দিলেই প্রাপক শুধু ই-মেইলটিই পাচ্ছেন না, বরং যখন তিনি মেইল খুলছেন তখন গুগল প্লাসের প্রোফাইলে আপনার সর্বশেষ স্ট্যাটাস আপডেটটিও জেনে যাচ্ছেন। তবে এগুলো অবশ্যই নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। কোন কোন স্ট্যাটাস আপডেট সবাই দেখতে পারবেন এবং কোনগুলো শুধু নির্দিষ্ট সার্কেলে অন্তর্ভুক্ত মানুষ দেখতে পারবেন।
কন্টাক্ট অটো-আপডেটার
জি-মেইলের আরেকটি বড় সুবিধা আসছে এর অ্যাড্রেসবুকে। এতদিন আপনাকে কারো ফোন নম্বর, ঠিকানা বা এ জাতীয় তথ্য আপডেট করতে হলে নিজে নিজে কন্টাক্ট খুঁজে বের করে আপডেট করতে হতো। কিন্তু গুগল কাজটি অটোমেটেড করে দিয়েছে। এখন থেকে যেসব কন্টাক্টের গুগল প্লাস প্রোফাইল রয়েছে, তাদের সব তথ্য গুগল প্লাস প্রোফাইল থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপডেট হবে। অর্থাৎ, ফোন নম্বর বা ঠিকানা ওই ব্যবহারকারী যখনই তার গুগল প্লাস প্রোফাইলে আপডেট করবেন, তখন আপনার কন্টাক্টে সেসব তথ্য আপডেট হয়ে যাবে। ফলে আপনার কন্টাক্ট তথ্য সবসময়ই থাকবে আপডেটেড।
ফটো শেয়ারিং
গুগল প্লাসে ছবি শেয়ার করা এখন অন্য যেকোনো সোশ্যাল নেটওয়ার্কে ছবি শেয়ার করার চেয়ে সহজ। সাধারণত কোনো অনুষ্ঠান বা প্রোগ্রামে গেলে সেখানে ফটোগ্রাফারদের তোলা ছবিগুলো আপনি ই-মেইলের মাধ্যমেই পেয়ে থাকেন। সেই ছবিগুলো ডাউনলোড করে আবার আপলোড করার ঝক্কি দূর করতেই জি-মেইল নিয়ে এসেছে ফটো শেয়ারিং সুবিধা। এর ফলে আপনার জি-মেইল ইনবক্সে থাকা যেকোনো ছবি ডাউনলোড না করেই সরাসরি গুগল প্লাসে শেয়ার করে দিতে পারবেন। এছাড়া শেয়ার করার সময় প্রাইভেসিও সেট করে দিতে পারবেন যাতে করে আপনি যাদের সাথে ছবিটি শেয়ার করতে চান শুধু তারাই তা দেখতে পারেন।
গুগল প্লাস গুগলের অন্যান্য সেবার চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে গুগলের কাছে। গুগল জানিয়েছে, গুগল প্লাসকে গুগলের সব সেবার কেন্দ্রবিন্দু করে তোলা হবে। ফলে ব্যবহারকারী গুগলের যে প্রোডাক্টই ব্যবহার করুন না কেন, কোনো না কোনোভাবে তিনি গুগল প্লাসের সাথে জড়িত থাকবেনই।
কজ ওয়েব
ফিডব্যাক : sajib@aisjournal.com