• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > ওয়েব অ্যানিমেশন
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: এস.এম. গোলাম রাব্বি
মোট লেখা:৭২
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১০ - মার্চ
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
ওয়েব
তথ্যসূত্র:
ইন্টারনেট
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
ওয়েব অ্যানিমেশন

আজকাল ইন্টারনেটে ঢুকলে বেশিরভাগ ওয়েবসাইটেই দেখা যায় অ্যানিমেশনের ছড়াছড়ি। বিভিন্ন ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করে ওয়েব ডিজাইনাররা এসব অ্যানিমেশন তৈরি করতে পারেন। এসব প্রযুক্তির মধ্যে রয়েছে অ্যানিমেটেড জিআইএফ, ডাইনামিক এইচটিএমএল, জাভা, শকওয়েভ এবং ফ্ল্যাশ। উল্লিখিত এসব প্রযুক্তির সুবিধা অসুবিধাসহ কাজের কৌশল নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে এ লেখায়। এছাড়া ওয়েব অ্যানিমেশনকে আরো সম্প্রসারিত করতে পারে এরকম সর্বাধুনিক কিছু উদ্ভাবন নিয়েও এখানে আলোচনা করা হয়েছে।

ওয়েব অ্যানিমেশনের বিবর্তন :

ইন্টারনেটের সংক্ষিপ্ত ইতিহাসের শুরু থেকে এটি ক্রমাগতভাবে বিবর্তিত হচ্ছে। দুটি বিপরীতমুখী শক্তি দিয়ে এ বিবর্তনের কিছু অংশ পরিচালিত হচ্ছে। একটি হলো ইন্টারনেট লেখক ও পাঠক যারা সব সময়ই চান ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের কনটেন্টের বিস্তারিত বিবরণ ছড়িয়ে দিতে এবং নিতে। অপর একটি দিক হলো বেশিরভাগ ব্যবহারকারীর কাছে দ্রুত পৌঁছানোর জন্য ওয়েব কনটেন্টের আকার সংক্ষিপ্তকরণ। মূলত এসব চিন্তা থেকেই ওয়েব অ্যানিমেশনের বিবর্তন শুরু হয়।

অ্যানিমেটেড জিআইএফ :

ইন্টারনেটের ইতিহাসে অনেক উল্লেখযোগ্য আবিষ্কারের মধ্যে একটি হলো ওয়েবপেজে ফটোগ্রাফ এবং টেক্সটসহ অন্যান্য ইলাসট্রেশনের সমন্বয়। এই ইলাসট্রেশনগুলো বিটম্যাপ ফাইলের আকারে আসে। একটি বিটম্যাপ ফাইল ইমেজের প্রতিটি পিক্সেলের রংকে বর্ণনা করে। এসব বিটম্যাপ ইমেজের ফাইল সাইজ কমানোর জন্য অনেক পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। সাধারণত ওয়েবসাইটে এ ধরনের ইমেজ জেপিইজি অথবা জিআইএফ ফাইল হিসেবে পাঠানো হয়।


অ্যানিমেশনের মাধ্যামে দেখানো হচ্ছে নিউক্লিয়ার রেডিয়েশন

ক্রমানুসারে সাজানো কিছু স্থির ছবিই হলো অ্যানিমেশন। সুতরাং একটি ওয়েবসাইটে অ্যানিমেশন যোগ করার সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি হলো এক সারি ইমেজ পোস্ট করা যা ব্যবহারকারীর ব্রাউজার ক্রমানুসারে প্রদর্শন করবে। এ ধরনের অ্যানিমেশনকে বলা হয় জিআইএফ অ্যানিমেশন। এটিই হচ্ছে প্রথম ওয়েব অ্যানিমেশন এবং আজও এটি বেশ জনপ্রিয়।

জিআইএফ অ্যানিমেশনের প্রধান সুবিধা হলো একে নিয়ে কাজ করা সহজ এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে বেশিরভাগ ওয়েব ব্রাউজার একে শনাক্ত করতে পারে। আর এ ধরনের অ্যানিমেশনের সবচেয়ে বড় অসুবিধা হলো ফাইলের আকার ছোট রাখার জন্য অ্যানিমেশনকে খুবই সাধারণ রাখতে হয়। কারণ একটি অ্যানিমেশনে এক সেকেন্ডে অনেক ফ্রেম প্রদর্শন করে। আর প্রতিটি ফ্রেম এক একটি সম্পূর্ণ বিটম্যাপ ইমেজ।

ডাইনামিক এইচটিএমএল :

একটু আগের আলোচনা থেকে আমরা জেনেছি, একটি ওয়েব অ্যানিমেশনে অসংখ্য ফ্রেম থাকতে পারে বলে ফাইলের আকার অনেক বড় হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এই সমস্যার সমাধানের একটি পথ হলো প্রতিটি আলাদা আলাদা ফ্রেমকে সম্পূর্ণরূপে বাদ দেয়ার পরিবর্তে একটি স্থির চিত্র নেবেন এবং একে কমপিউটারের স্ক্রিন বরাবর ঘুরাবেন। এই কাজটি আমরা কমপিউটারে সব সময়ই করে থাকি। অর্থাৎ মনিটরের স্ক্রিন বরাবর যখন আমরা মাউস কার্সর নড়াচড়া করতে থাকি।

মূলত এক সময় বেশিরভাগ ওয়েবসাইটের পেজগুলো ছিল স্ট্যাটিক ফাইল। অর্থাৎ ফাইলগুলো একবার লোড হয়ে গেলে সেগুলো সব সময়ই এক থাকত। এটি করা হতো এইচটিএমএল দিয়ে। এইচটিএমএল হচ্ছে ওয়েবপেজ তৈরির বেসিক প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ। এইচটিএমএলে সাধারণত কিছু ট্যাগ থাকে, যা একটি ওয়েব ব্রাউজারকে নির্দেশ করে, কোথায় কোথায় ওয়েবপেজের উপাদানগুলো দেখাতে হবে।

যেহেতু ইন্টারনেটের ক্রমবিবর্তন ঘটছে, তাই ওয়েব ডিজাইনাররা ওয়েবপেজগুলোর এই স্ট্যাটিক ধর্মকে একটি সীমাবদ্ধতা হিসেবে আখ্যা দিলেন। তারা তাদের ওয়েবসাইটগুলোতে ডাইনামিক কনটেন্ট যোগ করতে চাইলেন। অর্থাৎ একজন ব্যবহারকারী একটি ওয়েবপেজ ডাউনলোড করার পরেও এর কনটেন্ট পরিবর্তন হতে পারে। ডাইনামিক এইচটিএমএল অথবা ডিএইচটিএমএল হলো সফটওয়্যার প্রযুক্তির এমন একটি ধাপ, যা এই বিষয়টিকে সম্ভব করে তুলে। কিছুসংখ্যক জটিল স্ক্রিপ্টিং ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যবহার করে ডিএইচটিএমএল কনটেন্ট তৈরি করা হয়। যেমন- ইন্টারনেট ব্রাউজার ডকুমেন্ট অবজেক্ট মডেল বা ডিওএম অ্যাকসেস করার জন্য জাভা স্ক্রিপ্ট ব্যবহার করা হয়। মূলত একটি ব্রাউজার কীভাবে একটি ওয়েবপেজে দেখাবে এ ব্যাপারে সব কিছু ডিওএম নিয়ন্ত্রণ করে। উল্লিখিত স্ক্রিপ্টিং ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যবহার করে এইচটিএমএল উপাদান যেকোনো সময় পাল্টান যায়। যেমন-একটি নির্দিষ্ট শব্দের ওপর মাউস রাখায় সে শব্দটির রং জাভা স্ক্রিপ্টের মাধ্যমে পাল্টান যায়।

আসলে ওয়েব অ্যানিমেশনের উদ্দেশ্যে ডিএইচটিএমএল তৈরি হয়নি। কিন্তু এটি এমনভাবে এইচটিএমএল উপাদানগুলো পরিবর্তন করতে পারে, যা একটি ওয়েবপেজে গতি আসতে সাহায্য করে। একটি ডিএইচটিএমএল স্ক্রিপ্ট একটি ব্রাউজারকে স্ক্রিনে একটি নির্দিষ্ট ইমেজের অবস্থান বারবার পরিবর্তনের জন্য নির্দেশ দিতে পারে যাতে ইমেজটি স্ক্রিন বরাবর ঘোরাঘুরি করে এবং একে চলমান মনে হয়। যদি ভিন্ন ভিন্ন কয়েকটি ইমেজ নিয়ে এটি করা হয় তাহলে এটি আরো চমৎকার মনে হবে।

জিআইএফ অ্যানিমেশনের মতো ডিএইচটিএমএলকেও বেশিরভাগ ব্রাউজার কোনো আলাদা কম্পোনেন্ট যোগ করা ছাড়াই স্বয়ংক্রিয়ভাবে শনাক্ত করতে পারে। আসলে সব ব্রাউজারে একই রকম কাজ করবে এরকম ডিএইচটিএমএল কনটেন্ট বানানো কঠিন। এ ধরনের অ্যানিমেশন জিআইএফ অ্যানিমেশনের মতো তেমন সাধারণ নয়। মূলত নিজ থেকে কোডিং করে অ্যানিমেশন তৈরি করা খুব কঠিন। কিন্তু এখন বেশ কিছু ইউজার ফ্রেন্ডলি সফটওয়্যার অ্যাপ্লিকেশন পাওয়া যায় যেগুলো আপনার জন্য সঠিক স্ক্রিপ্ট কোড তৈরি করে দেবে। ফোন-ড্রিমওয়েভার।

প্লাগ-ইন :

নববই দশকের শুরুর দিক থেকে ইন্টারনেটের জনপ্রিয়তা বাড়তে শুরু করে এবং ওয়েবসাইটের সংখ্যাও বাড়তে থাকে। হঠাৎ করে প্রচুরসংখ্যক লোকজন ওয়েবপেজ তৈরি শুরু করলেন এবং তারা সব ধরনের মাল্টিমিডিয়া কনটেন্ট এসব পেজে যোগ করতে চাইলেন। এসব কনটেন্ট শনাক্ত করার জন্য ব্রাউজার পরিবর্তন না করে ওয়েব বিশেষজ্ঞরা ব্রাউজার প্লাগ-ইনের ধারণা প্রবর্তন করেন।

প্লাগ-ইন হলো এমন প্রোগ্রাম, যা কোনো নির্দিষ্ট ধরনের ফাইল পড়তে ও চালাতে ব্রাউজারের সাথে কাজ করে। এগুলো খুবই ছোট আকারের সফটওয়্যার। আর তাই এগুলো ডাউনলোড করার জন্য তেমন সময়ের প্রয়োজন হয় না। প্লাগ-ইন নির্দিষ্ট ধরনের ফাইল নিয়ে কাজ করতে ডিজাইন করা হয়। তাই এগুলো এমন অনেক কাজ করতে পারে যা সাধারণ ব্রাউজার করতে পারেন না।

ফ্ল্যাশ ও শকওয়েভ :

ফ্ল্যাশ বর্তমানে ওয়েবে উন্নত অ্যানিমেশনের স্ট্যান্ডার্ড ফরমেট এবং শকওয়েভ হচ্ছে আরো জটিল অ্যানিমেটেড কনটেন্ট প্রদর্শন করার একটি জনপ্রিয় ফরমেট। ফ্ল্যাশ এবং শকওয়েভ ফাইলগুলো মূলত ওয়েবপেজের অংশ হিসেবে থাকে এবং এগুলো খুবই সক্রিয়। ফ্ল্যাশ ফাইল চালানোর জন্য ফ্ল্যাশ প্লেয়ার এবং শকওয়েভ ফাইল চালানোর জন্য শকওয়েভ প্লেয়ার দরকার হয়।

শেষ কথা :

এতক্ষণের আলোচনা থেকে আমরা ওয়েব অ্যানিমেশন সম্পর্কে কিছু ধারণা পেলাম। একটি ওয়েবসাইটের সক্রিয় এবং প্রতিক্রিয়াশীল করার জন্য এতে অ্যানিমেশন যোগ করার বিকল্প নেই। আপনিও ইচ্ছে করলে ওয়েবসাইটে পছন্দমতো অ্যানিমেশন যোগ করতে পারেন এবং তখন পরিবর্তনটা লক্ষ করবেন সহজেই।


কজ ওয়েব

ফিডব্যাক : rabbi1982@yahoo.com
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস