• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > এ বছরই আসছে চিপ জগতে বিবর্তন
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: মো: তৌহিদুল ইসলাম
মোট লেখা:২৬
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১২ - এপ্রিল
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
চিপ ডিজাইন
তথ্যসূত্র:
হার্ডওয়্যার
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
এ বছরই আসছে চিপ জগতে বিবর্তন

মানুষের একটি চুল ১ লাখ ন্যানোমিটার পুরু। একটি সিলিকন পরমাণু ০.৩ ন্যানোমিটার। সুতরাং বোঝাই যায় ১০ ন্যানোমিটার পুরু কিছু কি চোখে দেখা যাবে? এ ১০ ন্যানোমিটারই ২০১২ সালে চিপ জগতে ৩২ ন্যানোমিটারের চিপের যুগের বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটাবে। ইতোমধ্যে ইন্টেল তাদের ২২ ন্যানোমিটারের চিপ বিক্রি শুরু করেছে। আর সবার আগে এ প্রযুক্তির ছোঁয়া লেগেছে মোবাইলে। ফলে মোবাইল ব্যবহার অনেক সহজ হওয়ার পাশাপাশি এর ব্যাটারির কার্যক্ষমতা এতটাই বাড়ানো হয়েছে যে, থ্রিডি গেমগুলো আপনাকে এক্সবক্স/প্লেস্টেশনের মতো অনুভূতি দেবে।

একটি ট্রানজিস্টর হলো কমপিউটারের সবচেয়ে ক্ষুদ্র অংশ। আর অনেক ধরনের সূক্ষ্ম গবেষণার মাধ্যমে ট্রানজিস্টর তৈরি করা সম্ভব হয়েছিল। সর্বাধুনিক স্যান্ডিব্রিজ প্রসেসর তৈরি হয়েছে প্রায় বিলিয়ন ট্রানজিস্টর দিয়ে। এর প্রতিটি ট্রানজিস্টর এক বিট ধারণ করে। প্রায় সব চিপ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্যই প্রসেসরের গতি আরো বাড়ানো। এবং একই অনুপাতে ট্রানজিস্টরের আকার আরো কমিয়ে আনা। বর্তমানে ট্রানজিস্টরের আকার ৩২ ন্যানোমিটারে আনা সম্ভব হয়েছে। যদিও এই স্কেলে পদার্থের যান্ত্রিক গঠন ট্রানজিস্টরের স্বাভাবিক কাজকে ব্যাহত করে। তারপরও একই কাঠামো ব্যবহার করে ২২ ন্যানোমিটারের ট্রানজিস্টর তৈরি করা হয়েছে। প্রতিটি ট্রানজিস্টর দুটি ইলেকট্রোড (সোর্স এবং ড্রেন), একটি কন্ট্রোল ইলেকট্রোড এবং একটি গেটের সমন্বয়ে তৈরি হয়। এ তিনটি কম্পোনেন্টই (সোর্স, ড্রেন, সার্বসট্রেন) খুবই কম পরিমাণের সিলিকন দিয়ে তৈরি, যা সামান্য পরমাণু ধারণ করে।

ডোপলিং নামের এক ধরনের প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সোর্স এবং ড্রেনের মধ্যে সিলিকন থেকেও বেশি পরিমাণে ইলেকট্রন জমা হয়, যা পজিটিভ কারেন্ট তৈরিতে সাহায্য করে। ইলেকট্রন জমা করার জন্য ফসফরাস/আর্সেনিক ব্যবহার হয়। অন্যদিকে বোরন/অ্যালুমিনিয়াম যাদের কোনো ইলেকট্রন নেই, তা নেগেটিভ কারেন্ট তৈরিতে সাহায্য করে। এ পজিটিভ ও নেগেটিভ ডোপড সিলিকার মাঝে একটি অস্থায়ী ডোপ্লেশন জোন তৈরি করে, যা পজিটিভ থেকে নেগেটিভ প্রান্তে ইলেকট্রনের প্রবাহ বন্ধ করে দেয়।

যদি গেটে কোনো ভোল্টেজ প্রয়োগ করা হয়, তখন ডোপ্লেশন জোনে একটি চ্যানেল তৈরি হয়, যা সোর্স থেকে ড্রেনে ইলেকট্রন যেতে সাহায্য করে। এ প্রক্রিয়া ট্রানজিস্টরের অভ্যন্তরে এক ধরনের সুইচিং ঘটায়, যা ট্রানজিস্টরটিকে চালু করে। চালু হওয়ার পর যদি গেট ভোল্টেজ বন্ধ করে দেয়া হয়, তারপরও ট্রানজিস্টরটি চালু থাকে। যখন এটি বন্ধ করা হয়, তখন ক্ষুদ্র পরিমাণে কারেন্ট বের হয়ে যায়। নষ্ট হয়ে যাওয়া কারেন্ট দিয়ে ট্রানজিস্টরটি আরো কিছু কাজ করতে পারতো। কিন্তু প্রক্রিয়াগত ও গঠনগত কারণে এ পরিমাণ কারেন্ট নষ্ট হয়ে আসছে। এ সমস্যা প্রকট হয় যখন ট্রানজিস্টরের আকার ছোট করা হয়। আবার যত ছোট হয় সে ট্রানজিস্টর তত বেশি কারেন্ট নষ্ট করে। আর সাধারণত একটি চিপ যে পরিমাণ পাওয়ার গ্রহণ করে তার প্রায় অর্ধেক কারেন্টই এ প্রক্রিয়ার কারণে নষ্ট হয়। আর ট্রানজিস্টরের কাজের এ প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করাও খুবই কঠিন। কারণ ড্রেন ও সোর্সের বৈদ্যুতিক ক্ষেত্র সার্বসট্রেনের কাজের বৈশিষ্ট্যকে প্রভাবিত করে। যেহেতু ড্রেন খুবই শক্তিশালী, তাই গেট পর্যন্ত যে চ্যানেল/খোলা অংশ তৈরি করে, তা দিয়ে অনবরত ইলেকট্রন প্রবাহিত হয়। এমনকি যদিও ভোল্টেজ বন্ধ করে দেয়া হয় তারপরও ইলেকট্রন প্রবাহ বন্ধ হয় না। তাই গেটে যে ইলেকট্রন থাকে তা-ই কারেন্ট বের হতে প্রধান ভূমিকা পালন করে। এই নষ্ট হয়ে যাওয়া কারেন্টকে একভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। ড্রেন ও সোর্সের মাঝে তৈরি হওয়া ইলেকট্রনের প্রবাহকে একটি শক্তিশালী গেট দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা।



এ কাজের জন্য তৈরি হওয়া ইলেকট্রনের প্রবাহ ও গেটের মাঝের পার্টিশনের উন্নতি করা হলো। ইন্টেল তাদের .৪৫ ন্যানোমিটার চিপে সিলিকন অক্সাইডের পরিবর্তে হাফনিয়াম ধাতু ব্যবহার করেছিল পার্টিশনের জন্য, যা তৈরি হওয়া ইলেকট্রনের প্রবাহকে আস্তে আস্তে কমিয়ে আনতে সাহায্য করে। একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় ইলেকট্রনের প্রবাহ কমিয়ে আনলে এর কাজ বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু এই প্রক্রিয়া ৩২ ন্যানোমিটারের নিচের চিপে ঠিকমতো কাজ করে না। যে কারণে ইন্টেল অন্য উপাদান দিয়ে এ কাজ করার চেষ্টা করছে। আর এর জন্য যুগ যুগ ধরে চলতে থাকা ট্রানজিস্টরের প্রাথমিক গঠনেও পরিবর্তন আনা হয়েছে।

পরে অনেক গেটের সমন্বয়ে ট্রানজিস্টর তৈরি করা হলো, যা কারেন্ট বের হওয়া খুব সূক্ষ্মভাবে নিয়ন্ত্রণ করে। এ ধরনের গেট ব্যবহারের সুবিধা হলো এটি তিনদিক থেকে প্রবাহিত ইলেকট্রনকে বাধা দিতে পারে, যা সোর্স থেকে ড্রেনে ইলেকট্রনের প্রবাহ ও কারেন্ট বের হওয়া খুব ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এ নিয়ন্ত্রণ কাজ হয় আগের ট্রানজিস্টরগুলো থেকেও দ্রুতগতিতে। এ ধরনের ট্রানজিস্টরকে ট্রাইগেট ট্রানজিস্টর বলে।



অনেক গেটের সমন্বয়ে তৈরি হওয়া এ ধরনের ট্রানজিস্টরের পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু হয়েছে আরো প্রায় দশ বছর আগে। যদিও ইন্টেলই প্রথম ২০১২ সালে তাদের পরবর্তী প্রজন্মের প্রসেসর আইভি ব্রিজে এ ধরনের ট্রানজিস্টর ব্যবহার করে। ইন্টেলের দাবি, এই তিনটি গেট যুক্ত ট্রানজিস্টরসংবলিত আইভি ব্রিজ তাদের স্যান্ডি ব্রিজ প্রসেসর থেকেও ৫০ শতাংশ কম বিদ্যুৎশক্তি ব্যবহার করে। আর পূর্ববর্তী ট্রানজিস্টর থেকেও ৩৭ শতাংশ বেশি দ্রুতগতিতে ট্রাইগেট ট্রানজিস্টর কাজ করতে পারে। এ কারণে ইন্টেলের অনেক প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠানও এদিক দিয়ে ইন্টেল থেকে পিছিয়ে পড়ছে। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় চিপ ফেব্রিকেশন কোম্পানি তাইওয়ান সেমিকন্ডাকটর ঘোষণা দিয়েছে, আগামী ২০১৫ সালের মধ্যে এরা ১৪ ন্যানোমিটারের চিপ তৈরি করবে। আর ট্রানজিস্টরের এই লিকেজ কারেন্টকে নিয়ন্ত্রণের জন্য আইবিএম ও এএমডির মতো প্রতিষ্ঠান নানাভাবে চেষ্টা চালাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে অবশ্য এএমডি কিছুটা উন্নতি সাধন করেছে। এজন্য তাদের নতুন ধরনের ট্রানজিস্টর FD-SOI (ফুললি ডিপ্লেটেড সিলিকন অন ট্রানজিস্টর) ব্যবহার শুরু হয়েছে। এ ধরনের ট্রানজিস্টরে সিলিকন অক্সাইডের একটি পর্দার মতো আবরণ তৈরি হওয়া ইলেকট্রনের প্রবাহিত রাস্তাকে সরু করে। এ কারণে কারেন্ট নির্গত হওয়া কমে আসে।

কমপিউটারের গতি বাড়ানো ও কারেন্ট সাশ্রয়

ইন্টেলের লক্ষ্য, ২০১৩ সালের মধ্যে এ ধরনের ট্রাইগেট ট্রানজিস্টর তাদের অ্যাটম প্রসেসরে ব্যবহার করা। পাশাপাশি স্মার্টফোন এবং ট্যাবলেট পিসিতেও এটি ব্যবহার হবে। যেহেতু বেশিরভাগ বহনযোগ্য যন্ত্রেই আর্ম প্রসেসর ব্যবহার হচ্ছে। কারণ এ প্রসেসরগুলো খুবই কম বিদ্যুৎশক্তিতে দ্রুতগতিতে চলতে পারে। সাধারণত একটি আর্ম প্রসেসরের কমান্ড লাইন হয় ৩২ বিটের, যা পাইপলাইনের কাঠামোকে সহজ করে। স্মার্টফোন ও ট্যাবলেট পিসিতে এ পাইপ লাইনের কাঠামোকে সহজ করে। স্মার্টফোন ও ট্যাবলেট পিসির এ পাইপ লাইন হয় ৮ বিটের, যা ৩২ বিটের পাইপ লাইনের চেয়ে বেশি কার্যকর। এ কারণে X86 প্রসেসরগুলোর কার্যকারিতা বাড়াতে পাইপ লাইন আরো ছোট করে ১৬ বিটের তৈরি করা হয়েছে। এর ফলে প্রসেসরের কোনো ক্লক সাইকেল নষ্ট হবে না। কিন্তু দামে সাশ্রয়ী করার জন্য অ্যাটম প্রসেসরে এ প্রক্রিয়া অবলম্বন করা হয়নি। এর পরিবর্তে হাইপার থ্রেডিং নামের এক ধরনের ভার্চুয়াল কোর ব্যবহার করেছে, যা কিছু খালি পাইপ লাইন ব্যবহার করে। অ্যাটম এবং আর্ম চিপ দুটোই বহু কোর ব্যবহার করে। অদূর ভবিষ্যতে আর্ম প্রসেসর X86 প্রসেসর থেকেও আরো বেশি কোর ব্যবহার করবে। আর ইন্টেলের সর্বশেষ সফলতা তাদের অ্যাটম প্রসেসর পাঁচ ওয়াট বিদ্যুতে চলে এবং প্রসেসরের তাপ একটি নির্দিষ্ট মাত্রা অতিক্রম করলে এর কার্যক্রম স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যায়।

পিসির মতো দ্রুতগতির স্মার্টফোন

বেশিরভাগ ট্যাবলেট পিসিতে ব্যবহার হচ্ছে এনভিডিয়া কোম্পানির টিগরা-৩। এই চিপ ১-১.৫ গিগাহার্টজ গতিতে কাজ করতে পারে এবং ব্লুরের হাই রেজ্যুলেশনের ছবিও এটি অ্যানকোড করতে পারে। আর এজন্য নিয়ন নামের এক ধরনের ভেক্টর কোডিং ব্যবহার করে টিগরা প্রসেসর। এ কোডিং একই সাথে অনেকগুলো ফ্লেটিং পয়েন্ট ভিডিও নিয়ে কাজ করে। ফলে ভিডিও অ্যাডকোড ও ডিকোডে খুব কম বিদ্যুৎ ব্যবহার করে। যদিও টিগরা-২-এর আয়তন 49mm2 থেকে বাড়িয়ে 80mm2 করা হয়েছে। দ্রুতগতিতে অতিরিক্ত তাপ শোষণ করার জন্যই এ পরিমাণ আয়তন বাড়ানো হয়েছে।

অন্যদিকে কোয়ালকম এবং টেক্সাসের মতো আর্ম আর্কিটেকচার ডেভেলপ কোম্পানি কাজ করছে চার কোরের প্রসেসরের উন্নতি নিয়ে। কিন্তু তাদের ২৮ ন্যানোমিটারের চিপ বাজারে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। ২০১২ সালের মাঝামাঝি TSMC(তাইওয়ান সেমিকন্ডাকটর)-এর তৈরি করা খুবই ছোট আকারের চিপ বাজারে আসবে।

অবশ্য ২৮ ন্যানোমিটারের চিপ Contex A15 বাজারে আসা পর্যন্ত সবাইকে অপেক্ষা করতে হবে। এ প্রসেসর হবে ২.৫ গিগাহার্টজ, L2 ক্যাশ মেমরি হবে ১-৪ মেগাবাইট। প্রসেসরটির অ্যাড্রেসবার ৩২ থেকে বাড়িয়ে ৪০ করা হয়েছে। ফলে এটি এক টেরাবাইট পর্যন্ত র্যাম ধারণ করতে পারবে। অবশ্য ইতোমধ্যেই এনভিডিয়া কোম্পানি আট কোরের চিপ তৈরির ঘোষণা দিয়েছে, যা ইন্টেলকে আবারও নতুন করে প্রতিযোগিতায় নামাবে।


কজ ওয়েব

ফিডব্যাক : minitohid@yahoo.com
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস