• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > আউটসোর্সিং হতে পারে আমাদের জন্য আশীর্বাদ
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: কজ
মোট লেখা:১০৪১
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৪ - নভেম্বর
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
মতামত
তথ্যসূত্র:
পাঠকের মতামত
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
আউটসোর্সিং হতে পারে আমাদের জন্য আশীর্বাদ
আউটসোর্সিং হতে পারে আমাদের জন্য আশীর্বাদ

আউটসোর্সিংকে আমি সব দিক থেকে ইতিবাচক বিষয় বলে গণ্য করে থাকি। কারণ, এটি এমন একটি সেক্টর, যেখানে শর্টকাট, দুই নম্বরি অথবা ঘুষের কোনো স্থান নেই। সেদিক দিয়ে চিমত্মা করলে আউটসোর্সিং অনেক ভালো একটি পেশা।

ছাত্র বয়সে আমি নিজেও অনেক ছাত্র পড়িয়েছি অর্থের প্রয়োজনে। কিন্তু টিউশনি দেশের অর্থনীতির জন্য কতটা উপকারী, সে ব্যাপারে আমার যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। আমাদের দেশে ছাত্রজীবনে শিক্ষিত তরুণদের জন্য খুব বেশি কাজের ক্ষেত্র আছে বলে আমার মনে হয় না। আউটসোর্সিং আমাদের সেই দিকটিতে অনেক ক্ষেত্র উন্মোচন করে দিয়েছে। কেউ হয়তো ইংরেজি ভালো পারে। তার যেমন কাজের সুযোগ রয়েছে, তেমনি গ্রাফিক্স ডিজাইন, অনলাইন মার্কেটিং, সিইও, রিসার্চ অ্যাসিসট্যান্ট ইত্যাদি নানা ধরনের কাজের সুযোগ তৈরি হয়েছে আমাদের তরুণদের জন্য, যা পাঁচ বছর আগেও চিমত্মা করা যেত না।

আমাদের মেধাবী তরুণদের আউটসোর্সিংয়ে আরও অনেক বেশিসংখ্যক আসা দরকার। কারণ, এর বিকল্প বাংলাদেশে আসলেই খুব হতাশাজনক। বরং কিছু মেধাবী সরকারি চাকরির মায়া এবং কর্পোরেট জগতের রঙিন হাতছানি উপেক্ষা করে আউটসোর্সিংয়ের মতো একটি চ্যালেঞ্জিং পেশায় প্রথমে কর্মী ও পরে মেধা খাটিয়ে উদ্যোক্তা হিসেবে নামতে পারলে তা আমাদের দেশের জন্য এক বড় আশীর্বাদ হবে।

অশিক্ষিত বা স্বল্পশিক্ষিত লোকদের জন্য গার্মেন্ট সেক্টরে প্রায় ৩০-৪০ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। ঠিক তেমনি আউটসোর্সিংয়ে যদি ১০ লাখ শিক্ষিত লোকের কর্মসংস্থান হয়, তাহলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক চিত্রই বদলে যাবে। গার্মেন্ট সেক্টরে বেতন খুব কম। আউটসোর্সিংয়ে কিন্তু তেমনটি নয়। বরং এই খাতে মাসিক আয়ের সম্ভাবনা চাকরির বেতনের চেয়ে বেশি বলেই অনেকে এদিকে ঝুঁকছে। এই খাতে যত বেশি লোক দক্ষ ও সফল হবে, তা আমাদের ভবিষ্যতের জন্য এক বিশাল আশীর্বাদ হবে। বাংলাদেশে এখন ই-কমার্সের প্রসার ঘটছে। এরপর আসছে ই-লার্নিংয়ের দিন। সামনে আসবে ক্লাউড কমপিউটিং, বিগ ডাটা, গেমিং, মোবাইল অ্যাপস ও অ্যানিমেশনের দিন।
আইসিটি সেক্টরে বাংলাদেশের জন্য সত্যি এক দারুণ সম্ভাবনা রয়েছে। শুধু দরকার এই খাতে প্রচুর পরিমাণে দক্ষ কর্মশক্তি। এমনকি আমাদের দেশের ভেতরেই অনেক কোম্পানি ও প্রজেক্টের জন্য অনেক লোকের দরকার হবে। আমরা যদি তা না করতে পারি, তাহলে এসব চাকরি বিদেশীদের হাতে চলে যাবে- এটাই বাস্তবতা।

ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে খুব ভালোমতোই জানা, ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং কোনো ছেলেখেলা নয়। প্রচ- ধৈর্য ও অধ্যবসায় থাকতে হয় এবং অমানুষিক পরিশ্রম করতে হয়। এখানে লড়াই করতে হয়। প্রথম প্রথম কাজ পাওয়া খুব কঠিন। কাজ পাওয়ার পরও টিকে থাকতে হয়। কোয়ালিটি মেইনটেইন করতে হয়। অনেককে আবার আমেরিকান সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে সারা রাত কাজ করতে হয়। মোটেও আনন্দের জীবন নয়। ছুটি বলতে কিছু নেই। সবসময় কাজ করতে হয়। সফল হতে হলে ঠকতে হবে, লড়তে হবে- সেই গস্ন্যাডিয়েটর সিনেমার গস্ন্যাডিয়েটরের মতো।

আউটসোর্সিং এমন এক জগত, যেখানে যেকোনো চাকরির চেয়ে অনেক বেশি কষ্ট করতে হয়। কিন্তু তারপরও আমি এ সেক্টরকে আমাদের দেশের জন্য খুব বড় একটা আশীর্বাদ বলে মনে করি। আমাদের প্রজন্মের তরুণদের কষ্ট ও আত্মত্যাগে যদি এক দশক পরে বাংলাদেশে কোনো গরিব লোক না থাকে, তবে এরচেয়ে ভালো আর কী হতে পারে।

সবশেষ কথা- বাংলাদেশে মানবসম্পদ ছাড়া কিছুই নেই। গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি হওয়াতে অশিক্ষিত লোকদের একটা গতি হয়েছে। এখন আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে শিক্ষিত লোকের যদি কিছুটা গতি হয়, তবে তা আমাদের জন্যই মঙ্গল।
রাজিব আহমেদ
ঢাকা

সফটওয়্যার সেবা রফতানিতে বিলিয়ন ডলারের স্বপ্ন!
বাংলাদেশের সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তি সেবা খাতের বাণিজ্যিক সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস তথা বেসিস ২০১৮ সালের মধ্যে সফটওয়্যার ও সেবা খাতের রফতানি ১ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছানোর সংকল্প ঘোষণা করেছে। একই সাথে এক এক করে আরও অনেক খাতে ব্যাপক উন্নয়নের ওয়াদা করেছে।

বর্তমানে সফটওয়্যার ও সেবা খাতে সরকারিভাবে ১০০ মিলিয়ন এবং বেসরকারিভাবে ২৫০ মিলিয়ন ডলারের সফটওয়্যার রফতানি হয়ে থাকে বলে মনে করা হয়। এমন এক অঙ্ককে ১০ গুণ বা ৪ গুণ বাড়ানোটাই এক বিরাট চালেঞ্জ। গত বছরে রফতানি আয় খুব সামান্য বেড়েছে। এ হার শতকরা ১৫ ভাগের বেশি নয়। এছাড়া বেসিসের তথ্যমতে, গত বছর আউটসোর্সিংয়ে ২৬তম স্থানে রয়েছে। এর আগের বছরে আউটসোর্সিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৩০। গত পাঁচ বছরে আউটসোর্সিং খাতে বাংলাদেশ মাত্র পাঁচ ধাপ এগিয়েছে। অর্থাৎ এ খাতে আমাদের অগ্রগতি খুবই কম। নির্দ্বিধায় বলা যায, বেসিসের ঘোষিত স্বপ্নের তুলনায় এই অর্জন খুবই কম। এ হারে বা গতিতে যদি আমাদের অগ্রগতি হয়, বেসিসের স্বপ্ন পূরণ কোনোভাবেই সম্ভব হবে না।

বেসিস অর্থমন্ত্রীকে দিয়ে ‘ওয়ান বাংলাদেশ’ সেস্নাগান উদ্বোধন করে যে স্বপ্ন পুরো জাতির সামনে তুলে ধরে, সেটির প্রথম বছর যেভাবে গেছে এবং যে প্রবৃদ্ধি এ বছরে আমরা পেয়েছি, তাতে কোনোভাবেই মনে করা যায় না বেসিস ঘোষিত সে লক্ষ্য পূরণ হওয়ার মতো কিছু একটা হয়েছে।

রসিকতার ছলেই হোক বা কথার কথা হোক, আমাদের দেশের সাধারণ জনগণ প্রায়শ বলে থাকেন- স্বপ্ন যদি দেখতেই হয় তাহলে বড় বড় স্বপ্ন দেখব। কিংবা বলব- যখন বেশি বেশি বলব, তখন কম বলব কেন? এসব ক্ষেত্রে তো দোষের কিছুই নেই। কেননা, এখানে ট্যাক্স দিতে হয় না। এমন কথা প্রযোজ্য- ২০১৮ সালের মধ্যে সফটওয়্যার ও সেবা খাতের রফতানি ১ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছানোর সংকল্পের ক্ষেত্রে। কেননা, যেসব আনুষঙ্গিক উন্নয়ন হওয়ার কথা, সেসব খাতের তেমন কোনো অগ্রগতি চোখে পড়ে না।

সফটওয়্যার ও সেবা খাতের রফতানি ১ বিলিয়ন ডলারের স্বপ্নপূরণ হয়তো খুব একটা কঠিন কিছু নয় যদি সরকার ও ব্যবসায় সমিতিগুলো নীতি ও কর্মপন্থার ক্ষেত্রে সঠিক পথে চলতে পারত। কিন্তু সেটি হয়নি। অর্থাৎ সরকার ও ব্যবসায়ী সমিতিগুলো এত ঢাকঢোল পেটানোর পরও আমরা প্রত্যাশিত ফল পায়নি। এমনকি এখনও সফটওয়্যার রফতানি ও দেশীয় শিল্প খাত গড়ে তোলার নীতি ও কর্মপন্থা সঠিক নয়।

সরকার ও বেসিস দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারকে চরমভাবে উপেক্ষা করে যাচ্ছে। দুই পক্ষই এক ভ্রান্ত-ধারণা অাঁকড়ে ধরে তাদের লক্ষ্য পূরণে কাজ করে যাচ্ছে। উভয় পক্ষই মনে করে দুবাই, আমেরিকা, ব্রিটেন, জার্মানি প্রভৃতি দেশে মেলা করলেই সফটওয়্যার রফতানি বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে।

এছাড়া সরকার বা বেসিস কেউ সফটওয়্যার রফতানির অবকাঠামো উন্নয়নের কথা ভাবছে না। নতুন উদ্যোক্তাদের প্রবেশের ক্ষেত্র সৃষ্টি করার উদ্যোগই এখন পর্যন্ত দেখা যায়নি। তবে দেখা গেছে সভা-সেমিনারে এ নিয়ে নীতি-নির্ধারকদের গলাবাজি ও চাপাবাজি। এ ছাড়া অভ্যন্তরীণ বাজার সৃষ্টির লক্ষ্যে সরকার ও ট্রেডবডির গুরুত্ব দেয়া ছিল মেধাসম্পদের ওপর, যা নতুন উদ্ভাবনের জন্য প্রেরণাদায়ক হিসেবে কাজ করতে পারে। অথচ এ বিষয়টিও সম্পৃর্ণরূপে উপেক্ষিত, যা মোটেও কাম্য নয়। বিশেষ করে যখন সফটওয়্যার ও সেবা রফতানিতে বিলিয়ন ডলারের স্বপ্ন দেখছে বেসিস ও বাংলাদেশ।

সাফায়েত হোসেন
সবুজবাগ, পটুয়াখালী

পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
২০১৪ - নভেম্বর সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস