লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম:
হিটলার এ. হালিম
মোট লেখা:২২
লেখা সম্পর্কিত
ব্যান্ডউইডথে রফতানি চুক্তি হচ্ছে জানুয়ারিতে!
অনেক দিন ধরেই ঝুলে আছে ব্যান্ডউইডথে রফতানির বিষয়টি। সিঙ্গাপুরের সাথে বিষয়টির সুরাহা হয়নি। মিয়ানমারও পর্যবেক্ষণ করছে। অন্য দেশগুলো তাকিয়ে আছে ভারতের সাথে ব্যান্ডউইডথ রফতানির কী অগ্রগতি হয়, তা দেখার জন্য। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, শুধু ভারতের সাথেই এ ব্যাপারে যা কিছু অগ্রগতি হয়েছে। যদিও ভারতে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথ রফতানির নীতিগত সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হওয়ার পরও বিষয়টি এখনও ঝুলে আছে।
তবে আশা করা যাচ্ছে, শিগগিরই অনুমোদন পাওয়া যাবে। চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়ার পর চুক্তি স্বাক্ষর করে ব্যান্ডউইডথ রফতানি শুরু করতে অন্তত আরও দেড় থেকে দুই মাস সময় লাগতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। তবে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, মধ্য জানুয়ারিতে চুক্তি চূড়ান্ত হতে পারে। গত ২৩ ডিসেম্বর ভারতের বিএসএনএল থেকে একটি চিঠি পেয়েছে বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি লিমেটেড (বিএসসিসিএল)। ওই চিঠি মোতাবেক জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে এ বিষয়ে চুক্তি স্বাক্ষর হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: মনোয়ার হোসেনও একই কথা জানান।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে মোট ব্যান্ডউইডথের (২০০ গিগা) মধ্যে মাত্র ২৫ গিগা ব্যবহার হচ্ছে। অবশিষ্ট ১৭৫ গিগা অব্যবহৃত থেকে যাচ্ছে। ওই অব্যবহৃত ব্যান্ডউইডথই রফতানির সিদ্ধান্ত হয়। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ফিরোজ সালাউদ্দিন বলেন, দুটি দেশ অনেকগুলো বিষয়ে এক মত হয়ে প্রস্তাবনা চূড়ান্ত করেছে। দিল্লি প্রস্তাবনা অনুমোদন করলে চুক্তি চূড়ান্ত হবে। তারিখও সেভাবে নির্ধারিত হবে।
তিনি বলেন, অনুমোদন পাওয়ার পর রফতানি প্রক্রিয়া, দরদাম, সময় সবকিছু চূড়ান্ত করে চুক্তি স্বাক্ষর হবে। এর আগে গত মে মাসে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, ভারতের নতুন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পরই ব্যান্ডইউডথ রফতানির চুক্তি চূড়ান্ত হবে। ৬ মাস পেরিয়ে গেলেও চুক্তি স্বাক্ষর করা যায়নি। যদিও ব্যান্ডউইডথ রফতানি বিষয়ে বাংলাদেশের সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিসিএল) ও ভারতের ভারত সঞ্চার নিগম লিমিটেডের (বিএসএনএল) মধ্যে সমঝোতা চুক্তি হয়। ওই চুক্তি অনুযায়ী ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যের ত্রিপুরা ও আসামে ৪০ গিগাবাইট পর্যন্ত ব্যান্ডউইডথ রফতানি করবে বাংলাদেশ। রফতানি প্রক্রিয়া শুরু হবে ১০ গিগা ব্যান্ডউইডথের মাধ্যমে।
বিএসসিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনোয়ার হোসেন জানান, ভারত ব্যান্ডউইডথ কেনার যে অফার করেছে, তা আমাদের প্রস্তাব করা দামের কাছাকাছি। খুব বেশি পার্থক্য নেই।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সমঝোতা চুক্তিতে তিন বছরের জন্য ব্যান্ডউইডথ রফতানির সিদ্ধান্ত হয়েছে। চুক্তি চূড়ান্ত হলে বাংলাদেশ ব্যান্ডউইডথ রফতানি বাবদ প্রতি মাসে প্রায় ৫ কোটি টাকা আয় করবে। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের জন্য ৪০ গিগা ব্যান্ডউইডথ রফতানির বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ জন্য রুটও ঠিক করা হয়েছে সাবমেরিন ক্যাবলের ল্যান্ডিং স্টেশন কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম হয়ে কুমিলস্না পর্যন্ত। এরপর কুমিলস্না-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-আখাউড়া-বর্ডার এলাকা-আগরতলা হয়ে ত্রিপুরা পর্যন্ত। এ রুটে আট মাসের মধ্যে ব্যান্ডউইডথ রফতানির পরিমাণ ১০ থেকে ৪০ গিগায় পৌঁছবে বলে জানা গেছে।
ব্যান্ডউইডথ রফতানির আরও একটি রুট নির্দিষ্ট হয়েছে। ওই রুটটি কুমিলস্না থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া হয়ে সিলেট দিয়ে তামাবিল সীমান্ত হয়ে মেঘালয় রাজ্যের রাজধানী শিলং পর্যন্ত যাবে। এরপর শিলং থেকে বিএসএনএল তাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় আসামের রাজধানী গুয়াহাটি পর্যন্ত ব্যান্ডউইডথ নিয়ে যাবে।
তবে ব্যান্ডউইডথ রফতানির জন্য বাংলাদেশ এখনও পুরোপুরি প্রস্ত্তত নয়। ব্যাকহোল কানেক্টিভিটিজনিত কিছু সমস্যার সমাধান না হলে ব্যান্ডউইডথ রফতানি (ফাইবার অপটিক ক্যাবল দিয়ে পরিবহন) শুরু করতে দেরি হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়।
জানা গেছে, ব্যাকহোল কানেক্টিভিটি তৈরির দায়িত্ব রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ কোম্পানি লিমিটেডকে (বিটিসিএল) দেয়া হবে। বিটিসিএল শেষ করতে না পারলে এনটিটিএন (নেশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক) প্রতিষ্ঠান দুটিকে দায়িত্ব দেয়া হতে পারে। প্রসঙ্গত, দেশে ফাইবার অ্যাট হোম ও সামিট কমিউনিকেশন নামে দুটি এনটিটিএন প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
জানা গেছে, তিন বছরের জন্য ব্যান্ডউইডথ রফতানির চুক্তি হয়েছে। তবে সমঝোতা চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যান্ডউইডথ রফতানির জন্য ৪ থেকে ৬ মাস সময় পাবে। চূড়ান্ত বা বাণিজ্যিক চুক্তি হলেই বাংলাদেশ রফতানি বাবদ তিন মাসে প্রায় ৫ কোটি টাকা আয় করবে।
ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের জন্য ৪০ গিগা ব্যান্ডউইডথ রফতানির বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ১০ গিগা দিয়ে শুরু হবে। পর্যায়ক্রমে ৪০ গিগায় পৌঁছবে বলে জানা গেছে। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ভারত আসলে ১০০ গিগা পর্যন্ত ব্যান্ডউইডথ নিতে চায়।
বাংলাদেশ ২০১৬ সালে সিমিউই৫-এ যুক্ত হলে এখনকার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি ব্যান্ডউইডথ সক্ষমতা অর্জন করবে। সে সময়ই শুধু ওই পরিমাণ ব্যান্ডউইডথ বাংলাদেশ রফতানি করতে সক্ষম হবে।
বিএসসিসিএল সূত্র জানায়, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাত রাজ্য- অরুণাচল, ত্রিপুরা, আসাম, মেঘালয়, মণিপুর, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড ও শিলংয়ে ব্যান্ডউইডথের বেশ চাহিদা রয়েছে। বিএসসিসিএল দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের সাথে যুক্ত হলে ওই রাজ্যগুলোতে ব্যান্ডউইডথ রফতানির মাধ্যমে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের আশা করছে।
২০১৩ সালের জুলাইয়ে ভারতের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে গত ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ সরকার ওই রাজ্যগুলোতে ৪০ গিগা ব্যান্ডউইডথ রফতানির সিদ্ধান্ত নেয়।
বিএসসিসিএল ৪০ গিগা ব্যান্ডউইডথ রফতানি থেকে ৪ কোটি ৮৩ লাখ টাকা আয়ের হিসাব করেছিল। কিন্তু সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুসারে ১০ গিগা রফতানির হলে আয় হবে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা
আইজিডব্লিউ কমন সুইচ অনুমোদন পেল প্রধানমন্ত্রীর
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি আন্তর্জাতিক ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে (আইজিডব্লিউ) গ্রম্নপের দেয়া একটি ‘কমন সুইচ’ স্থাপনের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছেন। এর লক্ষ্য সব বিদেশী কলের পুরো ক্যাশে নিয়ন্ত্রণ করা। উল্লেখ্য, আইজিডব্লিউ অপারেটরস ফোরামে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে বাজারের ২৯টি গেটওয়ের মধ্যে ১৯টি। আইজিডব্লিউ ফোরাম পরিকল্পনা করেছে এই সিস্টেম চালু করতে।
এই সুইচ পরিচালিত হবে সাতটি গেটওয়ের মাধ্যমে- বলেছে ফোরামে যোগ দেয়নি এমন অপারেটরেরা। এরা বলেছে, এসব গেটওয়ে অনির্ধারিত ফি সংগ্রহে একটি মার্কি উইন্ডোর সুযোগ দেবে। এরা আরও বলেছে, এই সুইচ কম্পিটিশন ল, কন্টাক্ট রুল ও লং ডিসটেন্স টেলিকম পলিসির বিরুদ্ধে চলে যেতে পারে। আইজিডব্লিউগুলো অন্যান্য গেটওয়ের সাথে সংযুক্ত ইন্টারকানেকশন এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে অপারেটরদের কাছে ইন্টারন্যাশনাল কল ট্র্যান্সমিট করতে পারে।
এই প্রস্তাবটি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়। কারণ, আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর অপসারণের পর বর্তমানে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি গত ২৬ ডিসেম্বর এ ব্যাপারে এগিয়ে যাওয়ার জন্য তার সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন।
ফিডব্যাক : hitlarhalim@yahoo.com