• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > বিস্ফোরণের মাত্রা জানতে বডি সেন্সর
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: তুহিন মাহমুদ
মোট লেখা:২৭
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৪ - মার্চ
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
ফিচার
তথ্যসূত্র:
দশদিগন্ত
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
বিস্ফোরণের মাত্রা জানতে বডি সেন্সর
প্রযুক্তির অগ্রযাত্রা মানুষের জীবনকে কতটা সহজ করেছে তা বর্ণানাতীত। দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে প্রযুক্তির ব্যবহার রয়েছে। জীবনের নানা ঝুঁকি থেকেও রক্ষা করছে এই প্রযুক্তি। চিকিৎসা ক্ষেত্রেও আমূল পরিবর্তন এনেছে প্রযুক্তি। এসেছে নতুন নতুন উদ্ভাবন। তেমনই একটি ব্যতিক্রমী উদ্ভাবন নিয়ে এই লেখা।

আমেরিকার সেনাবাহিনী এমনিতেই ভারি অস্ত্রসহ বর্ম ব্যবহার করে। আর এই তালিকায় যুক্ত হচ্ছে ‘বডি সেন্সর’ নামে নতুন একটি সরঞ্জাম। এটি মানসিক আঘাতসহ সব ধরনের শারীরিক আঘাত, যেটি বাইরে থেকে দেখা যায় না, সেটি শনাক্ত করবে। মূলত বিস্ফোরণ শারীরিকভাবে শরীরে কী ধরনের প্রভাব ফেলে তা পরিমাপ করার জন্য এই ডিভাইসটি ব্যবহার করা হবে। ডিভাইসটিতে সামনে ও পেছনের জন্য দুটি করে সেন্সর রয়েছে এবং শক্তি পরিমাপের জন্য একটি অ্যাক্সেলেরোমিটার রয়েছে। অ্যাক্সেলেরোমিটারটি ইন্টিগ্রেটেড ব্লাস্ট ইফেক্ট সেন্সর স্যুট (আইবেস) একটি একটি অংশ, যার মাধ্যমে যুদ্ধে সেনাদের পর্যবেক্ষণ ও রক্ষার জন্য ব্যবহার করা হয়। জর্জিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি ‘বডি সেন্সর’ নামে এই ডিভাইসটি তৈরি করেছে।

মেরিল্যান্ডের আবারডিন প্রোভিং গ্রাউন্ডের সেনাবাহিনীর ওপর পরীক্ষা চালিয়ে ২০১২ সালের গ্রীষ্মে আফগানিসত্মানের এক হাজার সেনাদলের শরীরে এই ধরনের ডিভাইস বহনের জন্য দেয়া হয়। এ ছাড়া প্রায় ৪২টি যুদ্ধযানে বিস্ফোরণের প্রভাব জানার জন্য এটি যুক্ত করা হয়। বর্তমানে প্রায় ৩০০ বিশেষ বাহিনীর সৈন্যও তাদের যোগাযোগের হেডসেটে এটি ব্যবহার করছে।

এমনকি মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর যুদ্ধতে যেখানে আমেরিকার বড় ধরনের সম্পৃক্ততা রয়েছে, বিশেষজ্ঞেরা বলছেন আইইডি থাকলেও বিপদের সম্ভাবনা থেকে যায়, সেখানে এ ধরনের ডিভাইস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। জর্জিয়া টেক রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রিসার্চ ইঞ্জিনিয়ার ব্রিয়ান লিউ বলেন, যুদ্ধ ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ এমনকি ছোট ধরনের আর্ম ফায়ারেও সৈন্যদের আহতের মাত্রা বেড়েই চলেছে, যা তাদের শরীর ও মসিত্মষ্কে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। নতুন এই যন্ত্রটির প্রধান উদ্দেশ্য হলো এসব বিস্ফোরণ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা ও একটি ফলাফল জানানো।

এমনকি কোনো বিস্ফোরণে স্বাভাবিকভাবে শারীরিক ক্ষতগ্রস্থ অর্থাৎ আহত না হওয়া ব্যক্তিরও পরে মসিত্মষ্কে বিরূপ প্রভাব ও শরীরের নানা উপসর্গ দেখা দেয়। বিস্ফোরণের তরঙ্গ শব্দের গতির চেয়ে বেশি গতিতে প্রবাহিত হয় এবং বাতাসকে সঙ্কুচিত করে। এই তরঙ্গের মধ্যে থাকলে তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যেমন : কান, ফুসফুস এবং পেটে প্রভাব ফেলতে পারে। এগুলোর প্রভাব স্বাভাবিকভাবে নাও দেখা যেতে পারে।

আর্মি র‍্যাপিড ইকুইপমেন্ট ফোর্সের প্রধান বিজ্ঞানী ক্যারেন হ্যারিংটন বলেন, বিভিন্ন অভিযান থেকে সৈন্যদের মসিত্মষ্ক রোগসহ ফেরত আসার পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে, যা ধীরে ধীরে ধরা পড়ছে। এই বিষয়টি উপলব্ধি করেই এই প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। আমরা বিভিন্ন অভিযানে কী ঘটছে ও সৈন্যদের স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ করার চেষ্টা করছি। এরা যদি পরে এ বিষয়ে আরও তথ্য দেয়, তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আরও সুবিধা হবে।
নতুন এই সিস্টেমে আগামীতে আর কিছু ফিচার যেমন : হৃদস্পন্দন পরিমাণ, রক্তের চাপ, অক্সিজেন ও হাইড্রেশনের লেভেল পরিমাপ ইত্যাদি সুবিধা যুক্ত করা হবে। সেনাবাহিনী ছাড়াও বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ শারীরিক কাজে জড়িত কিংবা বয়স্কদের স্বাস্থ্য সুরক্ষাও এই প্রযুক্তি বা ডিভাইস ব্যবহার করা যাবে।

ক্ষতি প্রতিরোধ

খেলার মাঠে খেলোয়াড়দের মতোই সৈন্যরা তাদের কর্তব্য এড়িয়ে দূরে দূরে থাকতে চান। লিউ বলেন, এসব সৈন্য আইইডি বিস্ফোরণ অথবা অন্য কোনো বিস্ফোরণের পর এরা বেশি ক্ষতিগ্রসত্ম নাও হতে পারেন। একটি বিস্ফোরণ সাধারণত ৫০ মিটারের মধ্যে বেশি সক্রিয় থাকে। ফলে যারা সামান্য আঘাত পান, তাদের অনেকেই বিষয়টি আমলে নেন না। তারা তাদের স্বাস্থ্য বিষয়ে পরীক্ষা করান না। এ ক্ষেত্রে নতুন এই প্রযুক্তি সৈন্যদের স্বাস্থ্য বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে সাহায্য করবে ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়ে আগ্রহী করবে।

নতুন এই সিস্টেমটি যন্ত্রপাতি উন্নত ও যুদ্ধযানের ডিজাইনেও পরিবর্তন আনবে। লিউ বলেন, মসিত্মষ্কের ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে যন্ত্রটি বিস্ফোরণের তরঙ্গকে অন্যদিকে প্রবাহিত করবে। অপরদিকে যুদ্ধযান সাধারণত শক-অ্যাবজরবিং সিটসহ বিস্ফোরণের প্রভাব কমানোর মতো করে ডিজাইন করা হয়। এ ক্ষেত্রে কোনো বিস্ফোরণের পর পাওয়া তথ্য থেকে যুদ্ধযানকে আরও কীভাবে উন্নত করা যায় সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন সংশ্লিষ্ট।
যখনই কোনো বিস্ফোরণের তরঙ্গ ধাক্কা দেবে অথবা বাটন চাপা হবে, তখনই সৈন্যের সেন্সর ও যন্ত্রের সেন্সর সক্রিয় হবে। লিউ বলেন, আঘাতপ্রাপ্ত সৈন্য যখন তার বেস স্টেশন কিংবা যুদ্ধযানে ফিরবেন তখনই এই তথ্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডাউনলোড হবে। আর যুদ্ধযানের ক্ষেত্রে এর অনবোর্ড কমপিউটার ডাটাকে সংরক্ষণের জন্য একটি ব্ল্যাক বক্সে পাঠাবে। তবে শিগগিরই আইইডি বাসত্মবায়ন হচ্ছে না বলে জানান লিউ। এর জন্য বেশ কিছুটা সময় দেরি করতে হবে। সে সময় পর্যন্ত এর উন্নয়নের কাজ চলবে

ফিডব্যাক : bmtuhin@gmail.com
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস