• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > ২০১২ : আইসিটি পেশাজীবীদের সুবর্ণসময়
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: মইন উদ্দীন মাহমুদ স্বপন
মোট লেখা:১৪১
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১২ - মার্চ
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
আইসিটি
তথ্যসূত্র:
পর্যালোচনা
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
২০১২ : আইসিটি পেশাজীবীদের সুবর্ণসময়

বছর শেষে নতুন বছরের শুরুতে প্রতিবারের মতো এবারও বিভিন্ন মানদন্ডের ভিত্তিতে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর নির্বাচন করা হয় সেরা ব্যক্তিত্ব, সেরা পণ্য ইত্যাদি ইত্যাদি। অবশ্য এ ধরনের নির্বাচন হয় নির্দিষ্ট কিছু নীতি অনুসরণ করে, যা স্থান-কালপাত্র ভেদে ভিন্ন হয়। এ ধারা প্রযুক্তিপণ্যের ক্ষেত্রেও দৃশ্যমান। শুধু তাই নয়, পুরনো বছরের শেষে এবং নতুন বছরে শুরুতে প্রযুক্তির কোন কোন ক্ষেত্রের পেশাদারদের চাহিদা বেশি হবে অর্থাৎ ‘হট জব’ কোনটি হবে তারও জরিপ হয় এবং সে অনুযায়ী জল্পনা-কল্পনা হয় সারা বিশ্বে। আর এ বিষয়টি অর্থাৎ ২০১২ সালের জন্য সবচেয়ে চাহিদাসম্পন্ন আইসিটিভিত্তিক পেশা তথা ‘হট আইসিটি জব’ তুলে ধরা হয়েছে এ লেখায়। এখানে উল্লিখিত বিষয়গুলো স্থান-কাল-পাত্রের ভিন্নতার কারণেও ভিন্ন হবে এটাই স্বাভাবিক।

‘হট জব’ বা সবচেয়ে বেশি চাহিদার পেশা কী?

প্রথমেই জেনে নেয়া যাক হট জব বলতে কি বুঝায়? ‘হট জব’ বা বেশি চাহিদার পেশার সংজ্ঞা দিতে গিয়ে নিউজিল্যান্ডের গবেষণা প্রতিষ্ঠান র্যােন্ডস্ট্যাড (Randstad)-এর অপারেশন ডিরেক্টর পল রবিনসন বলেন, হট জব বা পেশা হলো সেটি, যেখানে মানসম্মত চাকরিপ্রার্থীর সংখ্যা চাহিদা অনুযায়ী সীমিত। র্যাান্ডস্ট্যাডের গবেষণায় আরো বলা হয়, দেশের শীর্ষ প্রতিভাধরদের নিজ প্রতিষ্ঠানে বেশি বেশি করে নিয়োগদানের ইচ্ছায় যে প্রতিযোগিতা হয়, তাও হট জব হিসেবে যুক্ত হতে পারে। আর এ বিষয়টি আইসিটি ক্ষেত্রেও সমভাবে প্রযোজ্য।

আইটি পেশাদাররা ২০১২ সালের জন্য প্রত্যাশা করছে নতুন ক্ষেত্র এবং নতুন পেশা। কেননা, এখন আইসিটি ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশজুড়ে আইটি জব মার্কেটে তেজীভাব বিরাজ করছে, যা ধীরে ধীরে বাড়ছে। অথচ কয়েক বছর আগে অন্যান্য ক্ষেত্রের মতো আইসিটি ক্ষেত্রেও জব মার্কেটের অবস্থা ছিল খুবই নাজুক। এখন সেই মন্দা অবস্থা অন্যান্য ক্ষেত্রে বিরাজ করলেও আইসিটি ক্ষেত্রে আর নেই এবং আইসিটির বিভিন্ন ক্ষেত্রের পেশাদারদের চাহিদা ও বেতনও বাড়ছে অন্য যেকোনো ক্ষেত্রের তুলনায় বেশি করে।

জ্যানকো এবং ইজবডেসস্ক্রিপশন ডট কম সাইট ১৯৮৯ সাল থেকে আইটি জব মার্কেটের বেতনের ওপর জরিপ পরিচালনা করে আসছে। তাদের পরিচালিত জরিপ ডাটা ব্যবহার ও প্রকাশ করে আসছে কমপিউটার ইন্ডাস্ট্রি অ্যালমাম্যানস, ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল, নিউয়র্ক টাইম, ইউইকসহ অন্যান্য ইন্ডাস্ট্রি। শুধু তাই নয় বছর জুড়ে সিএনএনসহ জাতীয় ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক মিডিয়াতে এই জরিপ রিপোর্ট বেশ গুরুত্ব পায়। জ্যানকো এবং ইজবডেস্ক্রিপশন ডট কম সাইট পরিচালিত জরিপ বছরে দু’বার প্রকাশিত হয় জানুয়ারি এবং জুলাইতে। জ্যানকো এবং ইজবডেস্ক্রিপশন ডট কম এর জরিপে দেখা গেছে, আইটি পেশাজীবিদের বেতন ২০১২ সালে বেশ বাড়বে বিশেষ করে মধ্যম সাইজের এন্টারপ্রাইজের পেশাজীবিদের (চিত্র-১)। যুক্তরাষ্ট্রের ব্যুরো অব লেবার স্ট্যাটিসটিক্স (BLS) এর তথ্যমতে জানা যায় ২০১১ সালে ৩৩,১০০ জন্য আইটি পেশাজীবি যুক্ত হয়েছে, এ ধারা ২০১২ সালেও থাকবে।

জ্যানকো’র রিপোর্টে আরো জানা যায় কমপিউটার সিস্টেম ডিজাইন এবং এ সংশ্লিষ্ট সার্ভিস, টেলিকমিউনিকেশন, ডাটা প্রসেসিং হোস্টিংসহ অন্যান্য আইটি সার্ভিসে আইটি পেশাজীবিদের হায়ারিং প্রবণতা যথেষ্ট বাড়বে। এ রিপোর্ট প্রকাশ করা হয় ১০৭ অর্গানাইজেশনের ওপর জরিপ করে। এতে দেখা গেছে হায়ারিং প্রবণতা ২৫% বাড়বে (চিত্র-২)।

অস্ট্রেলিয়ার কমপিউটার সোসাইটির ১৯৯৭-২০১১ সাল পর্যন্ত জরিপে দেখা যায় প্রাইভেট সেক্টরে মে ২০১১ থেকে আইসিটি পেশাজীবিদের বেতন বাড়ে ৪.২ শতাংশ যেখানে ২০১০ সালে কোনো বেতন বাড়ানি (চিত্র-৩)।

ক্লাউড কমপিউটিং আইটি বিভাগের ক্যারিয়ারের ব্যাপক পরিবর্তন আনে, যা ২০১২ সালের ক্যারিয়ারের ক্ষেত্রেও অব্যাহত থাকবে। ক্লাউড কমপিউটিং প্রকৃতপক্ষে আইটি পেশাদারদের জন্য তৈরি করেছে নতুন নিয়ম-রীতি। আর স্মার্টফোন ট্যাবলেট পিসির ব্যাপক জনপ্রিয়তায় সফটওয়্যার ডেভেলপারদের জন্য সৃষ্টি করে ব্যাপক চাহিদা। অর্থনীতিতে বিশ্বমন্দার পর আইটির বাজার ২০১১ সাল থেকে খুবই দ্রুতগতিতে স্বমহিমায় ফিরে আসতে শুরু করে মূলত ছোট এই আইটি ডিভাইসগুলোর জন্য, যা ২০১২ সালে আরো উন্নততর হবে। যদিও এ সময় বিশ্ব অর্থনীতি এক তীব্র চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বাজার বিশ্লেষকদের পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১২ সালে আইটি পেশাজীবীদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপক চাহিদা যেমন বাড়বে, তেমনি বাড়বে বেতন। নিচে বিভিন্ন নিয়োগদান প্রতিষ্ঠান তথা স্টাফিং প্রতিষ্ঠানের অভিমত তুলে ধরে দেখানো হয়েছে আইসিটির কোন কোন ক্ষেত্রে চাহিদা ও বেতন কেমন হবে।

ইয়োহ (yoh) স্টাফিং ওয়েস্টার্ন রিজিয়নের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ট্যাম্মি ব্রাউনিং বলেন, আইটি পেশাজীবীদের মজুরি দিয়ে নিযুক্ত করার প্রবণতা ২০১১ সালের তুলনায় ১০ থেকে ১৫ শতাংশ ভালো।

শিকাগোভিত্তিক আইটি আউটসোর্স প্রতিষ্ঠান ‘প্রেসিয়েন্ট সলিউশনস’-এর সিআইও জেরি ইরভাইন বলেন, তিনি তার প্রতিষ্ঠানের জন্য ২০১১ সালে ৩ জন আইটি পেশাজীবী নিয়োগ দেন এবং ২০১২ সালে আরো ৩০ থেকে ৪০ জন আইটি পেশাজীবীকে নিয়োগ দিতে চান। বর্তমানে তার প্রতিষ্ঠানে সিনিয়র প্রজেক্ট ম্যানেজার, শেয়ার পয়েন্ট প্রোগ্রামার, ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইঞ্জিনিয়ার, সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার এবং আইটিআইএল হেলপডেস্ক টেকনিশিয়ানের জন্য ১৩টি পদ খোলা রাখা হয়েছে।

ব্যাপকভাবে আইটি পেশাজীবী হায়ার করা সংবাদটি অবশ্যই ইতিবাচক, বিশেষ করে যখন অনেক আইটি পেশাজীবী নতুন কাজ খুঁজছেন। স্ট্যাফিং ফার্ম টেকনিসোর্স-এর সর্বশেষ আইটি এমপ্লোয়ি ‘কনফিডেন্স ইনডেস্ক’-এর তথ্যানুযায়ী জানা যায়, ২৫৭ জন কর্মরত আইটি পেশাজীবীর মধ্যে শতকরা ৩২ জনই নতুন আইটি পেশা অনুসন্ধান করছেন।

আইটি স্টাফ এক্সপার্ট অনুমান করছে যে আইটি পেশাজীবীদের বেতন দীর্ঘদিন নিশ্চল থাকার পর তা এখন বাড়ছে। আইটি পেশাজীবীরা উপলব্ধি করছেন, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ চাকরির বাজারে দক্ষ আইটি পেশাজীবীদের দরকার উপযুক্ত পারিতোষিক। আইটি জব সাইট Dice.com-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এলাইস হিল বলেন, ‘গত কয়েক বছর ধরে আইসিটি পেশাজীবীদের বেতন আকর্ষণীয় ছিল না। তিনি আরো বলেন, ইদানীং ভাড়াটে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার তাদের সর্বোত্তম প্রচেষ্টা চালায় প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানিগুলো থেকে সেরা কর্মী টেনে আনার জন্য। আর এজন্য স্টাফদের বেতনও বাড়াতে কার্পণ্য করে না তারা।

লসঅ্যাঞ্জেলেসভিত্তিক আইটি স্টাফিং প্রতিষ্ঠান Q-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর শেন বার্নস্টাইন (Shane Bernstein) বলেন, আইটি পেশাজীবীদের বেতন চুক্তির হার ২০১২ সালে আরো বাড়বে। কেননা, প্রযুক্তি খাতে অর্থনীতি মনে হয় আগের চেয়ে আরো ভালো হবে। আরো বেশিসংখ্যক কোম্পানি আইটি পেশাজীবীদের নিয়োগ দেবে। এর ফলে প্রতিভাধরদের সংখ্যা অনেক কমে যাবে এবং সে অনুযায়ী দক্ষ ও প্রতিভাধরদের চাহিদা অনেক বেড়ে যাবে। আরো সুসংবাদ হলো, কাজের সুযোগ এবং আয়ের সম্ভাবনা পুরোপুরি সিলিকনভ্যালিকেন্দ্রিক হবে না। বরং গোটা যুক্তরাষ্ট্র হবে চাকরির ক্ষেত্র, যার প্রভাব পড়বে বিশ্বের অন্যান্য দেশেও।

যুক্তরাজ্যের নিয়োগভিত্তিক ওয়েবসাইট cwwobs.co.uk-এর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ব্রিটেনের স্থায়ী আইটি পেশাজীবীদের বেতন খুবই দ্রুতগতির কয়েক বছর ধরে বাড়ছে। এই নিয়োগভিত্তিক ওয়েবসাইট আরো জানিয়েছে ২০১১ সালে বেতন ২৫ শতাংশ বাড়ে। ২০১১ সাল জুড়ে বিজ্ঞাপিত আইটিজব ৪১ শতাংশ বাড়ে, যা ২০১২ সালেও অব্যাহত থাকবে। এসকিউএল প্রোগ্রামিংয়ে দক্ষদের চাহিদা অনেক থাকলেও সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট মেথডোলজি অ্যাজাইলে চাহিদা সবচেয়ে বেশি হয়। ২০১১ সালে এই বেড়ে ওঠার হার ৫৯ শতাংশ। এই আইটি নিয়োগ সাইট আরো জানিয়েছে, লন্ডনে আইটি জব ২০১০ সালের শেষ কোয়ার্টারের চেয়ে ২০১১ সালের শেষ কোয়ার্টারে ২৮ শতাংশ বেড়েছে।

ইউকে এমপ্লয়মেন্ট ইনডেক্স-এর Monster.co.uk সাইটের তথ্যানুযায়ী জানা যায়, অন্য যেকোনো সাইটের তুলনায় কারিগরি খাতে চাকরির সুযোগ অনেক বেশি। এদের চাহিদা বাড়তে বাড়তে ৩৩ শতাংশ পর্যন্ত উন্নীত হয়। পক্ষান্তরে একই সময়ে প্রযুক্তি খাতে বেতন বাড়ে ৩০ শতাংশ।

নিচে কয়েকটি আইটি জব তথা পেশার কথা উল্লেখ করা হলো। এগুলো ২০১২ সালের জন্য হবে সবচেয়ে চাহিদার আইটি পেশা যার বেতন হবে সর্বোচ্চ।

মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট

যেসব আইটি প্রফেশনাল মোবাইল ডিভাইসের জন্য অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপ করতে পারবে, তাদের চাহিদা হবে সবচেয়ে বেশি। আইটি স্টাফিং বিশেষজ্ঞরাও একমত যে, এই গ্রুপ ২০১২ সালে থাকবে ঈর্ষণীয় অবস্থানে তথা পজিশনে। কেননা মোবাইল ডিভাইসের কোম্পানিগুলো তাদের স্মার্টফোন ও ট্যাবলেট পিসির উপযোগী ওয়েবসাইট এবং অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্টের জন্য খুবই তৎপর হয়ে আছে।

মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপারদের চাহিদা সম্পর্কে জানা যাবে Dice.com সাইট থেকে। এই সাইটের তথ্য থেকে জানা যায়, গত পাঁচ বছরে অ্যান্ড্রয়িড এবং আইফোনের ডেভেলপারদের জন্য জব পোস্টিং করা হয় ১২৯ থেকে ১৯০ শতাংশ পর্যন্ত।



স্টাফিং ফার্ম ‘রবার্ট হাফ ইন্টারন্যাশনাল’-এর টেকনোলজি ডিভিশনের প্রজেক্টে মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপারদের শুরুতেই বেতন ২০১২ সালে ৯.১ শতাংশ বাড়ে, যার বার্ষিক বেতন সীমা হলো ৮৫,০০০ ডলার থেকে ১,২২,৫০০ ডলার পর্যন্ত। ইয়োহর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ট্যাম্মি ব্রাউনিং বলেন, মোবাইল গেম ডেভেলপারদের বার্ষিক বেতন সীমা হলো ১,১৫,০০০ ডলার থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১,৪০,০০০ ডলার। তিনি আরো বলেন, একজন অ্যান্ড্রয়িড ডেভেলপার গড় পড়তায় প্রতি ঘণ্টা ৭০ ডলার থেকে ১০০ ডলার দাবি করতে পারেন চুক্তিভিত্তিক কাজের জন্য।

আইটি জব সাইট Dice.com-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এলাইস হিল আরো বলেন, সফটওয়্যার ডেভেলপারদের জন্য কখনই খারাপ সময় যাবে না বিশেষ করে এ মুহূর্তে। আর আপনি যদি হন মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপার, তাহলে ধরে নিতে পারেন এ বছরটি হবে আপনার জন্য সুবর্ণসময় (চিত্র-৪)।

সফটওয়্যার ডেভেলপার

পিসিভিত্তিক প্রোগ্রামার রচয়িতারা তাদের প্রতিরূপ মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপারদের তুলনায় কম গুরুত্বহীন হয়ে পড়ছে বা মার খেয়ে যাচ্ছে এমনটি ভাবা ঠিক হবে না। কেননা, বিভিন্ন কোম্পানিতে চাহিদা রয়েছে জাভা, ডটনেট, সি শার্প, শেয়ারপয়েন্ট এবং ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপারদের। ইয়োহর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ব্রাউনিং বলেন, জাভা খুবই চাহিদাসম্পন্ন পেশা। কেননা এটি একটি ওপেন প্লাটফর্মের অ্যাপ্নিকেশন, যা যেকোনো ব্যাক-এন্ড সিস্টেমের সাথে কমিউনিকেট করতে পারে। সুতরাং বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো জাভা ব্যবহার করে লিগ্যাসি সিস্টেম থেকে ডাটা ট্রান্সফার করার জন্য। পরোক্ষভাবে বলা যেতে পারে, জাভা ডেভেলপারদের বেতন ও চাহিদা উভয়ই বাড়বে। জাভা ডেভেলপারদের বার্ষিক বেতন হবে অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে ষাট হাজার ডলার থেকে শুরু করে এক লাখ পঞ্চাশ হাজার ডলার পর্যন্ত। আর জাভা ডেভেলপারদের চুক্তিভিত্তিক রেট হবে গড়ে প্রতি ঘণ্টায় ৯০ ডলার। স্টাফিং প্রতিষ্ঠান রবার্ট হাফ ইন্টারন্যাশনালের তথ্য অনুযায়ী, ওয়েব ডেভেলপারদের বার্ষিক বেতন সীমা হবে ৬১,২৫০ ডলার থেকে ৯৯,২৫০ ডলার।

প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট

বড় বড় প্রজেক্টের জন্য দরকার প্রজেক্ট ম্যানেজার। তবে আইটিশিল্পে প্রজেক্ট ম্যানেজারের পাশাপাশি দরকার বিজনেস অ্যানালিস্ট, যারা ব্যবহারকারীর চাহিদা শনাক্ত করে জানাবে আইটি স্টাফদের, যারা ক্লায়েন্টের প্রয়োজন অনুযায়ী কাজ করবে এবং যথাসময় প্রজেক্ট সম্পন্ন কবে। স্টাফিং প্রতিষ্ঠান রবার্ট হাফ টেকনোলজির এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর জন রিড বলেন, প্রজেক্ট ম্যানেজারের চেয়ে বিজনেস অ্যানালিস্টদের চাহিদা বেশি হবে। এ বিষয়টিকে অন্যভাবে বলা যায়, যারা শুধু প্রজেক্টের তত্ত্বাবধায়ক এবং কদাচিৎ প্রজেক্ট মনিটর করেন তাদের চেয়ে বেশি চাহিদা হলো প্রজেক্ট ডেলিভারে সহায়তাকারীদের।

বিজনেস আর্কিটেক্ট

ব্যবসায়ের পুরনো ধ্যানধারণা থেকে আইটি আলাদা হলেও ব্যবসায়ের সফলতার জন্য টেকনোলজিই সব নয়। তবে কোম্পানির ব্যবসায়িক লক্ষ্য পূরণের পথকে চালিত করে টেকনোলজি ও বিজনেস প্রসেসকে এক সাথে চালিত করার জন্য সৃষ্টি হয় এন্টারপ্রাইজ আর্কিটেক্ট, যা বিজনেস আর্কিটেক্ট হিসেবে আবির্ভূত হয়। বিজনেস আর্কিটেক্ট প্রসঙ্গে ফররেস্টার রিসার্চ (Forrester Research) অ্যানালিস্ট অ্যালেক্স কললিন বলেন, বিজনেস আর্কিটেক্ট নিশ্চিত করে যে সম্পূর্ণ ব্যবসায়িক কার্যক্রম একত্রে পরিচালিত হচ্ছে। অ্যালেক্স কললিন আইটি কৌশল ও প্রাতিষ্ঠানিক পরিকল্পনার ওপর গবেষণা করেন। অ্যালেক্স আরো বলেন, এটি বিজনেস পরিকল্পনার একটি নিয়ম, যা বিক্রি, গ্রাহক ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে আইটিকে অধিকতর কার্যকরভাবে ব্যবহারের সুযোগ খুঁজে বের করে।



কললিন আরো বলেন, বিজনেস ম্যানেজারেরা এমন টেকনোলজি বেছে নিতে চান, যা তাদের চাহিদাকে সবচেয়ে কার্যকরভাবে মেটাতে পারে এবং স্বাধীনভাবে এক টেকনোলজি থেকে অন্য টেকনোলজি গ্রহণ করতে পারে।

ইউজার এক্সপেরিয়েন্স ডিজাইনার

পিসি অথবা মোবাইল ডিভাইসের জন্য অনেক অ্যাপ্লিকেশন কোম্পানি ডেভেলপ হচ্ছে
ক্রেতাসাধারণের সন্তুষ্টির জন্য। আর এজন্য ইউজার ইন্টারফেস বা ইউজার এক্সপেরিয়েন্স ডিজাইনারদের নিয়মিত করতে হয় যে অ্যাপ্লিকেশনটি মজার ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে স্বজ্ঞাতমূলক বা স্বব্যাখ্যামূলক। স্টাফিং ফার্মের হাফ মনে করেন ইউজার এক্সপেরিয়েন্স ডিজাইনারদের শুরুর বেতন ১৬.৭ শতাংশ বাড়বে এবং বার্ষিক বেতন সীমা হবে ৭১,৭৫০ ডলার থেকে ১,০৪,০০০ ডলারের মধ্যে।

আইটি সিকিউরিটি প্রফেশনাল

দিন দিন ডাটার নিরাপত্তাজনিত সমস্যা বাড়ছে। তাই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ডাটার সুরক্ষার জন্য দরকার হয় আইটি প্রফেশনাল যারা ম্যালওয়্যার প্রস্ত্ততকারকদের ও সাইবার চোরদের প্রতিহত করতে পারবে। আইটি জব সাইট Dice-.com-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিল বলেন, তাদের সাইটে সাইবার সিকিউরিটি প্রফেশনালের জন্য বিজ্ঞাপন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেড়ে গেছে।

বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ক্লাউড কমপিউটিংয়ে স্থানান্তর হওয়ায় ইনফ্রাস্ট্রাকচার সিকিউরিটি প্রফেশনালদের অভাব তীব্রভাবে অনুভূত হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে শিকাগোভিত্তিক আইটি আউটসোর্সিং প্রতিষ্ঠান প্রেসিডেন্ট সলিউশনসের সিআইও জেরি ইরভাইন বলেন, ক্লাউডে অ্যাপ্লিকেশন রাখার মাধ্যমে কোম্পানিসমূহ পেয়েছে অনেক ইন্টারনেট পথ। তিনি আরো বলেন, তাদের থাকতে হবে অধিকতর নিরাপদ পরিবেশে যাতে নিয়ন্ত্রণ করা যায় তাদের পরিবেশে ঢোকা এবং বের হওয়াকে।

ওয়েবভিত্তিক মর্টগেজ সফটওয়্যার প্রোভাইডারের টেকনিক্যাল অপারেশনের সিনিয়র প্রেসিডেন্ট কোরে পিসিগের মতে, কোম্পানির সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দেয়া উচিত নিরাপত্তাকে। তার মতে, শক্তিশালী টেকনিক্যাল সিকিউরিটি ও অডিটিং স্কিল আমাদের ব্যবসায়ে সবচেয়ে বেশি দরকার। তিনি আরো বলেন, এ ক্ষেত্রের চ্যালেঞ্জ হলো- ভালো ট্যালেন্ট খুঁজে পাওয়া কখনো কখনো খুবই কঠিন। তাই এই ক্ষেত্রটি আইটি পেশাজীবীদের জন্য খুবই ভালো একটি বছর হিসেবে গণ্য করা হয়। রবার্ট হাফ আশা করছেন, ডাটা সিকিউরিটি অ্যানালিস্টদের বেজ বেতন ৬ শতাংশ বাড়বে এবং বার্ষিক বেতন সীমা হবে ৮৯,০০০ হাজার ডলার থেকে ১,২১,৫০০ ডলার।

ডাটা ওয়্যারহাউজ আর্কিটেক্ট, অ্যানালিস্ট এবং ডেভেলপার

প্রত্যেক কোম্পানিই প্রত্যাশা করে বিপুল পরিমাণের স্ট্রিমিং ডাটা তাদের ব্যাকঅফিস সিস্টেমে
থাকুক। আর এ মনোভাবই এখন ডাটা ওয়্যারহাউজ আর্কিটেক্ট, অ্যানালিস্ট ও ডেভেলপারদের চাহিদা অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে।

লসঅ্যাঞ্জেলেসভিত্তিক আইটি স্টাফিং ফার্ম Q-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক বার্নস্টাইন বলেন, বিভিন্ন বড় বড় প্রতিষ্ঠানের ডাটা পরিষ্কার ও অর্গানাইজ করার জন্য ২০১২ সালে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোকে বেশ কাজ করতে হবে, যাতে সেগুলো ভালোভাবে ম্যানেজ করা যায়। আর তাই রবার্ট হাফ আশা করছেন ডাটা ওয়্যারহাউজ অ্যানালিস্টদের বেজ বেতন লাফিয়ে ৬.৭ শতাংশ বেড়ে যাবে এবং বার্ষিক বেতন রেঞ্জ হবে ২০১২ সালের জন্য ৮৮,০০০ ডলার থেকে ১,১৯,০০০ ডলার। আর কিউ-এর তথ্যমতে ওয়্যারহাউজ ডেভেলপারদের গড় বার্ষিক বেতন ১,২০,০০০ ডলার থেকে ১,৩৫,০০০ ডলার। আর চুক্তিভিত্তিক রেট হবে প্রতি ঘণ্টায় ৬৫ ডলার থেকে ৮৫ ডলার পর্যন্ত। পক্ষান্তরে ডাটা ওয়্যারহাউজ আর্কিটেক্টের বার্ষিক বেতন হবে ১,৩০,০০০ ডলার থেকে ১,৬০,০০০ ডলার। আর চুক্তিভিত্তিক কাজের জন্য অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে প্রতি ঘণ্টায় ৮০ ডলার বা তার বেশি হবে।

ইনফ্রাস্ট্রাকচার প্রফেশনাল

ক্লাউড কমপিউটিং আইটি অবকাঠামোর বর্তমান পেশাকে বাদ দিতে যাচ্ছে। ২০১২ সালব্যাপী ক্লাউড কমপিউটিং ও উইন্ডোজ ৭-এর মাইগ্রেশন সৃষ্টি করবে নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ার ও সিস্টেম অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের জন্য ব্যাপক চাহিদা। আইটি জব সাইট Dice.com-এর হিল বলেন, এখন বিভিন্ন কোম্পানি সেই সব আইটি প্রফেশনালদের খোঁজ করছে যারা সেটআপ ও ম্যানেজ করতে পারবে ভার্চুয়াল সার্ভার ও ভার্চুয়াল স্টোরেজ এনভায়রনমেন্ট, যারা শনাক্ত করতে পারে কোন অ্যাপ্লিকেশন সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় এবং যারা জানতে পারে কিভাবে বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশনের মধ্য থেকে প্রয়োজনীয় হার্ডড্রাইভকে রিলোকেট করা যায় ইত্যাদি।

উইন্ডোজ ৭-এ মুভ করলে কিছু কোম্পানির জন্য দরকার হবে অবকাঠামোর উন্নয়ন করা। পক্ষান্তরে অন্যদের দৃষ্টি হবে তাদের ডাটা সেন্টার পুনর্বিন্যাস করে শক্তিশালী করা এবং অ্যাপ্লিকেশনগুলোকে ক্লাউডে সরিয়ে নেয়া। এ কথা বলেন, টেকনিসোর্সের স্ট্র্যাটেজিক অ্যাকাউন্টের ভাইস প্রেসিডেন্ট সিন এবনার। সংক্ষেপে বলা যায়, আইটি ডিপার্টমেন্টের জন্য দরকার ইনফ্রাস্ট্রাকচার প্রফেশনাল, যারা তাদেরকে সাহায্য করতে পারে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও আপগ্রেডকে এক্সিকিউট করার ক্ষেত্রে। এক্ষেত্রে চাহিদা বাড়ার সাথে সাথে ২০১২ সালে নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ারদের বেতন ৫.৮ শতাংশ বেড়ে যাবে। নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ারদের বার্ষিক বেতন রবার্ট হাফ এর তথ্য মতে, ৭৫,০০০ ডলার থেকে ১,০৭,৭৫০ ডলার।

নেটওয়ার্কিং

রবার্ট হাফ টেকনোলজি প্রতিষ্ঠানের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর জন রিড-এর মতে, নেটওয়ার্কিংয়ে দক্ষ আইটি প্রফেশনালদের ব্যাপক চাহিদা অব্যাহত থাকবে ২০১২ সালে। এই চাহিদা অংশত ইন্ধন পাবে ভার্চুয়ালাইজেশন এবং ক্লাইড কমপিউটিং প্রজেক্টের মাধ্যমে। রিড বলেন, ম্যানেজার নিয়োগ দেয়ার আগে খেয়াল করতে হয় নেটওয়ার্কিংয়ের ক্ষেত্রে বাস্তব অভিজ্ঞতা আছে কিনা। যদি কোনো প্রতিষ্ঠানে কাজ করে থাকেন যা ভার্চুয়ালাইজেশন বা ক্লাউডভিত্তিক পরিবেশ থেকে মাইগ্রেট হয়ে এসেছে। এ ধরনের লোকেরও বিশেষ করে ভিএমওয়্যার (VMware) এবং সাইট্রিক্স-এ দক্ষ লোকের চাহিদা ব্যাপকভাবে বাড়বে।

শেষ কথা

বর্তমানে বিশ্ব অর্থনীতি এক কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হলে আইটি খাতের অবস্থাটা ভিন্ন। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়াসহ অনেক দেশেই আইটি পেশাজীবীদের চাহিদা যেমন বাড়ছে তেমনই বাড়ছে বেতন যা দীর্ঘদিন স্থির বা নিশ্চল অবস্থায় ছিল। আইটি পেশাজীবীদের যে ব্যাপক চাহিদা বাড়ছে তা আমাদের মতো দেশগুলোর জন্য সুসংবাদ ঠিকই। কিন্তু এ সুসংবাদকে কীভাবে কাজে লাগাতে পারি তাই এখন দেখার সময়, ভাবার সময়।।


কজ ওয়েব

ফিডব্যাক : mahmood@comjagat.com
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস
অনুরূপ লেখা