• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > ভারতে ব্যান্ডউইডথ রফতানি : বাণিজ্যিক চুক্তির অপেক্ষায় বাংলাদেশ
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: হিটলার এ. হালিম
মোট লেখা:২২
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৪ - জুন
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
ইনটারনেট
তথ্যসূত্র:
রির্পোট
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
ভারতে ব্যান্ডউইডথ রফতানি : বাণিজ্যিক চুক্তির অপেক্ষায় বাংলাদেশ
ভারতে ব্যান্ডউইডথ রফতানির প্রাথমিক সমঝোতা স্মারক চুক্তি হয়েছে। এখন অপেক্ষা বাণিজ্যিক চুক্তির জন্য। এই চুক্তি স্বাক্ষর হলেই ভারতে ব্যান্ডউইডথ রফতানি শুরু করবে। তবে এজন্য কিছুদিন অপেক্ষাও করতে হবে বাংলাদেশকে। কারণ, ভারতে এসেছে নতুন সরকার। নতুন সরকার এসেই বিষয়টি কত দ্রুত শুরু করবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়। বলা হচ্ছে, ভারতের নতুন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পরই সে দেশে ব্যান্ডইউডথ রফতানির চুক্তি চূড়ান্ত হবে।

এরই মধ্যে ব্যান্ডউইডথ রফতানি বিষয়ে বাংলাদেশের সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিসিএল) ও ভারতের ভারত সঞ্চার নিগম লিমিটেডের (বিএসএনএল) মধ্যে সমঝোতা চুক্তি হয়েছে। এখন এই প্রাথমিক চুক্তিকেই চূড়ান্ত রূপ দেয়া হবে বলে জানা গেছে। ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যের ত্রিপুরা ও আসামে ব্যান্ডউইডথ সরবরাহ করবে বাংলাদেশ। সমঝোতা চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ ৪০ গিগাবাইট পর্যন্ত ব্যান্ডউইডথ রফতানি করবে। রফতানি প্রক্রিয়া শুরু হবে ১০ গিগাবাইট ব্যান্ডউইডথের মাধ্যমে।

জানা গেছে, তিন বছরের জন্য ব্যান্ডউইডথ রফতানির চুক্তি হয়েছে। তবে সমঝোতা চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যান্ডউইডথ রফতানির জন্য ৫-৬ মাস সময় পাচ্ছে। চূড়ান্ত বা বাণিজ্যিক চুক্তি হলেই বাংলাদেশ রফতানি বাবদ প্রতি মাসে প্রায় ৫ কোটি টাকা আয় করবে। মনোয়ার হোসেন আরও জানান, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের জন্য ৪০ গিগাবাইট ব্যান্ডউইডথ রফতানির বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ১০ গিগাবাইট দিয়ে শুরু হবে। পর্যায়ক্রমে তা ৪০ গিগাবাইটে উন্নীত হবে। এ জন্য রুটও ঠিক করা হয়েছে বলে তিনি জানান। এ রুটটি (ফাইবার অপটিক ক্যাবল লাইন) হবে দেশের একমাত্র সাবমেরিন ক্যাবলের ল্যান্ডিং স্টেশন কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম হয়ে কুমিলস্না পর্যন্ত। এরপর কুমিলস্না-বি.বাড়িয়া-আখাউড়া-বর্ডার এলাকা-আগরতলা হয়ে ত্রিপুরা পর্যন্ত। এ রুটে আট মাসের মধ্যে ব্যান্ডউইডথ রফতানির পরিমাণ ১০ থেকে ৪০ গিগাবাইট পৌঁছবে বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ব্যান্ডউইডথ রফতানির আরও একটি রুট নির্দিষ্ট হয়েছে। ওই রুটটি কুমিলস্না থেকে বি.বাড়িয়া হয়ে সিলেট দিয়ে তামাবিল সীমান্ত হয়ে মেঘালয় রাজ্যের রাজধানী শিলং পর্যন্ত যাবে। এরপর শিলং থেকে বিএসএনএল তাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় আসামের রাজধানী গুয়াহাটি পর্যন্ত ব্যান্ডউইডথ নিয়ে যাবে।

এদিকে বাংলাদেশের আশা, ভারতে নতুন সরকার এলেও তাদের নীতিমালা, সম্পাদিত চুক্তি এবং সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমে কোনো পরিবর্তন আসবে না। সেই হিসেবে ব্যান্ডউইডথ রফতানির চুক্তি এক অর্থে চূড়ান্ত বলেই মনে করে বাংলাদেশ। তারপরও নরন্দ্রে মোদীর ক্ষমতাগ্রহণ এবং অব্যবহিত পর পর্যন্ত বাংলাদেশ তাকিয়ে থাকবে ভারত পানে। মোদীর শপথগ্রহণের পরে বাংলাদেশ সম্পাদিত চুক্তির বিষয়ে যোগাযোগ শুরু করবে বলে জানা গেছে।
অন্যদিকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ব্যান্ডউইডথ রফতানির জন্য বাংলাদেশ এখনও প্রস্ত্তত নয়। এ জন্য আরও সময় প্রয়োজন। মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব শেখ রিয়াজ আহমেদ বলেন, ব্যাকহোল কানেক্টিভিটির কিছু সমস্যা রয়েছে। কানেক্টিভিটি তৈরি হয়ে গেলেই প্রস্ত্ততি চূড়ান্ত হবে।

জানা গেছে, ব্যাকহোল কানেক্টিভিটি তৈরির দায়িত্ব রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ কোম্পানি লিমিটেডকে (বিটিসিএল) দেয়া হবে। বিটিসিএল শেষ করতে না পারলে এনটিটিএন (নেশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক) প্রতিষ্ঠান দু’টিকে দায়িত্ব দেয়া হতে পারে। প্রসঙ্গত, দেশে ফাইবার অ্যাট হোম ও সামিট কমিউনিকেশন নামে দু’টি এনটিটিএন প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

ব্যান্ডউইডথ রফতানির কোনো নীতিমালা নেই!
কোনো ধরনের নীতিমালা তৈরি না করে দেশের অব্যবহৃত ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথ রফতানির পরিকল্পনা করা হচ্ছে। দেশের প্রয়োজন মিটিয়ে ৮০ থেকে ১০০ জিবিপিএস (গিগাবাইট পার সেকেন্ড) ব্যান্ডউইডথ রফতানি সম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। রফতানি করা গেলে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হবে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের। নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, এ মুহূর্তে পাঁচটি দেশ ৮০ গিগাবাইট ব্যান্ডউইডথ নিতে চায় বাংলাদেশ থেকে।

দেশের ব্যান্ডউইডথ সক্ষমতা বর্তমানে প্রতি সেকেন্ডে ২০০ গিগাবাইট। আর ব্যবহার হয় ৩২ গিগাবাইট। অবশিষ্ট ১৬৮ গিগাবাইট ফেলে রাখছে সরকার। সরকারের ভাষ্য, ‘সম্পূর্ণ ব্যান্ডউইডথ ব্যবহার করা সম্ভব হয় না অবকাঠামোগত সমস্যার কারণে। সারাদেশ ফাইবার অপটিক ক্যাবলের আওতায় না এলে এই ব্যান্ডউইডথ ব্যবহার করা যাবে না।’

ব্যান্ডউইডথ রফতানির বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসসিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনোয়ার হোসেন জানান, ‘আগামী চার থেকে পাঁচ বছরের জন্য ব্যান্ডউইডথের চাহিদা নিরূপণ করে ৮০ থেকে ১০০ গিগাবাইটের মতো রফতানি করা যেতে পারে।’ তিনি জানান, ‘ভারতের এইট সিস্টার্স, সিঙ্গাপুর, নেপাল, ভুটান ও মিয়ানমার বাংলাদেশ থেকে ব্যান্ডউইডথ নিতে চায়।’ তিনি বলেন, ভারতের এইট সিস্টার্স ব্যান্ডউইডথ নিতে চাইলে এখনই দেয়া সম্ভব নয়। কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, ‘ব্যান্ডউইডথ পরিবহনের জন্য ক্যাবল সংযোগ প্রয়োজন। আইটিসিগুলো (ইন্টারন্যাশনাল টেরিস্ট্রিয়াল ক্যাবল) সারাদেশে নেটওয়ার্ক স্থাপন করে পুরোপুরি সেবাদান কার্যক্রম শুরু করলে রফতানি কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হতে পারে।’
এর আগেও ব্যান্ডউইডথ রফতানির উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। ভারত ও সিঙ্গাপুর বাংলাদেশের কাছে ব্যান্ডউইডথ নেয়ার ব্যাপারে আগ্রহও দেখিয়েছিল। সিঙ্গাপুরের সিংটেল ২ দশমিক ৫ ও ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় আট রাজ্য (এইট সিস্টার্স) ১০ গিগাবাইট ব্যান্ডউইডথ নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে। ‘ওই পরিমাণ ব্যান্ডউইডথ রফতানি করলে কোনো সমস্যা হবে না, বরং দেশ আর্থিকভাবে লাভবান হবে’- বলে বিএসসিসিএল মনে করলেও শেষ পর্যন্ত তা আর ফলপ্রসূ হয়নি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সিংটেল ২০১১ সালে ছয় মাস মেয়াদে বাংলাদেশ থেকে ২ দশমিক ৫ গিগাবাইট ব্যান্ডউইডথ নিতে চেয়েছিল। এজন্য তারা সাবমেরিন ক্যাবল সি-মি-উই ফোর কনসোর্টিয়ামের সিঙ্গাপুর থেকে ইতালি পর্যন্ত একটি লিঙ্ক চেয়েছিল। এই পরিমাণ ব্যান্ডউইডথের জন্য সিঙ্গাপুর আড়াই থেকে পৌনে তিন কোটি টাকা দিতে রাজি হলেও তা কার্যকর হয়নি।

এদিকে নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, ব্যান্ডউইডথ রফতানি সংক্রান্ত কোনো নীতিমালা নেই। নীতিমালা তৈরির কোনো উদ্যোগও নেয়া হয়নি। জাতীয় ব্রডব্যান্ড নীতিমালা-২০০৯-এ উদ্বৃত্ত বা অব্যবহৃত ব্যান্ডউইডথ কী করা হবে, সে বিষয়েও কিছু উল্লেখ নেই। কী প্রক্রিয়ায় এবং কোন নীতিমালা অনুসরণ করে ব্যান্ডউইডথ রফতানির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে জানতে চাইলে বিএসসিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, ‘ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি স্বল্পমেয়াদে অব্যবহৃত ব্যান্ডউইডথ রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পক্ষে মত দিয়েছে। এ ছাড়া সংসদীয় কমিটির মতের আলোকে বিএসসিসিএলের পরিচালনা পর্ষদেরও সুপারিশ রয়েছে দেশের জন্য পর্যাপ্ত ব্যান্ডউইডথ রেখে অব্যবহৃত ব্যান্ডউইডথ রফতানি করতে।’

এদিকে দেশের প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞেরা ব্যান্ডউইডথ রফতানির বিরোধিতা করে বলেছেন, ‘মহামূল্যবান ব্যান্ডউইডথ ফেলে না রেখে স্কুল-কলেজগুলোতে উন্মুক্ত করে দিলে তরুণ প্রজন্ম তথ্যপ্রযুক্তিতে আরও ভালো করতে পারবে। ফ্রিল্যান্সাররা বিনামূল্যে ব্যান্ডউইডথ পেলে রফতানি আয়ের চেয়ে বেশি টাকা তারা আয় করে দেশে আনতে পারবে।’

ফিডব্যাক : hitlarhalim@yahoo.com
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
২০১৪ - জুন সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস