• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > ফ্রিল্যান্সিংয়ের জগৎ
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: Khan Mohammed Kaiser
মোট লেখা:১
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৪ - জুন
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
ফ্রিল্যান্স
তথ্যসূত্র:
আউটসোর্সিং
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
ফ্রিল্যান্সিংয়ের জগৎ
আইসিটি ফ্রিলান্সিংয়ে কতটুকু দক্ষ হওয়া দরকার, সেটা বড় কথা নয়। বড় কথা হচ্ছে, আপনি মানসিকভাবে কতটুকু প্রস্ত্ততি নিয়েছেন। বস্ত্তত স্টাইল, ট্রেন্ডজ ও প্রযুক্তি সবকিছুই প্রতিমুহূর্তে বদলে যাচ্ছে। আপনি এই বদলে যাওয়া সময়টাতে প্রশিক্ষণ নিয়ে ফ্রিল্যান্সিংয়ে ক্যারিয়ার গড়তে পারেন, যা আপনার দক্ষতা বাড়াবে, উপার্জনের পথ সুগম করবে। প্রাথমিক পর্যায়ে কাজ পাওয়াটাই মূল বাধা। প্রোফাইল ঠিক থাকলে দক্ষতার ওপর ভিত্তি করে আপনি গুণগত কাজ করতে পারবেন। ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে সহজ উপায়ে অর্থ উপার্জন করা কোনো ব্যাপার নয়। উদাহরণ হিসেবে, একজন কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্রছাত্রী অথবা অর্ধশিক্ষিত/ঝরে পড়া/শিক্ষিত বেকার, যার ইন্টারনেট ব্যবহারের সক্ষমতা আছে, তিনি অনলাইন ফ্রিল্যান্সিং করে অর্থ আয় করতে পারেন। কাজের মধ্য থেকেই ফ্রিল্যান্সিংয়ে দক্ষতা উনয়ন্নের সুযোগ রয়েছে। ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফরমগুলো হলো : elance.com, odesk.com, freelancer.com, 99design.com
বাংলাদেশ পৃথিবীর ১১টি উন্নয়ন অগ্রগামী দেশের মধ্যে অন্যতম, যেখানে মোট জনশক্তির বেশিরভাগ যুবক-যুবতী। আর এই যুবক-যুবতীরাই ক্ষুধা ও দারিদ্রের সাথে সংগ্রাম করে সমাজজীবন ও ব্যক্তিজীবনে অনেক পরিবর্তন নিয়ে আসছে। অনলাইন কাজের ক্ষেত্রে সরকারিভাবে কোনো অতিরিক্ত সুবিধা দেয়া হচ্ছে না। সরকারিভাবে হাইটেক পার্ক প্রতিষ্ঠিত হয়নি এবং লো-কস্ট ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথ সংযোগ আজও দেয়া হচ্ছে না। তদুপরি বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সাররা আউটসোর্সিং মার্কেটপ্লেস থেকে সবচেয়ে ভালো জবটির জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। বাংলাদেশে নির্ভরযোগ্য কোনো গবেষণা প্রতিষ্ঠান থেকে ফ্রিলান্সিংয়ের কোনো তথ্য সঠিকভাবে পাওয়া যাচ্ছে না। বেসিসের তথ্যানুযায়ী, ২০১৩ সালের শেষ নাগাদ বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ফ্রিল্যান্সার বিশ্বব্যাপী কাজ করছে, যারা নিঃসন্দেহে বেকার সমস্যা কমাচ্ছে। অন্যান্য দেশের সাথে তুলনা করলে দেখা যায়, ২০০৪ সাল থেকে শুরু করে বর্তমানে বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সাররা একটি ভালো অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ ভিশন ২০২১ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সরকার এই সেক্টরকে যতটা গুরুত্ব দিয়েছে, অবকাঠামো উন্নয়নে তার যৎসামান্যই অগ্রগতি হয়েছে। ওডেস্ক ও ইল্যান্সের তথ্যানুযায়ী ভারত, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর ও ফিলিপাইনের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান নিম্নরূপ :
তথ্য বিশেস্নষণ করে দেখা যায়, বাংলাদেশ তার ভৌগোলিক অবস্থান ও জনসংখ্যার বিচারে এখনও পিছিয়ে রয়েছে।
বাংলাদেশ থেকে কতজন ফ্রিল্যান্সার কাজ করে, কতজন কাজ পাচ্ছে, তার একটি পরিসংখ্যান নিচের চিত্র থেকে সহজেই বোঝা যায়।
ফ্রিল্যান্সিংয়ে নারী-পুরুষের অবস্থান
সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা, পারিবারিক সমর্থন এবং পুরনো ধ্যান-ধারণার কারণে আজও বাংলাদেশের নারীদের ঘরে ও বাইরের কর্মপরিবেশ শতভাগ অনুকূলে নয়। অনলাইন ফ্রিল্যান্সিংয়ের জন্য ইন্টারনেট এবং কাজের জন্য যোগাযোগ স্থাপন দুরূহ ব্যাপার। তদুপরি শিক্ষিত মহিলারা তাদের জীবন চলার পথকে আরও স্বাচ্ছন্দ্যময় করে তুলতে বাড়িতে বসে ফ্রিল্যান্সিং করায় আগ্রহী হয়ে উঠছে। ঘরে বসে থাকা শিক্ষিত নারী রান্না-বান্না ও ঘর সামলানোর বাইরে এসে অনলাইন ক্যারিয়ারে প্রবেশের চেষ্টা চালাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সঠিক ও মানসম্পন্ন প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। ফ্রিল্যান্সিং আউটসোর্সিং মার্কেটপ্লেসে বাংলাদেশের নারী ফ্রিল্যান্সারের সংখ্যা নগণ্য হলেও তাৎপর্যপূর্ণ কাজ করে সাফল্য পাচ্ছে। এতে তাদের উপার্জন বাড়ছে। ২৭৭৭ জন নারীর ওপর ইল্যান্সের এক গবেষণায় দেখা যায়, শতকরা ৭৪ ভাগ নারী বলেছে ট্রেডিশনাল অনসাইট অথবা ফুলটাইম পারিবারিক কাজের বাইরে অনলাইন ফ্রিলান্সিং একটি আপটুডেট প্রযুক্তি অফুরন্ত সম্ভাবনা নিয়ে এসেছে, যেখানে সাফল্য নির্ভর করে কমিটমেন্টের ওপর।
বাংলাদেশে নারী ও পুরুষের জন্য প্রযুক্তিনির্ভর কাজের ক্ষেত্রে নারীরা উৎসাহ পেলে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। ইল্যান্সের গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশে শতকরা ৪০ জন পুরুষের ফ্রিল্যান্সিংয়ে আগ্রহ রয়েছে। অন্যদিকে নারীদের সংখ্যা মাত্র ৫ ভাগ। শতকরা ৫৫ জন নারী ও পুরুষ যাদের ফ্রিল্যান্সিংয়ের সুযোগ রয়েছে, তারা বিষয়টি অবগত নয়। তাহলে কারা প্রশিক্ষণ নেবে? ধরুন, রাজধানীসহ সারাদেশের বিভিন্ন উপজেলা ও জেলার স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সামনে নিজ সন্তানের নিরাপত্তার চিন্তা মাথায় নিয়ে বসে থাকা অভিভাবকের সংখ্যা প্রতিদিন আনুমানিক ২০ লক্ষাধিক। উদাহরণস্বরূপ, এই বিপুল জনগোষ্ঠীকে যদি ফ্রিল্যান্সিংয়ের আওতায় নিয়ে আসা যায়, তাহলে বাংলাদেশে ফ্রিলান্সিংয়ে জেন্ডার গ্যাপ থাকবে না। আমাদের দেশে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ফ্রিল্যান্সিং কার্যক্রম ছড়িয়ে দিতে পারলে শতকরা ৫০ ভাগকে এর আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব। পরিসংখ্যানটি নিম্নরূপ :
বর্তমানে আছে :
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ১০%
প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ৫%
অন্যান্য ইনস্টিটিউট ১%
বাড়ার সম্ভাবনা :
৫০% বাড়ার সম্ভাবনা
৫০% বাড়ার সম্ভাবনা
৫০% বাড়ার সম্ভাবনা
ফ্রিল্যান্সিংয়ে কী কী কাজ করতে হয়
ফ্রিল্যান্সাররা কী ধরনের কাজ করতে পারবে এবং কখন কাজের জন্য সময় দিতে পারবে, তার ওপর নির্ভর করবে তার আগ্রহের কাজের প্ল্যাটফর্ম। সাধারণত নিম্নলিখিত বিষয়ের ওপর একজন ফ্রিল্যান্সিং করে থাকে :
০১. ওয়েব ডেভেলপমেন্ট : ওয়েব ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ডিজাইন, লোগো, ব্যানার এবং ওয়েবসাইট টেমপ্লেট ডিজাইন, ফুল ওয়েবসাইট ডিজাইন।
০২. ই-কমার্স : জুমলা, ম্যাজেন্টো, ওপেনচার্ট, অ্যামাজন এসইএস, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং ইত্যাদি।
০৩. রাইটিং : বস্নগ রাইটিং, আর্টিক্যাল রাইটিং, রাইটিং ফর কনটেন্ট ইত্যাদি।
০৪. ইলাস্ট্রেটরস : গ্রাফিক্স, ভেক্টর ইমেজ, থ্রিডি অ্যানিমেশন ইত্যাদি।
০৫. ডিজাইন : ওয়েবসাইট অ্যান্ড পেজ ডিজাইন, লোগো ডিজাইন ইত্যাদি।
কাজ করার আগ্রহ এবং পূর্বদক্ষতা এ ক্ষেত্রে আপনাকে প্রশিক্ষণের বিষয় নির্বাচন করতে সহায়তা করবে। তবে রিফ্রেসার ট্রেনিং, অ্যাডভান্সড ট্রেনিং ও বেসিক ইংলিশ লার্নিং প্রয়োজন। সুতরাং বেসিক যে যে বিষয় জানতে গুরুত্ব দিতে হবে, সেগুলো হলো : ০১. ওডেস্ক ও ইল্যান্স সম্পর্কে জানা; ০২. স্কিল বেসিক জবের জন্য আবেদন; ০৩. আবেদনপত্র লেখার টিপস; ০৪. ক্লায়েন্টের সাথে কথোপকথন; ০৫. বেসিক ইংলিশ; ০৬. প্রজেক্ট ট্রেনিং, কাজ শুরুকরণ ও রিপোর্টিং এবং ০৭. পেমেন্ট প্রসিডিউর ইত্যাদি জানা।
এখন আসা যাক আগের কথায়। একজন ফ্রিল্যান্সার হওয়ার পূর্ব শর্তগুলো কি কি হওয়া দরকার?
০১. মানসিক প্রস্ত্ততি; ০২. অথেনটিক তথ্যনির্ভর প্রোফাইল তৈরি; ০৩. একটি পারফেক্ট ওভারভিউ; ০৪. পারফেক্ট স্কিলস; ০৫. স্কিল অনুযায়ী জবের জন্য আবেদন ও ০৬. ইংরেজিতে ইন্টারভিউ সম্পন্ন করা।
বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সাররা সাধারণত ওয়েবসাইট মেইনটেইন অ্যান্ড এডিটিং, এসইও ব্যাক লিঙ্ক, আর্টিকেল সাবমিশন, সোশ্যাল বুক মার্কিং, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং, ডিরেক্টরি সাবমিশন, ওয়েব টু লিঙ্ক ক্রিয়েশন, ওয়েব রিসার্চ, লিস্ট ক্রিয়েশন, এক্সেলে ডাটাবেজ ক্রিয়েশন, ডাটা এন্ট্রি, প্রোডাক্ট এন্ট্রি ইত্যাদি কাজ করেন।
গত দুই বছরে বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সারদের সংখ্যা শতকরা ১৫০ ভাগ বেড়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশকে টপ ২০ আইটি আউটসোর্সিং ডেস্টিনেশন হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। স্বল্পমূল্য ও পেশাদারিত্বের নিরিখে বাংলাদেশ গ্লোবাল আউটসোর্সিং মার্কেটের বেশিরভাগ কাজ খুব শিগগিরই দখল করতে পারবে। ঈর্ষান্বিত হওয়ার মতো গল্প হলো, বাংলাদেশ ২০০৯ সালে ওডেস্কের মোট আউটসোর্সিং কর্মঘণ্টার মাত্র ২ ভাগ করলেও আজ ১০ ভাগ কর্মঘণ্টা দিচ্ছে। বর্তমানে ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিংয়ে বাংলাদেশ তৃতীয় কন্ট্রাক্টকারী দেশ। আমরা ফিলিপাইন ও ভারতের নিচে অবস্থান করতে চাই না বরং প্রথম অবস্থানে উঠে আসবে বাংলাদেশ- এই আমাদের প্রত্যাশা
ফিডব্যাক : kaisarbttb@gmail.com

পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
২০১৪ - জুন সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস