• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > ১৬ অুনষঙ্গের কারণে ব্যান্ডউইডথের দাম কমলেও ইন্টারনেট খরচ কমে না
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: হিটলার এ. হালিম
মোট লেখা:১৪
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৩ - মার্চ
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
ইনটারনেট
তথ্যসূত্র:
রির্পোট
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
১৬ অুনষঙ্গের কারণে ব্যান্ডউইডথের দাম কমলেও ইন্টারনেট খরচ কমে না
কয়েক দফা ব্যান্ডউইডথের দাম কমলেও গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেট ব্যবহার খরচ কমেনি। বর্তমান অবস্থা থেকে আগামীতে দাম আরো কমানো হলেও গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেট ব্যবহার খরচ কমবে না।

ইন্টারনেট ব্যবহারের খরচ না কমার পেছনে কাজ করছে এমন ১৬টি কম্পোনেন্ট বা উপাদান চিহ্নিত করে উপাদানগুলোর তালিকা ব্যাখ্যাসহ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পর্যালোচনার জন্য পাঠানো হয়েছে। ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, শুধু ব্যান্ডউইডথের দাম কমালেই হবে না, সেই সাথে চিহ্নিত উপাদানগুলোর প্রতিটিতে শতাংশ ভিত্তিতে ছাড় দিলে বা খরচ কমালেই শুধু গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেট খরচ কমবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চিহ্নিত ১৬টি উপাদানের ব্যাখ্যায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সন্তষ প্রকাশ করেছে। তাই আপাতত আর ব্যান্ডউইডথের দাম না কমিয়ে গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেট ব্যবহার খরচ কিভাবে কমানো যায় সে উপায় খোঁজা হচ্ছে। অন্যদিকে ইন্টারনেটের ওপর থেকে ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) প্রত্যাহার করা হলেও, তা ইন্টারনেট ব্যবহার খরচের ওপর তেমন কোনো প্রভাব ফেলবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ব্যান্ডউইডথের দাম

ব্যান্ডউইডথের দামের ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গত ৮ বছরে ব্যান্ডউইডথের দাম কমেছে ৬ বার। ২০০৭ সালে প্রতি মেগা ব্যান্ডউইডথের দাম ছিল ৭২ হাজার টাকা। একবারে ৪২ হাজার টাকা কমিয়ে করা হয় ৩০ হাজার টাকা। পরের বছর দাম নির্ধারিত হয় ১৮ হাজার টাকা। ২০০৯ সালে ৬ হাজার টাকা কমিয়ে করা হয় ১২ হাজার টাকা। ২০১০ সালে দাম কমানো না হলেও এর পরের বছর ২ হাজার টাকা কমিয়ে করা হয় ১০ হাজার টাকা। সর্বশেষ গত বছর আরো ২ হাজার টাকা কমিয়ে ব্যান্ডউইডথের দাম নির্ধারিত হয় প্রতি মেগা ৮ হাজার টাকা।

গত ৫ বছরে মেগাবাইটপ্রতি ব্যান্ডউইডথের দাম ১৯ হাজার টাকা কমলেও গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেট চার্জ বা ব্যবহার খরচ কমেনি। মাঝখানে এর ফল ভোগ করেছে ইন্টারনেট ব্যবসায়ের সাথে জড়িত বিভিন্ন পক্ষ। বিগত বছরগুলোতে কোনো ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান উলেস্নখযোগ্যভাবে ইন্টারনেট চার্জ না কমালেও সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল) ইন্টারনেট সক্ষমতার দাম কমিয়েছে। ফলে ব্যবহারকারীরা স্বল্প খরচে বিটিসিএলের উচ্চগতির ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারছে।

বর্তমানে আইএসপিগুলো ১ মেগাবাইট ব্যান্ডউইডথ ৮ হাজার টাকায় কিনলেও এই দামের সাথে অতিরিক্ত হিসেবে ১৫ শতাংশ ভ্যাট যুক্ত হচ্ছে। গত ৮ বছরে ব্যান্ডউইডথের দাম মেগাবাইটপ্রতি ৬৪ হাজার টাকা কমলেও গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেট ব্যবহারের খরচ সেই হারে কমেনি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি) সভাপতি আক্তারম্নজ্জামান মঞ্জু বলেছেন, শুধু ব্যান্ডউইডথের দাম কমালেই হবে না। ভ্যাট (মূল্য সংযোজন কর) মওকুফ করতে হবে। তা না হলে গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেট খরচ কমবে না।

২০০১-০২ সালে ১ মেগা ব্যান্ডউইডথের দাম ছিল ৫৫ হাজার টাকা। তখনও ইন্টারনেট ব্যবহার করে গ্রাহকরা যে পরিমাণ টাকা মাসিক বিল হিসেবে দিয়েছেন এখনো (৮ হাজার টাকা প্রতি মেগার দাম) তাই দিচ্ছেন বলে অনেকে অভিযোগ করেছেন। ব্যান্ডউইডথের দাম কমলে গ্রাহকের কোনো উপকার হয় না। তারা আরো বলেন, বারবার শুনছি ইন্টারনেট থেকে ভ্যাট প্রত্যাহার করার কথা। সরকার ভ্যাট প্রত্যাহার করলেও তা সাধারণ ব্যবহারকারীদের উপকারে আসবে না। ব্যবসায়ীরাই লাভবান হবেন।

তবে এ প্রসঙ্গে আইএসপিএবির সহ-সভাপতি সুমন আহমেদ সাবির বলেছেন, যে হারে ব্যান্ডউইডথের দাম কমেছে সেই হারে ইন্টারনেট খরচ না কমলেও গতি বেড়েছে কয়েক গুণ। তিনি জানান, ব্যান্ডউইডথ পরিবহন খরচ, কপারের দাম এবং ক্যাবলের দাম বেড়ে যাওয়ায় ইন্টারনেট খরচ প্রত্যাশিত হারে কমানো যাচ্ছে না, তবে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে। তিনি বলেন, ২০০১-০২ সালের তুলনায় এখন ইন্টারনেটের গতি ২০ গুণ বেড়েছে। ইউটিউব দেখা যাচ্ছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে নেটিজেনদের উপস্থিতি বাড়ছে। এসবও বিবেচনায় আসতে হবে।
সাবমেরিন ক্যাবলের সাথে যুক্ত হওয়ার আগে বাংলাদেশের ইন্টারনেট জগৎ ছিল ভি-স্যাট (ভেরি স্মল অ্যাপারেচার টার্মিনাল) নির্ভর। সে সময় ব্যান্ডউইডথের দামও ছিল আকাশছোঁয়া। সাবমেরিন ক্যাবলের সাথে যুক্ত হওয়ার পর থেকেই মূলত ব্যান্ডউইডথের দাম কমতে থাকে।

বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিএল) দেশের বাইরে থেকে ১ মেগাবাইট ব্যান্ডউইডথ কেনে ৬ হাজার টাকায়। এতদিন আইএসপিগুলো কয়েক গুণ বেশি দামে ব্যান্ডউইডথ কিনত। ব্যান্ডউইডথের দাম কমায় গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেট খরচ কিছুটা কমবে বলে আইএসপি অ্যাসোসিয়েশন গ্রাহকদের বারবার স্বপ্ন দেখালেও বরাবরই তা ভঙ্গ হয়েছে।

চিহ্নিত ১৬ উপাদান

ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথ বিদেশ থেকে আনতে গেলে তার সাথে কতগুলো উপাদান (বিশেষ পক্ষ) জড়িত থাকে। এর মধ্যে আছে ইন্টারনেট ট্রানজিট (আইপি ক্লাউড), বিদেশি ডাটা সেন্টারের ভাড়া, দেশি-বিদেশি ব্যাকহল চার্জ, ল্যান্ডিং স্টেশন ভাড়া, কেন্দ্রীয় সার্ভারের পরিবহন খরচ, গেটওয়ে ভাড়া, আইএসপি প্রতিষ্ঠানের মুনাফা, এনটিটিএন প্রতিষ্ঠানের আন্ডারগ্রাউন্ড নেটওয়ার্ক ভাড়া, ইন্টারনেট যন্ত্রাংশের ওপর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ধার্য করা ভ্যাট ও শুল্ক, বিটিআরসির রাজস্ব ভাগাভাগি- এমন ১৬টি উপাদান বা পক্ষ।

সরকার বারবার ব্যান্ডউইডথের দাম কমালেও এসব ফ্যাক্টরগুলোর ওপর কোনো চার্জ আরোপ না করায় গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেট খরচ কমছে না। ব্যান্ডউইডথের দাম কমানোর সাথে সাথে ওই হারে চিহ্নিত উপাদানগুলোর ওপর থেকে নির্দিষ্ট হারে দাম কমানো হলেই শুধু ইন্টারনেট চার্জ সহনীয় পর্যায়ে আসতে পারে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি লিমিটেডের (বিএসসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: মনোয়ার হোসেন জানান, ব্যান্ডউইডথ পরিবহনের সাথে যেসব উপাদান বা পক্ষ জড়িত তারা যদি তাদের সার্ভিসের দাম না কমায়, মার্জিন কম না রাখে, তাহলে ব্যান্ডউইডথের দাম ফ্রি করে দিলেও ইন্টারনেট ব্যবহার খরচ কমবে না। প্রসঙ্গক্রমে তিনি বিটিসিএলের উদাহরণ দিয়ে বলেন এ প্রতিষ্ঠান কম খরচে ইন্টারনেট সেবা দিতে পারে, কারণ তাদের নিজস্ব একটা অবকাঠামো আছে। সে অবকাঠামো ব্যবহার করে তারা বাইরের অন্যান্য পক্ষের সহযোগিতা খুব বেশি না নিয়ে ইন্টারনেট সেবা দেয়ায় তাদের খরচও কম হচ্ছে।

এনটিটিএন প্রতিষ্ঠান ফাইবার অ্যাট হোমের সহ-মহাব্যবস্থাপক আববাস ফারম্নক বলেন, রাজধানী ঢাকার চেয়ে বাইরে ইন্টারনেট ব্যবহার খরচ বেশি। এর জন্য দায়ী করেন ব্যান্ডউইডথ পরিবহনকে। তিনি বলেন, দুয়েকটি বিভাগীয় শহর ছাড়া জেলা শহরগুলোতে ব্যান্ডউইডথ পরিবহনের ব্যবস্থা খুবই খারাপ। যেটুকু সম্ভব তা পরিবহন করতে অনেক খরচ পড়ে যায়। ফলে ইন্টারনেট সেবার দামও বেড়ে যায়। তিনি টেরিস্ট্রিয়াল লিঙ্কের কথা উল্লেখ করে বলেন, সারাদেশ এই লিঙ্কের আওতায় থাকলে ব্যান্ডউইডথ পরিবহন করা সম্ভব হতো। ইন্টারনেট চার্জ হয়তো কিছুটা কম হতো।

ইন্টারনেট বিল কমায় না মোবাইল ফোন অপারেটররা

কলচার্জ কমালেও দেশের মোবাইল ফোন অপারেটরেরা ইন্টারনেটের বিল কমায় না। ২০০৪ সালে অপারেটরগুলো ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য যে চার্জ নিত ,২০১৩ সালে এসেও সেই একই চার্জ নিচ্ছে।

