১৫ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হলো বাংলাদেশ কমপিউটার সমিতি তথা বিসিএসের ২০১২-১৩ মেয়াদের নির্বাহী পরিষদের নির্বাচন। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয় এ নির্বাচন। এ নির্বাচনে সমিতির ৬৮৯ ভোটারের মধ্যে ৫৯২ জন ভোট প্রদান করেন।
নির্বাচনী তফসিল অনুসারে গত ২২ নভেম্বর প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হয়। এ নির্বাচন শেষে পদ বণ্টনের কাজ চলে ১৭ ডিসেম্বর। ফল সম্পর্কে আপত্তি জানানোর শেষ সুযোগ ছিল ১৮ ডিসেম্বর বিকেল ৫টা পর্যন্ত। ফল সম্পর্কিত আপত্তির শুনানি ও নিষ্পত্তির দিন ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত কোনো আপত্তি ওঠেনি।
এবারের নির্বাচনে প্রতিযোগিতা করার জন্য ১৫ জন প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র জমা দেন। এদের মধ্যে সাতজন নির্বাচিত হন। নির্বাচিতরা হলেন : সভাপতি মো: ফয়েজউল্যাহ্ খান, সহ-সভাপতি মইনুল ইসলাম, মহাসচিব মো: শাহিদ-উল-মুনীর, কোষাধ্যক্ষ মো: জাবেদুর রহমান শাহিন, পরিচালক মোস্তাফা জববার, পরিচালক এ.টি. শফিক উদ্দিন আহমেদ এবং পরিচালক মজিবুর রহমান স্বপন।
নির্বাচিত হলেন : সভাপতি মো: ফয়েজউল্যাহ্ খান
১৯৯১ সালের দিকে এসে একটি খসড়া ‘মেমোরেন্ডাম অ্যান্ড আর্টিক্যাল অব অ্যাসোসিয়েশন’ প্রণীত হয়। বাংলাদেশ কমপিউটার সমিতি দেশের হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার ভেন্ডরদের প্রতিনিধিত্বকারী লাইসেন্সপ্রাপ্ত ও নিবন্ধিত সমিতি। এটি দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সমিতি ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির ‘এ’ ক্যাটাগরির সদস্য। বিসিএস আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ডব্লিউআইএসটিএ এবং অ্যাসোসিও’র সাথে যুক্ত।
১৯৮৭ সাল থেকে আজ পর্যন্ত বিসিএস চেষ্টা করে যাচ্ছে দেশের কমপিউটার ভেন্ডরদের একটি প্ল্যাটফর্মে ঐক্যবদ্ধ রাখতে এবং তাদের সম্ভাব্য সব ধরনের উৎসাহ যোগানোর মাধ্যমে তাদের অভিন্ন স্বার্থরক্ষা করে চলতে। এটি এখন তাদের সুরক্ষা দেয়ার অন্যতম প্রতিষ্ঠানে পরিণত।
নয়া সভাপতি মো: ফয়েজউল্যাহ্ খান
ফয়েজউল্যাহ্ খান এদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সুপরিচিত এক ব্যক্তিত্ব। তিনি কমপিউটার ও এর আনুষঙ্গিক সামগ্রী বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান বিজনেসল্যান্ড লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। এছাড়া আবাসন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান হোমস সায়েন্স রিয়েলিটি লিমিটেড ও সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান প্রগতি সিস্টেমস লিমিটেডের পরিচালক। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থ বিজ্ঞানে বি.এসসি অনার্সসহ এম.এসসি ডিগ্রিধারী ও প্রযুক্তিপ্রেমী এক মানুষ।
তিনি ঢাকার বাইরে বিসিএসের শাখা সম্প্রসারণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। তিনি বরাবর বাংলাদেশ সরকারের সাথে যৌথভাবে কমপিউটার মেলা আয়োজন, জনশক্তি গড়ে তোলা ও কমপিউটারের ব্যবহার সর্বজনীন করে তোলার ব্যাপারেও অনন্য ভূমিকা পালন করেন। তাছাড়া বাংলাদেশের আইসিটির ব্র্যান্ড ইমেজ উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন দেশে ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দল নিয়ে যান।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা সমাপন করে কেরিনা ইন্ডাস্ট্রিয়াল কর্পোরেশন নামে একটি ইলেকট্রনিক্স কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করে কর্মজীবন শুরু করেন। কমপিউটার ব্যবসায়ের সাথে যুক্ত হন ১৯৮৭ সালে। কর্মসূত্রে এ শিল্পখাতের সমস্যা ও সম্ভাবনা সম্পর্কে বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। বিসিএসের ২০০৬-০৭ মেয়াদেও তিনি সভাপতি ছিলেন। তিনি কমপিউটার জগৎ-কে জানিয়েছেন, বিসিএসের নবনির্বাচিত সভাপতি হিসেবে তিনি যেসব কর্মকান্ড পরিচালনা করতে আশা পোষণ করছেন এর মধ্যে রয়েছে :
১. বিসিএস-কে প্রকৃত অর্থে আইসিটি খাতের সব উদ্যোক্তা এবং ব্যবসায়ীদের একটি সার্বজনীন সংগঠন হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা;
২. সংগঠন পরিচালনায় বিসিএস সদস্যদেরকে সর্বোতভাবে সম্পৃক্ত করা;
৩. বিসিএস শাখা কমিটিগুলোকে অধিকতর ক্ষমতা প্রদানকরত আরো শক্তিশালী করা;
৪. প্রতিটি জেলায় বিসিএসের শাখা কমিটি গঠন করা;
৫. আমদানিকারক, পরিবেশক, রিসেলার এবং খুচরা বিক্রেতাদের মধ্যে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি বৃদ্ধি এবং পরস্পরের মধ্যে আস্থা স্থাপন করতে সকল পক্ষের স্বার্থ সংরক্ষণের মাধ্যমে একটি সুষ্ঠু ব্যবসায়িক পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে একটি নীতিমালা তৈরি করা;
৬. প্রতি তিন মাস অন্তর অন্তর সব সদস্যকে নিয়ে বিসিএসের কর্মকান্ডের পর্যালোচনাকরত সুযোগসমূহের সর্বোত্তর ব্যবহার এবং প্রতিবন্ধকতাসমূহের দূরীকরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা;
৭. সমিতির সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট সবার যথোপযুক্ত এবং ত্বরিত সেবা নিশ্চিতকরণার্থে যুতসই জনবল নিয়োগদান এবং লাগসই প্রযুক্তি উপকরণে সমৃদ্ধকরত বিসিএস সচিবালয়কে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত এবং শক্তিশালী করা;
৮. আইসিটি খাতের সব শাখায় প্রয়োজনমত দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির জন্য সমিতির উদ্যোগে লাগসই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাকরত ডাটাব্যাংক সৃষ্টির মাধ্যমে চাহিদামাফিক সদস্য কোম্পনিগুলোকে নিয়োগদানের সহায়তা প্রদান করা এবং সদস্য কোম্পানিগুলোর বিদ্যমান কর্মীবাহিনীর দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য শাখাওয়ারী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা;
৯. দেশের আইসিটি খাতের সহযোগী সংগঠন-বিশেষ করে বেসিস ও আইএসপিএবি এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উইটজা ও অ্যাসোসিও’র সাথে নিবিড় যোগাযোগ রক্ষাকরত যৌথভাবে কর্মকান্ড পরিচালনার মাধ্যমে আইসিটি খাতের প্রসার ও উন্নয়ন ঘটানো এবং এ খাতের ব্যবসায়ীদের উন্নয়নের ব্যবস্থা করা। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিসিসি এর সাথে যৌথভাবে কাজ করা।
১০. আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিসিএসের কর্মকান্ড এবং বাংলাদেশের ব্র্যান্ড ইমেজ বৃদ্ধিকল্পে বিভিন্ন কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা;
১১. বাংলাদেশে যেসব আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডসমূহের প্রতিষ্ঠানসমূহকে ‘After Sales Service Center’ বাংলাদেশে স্থাপনের জন্য উৎসাহ প্রদান ও সহযোগিতা করা;
১২. বাংলাদেশের আইসিটিতে বিশেষ অবদান রাখার প্রেক্ষিতে অবদানকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে বিশেষ সম্মানে ভূষিত করা।
কজ ওয়েব