২০০১ সাল শুরুর সাথে সাথে আমরা পা রেখেছিলাম নতুন আরেক সহস্রাব্দে। ২০১০ সালটি শেষ হওয়ার সাথে সাথে চলে গেল নতুন এই সহস্রাব্দের প্রথম দশকটিও। নতুন সহস্রাব্দের পার হয়ে আসা প্রথম এই দশকে কেমন ছিল প্রযুক্তির এগিয়ে চলা। সময়ের সাথে প্রযুক্তির নানা ক্ষেত্রও শাখা-প্রশাখা বিস্তার করে চলেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ক্ষেত্রগুলো হচেছ: মোবাইলিটি, গেমিং, অ্যাপি¬কেশন, পিসি সফটওয়্যার, পিসি হার্ডওয়্যার, হোম এনটারটেইনমেনট ও ওয়েব। আমরা এসব ক্ষেত্রে এক দশকের একটা পর্যালোচনা করতে চাই। তবে প্রযুক্তির প্রতিটি ক্ষেত্রের বিষয়বিস্তৃতি এতটাই ব্যাপক যে, একটি মাত্র সংখ্যায় এক দশকের পর্যালোচনা খুবই কঠিন। তাই একেকটি সংখ্যায় একেকটি ক্ষেত্রের এক দশকের পর্যালোচনা করাই শ্রেয় মনে করি। চলতি সংখ্যায় আমাদের আলোচনার অনুষঙ্গ করেছি মোবাইলিটিকে। এ আলোচনায় আমরা দেখার চেষ্টা করব নতুন সহস্রাব্দের প্রথম দশকে প্রযুক্তি মোবাইলিটি প্রক্রিয়াকে কতদূর এগিয়ে নিয়ে গেছে। আমরা এখানে যেসব বিষয় উপস্থাপন করব, সেগুলোর পরিধিও স্থানাভাবে খুবই সীমিত রাখতে হচেছ, যদিও আমরা মনে করি পাঠক চাহিদা পূরণের জন্য এসব বিষয়ে আরও বিস্তৃত আলোকপাতের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু বাস্তবতার সীমাবদ্ধতা না মেনে চলার কোনো সুযোগ আমাদের হাতে নেই।
সে যা-ই হোক এ পর্যালোচনায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে মোবাইলিটির তিনটি ক্যাটাগরিকে : প্রযুক্তি ও পণ্য, ব্যক্তি ও কোম্পানি এবং সংস্কৃতি ও ঘটনা। আমরা এরই আলোকে গত এক দশকের মোবাইল প্রযুক্তির জগতে এগিয়ে চলার পথ-পরিক্রমায় ঘটে যাওয়া উলে¬খযোগ্য কয়েকটি দিক তুলে ধরার প্রয়াস পাব। তার আগে আমাদের একটি দুর্বলতার কথা জানিয়ে নিই। আলোচ্য এ দশকে প্রাযুক্তিক অগ্রগতি উলে¬খযোগ্যভাবে প্রভাব ফেলেছে মোবাইলিটির ওপর। এই মোবাইলিটি আমাদের সবার ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। বলা যায়, বিদ্যমান প্রযুক্তির প্রয়োগ ও উদ্ভব ঘটে চলেছে প্রাত্যহিকভাবে। তাই বিগত দশকের মোবাইল প্রযুক্তিতে ঘটে যাওয়া পরিবর্তনগুলোর তালিকায়ন যেমন একটা কঠিন কাজ, তেমনি এর পর্যালোচনায় যাওয়াও একটি দুঃসাহসিক কাজ।
কিতাই কালচার
আপনি হয়তো জাপানকে নিয়ে কথা বলতে গিয়ে Keitai Culture পদবাচ্যটির কথা অনেকবারই শুনে থাকবেন। জাপানি ভাষায় Keitai Denwa শব্দযুগলের আভিধানিক অর্থ ‘পোর্টেবল ফোন’ বা বহনযোগ্য ফোন। জাপানিরা ব্যাপকভাবে মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন। আর এর মধ্য দিয়েই সে দেশে গড়ে উঠেছে মোবাইল ফোন সংস্কৃতি বা ‘কিতাই কালচার’। মোবাইল ফোন শুধু জাপানি কালচারের অবিচেছদ্য অংশ নয়, বিশ্বের বেশিরভাগ দেশের বেলায়ই তা সত্য। আমাদের এই বাংলাদেশে কিংবা পাশের দেশ ভারতের তরুণ প্রজন্ম কি ইতোমধ্যেই মোবাইল ফোন সংস্কৃতির জন্ম দেয়নি। আমরা হয়তো জাপানিদের কিতাই সংস্কৃতির জন্ম দিচিছ না, আমরা আমাদের মতো করে জন্ম দিচিছ আমাদের নিজস্ব মোবাইল ফোন সংস্কৃতি। অনেক জাপানির মতো আমরা মোবাইল ফোন দিয়ে ব্রাউজিং করি। আমরাও তাদের মতো রঙিন মোবাইল ফোন কভার, স্টিকার ইত্যাদি ব্যবহার করছি। আসলে এখন তরুণ প্রজন্ম কোথাও দাঁড়িয়ে কথা বলে কমই। বরং এর বদলে এরা মোবাইলে মিনিটে মিনিটে পাঠাচেছ নানা পরিধির নানা মাত্রার ক্ষুদে বার্তা।
স্টিভ জবস
আইফোন, আইপ্যাড আর আইপড- এ সময়ের আলোচিত প্রযুক্তিপণ্য। আর এসব প্রযুক্তিপণ্যের পেছনে যার মোটা দাগের অবদান, তিনি হচেছন স্টিভ জবস। এই মানুষটি প্রমাণ করে গেছেন তার এসব প্রযুক্তিপণ্য সত্যিই সেরা মানের। গত বছর তিনি মারা যান। তিনি যেসব ‘কিনোট স্পিচ’ বা মুখ্য বক্তব্য দিয়ে গেছেন, সেগুলো তাদের জন্য অপরিহার্য, যারা উপস্থাপন শিল্পকে আয়ত্ত করতে আগ্রহী। তার মুখ্য বক্তব্যগুলোর ভিডিওগুলোর প্রত্যেকটি একেকটি অবশ্য দর্শনীয় বা ‘মাস্ট ওয়াচ’ হয়ে উঠেছে। স্টিভ জবসের ক্যারিশমা বর্ণনা করতে গিয়ে অ্যাপলের প্রকৌশলী বুরেল স্মিথ বলেছেন- স্টিভ জবসের দখলে আছে ‘রিয়েলিটি ডিসটর্শন ফিল্ড’। তিনি আপনাকে যেকোনো বিষয়ে স্বমনে আনতে সক্ষম। অবশ্য অ্যাপলের পণ্যের পেছনে অবদান রয়েছে অ্যাপলের আরও শত শত কর্মীর। তবে আমরা যে মানুষটির দূরদৃষ্টি অনুসরণ করে আসছি, তিনি হচেছন স্টিভ জবস। তিনি অ্যাপলকে প্রায় দেউলিয়াত্বের অবস্থান থেকে তুলে এনেছেন আজকের এই বৃহত্তম এক প্রযুক্তি কোম্পানিতে। এর স্বীকৃতি দিতেই হয় স্টিভ জবসকে। সাথে সাথে প্রশ্ন জাগে, কবে পাব আমরা আরেকজন স্টিভ জবস?
অ্যান্ড্রয়িড
এক দশকের উলে¬খযোগ্য প্রযুক্তিপণ্যের মধ্যে আলোচনায় এসেছে গুগলের অ্যান্ড্রয়িড। অ্যান্ড্রয়িড হচেছ মোবাইল ডিভাইসের জন্য- যেমন স্মার্টফোন ও ট্যাবলেট পিসির জন্য লিনআক্সভিত্তিক একটি অপারেটিং সিস্টেম। এটি দ্রুত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। এই অপারেটিং সিস্টেমটি ডেভেলপ করেছে গুগলের আওতাধীন ‘ওপেন হ্যান্ডসেট অ্যালায়েন্স’। গুগল এই সফটওয়্যারের ইনিশিয়েল ডেভেলপার ‘অ্যান্ড্রয়িড ইঙ্ক’ কিনে নেয় ২০০৫ সালে। গুগল ওপেন সোর্স হিসেবে অ্যান্ড্রয়িড ফোন অবমুক্ত করে অ্যাপাচি লাইসেন্সের আওতায়। অ্যান্ড্রয়িড ওপেন সোর্স প্রকল্পের ওপর দায়িত্ব দেয়া হয়েছে এর রক্ষণাবেক্ষণ ও আরও উন্নয়নের। ২০১০ সালে কিউ৪-এ অ্যান্ড্রয়িড বিশ্বব্যাপী সর্বোচচ বিক্রীত স্মার্ট ফোনের তালিকাভুক্ত হয়। ২০১১ সালের নভেম্বর পর্যন্ত বিশেব বিশ কোটি অ্যান্ড্রয়িড ডিভাইস ব্যবহার হয়। এখন প্রতিদিন ৭ লাখ অ্যান্ড্রয়িড সক্রিয় করা হচেছ।
পিটার চৌ
পিটার চৌ হচেছন এইচটিসি করপোরেশনের তিন প্রতিষ্ঠাতার একজন। তিনি ২০০৪ সালের ৩০ এপ্রিল থেকে কাজ করছেন এইচটিসি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রেসিডেনট হিসেবে। তার নেতৃত্বে এইচটিসি চালু করে এর প্রথম অ্যান্ড্রয়িড ফোন। এখন এইচটিসি’র অ্যান্ড্রয়িড ফোন মোবাইল ফোন ও ট্যাবলেট ফোন ক্যাটাগরির মধ্যে অন্যতম এক শীর্ষ সারির প্রযুক্তিপণ্য।
রুটিং
রুটিং হচেছ একটি প্রক্রিয়া, যা মোবাইল ফোন ও ট্যাবলেট পিসি ও অন্যান্য অ্যান্ড্রয়িড ওএস সমৃদ্ধ ডিভাইস ব্যবহারকারীদের সুযোগ করে দেয় অ্যান্ড্রয়িডের সাবসিস্টেমে অগ্রাধিকার নিয়ন্ত্রণের। এই অগ্রাধিকার নিয়ন্ত্রণের নাম রুট প্রসেস। আমরা তিনটি কারণ পাঠকদের জানাতে পারি, যে কারণে আপনি আপনার অ্যান্ড্রয়িড ডিভাইস রুট করবেন : ০১. কোনো বিস্ট থাকলে, তা মুক্ত করতে পারবেন। ০২. যখন ডিভাইসের প্রচুর পরিমাণ সক্ষমতা থাকে, তখন উৎপাদকেরা এর কিছুটা সীমিত করে দেয়। এই ডিভাইসটি রুট করুন, হাতে পাবেন পূর্ণ ক্ষমতা- ওভারক্লক করুন, অবাঞ্ছিত ওইএম কাস্টমাইজেশন রিমোভ করুন এবং ব্যাপকভাবে আপনার ডিভাইসের পারফরমেন্স বাড়িয়ে তুলুন। ০৩. অপ্রাপ্তব্য অপশন ও ফিচার ইনস্টল করা : আপনি পেতে পারেন ওয়াই-ফাই ব্লুটুথ টিথারিং, আপনার চাহিদা থাকলে পাননি এমন সব ফিচার আনস্টল করুন। আপনি যোগ করতে পারেন কাস্টমাইজ কি-বোর্ড। টাইপের জন্য পেতে পারেন আরো উন্নত কি-বোর্ড অভিজ্ঞতা। অবশ্য মনে রাখতে হবে, রুটিংয়ের কোনো ওয়ারেনিট নেই। আপনার মোবাইল ডিভাইস ভেঙে গেলে কিংবা নষ্ট হলে কেউ দায়িত্ব নেবে না। তার পরও আপনি থামবেন না, আপনি রুট করবেন।
এক্সপেরিয়া পে¬
Xperia Play প্রথম পে¬স্টেশন সার্টিফাইড মোবাইল ডিভাইস, যা চলে অ্যান্ড্রয়িড ২.৩ জিঞ্জারব্রেডে। এক্সপেরিয়া পে¬স্টেশন মোবাইল ফোন ডিভাইসে গেমিংয়ের সম্পূর্ণ নতুন এক দিক উন্মোচন করেছে। এর বৈশিষ্ট্য হলো, এটি এর সাথে সনি পে¬স্টেশন পিএসপি’র ইনফিউজ করতে সক্ষম হয়েছে। এর অর্থ হচেছ, আপনি গেম খেলতে পারবেন ঠিক যেন পিএসপি’র মতো করে। এতে আছে ১ গিগাহার্টজ কুয়ালকম স্করপিওন প্রসেসর। আছে অ্যান্ড্রয়িড ২০৫ জিপিইউ, যা থেকে পাওয়া যায় মসৃণ গ্রাফিকস। এর আছে পরিপূর্ণ গেমিং প্যাডসহ একটি গাইড-আউট প্যানেল। আছে এলইডি ব¬্যাকলিট এলসিডি টাইপের চার ইঞ্চি ডিসপে¬। ডিসপে¬র মান উন্নত।
টেক্সটিং
ইনস্ট্যানট মেসেজিং (আইএম) হচেছ পিসি বা অন্যান্য ডিভাইস ব্যবহারকারী দুই ব্যক্তির মধ্যে শেয়ার্ড ক্লায়েনটদের সাথে পুশ মুডে এক ধরনের ‘রিয়েল-টাইম ডাইরেক্ট টেক্সট-বেইজড’ চ্যাটিং কমিউনিকেশন। উলে¬খ্য, পুশ বা সার্ভার পুশ হচেছ এক ধরনের ইনটানেটভিত্তিক কমিউনিকেশন স্টাইল, যেখানে কোনো প্রদত্ত ট্রানজেকশনের জন্য রিকুয়েস্ট আসে পাবলিশার বা সেনট্রাল সার্ভারের পক্ষ থেকে। এর বিপরীতে আছে পুল সার্ভার, যেখানে রিকুয়েস্ট আসে ক্লায়েনেটর পক্ষ থেকে। এখন আসছে আরো বেশি বেশি আইএম অ্যাপি¬কেশন। সেই সাথে সস্তাতর হচেছ টেক্সটিং রেট। এর ফলে দেখা যাচেছ, মানুষ কলিংয়ের চেয়ে টেক্সটিংয়ের ওপর অগ্রাধিকার দিচেছ। প্রশ্ন হলো, কেনো এই পরিবর্তন? টেক্সটিং অধিকতর সস্তা বলেই এমনটি হচেছ না। এ ধরনের যোগাযোগ বেশি জনপ্রিয় হয়ে ওঠার পেছনে এর বেশ কিছু মনস্তাত্ত্বিক বিষয়ও রয়েছে। টেক্সটিং জনপ্রিয় হওয়ার কারণ, এর বেশ কিছু সহজবোধ্য সুবিধা রয়েছে। যেমন এতে রয়েছে অ্যাসিনক্রোনাস (একই সময়ে সংঘটিত নয় এমন) ইনটারেকশনের সুবিধা এবং এটি সহায়তা দেয় ডিসক্রিট কনভারসেশনের। এর মাধ্যমে আপনি এমন কিছু প্রকাশ করতে পারবেন, যা অন্য কোনো উপায়ে আপনার পক্ষে হয়তো প্রকাশ করা সম্ভব নয়। যখন আপনি কাউকে টেক্সট পাঠান, তখন আপনি আপনার অবস্থান সম্পর্কে কোনো তথ্য দেন না। ফোন কলের সময় ব্যাকগ্রাউন্ডের গোলমেলে আওয়াজ থেকে তা অনেক সময় আপনার অবস্থানস্থল ফোন গ্রাহকের কাছে স্পষ্ট হয়ে যায়। টেক্সটিং এ ধরনের গোপনীয়তা রক্ষার সুযোগ দেয়। তা ছাড়া টেক্সটিংয়ে আপনাকে ইনটারেকশনে বক্তব্যের মেজাজ ও পরিধি নিয়ন্ত্রণের সুযোগ আছে। টেক্সটিংয়ে আপনি প্রতিটি ভাবনা গুছিয়ে প্রকাশের সুযোগ পারবেন, যা ফোন কলের সময় বাহ্যিক কারণে সম্ভব নয়। এই টেক্সটিং কালচারের কিছু অসুবিধাও আছে। এটি তরুণমানসকে আটকে দিচেছ টেক্সটিং ল্যাঙ্গুয়েজে। এর মাধমে এরা এমন সব অ্যাক্রোনিম (অন্য শব্দের আদ্যক্ষর নিয়ে গঠিত শব্দ) ব্যবহার করছে, যা আমাদের জীবনের সবস্তরের ভাষার মধ্যে প্রাধান্য বিস্তার করতে চলেছে। ভাষা বিকৃতির জন্য এটি খুবই খারাপ দিক। কারণ, টেক্সট মেইলে এ ধরনের টেক্সট ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যবহারের বিষয়টি অনেককে ক্ষুব্ধ করে।
গৃহবিবাদ
মোবাইল শিল্পে এখন এই সময়ে নানা মজার মজার ঘটনা ঘটছে। এ শিল্পে এমনি একটি ঘটনা হয়তো আপনি আনদাজ করতে পারছেন। হ্যাঁ, এটি হচেছ প্যাটেনট ওয়ার। আমরা বলতে পারি, এটি হচেছ মোবাইল শিল্পের ভেনডেটা বা গৃহবিবাদ। অন্যান্য কোম্পানি এ যুদ্ধে বা গৃহবিবাদে লিপ্ত থাকলেও এ যুদ্ধের কেনদ্রীয় আকর্ষণ হিসেবে থাকতে দেখা গেছে অ্যাপল ও স্যামসাংকে। আকর্ষণীয় বলছি এ কারণে যে, অ্যাপল ও স্যামসাং উভয়েই একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। আর এ দু’টি কোম্পানির সম্পর্ক যদি এভাবে খারাপ চলতেই থাকে, তবে উভয় কোম্পানিকেই আসছে দিনেও লোকসান গুনে যেতে হবে অতীতের মতোই। এ যুদ্ধের সূচনার পর থেকে আজ পর্যন্ত সব ঘটনার সন্ধান করলে, আমরা পাই দু’টি ইনফোগ্রাফিকস, যাতে এ পর্যন্ত এই প্যাটেনট ওয়ারের একটা সার সংক্ষেপ পাওয়া যাবে।
http://goo.gl/EUzOk
http://goo.gl/duHI8
সোওয়াইপি
আমরা এ পর্যন্ত মোবাইল ডিভাইসে ঠিক তিন ধরনের কিবোর্ড লেআউট দেখে আসছি। এগুলো হচেছ : কোয়ার্টি, মাল্টিট্যাপ এবং শিউরটাইপ। কিন্তু বিগত কয়েক বছরে আমরা দেখেছি অনেক ইনপুট মেথড, যার ফলে এসব কিবোর্ড মোবাইল ডিভাইসে ব্যবহার হতে পারছে। বিশেষ করে ব্যবহার হতে পারছে টাচ্স্ক্রিন ডিভাইসে। সোওয়াইপি (Swype) এরই একটি উদাহরণ। এটি এখনো একটি অন-স্ক্রিন কোয়ার্টি কিবোর্ড। তবে এটি স্বতন্ত্র এ কারণে যে, এতে আপনি টাইপ করতে পারবেন বর্ণমালার ওপর শুধু আঙুল পিছলিয়ে নিয়ে বা গাইড করে। যে শব্দটি আপনি টাইপ করতে চান, শুধু সেই শব্দে থাকা বর্ণগুলোর ওপর দিয়ে আঙুল ধারাবাহিকভাবে পিছলিয়ে নিলেই টাইপ হয়ে যাবে। আপনি যদি খুব বেশি পরিমানে টাইপ করেন, তবে সোওয়াইপি আপনার জন্য মোক্ষম এক হাতিয়ার।
উইন্ডোজ ফোন
উইন্ডোজ ফোন মাইক্রোসফট উদ্ভাবিত একটি মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম। এটি উইন্ডোজ মোবাইল প্লাটফর্মের উত্তরসূরি, যদিও এর সাথে এটি কমপ্যাটিবল নয়। এটি ২০১০ সালের দ্বিতীয়ার্ধে ইউরোপ, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, মেক্সিকোয় এক যোগে চালু করা হয়। এশিয়ায় চালু করা হয় ২০১১ সালে। উইন্ডোজ ফোন যখন প্রথম চালু হয়, তখন এর আজকের iOS ও অ্যান্ড্রয়িডের ফোনের মতো গুরুত্বপূর্ণ অনেক ফিচারই ছিল না। কিন্তু আজকের ‘ম্যাঙ্গু’ আপডেটের মাধ্যমে উইন্ডোজ ফোন এখন একটি প্রতিশ্রুতিশীল মোবাইল প্লাটফর্ম হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। ম্যাঙ্গুর মাধ্যমে মাইক্রোসফট এর আগে না থাকা অনেক ফিচারেরই অভাব কাটিয়ে উঠতে পেরেছে।
ওয়াইকিজ
ওয়াইকিজ! আমার ফোনের সুরক্ষা! আমি আমার ফোনের চারপাশে ইটের দেয়াল দিয়ে কি ফোনকে সেই সুরক্ষা দিতে পারি? সময়ের সাথে আমরা একটা ফোনকে স্মার্ট থেকে আরো বেশি স্মার্ট করে তুলছি। আর এই স্মার্ট ফোন দিয়ে যখন নানা তুচছ কাজ করি, তখন কমন এররের সংখ্যাও বেড়ে যায়। শুধু কাস্টম ফার্মওয়্যারের সাথে মানানসই করার বেলায়ই নয়, রুটিংয়ের সময়ও কিছু সমস্যার সৃষ্টি হয়। কিন্তু ব্যাপার হচেছ, ফোনগুলো যতই হালকা-পাতলা ও আকারে ছোট হচেছ, এতে করে কোনোভাবেই এটি সহায়ক হয়ে উঠছে না। আমাদের সব সময় সতর্ক থাকতে হয়, কখন না জানি এটি হাত থেকে পড়ে গিয়ে অকেজো হয়ে যায়। সুখের কথা, আমরা এখন দেখছি নতুন নতুন স্মার্ট ফোনের বডিতে বেশি করে মেটাল ব্যবহার হচেছ। এতে করে হাত থেকে পড়ে গিয়ে ফোন অকেজো হয়ে যাওয়ার ভয় কমছে, যদিও অধিকতর শক্তিশালী সিপিইউ’র কারণে এ ধরনের ফোনে তুলনামূলকভাবে তাপ বেশি অপচয় হয়। তারপরও পড়ে গিয়ে সহজে নষ্ট হয়ে যাওয়া সম্ভাবনা তো কমছে।
ফ্ল্যাশ অন মোবাইল
গত বছর নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে অ্যাডোবি ঘোষণা দিয়েছে, এটি মোবাইল ডিভাইসের জন্য ফ্ল্যাশ পে¬য়ার ডেভেলপ করা বন্ধ করে দেবে। তবে এটি AIR সাপোর্ট অব্যাহত রাখবে। মনে হয়েছিল এটি একটি অবাক করা খবর। কিন্তু ফ্ল্যাশ অ্যাপি¬কেশন ও সাইট সৃষ্টির সবচেয়ে যৌক্তিক কারণ ছিল ফ্ল্যাশের ইনস্টল্ড বেইস। ইউটিউব ও অন্যান্য সাইটের জনপ্রিয়তার কারণে ফ্ল্যাশের প্রয়োজন দেখা দেয়। বেশিরভাগ কমপিউটার ব্যবহারকারী ফ্ল্যাশ পে¬য়ার ইনস্টল করে। অ্যাডোবির মতে, ইনটারনেট-এনাবল্ড কমপিউটারের ৯৯ শতাংশই ফ্ল্যাশ পে¬য়ার ইনস্টল করে। দেড় বছর আগে স্টিভ জবস তার এক খোলা চিঠিতে ব্যাখ্যা দেন, কোনো অ্যাপল কেনো ফ্ল্যাশ সাপোর্ট করে না। কেনো অ্যাডোবি এই উদ্যোগ নিচেছ, বিষয়টি খুবই সহজবোধ্য। নিরাপদ কনটেনট প্রোভাইড করার সুযোগ এতে আরো বেশি। ব্যাটারি লাইফও প্রতিকূল নয়। ফলে এতে মোবাইল অভিজ্ঞতা ভালো। অবশ্য, মানুষ এখনো AIR ব্যবহার করে সেইসব অ্যাপি¬কেশন পাবে, যা পাওয়া যাবে অ্যাডোবি প্লাটফর্ম থেকে। আর এটি প্রধানত ওয়েব পেজে স্ট্রিমিং ভিডিও। এর মাধ্যমে মোবাইল ডিভাইসে নন-ফ্ল্যাশ ফরমেটে ভিডিও স্ট্রিম করা সহজ।
লিমো
লিমো (LiMo) তথা লিনআক্স মোবাইল ফাউন্ডেশন হচেছ একটি অলাভজনক সংগঠন। এটি কাজ করছে মোবাইল সার্ভিসের জন্য একটি পুরোদস্ত্তর ওপেন লিনআক্সভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেম গড়ে তোলার জন্য। নোকিয়া এন৯-এ কাজ করছে MeeGo, এটি লিমোর বহু উদ্যোগের একটি। ইনেটল ও নোকিয়ার সাথে মিলে লিমো যৌথ উদ্যোগে গড়ে তুলেছে মিগো। ইনেটল ও নোকিয়া ছাড়াও অ্যামাইনোকম ও নোভেল মিগো প্রকল্পে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। তা সত্ত্বেও ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে ইনেটলের একজন কর্মকর্তা ঘোষণা দেন, তারা স্যামসাং ও লিমোর সহায়তায় মিগো’র জায়গায় নিয়ে আসছেন টাইজেন। ২০১২ সালে এই টাইজেন উন্মোচনের কথা। যখন মোবাইল শিল্প এখন চলে যাচেছ সত্যিকারের ওপেন সোর্স অপারেটিং সিস্টেমে, তখন এক্ষেত্রে কী ঘটে তা দেখার জন্য আমরা অপেক্ষায় থাকতে পারি না।
নোকিয়া ই৫
কেনো আমরা এক দশকের মোবাইল প্রযুক্তির জগতে নোকিয়া ই৫ মোবাইলকে উলে¬খযোগ্য বলে চিহ্নিত করলাম? এর কারণ হলো, সম্প্রতি এটি রানিং মাল্টিপল অ্যাপি¬কেশন রেকর্ডধারী হয়েছে। নোকিয়া ই৫ একই সাথে অবিশ্বাস্যভাবে ৭৪টি অ্যাপি¬কেশন চালাতে সক্ষম হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আগের রেকর্ডধারী ‘স্যামসাং ওমনিয়া এইচডি’ সক্ষম হয়েছিল ৬২টি অ্যাপি¬কেশন চালু করতে। গুরুত্বপূর্ণ হচেছ, অন্যান্য ফোনে মাল্টিটাস্কিংয়ের সূচনা ঘটেছে। আর এর মাধ্যমে মোবাইল ফোন যেনো বিশ্বের মূল কমপিউটিং ডিভাইস হিসেবে সিংহাসনে আরোহণ করল।
মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস
মোবাইল যন্ত্রপ্রেমিকদের সবার জন্য এটি হচেছ বেহেশত। মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস হচেছ একটি বার্ষিক আয়োজন। মোবাইল শিল্পের প্লাটফর্মের জন্য এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রদর্শনী। সেই সাথে এটি কাজ করে একটি সম্মেলন হিসেবেও, যাতে যোগ দেন বিশ্বের নানা দেশের এ শিল্পের সব ক্ষেত্রের সংশি¬ষ্ট প্রধান নির্বাহীরা। তারা তাদের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন নানা ধরনের আয়োজনের মধ্য দিয়ে। ২০১১ সালের মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয় স্পেনের বার্সেলোনায়। এ মেলায় বেশ কিছু জনপ্রিয় মোবাইল পণ্য প্রদর্শিত হয়। যেমন : স্যামসাংয়ের গ্যালাক্সি এস২, এইচটিসি ফ্লাইয়ার, গ্যালাক্সি ট্যাব ১০.১ এই মেলায় প্রদর্শিত হয়। ২০১২ সালের মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেসও গত ২৭ ফেব্রুয়ারি শুরু হয় বার্সেলোনায়। চলে ২ মার্চ পর্যন্ত। www.mobileworldcongress সাইট থেকে এর হালনাগাদ আরো তথ্য জানা যাবে।
হুওয়াই
রেন ঝেংফি ১৯৮৮ সালে হুওয়াই (Huawei) প্রতিষ্ঠা করেন। আজ এটি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মোবাইল টেলিযোগাযোগ অবকাঠামো সরঞ্জাম প্রস্ত্ততকারক প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠান ভারতে চালু হয় ১৯৯৯ সালে। তখন এরা ভারতের ব্যঙ্গালুরুতে একটি গবেষণা ও উন্নয়ন কেনদ্র চালু করে। এতে সরাসরি চাকরি পান ৬ হাজার লোক। হুওয়াই টেলিকম সলিউশন যোগানোর জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছে ভারতী এয়ারটেল, ভোডাফোন, রিলায়েন্স ও এয়ারসেলের সাথে। ভারতীয় টেলিকম শিল্পের প্রবৃদ্ধি অর্জনে হুওয়াই অবদান রেখে চলেছে। এটি বিশ্বের বর্তমানের সবচেয়ে বড় ৫০টি টেলিকম অপারেটরের ৪৫টিকেই সেবা দিচেছ। এর পণ্য ও সেবা পাচেছ বিশ্বের ১৪০টির মতো দেশ।
আইফোন
আইফোন (iPhone) হচেছ একটি লাইন অব ইনটারনেট এবং মাল্টিমিডিয়া স্মার্টফোন। এটি উন্মোচন করেন অ্যাপলের সে সময়ের প্রধান নির্বাহী স্টিভ জবস। এটি বাজারে আনে অ্যাপল। প্রথম আইফোন উন্মোচন করা হয় ২০০৭ সালের ৯ জানুয়ারি। তবে এটি বাজারে প্রথম আসে ২০০৭ সালের ২৯ জুন। পঞ্চম প্রজন্মের আইফোন ‘আইফোন ৪এস’-এর ঘোষণা আসে ২০১১ সালের ৪ অক্টোবর। বাজারে আসে এর ১০ দিন পর।
আইফোন আমাদের মোবাইল ফোন সম্পর্কিত ধারণা সম্পূর্ণ পাল্টে দেয়। আইফোন মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের জন্য একটি হাই স্ট্যান্ডার্ড। চার বছর পরেও এটি প্রতিযোগিতায় টিকে আছে। আইফোন না আসলে হয়তো আমরা অ্যান্ড্রয়িডও পেতাম না। যদিও এটি আইপডের চেয়ে বেশি কিছু নয়, তবু টাচস্ক্রিন মোবাইলের মধ্যে আইফোন এখনো অনেক জনপ্রিয় মোবাইল ডিভাইস। আইফোন তারপরও কোনো পরিপক্ব মোবাইল নয়। এখনো এর বেশ কিছু অসুবিধাও রয়েছে। তবে এর সেরা বিপণন উদ্যোগ ও উন্নততর ডিজাইনের সুবাদে এটি সামনে এগিয়ে চলার পথ করে নিচেছ।
নিয়ার ফিল্ড কমিউনিকেশন
নিয়ার ফিল্ড কমিউনিকেশন তথা এনএফসি হচেছ পরস্পরকে সংস্পর্শে এনে অথবা যথাসম্ভব কাছাকাছি এনে (সাধারণত কয়েক সেনিটমিটারের চেয়ে বেশি নয়) স্মার্টফোন ও এ ধরনের ডিভাইসের জন্য পরস্পরের মধ্যে রেডিও কমিউনিকেশন গড়ে তোলার একটি স্ট্যান্ডার্ড সেট। এর বর্তমান ও প্রত্যাশিত অ্যাপি¬কেশনের মধ্যে আছে কনটাক্টলেস ট্র্যানজেকশন, ডাটা এক্সচেঞ্জ এবং আরো জটিল যোগাযোগের জন্য সরল করা সেটআপ, যেমন ওয়াই-ফাই। এনএফসি ডিভাইস ও একটি আনপাওয়ার্ড এনএফসি চিপের (যাকে ট্যাগ বলা হয়) মধ্যেও যোগাযোগ গড়ে তোলা সম্ভব।
এনএফসি’র শেকড় নিহিত ১৯৮৩ সালে রেডিও ফ্রিকুয়েন্সি আইডেনিটফিকেশন তথা আরএফআইডি প্যাটেনট লাভের মধ্যে। ২০০৪ সালে নোকিয়া, ফিলিপস ও সনি গড়ে তোলে এনএফসি ফোরাম। ২০০৬ সালে আসে এনএফসি ট্যাগের ইনিশিয়াল স্পেসিফিকেশন। একই বছরে আমরা পাই স্মার্ট পোস্টার রেকর্ডের স্পেসিফিকেশন। ২০০৯ সালে এনএফসি ফোরাম কনট্র্যাক্ট, ইউআরএল, ইনিশিয়াল ব্লুটুথ ইত্যাদি ট্রান্সফারের জন্য রিলিজ করে পিয়ার-টু-পিয়ার স্ট্যান্ডার্ড। ২০১০ সালে পাই স্যামসাংয়ের প্রথম অ্যান্ড্রয়িড এনএফসি ফোন ‘নেক্সাস এস’। ২০১১ সালে গুগল ইনপুট/আউটপুট ‘হাউ টু এনএফসি’ প্রদর্শন করে গেম ইনশিয়েট করা এবং একটি কনট্যাক্ট, ইউআরএল, অ্যাপি¬কেশন, ভিডিও ইত্যাদি ট্রান্সফার করার এনএফসি। একই বছরে আসে সিম্বিয়ান আন্না ভার্সন। এর মাধ্যমে এনএফসি সাপোর্ট হয়ে ওঠে সিম্বিয়ান মোবাইল সিস্টেমের অংশ। ২০১১ সালে আরআইএম কোম্পানি আনে এর প্রথম মাস্টার কার্ড ওয়ার্ল্ডওয়াইড সার্টিফাইড ডিভাইসেস।
এনএফসি আমাদের নজর কাড়ার পেছনে কারণ হচেছ, এই প্রযুক্তির রয়েছে অমিত সম্ভাবনা। এর মাধ্যমে আপনি যথাসম্ভব কাছাকাছি থাকা ডিভাইসগুলো পরস্পরের মধ্যে ডাটা ট্রান্সফার করতে পারবেন- হোক তা ফাইল শেয়ারিং কিংবা বিজনেস কার্ড, মাল্টিপে¬য়ার গেম সেশন শুরু করা, একটি আইডি কার্ড হিসেবে ব্যবহার করা ইত্যাদি। স্মার্টফোন উৎপাদকেরা একটি স্ট্যান্ডার্ড হিসেবে এখন এনএফসিসমৃদ্ধ মোবাইল ডিভাইস উৎপাদন করতে শুরু করেছে। সব ধরনের কাজে ব্যবহারের জন্য এটি আমাদের হাতে পেতে এখন সময়ের ব্যাপার। একটি ডিভাইসের সাথে আরেকটি ডিভাইসের কানেকশন গড়ে তোলার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যায় মাত্র ০.১ সেকেন্ডে। ব্লুটুথের বেলায় এই সময় লাগে ৬ সেকেন্ড। আপনি প্রত্যাশা করতে পারেন এর স্পিড হবে ৪২৪ কেপিবিএস। এর সাথে আছে এর সহজ-সরল ব্যবহার।
ওহ্
মনদা? কিসের মনদা? সুখের কথা মনদার পরও প্রচুরসংখ্যক কোম্পানি অব্যাহতভাবে ডিভাইস তৈরি করে যাচেছ। আর এসব ডিভাইস আপনার-আমার নানা প্রত্যাশাও পূরণ করছে। আর এগুলো আপনি আমি ব্যবহারও করছি মহা আননদ নিয়ে : ‘ওহ্ যেমনটি চেয়েছিলাম’। অবশ্য অনেক মোবাইল পণ্যই এখনো শুধু অতি ধনীজনেরাই ব্যবহারের সুযোগ পাচেছন। আর এসব ডিভাইসের অনেকই শুধু কনসেপ্ট ডিভাইস। এগুলো অনেকটা পাগলাটে শিল্পকর্ম, যা তৈরি করা হয়েছে ও হচেছ কোম্পানির সক্ষমতা জাহির করার জন্য। আমরা কি এর তোয়াক্কা করি? অবশ্যই না। আমাদের ভার্চু্য, স্টুয়ার্ট, হাফস ও অন্যদের কাছ থেকে প্রত্যাশা করি এমন সব আরো পণ্য, যা হবে আরো আকর্ষণীয় এবং আমাদের বাজেট অনুকূল।
কুয়াড-কোর প্রসেসর
কুয়াড-কোর চিপে রয়েছে ৪টি প্রসেসর কোর। অপরদিকে ডুয়াল-কোর বা ডুয়ো-কোর চিপে থাকে ২টি প্রসেসর কোর। তত্ত্বটি হচেছ : আপনার যদি মাল্টিপল কোর থাকে, তবে তাহলে আপনি কাজকে এগুলোর মধ্যে ভাগ করে দিতে পারবেন। অতএব এগুলো চলবে আরো দ্রুত ও দক্ষতার সাথে। এটি আসলে কোনো তত্ত্ব নয়, এটি হচেছ- ‘কিভাবে এটি কাজ করে’। মুখ্য বিষয় হলো, রানিং সফটওয়্যারটিকে জানতে হবে, কী করে মাল্টিপল কোর ব্যবহার করতে হয়। এখানকার ৯৯ শতাংশ প্রোগ্রামই মাল্টিথ্রেটেড অ্যাপি¬কেশন নয়। মাল্টিথ্রেটেড অ্যাপি¬কেশন হচেছ সেটি, যেখানে প্রসেস হবে স্বতস্ত্রভাবে এবং পরস্পর একই সাথে সংঘটনশীলভাবে। অতএব মাল্টিথ্রেটেড অ্যাপ্লিকেশনে একটি প্রসেস হওয়ার জন্য আরেকটি প্রসেস অপেক্ষায় থাকে না। একাধিক প্রসেস চলতে পারে একই সময়ে।
ডুয়াল-কোর চিপস এখন অতীতের পণ্য। এখন কুয়াড-কোর অ্যাকশনের সময়। কোর যুদ্ধ আনুষ্ঠানিকভাবে এখন চলে এসেছে মোবাইল সেগমেনেট। আসুস এরই মধ্যে উন্মোচন করেছে এর প্রথম কুয়াড-কোর ট্যাবলেট। এটি চলে Tegra 3 প্রসেসরে। অপরদিকে ASUS Eee Pad Transformer Prime হবে প্রথম কুয়াড-কোর ট্যাবলেট। আর এইচটিসি এজ হবে বাজারের প্রথম কুয়াড-কোর স্মার্টফোন। ডেস্কটপ স্পেসের মতো বেশি বেশি কোরের অর্থ শুধু আরো বেশি পারফরম্যান্সই নয়, বরং প্রতিশ্রুত সিপিইউ লোডও, যার ফলে আরো উন্নততর বেটারি লাইফ পাওয়া যায়। তা ছাড়া আপনার একটি কুয়াড-কোর পোর্টেবল ডিভাইস থাকা অতি সুখের বিষয়। পারফরম্যান্স যদি দ্রুততর হয়, তবে ইউজার ইনটাফেস তত বেশি ফ্লুইড হবে। ফ্ললেস ১০৮০পি প্লেব্যাক ও থ্রিডি গেমিং হবে আরো সুষ্ঠু। আপনি খুব শিগগিরই ফোন ও ট্যাবলেটে দেখতে পাবেন ভ্যানিটি স্টিকারসহ- অনেকটা ঠিক ভ্যানিটি ডুয়াল-কোর, কুয়াড-কোর, সিক্স-কোর, ইনেটল ইনসাইড ইত্যাদির স্টিকারের মতো। তা সত্ত্বেও প্রতারণার শিকার হবেন না। এরই মধ্যে আপনার জন্য তো রয়েছে ডুয়াল-কোর ফোন। আপনি যদি জ্ঞানবান হন, তবে কমপক্ষে বছরখানেক সময় অপেক্ষা করুন এসব সিপিইউ’র উন্নততর সংস্করণের জন্য। সেই সাথে অপেক্ষা করুন অ্যাপ্লিকেশনের জন্যও, যা লেখা হয় বিশেষত ৪ বা তার চেয়েও বেশি কোরের জন্য।
ক্যামেরা
ঠিক এক দশক আগে আমরা দেখলাম Sharp J-SHO4- এটি ক্যামেরা মডিউলসহ প্রথম মোবাইল ফোন। আপনি আনদাজ-অনুমান করতে পারেন এটি কত মেগাপিক্সেলসমৃদ্ধ ক্যামেরা ছিল? এর ছিল ১১০, ০০০ পিক্সেল বা ০.১ মেগাপিক্সেল। এরপরও খুব বেশি সময় লাগেনি মোবাইল ফোন কোম্পানিতে বিস্ফোরণ ঘটার। মানুষ পাগল হয়ে উঠল ক্যামেরা ফোনের জন্য। ২০০১ সালে বিক্রি হলো ৩০ লাখ ক্যামেরা ফোন। ২০০৬ সালে বিক্রি হলো ৫০ কোটি ক্যামেরা ফোন। আসলে তখন উৎপাদন শুরু হলো সিরিজের পর সিরিজ ডেডিকেটেড ক্যামেরা ফোন। এসব সিরিজের মধ্যে আছে সনি এরিকসনের কে-সিরিজ ফোন। ডেডিকেটেড ক্যামেরা ফোন উন্মোচন ছাড়াও বেশি বেশি মেগাপিক্সেলসমৃদ্ধ ক্যামেরা ফোন উৎপাদনের যুদ্ধও শুরু হয় একই সাথে। ০.১ থেকে ০.৩, তারও পর ১২.০ মেগাপিক্সেলে পৌঁছার যুদ্ধ এখনো চলমান। আজ পর্যন্ত যুদ্ধটা সীমিত ছিল স্থির ছবির পিক্সেলে। এখন প্রতিযোগিতা চলছে ভিডিও চিত্রের মান বাড়ানো নিয়ে। টিভি প্রস্ত্ততকারক কোম্পানিগুলো প্রচুর অর্থ খরচ করছে হাই ডেফিনিশন (এইচডি) ভিডিও চিত্রের বিজ্ঞাপনের পেছনে। সেই সূত্রে এইচডি এখন ঘরে ঘরে সুপরিচিত। ফোন প্রস্ত্ততকারকেরাও এখন চেষ্টা করছেন তাদের ফোনকে হাই ডেফিনিশন ছবি তোলায় সক্ষম করে তুলতে। এখন আমাদের সবার প্রত্যাশা- কম দামে এমন একটি ডিভাইস, যাতে থাকবে একটি ভালো মানের ফোন, একটি ডিজিটাল ক্যামেরা ও একটি ক্যামকর্ডার। আর সেই সাথে এটি যদি হয় একটি কমপিউটারও, তবে তা হবে একটি বড় বোনাস।
গরিলা গ্লাস
Gorilla Glass হচেছ একটি পাতলা গ্লাস। গ্লাসটি একটি অ্যালকালি-অ্যালুমিনোসিলিকেট গ্লাস। এর উৎপাদক কর্নিং। এই গ্লাস বিশেষত তৈরি করা হয়েছে এ জন্য যে- এটি যেনো হালকা-পাতলা হয় এবং সহজে ভেঙে না যায়। এর ফলে এই গ্লাস টাচস্ক্রিন মোবাইল ডিভাইসের স্ক্রিনে প্রচুর পরিমাণে ব্যবহার হচেছ। ওয়েবে প্রচুর ভিডিও রয়েছে, যাতে দেখা যায় গরিলা গ্লাস কতটুকু অগ্রসরমানের, এর সুবিধা কতটুকু। এই গরিলা গ্লাস প্রকল্পের শুরু ২০০৬ সালে। আজকের দিনের ২০ শতাংশ মোবাইল হ্যান্ডসেটের স্ক্রিনেই ব্যবহার হচেছ এই গরিলা গ্লাস।
কর্নিং রাসায়নিক উপায়ে কাচ শক্ত করার পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেন ১৯৬০ সালে এর ‘প্রজেক্ট মাসল’ উদ্যোগের মাধ্যমে। কয়েক বছরের মধ্যে এ কোম্পানি তৈরি করে কেমকর গ্লাস। তবে কোম্পানিটি এর বাস্তব কোনো ব্যবহার খুঁজে পায়নি। ফলে এর ব্যাপক উৎপাদন করা হয়নি। ২০০৬ সালে অ্যাপল ডেভেলপ করে আইফোন। প্রথমে এর ছিল শক্ত প্লাস্টিক স্ক্রিন। স্টিভ জবস দেখলেন, যখন তার চাবি ও আইফোন এক সাথে পকেটে রাখা হয়, তখন প্লাস্টিক স্ক্রিনের ওপর কাচের আঁচড়ের দাগ পড়ে। তখন তিনি ভাবলেন এ সমস্যার সমাধান দরকার। তিনি যোগাযোগ করেন কর্নিং সিইওর সাথে। বললেন, তিনি চান তার কনজ্যুমার ডিভাইসের জন্য হালকা-পাতলা ও সহজে দাগ পড়ে না, এমন স্ক্রিন গ্লাস। কর্নিং সিইও এর সমাধান দিলেন গরিলা গ্লাস দিয়ে। জবস তার পরবর্তী আইফোনে ব্যবহার করেন এই গরিলা গ্লাস। এভাবেই মোবাইল যন্ত্রে বড় মাপের প্রবেশ ঘটল গরিলা গ্লাসের।
http:// goo.gl/pPdH2 সাইটে এ সম্পর্কিত ভিডিও দেখুন।
ব্ল্যাককবেরি
ব্ল্যাকবেরি হচেছ মোবাইল ই-মেইল ও স্মার্টফোন ডিভাইস। ১৯৯৯ সাল থেকে এটি ডেভেলপ ও ডিজাইন করে আসছে কানাডীয় কোম্পানি Research in Motion (RIM)। ব্ল্যাকবেরি ডিভাইসগুলো এমন স্মার্টফোন, যা ডিজাইন করা হয়েছে এমনভাবে যাতে এটি কাজ করে পার্সোনাল ডিজিটাল অ্যাসিস্ট্যানট, পোর্টেবল মিডিয়া পে¬য়ার, ইনটারনেট ব্রাউজার, গেমিং ডিভাইস এবং আরো অনেক কিছু হিসেবে। এগুলো প্রথমে সুপরিচিত হয়ে ওঠে (পুশ) ই-মেইল পাঠানো ও গ্রহণ করা ইনস্ট্যানট মেসেজিংয়ের জন্য। ব্ল্যাকবেরি ডিভাইসগুলো ব্ল্যাকবেরি মেসেঞ্জারসহ বিভিন্ন ধরনের ইনস্ট্যানট মেসেজিং ফিচার সাপোর্ট করে। যে যা-ই বলুন- যদি ব্যবসায়ের কথা ভাবেন, তবে এটি ব্ল্যাকবেরি। ব্ল্যাকবেরি ডিভাইসগুলো এখনো অনেকের কাছে ফেভারিট। বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে BlackBerry (RIM) আরো জনপ্রিয় করে তোলার চেষ্টা চালানো হচেছ। ২০১১ সালের অক্টোবর পর্যন্ত এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ৭ কোটি। ২০১১ সালে বিশ্বে যত মোবাইল ডিভাইস বিক্রি হয়েছে, এর ৩ শতাংশই ব্ল্যাকবেরি। এর ফলে এর উৎপাদক কোম্পানি আরআইএম নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে বিশ্বের ষষ্ঠতম জনপ্রিয় ডিভাইস মেকার কোম্পানি হিসেবে। কনজ্যুমার ব্ল্যাকবেরি সার্ভিস চালু রয়েছে ৯১টি দেশে। বর্তমানে ক্যারিবীয় ও লাতিন আমেরিকায় রয়েছে ব্ল্যাকবেরি স্মার্টফোনের সবচেয়ে বেশি পেনিট্রেশন। সহজেই অনুমেয় এই RIM নামের কোম্পানিটি এখন অগ্রাহ্য করার মতো শক্তি নয়।
জিসিএমভিত্তিক আধুনিক ব্ল্যাকবেরি হ্যান্ডসেটে সংযুক্ত করা হয়েছে এআরএম ৭.৯ বা এআরএম ১১ প্রসেসর। পুরনো ৯৫০ ও ৯৫৭ ব্ল্যাকবেরি হ্যান্ডসেটে ব্যবহার হতো ইনেটল ৮০৩৮৬ প্রসেসর। টর্চ (টর্চ ৯৮৫০/৯৮৬০, টর্চ ৯৮১০, এবং বোল্ড ৯৯০০/৯৯৩০) নামের হালনাগাদ মডেলের ব্ল্যাকবেরিতে রয়েছে একটি ১.২ গিগাহার্টজ এমএসএম৮২৫৫ স্ন্যাপড্রাগন প্রসেসর, ৭৬৮ এমবি সিস্টেম মেমরি এবং ৮ জিবি অনবোর্ড স্টোরেজ।
অ্যান্ড্রয়িড পাওয়ার্ড
২০০, ০০০, ০০০
অ্যান্ড্রয়িড পাওয়ার্ড গ্যাজেট অতিক্রম করেছে ২০০, ০০০, ০০০-এর সীমা। প্রতিদিন এখন ৫৫০, ০০০ অ্যান্ড্রয়িড পাওয়ার্ড গ্যাজেট সক্রিয় করা হচেছ। বিষয়টি এখন আর কাউকে অবাক করে না।
১৩০০
১৩০০ ফুট ওপর থেকে পড়ে গিয়েই আইপ্যাড অক্ষত ও কার্যক্ষম থেকে যায়। কারণ, এটি ছিল ‘জি-ফর্ম কেসে’। এত ওপর থেকে পড়লেও সেই আইপ্যাডে ভিডিও চলতেই ছিল। না, আমরা মজা করছি না, কিংবা আপনাদের বোকা বানাচিছ না। এর প্রমাণ নিজেই দেখুন http:// goo.gl/vyCgq সাইটে।
৪০, ০০০
উইন্ডোজ ফোন বাজারে ছাড়ার ঠিক এক বছর পর মার্কেটে এখন রয়েছে ৪০, ০০০ অ্যাপি¬কেশন। অপরদিকে অ্যাপল অ্যাপি¬কেশন স্টোর অফার করছে ৫ লাখেরও বেশি অ্যাপি¬কেশন। আর অ্যান্ড্রয়িড অপার করেছে ৩ লাখ অ্যাপি¬কেশন। উইন্ডোজ ফোনকে এখনো আরো অনেক পথ পারি দিতে হবে। কিন্তু যে হারে উইন্ডোজ প্লাটফর্মের জন্য অ্যাপি¬কেশন ডেভেলপ করা হচেছ, তাতে ২০১২ সালের প্রথম দিকে এটি ৫০-কে সীমা ছাড়িয়ে গেলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। এখন প্রতিদিন ১৬৫টি অ্যাপি¬কেশন যোগ হচেছ।
কজ ওয়েব