সরকার দফায় দফায় ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথের দাম কমিয়েছে। কিন্তু গ্রাহক পর্যায়ে বিল এক টাকাও কমেনি বলে উল্লেখ করেছে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি। বিটিআরসি প্রকাশিত এক নির্দেশনায় দেখানো হয়েছে, মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো ২০০৪ সালে ১ মেগাবাইট ব্যান্ডউইডথ কিনত ৭২ হাজার টাকায়। তখন অপারেটরগুলো মোবাইল ইন্টারনেটে প্রতি কিলোবাইটের দাম নিত ০ দশমিক ০২ টাকা। বর্তমানে অপারেটরগুলো সমপরিমাণের ব্যান্ডইউডথ মাত্র ৮ হাজার টাকায় কিনলেও গ্রাহকের কাছ থেকে প্রতি কিলোবাইট ইন্টারনেটের দাম নিচ্ছে ওই ০ দশমিক ০২ টাকা (সাথে অতিরিক্ত খরচ হিসেবে যুক্ত হচ্ছে ১৫ শতাংশ ভ্যাট)।

এদিকে অপারেটররা কম খরচে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ দিতে বিভিন্ন ধরনের প্যাকেজ তৈরি করে অফার করছে তার গ্রাহকদের। প্যাকেজগুলো ছোট করতে করতে ‘মিনি প্যাকেজ’ও তৈরি করেছে। অল্প টাকায় সারাদিন বা সময়ভিত্তিতে গ্রাহককে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ দিলেও খরচ নিচ্ছে ওই প্রতি কিলোবাইট ০ দশমিক ০২ টাকা। ফলে সরকার ৮ বছরে ব্যান্ডউইডথের দাম ৬৪ হাজার টাকা কমালেও গ্রাহক উচ্চমূল্যে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছে। অবশ্য এ ব্যাপারে মোবাইল ফোন অপারেটরদের সংগঠন অ্যামটবের কোনো বক্তব্য নেই। যতদিন পারা যায় ততদিন এই রেটে গ্রাহকদের পকেট কাটা নীতিতে অটল রয়েছে সংগঠনটি।

বিটিআরসির পরিচালক (সিস্টেম অ্যান্ড সার্ভিসেস) কর্নেল রকিবুল হাসান জানান, বর্তমানে স্মার্টফোনের ব্যবহার বেড়েছে। স্মার্ট হ্যান্ডসেট ব্যাকগ্রাউন্ডে ইন্টারনেট সেশন চালু করে এবং বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন সিনক্রোনাইজ ও আপডেট করে। এতে অনেক গ্রাহকের অজান্তেই ইন্টারনেট ব্যবহারের ফলে টাকা কাটা যায়। গ্রাহকের অজান্তে এটি হওয়ায় এটিকে ‘বিল শক’ বলে অভিহিত করা হয়। তিনি বলেন, সরকার কয়েক ধাপে ব্যান্ডউইডথের দাম কমালেও পি-ওয়ান প্যাকেজ প্রথম ২০০৪ সালে চালু করার পর থেকে এখন পর্যমত্ম অপারেটরগুলো এর মূল্য পরিবর্তন করেনি। গ্রাহকের আর্থিক ক্ষতি লাঘবে প্রচলিত পি-ওয়ান প্যাকেজে প্রতি কিলোবাইটের দাম ০ দশমিক ০২ টাকার অন্তত অর্ধেক করা যেতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের এখন মোট ব্যান্ডউইডথ ২০০ গিগাবাইট পার সেকেন্ড (জিবিপিএস)। আগে ছিল যথাক্রমে ৪৪
দশমিক ৬ গিগা এবং ৮৫ গিগা। গত বছরের ৩১ মার্চ কক্সবাজারের ঝিলংঝায় সাবমেরিন ক্যাবলের ল্যান্ডিং স্টেশনে ব্যান্ডউইডথ সম্প্রসারণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। এরপর থেকে ব্যান্ডউইডথ বাড়তে থাকে। তবে বর্তমানে মোট ব্যান্ডউইডথের মধ্যে ব্যবহার হচ্ছে ৩২ গিগা। অব্যবহার অবস্থায় থাকছে ১৬৮ গিগা। গত দুই বছরে এর ব্যবহার বেড়েছে ১৭ গিগার মতো।

ফিডব্যাক : hitlarhalim@yahoo.com
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস
অনুরূপ লেখা