• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > ইন্টারনেটের গতি বাড়লে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়বে : বিশ্বব্যাংক
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: কজ রিপোর্টার
মোট লেখা:৩৭৯
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০০৯ - আগস্ট
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
ইনটারনেট
তথ্যসূত্র:
রির্পোট
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
ইন্টারনেটের গতি বাড়লে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়বে : বিশ্বব্যাংক


কমপিউটার জগৎ ডেস্ক -

ইন্টারনেটের গতির সাথে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির একটি গভীর সম্পর্ক রয়েছে। ইন্টারনেটের গতি বাড়লে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতিও বাড়বে। তাই দ্রুতগতির ইন্টারনেট সংযোগ ও মোবাইল ফোনের সুবিধা উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে বড় ধরনের ভূমিকা রাখতে পারে। এটি সমাজের সব স্তরেই সমানভাবে কাজ করতে সক্ষম। ‘ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন্স ফর ডেভেলপমেন্ট’ (উন্নয়নের জন্য তথ্য ও যোগাযোগ) শীর্ষক সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংক এ কথা বলেছে। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে কিভাবে তথ্যপ্রযুক্তি অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রভাব ফেলে, তা বিশ্লেষণ করা হয়েছে ওই গবেষণা প্রতিবেদনে।

এতে বলা হয়, মোবাইল ফোন একটি শক্তিশালী মাধ্যম। এর মাধ্যমে সরকারি ও বেসরকারি সেবা প্রত্যন্ত এলাকায় বসবাসরত কোটি কোটি মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া সম্ভব। ২০০০ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত সময়ে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১০ গুণ বেড়েছে। সম্ভাবনার দুয়ার উন্মোচন করেছে এই প্রযুক্তি। বিশ্বব্যাংক মনে করে, সরকারগুলোর উচিত এ প্রযুক্তি ছড়িয়ে দেয়ার জন্য বেসরকারি খাতের সাথে একযোগে কাজ করা, যাতে নিম্ন আয়ের মানুষও এর সুবিধা পেতে পারে।



প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়নের জন্য বিশ্বব্যাংক কাজ করছে। তথ্যপ্রযুক্তির সংশ্লিষ্ট সেবা, সরকারি কাজে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার, মোবাইল ফোনের মাধ্যমে অর্থ পরিশোধ, ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচীসহ বিভিন্ন প্রকল্পে কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে এরা।

বিশ্বব্যাংক মনে করে, স্থানীয় তথ্যপ্রযুক্তি সেবাদানকারী শিল্পের ভিত্তি হিসেবেও কাজ করতে পারে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ। এর মাধ্যমে তৈরি হতে পারে কর্মসংস্থান, বাড়তে পারে উৎপাদনশীলতা রফতানি। এতে সামাজিক বন্ধনও জোরদার হতে পারে।

রিপোর্টে বলা হয়, তথ্যপ্রযুক্তি সেবা শিল্পের সম্ভাব্য বিশ্ববাজারের মাত্র ১৫ শতাংশ এখন পর্যন্ত ব্যবহার করা সম্ভব হয়েছে। উন্নয়নশীল দেশগুলোর উচিত এই বিশাল বাজার ধরার চেষ্টা করা। তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প গড়ে তোলার জন্য সরকারের উচিত যথাযথ নীতি-অবকাঠামোসহ সব ধরনের সুযোগসুবিধা নিয়ে এগিয়ে আসা। সরকারের এমন নীতি নেয়া উচিত, যাতে বেসরকারি খাত প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে ব্রডব্যান্ড প্রসারে ভূমিকা নেয়।









বিশ্বব্যাংক তার রিপোর্টের ১৭০ পৃষ্ঠায় একনজরে বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তির অবস্থার উপাত্ত তুলে ধরেছে। সেখানে অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা, কাঠামো, দক্ষতা এবং সামর্থ্য ও কার্যক্রম পৃথকভাবে আলোকপাত করা হয়েছে। ২০০০ সালে অবস্থা কী ছিল এবং ২০০৭ সালে কী হয়েছে, ওই চিত্রে তা তুলে ধরা হয়েছে। একই সাথে ২০০৭ সালে নিম্ন আয়ের গ্রুপ এবং দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে পরিস্থিতি কী ছিল সে বিষয়েও উপাত্ত দেয়া হয়েছে।

এতে দেখা যায়, ২০০০ সালের তুলনায় ২০০৭ সালে বাংলাদেশ খুব ধীরগতিতে এগিয়ে গেছে। এই এগিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া এখনো চলমান। বিশ্বব্যাংক একে ইতিবাচক দিক দিয়েই বিবেচনা করছে। তবে টেলিফোন সংযোগ, মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট গ্রাহকসংখ্যা আরো বেড়ে যাওয়া উচিত ছিল বলে এরা মনে করে।



২০০০ সালে প্রতি ১০০ জনে টেলিফোন সংযোগ যেখানে ছিল ০.৪টি, সেখানে ২০০৭ সালে দাঁড়িয়েছে ০.৭টিতে। মোবাইল ফোন গ্রাহক সে তুলনায় অনেক বেশি বেড়েছে। ২০০০ সালে যেখানে মোবাইল ফোন গ্রাহক ছিল প্রতি ১০০ জনে ০.২ জন, সেখানে ২০০৭ সালে তা দাঁড়ায় ২১.৭ জনে। ইন্টারনেট গ্রাহকদের ক্ষেত্রেও হতাশার চিত্র ফুটে উঠেছে। ২০০০ সালে ইন্টারনেট গ্রাহক প্রতি ১০০ জনে ছিল ০.০ জন, ২০০৭ সালে তা দাঁড়ায় মাত্র ০.১ জনে। ২০০০ সালে প্রতি ১০০ জনে মাত্র ০.১ জনের কমপিউটার ছিল, ২০০৭ সলে তা দাঁড়ায় ২.২ জনে। ফিক্সড ব্রডব্যান্ড গ্রাহক ২০০০ সালেও ছিল ০.০%, ২০০৭ সালেও একই চিত্র। মোট রফতানিতে আইসিটি পণ্য ২০০০ সালে ছিল ০%, ২০০৭ সালে তা দাঁড়ায় ০.১%। অন্যদিকে মোট আমদানিতে আইসিটি পণ্য ২০০০ সালে ছিল ৩.৩%, ২০০৭ সালে তা দাঁড়ায় ৪.৪ শতাংশে। তবে মোট সেবা রফতানিতে আইসিটি পণ্যের অবদান বেড়েছে। ২০০০ সালে এটি ছিল ৩%, ২০০৭ সালে তা দাঁড়ায় ৫.৭ শতাংশে।

এদিকে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সভাপতি হাবিবুল্লাহ এন করিম সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, দেশের সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তি সেবা খাত দ্রুত বিকাশ লাভ করছে। গত অর্থবছরে বাংলাদেশ লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি ৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার মূল্যের সফটওয়্যার রফতানি করেছে। তিনি বলেন, গত অর্থবছরে দেশের সফটওয়্যার খাতে রফতানি আয় আগের বছরের চেয়ে ৮০ লাখ ডলার বেড়েছে। ২০০৭-০৮ ও ২০০৮-০৯ অর্থবছরে সফটওয়্যার রফতানির লক্ষ্যমাত্রা ছিল আড়াই কোটি ও ৩ কোটি ডলার। চলতি অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ কোটি ডলার। বর্তমানে আইটি অ্যানাবল্ড সেবা খাত (আইটিইএস) থেকে ৭০ লাখ ডলার আয় হয়। ২০১১ সাল নাগাদ এটি ১৫ কোটি ডলারে পৌঁছবে বলে আশা করা হচ্ছে।

জেনেভাভিত্তিক আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কেন্দ্রের একটি জরিপের উদ্ধৃতি দিয়ে বেসিস সভাপতি বলেন, আইটি অ্যানাবল্ড সেবা খাতের সাথে যদি সফটওয়্যার যোগ করা হয়, তাহলে ওই অর্থ সে সময় ৩০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে।

আইটি পার্ক না থাকা এবং বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সমস্যাকে তিনি সফটওয়্যার রফতানি খাতের প্রধান সমস্যা বলে মনে করেন। তিনি এ খাতের জন্য ব্যাংক ঋণ সহজ করা এবং এ শিল্পে নিয়োজিতদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার আহবান জানান। হাবিবুল্লাহ এন করিম বলেন, দেশে বর্তমানে নিবন্ধিত সফটওয়্যার ও আইটিইএস কোম্পানির সংখ্যা ৫ শতাধিক। এসব কোম্পানিতে কর্মরত রয়েছেন ১২ হাজারের বেশি আইসিটি পেশাজীবী। গড়ে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে কর্মী রয়েছেন ৫০ জন।

বেসিস পরিচালিত সাম্প্রতিক এক জরিপে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে সফটওয়্যার ও আইটিইএস খাতের বার্ষিক গড় প্রবৃদ্ধি ৪০ শতাংশের বেশি। ভবিষ্যতেও এ হার অব্যাহত থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। সফটওয়্যার রফতানির উর্ধ্বমুখী ধারা এবং দেশীয় বাজারে আইটি অটোমেশনের ব্যাপক চাহিদার কারণে এ খাতের বিকাশ হচ্ছে দ্রুত। সম্প্রতি বাংলাদেশের টেলিকম, ব্যাংকিং এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও গার্মেন্ট খাতে ব্যাপক অটোমেশন প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে সফটওয়্যার ও আইটিএস শিল্প দ্রুত বিকশিত হচ্ছে বলে আশা করা হচ্ছে। জরিপে বলা হয়, টেলিকম খাত বাদ দিলে বাংলাদেশে আইটি বাজারের আকার প্রায় ৩০ কোটি ডলার। বর্তমানে শতাধিক সফটওয়্যার ও আইটিইএস কোম্পানি বিশ্বের ৩০টিরও বেশি দেশে তাদের পণ্য ও সেবা রফতানি করছে। প্রধান রফতানি বাজার হলো উত্তর আমেরিকা। তবে সম্প্রতি ইউরোপীয় দেশগুলো ও পূর্ব এশিয়ায় বিশেষ করে জাপানেও রফতানি শুরু হয়েছে।

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত সম্প্রতি ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে প্রস্তাবিত বাজেটের অবদান’ শীর্ষক এক সেমিনারে বলেছেন, দেশে একটি ডিজিটাল প্রশাসন গড়ে তুলতে আগামী এক বছরের মধ্যে সব শ্রেণীর সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বাধ্যতামূলকভাবে কমপিউটার ও ইন্টারনেটের ওপর প্রশিক্ষণ নিতে হবে। তিনি বলেন, সবার কাছে হয়তো মোবাইল বা ইন্টারনেট সুবিধা পৌঁছে দেয়া যাবে না। তবে সবাই যাতে এ ধরনের সুবিধা নিতে পারে সেজন্য সাইবার ক্যাফে বা এ ধরনের প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার কাজে উৎসাহ দেয়া হবে।

তিনি ডিজিটাল ডিভাইড বা বিভাজনকে মারাত্মক ভয়ের ব্যাপার বলে মনে করেন। তাই সরকার গভীরভাবে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছে। এই বিভাজন যাতে তৈরি না হয় সে বিষয়ে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। শিগগিরই একটি ডিজিটাল নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে বলে তিনি জানান। তাতে সুনির্দিষ্টভাবে ৩০৬টি কার্যক্রমের কথা বলা থাকবে।

কজ ওয়েব

পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস
অনুরূপ লেখা