• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > বাংলাদেশ কমপিউটার কাউন্সিল বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় আইটিতে গড়বে একুশ শতক উপযোগী দক্ষ মানবসম্পদ
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: অজিত কুমার সরকার
মোট লেখা:৫
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৪ - নভেম্বর
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
আইসিটি
তথ্যসূত্র:
রির্পোট
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
বাংলাদেশ কমপিউটার কাউন্সিল বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় আইটিতে গড়বে একুশ শতক উপযোগী দক্ষ মানবসম্পদ
বাংলাদেশে জনসংখ্যার প্রায় ৬৫ শতাংশই তরুণ। এদের বয়স ৩৫-এর নিচে। এরা কর্মক্ষম। কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড তথা জনসংখ্যাতাত্ত্বিক লভ্যাংশে প্রবেশ করেছে। ‘সিআইএ-দ্য ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্টবুক’-এর অভিমত, যখন কোনো দেশের কর্মক্ষম লোকের সংখ্যানুপাতিক সবচেয়ে বেশি থাকে, তখন একটি দেশ ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডে প্রবেশ করে। আসছে দশকে উন্নত দেশগুলোতে নির্ভরশীল মানুষের সংখ্যা বাড়বে। এর ঠিক বিপরীত চিত্র দেখা যাবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে। দেশটিতে নির্ভরশীল মানুষের সংখ্যা কমার পাশাপাশি কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা বেড়ে চলার বর্তমান ধারা তখনও চলবে। এসব কর্মক্ষম মানুষ একুশ শতকের উপযোগী দক্ষ হলে দেশ দ্রুত এগিয়ে যেতে পারে। কিন্তু এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ২০০৯ সাল থেকে সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে আসছে। সম্ভাবনাময় আইসিটি খাতের দ্রুত বিকাশে কর্মক্ষম শিক্ষিতদের দক্ষ করে তোলার নানা প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে লিভারেজিং আইসিটি ফর গ্রোথ, এমপস্নয়মেন্ট অ্যান্ড গভর্ন্যান্স তথা এলআইসিটি প্রকল্প। আইসিটি খাতের উন্নয়নে এ প্রকল্পটি বিশ্বমানের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ৩৪ হাজার দক্ষ মানব গড়ে তুলবে। এ প্রকল্পের নানা দিক তুলে ধরেই এ প্রচ্ছদ প্রতিবেদন।
এক সময় স্পষ্ট হয়ে যাবে- যে জাতি তথ্যপ্রযুক্তিতে পিছিয়ে, সে জাতি সার্বিকভাবে পিছিয়ে। যে শিক্ষায় তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার নেই, সে শিক্ষা অসম্পূর্ণ। বাস্তবে যে দেশে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার যত বেশি, সে দেশ ততটা অগ্রসর, তাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থানও ভালো। কারণ, আইসিটি ওইসব দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বোস্টন কনসাল্টিং গ্রুপের (বিসিজি) এক সমীক্ষায় দেখা যায়, ২০১২ সালে জি-২০ভুক্ত দেশের অর্থনীতিতে আইসিটি খাতের অবদান ছিল ২ দশমিক ৪ ট্রিলিয়ন (১ ট্রিলিয়ন = ১ লাখ কোটি) মার্কিন ডলার। ২০১৬ সালে তা বেড়ে দ্বিগুণেরও বেশি হবে। এই যখন বাস্তবতা, তখন বাংলাদেশ তো আর বসে থাকতে পারে না। ২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশে পুরোদমে শুরু হয়েছে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের কাজ। একটি রূপকল্পকে সামনে রেখে এই ডিজিটালায়নের অভিযাত্রা শুরু। নেয়া হয় নানা কর্মসূচি। বেশ কিছু কর্মসূচি বাস্তবায়িতও হচ্ছে দ্রুত। আর তা বাস্তবায়িত হচ্ছে মূলত সুনির্দিষ্ট একটি লক্ষ্য নিয়ে- ২০১৭ সালের মধ্যে দেশের অর্থনীতিতে আইসিটির অবদান কমপক্ষে ২ শতাংশ নিশ্চিত করা। প্রধানমন্ত্রীর আইসিটিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় আগামী পাঁচ বছরে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের রফতানি আয় ১০০ কোটি মার্কিন ডলারে উন্নীত করার ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে প্রয়োজন আইটিতে বিশ্বমানের দক্ষ মানবসম্পদ।
ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের চারটি স্তম্ভের প্রথমটি হচ্ছে- ‘একুশ শতকের উপযোগী দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলা।’ ফলে শুরুতেই সরকার সর্বাধিক গুরুত্ব দেয় দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার ওপর। সরকারি উদ্যোগে নেয়া হয় নানা প্রকল্প। এসব প্রকল্পেরই একটি আলোচ্য এলআইসিটি প্রকল্প। বিশ্বব্যাংকের একটি সমীক্ষাকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নিয়ে সরকার এ প্রকল্পটি হাতে নেয়। ২০০৯ সালে বিশ্বব্যাংক এ সমীক্ষাটি চালায়। ওই সমীক্ষায় বলা হয়, বাংলাদেশে ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত ও মেধাসম্পন্ন তরুণের সংখ্যা প্রচুর। এখানে কম দামে কেনা যায় শ্রম। ফলে সফটওয়্যার প্রোগ্রামিং, গ্রাফিক্স ও অ্যানিমেশনে এ শিল্পের বিকাশের সম্ভাবনা প্রচুর। ফলে বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তি ও তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর সেবাশিল্প তথা আইটিইএস বিকাশের সুযোগ রয়েছে। বিশ্বব্যাংকের সমীক্ষার আলোকে সরকার এলআইসিটি প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়। জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও তরুণদের কর্মসংস্থান বাড়ানোয় সহায়ক এ প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক ৭ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ সহায়তার অঙ্গীকার করে। সব ধরনের আনুষ্ঠানিকতা শেষে ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে পাঁচ বছর মেয়াদী এলআইসিটি প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়। সরকারের আইসিটি মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ কমপিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।
প্রকল্পটি হাতে নেয়ার যৌক্তিকতা তুলে ধরে বিসিসি’র নির্বাহী পরিচালক এসএম আশরাফুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ বর্তমানে শ্রম ও শিল্পনির্ভর অর্থনীতি থেকে তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর অর্থনীতিতে রূপান্তরের দিকে এগিয়ে চলেছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গৃহীত সরকারের উদ্যোগ, প্রকল্প ও কর্মসূচিগুলো তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর অর্থনীতি ও জ্ঞানভিত্তিক সমাজে রূপান্তরের অভিযাত্রাকে আরও বেগবান করেছে। এলআইসিটি এমন একটি প্রকল্প, যা তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক অর্থনীতি গড়ে তোলায় বড় মাপের ভূমিকা পালন করবে। বিশেষ করে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে এর ভূমিকা হবে উল্লেখ করার মতো। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তরুণদের হাত ধরেই এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। দেশের মোট জনসংখ্যার ৬৫ শতাংশই তরুণ। শিক্ষিত তরুণদের আইটি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত করতে হবে। যাতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাত পরিপূর্ণভাবে বিকশিত হয়। আর এটা সম্ভব হলেই শুধু আমরা তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর অর্থনীতি ও জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার দিকে দ্রুত এগিয়ে যেতে পারি। তিনি আরও বলেন, এলআইসিটি প্রকল্পের অন্যতম একটি উদ্দেশ্য দেশের ৩৪ হাজার তরুণ-তরুণীকে বিশ্বমানে প্রশিক্ষিত দক্ষ করে তোলা।
এলআইসিটি প্রকল্পের তিনটি উপাদান : ০১. আইটি এবং আইটি সেবা সক্ষম শিল্প/প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন; ০২. ই-গভর্নমেন্ট এবং ০৩. প্রকল্প ব্যবস্থাপনায় সহযোগিতা। এর মধ্যে প্রথম উপাদানটি আইটি এবং আইটি সেবাসক্ষম শিল্প/প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের জন্য দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার কাজ জোরালোভাবে চলছে এ প্রকল্প। ন্যাশনাল ডাটা সেন্টারের সম্প্রসারণ, সাইবার সিকিউরিটি নিশ্চিত করার সক্ষমতা তৈরি এবং ই-গভর্ন্যান্স প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সরকারি কর্মকর্তাদের সক্ষমতা তৈরির কাজও এগিয়ে চলছে।
বিশ্বমানে প্রশিক্ষিত ৩৪ হাজার তরুণ
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের ২০১২ সালের প্রতিবেদন মতে, ওই বছর দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক-স্নাতকোত্তরসহ উচ্চতর ডিগ্রি পেয়েছেন প্রায় সাড়ে তিন লাখ। এদের মধ্যে ৯২ হাজার ৭৪৭ জন সণাতক পাস, ১ লাখ ২৮ হাজার ৪৮১ জন সণাতক সম্মান এবং ২১ হাজার ৩৮০ জন কারিগরি সণাতক ডিগ্রি নেন। এ ছাড়া ১ লাখ ১৯ হাজার ৮৯৪ জন সণাতকোত্তর ডিগ্রি, ২ হাজার ৩৮৫ জন কারিগরি সণাতকোত্তর এবং ১ হাজার ৭৬৩ জন এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। অন্যদিকে বিভিন্ন বিষয়ে ডিপেস্নামা বা সার্টিফিকেট অর্জন করেন ২ হাজার ৩৩৫ জন। তবে কারিগরি ও বিশেষায়িত যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের চাকরির বাজারে ভালো চাহিদা আছে। এর আগে ব্রিটিশ সাময়িকী ইকোনমিস্টের ‘ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট’ ‘হাই ইউনিভার্সিটি এনরোলমেন্ট, লো এমপস্নয়মেন্ট’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলেছে, বর্তমানে বাংলাদেশের ৪৭ শতাংশ সণাতকই বেকার। এমন বাস্তবতাকে বিবেচনায় রেখে আইসিটি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষিত তরুণদের দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তোলার জন্যই এই এলআইসিটি প্রকল্প।
এ প্রকল্পের আওতায় চার ধরনের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে : ০১. সণাতক ও সণাতকোত্তরদের জন্য ৪ হাজার ফাস্ট ট্রাক ফিউচার লিডার (এফটিএফএল) প্রশিক্ষণ কর্মসূচি; ০২. সিএসই, ট্রিপল ই এবং বিজ্ঞানে সণাতক ১০ হাজার তরুণ-তরুণীকে বিশেষায়িত আইটি প্রশিক্ষণ (টপ-আপ আইটি ট্রেনিং); ০৩. ২০ হাজার শিক্ষিত তরুণ-তরুণীকে আইটি সেবাসক্ষম ফাউন্ডেশন প্রশিক্ষণ; ০৪. বিভিন্ন তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের ২ হাজার মধ্যম স্তরের কর্মকর্তার ব্যবস্থাপনা প্রশিক্ষণ।
এলআইসিটি প্রকল্পে রয়েছে একটি দক্ষ টিম। আইটি সেক্টরে কাজ করে নিজেদের সুপরিচিত করেছেন এমন লোকদের নিয়েই এ টিম। প্রকল্প পরিচালক মো: রেজাউল করিম, এনডিসি ও ডাটা সেন্টারের পরিচালক ও এলআইসিটি উপ-প্রকল্প পরিচালক তারেক এম বরকতউলস্নাহর সার্বিক তত্ত্বাবধানে এ টিম কাজ করছে। রেজাউল করিম বলেন, টিম ওয়ার্কের মাধ্যমে আমরা প্রকল্পের বিভিন্ন দিক বাস্তবায়ন করছি। প্রকল্পটির অন্যতম একটি প্রধান উপ-উপাদান বা সাব-কম্পোনেন্ট হচ্ছে বিশ্বমানের প্রশিক্ষণে আইটি খাতে ৩৪ হাজার দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলা। এ কাজে আমরা অনেকদূর এগিয়ে গেছি। অনলাইনে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে প্রশিক্ষণার্থী বাছাই এবং মানসম্মত পাঠক্রম তৈরি করে তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিজ্ঞ শিক্ষকদের দিয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। প্রকল্পের সামগ্রিক অগ্রগতি সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বিসিসি ইতোমধ্যে এর ৬টি সাব-কম্পোনেন্টের আন্তর্জাতিক দরপত্র আহবান করেছে। কয়েকজনকে অ্যাওয়ার্ডও দেয়া হয়েছে।
বিসিসিতে অবস্থিত ডাটা সেন্টারের সম্প্রসারণ, তথ্য সুরক্ষার জন্য সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং সরকারের ই-গভর্নমেন্ট প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য বাস্তবায়নে সরকারি কর্মকর্তাদের সক্ষমতা তৈরিতে কাজ করছে এলআইসিটি প্রকল্প। এসব সাব-কম্পোনেন্ট বাস্তবায়নে মুখ্য ভূমিকা পালন করছেন তারেক এম বরকতউলস্নাহ। তিনি বলেন, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে নানা প্রকল্প ও কর্মসূচির মাধ্যমে দেশে আইসিটি খাতের প্রসার ঘটছে। বেসরকারি খাতেও ডিজিটালায়নের লক্ষ্যে নানা উদ্যোগ বাস্তবায়িত হচ্ছে। ফলে অনলাইনভিত্তিক প্রচুর তথ্য তৈরি হচ্ছে। এসব তথ্যের সুরক্ষার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এলআইসিটি প্রকল্প বিসিসি’র ডাটা সেন্টার সম্প্রসারণে সহযোগিতা করছে। প্রস্তাবিত প্রযুক্তি ফাউন্ডেশন বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার তথ্যগুলো একটি অংশীদারী ডাটা সেন্টারে তুলে দেবে। তথ্য বিনিময় ও মানসম্মত কাঠামো ব্যবহারে সহযোগিতা দেবে এবং তথ্য-নিরাপত্তা নীতি ও মানের মাধ্যমে ডাটা সুরক্ষা করবে। এর পাশাপাশি সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য এবং ই-গভর্নমেন্ট বাস্তবায়নে সহযোগিতা দিতে সরকারি কর্মকর্তাদের সক্ষমতা তৈরিতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছে এলআইসিটি প্রকল্প।
বার্ডে এক মাসের প্রশিক্ষণ
২৭ বছর বয়েসী কামরুল ইসলাম ঢাকার ইবাইস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে (ইইই) সণাতক হন ২০১৩ সালে। পাঁচ বছর আগে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর থেকে জীবনের গতিপথ কোন দিকে বাঁক নেয়- এ নিয়ে ভাবনার অন্ত ছিল না। ছোট একটা চাকরিও করেছেন কিছুদিন। কিন্তু অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা ভেবে চাকরি ছেড়ে দেন। এক সময় পত্রিকার মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন, ভবিষ্যৎ আইটি লিডার হওয়ার জন্য আবেদনপত্র চাওয়া হয়েছে। দেরি না করে তিনি অনলাইনে আবেদনপত্র জমা দেন। বাছাইয়ে টিকেও গেলেন। এরপর অনলাইনে পরীক্ষা ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেয়া এবং চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হয়ে কুমিলস্নায় বাংলাদেশ পলস্নী উন্নয়ন একাডেমিতে (বার্ড) প্রশিক্ষণ নেন। সবই যেন স্বপ্নের মতো। ‘আমি আমার পথের ঠিকানা খুঁজে পেয়েছি। এফটিএফএল কর্মসূচিতে প্রশিক্ষণ আমাকে সত্যিকার অর্থেই ভবিষ্যৎ আইটি লিডার হওয়ার পথ বাতলে দিয়েছে।’ বার্ডে এই প্রতিবেদকের সাথে কথা প্রসঙ্গে এমন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলেন কামরুল।
মাত্র এক মাসের প্রশিক্ষণে কামরুল এখন প্রচ- আত্মবিশ্বাসী এক যুবক। শুধু কামরুল নন, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কমপিউটার সায়েন্স অ্যান্ড টেকনিক্যাল এডুকেশনে (সিএসটিই) সণাতক তাসিনুল আবরার ও ইশরাত শারমিন, ঢাকার নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয় ও ইস্টওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফাইন্যান্সে সণাতক এসএম আকবর ও আলী এমদাদের সাথে কথায় এমন অভিব্যক্তিই জানা গেল। মোট ১৫০ জন সণাতক তরুণ-তরুণী, যারা এফটিএফএল কর্মসূচিতে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন, তারা প্রত্যেকেই যেনো স্বাবলম্বী হওয়ার মন্ত্রে উজ্জীবিত।
কী ধরনের প্রশিক্ষণে এরা এতটা আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠছেন, তা জানার জন্য এ প্রতিবেদক এ বছরের জুনে কুমিলস্না বার্ডে সরেজমিনে প্রশিক্ষণকর্ম পরিদর্শন করেন। সেখানে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন প্রকল্প ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ সরকার আবুল কালাম আজাদ। ২০ জুন সকালের কয়েকটি ক্লাস ঘুরে দেখার সময় জানা যায়, কর্পোরেট ট্রেনিং অ্যান্ড লার্নিং, হিউম্যান ক্যাপাসিটি ডেভেলপমেন্ট ও হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞ জিশু তরফদার এবং ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের (আইইউবি) ইংরেজি শিক্ষক মঈন উদ্দিন চৌধুরী বিগত তিন সপ্তাহ ধরে নেগোসিয়েশন স্কিলস, ক্রিয়েটিভিটি, ইনোভেশন, বিজনেস এথিক্সসহ কমিউনিকেশন স্কিলের ওপর পড়িয়েছেন। এরা সেসবের রিক্যাপ করেন। সারাদিন সবগুলো ক্লাস অবলোকন শেষে প্রশিক্ষণার্থীদের সাথে কথা হয়। সাবেক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সচিব (বর্তমানে শিক্ষা সচিব) এনআই খানের ক্লাস ওদের জন্য ছিল বাড়তি আকর্ষণ।
ঢাকায় দুই মাসের প্রশিক্ষণ
নীলগিরি সার্ফার। এটি গেমের সফটওয়্যার। সফটওয়্যারটি তৈরি করেছেন একদল সণাতক ও সণাতকোত্তর তরুণ-তরুণী। প্রশিক্ষণ সময়ে একটি অ্যাসাইনমেন্ট সুসম্পন্ন করার তাগিদ থেকে। ২৫ জনের এ দলটির অ্যাসাইনমেন্ট ছিল একটি বিজনেস ডেভেলপ করা। দুই মাস প্রশিক্ষণের শেষ দিকে এসে ওদের এ কাজ করতে দেয়া হয়। প্রথমে পার্টনারশিপে একটি কোম্পানি গঠন করতে হবে। এরপর একটি পণ্য তৈরি করে এর বিপণন, বিক্রয়, হিসাব এবং ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটিকে একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে হবে।
ঠিক তেমনটিই যে করেছে, তা জানা গেল উদ্ভাবনী সফটওয়্যার ও অ্যাপ্লিকেশনের প্রেজেন্টেশনের দিন। ২২ আগস্ট বাংলাদেশ কমপিউটার কাউন্সিল মিলনায়তনে আইটি শিল্প ও প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সামনে তাদের উৎপাদিত পণ্য, বিপণন, বিক্রয়, হিসাব ও ব্যবস্থাপনা আলাদা আলাদাভাবে উপস্থাপন করা হয় মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরের মাধ্যমে। চমৎকার সব উপস্থাপনা। ইস্টওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের এমবিএ শেষ বর্ষের ছাত্র সায়েফ মোহাম্মদ সাজিনের নেতৃত্বে দলটি জানায় কীভাবে এরা একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানকে দ্রুত লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করে। নীলগিরি সার্ফারের মতো একটি ভালো গেমের সফটওয়্যার তৈরি এবং দক্ষ
ব্যবস্থাপনা তাদের ব্যবসায় দ্রুত সাফল্য এনেছে। বড় পর্দায় গেম খেলার দৃশ্য এবং স্কোর দেখিয়ে দর্শকদের কাছে আকর্ষণীয় করে উপস্থাপন করে এরা করতালি কুড়ান। এটি নিছক কোনো গল্প নয়, বরং এলআইসিটি প্রকল্পের এফটিএফএল প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির এক অনন্য ঘটনা। এভাবে ২৫ জনের ছয়টি দলের মোট ১৫০ জন তরুণ-তরুণী তিন মাসের প্রশিক্ষণ শেষে নতুন নতুন উদ্ভাবনীর প্রদর্শন ও ব্যবসায় পরিচালনার কৌশল তুলে ধরে তাদের মেধা ও দক্ষতার প্রমাণ রাখেন। এরা এফটিএফএল প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে প্রথম ব্যাচ। মানসম্মত প্রশিক্ষণের কারণে আইটি শিল্প ও প্রতিষ্ঠানে এদের ৭০ জনের চাকরিও হয়ে যায়। বাকিদের অনেকে নিজেদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন।
এফটিএফএল প্রশিক্ষণের প্রেক্ষাপট
আইটিতে ৩৪ হাজার তরুণ নিয়ে একটি দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার অংশ হিসেবে প্রথমে দেশের ৪ হাজার সণাতক ও সণাতকোত্তর তরুণ-তরুণীকে বিশ্বমানের প্রশিক্ষণে আইটি লিডার হিসেবে গড়ে তোলার জন্যই এফটিএফএল কর্মসূচি চালু হয়। অনলাইনে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা এবং মেধার ভিত্তিতে প্রশিক্ষণার্থীদের নির্বাচিত করা হয়। প্রথম ব্যাচে সাড়ে ৬ হাজার অনলাইনে নিবন্ধন করেন। অনলাইনে পরীক্ষায় অংশ নেন ৫ হাজার। ১৫৮ জনকে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত করা হয়। ২৯ মে ২০১৪ থেকে তিন মাসব্যাপী এ প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু হয়। আইটি প্রতিষ্ঠানগুলো প্রয়োজনীয় চাহিদানুযায়ী বিশেষজ্ঞ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিজ্ঞ শিক্ষকেরা তাদের প্রশিক্ষণ দেন। আইটিতে বিশ্বের দক্ষ জনবলের চাহিদার দিকে লক্ষ রেখেই মানসম্মত প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। প্রশিক্ষণ কর্মসূচির আয়োজন এবং কোনো ধরনের ফি ছাড়াই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ও পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করছে এ প্রকল্প। সাধারণত দুই ধরনের কর্মসূচিতে উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য তরুণ-তরুণীদের বাছাই করা হয়। এগুলো হচ্ছে : সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট এবং বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং (বিপিও)। বিজ্ঞান ও বাণিজ্যে স্নাতকোত্তর এবং ইংরেজিতে দক্ষ আগ্রহী প্রার্থীদের এ দুই ধরনের প্রশিক্ষণের জন্য মনোনীত করা হচ্ছে।
দ্বিতীয় ব্যাচের নির্বাচিত ১৯৯ জনের মধ্যে সর্বশেষ ১২৫ জনকে চূড়ান্তভাবে বাছাই করা হচ্ছে। ২৯ অক্টোবর ২০১৪ থেকে এদের এক মাসের প্রশিক্ষণ কুমিলস্না বার্ডে শুরু হয়। বাকি দুই মাসের প্রশিক্ষণ হবে ঢাকায়।
এফটিএফএল প্রশিক্ষণের পাশাপাশি ১০ হাজার তরুণ-তরুণীকে বিশেষায়িত (টপ আপ) আইটি প্রশিক্ষণ দিয়ে আইটি পেশাজীবী হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে। এজন্য এলআইসিটি প্রকল্পের উদ্যোগে কমপিউটার সায়েন্স (সিএস), কমপিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই), ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) এবং বিজ্ঞানে সণাতক ১০ হাজার তরুণ-তরুণীকে প্রশিক্ষণের জন্য প্রতিযোগিতামূলক দরপত্রের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। একই সাথে ২০ হাজার তরুণ-তরুণীকে আইটি সেবাবান্ধব কাজের ফাউন্ডেশন প্রশিক্ষণ দেয়ার প্রস্ত্ততিও চলছে


পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
২০১৪ - নভেম্বর সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস
অনুরূপ লেখা