• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > ৭০ হাজার ফ্রিল্যান্সার তৈরির কর্মযজ্ঞ শুরু
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: হিটলার এ. হালিম
মোট লেখা:২২
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৫ - মার্চ
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
আউটসোর্সিং
তথ্যসূত্র:
আউটসোর্সিং
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
৭০ হাজার ফ্রিল্যান্সার তৈরির কর্মযজ্ঞ শুরু
দেশে ফ্রিল্যান্সার তৈরির বিশাল কর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছে। দেশব্যাপী এ কর্মযজ্ঞে অংশ নিচ্ছে স্বপ্নবান তরুণ, যারা ফ্রিল্যান্সিংয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেদের কর্মসংস্থানে উদ্যোগী হয়েছে। তাদের নিবিড় প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। এ উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। তথ্যপ্রযুক্তি খাত থেকে আউটসোর্সিং আয়ের জন্য দেশে ৭০ হাজার ফ্রিল্যান্সারকে প্রস্ত্তত করা হচ্ছে। সরকারের তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ মনে করে, সারাদেশের ৭০ হাজার ফ্রিল্যান্সারকে পর্যায়ক্রমে প্রশিক্ষণ দেয়া হলে এর থেকে অন্তত দেড় লক্ষাধিক ফ্রিল্যান্সার সুবিধা ভোগ করবে।
এরই মধ্যে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে জানুয়ারি থেকে। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এ কার্যক্রম শেষ হবে। উপজেলা, এমনকি ইউনিয়ন পর্যায়েও (সম্ভাবনাময় এলাকা) ফ্রিল্যান্সারদের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। এ প্রকল্পে (লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং প্রজেক্ট) ১৮১টি প্রতিষ্ঠান ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ দেয়ার আগ্রহ প্রকাশ (এক্সপ্রেশন অব ইন্টারেস্ট) করে আবেদন করেছে।
প্রশিক্ষণ শুরুর আগে আইসিটি বিভাগ আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে সাক্ষাৎকার পর্ব শেষ করে। চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেয় আইসিটি বিভাগ। পরবর্তী সময়ে নির্বাচিত হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে আইসিটি বিভাগ সমঝোতা চুক্তি (এমওইউ) স্বাক্ষর করে। ওই চুক্তিতে রয়েছে প্রশিক্ষণবিষয়ক সব শর্ত।
জানা গেছে, ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণের জন্য বরাদ্দ রয়েছে ১৮০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১৭১ কোটি টাকা খরচে সারাদেশ থেকে নির্বাচিত শৌখিন ফ্রিল্যান্সারদের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। অবশিষ্ট ৯ কোটি টাকা ব্যয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকদের ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ দেয়া হবে, যাতে সাংবাদিকেরা পেশাগত জীবনে উৎকর্ষ আনতে পারেন এবং অবসর সময়ে ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে বাড়তি আয় করে জীবন-মান উন্নত করতে পারেন।
ফ্রিল্যান্সারদের প্রশিক্ষণের জন্য আইসিটি বিভাগ ‘লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং ডেভেলপমেন্ট’ শীর্ষক একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। ওই প্রকল্পে এই টাকা ব্যয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ ফ্রিল্যান্সার তৈরি করে দুই বছর পর আইসিটি বিভাগ ১ হাজার কোটি টাকা আয়ের স্বপ্ন দেখছে।
আইসিটি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেছেন, তরুণদের তথ্যপ্রযুক্তিতে ব্যাপকভাবে সম্পৃক্ত করতে সরকার এই উদ্যোগ নিয়েছে। আমরা দেশের ৫৫ হাজার তরুণকে ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ দেব। এই ৫৫ হাজার তরুণের কাছ থেকে আরও ৫৫ হাজার তরুণ ফ্রিল্যান্সিং বিশেষ করে আউটসোর্সিং শিখতে পারবে বলে তিনি মনে করেন।
তিনি জানান, আইসিটি বিভাগের লক্ষ্যমাত্রা ৫৫ হাজার ফ্রিল্যান্সার থাকলেও তা বাড়িয়ে ৭০ হাজার করতে হয়েছে। এরই মধ্যে ১৫ হাজার ফ্রিল্যান্সারকে প্রশিক্ষণ দেয়ার কাজ শেষ হয়েছে।
জানা গেছে, ২০১৩ সালে ফ্রিল্যান্সিংয়ে আমাদের দেশের তরুণেরা আয় করেছে ৫ কোটি ডলার। ২০১২ সালে যা ছিল ২ কোটি ডলারের মতো। দিন দিন আয়ের পরিমাণ বাড়ছে। ফ্রিল্যান্সারদের প্রশিক্ষণ দিলে হাজার কোটি টাকা আয় করা সম্ভব বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
ফ্রিল্যান্সারদের প্রশিক্ষণে সহায়তা দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় দেশের প্রতিটি উপজেলায় একটি কমপিউটার ল্যাব ও ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাব প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করবে।
আইসিটি বিভাগের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, সংশ্লিষ্ট এলাকায় (উপজেলা, ক্ষেত্রবিশেষে ইউনিয়ন) ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণের আগে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। এরপর প্রশিক্ষণের জন্য আগ্রহীদের বেছে নেয়া হচ্ছে।
ওই সূত্র আরও জানায়, দুটি মডেলে ফ্রিল্যান্সারদের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। একটি মডেলে পুরুষ ফ্রিল্যান্সারদের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। প্রশিক্ষণের মেয়াদ হবে পাঁচ দিন। অন্য মডেলে নারী ফ্রিল্যান্সারদের নিবিড় প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। ফ্রিল্যান্সিংয়ে নারীদের ব্যাপকভিত্তিতে অংশ নেয়ার জন্য প্রশিক্ষণের মেয়াদ ধরা হয়েছে ১৫ দিন।
আইসিটি বিভাগের দাবি, বিশ্ব বাজারে ফ্রিল্যান্সিং বা আউটসোর্সিং বিষয়ে সচেতনতা ও নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং ফ্রিল্যান্সিং বা আউটসোর্সিংয়ের কার্যক্রম তৃণমূল পর্যায়ে সম্প্রসারণ করতেই এই প্রশিক্ষণের আয়োজন।
প্রযুক্তিভিত্তিক বৈদেশিক শ্রমবাজার হিসেবে বিশ্বে সেরা আউটসোর্সিংয়ের দেশ বলে বিবেচিত হচ্ছে বাংলাদেশ। অফশোর সার্ভিস বা আউটসোর্সিংয়ের ক্ষেত্রে পরিচালিত বেশ কিছু জরিপে দেখা গেছে, অনেক দেশই তথ্যপ্রযুক্তিতে এগিয়ে আসছে। ফলে তারা অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করছে।
অনলাইন মার্কেটপ্লেস ওডেস্কের তালিকায় বাংলাদেশ এখন শীর্ষ তিনে অবস্থান করছে। এটিকার্নি, গার্টনার, জেপি মরগ্যান, গোল্ডম্যান সাকস সবাই বাংলাদেশকে তথ্যপ্রযুক্তির পরবর্তী গন্তব্যস্থল হিসেবে গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করছে।
এদিকে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ব্যবসায় সংশ্লিষ্ট ব্যয় সূচকে (খরচের দিক থেকে) বিশ্বসেরা হয়েছে বাংলাদেশ। এই সূচক দেশে বিদেশী বিনিয়োগ আসার ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন তথ্যপ্রযুক্তি সংশ্লিষ্টরা।
বিশ্বখ্যাত ম্যানেজমেন্ট কন্সাল্টিং ফার্ম ‘এ টি কারনি’ প্রকাশিত ব্যয় সূচকে বাংলাদেশ প্রথম স্থান অর্জন করেছে। দেশে সফটওয়্যার ও আইটি সেবাপণ্য উৎপাদনে বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় খরচ কম হওয়ায় বাংলাদেশের এই অর্জন। এছাড়া একই প্রতিবেদনে উঠে এসেছে আইটি আউটসোর্সিং ও ব্যাক অফিসের ভিত্তিতে বিশ্বের ৫০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ২৬তম। এর পরের অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাজ্য, তিউনিসিয়া, স্পেন মরক্কো, মরিশাস, কানাডা, আর্জেন্টিনা, ফ্রান্স, দক্ষিণ আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়া।
জানা গেছে, দেশে ৫ লাখ মুক্তপেশাজীবী তথ্যপ্রযুক্তির বিভিন্ন খাতে কাজ করছেন। আগামীতে সূচকে আরও উন্নতি হবে। আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জায়গায় (টাঙ্গাইলের মধুপুর ও কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায়) অনেকে মাসে ৪০০ থেকে ৫০০ ডলারের বেশি আয় করছেন।
এর আগে গার্টনার বাংলাদেশকে বিশ্বের সেরা ৩০টি আউটসোর্সিং দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে। এ সময় বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি অবকাঠামো ও অন্যান্য বিষয়ে আরও উন্নয়নের সুযোগ রয়েছে বলে গার্টনার জানায়। এ অর্জন আমাদের দেশকে ইতিবাচক ব্র্যান্ডিং করতে সহায়তা করবে। আর সে সুযোগটা আমাদের গ্রহণ করে ব্যাপকভিত্তিতে প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে। প্রসঙ্গত, বর্তমানে সারাবিশ্বে আউটসোর্সিংয়ে রয়েছে প্রায় ১ হাজার ৫০০ বিলিয়ন ডলারের বাজার
ফিডব্যাক : hitlarhalim@yahoo.com


পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
২০১৫ - মার্চ সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস