অন্ধকারে আলোর ফানুস উড়িয়ে, আতশবাজি আর লেজার রশ্মির নীল আলোর ঝলক নিয়ে শেষ হলো দেশের সবচেয়ে বড় সফটওয়্যার ও আইটি সার্ভিস প্রদর্শনী ‘বেসিস সফটএক্সপো ২০১২’। ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার দিকে আমাদের অগ্রযাত্রার আকাঙ্ক্ষাকে উস্কে দিয়ে, তারুণ্যের শক্তি আর উদ্ভাবনকে কাজে লাগিয়ে সমৃদ্ধশালী দেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে পাঁচ দিনের এ জমজমাট আয়োজনের বর্ণিল সমাপ্তি ঘটে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস তথা বেসিস আয়োজিত এ প্রদর্শনীর পর্দা ওঠে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ঠিক পরের দিন, ২২ ফেব্রুয়ারি।
সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তি সার্ভিসের ক্ষেত্রে দেশের সবচেয়ে বড় এ প্রদর্শনীতে অংশ নেয় দেশী-বিদেশী প্রায় ১৪০টি প্রতিষ্ঠান। প্রদর্শনীতে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা দেশের তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক স্বার্থ ও সুবিধা যাচাই করার যেমন উন্মুক্ত সুযোগ পেয়েছিল, তেমনি সম্ভাবনায় তরুণ প্রজন্ম নিজেদের মেধা আর সৃষ্টিশীলতার স্বাক্ষর রাখার জায়গা করে নিয়েছিল আবিষ্কারের খোঁজে, আর কোড ওয়ারিয়র্স চ্যালেঞ্জের মতো নানা প্রতিযোগিতামূলক আয়োজনের মধ্য দিয়ে।
তরুণ প্রজন্মই আগামীর বাংলাদেশের নির্মাতা। এরাই এগিয়ে নেবেন দেশকে নতুন সম্ভাবনার পথে। তাই তরুণদের ক্ষমতায়ন, তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে তাদের অংশ নেয়া ও দেশকে আক্ষরিক অর্থেই ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে বিশ্বায়নের যে চ্যালেঞ্জ, সেটি মোকাবেলার জন্য ‘এমপাওয়ারিং নেক্সট জেনারেশন’ স্লোগান নিয়ে শুরু হওয়া এ প্রদর্শনীতে ছিল প্রায় ৮০টির বেশি সেমিনার, টেকনিক্যাল সেশন, ওপেন সেশন, বিজনেস ম্যাচমেকিং ও প্রেজেন্টেশন ইত্যাদি।
পুরো প্রদর্শনী এলাকা ৭টি ভিন্ন জোনে বিভক্ত ছিল। বিজনেস সফটওয়্যার, আউটসোর্সিং, মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন, ক্লাউড অ্যান্ড কমিউনিকেশন, আইটি এনাবল্ড সার্ভিস, আইটি এডুকেশন ও ই-কমার্স জোন নামের ৭টি জোনে মুখরিত ছিল প্রদর্শনীর মুহূর্তগুলো।
অন্যান্য বারের মতো এবারও মেলায় প্রবেশের ক্ষেত্রে অনুসরণ করা হয়েছিল ভিজিটর রেজিস্ট্রেশন সিস্টেম। সাধারণ দর্শনার্থীর জন্য মেলায় প্রবেশের টিকেট মূল্য ছিল ৫০ টাকা। এ ছাড়া বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষার্থীসহ পেশাজীবীরা যথাক্রমে পরিচয়পত্র ও ভিজিটিং কার্ড দেখিয়ে বিনামূল্যে প্রবেশের সুযোগ পান।
শুরুর গান
২২ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টায় বেসিস সফটএক্সপো ২০১২ আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এ ছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: রফিকুল ইসলাম, বেসিস সভাপতি মাহবুব জামান, মহাসচিব ফোরকান বিন কাশেম, মেলার আহবায়ক তামজিদ সিদ্দিক স্পন্দন, নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ক্যারেল রিচার্ড, জিপি আইটির চিফ ফাইনান্সিয়াল অফিসার ক্রিস্টিনা থেরনসহ অনেকে।
উদ্বোধনী বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সেবা খাতের বিকাশে তথ্যপ্রযুক্তির ভূমিকার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, ভালো কর্মসংস্থানের জন্য প্রয়োজন সেবার মানোন্নয়ন। আর উন্নত সেবা খাত নির্মাণে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখতে পারে তথ্যপ্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার ও বিকাশ।
তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক বিকাশমান সেবা খাতে তরুণদের অংশ নেয়া আশাব্যঞ্জক বলে মত দেন অর্থমন্ত্রী। তার মতে, নতুন প্রজন্মের ৩৫ শতাংশই এখন দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সাথে জড়িত। আর এ খাতের বিকাশের জন্য খুব শিগগিরই জনতা টাওয়ারে সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক চালু হবে বলেও জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পেছনে সফটএক্সপোর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: রফিকুল ইসলাম বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে এ ধরনের প্রদর্শনী বেশ সহায়ক। তিনি বলেন, সফটওয়্যার রফতানির ক্ষেত্রে আমরা অনেক এগিয়েছি। আমাদের ভবিষ্যৎ তরুণ প্রজন্ম এ খাতকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাবে বলেই প্রত্যাশা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বেসিস সভাপতি মাহবুব জামান একটি সুসংবাদ দেন। খুব শিগগির পেপাল চালু হওয়ার সম্ভাবনার বার্তা দিয়ে তিনি বলেন, আমাদের দেশের ফ্রিল্যান্সারসহ অন্যান্য শ্রেণী-পেশার মানুষ ও দেশকে আরো একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে। অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন বেসিসের মহাসচিব ফোরকান বিন কাশেম।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আয়োজক প্রতিষ্ঠান বেসিসের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাসহ দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে প্রদর্শনীটি সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়।
আয়োজনে যারা
বেসিস প্রদর্শনীটির আয়োজক এবং বাংলাদেশ সরকারের তথ্য, যোগাযোগ ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন তথা এটুআই প্রকল্প মেলায় সহ-আয়োজক হিসেবে ভূমিকা পালন করেছে। এ ছাড়া মেলার প্লাটিনাম স্পন্সর ছিল জিপি আইটি, গোল্ড স্পন্সর ডেল, কো-স্পন্সর ব্র্যাক ব্যাংক ও আইসিটি বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিল, ইন্টারনেট পার্টনার কিউবি, ক্লাউড ও কমিউনিকেশন জোন স্পন্সর হুয়াওয়ে এবং আউটসোর্সিং জোন স্পন্সর সিমসলিউশন। গতবারের মতো এবারও বেসিস সফটএক্সপো ২০১২-এর বিভিন্ন লাইভ ওয়েবকাস্ট করে কমজগৎ ডটকম টেকনোলজিস। প্রদর্শনীতে ম্যাচমেকিংয়ের সহায়তায় ছিল ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড সেন্টার এবং সিবিআই নেদারল্যান্ডস।
যা কিছু ছিল আয়োজনে
‘এমপাওয়ারিং নেক্সট জেনারেশন’ স্লোগান নিয়ে শুরু হওয়া এ প্রদর্শনীর প্রাণকেন্দ্রে ছিলেন তরুণেরা। দেশের তরুণদের মধ্যে লুকিয়ে থাকা প্রতিভা আর সম্ভাবনাময় তারুণ্যকে আবিষ্কারের তাগিদে প্রদর্শনী আয়োজনের অনেক আগে থেকেই নানা প্রতিযোগিতামূলক প্রোগ্রামের আয়োজন করে বেসিস।
তথ্যপ্রযুক্তির সাথে তরুণ প্রজন্মের মেলবন্ধন ঘটানোর জন্য, প্রযুক্তি খাতে তাদের অন্তর্ভুক্তি, বিকাশ ও সম্ভাবনাকে মেঘের আড়াল থেকে আলোয় তুলে আনার জন্য প্রদর্শনীতে ছিল ‘আবিষ্কারের খোঁজে’র মতো আগ্রহ-উদ্দীপক আয়োজন। প্রায় ২০০ নতুন উদ্ভাবক নিয়ে শুরু হওয়া এই প্রতিযোগিতার চূডান্ত পর্বটি হয় সফটএক্সপোতে।
তরুণ প্রোগ্রামারদের জন্য ছিল প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা ‘কোড ওয়ারিয়র্স চ্যালেঞ্জ’। পিএইচপি, ডট নেট, জাভা এবং অ্যান্ড্রয়িড- এই ৪টি ট্র্যাকে প্রোগ্রামিংয়ের যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন দেশসেরা হাজারো প্রোগ্রামার।
তরুণদেরকে দেশের আইসিটি শিল্পে চাকরির সুযোগ করে দেয়ার লক্ষ্যে প্রদর্শনীতে ছিল আইটি জব ফেয়ার। বিভিন্ন আইসিটি কোম্পানি প্রদর্শনী চলাকালীন খুঁজে নিয়েছে তাদের পছন্দসই প্রার্থী। মেলার প্রথম দুই দিন মেলা প্রাঙ্গণে আগ্রহীদের কাছ থেকে সিভি সংগ্রহ করা হয় আর ইন্টারভিউ নেয়া হয় মেলার চতুর্থ দিন।
ফ্রিল্যান্সিংয়ের প্রতি তরুণ প্রজন্মকে আরও উৎসাহিত করতে বিগত বছর থেকে বেসিস প্রচলন করেছে ‘বেসিস ফ্রিল্যান্সার অব দ্য ইয়ার’ শীর্ষক অ্যাওয়ার্ড কার্যক্রম। সহস্রাধিক প্রতিযোগীর মধ্য থেকে ব্যক্তিগত, দলীয় এবং প্রতিষ্ঠানভিত্তিক ক্যাটাগরিতে বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কারের আয়োজনও করা হয় এ প্রদর্শনীতে।
সফটএক্সপো জুড়ে আয়োজন করা হয় ১২টির বেশি সেমিনার ও রাউন্ডটেবিল বৈঠক। বিভিন্ন ক্ষেত্র ও পরিসরে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার, কর্মকৌশল নির্ধারণসহ প্রযুক্তিসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে নতুন তর্ক, যুক্তি আর বোঝাপড়া তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন ইস্যুতে মতামত, আলোচনা, সিদ্ধান্ত নেয়া আর নতুন পথ সন্ধানের তাগিদ ছিল সেমিনার ও রাউন্ডটেবিলগুলোতে।
এ ছাড়া প্রদর্শনীতে অন্যতম আকর্ষণ হিসেবে ছিল ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ের ওপর টেকনিক্যাল সেশন। বায়ো-ইনফরমেটিক্স, ক্লাউড কমিপিউটিং, ফেসবুকের অ্যাপ্লিকেশন, ইন্টারনেট মার্কেটিং, ওয়েব ডেভেলপমেন্টসহ প্রয়োজনীয় বিষয়ের ওপর ছিল নানা প্রয়োজনীয় আলোচনা। ছিল বিষয়গুলো জেনে-বুঝে নেয়ার বহুমাত্রিক চেষ্টা।
মেলায় আইডিয়া ও ইনোভেশন প্লাটফর্মে ছিল প্রায় ৪০টির মতো পণ্য উদ্ভাবনীমূলক ধারণা উপস্থাপন পর্ব। ছিল জীবনবৃত্তান্ত রাখার জায়গা। সফটওয়্যার শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে সদ্য পাস করা শিক্ষার্থীদের সংযোগের একটা মোক্ষম সেতু হয়ে উঠেছিল গোটা মেলা প্রাঙ্গণ।
অর্জনের টালিখাতা
প্রদর্শনীর সব আয়োজনকে সার্থক করতে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদেরকে পুরস্কৃত করা আর প্রদর্শনীর সুযোগে দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের মেধাবী, পরিশ্রমী মানুষগুলোকে সম্মানিত করার জন্য বেসিস অ্যাওয়ার্ড নাইট ২০১২ আয়োজন করে।
আজীবন সম্মাননা পুরস্কার, ডিজিটাল চ্যাম্পিয়নশিপ অ্যাওয়ার্ড, স্পেশাল কন্ট্রিবিউশন অ্যাওয়ার্ড, আইটি ইনোভেশন সার্চ প্রোগ্রাম (আবিষ্কারের খোঁজে) অ্যাওয়ার্ড, ফ্রিল্যান্সার অ্যাওয়ার্ড এবং কোড ওয়ারিয়র্স চ্যালেঞ্জ শীর্ষক প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার পুরস্কার।
আবিষ্কারের খোঁজে
বেসিস সফটএক্সপো-২০১২ উপলক্ষে নতুন আইনস্টাইনের খোঁজে বেসিস আয়োজন করে আইটি ইনোভেশন সার্চ প্রোগ্রাম ‘আবিষ্কারের খোঁজে’। ২০০৫ সাল থেকে এই প্রতিযোগিতাটি বেসিসের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে দেশের উদ্যমী তরুণেরা যাতে তাদের নতুন নতুন উদ্ভাবনী ধারণার সৃষ্টি ও বিকাশ ঘটাতে পারবে, সে জন্যই এই প্রতিযোগিতার আয়োজন। প্রদর্শনীতে ১০টি উদ্ভাবনী প্রকল্প প্রদর্শন করা হয়। যার তিনটিকে বেসিস সফটএক্সপো অ্যাওয়ার্ড ২০১২-র জন্য নির্বাচিত করা হয়। আবিষ্কারের খোঁজে প্রতিযোগিতার শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতি পাওয়া প্রথম প্রকল্পটি হলো ‘ভয়েস গাইডেড ইউটিলিটি রোবট’। নগদ ১ লাখ টাকাসহ ক্রেস্ট তুলে দেয়া হয় প্রকল্পের আবিষ্কারকের হাতে। প্রথম রানার আপ হয় ‘এফোর্ডেবল মার্কার লেস মোশন ক্যাপচার সলিউশন’ আর দ্বিতীয় রানার আপ হয় ‘ডক্টর সফটওয়্যার’। প্রথম রানার আপকে ৫০ হাজার টাকাসহ ক্রেস্ট ও দ্বিতীয় রানার আপকে ২৫ হাজার টাকাসহ ক্রেস্ট তুলে দেয়া হয় বেসিস এক্সপো অ্যাওয়ার্ড নাইট ২০১২-র জমকালো আসরে।
‘ডক্টর সফটওয়্যার’-এর উদ্ভাবক ড. এসএম আশরাফুল আলম পেশায় একজন এমবিবিএস ডাক্তার।
‘এফোর্ডেবল মার্কার লেস মোশন ক্যাপচার সলিউশন’ এর উদ্ভাবক হাসিনুর রহমান রেজা।
ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ফিরোজ আহমেদ সিদ্দিকির উদ্ভাবনী প্রকল্প ‘ভয়েস গাইডেড ইউটিলিটি রোবট’।
এ ছাড়া উদ্ভাবিত আবিষ্কারগুলোর মধ্যে অন্ধদের জন্য অনলাইন লাইব্রেরি প্রকল্প, স্কুল-কলেজে বড় বড় খাতা ব্যবহারের বদলে একটি ছোট সফটওয়্যার দিয়ে অটোমেটিক টেব্যুলেশন শিট ও প্রগ্রেস রিপোর্ট তৈরি করার প্রকল্পগুলো দর্শকদের কৌতূহল যেমন বাড়িয়েছে, পাশাপাশি আমাদের তরুণদের বিজ্ঞানমনস্কতা আর উদ্ভাবনী শক্তির এক আকর্ষণীয় প্রদর্শনী হয়ে উঠেছিল এ মেলা।
কোড ওয়ারিয়র্স চ্যালেঞ্জ
প্রোগ্রামারদের জন্য ছিল প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা ‘কোড ওয়ারিয়র্স চ্যালেঞ্জ’। পিএইচপি, ডট নেট, জাভা এবং অ্যান্ড্রয়িড- এই ৪টি ট্র্যাকে প্রোগ্রামিংয়ের যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন দেশসেরা সহস্রাধিক প্রোগ্রামার।
কোড ওয়ারিয়র্স চ্যালেঞ্জ প্রতিযোগিতায় ৪টি ট্র্যাকে শিক্ষার্থী ও পেশাজীবী বিভাগে মোট ৮টি দলকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। অ্যান্ড্রয়িড ট্র্যাকে শিক্ষার্থী বিভাগে চ্যাম্পিয়ন দলের নাম সার্জ এবং পেশাজীবী বিভাগে চ্যাম্পিয়ন দল দ্য ইনক্রেডিবল। পিএইচপি ট্র্যাকে শিক্ষার্থী বিভাগে চ্যাম্পিয়ন দলের নাম ব্যাড টাইমিং এবং পেশাজীবী বিভাগে চ্যাম্পিয়ন দল মুক্ত এক্সএসএস। ডট নেট ট্র্যাকে শিক্ষার্থী বিভাগে শিরোপাধারী দলের নাম সাসট ট্রাইঙ্গেল, পেশাজীবী বিভাগে চ্যাম্পিয়ন দল স্মার্ট ওয়ারিয়র্স, জাভা ট্র্যাকে শিক্ষার্থী বিভাগে চ্যাম্পিয়ন দলের নাম বুয়েট নোবডিস এবং পেশাজীবী বিভাগে চ্যাম্পিয়ন দল স্পেকট্রাম ওয়ারিয়র্স।
আইটি জব ফেয়ার
তরুণ প্রজন্মকে দেশের আইসিটি শিল্পে চাকরির সুযোগ করে দেয়ার জন্য এবং প্রতিষ্ঠানের সাথে তরুণদের যোগাযোগ করার একটি কমন প্লাটফর্ম তৈরিতে প্রদর্শনীতে ছিল আইটি জব ফেয়ার। বিভিন্ন আইসিটি কোম্পানি সফটএক্সপো চলাকালীন খুঁজে নিয়েছে তাদের পছন্দসই প্রার্থী। প্রদর্শনীর প্রথম দুই দিন মেলা প্রাঙ্গণে আগ্রহীদের থেকে সিভি সংগ্রহ করা হয় আর ইন্টারভিউ নেয়া হয় মেলার চতুর্থ দিন।
প্রায় ১ হাজারের ওপর আগ্রহী চাকরিপ্রার্থীর মধ্য থেকে বাছাই করে ২৯৬ জনের সরাসরি সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠিত হয়। চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ছিল জিনুইটি সিস্টেম লিমিটেড, ডিএনএস সফটওয়্যার লিমিটেড, রাইজ আপ ল্যাবস লিমিটেড, রাইট ব্রেইন সলিউশন লিমিটেড, জিপিআইটি লিমিটেড, ডেভনেট লিমিটেড, ইপসাইলন কন্সাল্টিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সার্ভিসেস, ব্রেইন স্টেশন ২৩, সিগনাস ইনোভেশন লিমিটেড, এমএফ এশিয়া লিমিটেড, আইবল নেটওয়ার্কস, প্রাইম টেক, সার্ভিস ইঞ্জিন লিমিটেড ইত্যাদি।
ফ্রিল্যান্সার সেশন
নতুন প্রজন্মের প্রচুর বেকার তরুণকে ফ্রিল্যান্সিংয়ের প্রতি উৎসাহিত করতে গত বছর থেকে বেসিস প্রচলন করেছে ‘বেসিস ফ্রিল্যান্সার অব দ্য ইয়ার’ অ্যাওয়ার্ড কার্যক্রম। সহস্রাধিক প্রতিযোগীর মধ্য থেকে ব্যক্তিগত, দলীয় এবং প্রতিষ্ঠান এই তিন বিভাগে বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার দেয়া হয়।
বেসিস অ্যাওয়ার্ড নাইট ২০১২-তে দেশের বর্ষসেরা ১৫ ফ্রিল্যান্সারের নাম ঘোষণা করে বেসিস। ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে দেশের উন্নয়নে অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ তাদেরকে দেয়া হয় বিশেষ অ্যাওয়ার্ড। শিক্ষার্থী বিভাগে বিজয়ী হয়েছেন খালেদ বিন এ কাদের, সাজ্জাদ হোসাইন অলি, মারজান আহমেদ এবং আহমেদ সাজিদ। ব্যক্তিগত বিভাগে বিজয়ী হয়েছেন মুহাম্মদ শোয়েব, মোহাইমেনুজ্জামান, সাঈদ ইসলাম, খালেদ মো: শাহরিয়ার, আনোয়ারুল ইসলাম, এনামুল হক ও আশিকুর রহমান এবং কোম্পানি বিভাগে দ্য আরএস সফটওয়্যার, এনকোডল্যাবস ইনস, তানভীর আইটি সলিউশন্স এবং জোবাদনেট।
এ ছাড়া বেসিস অ্যাওয়ার্ড নাইট-২০১২ অনুষ্ঠানে বেসিসের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এ তৌহিদ এবং বাংলাদেশ কমপিউটার সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং বেসিসের দ্বিতীয় সভাপতি এসএম কামালকে যৌথভাবে আজীবন সম্মাননা অ্যাওয়ার্ড দেয়া হয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড তথা এনবিআর-কে দেয়া হয় ডিজিটাল চ্যাম্পিয়নশিপ অ্যাওয়ার্ড। বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি এবং প্রয়াত বেসিস সদস্য এএসএম শামসুজ্জামান পাপ্পুকে যৌথভাবে দেয়া হয় স্পেশাল কন্ট্রিবিউশন অ্যাওয়ার্ড।
মেলার বিভিন্ন জোন ও স্টল
প্রদর্শনীটি মূলত বিজনেস সফটওয়্যার, আউটসোর্সিং, মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন, ক্লাউড অ্যান্ড কমিউনিকেশন, আইটি এনাবল্ড সার্ভিস, আইটি এডুকেশন ও ই-কমার্স জোন নামের ৭টি জোনে বিভক্ত ছিল। দেশের সফটওয়্যার উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানগুলো সেখানে হাজির হয়েছিল নিজেদের উদ্ভাবিত নানারকম সলিউশন ও অ্যাপ্লিকেশন নিয়ে।
ব্যাংক, স্কুল, আবাসন, হাসপাতালসহ বিভিন্ন ধরনের অফিস ব্যবস্থাপনার জন্য তৈরি করা এসব সফটওয়্যার নজর কেড়েছে দেশীয় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর। পাশাপাশি মেলায় আসা তরুণদের উস্কে দিয়েছে সফটওয়্যার শিল্পকে কাজের জায়গা হিসেবে নির্বাচন করার জন্য।
সেরা স্টল ও প্যাভিলিয়ন
এবারের প্রদর্শনীতে সেরা স্টলের জন্য অ্যাওয়ার্ড জিতেছে মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন জোনের স্টল মাল্টিমিডয়া কনটেন্ট অ্যান্ড কমিউনিকেশন্স তথা এমসিসি। যোগাযোগ সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রকল্পে নানা ধরনের কনটেন্ট তৈরি করে থাকে এ প্রতিষ্ঠানটি।
মেলায় সেরা প্যাভিলিয়নের জন্য পুরস্কার জিতেছে জেনুইটি সিস্টেমস লিমিটেড। মেলার পাঁচ দিন ধরে এই প্যাভিলিয়নে ভিড় লেগেই ছিল। মেলায় আগত দর্শকদের মেসেজের মাধ্যমে কুইজে অংশ নেয়ার সুযোগ করে দেয়া হয় এখানে। এছাড়া প্রদর্শনীতে সেরা মিনি প্যাভিলিয়ন পুরস্কার জিতেছে কোরকে নামের প্রতিষ্ঠান।
বিজনেস মিট অ্যান্ড ম্যাচ সেশন
মেলায় অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘ব্যাংকিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সেক্টর’ শীর্ষক বিজনেস মিট অ্যান্ড ম্যাচ সেশন। ব্যাংকার্স সিটিও ফোরাম ও বেসিসের যৌথ আয়োজনে এ সেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক মো: নাজমুল হক।
স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যকার পারস্পরিক সম্পর্কোন্নয়নের জন্য আন্তর্জাতিক ম্যাচমেকিং কার্যক্রম পরিচালিত হয় প্রদর্শনীতে। এতে দেশীয় প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি এ ম্যাচমেকিংয়ে আইটিসি ও সিবিআই নেদারল্যান্ডসের মাধ্যমে অংশ নেয় ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস ও যুক্তরাজ্যের ১০টির বেশি আইটি কোম্পানির ২২ জনের মতো প্রতিনিধি।
সেমিনার ও সেশন
মেলা চলাকালীন আয়োজন করা হয় প্রায় ১২টির বেশি সেমিনার ও রাউন্ডটেবিল। এগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল ই-গভর্ন্যান্স, ই-পেমেন্ট, বিল্ডিং ইফেক্টিভ ইন্ডাস্ট্রি লিংকেজ ফর আইসিটি এডুকেশন, রোল অব স্যাটেলাইট ইমেজ, আউটসোর্সিং ইন দ্য ক্লাউড অ্যান্ড ইকো সিস্টেম, নারীর ক্ষমতায়ন ও তথ্যপ্রযুক্তিতে নারী, প্রাইভেট ইক্যুইটি ফান্ডিং, ন্যাশনাল পোর্টাল ফ্রেমওয়ার্কসহ বিভিন্ন বিষয়।
প্রদর্শনীর প্রথম দিন আয়োজন করা হয় ই-গভর্ন্যান্স বিষয়ক সেমিনার। ‘ই-গভর্ন্যান্স : এক্সপেরিয়েন্স অব নরওয়ে’ শিরোনামের সেমিনারটিতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নরওয়ের ই-গভর্ন্যান্স বিশেষজ্ঞ মিস ইনে ফালেহ। নরওয়েতে কিভাবে ই-গভর্ন্যান্স পদ্ধতিটি চালু আছে, গোটা প্রেজেন্টেশনে তিনি সে বিষয়টি তুলে ধরেন।
প্রদর্শনীর দ্বিতীয় দিন বেলা ১১টায় বেসিস আয়োজন করে ‘ই-পেমেন্ট অ্যান্ড এম-পেমেন্ট এস অল্টারনেটিভ ট্রানজেকশন’ শীর্ষক একটি গুরুত্বপূর্ণ সেমিনার। এ সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডাচ-বাংলা ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম মো: শিরিন। তিনি ই-পেমেন্টের কারিগরি সুযোগ-সুবিধা তুলে ধরেন। এ সেমিনারে বক্তব্য রাখেন বেসিস সভাপতি মাহবুব জামান, অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন তথা এটুআইর নীতিনির্ধারণী উপদেষ্টা আনীর চৌধুরী এবং বেসিস সহসভাপতি একেএম ফাহিম মাশরুর।
একই দিন সিমসলিউশন বাংলাদেশ লিমিটেডের আয়োজনে একটি রাউন্ডটেবিল অনুষ্ঠিত হয়। সিমসলিউশন বাংলাদেশের প্রধান ‘নলেজ ম্যানেজমেন্ট ইন প্র্যাকটিস’ শীর্ষক রাউন্ডটেবিলটি পরিচালনা করেন। তিনি প্রতিষ্ঠানের ভেতরে কিভাবে জ্ঞান ব্যবস্থাপনা করা হবে, বিভিন্ন বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের ভেতরকার লোকবলকে শিক্ষিত করাসহ বিভিন্ন বিষয়ে সিমসলিউশনের অভিজ্ঞতাকে তুলে ধরেন। শেষে প্রশ্নোত্তর পর্বের মাধ্যমে উপস্থিত শ্রোতারা নিজেদের প্রতিষ্ঠানে কিভাবে নলেজ ম্যানেজমেন্টের এই অ্যাপ্রোচকে কাজে লাগাতে পারেন, সে ব্যাপারে তাদের মধ্যে মিথস্ক্রিয়ামূলক আলাপচারিতা হয়।
তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থাপনা বিকাশে কিভাবে ইন্ডাস্ট্রি লিংকেজ তৈরি করা যায় এবং ইন্ডাস্ট্রি ও বিদ্যায়তনিক ক্ষেত্রকে কিভাবে সংযুক্ত করা যায়, এ বিষয়ে বেসিসের আয়োজনে ‘বিল্ডিং ইফেক্টিভ ইন্ডাস্ট্রি লিংকেজ ফর আইসিটি এডুকেশন’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এরপরই একই হলে অনুষ্ঠিত হয় ‘রোল অব স্যাটেলাইট ইমেজ অন আর্থকোয়াক ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ডিজিটাল ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ শীর্ষক গুরুত্বপূর্ণ একটি রাউন্ডটেবিল বৈঠক। এটির আয়োজনে ছিল বেসিস।
মেলার তৃতীয় দিন বিকেলে অনুষ্ঠিত হয় দেশের নাগরিক সেবার মান বৃদ্ধিসংশ্লিষ্ট মোবাইল ফোন অ্যাপ্লিকেশন ও স্মার্ট প্রযুক্তির উন্নয়নবিষয়ক সেমিনার। ‘মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড স্মার্ট টেকনোলজিস ফর সিটিজেন সার্ভিসেস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্র্যাকের সামাজিক সেবা উদ্ভাবন ও যোগাযোগ পরিচালক আসিফ সালেহ।
মেলার সমাপনী দিনে মেলা কেন্দ্রের হারমনি হলে আইডিয়াজ অ্যান্ড ইনোভেশন প্লাটফর্মে ‘ডিসিশন মেকিং থ্রো বিজনেস ইন্টেলিজেন্স’ শীর্ষক এক সেমিনারের আয়োজন করে ডাটাবিজ সফটওয়্যার লিমিটেড। সেমিনারে সাধারণ অংশগ্রহণকারীদের পাশাপাশি সাংবাদিক, ব্যবস্থাপক, তথ্যপ্রযুক্তি ও ব্যবসায় সংগঠনগুলোর নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সেমিনারের প্রধান বক্তা ডাটাবিজ সফটওয়্যার লিমিটেডের বিক্রয় ও বিপণন শাখার প্রধান দেওয়ান এস. রহমান স্থানীয়ভাবে প্রস্ত্তত করা বেশ কিছু বিআই (বিজনেস ইন্টেলিজেন্স) টুল প্রদর্শনের পাশাপাশি বিজনেস ইন্টেলিজেন্সের ধারণা, উন্নয়ন ও ইতিহাস বিষয়ে সংক্ষিপ্ত বিবরণ উপস্থাপন করেন।
এ ছাড়া মেলায় আয়োজিত অন্যান্য সেমিনারের মধ্যে ছিল বেসিসের আয়োজনে ‘অপরচুনিটি ইন ই-গভর্ন্যান্স ম্যানেজড সার্ভিস’, বেসিস ও এটুআইয়ের যৌথ আয়োজনে ‘ন্যাশনাল পোর্টাল ফ্রেমওয়ার্ক-ফিউচার প্রসপেক্টাস’, জিপিআইটির আয়োজনে ‘ওভারকামিং চ্যালেঞ্জেস থ্রো স্ট্যান্ডারাইজেশন আইএসও ২০০০০ অ্যান্ড আইএসও ২৭০০১’, আলবাট্রস টেকনোলজি লিমিটেডের আয়োজনে ‘প্রাইভেট ইকুয়্যাটি ফান্ডিং ফর আইটি ভেনচার্জস’ প্রভৃতি সেমিনার। এসব সেমিনার বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তি খাতগুলোর সম্ভাবনা, ভবিষ্যৎ কর্মকৌশল নির্ণয়, নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের সম্ভাবনা যাচাইসহ বিভিন্ন বিষয়ে সহায়তা করবে বলে আয়োজকদের মত। পাশাপাশি ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণের ক্ষেত্রে এসব সেমিনার থেকে অর্জিত বিভিন্ন ধারণা তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক টেকসই উন্নয়নে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে বলেও মন্তব্য করেন আয়োজকেরা।
টেকনিক্যাল সেশনগুলো
এবারের সফটএক্সপোর অন্যতম আকর্ষণ ছিল টেকনিক্যাল সেশন। ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ের ওপর ছিল প্রায় ১২টি টেকনিক্যাল সেশন। সেশনগুলো পরিচালনা করছিলেন খ্যাতিমান দেশী-বিদেশী তথ্যপ্রযুক্তিবিদরা। বায়ো-ইনফরমেটিক্স, ক্লাউড ও ফেসবুকের অ্যাপ্লিকেশন, ইন্টারনেট মার্কেটিং, ওয়েব ডেভেলপমেন্টসহ প্রয়োজনীয় বিষয়ের ওপর অনুষ্ঠিত হয় নানা টেকনিক্যাল সেশন।
মেলায় বিভিন্ন টেকনিক্যাল সেশন অনুষ্ঠিত হয়। এদের মধ্যে নেক্সট জেনারেশন ক্লাউড ডেপেলপমেন্ট : সেলফ হেল্প ইজ দ্য বেস্ট হেল্প, ডিজাইনিং গুড এপিআই অ্যান্ড ইস ইমপরটেন্সি, বায়োইনফরমেটিকস : হোয়াই উই সুড বি সিরিয়াস এবাউট দিস, এচিভিং হাইপার প্রোডাকটিভিটি ইত্যাদি সেশন খুব আগ্রহ-উদ্দীপক ছিল।
মেলার শেষ দিন সকালে ‘পিএইচপি এক্সপার্টস ডেভকন ২০১২’ টেক সেশনে অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া ওপেন সেশনে ইনফরমেটিক্স টেকনোলজিসের আয়োজনে ‘ই-স্কুলে ফ্রি স্কুল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম অ্যান্ড ই-লার্নিং প্লাটফর্ম ফর ইউ’, বি-ক্যাশের আয়োজনে ‘ফিউচার অব মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস : অপরচুনেটিস অ্যান্ড চ্যালেঞ্জেস’, ডাটাবিজ সফটওয়্যার লিমিটেডের আয়োজনে ‘ডিসিশন মেকিং থ্রো বিজনেস ইন্টেলিজেন্স’, ব্র্যাক ব্যাংকের আয়োজনে ‘ব্র্যাক ব্যাংক অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ে অ্যান্ড অনলাইন বিজনেস’ শীর্ষক ওপেন সেশনও অনুষ্ঠিত হয়।
শেষ কথা
দেশের সবচেয়ে বড় সফটওয়্যার প্রদর্শনী বেসিস সফটএক্সপো এবারের আয়োজনে তরুন প্রজন্ম থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক প্রযুক্তিবিদ, আগামী দিনের উদ্ভাবকসহ প্রযুক্তিপ্রেমদের মিলনমেলায় পরিনত হয়। চারদিকে দেখা যায় মুখরিত মানুষের ভিড়। তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বাড়িয়ে দেশকে উন্নয়নের শিখরে পৌঁছি দেয়ার জন্য নিয়োজিত ছিলেন একঝাঁক একনিষ্ঠ কর্মী, আগ্রহী তরুণ আর নতুন-পুরনো উদ্যোক্তা।
কজ ওয়েব