লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম:
অঞ্জন চন্দ্র দেব
মোট লেখা:৫
লেখা সম্পর্কিত
এবার হলো বরিশালে ই-বাণিজ্য মেলা
বিশ্বায়নের এ যুগে এবং ইন্টারনেটের কল্যাণে পৃথিবীর সবকিছুতে লেগেছে অনলাইনের ছোঁয়া। এ ক্ষেত্রে ব্যবসায়-বাণিজ্যও পিছিয়ে নেই। বর্তমানে ব্যবসায়-বাণিজ্য অনেকটাই ইন্টারনেটনির্ভর হয়ে পড়েছে। আধুনিক সমাজব্যবস্থাকে বলা হয় ‘তথ্যভিত্তিক সমাজ’। একটি দেশের জন্য এই তথ্য খুব গুরুত্বপূর্ণ এবং ব্যয়বহুল একটি ব্যানার। এ তথ্যকে যে দেশ যত বেশি কাজে লাগাতে পারবে, সে দেশই তত উন্নতি লাভ করবে। আর এ তথ্যভিত্তিক সমাজব্যবস্থায় ব্যবসায়-বাণিজ্যের পদ্ধতির ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। পশ্চিমা বিশ্ব অনেক আগে থেকেই এ তথ্য-বিপ্লবকে কাজে লাগিয়ে অনেকদূর এগিয়ে গেছে। অন্যদিকে আমাদের সমাজও ক্রমশ ই-কমার্স। ব্যবসায় পদ্ধতির দিকে আরও এগিয়ে যাচ্ছে। কারণ ব্যবসায়-বাণিজ্য নানা সময়ে নানা পদ্ধতির অবলম্বন করেছে। প্রতিবারই এর যেমন গতি বেড়েছে, ঠিক তেমনি ই-কমার্স হলো ব্যবসায়-বাণিজ্যের আরেকটি পরিবর্তন। এক কথায় বলতে গেলে, ইন্টারনেটে যেকোনো ব্যবসায় পরিচালনা করাকে ইলেকট্রনিক কমার্স অথবা সংক্ষেপে ই-কমার্স বলে। তাই দেশে ই-বাণিজ্যের প্রসার ঘটানোর জন্য গত ১৫ মে থেকে ১৭ মে পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী ই-বাণিজ্য মেলা অনুষ্ঠিত হয় বরিশালে।
আয়োজক
‘ঘরে বসে কেনাকাটার উৎসব’ স্লোগান নিয়ে আয়োজিত মেলা বরিশাল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে অনুষ্ঠিত হয়। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় কমপিউটার জগৎ এবং বরিশাল বিভাগীয় কমিশন যৌথভাবে মেলার আয়োজন করেছে।
উদ্বোধন
মেলার শুভ উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব এন আই খান। মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বরিশাল বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ গাউস এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের যুগ্ম সচিব শ্যামা প্রসাদ বেপারি, বরিশাল জেলার ডেপুটি কমিশনার মো: শহিদুল আলম, সরকারি বিএম কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ফজলুল হক এবং কমজগৎ টেকনোলজিসের প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ আবদুল ওয়াহেদ তমাল।
মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব বলেন, দেশ প্রযুক্তিতে এগিয়ে যাচ্ছে, দেশে এখন প্রযুক্তি ব্যবহারের সংখ্যা বাড়ছে। দেশের একটি অন্যতম বিভাগীয় শহর বরিশালে ই-বাণিজ্যের প্রসার ঘটলে এই সেক্টরটি অনেকাংশে এগিয়ে যাবে। এখান থেকে দর্শনার্থীরা ই-বাণিজ্য কী, কীভাবে ঘরে বসেই নিজের মোবাইল বা কমপিউটারের মাধ্যমে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কেনাকাটা করা যায়, তা জানতে পারবেন। ঘরে বসেই ব্যাংকগুলোর লেনদেন সম্পন্ন করার বিষয়টি জানানোর জন্য এবারের মেলায় অনেকগুলো ব্যাংক অংশগ্রহণ করে। এ মেলায় সারাদেশ থেকে ই-বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে অংশগ্রহণের আহবান জানান আইসিটি সচিব। তিনি আরও বলেন, পেমেন্ট সিস্টেম আরও উন্নত করা হবে, যাতে খুব সহজেই পেমেন্ট করতে পারে। ই-কমার্সে ডেলিভারি ব্যবস্থা আরও উন্নত করতে হবে, সে জন্য তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় কার্যকর ব্যবস্থা নেবে। বরিশালে খুব দ্রুত হাইটেক পার্ক করা হবে।
বরিশাল বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ গাউস বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির অগ্রযাত্রায় মানুষ এখন ঘরে বসেই সব কিছু পেতে চায়। আর এই কাজটিকে সহজ করেছে ই-বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানগুলো। তিনি স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের ই-বাণিজ্য ও ই-সেবা সম্পর্কে ভালোভাবে জানার পরামর্শ দেন। তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের যুগ্ম সচিব শ্যামা প্রসাদ বেপারি বলেন, বরিশাল বাংলাদেশের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থান। এই বাণিজ্য মেলা এখানকার মানুষের অনলাইনে কেনাবেচার ক্ষেত্রে আগ্রহী করবে। মেলা উপলক্ষে মেলার আহবায়ক মোহাম্মদ আবদুল ওয়াহেদ তমাল বলেন, দেশে ই-কমার্স সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যই এ মেলার আয়োজন করা হয়েছে। ঢাকা, সিলেট ও চট্টগ্রামে ই-বাণিজ্য মেলা সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ার পর বরিশালে ই-বাণিজ্য মেলা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তিনি বিগত মেলার সাফল্য তুলে ধরেন। তিনি আরও বলেন, এই মেলার ফলে দর্শনার্থীরা তাদের কেনাকাটা মেলা থেকেই অথবা পরে কীভাবে অনলাইনের মাধ্যমে কেনাকাটা করতে পারবেন, সেটি জানতে পারবেন। বিভাগীয় পর্যায়ের পর জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এ মেলা ছড়িয়ে দেয়া হবে।
পণ্য ও অফার
মেলায় পণ্য ও সেবাপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো কেনাকাটায় বিভিন্ন ছাড় ও উপহার দেয়। ই-কমার্স সাইট আপনজন ডটকমের ক্যুইজ প্রতিযোগিতা ছিল। মাত্র ৪৮০০ টাকায় থ্রিজি সমর্থিত অ্যান্ড্রয়িড জেলিবিন অপারেটিং সিস্টেমের ৭ ইঞ্চি ট্যাবলেট মেলায় বিক্রি করে। ই-বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানগুলো পোশাক, ইলেকট্রনিক্স পণ্যসহ অনলাইনে বিক্রি করা যায় এমনসব পণ্য প্রদর্শন ও বিক্রি করে। মেলায় অংশ নেয়া সরকারি ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো তাদের বিভিন্ন সেবা প্রদর্শন করে। মেলাতেই আগ্রহীরা ব্যাংকের হিসাব চালু করতে পেরেছেন। মেলায় গিগাবাইট আয়োজিত গেমিং প্রতিযোগিতা হয়। প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় বরিশাল বিভাগের ২২টি স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরা। মেলার শেষ দিন বিজয়ীদের পুরস্কার দেয়া হয়। এই মেলার গোল্ড স্পন্সর ই-সুফিয়ানা তাদের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ই-বাণিজ্য সার্ভিসগুলো সবার সামনে তুলে ধরে। সোনালী ব্যাংক মেলা উপলক্ষে প্রিপেইড এটিএম কার্ড করার সুযোগ দেয় কোনো সার্ভিস চার্জ ছাড়া। এসএসএল কমার্জ তাদের ৬টি সার্ভিস মেলাতে প্রদর্শন করে এবং মেলার সিলভার স্পন্সর রিকোহ এশিয়া প্যাসিফিক প্রাইভেট লিমিটেড তাদের সার্ভিসগুলো মেলায় আসা দর্শনার্থীদের সামনে তুলে ধরে। রূপালী ব্যাংক মেলা উপলক্ষে অ্যাকাউন্ট ওপেন করার ব্যবস্থা করে এবং এটিএম কার্ডের জন্য আবেদন করার ব্যবস্থা করে। বাংলালায়ন ওয়াইম্যাক্স মেলায় ডিভাইসের ওপর ৫০০ টাকা ছাড় ও ডাটার ওপর ২০০ টাকা ছাড় দেয়।
সেমিনার
মেলায় দুটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সিসিএ তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ ও হাইটেক পার্ক সেমিনারের আয়োজন করে। সিসিএ তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ ‘ই-কমার্স অ্যান্ড সিকিউরিটি’ নিয়ে সেমিনার করে। সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব এন আই খান। সেমিনারে আলোচনার বিষয় ছিল ই-কমার্স সাইট অন্য সব সাইটের নিরাপত্তা নিয়ে এবং ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধা নিয়ে। হাইটেক পার্কের উদ্যোগে সেমিনারে তথ্যপ্রযুক্তি প্রসার নিয়ে আলোচনা করা হয়। মেলার অংশ হিসেবে প্রতিদিন সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।
পণ্য ও সেবা প্রদর্শন প্রতিষ্ঠানসমূহ
তিন দিনব্যাপী এই মেলায় ই-কমার্সের সাথে জড়িত দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্য ও সেবা সাধারণ মানুষের সামনে তুলে ধরেছে। মেলায় ৩০টি প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্য ও সেবা প্রদর্শন করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে : ই-সুফিয়ানা, সুফিয়ানা, এসএসএল কমার্জ, আপনজন ডটকম, জবসবিডি ডটকম, গ্রামীণফোন, বাংলালায়ন ওয়াইম্যাক্স, বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন লিঃ, রূপালী ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, অ্যারামেক্স, রিকোহ এশিয়া প্যাসিফিক প্রাইভেট লিঃ, সেন্ট-বাংলাদেশ, লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং, ক্রিয়েটিভ আইটি, সাতরঙ, গিগাবাইট, টেক ওয়ার্ল্ড, ইন্টারস্পিড মার্কেটিং সলিউশন লিঃ, জাতীয় মহিলা সংস্থা, ডেপুটি কমিশনার বরিশাল, ডেপুটি কমিশনার বরগুনা, ডেপুটি কমিশনার ভোলা, ডেপুটি কমিশনার ঝালকাঠি, ডেপুটি কমিশনার পটুয়াখালী, ডেপুটি কমিশনার পিরোজপুর, উপপরিচালক প্রাথমিক শিক্ষা, উপপরিচালক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর খামারবাড়ি, মৌ-চাষি কল্যাণ সমিতি ও কমপিউটার জগৎ। মেলা উপলক্ষে পণ্য ও সেবা ক্রেতাদের জন্য বিশেষ সুযোগ যেমন ছিল, তেমনি এ বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তুলতে বিভিন্ন ধরনের আয়োজন ছিল। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্য ক্রয়ে ছাড় ও উপহার দেয়।
স্পন্সর
মেলার প্লাটিনাম স্পন্সর কমজগৎ টেকনোলজিস, গোল্ড স্পন্সর ই-সুফিয়ানা এবং সিলভার স্পন্সর ছিল রিকোহ এশিয়া প্যাসিফিক প্রাইভেট লিঃ। মেলার গেমিং জোন পার্টনার ছিল গিগাবাইট, কমিউনিকেশন পার্টনার আপনজন ডটকম, মিডিয়া পার্টনার বরিশাল নিউজ এবং ওয়েবটিভিনেক্সট, ক্রিয়েটিভ পার্টনার ক্রিয়েটিভ আইটি, বস্নগ পার্টনার সামহোয়্যার ইন বস্নগ এবং সাতরং সিস্টেমস ছিল মার্কেটিং পার্টনার।
মেলার সমাপনী
ই-বাণিজ্য মেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসের আমু বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে সহায়ক ই-বাণিজ্য মেলার মাধ্যমে দর্শনার্থীরা ঘরে বসেই কেনাকাটাসহ যাবতীয় সেবা কীভাবে পাবে সেটি জানতে পারছে। তাই ই-বাণিজ্যকে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে দেয়া হবে। তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার, প্রসার বাড়াতে সরকার নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে। বরিশালে খুব দ্রুত হাইটেক পার্ক তৈরি করা হবে, যাতে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি পায়। বরিশালে ইন্টারনেট সংযোগ লাইন আরও বেশি শক্তিশালী করা হবে, যাতে বরিশালের মানুষ আউটসোর্সিং আরও ভালোভাবে করতে পারে এবং এর ফলে ই-কমার্সে আসবে আরও পরিবর্তন।
মেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বরিশাল বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ গাউস। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের যুগ্ম সচিব শ্যামা প্রসাদ বেপারি, বরিশাল জেলার ডেপুটি কমিশনার মো: শহিদুল আলম, বরিশাল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ মাসুদ রানা, বরিশাল জেলার পুলিশ কমিশনার মো: শামসুদ্দিন এবং মেলার সমন্বয়কারী মোহাম্মদ এহ্তেশাম উদ্দিন মাসুম।
পরে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে তিন দিনব্যাপী এ মেলার সমাপনী ঘোষণা করা হয়