• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > কমপিউটার সায়েন্স কেনো পড়বেন
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: মো: জাবেদ মোর্শেদ চৌধুরী
মোট লেখা:২৫
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৪ - অক্টোবর
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
কমপিউটার সায়েন্স
তথ্যসূত্র:
রির্পোট
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
কমপিউটার সায়েন্স কেনো পড়বেন

আমাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থায় বেশিরভাগ ছেলেমেয়েই গ্র্যাজুয়েশন করার পরই একটা ভালো চাকরির প্রত্যাশা করে। অভিভাবকদেরও প্রত্যাশা থাকে একটা ভালো বেতনের চাকরি করবে তার সন্তান। অনেকেই মনে করেন, অভিভাবকদের প্রত্যাশা বরং ছাত্রছাত্রীদের চেয়েও বেশি থাকে। যাই হোক, চাকরি বা ভালো বেতন এসব চিন্তা বাংলাদেশে হয়তো প্রাসঙ্গিক, তবে এটাই কমপিউটার সায়েন্সে পড়ার একমাত্র কারণ যেন না হয়। যদি তা হয়, তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর পস্তাতে হতে পারে। যাই হোক, কমপিউটার সায়েন্স বা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াটা খুবই চিত্তাকর্ষক ও আনন্দময়। আর ভালোমতো লেখাপড়া করলে আপনাকে চাকরি খুঁজতে হবে না, বরং চাকরিই আপনাকে খুঁজবে। দেখা যাক কমপিউটার সায়েন্স পড়ে আপনি কী পেতে পারেন।

০১. নিজেকে তুলে ধরা সবচেয়ে সহজ : বর্তমান যুগে নিজেকে অন্যের কাছে তুলে ধরা বা যেকোনো নতুন সুযোগকে কাজে লাগাতে তথ্যপ্রযুক্তির ছেলেমেয়েরাই এগিয়ে থাকেন। নিজেকে তুলে ধরতে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারেও তারা অনেক বেশি পারদর্শী হন।

০২. যেকোনো ক্ষেত্রে আপনার কমপিউটিং দক্ষতা ব্যবহার করতে পারেন : কমপিউটার বিজ্ঞানে পড়া ছাত্রছাত্রীরা কমপিউটিংয়ে ক্যারিয়ার গড়ার সাথে সাথে অন্য আরও অনেক সেক্টরেই ক্যারিয়ার গড়তে পারেন। যেমন- ব্যাংক, কর্পোরেট হাউস, মিডিয়াসহ সব জায়গাই আজ কমপিউটার সায়েন্সের ছাত্রছাত্রীদের ব্যাপক চাহিদা।

০৩. কমপিউটার সায়েন্সের অনেক অনেক ক্যারিয়ার পাথ : কমপিউটার সায়েন্সের ছাত্রছাত্রীদের ক্যারিয়ার বাছাইয়ের জন্য অনেক রাস্তা খোলা থাকে। যেমন- কমপিউটার সায়েন্স পড়ে যেকেউ প্রোগ্রামার হতে পারেন, অথবা নেটওয়ার্ক অ্যাডমিনিস্ট্রেটর। যারা আঁকাআঁকিতে ভালো, তারা গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসেবে খুবই ভালো করতে পারেন। সুতরাং কমপিউটার সায়েন্স আপনাকে অনেক পথ খুলে দেবে এবং পছন্দানুযায়ী ক্যারিয়ার গড়তে পারবেন।

০৪. নিজেকে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে তৈরি করা : আমাদের দেশে বেকার সমস্যা প্রকট। যথাযথ ডিগ্রি ও যোগ্যতা থাকার পরও অনেকেই চাকরি পান না। অনেকেই চাকরির জন্য অনেক দিন, এমনকি বছরের পর বছর পথে পথে ঘোরেন। সত্যিকার অর্থে সবার জন্য চাকরির ব্যবস্থা করা বর্তমান বাংলাদেশে সম্ভবও নয়। এই বাস্তবতায় একজন কমপিউটার গ্র্যাজুয়েট গ্লোবাল অনলাইন ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেসে নিজেকে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে গড়ে তুলতে পারেন।

০৫. নিজেকে এন্টারপ্রেনার হিসেবে তৈরি করা : অনেকে আবার নিজেকে একজন উদ্যোক্তা হিসেবেও গড়ে তুলতে পারেন। যুগ যেহেতু এখন তথ্যপ্রযুক্তির, তাই তথ্যপ্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে অনেক ধরনের নতুন নতুন বিজনেস শুরু করা যেতে পারে। যেমন- গ্র্যাজুয়েশন শেষ করার পরপরই কয়েকজন বন্ধু মিলে একটি সফটওয়্যার ফার্ম গড়ে তুলতে পারেন।

০৬. বর্তমান ও আগামীতে সবচেয়ে বেশি চাকরির সুযোগ : যদি আমরা বর্তমান ক্যারিয়ার মার্কেট ও এর ট্রেন্ড বিবেচনায় নেই, তবে দেখা যাবে আরও ১৫-২০ বছর কমপিউটার ক্যারিয়ারের রমরমা অবস্থা বিরাজ করবে। এটা যেমনি আন্তর্জাতিক বাজারের জন্য প্রযোজ্য, ঠিক তেমনি বাংলাদেশের জন্যও প্রযোজ্য।

০৭. দ্রুত সময়ে বিশ্ববিখ্যাত কোম্পানিতে কাজ করার সুযোগ : কমপিউটার সায়েন্সই মনে হয় একমাত্র বিষয়, যা পড়ে আপনি গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেই সরাসরি গুগল বা ফেসবুকের মতো মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরি করতে পারেন। ইতোমধ্যে অনেক বাংলাদেশী ছাত্র এসব প্রতিষ্ঠানে নিজেদের আসন পাকা করে নিয়েছেন।

০৮. উচ্চশিক্ষার অনেক সুযোগ : আরেকটি আকর্ষণীয় দিক হলো গবেষণার সুযোগ। কমপিউটার সায়েন্স শেষ বর্ষে কিছু ক্রেডিট থাকে গবেষণা বা প্রজেক্টের জন্য। প্রতিবছরই বাংলাদেশের সণাতকের ছাত্ররা ভালো ভালো জার্নালে পেপার পাবলিশ করে থাকেন। কমপিউটার সায়েন্সের গবেষণার একটা সুবিধা হলো নিজের ডেস্কটপ কমপিউটার ব্যবহার করেই বড় বড় গবেষণা করা যায়, কোটি টাকা যন্ত্রপাতির দরকার হয় না (অবশ্যই দরকার হয়, তবে সেগুলো ছাড়াও অনেক কাজ করা যায়)।

০৯. কনটেস্ট : সারাবছরই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় বা কোম্পানি প্রোগ্রামিং ও সফটওয়্যার কনটেস্ট আয়োজন করে। প্রোগ্রামিং কনটেস্টে মূলত অলিম্পিয়াড স্টাইলে অ্যালগরিদমের সাহায্যে সমস্যা সমাধান করতে হয়। এখানে সুযোগ আছে সারা বিশ্বের বড় বড় প্রোগ্রামারের সাথে প্রতিযোগিতা করার। বাংলাদেশের মানুষের গর্ব করার মতো জিনিস খুব বেশি নেই, তবে প্রোগ্রামিং কনটেস্ট অবশ্যই সেই অল্প জিনিসগুলোর একটি, অনেক বছর ধরেই বাংলাদেশীরা এসব প্রতিযোগিতায় ভালো ফল করছেন। সফটওয়্যার প্রতিযোগিতা মূলত বিভিন্ন সফটওয়্যার, ওয়েবসাইট ডিজাইন করতে হয়। মোবাইল বিশেষ করে অ্যান্ড্রয়িডভিত্তিক মোবাইলের সফটওয়্যার প্রতিযোগিতা বর্তমানে খুব জনপ্রিয়। মাইক্রোসফট ইমাজিন কাপের মতো বড় বড় আন্তর্জাতিক সফটওয়্যার প্রতিযোগিতায়ও বাংলাদেশীরা অংশ নেন। আবার আপনি চাইলে হার্ডওয়্যার প্রতিযোগিতাও করতে পারেন, দারুণ একটি রোবট বানিয়ে চমকে দিতে পারেন সবাইকে।

কারা পড়বেন কমপিউটার সায়েন্স

নিজের সামর্থ্য ও ভালো লাগার কথা চিন্তা করে নিজের ক্যারিয়ার বাছাই করা উচিত। এবার আলোচনা করা যাক, কমপিউটার সায়েন্স আসলে কাদের পড়া উচিত বা কারা কমপিউটার সায়েন্সে পড়ে ভালো করতে পারবেন, তাদের সম্পর্কে গণিত জানা ও অ্যানালাইটিক ক্ষমতাসম্পন্ন কমপিউটার সায়েন্সের ছাত্রছাত্রীদের ভালো গণিত জানার দরকার হয়। এর কারণটা সবার কাছে পরিষ্কার নয়। নতুন অ্যালগরিদম বা ডাটা স্ট্রাকচার ডিজাইন করার সময় এগুলো কতটা ভালো কাজ করবে, তা নির্ধারণ করতে গণিত দরকার হয়। একটি সমস্যা অনেকভাবে সমাধান করা যায়, কোন পদ্ধতিটি সবচেয়ে ভালো, কোনটি কম মেমরিতে কম সময়ে কাজ করবে- এসব হিসাবের জন্য গণিতের জ্ঞান খুব দরকার। আপনি যত ভালো গণিত জানবেন আপনার সমস্যা সমাধানের দক্ষতা তত ভালো হবে। কমপিউটার সায়েন্সকে এজন্য ‘অ্যাপস্নাইড ম্যাথ’ বলা হয়ে থাকে।

গণিতের অনেক কঠিন কঠিন সমস্যাও আজকাল কমপিউটার দিয়ে সমাধান করা হয়, এমনকি থিওরেম প্রমাণও করা হয়। গণিতের মধ্যে জানতে হবে মূলত কম্বিনেটরিক্স, প্রোবাবিলিটি, নাম্বার থিওরি, জিওমেট্রি এবং লিনিয়ার অ্যালজেব্রা ইত্যাদি। এছাড়া কিছু ক্যালকুলাস শেখানো হয়। প্রোবাবিলিটির জন্য আলাদা কোর্স করানো হয় এবং খুবই মজার কিছু সমস্যার সমাধান করানো হয় সেখানে। কারও যদি গণিত ভালো লাগে, তার জন্য কমপিউটার সায়েন্সে ভালো করা সহজ হয়ে যায়। আবার কেউ গণিতের রিয়েল লাইফ অ্যাপ্লিকেশন শিখতে চাইলেও এটা তার জন্য একটা ভালো সাবজেক্ট হতে পারে।

ক্রিয়েটিভিটি থাকা ক্রিয়েটিভ ছেলেমেয়েদের জন্যও কমপিউার সায়েন্স খুবই আকর্ষণীয়। আপনার মধ্যে ক্রিয়েটিভিটি থাকলে খুব সহজেই গ্রাফিন্স ডিজাইনার, অ্যানিমেশন বা কার্টুন ডেভেলপার হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে পারবেন।

ধৈর্য থাকা
সবশেষ কথা- ধৈর্য। কমপিউটার সায়েন্সে ভালো করতে চাইলে অবশ্যই ধৈর্যশীল হতে হবে। অনেক সময় দেখা যায় কোনো একটি সমস্যা সমাধান করতে দিনের পর দিন লেগে যেতে পারে। সেসব ক্ষেত্রে যারা ধৈর্যের সাথে লেগে থাকেন, তারাই সফলকাম হন।

ইংরেজি জানা

বর্তমানে যেকোনো বিষয়ে ভালো করতে অবশ্যই ইংরেজি জ্ঞান থাকা আবশ্যক। তবে কমপিউটার সায়েন্সে ভালো করতে মনে হয় ইংরেজি জানাটা আরও বেশি প্রয়োজন। কেননা, এখানে সবকিছুই ইংরেজিতে হয়। সব ভালো বই ইংরেজিতে লেখা, ইংরেজিতে প্রোগ্রাম করতে হবে। সব ধরনের টিউটোরিয়ালও সাধারণত ইংরেজিতেই লেখা হয়।

পরিশেষে ভর্তি পরীক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলা যায়, যেসব বিষয় পড়ার কথা ভাবছেন, সেসব বিষয় সম্পর্কে ভালোভাবে জানার চেষ্টা করুন তাহলেই ভর্তি হয়ে যেতে পারেন

ফিডব্যাক : jabedmorshed@yahoo.com
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস