• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > গ্রাফিক্স কার্ড কেনার আগে জেনে নিন
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: মোহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ তুষার
মোট লেখা:৩
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৩ - মার্চ
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
গ্রাফিক্স কার্ড
তথ্যসূত্র:
হার্ডওয়্যার
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
গ্রাফিক্স কার্ড কেনার আগে জেনে নিন
গ্রাফিক্স কার্ড হলো মাদারবোর্ডের সাথে সংযুক্ত এমন একটি ডিভাইস, যা এক বা একাধিক মনিটরে দেখার জন্য ভিডিও আউটপুট তৈরি করে এবং অন্যান্য ডিভাইস যেমন ক্যাপচার কার্ড, টিভি, হোম থিয়েটার, মিউজিক সিস্টেম ইত্যাদি এ ভিডিও দেখানোর কাজে সাহায্য করে। আজকাল গ্রাফিক্স কার্ডের সাথে ইন্টিগ্রেটেড সাউন্ড ডিভাইস থাকে। ফলে ভিডিওর পাশাপাশি অডিও আউটপুটও পাওয়া যায়।
বিশ্বের কমপিউটার এবং টেকনোলজির সব প্রতিযোগিতাই দুই গ্রুপে বিভক্ত। অপারেটিং সিস্টেমে যেমন উইন্ডোজ বনাম লিনআক্স, প্রসেসরের ক্ষেত্রে ইন্টেল বনাম এএমডি। তেমনি গ্রাফিক্স কার্ড দুনিয়াও দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে আছে এটিআই আর এনভিডিয়ার সৌজন্যে। অনেকেই গ্রাফিক্স কার্ড কিনতে গিয়ে দ্বন্দ্বে ভোগেন কোনটি আসলে ভালো। এটিআই নাকি এনভিডিয়া। প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট অনেকেরই বিশ্বাস চলমান সব প্রতিযোগিতার মধ্যে এটিআই আর এনভিডিয়ার চলমান যুদ্ধই সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয়। কেননা গত প্রায় ১৫ বছর ধরেই কেউ কাউকে ছেড়ে কথা বলছে না। যদিও এখন আর এটিআই বলে ডাকার উপায় নেই। কেননা ২০০৬ সালে এএমডি কানাডিয়ান এটিআই কোম্পানিকে কিনে নেয়। যদিও প্রথম আধুনিক গ্রাফিক্স কার্ড তৈরির কৃতিত্বটা আসলে এনভিডিয়ারই, মডেল ছিল জিফোর্স ২৫৬। তারপর এটিআই বের করে রেডিয়ন ২০০০ সিরিজ। সেই থেকে শুরম্ন, এখনও চলছে। আজ এটিআই এগিয়ে তো কাল এনভিডিয়া।
ভেবে অবাক হবেন গ্রাফিক্স কার্ড নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা অনেক। কি ভাবছেন? আজ পর্যন্ত এটিআই, এনভিডিয়া আর ইন্টেল এইচডি গ্রাফিক্স কার্ড ছাড়া অন্য কিছুই শুনা যায় না তেমন। জিপিইউ বা প্রসেসর চিপ তৈরি করে মূলত এএমডি, এনভিডিয়া আর ইন্টেল। সেটাকে কাজে লাগিয়ে কার্ড বানায় এটিআই, এমএসআই, আসুস, বায়োস্টার, ফক্সকন, গিগাবাইট, এক্সএফএক্স, স্যাফায়ার ইত্যাদি কোম্পানি।
এএমডি : ১৯৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এই কোম্পানি বাজারে অনেক এগিয়ে আছে তাদের অত্যাধুনিক ডিভাইসগুলোর কারণে। গত বছরগুলোতে মার্কেটে এদের অবদান তুলনামূলকভাবে বেড়েছে। এরা মাইক্রোপ্রসেসর, চিপসেট,










জিপিইউ ইত্যাদি তৈরি করে বাজারে বেশ সুনাম অর্জন করেছে। সবার আগে ৬৪ বিট প্রসেসর তৈরির কৃতিত্বস্বরূপ এএমডি৬৪ মডেল আজও পরিচিত।

এনভিডিয়া : নতুন কিন্তু খুব দ্রুত বাজারে নামডাক ফেলে দেয়া এই কোম্পানি ১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। জিপিইউ তৈরিতে এদের জুড়ি শুধু এএমডি নিজেই। বিভিন্ন ফ্যামিলির এবং অনন্য ফিচারের কারণে এদের ভিডিও কার্ড সুপরিচিত।

ইন্টেল : চিপ জায়ান্ট নামে খ্যাত এই কোম্পানি ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ভিডিও এক্সেলারেটর, মাদারবোর্ড, প্রসেসর, নেটওয়ার্ক ডিভাইস ইত্যাদি তৈরিতে ইন্টেল সুপরিচিত। এদের তৈরি ভিডিও চিপসেট বিল্টইন গ্রাফিক্স হিসেবে সব ব্র্যান্ডের কমপিউটার, ল্যাপটপে ব্যাপকভাবে ব্যবহার হয়।

গ্রাফিক্স কার্ডের কতগুলো বিষয় দেখে কিনবেন

ট্রানজিস্টর সংখ্যা : কার্ডে যত বেশি ট্রানজিস্টর থাকবে, নয়েজ তত কম হবে, ভিডিও তত বেশি ভালোভাবে ফিল্টার হবে।

ক্লকস্পিড : এটা যত ভালো এবং বেশি হবে তত ভালো পারফরম্যান্স পাবেন। এটার দিকে নজর দিন।

মেমরি : ১ জিবি থেকে ৪ জিবি পর্যন্ত কার্ড পাওয়া যাচ্ছে। আপনার কাজের ধরন অনুযায়ী দেখুন কোনটা লাগে।
মেমরি টাইপ : উউজ, উউজ২, এউউজ৩, এউউজ৪ নাকি এউউজ৫ তা দেখে নিন। যত ভালো হবে, তত ভালো পারফরম্যান্স পাবেন। অবশ্য এউউজ৫-এর দাম একটু বেশি। জেনে রাখুন, আপনার মাদারবোর্ডের র্যা ম DDR২ না DDR৩ তার সাথে এটার কোনো সম্পর্ক নেই।

বাসস্পিড : মেমরি বাস হলো প্রসেসরটি একবারে কতটুকু ডাটা নিয়ে কাজ করে। বাস বেশি হলে খুব দ্রুত আউটপুট
পাবেন। আবার বাস খুব বেশি হলে পাওয়ার খরচ তো বেশি হবেই, তার ওপর আপনার মনিটর ছোট হলে বাস অব্যবহৃত থাকবে।

পিসিআই ভার্সন : আপনার মাদারবোর্ডের সস্নট কোনটি তা দেখে কিনবেন। ধরুন, আপনার চঈওবী৮, কিন্তু আপনি চঈওবী১৬ ২.০ কিনে আনলেন। তাহলে সেটা কাউকে দেয়া ছাড়া উপায় নেই।

ডিরেক্ট এক্স সাপোর্ট : ডিরেক্ট এক্স হলো মাইক্রোসফটের অনন্য সংযোজন। নতুন নতুন হার্ডওয়্যার, ভিডিও এক্সেলারেশনের জন্য এটি অপরিহার্য। এর নতুন ভার্সন ১১। তাই গ্রাফিক্স কার্ড নতুন ভার্সনের ডিরেক্ট এক্স সাপোর্ট করে কিনা দেখে নিন।

পিক্সেল শেডার : ভিন্ন মাত্রার পিক্সেল এবং আলোর তুলনামূলক প্রসেসিং এবং বৈশিষ্ট্য তুলে ধরতে পিক্সেল শেডার প্রয়োজন। আপনার গ্রাফিক্স কার্ড কত সাপোর্ট করে তা দেখে নেবেন। বর্তমানে এর ৫ ভার্সন রয়েছে।

ওপেন জি-এল : এটি হলো ভিডিও প্রসেসিংয়ের জন্য অসংখ্য লাইব্রেরি ফাংশনের সমাহার, যা আউটপুটকে আরো দ্রুততর করে। কেনার সময় এটা সাপোর্ট করে কিনা এবং কত ভার্সন তা দেখে নেবেন।
অ্যান্টি-অ্যালাইজিং : এটা ব্যবহার করে ছবির ফেটে যাওয়া বা ঘোলাটে ভাব দূর করা যায়। বিভিন্ন গেম ও অ্যাপে এটা খুবই ব্যবহার হয়। তাই এই ফিচার আছে কিনা দেখে নিন।

ম্যাক্স আউটপুট : আপনার মনিটর যদি ১৬০০ বাই ১২০০ রেজ্যুলেশনের হয় তাহলে নিশ্চয়ই ১০২৪ বাই ৭৬৮ আউটপুটের গ্রাফিক্স কার্ড কিনবেন না। বর্তমানে সব কার্ডের আউটপুট ১৬০০ বাই ১২০০ থেকে ২৫৬০ বাই ১৬০০-এর মাঝে। তাই এটা আপাতত অত ভাবনার বিষয় নয়।

পাওয়ার ফ্যাক্টর : কার্ডটি কত ওয়াট সাপস্নাই চায় তা দেখুন। প্রয়োজনীয় পাওয়ার দিতে না পারলে কাজ করতে গিয়ে আটকে যাবে। ক্ষতিও হতে পারে। সাধারণত ৪০০ থেকে ৮০০ ওয়াট সাপ্লাই দরকার। লাগলে আপনার পিএসইউ আপডেট করুন।

মাল্টি আউটপুট : আপনি যদি একসাথে দুই বা ততোধিক মনিটরে দেখতে চান তাহলে এটা আপনার দরকার। খেয়াল করে দেখবেন প্রায় সব কার্ডেই দুই বা তিনের বেশি পোর্ট থাকে। এগুলো দেয়া হয় যেনো একই সাথে সব মনিটরে দেখা সম্ভব হয়।

রিফ্রেশ রেট : আউটপুট কত রেটে পাবেন, অর্থাৎ মনিটরে কত হার্টজে ভিডিও আসবে তা দেখে নিন। এর ডিফল্ট মান ৬০। তবে সিআরটি মনিটরে ৬০-এর নিচে দাগ বা ফ্লিকিং দেখা যায়। কিছু মনিটর ৭৫ হার্টজের নিচে দেখাতে সক্ষম নয়। তাই আপনার মনিটরের জন্য কোনটা দরকার তা দেখে নেবেন।

মাল্টি-জিপিইউ : এটা ডাই-হার্ড গেমারদের জন্য। যদি একটা ভিডিও কার্ড নিয়ে আপনার মন না ভরে তাহলে একের বেশি কার্ড লাগানো সম্ভব এরকম কার্ড কিনুন। আর সেই সাথে মাল্টি-জিপিইউ সাপোর্ট করে এরকম মাদারবোর্ডও কিনতে হবে আপনাকে। এনভিডিয়া আর এএমডি দুটিই মাল্টি-জিপিইউ সিস্টেম সাপোর্টেড চিপ তৈরি করে।

এনার্জি সেভিং : আপনার চিপটি কাজের পাশাপাশি দুর্নীতি করে আপনার বিদ্যুৎ বিল উঠাচ্ছে কিনা সে দিকে খেয়াল রাখবেন। এজন্য এনার্জি স্টারের রেটিং দেখে কার্ড কিনুন।

সফটওয়্যার সাপোর্ট : আপনি যে সিস্টেমে কাজ করেন সেই সিস্টেমে কার্ডের ড্রাইভার পাবেন কিনা, তা দেখে নিন। এখন এএমডি উইন্ডোজ, লিনআক্স আর ম্যাকের জন্য অফিসিয়ালি ড্রাইভার দিচ্ছে। তাই পছন্দ আপনার।

গ্রাফিক্স কার্ডসহ ল্যাপটপ কেনার সময় যা যা খেয়াল করবেন :

ল্যাপটপ চলে ব্যাটারিতে। তাই কার্ড যদি বেশি পাওয়ার খরচ করে তাহলে দ্রুত চার্জ শেষ হবে, ব্যাটারিও নষ্ট হবে। তাই ওয়েবসাইটে খুঁজে দেখে নিন কোনটার পাওয়ার কনজাম্পশন কেমন। যেমন এটিআই ৪৬৭০-এর চেয়ে ৫৪৭০ বেশি ভালো। কিন্তু ৪৬৭০ অনেক কম বিদ্যুৎ ব্যবহার করে।
ল্যাপটপে গ্রাফিক্স কার্ডের কারণে তৈরি হওয়া তাপ ঠিকমতো বের হওয়ার জন্য পর্যাপ্ত এয়ার ভেন্ট আছে কিনা বা সেগুলো সহজেই বস্নক হয়ে যায় কিনা।
ল্যাপটপের গ্রাফিক্স কার্ড নষ্ট হলে ঠিক করা বেশ দুরূহ ব্যাপার। তাই ভালো রিভিউ এবং কনফিগারেশন দেখে কিনুন

ফিডব্যাক : tusher16@facebook.com
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস